এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নবান্ন - सर्वधर्मेषु एकरूपम्

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ এপ্রিল ২০২৩ | ৫৬৮ বার পঠিত
  • নবান্ন অর্থে নব অন্ন, অর্থাৎ নতুন অন্ন। নতুন অন্ন বলতে আদিম আমল ধরলে বলা যায়, দীর্ঘক্ষণ বা দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকার পরে কোনো খাদ্যের সংস্থান হওয়াটাকে নতুন অন্ন বলা যায়। আবার মধ্যযুগ বা আধুনিক যুগের কথা মানে, চাষবাস রপ্ত হওয়ার পরের কথা ধরলে বলা যায়, নতুন ফসল ওঠার পরে নতুন করে খাদ্যের সংস্থান হওয়া। মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলো অর্থাৎ খাদ্য, বাসস্থান, জন্মের পর থেকে গড়ে ওঠা মৃত্যুভয় ইত্যাদির মধ্যে কিন্তু অদ্ভুতভাবে লক্ষ করা যায় ধর্মের অনুপস্থিতি। খাদ্য আমাদের প্রথম জৈবিক চাহিদা, এরপরে থাকার জায়গা। আদিমকাল মানে, মানুষকে যখন প্রাণীহত্যা করে ক্ষুন্নিবৃত্তি পালন করতে হতো, তখন থেকেই মানুষের মনে মৃত্যুভয় অর্থাৎ ক্ষুন্নিবৃত্তি পালন করতে বেড়িয়ে পুনরায় বাসস্থানে ফিরে না আসায় ভয় কাজ করতো। এখনও সুন্দরবনে মানুষেরা যখন মধু সংগ্রহ করতে যায় তখন ফিরে না আসার ভয় কাজ করে। এই ক্ষেত্রগুলোতে মানুষ যে আনন্দ অথবা ভয়ের উৎসব পালন করে সেখানে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই দেখা যায়, সর্বধর্মের একই রূপ। কোনো প্রাণী হত্যা করার পরে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারার কারণে বা নতুন ফসল ঘরে ওঠার পরে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সংস্থান করতে পারার কারণে মানুষ যুগ যুগ ধরে উল্লসিত হয়েছে। এই উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আমোদ, আহ্লাদ বা নৃত্যের মধ্যে দিয়ে। এতে দেশ, কাল, জাতি বা ধর্মের কোনো প্রভাব কোনোকালেই লক্ষ করা যায়নি। আবার ক্ষুন্নিবৃত্তি পালন করতে বেড়িয়ে পুনরায় বাসস্থানে ফিরে না আসায় যে ভয় মানুষের মনে চিরকাল কাজ করে এসেছে, সেই অজানা আতঙ্ক বা ভয়কে জয় করার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই সে যুগ যুগ ধরে নতজানু হয়েছে কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কাছে। এর মধ্যেও দেশ, কাল, জাতি বা ধর্মের কোনো প্রভাব কোনোকালেই লক্ষ করা যায়নি।

    উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দক্ষিণ ফ্রান্সের ‘টোরেস ফেরেস’ গুহাগাত্রে পাথর খোদাই করে অঙ্কিত হরিণের চামড়া ও শিং পরে নৃত্যরত মানুষের চিত্রসহ আরও অনেক গুহাচিত্র থেকে সমাজ বিজ্ঞানীরা এমনটাই মনে করেন যে, এটা খাদ্য সংগ্রহের উৎসব। আফ্রিকার ব্যুশম্যান উপজাতির মধ্যে আজও প্রচলিত ‘কৃষ্ণষাঁড় নৃত্য’, যা  খাদ্য সংগ্রহের সাফল্যকেন্দ্রিক একটি প্রাচীন উৎসব। এ ধরনের উৎসব আদিম মানুষকে খাদ্য আহরণে সংঘবদ্ধ ও সাহসী করেছে। সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় মানব সভ্যতার যখন ‘খাদ্য আহরণ’ যুগ থেকে ‘খাদ্য উৎপাদন’ অর্থাৎ কৃষি অর্থনীতির যুগে উত্তরণ ঘটে তখন ফসল উৎপাদনের পেছনে কোন না কোন অদৃশ্য দৈবশক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করে মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে নানা বিশ্বাস ও সংস্কার। যার ভিত্তিতে ফসল উৎপাদন কেন্দ্রিক উৎসবের ধরন বৈচিত্রপূর্ণ এবং তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে। বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ ধরনের দৈবশক্তির সাহায্য প্রার্থনা করে নানা আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-অর্চনা যুক্ত হয়েছে এসব উৎসবে।

    আমরা বর্তমান সমাজে উৎসব আর ধর্মীয় আচারের পার্থক্য করতে ভুলে গেছি। হয় আমাদের কাছে সারা বছরের সব অনুষ্ঠানই উৎসব নইলে ধর্মীয় আচার। নবান্ন কিন্তু একটা উৎসব, কোনো ধর্মীয় আচার নয়। উৎসবে ধর্মীয় গণ্ডি বা বিভেদ থাকে না। একাধিক দেশের বা একাধিক জাতির লোকেরা যখন কোনো অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে তখন তা উৎসবে পরিণত হয়। যেমন বর্তমানে বড়দিন বা পয়লা জানুয়ারী বা দুর্গোৎসব বা আরও কিছু ধর্মীয় আচার একাধিক জাতি বা একাধিক দেশের লোকের অংশগ্রহণে উৎসবে পরিণত হয়েছে। নবান্নও তেমনি একটা উৎসব, পার্থক্য শুধু একটাই, উপরিউক্ত ধর্মীয় আচারগুলো অনেক পরে উৎসবে পরিণত হয়েছে আর নবান্ন শুরু থেকেই উৎসব ছিল, এখনও আছে।

    প্রমাণস্বরূপ বলা যায়, হিন্দু সমাজে নবান্ন উপলক্ষে নতুন চালের তৈরি পায়েশ-পোলাও, পিঠা-পুলিসহ রকমারি খাদ্য-সামগ্রী পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়। পাশাপাশি পালন করা হয় সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নানা আচার-অনুষ্ঠান। ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী এসব আচার- আনুষ্ঠানিকতায় বৈচিত্র রয়েছে। পাশাপাশি মুসলিম সমাজে নতুন ফসল ঘরে ওঠার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্য বাড়ি বাড়ি কোরান বিলি করা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, মসজিদ ও দরগায় শিরনির আযোজন করা হয়।

    হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী অন্ন লক্ষ্মীতুল্য। তাই তারা এ দেবীর উদ্দেশ্য পূজা-অর্চনার আয়োজন করে। এছাড়া, নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়জনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলী’। অতীতে পৌষ সংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল। হিন্দু শাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুসারে নবান্ন উপলক্ষে খাদ্য কাককে দিয়ে থাকে। শাস্ত্র মতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ অর্থাৎ কাকবলী না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়। মুসলিম এবং আদিবাসী সমাজের লোকেরাও তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি-নীতি, বিশ্বাস ও প্রথা অনুযায়ী নবান্ন উৎসব পালন করে থাকে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন নামে বা ধরনে নবান্ন পালিত হয়।

    যন্ত্রনির্ভর সভ্যতার বয়স মাত্র দুশো বছর হলেও কৃষির ওপর ভিত্তি করেই ২০ থেকে ৩০ হাজার বছর ধরে জীবনযাপন করে এসেছে মানুষ। কৃষিকাজের কল্যাণেই যাযাবর মানুষ থিতু হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে যাযাবর বা থিতু জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বজ্র, বৃষ্টি, বিদ্যুৎ আগুনের মতো নতুন এক শক্তির অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে থাকে আদিম মানবগোষ্ঠী। একই কথা বলা যায় ফসলের ক্ষেত্রেও। প্রথমে উদ্যান চাষ তারপর বৃহত্তর কৃষিক্ষেত্র। নীরস, নির্জীব মৃত মাটি ফুঁড়ে জন্ম নেওয়া সজীব অঙ্কুর মানুষকে বিস্মিত করে। কৃষির উদ্ভাবন ঘটেছে নারীর হাত ধরে। তাই অধিকাংশ প্রাচীন পুরাণ কাহিনিতে ফসলের দেবশক্তিকে নারীরূপে কল্পনা করা হয়েছে। দিমিতির, সিরিস, আইসিস, ইশতার, ফ্রিয়া, ফ্লোরা এরা সকলেই হয় ফসলের নয়তো উর্বরতার দেবী। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই শরৎ ও হেমন্ত একই ঋতু। অটামে ফসল ওঠার পর তাই আদিম সমাজগুলোতে নানা রকম আচার-অনুষ্ঠান পালনের রীতি গড়ে ওঠে অথবা দেবীপূজার আয়োজন চলে। কখনও সার্বজনীন পূজা হিসেবে আবার কখনও দৈবশক্তির প্রতি গভীর সন্মানবশতঃ ফসলের দৈবশক্তিকে আরাধনা করা হয়। শীতে উদ্ভিদের মৃত্যু আবার বসন্তে বীজ থেকে তার জেগে ওঠা এবং হেমন্তে ফসল ঘরে তোলার মধ্য দিয়ে মানবসমাজ জীবনের বৃত্তকেই যেন আবিষ্কার করেছে। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজের অবশেষ হিসেবে তখনও প্রধান দৈবশক্তিকে নারীরূপেই ধরা হতো। মাতৃদেবী, উর্বরতার দেবীরাই কৃষিযুগে কৃষির দেবী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। প্রাচীন গ্রিক পুরাণে দিমিতির ছিলেন শস্য ও ফসলের, কৃষির ও উর্বরতার দেবী। ফসল তোলার উৎসব, দিমিতিরের ধর্মীয় আচার এবং দিমিতিরের উপাখ্যান খুবই মনোগ্রাহী। খ্রিস্টধর্ম প্রসারের আগে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের আদি অধিবাসী, কর্নিশ ও কেলটিকদের মধ্যে প্যাগান ধর্ম বা প্রকৃতির পূজা প্রচলিত ছিল। ফসল তোলার পর হেমন্তে অনুষ্ঠিত হতো কেলটিক ফসল তোলার উৎসব। তখন নতুন বছর শুরু হতো শীত থেকে। এই নতুন বছরের আগেই অটামের শেষরাতে সকল মৃত আত্মা জীবিতদের জগতে এক রাত্রির জন্য ফিরে আসতে পারে বলে বিশ্বাস করা হতো। জীবিতদের উৎপন্ন ফসলে মৃতদেরও অধিকার রয়েছে বা মৃতদের আত্মার সদগতির জন্য ফসলের কিয়দংশ উৎসর্গ করার রীতি থেকেই এই রীতির উদ্ভব। কেলটিকদের ফসল কাটার উৎসবের এই রীতিনীতি ও অনেক ধর্মীয় আচরণ পরবর্তীকালে হ্যালুইন উৎসবের রীতিতে পরিণত হয় যা কিছু রূপান্তরের মাধ্যমে আজও পাশ্চাত্য বিশেষ প্রচলিত রয়েছে। গ্রিকদের নবান্ন উৎসবের নাম ‘থেসমসফোরিয়া’। এটি তারা পালন করে বাঙালির মতোই, শীতের সময়ে। গ্রিক নারীরা উৎসবের প্রথম দিন শস্যের কঞ্চি দিয়ে ঘরের চাল ছেয়ে নেয়, দ্বিতীয় দিন তারা সবকিছু গোছায় এবং তৃতীয় দিন শস্য, ফল এবং নানা ধরনের উপকরণ দিয়ে পিঠা এবং উপহারসামগ্রী তৈরি করে।

    চীনের প্রাচীন লোকজ উপাখ্যানেও ফসল তোলার উৎসব ও প্রাচীন লোকরীতির উল্লেখ রয়েছে। বেইজিং শহরে চারটি প্রধান মন্দিরের অন্যতম হলো থিয়েনথান বা স্বর্গমন্দির। প্রাচীন চীনে রাজারা এই মন্দিরে আসতেন স্বর্গের কাছে প্রার্থনা জানাতে ফসল যেন ভালো হয়। থিয়েনথানে প্রার্থনা ও বিভিন্ন লোকজ আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফসলের মঙ্গল কামনা করা হতো। অটামে চীনের আরেকটি বহুল প্রচলিত প্রধান উৎসব হলো মধ্য শরৎ উৎসব। এই উৎসবে মুনকেক খাওয়ার রীতি রয়েছে যা তৈরি হতো মূলত হেমন্তের নতুন ফসল থেকে। চীনা ভাষায় হেমন্ত ঋতুর নাম ছিউ থিয়ান। ছিউ থিয়ান উৎসবের ঋতু। তখন ফসল ওঠে। চীনেও নবান্ন উৎসব পালিত হয়। তাদের ফসলের প্রধান উৎসব ‘চুং চুই’। এটি আগস্ট মুন ফেস্টিভাল নামেও পরিচিত। উৎসবটি সাধারণত বছরের অষ্টম মাসের ১৫ তারিখে পালিত হয়। এতে গ্রান্ডমা, আপেল ও পাই দিয়ে কেক তৈরি করে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। তবে কেকটি অবশ্যই পূর্ণচাঁদের মতো গোলাকার এবং হলদে রঙের হতে হয়। প্রত্যেক কেকের ওপর থাকে খরগোশের ছবি। কারণ খরগোশকে চীনারা চাঁদের প্রতিচ্ছবি মনে করে। শীতল সময়ে একটি পূর্ণ চাঁদনী রাতে তারা উৎসবটি পালন করে এবং এই রাতকে তারা সৌভাগ্য এবং ভালবাসার রাত মনে করে। পরিবারের সবাই মিলে একসংগে নতুন ফসলের তৈরি খাবার গ্রহণ করে এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে পাঠায়।

    মুসলমানরা নতুন চালের পায়েস মসজিদ বা মাজারে দিয়ে আসেন। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই ধানের প্রথম গোছাটি ঘরের প্রবেশমুখে ঝুলিয়ে দেন। প্রায় দেড়শো বছর আগে লাঙলের চারদিকে ধান ছড়িয়ে দিয়ে মানুষ আনন্দ-নৃত্যে মেতে উঠত, এমন বিবরণও পাওয়া যায়। শ্রীদীনেন্দ্রনাথ রায়ের ‘নবান্ন’ প্রবন্ধ থেকে তৎকালীন বাঙালি সমাজের নবান্ন আয়োজনের একটি চিত্র পাওয়া যায়। তিনি বর্ণনা করেন : ‘অবশেষে নবান্নের আয়োজন আরম্ভ হইল। আচার্য-কর্তিত কলার পেটকোতে তিনি নবান্নের জন্য গৃহে প্রস্তুত আতপ চাউল এক মুষ্টি রাখিয়া, একটা বড় পাত্রে কতকগুলি ফলমূল, আখ, আলু, কলা, মুলো, নারিকেল চাকা চাকা করিয়া কাটিয়া রাখিলেন, এবং একটা বড় পাথরের খোরায় এক খোয়া কাঁচা দুধ একটা খেত্তুরে বাটীতে এক বাটী নূতন খেজুরে গুড় ও বড় পিতলের রেকাবীতে বাতাসা, কাঁচা গোল্লা, গুড়ে মোণ্ডা প্রভৃতি মিষ্টান্ন রাখিয়া দিলেন; ছেলেমেয়েরা অদূরে বসিয়া সদ্যঃস্নাতা সিক্তকেশা শুভ্রবসনা পিসীমার কাণ্ড দেখিতে লাগিল। ...ছেলেরা কলাপাতে অল্পপরিমাণ নবান্ন লইয়া চারিদিকে ছুটিয়া চলিল। কেহ ছাতের উপর কাক শালিক প্রভৃতি পাখীর জন্য তাহা রাখিয়া আসিল; কেহ ঢেঁকির ঘরে গিয়া ইঁদুরের গর্তে খানিক ঢালিয়া দিল; মাছদের নবান্ন খাওয়াইতে একটি ছেলে নদীতে চলিল; একটি ছেলে খানিকটে নবান্ন গরু বাছুরের জন্য গোয়ালঘরে লইয়া গেল; কেহ শৃগালের জন্য চাট্টি চাউল খান দুই শাঁক আলু ও একটুকরা পাকা কলা লইয়া বাঁশবনে কিংবা আশ্যাওড়ার জঙ্গলে ফেলিয়া আসিল। সকল জন্তুর জন্য নবান্ন বিতরিত হইলে, গৃহস্থপরিবারগণ একত্র সমবেত হইয়া, দুধ গুড় ও নানাবিধ ফলমূল মিশ্রিত চাউল খাইতে আরম্ভ করিল। বাড়ির বউ ঝিরা এক এক বাটী চাউল লইয়া রান্নাঘরের বারান্দায়, উননের ধোঁয়ায়, ভিজে চুলে, পা মেলিয়া বসিয়া, সিক্ত তণ্ডলরাশি নতমুখে চর্বণ করিতে লাগিল। রাখাল, কৃষাণ ও পরিবারস্থ অনুগত ব্যক্তিগণ সকলের নবান্ন হইয়া গেল...। ’

    বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের এক বিবরণে ইহুদিদের তিনটি উৎসবের কথা উল্লেখ আছে। এর মধ্যে দুটি উৎসবই ফসল কাটার (নবান্ন)। একটির নাম ‘পেসাস’, অন্যটির নাম ‘শুক্কত’। এই উৎসবের শুরু খ্রিস্ট জন্মেরও কয়েক হাজার বছর আগে। ওল্ড টেস্টামেন্ট কেবল একটি ধর্মগ্রন্থই নয়, পৃথিবীর প্রাচীন যুগের ইতিহাসেরও নিদর্শন। তাতে বলা হয়েছে, ৪ থেকে ৫ হাজার বছর আগেও পৃথিবীতে নবান্নের মতো উৎসব পালন করা হয়েছে।

    কানাডা আমেরিকার আদলে নবান্ন উৎসব বা ফসলের উৎসব পালন করে ১৮৭৯ সাল থেকে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সোমবার নবান্ন উৎসব করে তারা।

    রাশিয়ায় নবান্নকে বলা হয় রদুনিৎসা। এছাড়া ইরান, জাপান, এমনকি ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ও ধরনে নবান্ন উদযাপন করা হয় ।

    বৌদ্ধরা তাদের ভিক্ষুদের সংবৎসরের ‘চীবর দান’ করেন। বাংলাদেশের সাঁওতাল, গারো (মান্দি) আদিবাসীরা সাড়ম্বরে নবান্ন উৎসব পালন করেন। সাঁওতালরা বলেন, ‘সোহরায় উৎসব’। তারা সাতদিন সাতরাত ধরে এই উৎসব পালন করেন। মান্দিরা বলেন ‘ওয়ানগাল্লা’। ম্রো আদিবাসীরা ‘চামোইনাত’ উৎসবে মুরগি বলি দিয়ে নতুন ধানের ভাতে সবাইকে আপ্যায়ন করেন।

    ব্রিটেনে নবান্ন উৎসব পালিত হয় গান, চার্চ সাজানো, আনন্দ এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়েয়। এ সময় চার্চকে সাজানো হয় ফল ও খাদ্যের ঝুড়ি দিয়ে। এই উৎসবকে তারা ফসলের উৎসব বা ফসল ধন্যবাদ উৎসব বলে থাকে। ব্রিটিশরাও চীনাদের মতো একটি পূর্ণচন্দ্রের রাত্রি বেছে নেয়। তবে তারা সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ বা কাছাকাছি কোনো তারিখের পূর্ণচন্দ্রের রাতে উৎসবটি পালন করে। তবে কেবল চার্চ বা প্রার্থনালয়েই নয়, এটি বাড়িতে, এমনকি স্কুলেও আয়োজন করা হয়।

    ইহুদিরা একে সবচেয়ে বড় বাৎসরিক উৎসব ’সুক্কত’ বলে উদ্যাপন করে। এটি তিন হাজার বছরের প্রাচীন একটি উৎসব।

    তিব্বতে অত্যন্ত জাকজমকের সংগে নবান্ন উৎসব পালন করা হয়। এতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষকরা উৎসবের সাজে সজ্জিত হয়ে তাদের ফসলের ওপর ও পাশ দিয়ে হেঁটে যান।

    নেপালে পাঁচটি বড় উৎসব আছে, যে দিনগুলোতে সরকারি ছুটি থাকে। এর মধ্যে নবান্ন একটি। একে বলা হয় ‘কইয়াগরাত পূর্ণিমা’। পাহাড়ে অসংখ্য কৃষকের জন্য এই উৎসবটি একই সংগে খুব আনন্দের এবং প্রার্থনার। এখানেও চাঁদনী রাতে উৎসব আয়োজন করা হলেও দিনেও চলতে থাকে।

    রোমানদের নবান্ন উৎসবের নাম ‘সেরেলিয়া’। রোমানরা তাদের দেবতা সেরেসের প্রতি সম্মান বা ধন্যবাদ জানিয়ে এই উৎসব পালন করেন। তারা প্রতি বছর অক্টোবরের ৪ তারিখ নবান্ন পালন করে। গান, খেলাধুলা এবং প্যারেড তাদের উৎসবের অঙ্গ।

    প্রাচীন মিশর তার ফসল ও উর্বরতার দেবতা মিন’এর সম্মানে নবান্ন উৎসব করত। মিশরীয়দের বিশ্বাস, তাদের ফসল বা শস্য তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে, সেজন্য তারা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নবান্ন উৎসব করে।

    আমেরিকায় ১৬২১ সালে প্রথম অভিযাত্রীদল প্রচুর পরিমাণ ফসল উৎপাদন করে। এর মধ্যে ছিল গম, সবজি, ফল। এমনকি প্রচুর মাছও। আর এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় এত বেশি ছিল যে, পরের মৌসুমের জন্যও তাদের ভাবনা ছিল না। সে বছর থেকেই তাদের গভর্নর উইলিয়াম ব্রাডফোর্ড সবাইকে নিয়ে নবান্ন উৎসব শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ১৭৭০ সালে জাতীয় কংগ্রেস রাষ্ট্রীয়ভাবে এটি পালন করে। ১৮১৭ সালে নিউ ইয়র্ক রাজ্য একে বাৎসরিক প্রথা হিসেবে গ্রহণ করে এরপর থেকে অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোও উদ্যাপন করতে শুরু করে। ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এই উৎসবের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করেন। যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার নবান্নর জন্য সরকারি ছুটি থাকে।

    সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যসমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক আর মাটির সাথে বন্ধনযুক্ত উৎসব হিসেবে নবান্ন বরং তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশেই (পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র মিলিয়ে) অবহেলিত। পৃথিবীর অনেক দেশে যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে, সরকারি ছুটিসহ উৎসবটি পালিত হয়, সেখানে বাংলাদেশে নবান্ন উৎসব আয়োজনের জন্য পহেলা অগ্রহায়ণ তারিখে চারুকলার বকুলতলা বরাদ্দ পেতেও ঘাম জড়াতে হয়।

    একসময় অগ্রহায়ণ মাস একসঙ্গে দুই চরিত্র নিয়ে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত ছিলো : ১. ফসল তোলার উৎসব ও ২. নববর্ষের উৎসব। লেখক-গবেষক আহমদ রফিকের মতে, অগ্রহায়ণকে ‘বছর শুরুর মাসের মর্যাদা ছেড়ে দিতে হল মুঘল সম্রাটের হিসাব-নিকাশের কারণে। জয়ের টিপ পরানো হলো রুদ্র বৈশাখের কপালে। সম্রাটের খাজনা আদায়ের হিসাবে পাল্লা ভারী হোক বা না হোক আবহাওয়া ও পরিবেশ বিচারে বৈশাখ কিন্তু এ দেশে উৎসব-অনুষ্ঠানের উপযোগী মাস নয়। কড়া রোদ, গুমোট গরম, মাঝেমধ্যে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডব নিয়ে সময়টা মোটেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অনুকূল নয়, উপভোগ্য তো নয়ই। তুলনায় অগ্রহায়ণে শীতের আমেজমাখা রোদ, আকাশে গাঢ় নীলের বিস্তার, অনার্দ্র বাতাসের নরম ছোঁয়া সব কিছুই যেন নববর্ষ অনুষ্ঠানের অনুকূল। সব দিক বিচারে অগ্রহায়ণকে বছর শুরুর মাস হিসেবে ফিরিয়ে এনে পূর্ব-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করাই বোধ হয় যুক্তিসংগত। নববর্ষ ও নবান্ন তখন আগের মত উৎসবে আনন্দে একাকার হয়ে যেতে পারে।’ এ কথা সত্য যে, বৈশাখ মাস থেকে বছর গণনার চিন্তাধারা এসেছিল শুধু খাজনা আদায়ের ওপর ভিত্তি করে, যেমনটি এখন সর্বত্রই আর্থিক বৎসর হিসেবে জুলাই থেকে জুন হিসাব করা হয়।

    লক্ষণীয় যে, বিশ্বের অধিকাংশ নবান্ন উৎসব প্রায় সর্বত্রই শীতের আগমনী সময়ে বা হেমন্তে উদযাপিত হয়। বাঙালীর ক্যালেন্ডার অর্থাৎ বঙ্গাব্দের প্রবর্তক সম্বন্ধে যেমন তর্ক রয়েছে (আকবর না শশাঙ্ক), তেমনি ক্যালেন্ডারের শুরুটাও সময়ের সাথে সাথে কোনো এক অজানা কারণে পাল্টে গেছে। ক্যালেন্ডারের প্রতিটি মাসের নাম যদি বিশ্লেষণ করা যায়, তাহলে দেখতে পাই, অগ্রহায়ণ অর্থাৎ অগ্র (প্রথম) এবং হায়ণ (মাস)। সুতরাং স্পষ্টতই অগ্রহায়ণ বছরের প্রথম মাস ছিল আগে। কোনো কারণে পরবর্তীতে বৈশাখ মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে পাল্টে নেওয়া হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে ধরার যথেষ্ট যুক্তিও রয়েছে। আমরা যদি ঋতু সম্পর্কে আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাই ছয়টি ঋতু দিয়ে আমরা বছরকে ভাগ করেছিলাম, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত। প্রতিটি ঋতু দুই মাস ব্যাপী হয়। আজ থেকে হাজার, দুই হাজার বা আরও বেশী সময় আগের কথা ভাবলে দেখা যায়, মানুষ যখন খাদ্য উৎপাদনের দিকে এগিয়েছে, ধান, গম ইত্যাদি ছিল তার প্রধান ফসল যা সে ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রহ করে রাখতো বা রাখতে পারতো। এই জাতীয় ফসলগুলোর ক্ষেত্রে জমিতে বীজ ফেলা থেকে ফসল তোলা অব্দি সময় লাগতো কমপক্ষে তিন মাস বা তার বেশী সময়। গ্রীষ্মকালে কোনো চাষ আবাদ হতো না জলের অভাবের কারণে। বর্ষার শেষে অর্থাৎ ভাদ্র বা আশ্বিন মাস থেকে চাষ শুরু হলে ফসল উঠতে উঠতে অগ্রহায়ণ বা পৌষ মাস হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বর্ষার জলকে কাজে লাগানোর ব্যাপারকে মাথায় রাখলে, শ্রাবণের মাঝামাঝি বা শেষ থেকে গণনা করাটাই যুক্তিযুক্ত। সেক্ষেত্রে প্রায় তিনমাস পরে অর্থাৎ কার্তিকের শেষ বা অগ্রহায়ণের প্রথমে ফসল ওঠার সময় হয়। আবার সম্রাট আকবর বঙ্গাব্দের প্রচলন করেছিলেন এই ঘটনার পেছনে যে যুক্তি দেওয়া হয় সেটা হলো, বাংলার কর আদায়ের ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ার কারণে ফসল ওঠার সময়কে মাথায় রেখে নতুন ক্যালেন্ডার তৈরী করা হয়েছিল যাতে ফসল ওঠার পরে কর আদায় করতে সুবিধা হয়। আবার অন্য অনেকের মতে আকবর বঙ্গাব্দের নতুন ক্যালেন্ডার চালু করার পরে অগ্রহায়ণের পরিবর্তে বছরের শুরু করেছিলেন বৈশাখ মাস থেকে। সুতরাং হয় অগ্রহায়ণ আগে বছরের প্রথম মাস ছিল নতুবা আকবর অগ্রহায়ণ থেকে বছরের শুরু করেছিলেন। তবে পৃথিবীর অন্যান্য ইতিহাসের কথা ভাবলে এটাই মনে হয় যে, অগ্রহায়ণ বছরের প্রথম মাস ছিল বহুকাল আগে থেকেই, আকবর কোনো না কোনো কারণে (তবে সেটা হয়তো কর আদায়ের সুবিধার্থেই বছরের শুরুটা পরিবর্তন করেছিলেন) পরিবর্তন করেছিলেন বছরের প্রথম মাসকে। যেহেতু অগ্রহায়ণ মাস বছরের শুরু হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত, তাই নবান্ন যেমন একাধারে নতুন ফসল ঘরে ওঠার উৎসব তেমনি নতুন বছর শুরু হওয়ারও উৎসব। সারা বিশ্বের মত আমরা, বাঙালীরা এখনও "নবান্ন" পালন করে চলেছি নতুন প্রাণকে সন্মান জানিয়ে, আমাদের বেঁচে থাকার রসদ যোগানোর জন্য অজানা কোনো দৈবশক্তির প্রতি নিজেদেরকে সমর্পণ করে এবং নতুন খাদ্য আহরণের আনন্দে বিভোর হয়ে। বাংলা সাহিত্যেও এই উৎসবের উল্লেখ এবং বহিঃপ্রকাশ রয়েছে অগুনতি জায়গায়। নবান্ন আমাদের সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে, যদিও আধুনিক সংস্কৃতিতে শিক্ষিত সমাজ সনাতন দীক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়েছে। তবুও গ্রামীণ সমাজ, যা আমাদের সংস্কৃতির আধারকে এখনও বয়ে নিয়ে চলেছে, সেখানে "নবান্ন" এখনও সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে রয়েছে। কবি জীবনানন্দ দাশের কথায় তাই বলতে মন চায়:
    আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
    হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে,
    হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে.......
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন