
শাহরুখ খান একটা ডায়ালগ মনে পরেছে হালকা হালকা। ঠিক মনে নেই, তবে বোধহয় কথাটা এরকম ছিল - হারকে ভি যো জিতা হ্যায়, ওহি বাজিগর। মাফ করবেন আমার হিন্দিটা পিসিমার চেয়েও বাজে। আমার শুভচিন্তকরা বলেছেন পিসিমার বিরুদ্ধে কথা বললে আমাকে সোসাল মিডিয়া থেকে একঘরে করে দেবে। তবুও আমি হাজার বার বলব, হেরেও জিতে গেল বিজেপি। না, তিন থেকে ৮২টা, প্রধান বিরোধী দল হয়েছে বলে বলছিলাম না তাঁরা সফল। এর পিছনে অন্য গল্প আছে।
বেশীর ভাগ বাঙালি আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত বিজেপির মত একটা সাম্প্রদায়িক দলকে হারিয়ে। কেউ কেউ বলছে বাঙালি এবার প্রথম বাঙালি প্রধানমন্ত্রী পেয়ে যাবে, শুধুমাত্র কয়েকটি দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু সত্যি কি দিল্লি সে সব নিয়ে ভাবছে। ২০২২ এর মধ্যে মোদীর স্বপ্নের ঘর ও নতুন পার্লামেন্টের কাজ শেষ করতেই হবে। এই আবদার জানিয়েছেন সরকার নির্মাণ সংস্থার কাছে।
মানে কি দাঁড়ালো! অতিসম্প্রতি বাংলার নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই মোদীর কারণ বাংলার মসনদ না পেলেও আসলে যে জিনিসটি তার অভাব ছিল সেটা পূরণ করে নিয়েছে। বরং ক্ষমতায় এসে ট্রিপল ইঞ্জিন লাগিয়ে ওরা বাংলাকে সঠিক অবস্থানে আনতে পারত না। বরং এতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে লোকসান হত বিজেপির।
ভেবে দেখুন NIA, CBI, CSD, RBI, EC ED Supreme Court* সব জায়গায় নিজের লোক বসিয়ে দিতে পারলেও রাজ্যসভা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না, সেখানে তার পক্ষের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র *১১৮*, কিন্তু যে কোনো বিল পাস করিয়ে আইনে পরিণত করতে দরকার *১২৩* জনের সমর্থন। এখন আসাম, বাংলা, পন্ডিচেরীতে যে সংখ্যক বিধায়ক বাড়াতে পারলো বিজেপি তাতে রাজ্যসভায় বিজেপির মনোনীত সদস্য সংখ্যা হয়ে দাঁড়ালো *১২৫* , অর্থাৎ, এবারে সরকার বিরোধীরা আর কোনোভাবেই কোনো বিলকে আইনে পরিণত হতে বাধা দিতে পারবে না।
এতদিন পর বিশুদ্ধ আইন বানাতে পারবেন বিজেপি, না মানলেই আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ, অৰ্থাৎ, সরকার এর পতন ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি। পিছনের দরজা দিয়ে যখন তখন সরকার বানাতে বাধা থাকবে না।
সত্যি না মিথ্যা জানি না ২০২০র শেষে নাকি দুইএকজন আইনজীবী সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেছে, ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক এই শব্দ দুটিকে মুছে ফেলতে, এবং মোদীলালিত বিচারপতি ববদে তার সপক্ষে রায়ও দেবেন যেমন আগের বিচারপতি রামমন্দির নিয়ে রায় দান করে এখন রাজ্যসভায় পৌঁছে গেছেন। এবং এটাও হবে ২০২২ থেকে ২০২৩ এর মধ্যে। হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি স্বপ্ন দেখিয়ে আবার গোবলয়ে বিজেপি। যারা ভাবছিলেন রামমন্দির হয়ে গেছে, মানে বিজেপির হাতে কোন অস্ত্র নেই তাদের মুখে ঝামা। আর এ ভোটেই তো দেখলেন, পিসি বিষ্ণু মাতার পূজা আর মুসলিমদের ১৫% সিট কম দিয়ে, হিন্দু ভোটটা বাঁচিয়েছেন। ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা ভুলে যাবেন সবাই যখন খেলাটা হবে ক্ষমতা দখলের।
নিন্দুকেরা বলছেন, অরুনাচলে চীন একটি আস্ত গ্রাম বানিয়ে বসে আছে কোন একটা ভ্যালিতে, চীনকে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়েছিল, বিহার রেজিমেন্টকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সামনে তখন বিহারের ভোট ছিল, বিহারি লাশের দরকার ছিল। অরুনাচলেও জবাব দেবে ২০২৩ এর শেষে অথবা ২০২৪ এর শুরুতেই কারণ আবার একটা লোকসভা নির্বাচনের জন্য বলিদান চাই, আর চীনের সঙ্গে যুদ্ধের বাড়তি পাওনা এদেশের কমিউনিস্টদের চীনের দালাল বলে রটিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া। একঢিলে তিন পাখি মারা যাবে।
হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করা, চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে যাওয়া, সবকিছুই শুরু হবে ২০২২-এর পর। ২০২৪ ওরাই আসবে। শুনেছি 2nd world war শুরুর আগে নিজের সুরক্ষার জন্য হিটলার "wolf nest" বানিয়েছিলেন। কৃষিবিলকে কেন্দ্র করে দিল্লির বুকে যে আন্দোলন দেখতে পেলেন, এরপর সেন্ট্রাল ভিস্তা ওনাদের বানাতেই হবে। কি থাকবে সেন্ট্রাল ভিস্তায়, এক নতুন পার্লামেন্ট হাউস, পাশে যাবতীয় ডিরেক্টরের অফিস, সেনাপ্রধানদের অফিস, যাতে ডাকলেই দৌড়ে আসে। মোদীর বাসভবন পার্লামেন্টের উল্টো রাস্তায় যেখান থেকে মোদী পার্লামেন্ট এ ঢুকবেন মাটির তলায় বানানো টিউব রেলে করে। পুরো এলাকা air-ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে মুড়ে ফেলা হবে। মোট খরচ ২০,০০০ কোটি টাকা মাত্র। গর্বের হিন্দুরাষ্ট্র পেতে গেলে একটু ত্যাগ স্বীকার তো করতেই হবে।
Aa | 2409:4060:2e94:112a:3ab3:8e83:37c4:***:*** | ০৭ মে ২০২১ ১৮:২৮105663ঠিক কথা। সেন্ট্রাল ভিস্টা একটা বড়ো প্ল্যান এর অংশ। কিন্তু লাভ হবে না। সেন্ট্রাল ভিস্তা ওনাদের জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেবে। গণতন্ত্রে শেষ কথা মানুষ ই বলবে।
ওটা বোধহয় "ঈগলস্ নেস্ট" হবে।
dc | 171.49.***.*** | ০৭ মে ২০২১ ১৯:১৭105669পুরো একমত হতে পারলাম না। পবতে বিজেপির সিট অনেক বেড়ে গেছে এতে কোন দ্বিমত নেই, আর বামপন্থীদের বা সিপিএমের আসন্ন সংখ্যাও ০ হয়ে গেছে, এতেও কোন দ্বিমত নেই। বামপন্থীরা অন্তত ১৯-২০ টা আসন পেলে আমার অন্তত খুবই ভালো লাগতো। কিন্তু এগুলো মেনে নিলেও, আমার মতে এই ইলেকশান বিজেপির জন্য একটা বিরাট বড়ো ধাক্কা।
প্রথমত, পবতে ক্ষমতায় আসার জন্য বিজেপি এবার জান লড়িয়ে দিয়েছিলো। প্রধানসেবক আর স্যার কোন কিছু বাদ রাখেনি পোলারাইজেশান করার জন্য, যতোটা সম্ভব বিষ ঢেলেছে, ইসি থেকে সিআরপিএফ, সমস্ত কেন্দ্রীয় সংস্থার সাহায্য নিয়েছে। তার পরেও বিজেপির ভোট পার্সেন্ট, ২% হলেও, কমেছে। এটা অবশ্যই পবর সাধারন মানুষের আর "নো ভোট টু বিজেপি"র বড়ো সাফল্য।
দ্বিতীয়, অপটিক্স। সর্বভারতীয় লেভেলে আরও একবার প্রমাণিত হলো যে প্রধানসেবক-স্যার জুটি অপরাজেয় নয়, উল্টোদিকে শক্ত প্রতিপক্ষ থাকলে ওদেরও হারানো যায়। এই মেসেজটা ভীষন ভাবে দরকার ছিলো, এর ফল অন্য অনেক রাজ্যের ইলেকশানে পড়তে পারে। আর খেয়াল করে দেখুন, কোভিড সামলাতে বিজেপি এতো বেশী ব্যর্থ হয়েছে, কোর্টে রোজ এতো বেশী গাল খাচ্ছে, যে আইটিসেলের পক্ষেও ম্যানেজ করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। ইউপিতে অবধি পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি খারাপ ফল করেছে।
ভবিষ্যতে কি হবে জানিনা, অপোজিশান পার্টিগুলো এই রেজাল্টের থেকে সুবিধে পাবে কিনা সেটাও তাদেরই ঠিক করতে হবে। তবে তামিল নাড়ু, পব, আর কেরলের ফল নিঃসন্দেহে বিজেপির পক্ষে আর প্রধানসেবকের ইমেজের পক্ষে বড়ো ধাক্কা। হিন্দু রাষ্ট্র যতোটা পোক্ত মনে হচ্ছিল এখন আর অতোটা মনে হচ্ছে না, বরং একটু নড়বড়েই লাগছে।
PT | 203.***.*** | ০৭ মে ২০২১ ২০:০৪105678PT | 203.110.242.21 | ০২ মে ২০২১ ১৮:৫৭479182
....... আর এতগুলো MLA থাকলে কটা নতুন সদস্য বিজেপি রাজ্যসভায় পাঠাতে পারবে কে জানে!! তাতেও বিজেপির ডবল লাভ।...........
এক, বোবড়ে অবসরপ্রাপ্ত, রমন্না চেয়ারে বসতেই কোর্টের সুর বদলাচ্ছে। কাল কেন্দ্রীয় সরকারকে রীতিমত ধমক দিয়ে বলেছে দিল্লিতে প্রতিদিন 700mt অক্সিজেন দিতেই হবে নইলে--
দুই, এই হার বিজেপির কতখানি তার প্রমাণ তথাগতের রাজ্য ও কেন্দ্রের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য আক্রমণ।
তিন, আসল ভয় আগামী বছর ইউপি ইলেকশনে ডমিনো এফেক্ট।
চার, কৃষক আন্দোলনের নেতাদের এই খবরে মিঠাই বিতরণ ও দিল্লি কুচ করার ধমকি। বিরোধীদের অক্সিজেন।
পাঁচ, সোশ্যাল মিডিয়ায় 'নো ভোট টু বিজেপি'র মত অনেক ভয়েসের শুরু। যেমন হ্যাশটাগ রিজাইন মোদীর বিরুদ্ধে সরকারের নিষেধ সত্ত্বেও ফেসবুকের কেঁচে গন্ডুষ। আগে এটা ভাবা যেত না।
আমার মতে লোকের প্রতিবাদ করার সাহস ফিরে পাওয়াটাই সবচে বড় ব্যাপার।
dc | 72.52.***.*** | ০৮ মে ২০২১ ০৯:২২105699একমত রঞ্জনদা। "নো ভোট টু বিজেপি" ক্যাম্পেনের সাফল্যে আইটিসেল ভয় পেয়ে গেছে। সেটা গুরুতেও ক্লোজেট বিজেপি সাপোর্টারদের আচরণে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ধন্যবাদ । সবাই কে মতামত জানান জন্য।
Kaushik Saha | ২১ মে ২০২১ ২০:০৪106243Hitler জার্মানি এবং বিজিত সকল দেশে তাঁর সামরিক সদর দপ্তর তৈরী করেছিলেন। তাদের মধ্যে একাধিক Adlerhorst (Eagle's eyrie (nest)) ও Wolfsschanze (wolf's lair - nest নয় ) নির্মাণ করা হয়েছিল। নিচে মানচিত্রের URL দেওয়া গেলো।
