'সবার পড়ার মত' বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি কেন হওয়া উচিত—এ প্রশ্নের মনে হয় আন্তর্জালোত্তর পৃথিবীতে আর কোনো প্রয়োজন নেই। সব বিষয় নিয়েই বই লেখা হয়, আর 'পড়তে কতটা ভালো লাগছে / সমঝদারেরা কত ভালো বলছে'—এর ওপর ভিত্তি করে তার চাহিদা তৈরি হয়। বিজ্ঞান বাদ যাবে কেন? বিশেষ করে, তার 'রেড রাইট হ্যান্ড' যখন সর্বস্পর্শী?
বিজ্ঞান যে ভাষায় আমরা চর্চা করি, তা আসলে অঙ্কের ভাষা—এইটে একটা ছোট্ট চৌকাঠ হতে পারে, প্রাচীর কখনোই নয়। নইলে বিমূর্ত ছবি, সিনেমা নিয়ে চর্চা হচ্ছে কী করে? উলটে, বিজ্ঞানের ফলাফল, চর্চা, কর্মপদ্ধতি যখন আমাদের জীবন আর প্রযুক্তিতে মিলেজুলে যায়—সেই সন্ধিক্ষণ নিয়ে আলোচনাই তো সবথেকে বেশি 'রিলেটেবল', তাই না? অথচ দেখুন, এইসব নিয়ে ক'টা বই যে লেখা হয় আর তার কথা বাজারে ছড়ায়—হাতে গুনে বলা যায়। বাংলায়? আরো কম।
অল্প বয়সে ইয়া পেরেলম্যান, 'কী দিয়ে সমস্তকিছু গড়া', আনন্দমেলা আর দেশের পথিকবাবুর লেখা, পরে বড় হয়ে ইঞ্জিরিতে নানা পপুলার সায়েন্সের বই পড়া (পথিকবাবুকে একটু হলেও 'জাজ' করা) — এইসব না করলে কি আর বিজ্ঞানে উৎসাহ আসত? সন্দেহ হয়।
বিজ্ঞান নিয়ে এইরকম পপুলার অথচ 'প্রাসঙ্গিক' লেখা—যে বিষয় ছাড়া শুরুই করা সম্ভব নয়, তা হল স্ট্যাটিস্টিক্স—রাশিবিজ্ঞান। রাশি শুনলেই হৃৎকম্প হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় (বিশেষ করে 'রসোড়ে মে কৌন থা' এপিসোডের পর), কিন্তু এই ব্যাপারটা যে প্রতিদিন নিজেদের জীবনে আমরা ব্যবহার করে চলেছি—তা তো মিথ্যে নয়! প্রশ্ন হল, ব্যবহার তো করছি, জেনেবুঝে করছি তো?
বহুদিন ধরে, বহু ব্যয় করে, p-value আর confidence interval-এর জঙ্গলে ঘুরে, হাতে একদিন এল 'How to lie with Statistics' নামের একটা চালবাজ বই। ঘ্যামা বই—যদিও বুমার প্রজন্মের লেখা। মনে হল, বাংলায় কেন এমন কিছু নেই? পরবর্তীকালে অর্ণব চক্রবর্তীর 'বাংলায় বোঝানো ইংরেজি বই' দেখেছি—অতি সুস্বাদু, কিন্তু হাজার হোক, পাঠ্য বই।
যদুবাবুর টিউশনি নামে একটা ঠিক এই ধরনের ক্লাস এখানে চলে অনেকদিন ধরে। এই আসছে বইমেলায়—সেগুলোর সবক'টাকে চেপেচুপে ধরে, সঙ্গে আরও অপ্রকাশিত লেখা যোগ করে, চুল আঁচড়ে, অল্প পমেটম দিয়ে—একখানা বই বেরোবে, যদুবাবু-র লেখা। ছোকরা অসাধারণ ভালো তো লেখেই, ওদিকে জ্ঞানের বাটখারাও বটে। আবার ফুক্কুড়ি ছাড়া নিদ্রাগমন হয় না তাঁর। সব মিলিয়ে, এই বই পড়তে বসে মনে হবে—হাতে বিড়ি নিয়ে ক্যান্টিনে বসে বাতেল্লা দিচ্ছে বড়দা—একইরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে (যা না জানলে জীবনই বৃথা)—পার্থক্য শুধু, এই ফান্ডার সঙ্গে রেফারেন্স দেওয়া আছে।
পাতলা বই। ১-২ সিটিংয়ে পড়ে ফেলা যায়—এমন। অনেক যত্নের পরেও, টুকটাক ভুলভাল থেকে যেতে পারে, তবে তাতে অসুবিধে নেই। এক মনিষী যেমন বলেছেন, "তিনটে বানান ভুল গেলে কীইবা হবে?"
অতএব, ক্ষমাঘেন্না করে দেবেন। আর কিছু না হোক, যদুবাবুর অসম্ভব কিউট কুতুয়াটার মুখ চেয়ে।
যাঁরা গুরুর এই বইপ্রকাশের পদ্ধতিটা জানেন, তাঁরা এ-ও নিশ্চয়ই জানেন যে, গুরুর বই বেরোয় সমবায় পদ্ধতিতে। যাঁরা কোনো বই পছন্দ করেন, চান যে বইটি প্রকাশিত হোক—তাঁরা বইয়ের আংশিক অথবা সম্পূর্ণ অর্থভার গ্রহণ করেন। আমরা যাকে বলি দত্তক। এই বইটি যদি কেউ দত্তক নিতে চান, আংশিক বা সম্পূর্ণ, জানাবেন guruchandali@gmail.com এ মেল করে।