এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নস্টালজিয়া - আনন্দ না বেদনা

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ | ৫০৯ বার পঠিত
  • নস্টালজিয়া-র বাংলা অর্থ হলো, স্মৃতিবিধুরতা বা স্মৃতি-রোমন্থন বা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া বা অতীতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে। আবার বিধুরতা বলতে বোঝায় কাতরতা, দুঃখ, বিহ্বলতা ইত্যাদি। আর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলতে গেলে বলতে হয়, "নস্টালজিয়া" শব্দটি গ্রিক ভাষার "নোস্তোস" (νόστος), যার অর্থ বাড়িতে ফিরে আসা এবং হোমারসৃষ্ট একটি শব্দ "আলগোস" (ἄλγος), যার অর্থ ব্যাথা বা বেদনা–এই দুইয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। 

    বয়সের কারণেই আমাদের বয়সী বা আমাদের গুরুজনেরাও হামেশাই নস্টালজিক হয়ে পড়ি। এই বয়সে এসে আমাদের অতীতকে খুব ভালো লাগে। আবার ছোটবেলায়, যৌবনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। এটা অবশ্যই বয়সের একটা দোষ। নস্টালজিক হয়ে পড়ছি বলতে আমরা বোঝাতে চাই, সেই ছোটবেলায় বা যৌবনের দিনগুলি আমাদের খুব ভালো ছিল, আবার যদি ফিরে পেতাম সেইসব দিনগুলি। একজন বন্ধুর সাথে দেখা হলে আমরা নস্টালজিক হয়ে পড়ি, ছোটবেলার গ্রামে গেলে আমরা নস্টালজিক হয়ে পড়ি, যে স্কুলে বা কলেজে পড়তাম সেখানে গেলে নস্টালজিক হয়ে পড়ি। এইরকম উদাহরণ অনেক দেওয়া যায়। সবক্ষেত্রেই এর অর্থ হলো, যদি আমরা সেই সময়ে, সেই বয়সে ফিরে যেতে পারতাম। এইরকম মনে হওয়ার পেছনে যেমন অতীতের জন্য হা-হুতাশ আছে, তেমনি অতীতের কথা ভেবে মানসিক শান্তিও আছে। আবার এইসব মিলিয়ে যদি একটি অর্ধ তৈরী করে তবে অন্য অর্ধে আছে পুরোপুরি হা-হুতাশ। তবে এই হা-হুতাশ অতীতের জন্য নয়, বরং বর্তমানের জন্য। বর্তমানের জন্য এই কারণে যে, সেই অতীতে ফিরে যেতে চাইলেও বর্তমানের অবস্থার কারণে সেই অতীতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। 

    অপুর হয়নি। নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে চলে আসার পর এই আকুল প্রার্থনা বুকের ভিতর জমিয়ে রেখেছিল অপু, চিরটাকাল, ‘আমাদের যেন নিশ্চিন্দিপুরে ফেরা হয় -- ভগবান, নৈলে বাঁচব না’। চব্বিশ বছর পর অবশেষে নিশ্চিন্দিপুরের মাটিতে পা রেখে অপু বুঝেছিল, ফেরা ভারি শক্ত কাজ। বুঝেছিল, ‘সে নিশ্চিন্দিপুরও আর নাই। এখন যদি সে এখানে আবার বাসও করে সে অপূর্ব আনন্দ আর পাইবে না।’ নিশ্চিন্দিপুর হারিয়ে গেছে। হারিয়েই যায়।

