এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হায়দ্রাবাদের ইতিহাস, ভারতভুক্তি এবং নিজাম-সম্পত্তির বিবাদ

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৬৬৩ বার পঠিত
  • হায়দ্রাবাদের ইতিহাস বলতে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের, হায়দ্রাবাদ শহরের কথা বলতে চাইছি। কুতুবশাহী রাজবংশের পঞ্চম সুলতান মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ ১৫৯১ সালে হায়দ্রাবাদ নগরীর পত্তন করেন। কথিত আছে যে, কুলি কুতুব শাহ স্থানীয় একজন নাচনেওয়ালি ভাগমতির প্রেমে পড়েছিলেন। প্রেমের পরিণতি দিতে গিয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন এবং "হায়দার মহল" উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর সন্মানেই নগরের নামকরণ হয় হায়দ্রাবাদ। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী শহরের খলিফা আলী ইবনে আবী তালিবকে সন্মান জানিয়ে শহরের নামকরণ হয়েছে হায়দ্রাবাদ। আলী ইবনে যুদ্ধে সিংহের বিক্রম প্রদর্শন করেছিলেন বলে হায়দার নামেও পরিচিত ছিলেন। হায়দার অর্থ সিংহ আর আবাদ অর্থ শহর এবং এইভাবেই নামকরণ হয় হায়দ্রাবাদ।

    মোঘল সলতনতের অধীনেই দাক্ষিণাত্যের গভর্নর হিসেবে কুতুবশাহী রাজবংশের সুলতানরা শাসন করতেন। কুতুবশাহী রাজবংশের আমলের স্থাপত্য সমূহের মধ্যে গোলকুন্ডা দুর্গ, চারমিনার, চৌমোহল্লা প্রাসাদ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সেই সময়ে এলাকায় দুর্ভিক্ষ এড়ানোর জন্য এবং জলের সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরী করা হয়েছিল হুসেইন সাগর। এই কুতুবশাহী রাজবংশেরই সুলতান মীর কামারুদ্দিন খান ১৭২৪ সালে মোঘলদের কাছ থেকে "নিজাম-উল-মুলক, আসফ জাহ প্রথম" উপাধি পান এবং এরপর থেকেই হায়দ্রাবাদে নিজামের শাসন শুরু হয় এবং কুতুবশাহী রাজবংশ আসফ জাহ রাজবংশ নামেও পরিচিত হয়। যে শাসন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পরেও ছিল এবং ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ তারিখে শেষ হয়েছিল। ১৭২৪ সালে হায়দ্রাবাদ নিজামের পত্তন হলেও তা মোঘল অধীনেই একটি রাজ্য হিসেবে থেকে যায় ১৭৯৮ সাল অব্দি। এরমধ্যে ১৭২৪ সাল থেকে ১৭৬৩ সাল অব্দি ঔরঙ্গাবাদ (বর্তমান মহারাষ্ট্র রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত) ছিল হায়দ্রাবাদ নিজামের রাজধানী এবং ১৭৬৩ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল অব্দি হায়দ্রাবাদ ছিল নিজামের রাজধানী। মোঘল শক্তি ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকলে দাক্ষিণাত্যে মারাঠা শক্তির উত্থান হতে থাকে। বর্তমানের অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাত প্রভৃতি রাজ্যগুলো হয় হায়দ্রাবাদ নয়তো মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি পরাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য ছিল। স্কটল্যান্ড আর ইংল্যান্ডকে যুক্ত করলে যা আয়তন হয় তৎকালীন হায়দরাবাদ স্টেটের আয়তন ছিল তার থেকেও বেশি। মারাঠা শক্তির উত্থানের ফলে হায়দ্রাবাদ নিজাম এবং মারাঠাদের মধ্যে বারংবার যুদ্ধ হতে থাকে, যার মধ্যে প্রধান যুদ্ধগুলো হলো পালাকেদের যুুদ্ধ, রাকশানুভের যুুদ্ধ এবং কারদার যুুদ্ধ। প্রথম বাজিরাও-এর দাক্ষিণাত্য বিজয়ের পরে নিজামরা মারাঠাদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং মারাঠাদের চৌথ (নিয়মিত কর) দিতে বাধ্য হয়। মারাঠা প্রভুত্বের হাত থেকে রক্ষা পেতে হায়দ্রাবাদের নিজাম, নিজাম আলী খান আসফ জাহ ব্রিটিশদের সাথে একটি চুক্তি করেন ১৭৯৮ সালে, যা হায়দ্রাবাদকে ব্রিটিশ সুরক্ষা দেয়। ফলস্বরূপ ব্রিটিশরা নিজামকে His Exalted Highness (মহামাননীয়) উপাধি প্রদান করে এবং ২৩-তোপ দিয়ে নিজামকে সেলাম জানানো হতো। হায়দ্রাবাদ নিজাম, ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত প্রথম দেশীয় রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। এরপরে সিকান্দার জাহ-এর রাজত্বকালে হায়দ্রাবাদে একটি সেনানিবাস তৈরী হয় এবং সেনানিবাস অঞ্চলটির নাম হয় সেকেন্দ্রাবাদ। নিজামদের রাজত্বকালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর একটি হলো পঞ্চম নিজামের রাজত্বকালে (১৮৫৭ - ১৮৬৯) প্রধানমন্ত্রী সালার জং দ্বারা প্রশাসনিক সংস্কারের কাজ। এই সময়ের আগে, প্রশাসনের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বা পদ্ধতি ছিল না এবং সমস্ত দায়িত্ব দিওয়ান (প্রধানমন্ত্রী) এর হাতে ছিল, যে কারণে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৮৬৭ সালে, শাসনকার্যের সুবিধার জন্য বিচার, পূর্ত, চিকিৎসা, শিক্ষা, পৌর এবং পুলিশ নামে আলাদা আলাদা বিভাগ তৈরী করা হয় এবং ১৮৬৮ সালে প্রতিটি বিভাগের জন্য সদর-ই-মহামস অর্থাৎ সহকারী মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। রাজকার্যে সুবিধার জন্য সতেরটি জেলা তৈরী করা হয় এবং সুবেদার, তালুকদার ও তহসিলদার নিযুক্ত করা হয়। ষষ্ঠ নিজামের রাজত্বকালে সমস্ত রাজ্য জুড়ে এবং সমস্ত ব্রিটিশ ভারতের সাথে হায়দ্রাবাদকে সংযুক্ত করার জন্য নিজাম রাজ্য রেলপথ তৈরী করেন। সদর দফতর করা হয় সেকেন্দ্রাবাদ রেলওয়ে স্টেশনকে। রেলপথের সূচনার পর থেকেই হায়দ্রাবাদে শিল্পের সূচনা শুরু হয়। হায়দ্রাবাদ রাজ্যের রাষ্ট্র-ধর্ম ইসলাম হলেও মাত্র ১৩ শতাংশ প্রজার ধর্ম ছিল ইসলাম। অন্যদিকে ৬ শতাংশ খ্রিস্টান এবং ৮১ শতাংশ হিন্দু ধর্মালম্বী প্রজা ছিল। নিজামদের রাজত্বে বিরুদ্ধ ধর্মের লোকেদের ওপরে অত্যাচার বা এই ধরণের কোনো ঘটনার কথা জানা যায়না। বরং সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য রাজকীয় ফরমান জারি করতে দেখা যায় ষষ্ঠ নিজামকে। ষষ্ঠ ও সপ্তম নিজামদের আমলে হায়দ্রাবাদের নজর কাড়া উত্থান ঘটে, ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। হায়দ্রাবাদ স্টেট ব্যাংক তৈরী হয়, বেগমপেট বিমানবন্দর তৈরী হয়। বড় ধরনের বন্যা, প্রতিরোধ করার জন্য দুইটি হ্রদ, ওসমান সাগর এবং হিমায়েত সাগর নির্মাণ করেন। এই সময়েই ওসমানিয়া জেনারেল হাসপাতাল, জুবিলি হল, স্টেট লাইব্রেরি (আসিফিয়া কুতুবখানা নামেও পরিচিত) এবং পাবলিক গার্ডেন (বাগ-ই-আম নামেও পরিচিত) নির্মিত হয়। দিল্লীতে নিজামের দূতাবাস "হায়দ্রাবাদ হাউস" তৈরী হয়। বেগমপেট বিমানবন্দরটি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম বিমান সংস্থা ডেকান এয়ারওয়েজের আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বিভিন্ন লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যথা, ফানি বাদায়ুনি, দাগহ দেহলভী, জোশ মালিহাবদী, আলী হায়দার তাবাতাবাই, শিবলি নোমানী, নবাব মহসিন-উল-মুলক, মির্জা ইসমাইল, ষষ্ঠ ও সপ্তম নিজামের রাজত্বকালে ভারতের সমস্ত অঞ্চল থেকে হায়দরাবাদে পাড়ি জমান, ফলে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে হায়দ্রাবাদ এক উজ্জ্বল নাম হিসেবে পরিগণিত হতে শুরু করে। শিল্প ক্ষেত্রেও হায়দ্রাবাদ রাজ্য একটি উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে ওঠে ব্রিটিশ ভারতে। ১৯০১ সালে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের গড় আয় ছিল ৪,৭১,০০,০০০ রুপি এবং সেই সময়ে হায়দ্রাবাদ ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য ছিল। নিজামের  নিজস্ব মুদ্রা ছিল যার নাম ছিল, 'ওসমানিয়া সিক্কা' আর নোটের নামে ছিল, ‘হায়দ্রাবাদি রুপি‘। সপ্তম ও শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান ১৯১১ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল অব্দি রাজত্ব করেছিলেন এবং ব্রিটিশ সরকার তাঁকে "ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিশ্বস্ত মিত্র" উপাধিতে ভূষিত করেছিল। ১৯২৩ সালে টাইমস পত্রিকার হিসেব অনুযায়ী মীর ওসমান আলী খান ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেও তাঁর কিপ্টেমির গল্পও ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। বিশ্বের পঞ্চম দামী হিরেটি তিনি তাঁর লাইব্রেরীতে পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতেন অথচ তাঁর জামা বা কোট বা জুতো ছিঁড়ে গেলে তিনি নিজেই রিপু করে পড়তেন। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সময়েও তিনিই ছিলেন হায়দ্রাবাদের নিজাম।

    হায়দ্রাবাদ রাজ্যের সিংহভাগ প্রজা হিন্দু ছিল, আবার নিজামদের রাজত্বকালে সাম্প্রদায়িক বৈরিতার কোনো নিদর্শন না পাওয়া গেলেও ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার সময়ে হায়দ্রাবাদের নিজাম কিন্তু কাগজে-কলমে ভারত বা পাকিস্তান কোনো দিকেই যেতে রাজি ছিলেন না। তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেই থাকার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। এদিকে ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে দেশীয় রাজ্যগুলোকে ভারতবর্ষ না পাকিস্তান কোন রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হতে চায়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিল। ফলে হায়দ্রাবাদ নিজামের এই সিদ্ধান্তে ভারতবর্ষের প্রশাসনিক দিক থেকে যথেষ্ট চিন্তার মধ্যে পড়তে হয়। হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির ঘটনা আলোচনা করার আগে দেশীয় রাজ্যগুলোর ভারতবর্ষ বা পাকিস্থানভুক্তির যে প্রেক্ষাপট, ব্রিটিশ ভারতে দেশীয় রাজ্যগুলোর যে স্ট্যাটাস ও আচার-আচরণ তা সংক্ষেপে একটু আলোকপাত করা দরকার। দেশীয় রাজ্যগুলো ব্রিটিশ ভারতে বিভিন্ন রকম কর ও শর্তের বিনিময়ে নিজ নিজ রাজ্য শাসন করতো। ব্রিটিশরা দেশীয় রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে শাসনভারের দ্বায়িত্ব সেইসব রাজা, নবাব, নিজাম ইত্যাদিদের দিয়ে রেখেছিল এবং তাদের কাজে বিশেষ নাক গলাত না। হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে করের বিনিময়ে নিজামরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করত শাসনের ক্ষেত্রে এবং বহিঃশত্রু আক্রমণের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সহায়তা ভোগ করতো। সুতরাং এত স্বাধীনতা ত্যাগ করে কোনো রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কেউ স্বইচ্ছায় এগিয়ে আসবে - এই ভাবনা নিতান্তই নাবালকসুলভ। আবার কোনো রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে অগণিত স্বাধীন দেশীয় রাজ্য থাকবে, যারা সেই রাষ্ট্রের অংশ নয় - এই ভাবনাও সম্পূর্ণরূপে অবিবেচকের ভাবনা। এই জটিলতার পেছনে Government of India Act, 1935 সম্পূর্ণরূপে এবং সমগ্র ভারতীয় ভূখণ্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে চালু না হতে পারা অবশ্যই দায়ী (যে আইনে ব্রিটিশ সরকার ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যসমূহকে এক যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর মধ্যে আনতে চেয়েছিল)। সেইকারণেই সমস্ত দেশীয় রাজ্যগুলোকে ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল তদানীন্তন ভারত সরকারকে। ভারত সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র সচিব ভি, পি, মেনন বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের জন্য আকর্ষণীয় কায়দায় চুক্তি তৈরির জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা চালাতে থাকেন। দুটি মুখ্য নথি তৈরি করা হয়। প্রথমটি হল "স্ট্যান্ডস্টিল ডকুমেন্ট" যা পূর্বের মত চুক্তি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করবে। দ্বিতীয়টি হল "ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন", যার মাধ্যমে দেশীয় রাজ্যের শাসকেরা তাদের সাম্রাজ্যের স্বাধীন ভারতে প্রবেশ মেনে নেবেন এবং কিছু বিষয়ে ভারতের ক্ষমতাও থাকবে। শর্ত ও বিষয়সমূহ রাজ্যভিত্তিতে পরিবর্তিত হবে। যে সকল রাজ্যের ব্রিটিশ শাসনামলেও অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন ছিল তারা ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসনের তিনটি বিষয়ের ভার ভারতকে দেবে - প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক কার্যক্রম এবং যোগাযোগ। এদেরকে গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৯৩৫ এর লিস্ট ১ থেকে শিডিউল ৭ অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল। দেশীয় রাজ্যের যে শাসকগণের মূলত এস্টেট বা তালুক ছিল, যেখানে মুকুটের অধিপতি প্রশাসনিক শক্তি প্রয়োগ করে থাকে, তারা ভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন স্বাক্ষর করেন। এখানে সব ক্ষমতা এবং বিচারকার্যের দায়িত্ব ভারত সরকারের উপর দেওয়া হয়। যেসকল শাসকেরা এর মধ্যবর্তী অবস্থায় ছিলেন, তারা তৃতীয় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে ব্রিটিশদের শাসনামলে যে ধরনের ক্ষমতা তাদের ছিল, এখনো তাই অব্যহত থাকবে। ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন অন্যান্য আরও কিছু সুবিধা তৈরি করে। ধারা ৭ অনুযায়ী দেশীয় রাজ্যের রাজা ভারতের সংবিধান মানতে বাধ্য থাকবেন না। ধারা ৮ অনুযায়ী তাদের অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন অব্যাহত থাকবে এবং এ ব্যাপারে ভারত সরকারের প্রতি তারা দায়বদ্ধ থাকবেন না। এর পাশাপাশি আরও বেশকিছু সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। দেশীয় রাজন্যবর্গ যারা ভারতে প্রবেশে সম্মত হবেন, তারা আরও অধিক কিছু সুবিধা ভোগ করবেন যেমন, ভারতীয় আদালতে প্রসিকিউশন থেকে অব্যাহতি, কাস্টমস শুল্ক থেকে অব্যাহতি প্রভৃতি। সেইসাথে তারা ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের দিকেও যেতে পারবেন। এক আলোচনায় লর্ড মাউন্টব্যাটেন, প্যাটেল এবং মেননের বিবৃতিকে সমর্থন করে বলেন এর মাধ্যমে দেশীয় রাজ্যসমূহ প্রয়োজনীয় "সত্যিকার স্বাধীনতা" পাচ্ছে। মাউন্টব্যাটেন, প্যাটেল ও মেনন এমন এক ধারণা তৈরি করেন যার ফলে মনে হয় দেশীয় রাজ্যসমূহ যদি এখনই একত্রিত না-ও হয়, তাহলেও পরবর্তীতে আরও কম সুযোগ-সুবিধা মেনে নিয়ে তাদের সেটা করতেই হবে। স্ট্যান্ডস্টিল এগ্রিমেন্টও এ ক্ষেত্রে অবদান রাখে, কারণ যে সকল দেশীয় রাজ্য ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন স্বাক্ষর করবে না তাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্ট্যান্ডস্টিল এগ্রিমেন্টকে বিবেচনা করবে না। ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন বা রাজ্য একীভূতকরণের চুক্তিতে বেশীরভাগ দেশীয় রাজ্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে সই করে দিলেও মূল সমস্যা তৈরী হয় জুনাগড়, যোধপুর, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর নিয়ে। হায়দ্রাবাদের নিজাম ভারতের সাথে সীমিত চুক্তিতে রাজি ছিলেন, যা 'ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন' - এর থেকে কিছু অধিক রক্ষাকবচ দেবে, যেমন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে হায়দ্রাবাদ নিরপেক্ষ থাকতে পারবে। ভারত এই যুক্তিতে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যে, হায়দ্রাবাদের সাথে এই জাতীয় চুক্তি সম্পাদিত হলে অন্যান্য দেশীয় রাজ্যগুলোও অনুরূপ চুক্তির দাবী উত্থাপন করবে। এ জন্য ভারত ও হায়দ্রাবাদের মধ্যে সাময়িকভাবে স্থিতাবস্থা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে বারংবার স্থিতাবস্থা চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। অপর দিকে হায়দ্রাবাদ ভারতের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের অভিযোগ আনে। আবার কাগজে-কলমে স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে থাকলেও মীর ওসমান আলী খান ভারতবর্ষের স্বাধীনতার কয়েকমাসের মধ্যেই দশ লক্ষ পাউন্ড এবং একটি গিনি অর্থাৎ স্বর্ণমুদ্রা লন্ডনে পাকিস্তানের হাই কমিশনে পাঠিয়ে দেন। নিজামের অর্থমন্ত্রী মঈন নওয়াজ জং এই অর্থ লন্ডনের ন্যাশনাল ওয়স্টেমিনস্টার (ন্যাটওয়েস্ট) ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেন পাকিস্তানের হাই কমিশনারের নামে। লন্ডনে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হাবিব ইব্রাহিম রহমতউল্লা সেই অর্থ লন্ডনের ওই ব্যাঙ্কেই জমা রাখেন, সপ্তম নিজাম ও ভবিষ্যতের নিজাম খেতাবধারীদের নামাঙ্কিত একটি ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে। অনেকেই মনে করেন যে, ভারত যদি হায়দ্রাবাদ দখলে কোনও অভিযান চালায়, সেই জন্য পাকিস্তান সেই অর্থ 'নিরাপদে গচ্ছিত রাখবে' এই ভরসায় আগেভাগেই নিজাম ওই টাকাপয়সা লন্ডনে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এদিকে লন্ডনে টাকাপয়সা পাঠিয়ে দেওয়ার কয়েকদিন পরেই নিজাম মত পাল্টান, তিনি ব্যাঙ্ককে জানান ওই অর্থ তার সম্মতিক্রমে পাঠানো হয়নি এবং তিনি সেটা এখন ফেরত চান। কিন্তু ন্যাটওয়েস্ট ব্যাঙ্ক সেই টাকা তখন ফেরত দিতে রাজি হয়নি। তাদের যুক্তি ছিল, ওই অ্যাকাউন্ট নিজামের ব্যক্তিগত নয় এবং ওই তহবিলের ওপর পাকিস্তানের 'লিগাল টাইটেল' বা আইনি অধিকার আছে, সুতরাং তাদের সম্মতি ছাড়া টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। নিজাম ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রায় গোটা পঞ্চাশের দশক জুড়েই তিনি ন্যাটওয়েস্টের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আদালতে মামলা চালিয়ে গেছেন। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত ওয়েস্টমিনস্টারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও গড়ায়। হাউস অব লর্ডস সিদ্ধান্ত নেয়, এই অর্থের মালিকানা নিয়ে ভারত, পাকিস্তান ও নিজামের পরিবার একমত না-হওয়া পর্যন্ত তা ব্যাঙ্কেই 'ফ্রোজেন' থাকবে অর্থাৎ সে টাকাপয়সা কেউ তুলতে পারবে না বা অন্য কোথাও সরাতেও পারবে না। ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সেই টাকাই সুদে-আসলে বেড়ে হয়েছে পঁয়ত্রিশ মিলিয়ন পাউন্ড বা প্রায় সাড়ে চার কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি রুপি। নিজামের বিপুল অর্থ নিয়ে বিতর্ক আবার লন্ডনের আদালতে গড়ায় ২০১৩ সালে, যখন পাকিস্তান সরকার ন্যাটওয়েস্ট ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে বসে। প্রায় ৬৫ বছর আগে পাকিস্তান ওই অর্থের ওপর যে 'সভেরেইন ইমিউনিটি' প্রয়োগ করেছিল সেটা প্রত্যাহার করে নিয়ে তারা ওই অর্থের মালিকানা দাবি করে। সেই মামলায় মূল প্রশ্নটা ছিল, ১৯৪৮ সালে যখন হায়দ্রাবাদ থেকে লন্ডনের ব্যাঙ্কে অর্থ পাঠানো হয়েছিল তার 'বেনেফিশিয়ারি' বা প্রাপক কে ছিলেন, পাকিস্তান না কি নিজাম? ভারত সরকারও ইতিমধ্যে তুরস্কে বসবাসকারী নিজামের উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছয় এবং আদালতের রায়ও তাদের অনুকূলেই যায়। তবুও এখনও ওই বিপুল পরিমাণ অর্থের দাবী নিয়ে মামলা হয়ে চলেছে এবং সেই অর্থরাশি এখনও ব্যাংকে ফ্রোজেন হিসেবে পড়ে রয়েছে। এখানে মূল প্রশ্ন হলো নিজাম কেন পাকিস্তানকে এত বিপুল পরিমাণে টাকা পাঠাতে গেলেন যখন তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে চেয়েছিলেন? নাকি সেই বিপুল অর্থের বিনিময়ে তিনি পাকিস্তানের সাহায্য চেয়েছিলেন যাতে ভারতভুক্ত না হতে হয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতির বদলের কারণে বা পরিস্থিতির চাপে মত বদলেছিলেন কিন্তু ততদিনে বড্ড দেরী হয়ে গেছিল। ফলে কাগজে-কলমে আমরা নিজামের ইচ্ছের কথা যাই পাই না কেন, পাকিস্তানকে টাকা পাঠানোটা যথেষ্ট সন্দেহজনক হিসেবেই প্রতিভাত হয়। হয়তো এই কারণেই ভারত সরকার ১৯৪৮ সালে "অপারেশন পোলো" নামের একটি সেনা অভিযান চালায় হায়দ্রাবাদে। ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হরিপুরা অধিবেশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস একটি প্রস্তাব পাশ করে যেখানে ঘোষণা করা হয় যে, ভারতীয় দেশীয় রাজ্যগুলো (Princely States) ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এই দেশীয় রাজ্যগুলো ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যগুলোর মতোই রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করবে। এর বিরুদ্ধে দেখা যায় ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিজাম হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেসকে বেআইনি বলে গণ্য করার আদেশ জারি করেন। এর আগেও ১৯১৯  সাল বা ১৯৩৫ সালের যে প্রশাসনিক সংস্কারমূলক আইন জারি করেছিল ব্রিটিশ সরকার, সেই আইনও হায়দ্রাবাদ রাজ্যে লাগু করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি নিজাম। সুতরাং ব্রিটিশদের সাথে মিত্রতা চুক্তি থাকলেও সেই মিত্রতার কারণে নিজাম তাঁর রাজ্যে প্রশাসনিক সংস্কারের নামে ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকতায় রাজি ছিলেন না বলেই মনে হয়। তাঁর কার্যকলাপ থেকেই বোঝা যায় যে তিনি ভারতবর্ষের সাথে একত্রিত হতে চাননি। হয় স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন নয়তো পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। আবার ১৯৩৮ এবং তার পরবর্তী সময়ে নিজামের যে ভূমিকা দেখা যায় তাতে এটা স্পষ্ট যে তিনি কোনোভাবেই তাঁর রাজত্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার পক্ষে কাজ করেননি। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, রাজাকার নামক উগ্র সাম্প্রদায়িক বাহিনী গঠন করে হিন্দু প্রজাদের ওপর অত্যাচার চালানো, ভারত আক্রমণের হুমকি দেওয়া, পাকিস্তান থেকে অস্ত্র-শস্ত্র আনা, লন্ডনে পাকিস্তানের হাই কমিশনে টাকা পাঠানো, হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেসের সত্যাগ্রহ আন্দোলন থেকে কুড়ি হাজার সত্যগ্রহীকে বন্দি করা, ১৯৪৭ সালের পরেও হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির পক্ষে ভারত সরকারের বিভিন্ন দাবিদাওয়া উপেক্ষা করা ইত্যাদি পদক্ষেপগুলো কোনোভাবেই প্রমান করে না যে নিজাম নিরপেক্ষ ছিলেন বা তাঁর কোনো সৎ উদ্দেশ্য ছিল। কারণ এটা প্রমাণিত সত্য যে মহম্মদ আলী জিন্নাহর জুনাগড়, যোধপুর, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীরের পাকিস্থানভুক্তির প্রতি দুর্বলতা ছিল এবং তিনি সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছিলেন ওই দেশীয় রাজ্যগুলোকে পাকিস্থানভুক্ত করতে, যাতে বাংলা এবং পাঞ্জাব পাকিস্তানের হাতছাড়া (অর্থাৎ পূর্ণভাবে না পাওয়া) হওয়ার ক্ষতিটা খানিক পুষিয়ে নেওয়া যায়। জিন্নাহ এবং নিজামের বিভিন্ন পদক্ষেপগুলোকে পাশাপাশি রেখে দেখলে নিজামের উদ্দেশ্য বিরাট প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়ে যায়।

    এমনিতেই পূর্ব-পাকিস্তানের সৃষ্টি ভারতবর্ষের পক্ষে প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার দিক থেকে উদ্বেগজনক ছিল, তারপরে হায়দ্রাবাদ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা পাকিস্তানের একটি অংশ ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে তৈরী হলে তা আরও বিপদজনক হতো। এছাড়া নিজামের কার্যকলাপ চিরকালের জন্য ভারতবর্ষের কপালে চিন্তার ভাঁজ তৈরী করে রাখতো। সেইকারণেই শেষ অব্দি ১৯৪৮ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন মেজর জেনারেল জয়ন্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে এক ডিভিশন ভারতীয় সেনা ও একটি ট্যাঙ্ক ব্রিগেড হায়দ্রাবাদ আক্রমণ করে। অভিযানের নাম দেওয়া হয় 'অপারেশন পোলো'। নিজামের পাঁচ হাজার সেনার পক্ষে ভারতীয় প্রশিক্ষিত স্থল ও বিমান বাহিনীকে প্রতিহত করা সম্ভব ছিল না, তাই অচিরেই হার মেনে নিতে হয় নিজাম-বাহিনীকে। ১৯৪৮ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদ রাজ্য ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত হয়। ভারতে অন্তর্ভুক্তির পর ১৯৫০ সালের ২৫শে জানুয়ারি নিজাম মীর উসমান আলিকে হায়দরাবাদ স্টেটের 'রাজপ্রমুখ' পদে অভিষিক্ত করা হয়। সেই পদে তিনি ৩১শে অক্টোবর ১৯৫৬ পর্যন্ত থাকেন। হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারতভুক্তির পরে ১৯৫৬ সালে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সময়ে সমগ্র রাজ্যকে তিনটি ভাগে ভাগ করে অন্ধ, বোম্বাই এবং মহীশুর রাজ্যের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়। নিজামের উদারতা আর ভারতপ্রীতির বর্ণনা করতে গিয়ে একটা উদাহরণ দেওয়া হয় যে, ১৯৬৫ সালে চীন, ভারতবর্ষ আক্রমণ করলে দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচাতে ভারত সরকার তৈরি করে 'জাতীয় নিরাপত্তা তহবিল'। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হায়দ্রাবাদে গিয়ে নিজামকে অনুরোধ করেছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা তহবিলে কিছু দান করার জন্য। এরপরে নিজাম পাঁচ টন সোনা এবং নগদ ৭৫ লক্ষ টাকা জাতীয় নিরাপত্তা তহবিলে দান করেন। এই পরিমাণ দানের উদাহরণ ভারতবর্ষে আজ অব্দি নেই। নিশ্চয়ই এটা বিরাট মাপের দান কিন্তু পাশাপাশি এই ঘটনা প্রমান করে যে হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির সময়ে চুক্তি অনুযায়ী নিজাম তাঁর রাজ্যের সমস্ত ধনরত্ন ভারতবর্ষের মূল অর্থনীতির সাথে যুক্ত করেননি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি দেখিয়ে বেশীরভাগ সম্পত্তিই নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। তবুও নিজাম রাজত্বের শেষের দিকটা বাদ দিলে কিন্তু কুতুবশাহী রাজবংশ এবং নিজাম রাজত্বের বাকী সময়টা এতদঞ্চলের একটা উল্লেখযোগ্য অধ্যায় বলেই পরিগণিত হয়।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন