এই টইটা আমার খোলার কথা ছিল না। কথা অনেক কিছুরই থাকে না। অনেক কথা না রেখেই কুমুদি চলে গেলেন। কিছু ব্যক্তিগত, কিছু না-ব্যক্তিগত কথা যদি কেউ লিখতে চান, সেই ভেবে এক গুরুবোন আমাকে টইটা খুলতে বললেন।
বড্ড অসময়ে চলে গেলেন। ভালো থাকবেন, কুমুদি।
গুরুতে গানের সমঝদার অনেক, তুলনায় কবিতার শ্রোতা কম। কুমুদি ভালোবাসতেন কবিতা শুনতে। একদিন কেউ পাইয়ের গানের বা হুতোর আঁকার খুব প্রশংসা হচ্ছিল। আমি তখন "আমিই বা কম কি, আমার কবিতা শুনুন" বলে শম্ভু মিত্রের একটা কবিতা তুলে দি আমার ওয়েবপেজে। কুমুদি সরল ভালোমানুষ - অভ্যু আপনি কি আনন্দ দিলেন (তখনো আপনি বলতেন আমায়) - বলে পোস্ট করেন। ওদিকে আমি তখন ট্রাভেল করছি। দেখিও নি। তখন সিকি বলে দিল যে শুধু কবিতা পাঠের ধরণটি নয়, গলাটিও শম্ভু মিত্রের। আমি শিকাগো এয়ারপোর্ট থেকে সব পুরুনো ভাট পড়ে সেই মিসফায়ার সামলাই!
খুবই ভালোবাসতেন। দু-দির মতো মনে হয় এই হয়তো কমেন্ট করবেন।
প্রিয় কুমুদিদি
এক গুরুবোন একটি ছবি পাঠালেন আর লেখক শ্রী তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি লেখা- সেই সন্ধ্যের কথা।
এখানে রাখি।
*******************************************************
সাহিত্য আকাদেমি কর্তৃপক্ষ আমার একটি অনুবাদগ্রন্থের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার দেবেন আজ বিকেল পাঁচটায় , সেই উপলক্ষ্যে গতকাল দিল্লি এসেছি। গতকাল দিগঙ্গন পত্রিকার আয়োজনে বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন আমাকে সংবর্ধনা দেবেন বলে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
মুক্তধারার কনফারেন্স রুমে সমবেত হয়েছিলেন সাহিত্যানুরাগী বহু ব্যক্তিত্ব। সঞ্চালনা করলেন শাশ্বতী গাঙ্গুলি। বর্ষীয়ান লেখক মণিরত্ন মুখোপাধ্যায় পাঠ করলেন মানপত্র। ফলক তুলে দিলেন ব্রততী সেনগুপ্ত।
রুমি মুৎসুদ্দি ও শবরী রায় বললেন আমার সাহিত্য নিয়ে।
চমৎকার গান গাইলেন মৌসুমী আচার্য।
যিনি একের পর এক আমার সাহিত্য জীবন নিয়ে প্রশ্ন করছিলেন, তিনি জয়ন্তী অধিকারী। আমার কত বই যে পড়েছেন ও এত খুঁটিনাটি প্রশ্ন করলেন যে, আমি অবাক হচ্ছিলাম। ফলিত বিজ্ঞানে পিএইচডি, পেশায় বিজ্ঞানী জয়ন্তী সাহিত্যের এক নিরলস পাঠিকা। তাঁর নতুন প্রবন্ধ গ্রন্থ 'বিচিত্রকথা' আমার হাত দিয়ে প্রকাশ করবেন বলে এক্সপ্রেস ডেলিভারি করে বই আনিয়েছেন কলকাতা থেকে। মণিরত্নদা বলছিলেন তিনি কীভাবে চেষ্টা করে বইটির পাণ্ডুলিপি করিয়েছেন লেখিকাকে দিয়ে।
উদবোধন করলাম আমরা সবাই মিলে। জয়ন্তীও ছিলেন ( একেবারে ডানদিক থেকে দ্বিতীয়) উদবোধনের মুহূর্তে।
তারপর আমাকে আরও প্রশ্ন করতে করতে বললেন 'আমি একটু আসছি।' বাইরে গিয়ে বসে পড়েছিলেন।
তারপর তাঁর স্বামী ( তিনিও রসায়ন-বিশেষজ্ঞ ) দ্রুত তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়োলেন। কিন্তু জয়ন্তী ততক্ষণে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন অমৃতধামে। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক।
অনেকেই আমাকে বললেন আমাকে দিয়ে উদবোধন করাবেন বলেই এই বিশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন। বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন এর সেক্রেটারি তপন সেনগুপ্ত বলছিলেন উনি বারবার খবর নিচ্ছিলেন আমি কবে আসব।
খবরটা পাওয়ার পর থেকে আমার ভীষন মন খারাপ।
এরকম অসম্ভব ঘটতে পারে ভাবতেই পারছি না।
- শ্রী তপন বন্দ্যোপাধ্যায়
ইন্দ্রাণীদি, ছবিটা একটু বড় করে দেবে?
রইল। একটি তপন বন্দ্যোপাদধ্যায়ের সৌজন্যে। বাকি ছবিগুলো শ্যামলদার পাঠানো।
কাল কুমুদির স্মরণসভা। গুরুর পক্ষ থেকে কিছু করা গেলে ভাল হত।
কুমুদিকে নিয়ে কিছু বলার থাকলে, সেটা লিখিত আকারে guruchandali অ্যাট জিমেল ডট কমে পাঠিয়ে দিলে স্মরণসভায় গুরুচণ্ডা৯র পক্ষ থেকে পাঠ করার জন্যে সুমনদাকে অনুরোধ করা যায়।
কুমুদির লেখা থেকেও পড়া যায়। কুমুদি পাঠ খুব ভালবাসত। এভাবে করত,ভালবাসত লিখতে এখনো অভ্যস্ত হতে পারিনি। তাই স্মৃতিচারণও আমি পারব না মনে হয়। এই টইয়ে সেজন্য কুমুদিকে নিয়ে লিখতে গেলেও আটকে যাচ্ছে।
যাঁরা লিখেছেন ,অনুমতি দিলে সুমনদা কাল পড়তে পারে ?
রোমহর্ষক বইটির সঙ্গে আমার একাধিক সম্পর্ক আছে। একটা বলি। আমার মা। ৭৫ পেরিয়েছেন। বাংলা হরফ না পড়লে ঘুম আসে না। কিছুদিন বইপত্র হাতে পাচ্ছেন না বলে ছটফট করছিলেন। গতবছর মার্চ মাস। লকডাউনের ঠিক আগে মায়ের কাছে যাবার সুযোগ হল, হাতের কাছে যা যা বই পেলাম, নিয়ে চললাম। সদ্যপ্রকাশিত কুমুদির বইটাও ছিল। তারপর থেকে সেটাই মায়ের সঙ্গে একটা আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গবু ও কেবলীর নানা কথা, কলেজের গল্প, সর্বোপরি নাটকের রিহার্সালের দমফাটা হাসির গল্প। মা বলেছিলেন বইটা রেখে রেখে পড়ছেন যাতে ফুরিয়ে না যায়। কথা হয়েছিল লেখিকাকে নিয়েও, এসব গল্প কতটা ওঁর জীবনের কতটা বানানো...। এখনও হয়। ওঁর বই আরো বেরোলে যেন অবশ্যই কেনা হয়, দাবী আছে। মাকে এখনো বলতে পারিনি যে আরো একটা বই বেরিয়েছে কিন্তু মানুষটা এই ছিলেন, এই নেই হয়ে গেছেন।
কুড়ির বইমেলায় দেখা হয়েছিল। এগিয়ে গিয়ে আলাপ করেছিলাম হাসিখুশি দম্পতির সঙ্গে। হাসিমুখটাই সঙ্গে থাকল।
গত শনিবার সুমন আর আমি গেছিলাম কুমুদির বাড়ি, দিল্লির কীর্তিনগরে, এই প্রথমবার| বেল বাজানোর বেশকিছুক্ষণ পর দরজা খুলল, শ্যামলদা দরজার ওপারে... একপলক দেখেই বুঝতে অসুবিধা হয়না ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও উনি কতটা বিধ্বস্ত|
বসবার ঘরটা বইতে ঠাসা... আর কুমুদির ছবি....অসংখ্য... জীবনের বিভিন্ন সময়ের কুমুদি...ফ্রেমে বন্দী আমাদেরসবার ভালবাসার কুমুদি| শ্যামলদা বললেন ছেলেরা সব ছবি বাঁধিয়েছে| ছোট ছেলে শৌনক ব্যাঙ্গালোর থেকেএসেছে, খুব চুপচাপ.... ঘটনার অভিঘাতেই হয়তো| বড়ছেলে শমীক ওখানেই থাকে, তাকেই একমাত্র একটু ধাতস্থমনে হল| সেদিনকার খুঁটিনাটি বলছিল আমাদের| শ্যামলদার ফোন পেয়ে ও সোজা হাসপাতালে চলে যায়, নানারকম চেষ্টা করেছিলেন ডাক্তাররা কিন্তু ওর ধারণা গাড়িতে প্রথম যে ম্যাসিভ অ্যাটাকটা হয়েছিল সেটার ধাক্কাইসামলাতে পারেননি কুমুদি....."৩০ বছরেরও বেশি মা অ্যজমা সামলাচ্ছে কিন্তু হার্ট অ্যাটাক সামলানোর মত জোর মা-র শরীরে ছিল না..."
শ্যামলদার বুকফাটা আক্ষেপ "চিকিৎসা করানোর মত সময়ই আমাকে দিল না!"
ছেলেরা বাংলা পড়তে পারেনা, সুমন ওদের পড়ে শোনাচ্ছিল এই টইএর কিছু কিছু লেখা....আমাদের চেনা কুমুদির নানা গল্প শোনাচ্ছিলাম ওঁর একান্ত কাছের মানুষগুলোকে|
শেষ অনুষ্ঠানের ছবিও বাঁধিয়ে রাখা সোফার ওপর, যার ছবি ইন্দ্রাণী দিয়েছেন ওপরে| একটা ছবিতে ওই বইয়ে সই করছেন.........শমীক বলছিল "মা-র শেষ লেখা...."
বিচিত্রকথা বইটার একটাই কপি রয়েছে ওই বাড়িতে| শ্যামলদা বলছিলেন কী ভাবে মাত্র ছয় কপি আনানোর ব্যবস্থা করা গেছিল, বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন গাংচিলের অধীর বিশ্বাসকে| খুব খুশী ছিলেন কুমুদি সেদিন সকালথেকেই, কবে থেকে অপেক্ষা করেছিলেন ওই দিনটার জন্য.... আমি বইয়ের পাতা উল্টিয়ে যাচ্ছিলাম, বেশ কিছু লেখাই আগে পড়া.... চোখ আটকিয়ে গেল কাদম্বিনী গাঙ্গুলিকে নিয়ে লেখার একটা লাইনে..."কাদম্বিনীর মৃত্যু কাদম্বিনীরই উপযুক্ত"|
আর কুমুদির নিজের?
আগামীকালের অনুষ্ঠান ঠিক শুধু স্মরণসভা নয় বোধহয়। আমন্ত্রণপত্রে "ক্রিয়া রসম/ কাজ" বলা আছে। দিল্লি কালীবাড়িতে সকালে।
সুযোগ পেলেই আমি নিশ্চয় জানাব কুমুদি'র পাঠকদের অনুভূতি সমুহ ওঁর পরিজনদের।
আরেকবার দিলাম কারণ ওপরের লেখাটার ফরম্যাট গন্ডগোল হয়ে গেছে|
-----------------------
গত শনিবার সুমন আর আমি গেছিলাম কুমুদির বাড়ি, দিল্লির কীর্তিনগরে, এই প্রথমবার| বেল বাজানোর বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা খুলল, শ্যামলদা দরজার ওপারে... একপলক দেখেই বুঝতে অসুবিধা হয়না ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও উনি কতটা বিধ্বস্ত|
বসবার ঘরটা বইতে ঠাসা... আর কুমুদির ছবি....অসংখ্য... জীবনের বিভিন্ন সময়ের কুমুদি...ফ্রেমে বন্দী আমাদের সবার ভালবাসার কুমুদি| শ্যামলদা বললেন ছেলেরা সব ছবি বাঁধিয়েছে| ছোট ছেলে শৌনক ব্যাঙ্গালোর থেকে এসেছে, খুব চুপচাপ.... ঘটনার অভিঘাতেই হয়তো| বড়ছেলে শমীক ওখানেই থাকে, তাকেই একমাত্র একটু ধাতস্থ মনে হল| সেদিনকার খুঁটিনাটি বলছিল আমাদের| শ্যামলদার ফোন পেয়ে ও সোজা হাসপাতালে চলে যায়, নানারকম চেষ্টা করেছিলেন ডাক্তাররা কিন্তু ওর ধারণা গাড়িতে প্রথম যে ম্যাসিভ অ্যাটাকটা হয়েছিল সেটার ধাক্কাই সামলাতে পারেননি কুমুদি....."৩০ বছরেরও বেশি মা অ্যজমা সামলাচ্ছে কিন্তু হার্ট অ্যাটাক সামলানোর মত জোর মা-র শরীরে ছিল না..."
শ্যামলদার বুকফাটা আক্ষেপ "চিকিৎসা করানোর মত সময়ই আমাকে দিল না!"
ছেলেরা বাংলা পড়তে পারেনা, সুমন ওদের পড়ে শোনাচ্ছিল এই টইএর কিছু কিছু লেখা....আমাদের চেনা কুমুদির নানা গল্প শোনাচ্ছিলাম ওঁর একান্ত কাছের মানুষগুলোকে|
শেষ অনুষ্ঠানের ছবিও বাঁধিয়ে রাখা সোফার ওপর, যার ছবি ইন্দ্রাণী দিয়েছেন ওপরে| একটা ছবিতে ওই বইয়ে সই করছেন...শমীক বলছিল "মা-র শেষ লেখা...."
বিচিত্রকথা বইটার একটাই কপি রয়েছে ওই বাড়িতে| শ্যামলদা বলছিলেন কী ভাবে মাত্র ছয় কপি আনানোর ব্যবস্থা করা গেছিল, বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন গাংচিলের অধীর বিশ্বাসকে| খুব খুশী ছিলেন কুমুদি সেদিন সকাল থেকেই, কবে থেকে অপেক্ষা করেছিলেন ওই দিনটার জন্য.... আমি বইয়ের পাতা উল্টিয়ে যাচ্ছিলাম, বেশ কিছু লেখাই আগে পড়া.... চোখ আটকিয়ে গেল কাদম্বিনী গাঙ্গুলিকে নিয়ে লেখার একটা লাইনে..."কাদম্বিনীর মৃত্যু কাদম্বিনীরই উপযুক্ত"|
আর কুমুদির নিজের?
ফরিদা, সম্ভব হলে শ্যামলদাকে জানিও যে কুমুদি আমার বড় কাছের মানুষ ছিলেন। কুমুদির সাথে সরাসরি কথা খুব কম হয়েছে, শ্যামলদার আমাকে চেনার কোনো কারণ নেই, বড়জোর বলতে পারো রোমহর্ষক গল্প নামটা আমার দেওয়া। আমার খালি মনে হয় কুমুদি এই বুঝি আবার লিখবেন। মিতাদি একবার বলেছিলেন ওঁর বাবা মারা যাবার পরে মনে হত অনেকদিন তো হল এবার বাবা ফোনটা আরেকবার তুললে পারে। খানিকটা সে রকম।
শ্যামল দাকে অভ্যু'র বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলাম। খানিক আগে, লিখলেন — "আচ্ছা অভ্যু কে চিনব না ? প্রতিদিনের খুঁটিনাটি সব কথাই তো হতো তোমাদের কুমুদির সঙ্গে। গল্পটির নাম দেওয়াটা তো ওঁর ই।অভ্যুদয়ের অনেক গানের স্টক আছে বিশেষ করে রাগপ্রধান।"
ইন্দ্রাণী দি'র পাঠানো অডিও ক্লিপ প্রসঙ্গে লিখলেন — "ঈপ্সিতা আর ছোটাই কে অনেক ধন্যবাদ। কুমুর গভীরতা আরো বেশি জানলাম, এতো সুন্দর করে পড়েছে ইন্দ্রানী।"
শ্যামল দা এখনও সামলে উঠতে পারেন নি। সময় তো লাগে — কারো কম, কারো বেশি। প্রস্তুতি তো চিল না কোনও।
শমীক ও শৌনক - ওদের ছেলেদেরও কাছে বিরাট আঘাত এটা। ওদের সঙ্গেও কথা হ'ল কিছু। বলার তো কিছু থাকে না এ সময়ে, তাও.. ওদের বয়স কম, অফিস শুরু করলে হয়ত সামলাতে সুবিধা।
শ্যামল দা কে নিয়ে চিন্তা টা থেকেই গেল।
এই লিঙ্কটা থাক। আজকেই খুঁজে পেলাম। অন্য অলঙ্করণ, কিছুটা আনএডিটেড।
https://drive.google.com/file/d/0B01W0VFvQYfoSWFrcHpRUUVhZUU/view?usp=sharing
কুমুদির ভাট ( নাকি টইতে?) প্রথম লেখা, বোধহয় জয়ন্তী নামে কেউ খুঁজে দিতে পারেন? তারপর যেদিন থেকে কুমুদি নাম নিল কুমু?