    যেমন হারিয়ে যায় শিলাইদহ। ১৯২২ সালে মার্চ মাসের শেষের দিকে প্রায় বাষট্টি বছরের রবীন্দ্রনাথ পৌঁছোলেন শিলাইদহে। তাঁর যৌবনের স্বপ্নলোক এই স্থান, কেমন লাগল আজ? এমনিতে তো সব আগের মতোই আছে, নীল স্তব্ধ আকাশ, তার তলায় সবুজ চঞ্চল প্রকৃতি, তার একপাশে অবগুণ্ঠিতা বধূর মতো ছায়ায় ঢাকা গ্রাম – বদলায়নি বিশেষ কিছু। তবু, তাঁর শিলাইদহ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সময়ের ফাঁকে। ১৯২২-এর ৫ এপ্রিল শিলাইদহ থেকেই রানুকে লিখলেন, ‘একদিন এই নদীর সঙ্গে আমার কত ভাব ছিল… এখন এসে দেখি সে নদী যেন আমাকে চেনে না।’ আর তার পরেরদিন, ফিরে চলে আসবার দিন, অমিয় চক্রবর্তীকে লিখলেন, ‘যেখান থেকে কিছুদিনের জন্যেও চলে যাই ঠিক সেখানটাতে কিছুতেই আর পৌঁছতে পারিনে।’ এরপরে আর কখনও শিলাইদহে ফিরে যাননি কবি। এরপর আর যাওয়া যায় না। 

    আসলে অতীতের সেই গ্রাম, সেই স্কুল, সেই বন্ধু, সেই পরিবেশ, সেই সমস্তকিছুই তো পাল্টে গেছে। তার সাথে আমি নিজেও পাল্টে গেছি। যে জায়গাটায় আমি তাদের ছেড়ে গিয়েছিলাম, সেই জায়গাটা পাল্টে গেছে। ফলে আমার স্মৃতিতে যেসব সুখ জমে আছে পরবর্তীতে ফিরে গেলেও সেইসব সুখ পাওয়া যায় না। পৃথিবীতে সবকিছুই সময়ের সাথে পাল্টে পাল্টে যায়। ফলে যে বিন্দুতে আমি সেই গ্রামকে ফেলে এসেছিলাম বর্তমানে সেই গ্রামও সেই বিন্দুতে নেই আবার আমিও সেই বিন্দুতে নেই। তাই চাইলেও সেই মিলন আর সম্ভব নয় কোনোভাবেই। এটাই বর্তমান সময়ের হা-হুতাশ।

    ঋত্বিক আজীবন ফিরে যেতে চেয়েছেন তাঁর অতীতে, অখন্ড ভারতবর্ষে। প্রতিবাদ জানিয়েছেন, নিজের অন্তরের বেদনাগুলোকে নিয়ে একের পর এক ফ্রেম সাজিয়ে তুলেছেন সিনেমার পর্দায়। অন্তরের বেদনাকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সকলের মাঝে। দগ্ধ হয়েছেন বর্তমানের হা-হুতাশে, কিন্তু তিনিও সেই অতীতে ফিরে যেতে পারেননি।

    জীবনানন্দ দাশেরও আর নাটোরে তার বনলতা সেনের কাছে ফিরে যাওয়া হয়নি।

    "সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
    সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
    পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
    তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
    সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী— ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
    থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।"

    আমার নিজের চাকুরী থেকে অবসর নেওয়া তখন অল্প কিছুদিন হয়েছে। যদিও স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলাম, তাই বয়স তখনও ষাট পেরোয়নি। অনেকটাই বীতশ্রদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় ছেড়েছিলাম চাকুরী। তবুও অবসর নেওয়ার পরে দিন কাটানো মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ দিনের একটা সিংহভাগ সময় কেটে যেত যাতায়াত আর অফিসে। সে প্রায় দশ ঘণ্টা বা তার বেশি, সকাল ন'টার সময় বেড়িয়ে রাত্রি সাতটা, সাড়ে-সাতটার সময় বাড়ী ফেরা। সকাল থেকে হুড়োহুড়ি থাকতো যতক্ষণ না অফিসে বেরোতে পারছি ততক্ষণ। ফলে হিসেব করলে প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা কোন দিক দিয়ে কেটে যেত বুঝতেই পারতাম না। অফিস থেকে ফিরে তখন একটু আয়েশ করার সময় পেতাম। কিন্তু এখন সেই চৌদ্দ ঘন্টাও তো আয়েশ করার সময়। সারাদিনটাই আয়েশ করার সময়। ফলে সময় কাটানো খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। সকালে বাজারের থলি হাতে বেড়িয়ে পরই বাজারের উদ্দ্যেশ্যে। পথে চায়ের দোকানে চা খেয়ে, দু-চারজনের সাথে একটু খেজুরে আলাপ করে তারপরে বাজারে ঢুকি। উদ্দ্যেশ্যে সময় কাটানো। বাজারে সব দোকানেই দরদাম জিজ্ঞেস করে, ইচ্ছেমত পছন্দ করে ধীরে-সুস্থে বাজার করি। প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগিয়ে দিই বাজার থেকে ফিরতে।

    বাজার থেকে ফিরে আবার এককাপ চা নিয়ে খবরের কাগজ। প্রতিটা খবর পড়ে, অর্থ বুঝে, তর্ক করতে পারার হিসেব-নিকেষ কষে তারপরে স্নানে যাই। আসলে আর কিছুই নয়, সময় কি ভাবে কাটানো যায়। তাই যে কোনো কাজকেই কিভাবে টেনে বাড়ানো যায়। স্নানের পরে ছাদে বাগান পরিচর্যা করি, অবশ্য মাটিতে তখন হাত দিইনা। মাটি ঠিক করা, সার দেওয়া, সেসব বিকেলে। দুপুরে ভাত খেয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়া। বিকেলে বাগান পরিচর্যা করে একটু হাঁটতে বেরোনো। আর সন্ধ্যায় একটু টিভি দেখা, এইসব করে দিন কোনরকমে কেটে যাচ্ছে। 

    মাস খানেক অব্দি অবসর জীবন খুব ভালো লাগছিল। কারণ অফিসের সেই গুঁতোগুঁতি নেই, টেনশন নেই, মেট্রোতে গুঁতোগুঁতি নেই, আকচা-আকচি নেই, বসের ধমক নেই। কিন্তু রোজের নিরামিষ রুটিনে মন ভরবে কেনো? ছোটবেলায় মা খুব বলতো, "থোর-বরি-খাড়া, খাড়া-বরি-থোর"। কেমন যেনো আলুনি জীবন। টেনশন নেই, প্রতিযোগিতা নেই, দৌড়াদৌড়ি নেই। মাস খানেকের পর থেকেই নিরামিষ জীবনের প্রতি উৎসাহ হারাতে থাকলাম। চাকুরীতে থাকাকালীন মনে হত, এত গুঁতোগুঁতির দরকার কিসের? এত টেনশন? এর চেয়ে বাড়ীতে বসে থাকা ভালো, নিশ্চিন্ত জীবন। এখন দেখছি সেই ভাবনা ভুল ছিল। কিন্তু চাকুরী জীবনে আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। কেনো যে স্বেছাবসর নিতে গেলাম!!! আরও কয়েক বছর চাকুরী ছিল, করলেই ভালো হতো।

    এরমধ্যে একদিন বাজারে গিয়ে হঠাৎ করেই প্রদীপের সাথে দেখা হয়ে গেলো। দীর্ঘকাল পরে স্কুল বন্ধুর সাথে দেখা, প্রথমে চিনতে একটু অসুবিধা হলেও, বেশ লাগছিল। পাশে দাঁড়িয়ে বাজার করছে একজন, বেশ চেনা চেনা লাগছে। আমিই শুরু করলাম।
    - আচ্ছা আপনার বাড়ী কি বহরমপুরে?
    - আজ্ঞে, আপনাকে একটু চেনা চেনা লাগছে। আপনার বাড়ী কোথায় বলুন তো।
    - আরে আমারও তো আপনাকে চেনা চেনা লাগছে। আচ্ছা আপনার নাম কি প্রদীপ, মনীন্দ্র বিদ্যা পীঠ, ১৯৮৩ মাধ্যমিক?
    - এইবার ঠিক ধরেছি, তুই সুদীপ্ত না?
    - এই দেখ কতদিন পরে দেখা হলো আমাদের। বাজার যদি হয়ে গিয়ে থাকে চ একটা চায়ের দোকানে একটু বসি, গল্প করি।

    বাইরে এসে একটা চায়ের দোকানে অনেকক্ষন গল্প করলাম দুজনে। সেই ছোটবেলার গল্প। প্রদীপ এখন দুর্গাপুরে থাকে। কলকাতায় মেয়ের বিয়ে হয়েছে, আমাদের বাড়ীর কাছেই। সে কদিন হলো মেয়ের কাছে এসেছে। প্রদীপ দুর্গাপুরে একটা ব্যবসা করে, ফলে ছুটি নেওয়ার ব্যাপার নেই। কালকে সে ফিরে যাবে দুর্গাপুরে।  আমার কথাও বলতে হলো তাকে। গল্প করতে করতে সেই ছোটবেলায় পৌঁছে গিয়েছিলাম দুজনে। সেই স্কুলজীবন। বাড়ী থেকে ফোন এলো দুজনেরই। তাদেরও চিন্তা হচ্ছিল, দুই বুড়ো বাজার থেকে ফিরছে না কেনো? যাইহোক, আর খানিক গল্প করে বিদায় নিলাম প্রদীপের কাছ থেকে। বাড়ীতে রান্না করার ব্যাপার আছে। সেই সময়টাও তো দিতে হবে বাড়ীর লোকদের। নইলে আবার খেতে পাবো না। 

    গল্প করতে করতে দুজনেই নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম। সেই জীবন কত ভালো ছিল, স্কুল, খেলাধুলো, কত কি। শীতকাল মানেই স্কুল, বিভিন্ন ক্লাবের স্পোর্টস। বিভিন্ন ইভেন্টে নাম দেওয়া, প্রাইজ জেতা, দিনগুলোর কথা ভাবলেই চোখে জল চলে আসে। 

    সেদিন সারাদিন ধরে একটা আবেগ, অনুভূতি ছিল শরীর মন জুড়ে। মন আলাদা একটা প্রশান্তিতে ভরে ছিল। রাত্রে খাওয়া সেরে শুতে গেলাম। মনটা ভালো ছিল বলেই বোধহয় ঝট করে ঘুমিয়ে পড়লাম। চারিদিকে সবুজ মাঠ। এত সুন্দর মাঠ আমি জীবনে দেখিনি। মাঠের এক পাশে আমাদের স্কুল কিন্তু মাঠের অন্য দিকগুলোর শেষ দেখতে পাচ্ছি না। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। প্রদীপ আর আমি ক্রিকেট খেলছি। আর কেউ নেই। কোথায় গেলো তারা বুঝতে পারছি না। প্রদীপ ব্যাট করছে তো আমি বল করছি আর আমি ব্যাট করছি তো প্রদীপ বল করছে। প্রদীপ বা আমি, প্রতিটা বলকেই তুলে ছয় মারছি। বল হারিয়ে যাচ্ছে এত জোরে মারছি আমরা। কিন্তু দেখছি বল আবার ঠিক আমাদের হাতে চলে আসছে। কেউ হারছে না আবার কেউ জিতছে না। কি সুন্দর খেলা, এমন খেলা জীবনে খেলিনি কোনোদিন। ঘুম ভাঙলে বুঝতে পারলাম স্বপ্ন দেখছিলাম। অবসর নেওয়ার পরে স্বপনে জাগরণে শুধুই অতীতকে দেখতে পাচ্ছি, অতীতের কাছে ছুটে যেতে মন চাইছে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে প্রদীপের সাথে দেখা করার জন্য মন আর উচাটন হচ্ছে না। একবারের দেখাতেই কি আশ মিটে গেল? নাকি স্মৃতিবিধুরতার ভয়?

    গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকেই সমাজ বদলে যাওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। ষাট আর সত্তরের দশকে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছিলো সমাজ আর আশি-নব্বইয়ের দশকে খুব দ্রুততার সাথে বদলে গেছে সমাজ। আবার বর্তমান শতাব্দীতেও সমাজ বদলে গেছে দ্রুততার সাথে। এটা নেহাতই ভারতবর্ষের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরের চিত্র। আসলে সমাজ পরিবর্তিত হয়েছে চিরকাল। একজন মানুষের ছোটবেলার সমাজের সাথে তার যুবক বয়সের সমাজ মেলে না আবার সেই যুবক বয়সের সমাজের সাথে পূর্ণ বয়সের সমাজ মেলে না। পূর্ণ বয়সের সমাজের সাথে প্রৌঢ় বয়সের সমাজ মেলে না। মানুষ সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যাচ্ছে আর সমাজের পাল্টে যাওয়ার মধ্যে মানুষ যেমন আছে তেমনি সেই সময়ের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পটভূমিও সমানভাবে আছে। এরপরে আছে বয়সের সাথে সাথে মানুষের বদলে যাওয়া কর্মকাণ্ড, চিন্তার প্রভেদ এবং সর্বোপরি বর্তমানের অবস্থান। বর্তমানের অবস্থান ছেড়ে আমরা বাইরে বেরুতে চাইনা। যে মন নস্টালজিক হয়ে পড়ে সেই মনই দেহের আত্মকেন্দ্রিক অবস্থানকে পাল্টাতে চায়না। সাময়িকভাবে মেনে নিলেও অতি সত্বর জানিয়ে দেয়, এই অতীত অবস্থান তোমার বর্তমান অবস্থানের সাথে মেলে না। ফলে সাময়িকভাবে স্কুলে, কলেজে গেলে, পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলে, ছোটবেলার গ্রামে গেলে বা পুরোনো চাকুরী স্থলে গেলে ভালো লাগে, মনের হা-হুতাশে প্রলেপ পরে। কিন্তু স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, এটা পুরোপুরি সাময়িক। মনের পরিপূর্ণ দ্বিচারিতা এখানে প্রকাশ পায়। একদিকে সে অতীতে ফিরে যেতে চায়, কিন্তু বাস্তবে অতীতে ফিরে গেলে আবার বর্তমানে ফিরতে চায়। এক্ষেত্রে বোধহয় আত্মকেন্দ্রিকতাই দায়ী। সেই কারণেই বোধহয় বাকী অর্ধ জুড়ে শুধুই বর্তমানের জন্য হা-হুতাশ। তাই নস্টালজিক হই বটে তবে বর্তমানেই থাকতে চাই। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, অপু বা আমি বা অন্য কেউই ফিরতে পারেনি পছন্দের অতীতে।  মননে হয়তো ভালো লেগেছে পুরোনো দিনের সেই নিশ্চিন্তপুর বা শিলাইদহ কিন্তু দৃষ্টিনন্দন মনে হয়নি। পুরোনো দিনের সেই আত্মিকতার সুতোটা কোথাও যেনো ছিঁড়ে গিয়েছে। মুহুর্তের ভালো লাগাটা নিমেষেই বদলে গিয়েছে বেদনায়, যন্ত্রণায়। ফলে নস্টালজিয়া যে শুধুই স্মৃতিবিধুরতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Bratin Das | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:১৭527705
  • আমি বলি দু:খবিলাস। যাকে আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না তাকে নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন.... 
  • dc | 122.164.***.*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৭527707
  • আমার খুব একটা নস্টালজিয়া হয় না। দুয়েক সময়ে পুরানো কথা মনে পড়ে বটে, কিন্তু কখনোই সেসব জায়গায় ফিরে যাওয়ার কথা মনে হয় না। তাছাড়া আমার ঘটনা বেশী মনে পড়ে, জায়গা না - যেমন প্রথম আমার হবু বৌএর হাত ধরেছিলাম একটা রাস্তা পেরনোর সময়ে, বা আমার মেয়ের জন্মানোর সময়ে সন্ধ্যাবেলা হাসপাতালের করিডরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এইসব নানান ভিডিও সেগমেন্ট। তবে আমার সবসময়েই ভবিষ্যতের কথা ভাবতে বেশী ভালো লাগে।    
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন