আজ 14ই ফেব্রুয়ারি, ওরফে ভ্যালেন্টাইনস ডে। এমন একটা দিন মাইরি, (কনসেপ্ট তৈরিই হয়ে গেছে) যে দিনে কিছু মানুষ কিছু বিশেষ জায়গায় যায়, তাদের ভালোবাসাদের তারা কতটা ভালোবাসে সেটার একটা পরিমাণ বোঝাতে অনেক কিছু করে (অনেএক কিছু)। আর কিছু মানুষ থাকে যারা ভালোবাসা জোটাতে পারে নি, তারা হয় মিম শেয়ার নয় দুঃখে কান্নাকাটি জাতীয় জিনিস করতে থাকে। কেউ কেউ পাত্তাও দেয় না দিনটাকে। বিশেষ করে এইদিনটা নিয়ে এত মারকাটারী মাতামাতি কয়েক দশকই হলো শুরু হয়েছে।

বলে নাকি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে এক খ্রিষ্টীয় ভদ্রলোক রোম রাজ্যে শহীদ হয়েছিলেন, তাই তাঁকে স্মরণ করে রাখার জন্য আজকের দিনটাকে বেছে নাম রাখা হয় 'সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে'। আর এঘটনার পর থেকে সমস্ত খ্রিষ্টীয় শহীদদের 'ভ্যালেন্টাইন' বলা হতো। তো এইদিনে নাকি ভোজের আয়োজন করার রেওয়াজ ছিল। ভাবুন, আমি নিজে শহীদ স্মরণে দু মিনিট নীরবতা পালনের নামে দেড় মিনিট ধরে ঘাড়ের কোনখানে মশাটা কামড়ালো খুঁজতে থাকি, সেখানে ওরা ভোজের আয়োজন করে (যীশুর সময় তো আবার মরার আগেই ফিস্ট হয়েছিলো)।

তো সে যাইই হোক, এমন কপাল যে ঠিক এই দিনটাতেই আগে রোমে 'লুপারকেলিয়া' নামক একটা অনুষ্ঠান হতো যেখানে ভালোবাসার(বিশেষ করে বিবাহের আর উর্বরতার) দেব দেবীকে পুজো করা হতো ভালোবাসা নিবেদনের মাধ্যমে। এনসিয়েন্ট প্রম নাইট। আর এই অনুষ্ঠানটা সময়ের সাথে সাথে লুপ্ত হয়ে গেছিল। কিন্তু 14 শতকে জোফ্রে চসার নামক এক কবি তার কবিতায় এই বিষয়টা নিয়ে উস্কে দিলো। বললেন, "কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই..."। পাবলিক উস্কানির দাস। মাটির গর্ত খুঁড়ে ভালোবাসার অনুষ্ঠানকে তুলে আনলো। কিন্তু তখন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডের রীতি সারা রোমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসময়ে হঠাৎ করে আরেকটা প্রাক্তণ অনুষ্ঠান  আবার নতুন করে শুরু করাটা একটু চাপের বৈকি। 

তো এরকমই একটা 14ই ফেব্রুয়ারি ফিস্ট আয়োজনের পাশাপাশি 'লুপারকেলিয়া' সেলিব্রেট করার জন্য 'কোর্ট অফ লাভ' এর আয়োজনও করা হলো। পাতি বাংলায়, সয়ম্বর সভা। এই কনসেপ্ট আবার জনগণের ভালো লেগে গেলো। আগত সব 14ই ফেব্রুয়ারির দিনই এরকম একটা করে সয়ম্বর সভা সব জায়গায় অনুষ্ঠিত হতে লাগলো। কেল্লা ফতে, শহীদ স্মরণেও হলো, ভালোবাসার নিবেদনও হলো (যারা সিঙ্গেল ঘরে ফিরতো তাঁদের খবর জানি না)।

এরপর আর কি, কবি সাহিত্যিকরা assemble হলো। এ খবর দিকে দিকে ছড়িয়ে দিলো। বেচারা সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন, চসারের চক্রান্তে পপুলারিটি হারালো (ভ্যালেন্টাইন নিজের নামটা কপিরাইট করে নিলে পারতো)। ভালোবাসার জয় হলো। বিষয়টা রোম থেকে রোম্যান্সে পরিণত হলো।

আজকাল অবশ্য যেরকম ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে টক্সিসিটি ছড়াচ্ছে তাতে দিনটার উদ্দেশ্য পুরোটাই হারিয়ে যাচ্ছে। আর আমি কেন এত কথা লিখলাম? আমি বড্ড সিঙ্গেল দাদা, সময় আমার কাটে না, মনে বড় দুঃখ। তাই ওদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাই, দেখ তোরা, এক শহীদকে সম্মান-শ্রদ্ধা না জানিয়ে, আজ সারাদিন সম্মানেরা শ্রদ্ধাদের বাইকে চাপিয়ে ঘুরে বেড়াবে। ভালো লাগে এসব দেখতে?!