এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কুন্তীবিনে কর্ণকথা

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ এপ্রিল ২০২৩ | ৫৬৫ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • পবিত্র জাহ্নবীতীরে, গোধূলী বেলায় আলাপরত দানবীর কর্ণ এবং পাণ্ডব কুলমাতা কুন্তী - এ হয়তো কবির কল্পনা বা মহাভারতের লেখকের কল্পনা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হতে চলেছে, সেই প্রেক্ষাপটে দানবীর কর্ণ ইতিমধ্যেই রিক্ত। প্রায় অপরাজেয় স্তর থেকে তিনি ধরিত্রীর কাছাকাছি নেমে এসেছেন বাসুদেবের ছলনায়। বীরশ্রেষ্ঠ কর্ণের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং মানসিকতাকে দুমড়ে, মুচড়ে এক সাধারণ স্তরে নামিয়ে আনার শেষ প্রচেষ্টাকেই কবির কল্পনায় "কর্ণ - কুন্তী সংবাদ" নাম দেওয়া হয়েছে। রিক্ত কর্ণকে এক সাধারণ স্তরের যোদ্ধায় পরিণত করে অর্জুনের জয় সুনিশ্চিত করতেই বাসুদেবের এই পট প্রস্তুতি। এখানে মুখ্য চরিত্র কর্ণ, পাণ্ডবমাতা কুন্তী স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের পিসি হলেও বর্তমানে বাসুদেবের নির্দেশ বহনকারী মাত্র। বিশ্ববিজেতা, অপরাজেয়, দানবীর কর্ণ, তাঁর জীবনের অমূল্য রক্ষাকবচটিও দেবরাজ ইন্দ্রকে দান করে ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত, অসহায়। মহাবীর কর্ণকে, কুন্তীর বলা কথা বা প্রশ্ন এখানে নিমিত্তমাত্র, কর্ণের মানসিক স্তরের হিসেব বা  বিবর্তনটাই আসল। সারাজীবনের লাঞ্ছনা, গঞ্জনার কারণে উদ্ভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও লক্ষ করার মতো। 

    - মাতঃ, একি স্বয়ং বাসুদেবের ইচ্ছে? আপনার কথা আমার শরীরে, মননে শিহরণ জাগালেও আমি নিরূপায় মাতঃ। মহাপরাক্রমশালী পাণ্ডবদের মাতা আপনি, মহাবীর অর্জুন আপনার গৌরব, যুধিষ্ঠির আপনার ধর্ম, বীরশ্রেষ্ঠ ভীম আপনার বল, স্বয়ং বাসুদেব আপনার পরমাত্মীয়, আপনার মুখে এই সুতপূত্রের কথা কি মানায় মাতঃ? আমি সুতপূত্র, পিতা আমার মহাবীর ও মহামতি ভীষ্মের রথচালক অধিরথ, মাতা রাধা। যুধিষ্ঠির আপনার জ্যেষ্ঠপুত্র, আমি নই, হতে পারিনা, কোনোভাবেই হতে পারিনা। যে পিতা, মাতা আমাকে ছোট থেকে বড় করে তুলেছে, আদর দিয়েছে, ভালোবেসেছে, তাদের প্রতি অসম্মান করতে ধর্ম আমায় বাঁধা দেবে। শয়নে, স্বপনে যে পিতা, মাতার কথা আজও মনে পড়ে, তাদের ছেড়ে এই বৃদ্ধ বয়সে নিজের সুখ, আরামের জন্য নতুন পিতা, মাতার আশ্রয়ে যাই কি করে মাতঃ?

    সূর্যের রক্তিম আভায় দিগন্ত উদ্ভাসিত, পুব আকাশে স্বাতী নক্ষত্রের উজ্জ্বল অধিষ্ঠান। সেই গোধূলী বেলায় সুতপুত্র কর্ণের সাথে মাতা কুন্তীর বাক্যালাপ এক মহাজাগতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার মুখে এও এক ধর্মযুদ্ধ। মাতা কুন্তী এতদিন পরে কেনো তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রকে স্মরণ করলেন? পুরাণ অনুযায়ী কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়ে মহাবীর কর্ণের বয়স ছিল ১০৭ বছর আর মাতা কুন্তীর বয়স ছিল ১২০ বছর। সেই অতি পরিণত বয়সে মাতা - পুত্রের কথোপকথন কবির কল্পনায় রোমাঞ্চ সৃষ্টি করলেও বাসুদেবের কাছে তা অর্জুনের আগামী পথকে কণ্টকমুক্ত করার কূটনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। বাসুদেব উদগ্রীব কর্ণের কথনে।

    - হে মাতঃ, জীবনের এই সায়াহ্নে এসে, এত ঘাত - প্রতিঘাত পেড়িয়ে আমাকে আমার জন্মবৃত্তান্ত মনে করিয়ে দেওয়ার কি কোনো প্রয়োজন ছিল? মাতেঃ, আপনিও রাজা শুরসেনের কন্যা, রাজা কুন্তীভোজের পালিতা কন্যা। আপনি তো বিলক্ষণ জানেন পিতা, মাতার পরিচয় সন্তানের চিন্তাভাবনা, মানসিক স্তরে প্রভাব ফেলে কেমন! আপনার পৃথা নামের শ্রবণ কর্ণকুহরে কি ধরনের ব্যঞ্জনা তৈরী করে তা আমি জানি। তাহলে কেনো এই জীবন সায়াহ্নে জ্যেষ্ঠ কুন্তীপুত্র কথাটি শুনতে বাধ্য করছেন আমাকে? 

    ১৩ বছরের নাবালিকা কুন্তী দুর্বাসা মুনির বরপ্রাপ্ত হয়ে সূর্যদেবকে কামনা করে বসে। ফলে অবিবাহিত অবস্থায় কুন্তী সন্তান প্রসব করে। লোকলজ্জায় সেই সন্তানকে কুন্তী যমুনার জলে ভাসিয়ে দেয়। সেই সূর্যপুত্রকেই যমুনার জল থেকে উদ্ধার করে পালন করেন রথচালক অধীরথ আর তার স্ত্রী রাধা। কর্ণ সেইকারণে সূতপূত্র আর রাধে নামেও পরিচিত। সূতপুত্র হওয়ার কারণেই দ্রোণাচার্য তাকে ব্রহ্মাস্ত্র শিক্ষা দিতে অস্বীকার করেছিল। এমনকি দ্রোণাচার্যের গুরু পরশুরাম ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কাউকে অস্ত্রশিক্ষা দেন না বলে, কর্ণ পরবর্তীতে ব্রাহ্মণ পরিচয় দিয়ে পরশুরামের কাছে অস্ত্রশিক্ষা শুরু করে। শিক্ষা শেষে একদিন পরশুরাম কর্ণের কোলে মাথা রেখে যখন ঘুমোচ্ছিলেন, একটি কীট কর্ণের উরু কামড়ে ধরলেও গুরুর নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটবে বলে কর্ণ মুখ বুজে সেই কষ্ট সহ্য করে। ঘুম থেকে উঠে পরশুরাম সমস্ত বিষয় বুঝতে পেরে নিশ্চিত হন যে কর্ণ ব্রাহ্মণ নয়। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ব্রহ্মাস্ত্র বিদ্যা লাভ করার জন্য পরশুরাম কর্ণকে অভিশাপ দেন যে, দরকারে সে সমস্ত ব্রহ্মাস্ত্র শিক্ষা ভুলে যাবে। কর্ণের পূর্বজীবন সম্পর্কে বাসুদেব জ্ঞাত অবশ্যই কারণ তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, ভবিষ্যত সম্পর্কেও নিশ্চিতভাবেই অবগত। তবুও বর্তমানের ওপরেই যেহেতু ভবিষ্যত দাঁড়িয়ে তাই বাসুদেব চিরকালই বর্তমানকে উপেক্ষা করেননি। বর্তমানে তিনি উৎকন্ঠিত, কর্ণের অযাচিত অতীত জানার পরের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।

    - মাতঃ, আমি রাধে, আমার ক্ষত্রিয় কুলে জন্ম, ক্ষত্রিয় আমার ধর্ম। আমার পিতা, মাতা অত্যন্ত কষ্ট করে আমাকে বড় করে তুলেছে। অস্ত্র শিক্ষা করতে সাহায্য করেছে। তাঁদের আশীর্বাদেই আমি দুর্যোধনের রাজসূয় যঞ্জ উপলক্ষে পৃথিবীর সমস্ত যোদ্ধাদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়েছি। মাতেঃ, আমি সুতপূত্র বলে গুরু দ্রোণাচার্য যেদিন আমাকে ব্রহ্মাস্ত্র বিদ্যা শেখাতে অস্বীকার করেছিলেন, সেইদিন যদি জানতাম আমি জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব তবে আমি পৃথিবী শ্রেষ্ঠ ধনুর্বীর হতে পারতাম। আমাকে ছলনা করে গুরু পরশুরামের কাছে ব্রহ্মাস্ত্র বিদ্যা শিখতে হত না। সেই ছলনার কারণেই আমি মাথায় গুরু পরশুরামের অভিশাপ বয়ে নিয়ে চলেছি আজও। মাতঃ, এই জীবন সায়াহ্নে পাণ্ডব জ্যেষ্ঠ পুত্রের মর্যাদা আমাকে আর বিচলিত করে না। মনের কোণে হয়তো লোভ বাসা বাঁধত, যদি সেইদিন গুরু দ্রোণাচার্যকে সবিনয়ে উত্তর দিতে পারতাম, আমি জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব। সারাজীবন ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন করে এসে এই বয়সে ধর্মচ্যুত হতে আজ্ঞা করছেন কেন মাতেঃ?

    ১২০ বছর অব্দি তাঁর প্রথম পুত্রের কথা গোপন রেখে হঠাৎ করে কেন মাতা কুন্তীর পুত্রস্নেহ জেগে উঠলো? সেকি শুধুই প্রায়শ্চিত্ত নাকি এর পেছনে বাসুদেবের কোনো ছলনা? নাকি মধ্যম পুত্র অর্জুনকে রক্ষা করার জন্য। বাসুদেব এবং কুন্তী খুব ভালো করে জানতেন যে পৃথিবীতে যদি অর্জুনকে কেউ যুদ্ধে হারাতে পারে তাহলে সে পিতামহ ভীষ্ম নয়তো কর্ণ। পিতামহ ভীষ্মের সবচেয়ে স্নেহের পাত্র ছিল অর্জুন, ফলে তিনি অর্জুনের মৃত্যুর কারণ হবেন না এটা নিশ্চিত ছিল। বাকী সম্ভাবনার অন্তর্জলী যাত্রার জন্য এই পুত্র প্রেমের উত্থাপন নয়তো? নিশ্চিতভাবেই এ বাসুদেবের ছলনা। ব্রহ্মার শ্রেষ্ঠত্বের দাবীকে নস্যাৎ করার এটাই একমাত্র উপায়। দেবাদিদেব মহাদেবকে তিনি কথা দিয়েছেন, শ্বেতজকে তিনি জিততে দেবেন না, রক্তজের শ্রেষ্ঠত্ব তিনি প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বেন। কর্ণের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হওয়া খুবই জরুরী এবং সেইকারনেই বাসুদেবের এত উৎকণ্ঠা। কর্ণের প্রতিটি উত্তর তাঁর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    - সেইদিন আমি সম্মুখসমরে অর্জুনকে যখন আহ্বান করেছিলাম সর্বসমক্ষে, তখন অর্জুন সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি, আমি সুতপূত্র বলে। আপনি সশরীরে উপস্থিত ছিলেন সেখানে। পিতামহ ভীষ্ম, গুরু দ্রোণাচার্য, কৃপাচার্য, মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র সকলেই উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সেদিন, কেন মাতঃ আপনি নিশ্চুপ ছিলেন? দূর্যোধন যখন আমাকে অঙ্গদ রাজ্যের রাজা করে কৌলিন্য দান করলো, তখনও আপনি সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। তবুও কেন মাতঃ আপনি নিশ্চুপ ছিলেন? পঞ্চ পাণ্ডব প্রত্যেকে যথেষ্ঠ বয়স্ক, তারাও নিশ্চয়ই কেউ একথা জানেনা। আমার ছেলেবেলা, ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা সবটাই তো এই হস্তিনাপুরে, মাতঃ, আপনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন, চিনেছেন। তাহলে এত দেরী কেনো? সুতপুত্রের লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সারাজীবন বয়ে বেড়িয়েছি মাতঃ, একমাত্র দূর্যোধন আমাকে কুলীন করেছে। এই জীবন সায়াহ্নে এসে মাতঃ কুলপরিচয়ের আর প্রয়োজন কি?

    পুত্র প্রেম হতে পারে নিশ্চয়ই, নাহলেও আজকের এই রণাঙ্গনে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগে পাণ্ডব কুলমাতা কুন্তীকে আসতেই হতো জ্যেষ্ঠ পান্ডবের কাছে। এ যে জন্মান্তরের বৃত্তান্ত। রামায়ণ যুগের কিষিন্ধ্যার বানররাজ সুগ্রীব ছিলেন সূর্যদেবের পুত্র। আর তার ভাই মহাশক্তিধর বালি ছিলেন দেবতাদের রাজা ইন্দ্রের পুত্র। বালি এতই শক্তিধর ছিলেন যে, একদিন সান্ধ্যকৃত্য করার সময় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় রাক্ষসরাজ রাবণ বালির উপর আক্রমণ করে বসেন। কিন্তু বালি ধ্যানমগ্ন অবস্থায় থেকেই নিজের লেজ দিয়ে রাবণকে ধরে এনে নিজের বাহুতলে ঢুকিয়ে রাখেন। এই বালী কপটতার আশ্রয় করে সুগ্রীবকে সিংহাসনচ্যুত করেছিলেন। আর তাই সুগ্রীব শ্রীবিষ্ণুর অবতার শ্রীরামচন্দ্রের সাহায্য নিয়ে তার সেই মহাশক্তিধর ভাই বালিকে বধ করতে ছল রচনা করেছিলেন। ঐ ছল রচনার রেশ ধরেই সুগ্রীব অভিশাপগ্রস্ত হয়েছিলেন এবং রামায়ণ যুগ শেষ হওয়ার পর ও মহাভারত যুগ শুরুর আগে তিনি এক রাক্ষস হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন। সেই রাক্ষসের নাম ছিল দম্ভোদভব। পূর্বজন্মে সূর্যপুত্র সুগ্রীব পরজন্মেও দম্ভোদভব রূপে সূর্যের পরমভক্ত ছিলেন। তিনি কঠোর আরাধনা করে সূর্যদেবকে প্ৰসন্ন করে বর হিসেবে সহস্রকবচ সম্বলিত এক মহাশক্তিশালী সুরক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেই কবচগুলোর বিশেষত্ব ছিল এই যে, কেউ এই সহস্র কবচের শুধুমাত্র একটি কবচ ধ্বংস করতে চাইলে এক হাজার বছর তপস্যার করতে হবে। শুধু তাই নয়, দম্ভোদভবের সেই একটিমাত্র রক্ষাকবচ ধ্বংস করার পরিনাম হিসেবে তাঁর জীবনীশক্তি শেষ হয়ে যাবে এবং তাঁর মৃত্যু হবে। মোটকথা দম্ভোদভব যে বর পেয়েছিলেন তা প্রায় অমরত্বের সমান। তাই  হাজার কবচ প্রাপ্তির পর দম্ভোদভব রাক্ষস সহস্রকবচ নামে পরিচিত হয়ে উঠলেন। আর এমন বজ্র কঠিন সহস্রকবচের সুরক্ষা পেয়ে স্বাভাবিকভাবে মহা অত্যাচারী হয়ে উঠলেন দম্ভোদভব। দম্ভোদভবের এহেন অত্যাচারে যখন সৃষ্টির ভারসাম্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠল তখন দেবাদিদেব মহাদেবের পরামর্শে ভগবান বিষ্ণু দুই অংশে বিভক্ত হয়ে জমজ শিশুরূপে জন্ম নিলেন। তাদের নাম হল নর ও নারায়ণ। নর-নারায়ণের মানবাত্মা হলেন নর এবং দিব্যাত্মা হলেন নারায়ণ এবং নর ও নারায়ণ উভয়েই ছিলেন স্বয়ং নারায়নের অংশ। নরনারায়ণ জানতেন হিমালয়ে কেদার নামক পর্বতশৃঙ্গটি মহাদেবের অত্যন্ত প্রিয় এবং বহুকাল আগে থেকেই মহাদেবের আশীর্বাদ ছিল যে, এখানে যদি কেউ একদিন ধ্যান করে সেটা হবে এক হাজার দিন ধ্যানের সমান। একটা সময় নর ও নারায়ণ সেই কেদারশৃঙ্গে গিয়ে মহাদেবের শিষ্যত্ব বরণ করেন এবং মহাদেব কর্তৃক মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের জ্ঞান লাভ করে ধ্যানে লীন হয়ে যান। তাদের এই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কেটে গেল বহুকাল। এক সময় রাক্ষস সহস্রকবচের নিকট সংবাদ পৌঁছাল যে, নর ও নারায়ন নামক দুই ঋষি বহুকাল যাবৎ হিমালয়ের এক পর্বতে ধ্যানমগ্ন হয়ে আছে, এবং তারা এতটাই শক্তি সঞ্চিত করেছে যে, তাদের মন্ত্র উচ্চারণের তেজে পুরো হিমালয় পর্বতমালা প্রকম্পিত হচ্ছে। চিন্তিত হয়ে পড়লেন সহস্রকবচ। তারপর একদিন নর ও নারায়ণের উপর আক্রমণ করে বসলেন তিনি। নর নারয়ণের একজন সহস্রকবচের সাথে একদিন যুদ্ধ করেন, অপরজন সেদিন তপস্যা করে এক হাজার বছরের তপস্যার ফল সঞ্চয় করেন। এভাবে একটি একটি করে কবচ ধ্বংস করতে থাকলেন তারা। এবং প্রতিবার কবচ ধ্বংস করার পর যখন তাদের জীবনীশক্তি শেষ হয়ে যায় তখন একজন আরেকজনকে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রবলে বাঁচিয়ে তোলেন। এভাবে যখন সহস্রকবচের ৯৯৯ টি ধ্বংস হল, তখন সহস্রকবচ পালিয়ে সূর্যদেবের আশ্রয়ে চলে গেলেন এবং সূর্যদেব তাকে নর ও নারায়নের হাত থেকে রক্ষা করতে তার অবশিষ্ট একটি কবচসহ দেবী কুন্তীর গর্ভে স্থাপন করে দেন। কুন্তীর সেই পুত্রই হচ্ছেন কর্ণ, যাকে আমরা সূর্যপুত্র কর্ণও বলে থাকি। আর নর নারায়ণ?  তাঁরা আর কেউ নন, নর হলেন কুন্তীপুত্র অর্জুন এবং নারায়ণ হলেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। এতো গেলো হরিবংশ পুরাণের কথা। আবার পদ্মপুরাণ বলছে, একদা ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মধ্যে ব্রহ্মাণ্ডের ভারসাম্য বজায় রাখতে কার ভূমিকা বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু এই কথোপকথন এক পর্যায়ে আলোচনা থেকে পরিনত হয় তর্কে। শেষমেশ এই তর্ক যখন ঝগড়ায় রূপ নেয় তখন মধ্যস্থতা করতে আসেন দেবাদিদেব মহাদেব। শিব ব্রহ্মাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনাদের এই তর্কের কারণ কী?’ ব্রহ্মা বলেন, ‘আমি যা বলছি তা-ই সত্য। আমিই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সকলকে সৃষ্টি করেছি। তাই আমার কাজই সব থেকে মহান। আমি না থাকলে কেউ থাকত না। এমনকী বিষ্ণুও নয়, মহাদেবও নয়।’ ব্রহ্মার কথায় শিব প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হন। শুরু হয় ব্রহ্মা ও শিবের মধ্যে বাদানুবাদ। এক পর্যায়ে ব্রহ্মা নিজের মাথার ঘাম নীচে ফেলে বলেন, ‘আমার এই ক্রোধের ঘাম থেকে এক অসুরের জন্ম হোক।’ এরপর ব্রহ্মার সেই ঘাম থেকে এক ভয়ানক অসুর উৎপন্ন হয় যার নাম দেওয়া হয় ‘শ্বেতজ’। তার শরীরে এক হাজার কবচ। এ জন্য তাকে সহস্রকবচও বলা হয়। ব্রহ্মা শ্বেতজকে আদেশ দেন, ‘তুমি এখনই মহাদেবকে হত্যা করে আমার অপমানের বদলা নাও।’ ব্রহ্মার ঘাম থেকে উৎপন্ন অসুর স্বল্পশক্তিমান নয় এটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন শিব। তাই তিনি বিষ্ণুর সাথে পরামর্শ করতে শুরু করলেন। শ্রীবিষ্ণু মহাদেবকে বলেন, ‘আপনি আমার ডান হাতে আঘাত করে রক্তাক্ত করুন, সেই রক্তে আপনার তেজ মিশিয়ে দিন। এর ফলে আর এক অসুরের সৃষ্টি হবে, যে হবে আপনার ও আমার মিলিত শক্তির অধিকারী। সেই অসুরই একমাত্র শ্বেতজকে পরাজিত করতে পারবে।’ এরপর মহাদেব ত্রিশূল দিয়ে বিষ্ণুর ডান হাতে আঘাত করেন এবং বিষ্ণুর হাত থেকে রক্তপ্রবাহ শুরু হয়। সেই রক্তের ধারার সাথে মহাদেবের তীব্র দৃষ্টি ও বজ্রপাত একীভূত হয়ে উৎপন্ন হল সহস্র বাহুযুক্ত এক বিশাল অসুর, যার নাম দেওয়া হল ‘রক্তজ’। এরপর মহাদেব রক্তজকে আদেশ করেন শ্বেতজের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করতে। শুরু হল শ্বেতজ ও রক্তজের মধ্যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। তারা একে অপরকে পরাজিত করার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু বহুকাল থেকে চলতে থাকা এই যুদ্ধে কেউ কাউকে পরাজিত করতে সক্ষম হলেন না। শেষমেশ শ্বেতজ, রক্তজের ৯৯৮টি হাত কেটে দেন এবং রক্তজ, শ্বেতজের ৯৯৯টি কবচ ভেঙে দেন। এবার ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর একসাথে বুঝতে পারলেন, এভাবে যুদ্ধ চলতে থাকলে মহাজাগতিক প্রলয় সংগঠিত হবে। তাই এই যুদ্ধ এখনই থামিয়ে দেওয়া উচিত। ব্রহ্মা বললেন, ‘এটা নিশ্চিত যে শ্বেতজ যে কোন সময়ে রক্তজকে হত্যা করতে পারত। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে আপাতত যুদ্ধ থেমে যাক। কিন্তু এই যুদ্ধ তাদের পরের জন্মে আবার শুরু হবে এবং তখন তার পরিণাম ঠিক হবে।’ ব্রহ্মার কথায় রাজি হলেন বিষ্ণু ও শিব। এভাবেই দুই ভয়ঙ্কর অসুরের যুদ্ধ থেমে যায়। শ্বেতজের পুনর্জন্মের দায়িত্ব দেওয়া হয় সূর্যদেবকে এবং রক্তজের পুনর্জন্মের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইন্দ্রদেবকে। কিন্তু ইন্দ্রদেব রক্তজের জন্ম-দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। তিনি বিষ্ণুকে বলেন, ‘আপনি এর আগে রাম অবতারে আমার মানসপুত্র বালীকে বধ করেছেন। কিন্তু পরের জন্মে রক্তজ মারা গেলে আমি তার জন্ম দায়িত্ব নেব না।’ ইন্দ্রদেবের কথা শুনে বিষ্ণু তাঁকে গোপনে আশ্বস্ত করলেন ‘আপনি নিশ্চিত থাকুন দেবরাজ, পরের জন্মে আপনার মানসপুত্র রক্তজ, শ্বেতজকে অবশ্যই হত্যা করবে।’ আর এভাবেই পরের জন্মে শ্বেতজ কর্ণরূপে ও রক্তজ অর্জুনরূপে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পূর্বজন্মের যুদ্ধের ফলাফল মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সম্পন্ন হয় একসাথেই, যেখানে অর্জুনরূপী রক্তজ কর্ণরূপী শ্বেতজকে হত্যা করেন। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণের এইসব অজানা নয়, ভবিষ্যতও তিনি সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত। বরং ঘটমান বর্তমানকে আর কর্ণের ক্রমে ক্রমে শিথিল হয়ে আসা মানসিকতাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চাইছেন। কর্ণের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ তাই তাঁর মনে হিন্দোল তুলছে।

    - তবুও বলি, এই রণাঙ্গনে আপনার আসার হেতু কি জানতে পারি মাতঃ? আমি কৌরব সেনাপতি, আপনি পাণ্ডব কুলমাতা। আমার কাছে আপনার প্রয়োজন কি থাকতে পারে মাতঃ? আমি শাপভ্রষ্ট, গুরু পরশুরামের অভিশাপেই আমার ভবিষ্যত নির্ধারিত হয়ে আছে। তবু মাতেঃ, আমার কাছে কি চাওয়ার থাকতে পারে? অর্জুন তো বিজয় চুম্বন করেই ফেলেছে বাসুদেবের কৃপায়।

    কুলমাতা কুন্তী না জানলেও বাসুদেব তো ত্রিকালদ্রষ্টা, স্বয়ং ভগবান। তিনি জানেন কর্ণকে হারতেই হবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে। কর্ণ যে শ্বেতজ, রক্তজের কাছে তার পরাজয় আগের জনমেই নিশ্চিত হয়ে আছে। তবুও মূল লড়াইটা তো ব্রহ্মার সাথে, ফলে বাসুদেব এই লড়াইকে কোনোভাবেই লঘু করে দেখতে চান না। একদিকে দেবরাজ ইন্দ্রকে পাঠিয়ে চতুরতার সাথে কর্ণের কবজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে আগের জনমের পরে থাকা কবজটিও চলে গেছে শ্বেতজের, এখন সে আর অজেয় নয়। পাশাপাশি অর্জুনকে তৈরী করা হয়েছে লক্ষভেদ করার জন্য। বিভিন্ন ব্রহ্মাস্ত্র, এমনকি তার চেয়েও অনেকবেশী ক্ষমতাশালী অস্ত্রের ভান্ডার তৈরী করে দেওয়া হয়েছে অর্জুনকে। তবুও শত্রুর যেমন শেষ রাখতে নেই, তেমনি সম্ভাবনারও শেষ রাখতে নেই। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেওয়ার জন্যেই পিসি কুন্তীকে দিয়ে এই শেষ চালটা দিয়েছেন স্বয়ং বাসুদেব। মানবশরীর ধরে মর্ত্যে বাস করেও যদি শ্বেতজকে জেতানো না যায় তাহলে স্বর্গে আর মুখ দেখানো যাবে না আর মর্ত্যেরও কেউ মানবে না। সুতরাং কোনো সম্ভবাবনাকেই বাদ দিচ্ছেন না বাসুদেব, শ্বেতজের জয়ের সমস্ত পথ অবরুদ্ধ করে দিতেই হবে। বর্তমানের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি পল তাঁর উৎকণ্ঠাকে বাড়িয়ে তুলছে কিনা বোঝা না গেলেও তিনি কর্ণের প্রতিটি আচরণের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছেন।

    - দেবরাজ ইন্দ্রকে আমার অবশিষ্ট কবজখানিও দান করেছি। আমার কাছে প্রাণটা ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই দেওয়ার মত মাতঃ। তবুও যদি আমার কাছ থেকে আপনার কিছু চাওয়ার থাকে বলুন মাতঃ।

    ত্রিকালদ্রষ্টা বাসুদেব, সবই দেখতে পাচ্ছেন, পিসিকে কর্ণের কাছে পাঠিয়েও শান্তি নেই বাসুদেবের মনে। যেভাবেই হোক কর্ণকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত না করতে পারলে শান্তি আসবে না মনে। ভূমিকা তো হলো অনেক, পিসি কেনো যে আসল কথাটা এখনও বলছে না, যেটা শোনার জন্য বাসুদেব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। উত্তরটা কর্ণের যাইহোক না কেন, সে যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, বাসুদেব নিশ্চিত।

    - মাতঃ, এ কি প্রস্তাব আমার কর্ণকূহরে প্রবেশ করলো? যুধিষ্ঠির আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র, আমি সুতপুত্র রাধে। দূর্যোধন আমায় কৌলিন্য দান করেছে, আমি দুর্যোধনের প্রতি কৃতজ্ঞ। দূর্যোধনকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য, ধর্ম। আপনার প্রস্তাবমত দুর্যোধনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কিংবা যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা, দুটোই আমার কর্তব্যের ও ধর্মের বিপরীত। পিতা অধীরথ, মাতা রাধা, গুরু দ্রোণাচার্য বা পরমগুরু পরশুরাম, কেউই আমাকে ধর্ম থেকে বিচ্যুত হতে শেখান নি। এ পাপ, এ আমার ধর্মে সইবে না। 

    বাসুদেবের চোখের কোণ দুটো চিকচিক করে উঠছে। কর্ণের মুখের পেশীর সঞ্চালন বলে দিচ্ছে মানসিক হতাশার কথা, অঙ্গ সঞ্চালন বলে দিচ্ছে সে কতটা উত্তেজিত এবং বিরক্ত। এই উত্তেজনা আর বিরক্তি থেকেই তো হতাশার উন্মেষ, ধীরে ধীরে এবার কর্ণ বিদ্ধস্ত হয়ে পড়বে। বাসুদেবের এটাই তো ইচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে ভেঙে পড়ছে কর্ণ। মাতা কুন্তীর দিক থেকে আর দু চারটে কথা ধেয়ে এলেই বাকী কাজটা সম্পূর্ণ হবে। গোধূলীবেলাতেও বাসুদেবের চোখের ভাষা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে, সেই মুহূর্ত আর বেশী দূরে নয়। বাসুদেব অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন সেই মুহূর্তের অপেক্ষায়।

    - মাতঃ, এই বৃদ্ধ বয়সে এসে সিংহাসন কোন কাজে আসবে? সিংহাসনের জন্য আপনার ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির আছে। আমার জন্য না হয় শুধু কণ্টকাকীর্ণ মরুভূমিই থাকুক। ক্ষত্রিয় ধর্ম থেকে বিচ্যুত হতে পারবো না। মাতৃক্রোড় বলতে বাকী জীবনে মাতা রাধার কথাই স্মরণ করতে দিন আমায়। আপনি যদি পঞ্চপাণ্ডব বা অর্জুন সম্পর্কে ভীত হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি যে, আমি অর্জুন ছাড়া কোনো পাণ্ডবকেই যুদ্ধে হত্যা করবো না। আপনার পঞ্চপাণ্ডব যুদ্ধের পরেও পাঁচজনই থাকবে। জন্মের পরেই যেমন আমাকে আপনি নামহীন, গোত্রহীন করেছেন, আজও আমায় তেমনিই থাকতে দিন। রাজত্ব, কুলগৌরব, বংশপরিচয় আমাকে এই বৃহৎ জীবনে অনেক বিপর্যস্ত করেছে। আমার ভাবনা চিন্তার পরিমণ্ডল থেকে এই গালভরা বিশেষণগুলো অনেককাল আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। কুলগোত্রহীন এই মানুষটিকে ন্যূনতম পরিচয় প্রদান করেছে দূর্যোধন, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, যে হাতে আজ অব্দি কোনো গোপন অস্ত্র খুঁজে পাইনি আমি, শুধুই বন্ধুত্বের ভালোবাসা আর স্নেহ পেয়েছি। সেই হাতকে ত্যাগ করা ক্ষত্রিয় ধর্মের অপমান। যাওয়ার আগে শুধু আশীর্বাদ করে যান, জীবনের শেষদিন অব্দি যেন ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন করে যেতে পারি। ক্ষমতা, সিংহাসন, রাজ্য - রাজত্ব, যশের লোভ যেন আমায় স্পর্শ করতে না পারে। এই সুতপুত্রের প্রণাম গ্রহণ করুন মাতঃ। জীবনে হয়তো এটাই আমাদের শেষ দেখা।

    গোধুলীর শেষ রক্তিম আলোয় ধীর গতিতে বিদায় নিচ্ছে দানবীর কর্ণ। অসহায়, রিক্ত, বিপর্যস্ত কর্ণ। প্রতিটি পদক্ষেপে সেই ছাপ স্পষ্ট, আলো আঁধারির মধ্যেও বাসুদেবের চোখে পরিষ্কার, বিদ্ধস্ত সেই কর্ণের চোখের জল। তবুও মনের কোণে কোথাও একটু অসম্পূর্ণতা থেকেই যাচ্ছে বাসুদেবের, 'শেষ হয়েও হইলো না শেষ' - এর ব্যঞ্জনা রয়েই যাচ্ছে মনের গহীন কোনো কোণে। যেটুকু শোনা যাচ্ছে, যুদ্ধের প্রথম দিনে কৌরব শিবিরে প্রধান সেনাপতির দ্বায়িত্ব পালন করবেন স্বয়ং ভীষ্ম। কিছু মতবিরোধের কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে কৌরবপক্ষের হয়ে দেখা যাবে না মহাবীর কর্ণকে। হয়তো বা ভীষ্ম যতদিন অপরাজেয় থাকবেন ততদিনই কর্ণের প্রবেশ ঘটবে না কুরুক্ষেত্রে। কর্ণ অনেকদিন সময় পেয়ে যাবে হয়তো, যুদ্ধক্ষেত্রে আগমনের আগে এই নিঃস্বতা কেটে যাবে অনেকটাই। শ্বেতজ কি তবে আগের জন্মের মতোই অজেয় থেকে যাবে এই জন্মেও? ব্রহ্মার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে হবে বাসুদেব আর মহাদেবকে? মনে এলোমেলো চিন্তা নিয়েই ধীরগতিতে বাসুদেব এগিয়ে গেলেন পাণ্ডবমাতা কুন্তীর দিকে। কুন্তী বাসুদেবকে দেখতে পেয়ে চোখের জল সংবরণ করে বাসুদেবের হাতদুটো নিজের হাতে টেনে নিলেন স্নেহের পরশে, যে স্পর্শে বাসুদেব অনুভব করলেন আগামীদিনে রক্তজের বিজয়রথের শব্দ। আনন্দে চোখদুটো চিকচিক করে উঠলো বাসুদেবের।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন