এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • # শেষ আনন্দের রেশটুকু ...

    arnab chakrabarty লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ অক্টোবর ২০২২ | ৪২৯ বার পঠিত
  • আমাদের বাড়ির অদূরে রেলওয়ে ময়দানে কালীপুজো উপলক্ষ্যে প্রতি বছর বসতো মস্ত এক মেলা । অর্ধশতাধিক বছর ধরে এই মেলা এলাকার মানুষদের সম্বৎসরের বিনোদনের উৎস ছিল । হ‍্যাঁ বিনোদন তো বটেই, কারণ নিস্তরঙ্গ জীবনে তখন ঢেউ তোলার মতো উপকরণ খুব একটা বেশী ছিলনা । তাই মেলার মাঠের নাগরদোলা, পুতুলনাচের তাঁবু, কিম্বা ভ্রাম্যমাণ চিড়িয়াখানার আকর্ষণ কিছু আলাদাই ছিল । হাফপ‍্যান্টুল আমরা অবশ‍্য তালপাতার বাঁশি, টিনের ব‍্যাঙ কটকটি, কিম্বা পোড়ামাটির গুলিতে লম্বা রবারের সুতো লাগানো-রাংতা মোড়া-ইয়ো ইয়োর বাঙালি সংস্করণ পেয়েই দিব‍্য খুশী থাকতাম । কিন্তু মা-কাকিমা-জ‍্যেঠিমাদের কাছে এই মেলা ছিল গৃহস্থালির হরেক রসদ সংগ্রহের আকর। লোহার সাঁড়াশি, বেড়ি, কাঠের তৈরী লবন রাখার পাত্র, সন্দেশের ছাঁচ, চিনেমাটির কাপ-প্লেট, কাচের গ্লাস, বেতের ঝুড়ি - আর‌ও কত কী ! সঙ্গে শখ করে পরা এক আধ ডজন বেলোয়ারি কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতে বা টিপ তো ছিল‌ই । একটু বড় হতে দেখলাম মেলায় জায়গা করে নিচ্ছে দেদার প্লাস্টিকের জিনিসপত্র । বাঁশী বা বেলুন একটু পিছনের সারিতে । ক‍্যাঁচকোঁচ শব্দ করা কাঠের নাগরদোলার জায়গায় এসে পড়ছে যন্ত্রচালিত মস্ত উঁচু ধাতব নাগরদোলা, টয় ট্রেন, আর‌ও হরেকরকম রাইড । মেলার খাবারদাবার‌ও চরিত্র বদলাচ্ছিল । ইতিউতি কার্বাইড ল‍্যাম্প জ্বালা ঘুগনি আর ফুচকার স্ট‍্যান্ডের বদলে জায়গা করে নিচ্ছিল  চেয়ার টেবিল পাতা অস্থায়ী রেস্তোরাঁ, আইসক্রিম আর মোমোর স্টল । চিনেবাদাম, জিলিপি আর গুড়কাঠি বিক্রির দোকানগুলোর অবশ‍্য চরিত্র বদল হয়নি তেমন । তবে নয়ের দশকের গোড়া থেকেই জেঁকে বসেছিল এগরোল  নামক বস্তুটি । খুব ছোটোবেলায় মেলার খাবার চেখে দেখার হুকুম ছিলনা আমাদের । ওখানে সব‌ই নাকি নর্দমার জল দিয়ে রান্না । খেলেই সাক্ষাৎ কলেরায় মৃত‍্যু । হাজার হাজার লোক কেমন করে ওসব হজম করছে সে প্রশ্ন সাদা মনে আসেনি তখন‌ও । পরে খানিক বড় হতে রোলের দোকানে লাইন দেওয়া আবশ‍্যিক ডিউটি ছিল ।  মেলার কেন্দ্রে বিশাল উঁচু প‍্যান্ডেলে আটদিন ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন শ‍্যামাঙ্গী মা কালী । তারপর হাটুরে ধুলোর পুরু পাউডার সর্বাঙ্গে মেখে নিয়ে চাকা লাগানো পাটাতনে চেপে ত্রিশ ফুটের তিনি নিরঞ্জনে যেতেন বাজনা-বাদ‍্যি-বাজি সহযোগে । আবার দিন গোনা শুরু হত পরের বছরের ।
    রেল ময়দানের সে মেলা এখন অতীত । করোনা পর্বের প্রথম বছরে মেলা বন্ধ ছিল । দ্বিতীয় বছরে অর্থাৎ ২০২১ এ হয়েছিল কিঞ্চিৎ সংক্ষিপ্ত করে । তার পরেই রেল কোম্পানি সেই ময়দান বেবাক টিন দিয়ে ঘিরে সেখানে বালি-রড-স্টোনচিপের পাহাড় জমা করতে শুরু করল, বোধহয় কোন‌ও বড় ধরণের নির্মাণ কাজ হবে বলে । ব‍্যাস, এতদিনের ঐতিহ্যবাহী উৎসবের দফা রফা। পুজো অবশ‍্য বন্ধ হচ্ছে না । কাছাকাছি একটি ছোটোখাটো রাইস মিলের চত্বরে বাঁধা হয়েছে প‍্যান্ডেল । মেলার একটা অপভ্রংশ‌ও হয়তো দেখা যাবে রাস্তার ধারে ধারে । কিন্ত সেই জাঁকজমক, সেই প্রশস্ত সুখ কি থাকবে আর ?
    ২০১৯ এ সেই মেলার খণ্ড দৃশ‍্য জুড়ে একটা ছোটো ভিডিও বানিয়েছিলাম ।  সেটাকে এখন বড় প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে । ছোটো হলেও তা যেন মনের পরিসরে অনেক বড় ছায়া ফেলে যাচ্ছে আজ । যা আর কখনও দেখা যাবেনা তার‌ই ছোট্টো কোলাজ । তখন যদি জানতাম এ সব স্মৃতির খাতায় চলে যাবে, তাহলে আর একটু যত্ন নিয়ে করতাম । যা হোক - ভালো মামা নেই, তাই কানা মামাই এখন মামা ।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন