নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয় না তেমন, আজকে সকালে জানতে পারলাম তুষারদা মারা গেছেন। তুষার ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিন মরিচঝাঁপি নিয়ে কাজ করেছেন, লিখেছেন, ডকুমেন্টারি বানিয়েছেন, যাঁরা কাজ করতে চেয়েছেন, তাঁদের উৎসাহ দিয়েছেন, সাহায্য করেছেন।
বেশ কয়েক বছর আগে খবরের কাগজের জন্য মরিচঝাঁপি বিষয়ে একটি দীর্ঘ লেখা তৈরির পরিকল্পনা করি। সে সময়ে, কী ভাবে ঠিক মনে নেই আর এখন, তুষরদার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তাঁর আগরপাড়ার বাড়িতে যাই, ডিম-পরোটা সহযোগে ব্রেকফাস্ট হয়, এক কালের মরিচঝাঁপির ইস্কুলের মাস্টার নির্মল ঢালির সঙ্গে আলাপ হয়, তুষারদা তাঁর বানানো ডকুমেন্টারির সিডি দেন আমাকে, খবরের কাগজে ছাপা যেতে পারে এ রকম কিছু পুরোনো ছবি দেন, কিছু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
সে বার মরিচঝাঁপি দিবসে ভারত সভা হলে একটা মিটিং হয়। সেখানেও গিয়েছিলাম তুষারদার সঙ্গে।
মরিচঝাঁপির বিষয়টা তুষারদা এক ভাবে দেখেছিলেন, আমি অন্য ভাবে। কিন্তু যত বার যোগাযোগ করেছি সাহায্য করেছেন।
বছর দুই-তিন আগে হবে বোধ হয়, জানালেন আগরপাড়ার পাট গুটিয়ে চলেছেন শান্তিনিকেতনে। সেখানকার আস্তানায় যেতে বলেছেন বার বার, আমার যাওয়া হয়নি।
আমার লেখা কাগজে বেরিয়েছিল ইংরিজিতে, তারপর গুরুতে লম্বা টই-ও লিখেছিলাম সে বিষয়ে। আজকে তুষারদার খবরটা পেয়ে সেখানে দুটো লাইন লিখতে ইচ্ছে হল। টই অবশ্য মনে হল হারিয়েছে গুরুর রূপান্তরকালে। খুঁজে পেলাম না। সাধের পুরোনো লেখার টেক্সট কপি করে রেখেছিলাম পাঠকদের মন্তব্য সমেত, আবার তা এখানে চিপকে দিলাম একটু কেটেকুটে।
----------------------------
বিষয় : মরিচঝাঁপি
বিভাগ : অন্যান্য
বিষয়টি শুরু করেছেন : Achintyarup Ray
IP Address : 59.93.246.214 Date:01 Feb 2011 -- 01:08 AM
১৯৭৯ সালের ৩১শে জানুয়ারি, সুন্দরবনের দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে বসত করতে আসা উদ্বাস্তুদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল পুলিশের। এ বছরের ৩১শে জানুয়ারি ফুরোনোর আগে শুরু করতে পারলাম না এ টই, কি আর করা যাবে। ১লা ফেব্রুয়ারিতেই করছি :-(
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.246.214 Date:01 Feb 2011 -- 01:57 AM
একটু রিক্যাপ:
বামফ্রণ্ট সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পর, ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে দলে দলে মানুষ মধ্য ভারতের উদ্বাস্তু ক্যাম্পগুলি ছেড়ে চলে আসতে শুরু করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় দেড় লক্ষেরও বেশি ঘরছাড়া মানুষ এসে পৌঁছয় পশ্চিমবঙ্গে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই স্বপ্ন ছিল সুন্দরবনে গিয়ে বসত করা।
এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত সে কথা নতুন সরকার বুঝে উঠতে পেরেছিল কি পারেনি তা তর্কের বিষয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের ঘুম যখন ভাঙ্গল ততদিনে ৩২,০০০-এরও বেশি লোক ভারতীয় সুন্দরবনের একেবারে পূর্ব সীমানায় মরিচঝাঁপি নামের এক খালি দ্বীপে গিয়ে উঠেছে, সেখানে বাস করার আশায়।
শুরুর দিকে প্রশাসন চেষ্টা করেছিল উদ্বাস্তুদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফেরত পাঠাতে, কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় অন্য পথ নিল সরকার। ১৯৭৯ সালের ২৬শে জানুয়ারি দ্বীপের চারদিকে জারি করা হল ১৪৪ ধারা। কারণ হিসেবে বলা হল মরিচঝাঁপি "একটি সংরক্ষিত অরণ্যের অংশ'। পাশাপাশি শুরু হল "অবরোধ'।
৩১শে জানুয়ারি, ১৯৭৯। মরিচঝাঁপির পাশের দ্বীপ কুমিরমারিতে সংঘর্ষ হল পুলিশবাহিনী এবং মরিচঝাঁপিতে বসত করতে আসা উদ্বাস্তুদের মধ্যে। গুলি চালাল পুলিশ, মানুষ মরল। সরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা দুই, উদ্বাস্তু নেতা রাইহরণ বাড়ইয়ের হিসেবে ১৪ থেকে ১৭।
গুলিতে লোক মরেছিল। কিন্তু ঠিক কত জন আজ ৩২ বছর পরে তা বলা কঠিন। তবে তা ছাড়াও, মধ্য ভারতের উদ্বাস্তু ক্যাম্প ছেড়ে রওয়ানা হওয়ার থেকে শুরু করে সুন্দরবনে আসা এবং আবার ফিরে যাওয়া -- প্রায় দেড় বছরের এই ঘটনাক্রমে প্রাণ গিয়েছিল বহু শত মানুষের -- আনাহারে এবং রোগে।
(সতর্কীকরণ: এই তথ্যগুলি টইয়ের পরবর্তী পোস্তোগুলিতে বারবার ঘুরে ফিরে আসবে)
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.246.214 Date:01 Feb 2011 -- 02:52 AM
ঝাঁকে ঝাঁকে এসেছে ঘরছাড়ার দল। কেউ বাসা বেঁধেছে জবরদখল জমিতে, শহর কলকাতার আশেপাশে, কাউকে তুলে দেওয়া হয়েছে দণ্ডকারণ্যের ট্রেনে, কাউকে আবার আন্দামানের জাহাজে। নেই-ঠিকানা নিখুঁজির গলায় গান -- আমার ছেলে স্বরাজ চাইয়া গেছিল আন্দামানে, অহন গুষ্টিশুদ্ধা যাই আন্দামান স্বরাজের বিধানে। রাজনীতির সুতো কি ভালবাসার টান কে জানে, কখনো মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে এনেছে আন্দামানমুখো জাহাজ। কখনো বলা হয়েছে বাঙালীর ঠাঁই হবে বাংলার মাটিতে। সে ঠাঁই কেউ পেল, কেউ পেল না। যাদের যেতে হল দূর প্রদেশের অচেনা পথে, মন তাদের পড়ে রইল বাংলায়। বার বার ফিরতে চাইলেও, জায়গা মেলে নাই। আর রাজনীতি কি অন্য কোনো ব্যবসা যাদের জীবিকা, তাদের পাশার ছকে মিলে গেল নতুন ঘুঁটি -- পোয়া বারোর চাল।
১৯৭৮-এ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রণ্ট সরকার ক্ষমতায় আসার কিছু পরে, হাজার হাজার মানুষ দণ্ডকের বন্ধ্যা জমি ছেড়ে পাড়ি জমাল সুন্দরবনে। ক হপ্তার মধ্যে প্রায় দেড়লাখ ঘরছাড়া নতুন ঘরের আশায় চলল মরিচঝাঁপি দ্বীপের উদ্দেশ্যে। সরকার কিন্তু চাইল না এত লোকের ভার বইতে। অনেককে আটকানো হল পথে, কাউকে ফের পাঠানো হল দণ্ডকে, কেউ কেউ পেয়াদা-পুলিশের হাত এড়িয়ে ছড়িয়ে গেল এদিক-ওদিক গাঁয়ে গঞ্জে। তবুও, বিল-হাওড় আর ধানী ক্ষেতের স্বপ্ন চোখে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩২,০০০ মানুষ গিয়ে উঠল বাংলাদেশের গায়ে-লাগা মরিচঝাঁপিতে। সাল-তারিখের হিসেব যারা চায়, পুরোনো খাতা ঘাঁটলে তারা দেখতে পাবে, এসব ঘটেছিল ১৯৭৮-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে। বাংলা দেশে তখন বসন্ত।
সরকার কিন্তু ঠিক করল রিফুজিদের থাকতে দেওয়া হবে না এই দ্বীপে। বলা হল রিজার্ভ ফরেস্টের জায়গায় বাসা করা যাবে না। পাততাড়ি গুটিয়ে আবার ফিরতে হবে দণ্ডকবনে। কিন্তু একবার সেই রুখু জমি ছেড়ে যে এসেছে সে কি চায় আর সেখানে ফিরতে? ছিল কিছু লড়ুয়ে জোয়ানও। আর ছিল তারা, যাদের মনের কোনায় ছিল লাভের আশা। (দ্বীপের অনেক জমির পাট্টা বিলি করেছিল তারা, টাকা-পয়সাও নিয়েছিল তার জন্য। রিফুজিরা ছাড়াও তাই সুন্দরবনের অনেক দ্বীপ থেকে মানুষ গিয়ে কুঁড়ে বেঁধেছিল সেখানে, সস্তায় জমির আশায়।)
সংঘর্ষের পথ নিল সরকার। ১৯৭৯ সালের ২৬শে জানুয়ারি (কেউ কেউ বলেন ২৪শে তারিখে) মরিচঝাঁপি ঘিরে জারি করা হল ১৪৪ ধারা। সরস্বতীপুজোর তখন প্রায় এক হপ্তা বাকি।
লঞ্চে করে টহল দিত পুলিশ। দিনে রাতে। যাতে কেউ না ভাঙ্গতে পারে ১৪৪ ধারা। যাতে বাইরে থেকে কেউ না ঢুকতে পারে দ্বীপে। ফলে খাবার-দাবারের যোগানও গেল কমে। এমনিতেও খাদ্য সমস্যা ছিলই। পুলিশি ঘেরাও শুরু হওয়ার আগেও না খেয়ে মরেছে বেশ কিছু লোক। অবরোধের সময়ও মরল অনেকে।
অবরোধ শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক পরে, জানুয়ারির ৩১ তারিখে, সংঘর্ষ হল উদ্বাস্তু আর পুলিশবাহিনীর। ঘটনাস্থল মরিচঝাঁপির পাশের দ্বীপ কুমীরমারি। দুই দ্বীপের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে করানখালি নদী। গুলি চলল। লোক মরল। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা দুই। উদ্বাস্তুদের নেতা রাইহরণ বাড়ইয়ের হিসেবে ১৪ থেকে ১৭। এর আগেও, ১৯৭৮-এর সেপ্টেম্বর মাসে, আরও দুজন পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিল বলে বাড়ই লিখেছিলেন এক চিঠিতে। পরবর্তীকালে খবরের কাগজের রিপোর্টে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে এবং কিছু গবেষণাপত্রে কিন্তু মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেছে বহু গুণ। কেউ বলেছেন সব মিলিয়ে মরিচঝাঁপির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১৭,০০০।
বত্রিশ বছর পেরিয়ে আসার পর এ হিসেব মেলানো খুব সহজ কাজ নয়। মাঝে মাঝে মনে হয় অসম্ভব বুঝি বা। তবে সরকারি হিসেবের দুই বা বেসরকারি গবেষকের ১৭,০০০ -- কোনোটাই হয়ত সত্যের খুব কাছাকাছি নয়।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.242.1 Date:02 Feb 2011 -- 04:35 AM
মধ্য প্রদেশ এবং ওড়িশার ক্যাম্পগুলিতে যে উদ্বাস্তুদের পাঠানো হয়েছিল, তাঁরা ওখানকার পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। তাঁদের মনের কোনো নিভৃত কোণায় একদিন না একদিন বাংলায় ফেরার একটা বাসনা রয়েই গিয়েছিল। আর রাজনৈতিক দলগুলিও -- প্রধানত বামপন্থীরা -- সে বাসনার চারায় সার-জল দিয়ে গেছে বার বার। কারণটা বোঝা খুব কঠিন নয়। এত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুর সমর্থন যে কোনো দলের পক্ষেই লোভনীয়।
১৯৬১ সালে, যখন তৎকালীন সরকার বাঙালী উদ্বাস্তুদের দণ্ডকারণ্যে পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন, তখন হাজার হাজার অনিচ্ছুক রিফিউজির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল অবিভক্ত সিপিআই। পার্টির নেতারা -- বিশেষ করে জ্যোতি বসু -- বলেছিলেন, এই উদ্বাস্তুদের কিছু অংশকে তো সুন্দরবনে পুনর্বাসন দেওয়া যেতে পারে। সুন্দরবনের হেড়োভাঙ্গা সেকেণ্ড স্কিম-এ তাঁদের বসতি করতে দেওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দিয়েছিল পার্টি। মজার ব্যাপার হল, আঠার বছর পর এই জ্যোতি বসুর সরকারই কিন্তু ঐ একই রিফিউজিদের জোর করে ফেরত পাঠাল মধ্য ভারতে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২৫,৮৪৯ টি উদ্বাস্তু পরিবারকে দণ্ডকারণ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। বামপন্থী উদ্বাস্তু সংগঠন ইউনাইটেড সে¸ট্রাল রিফিউজি কাউন্সিল (ইউ সি আর সি)-এর নেতারা কিন্তু বরাবর যোগাযোগ রেখে গেছেন দণ্ডকের ঐ উদ্বাস্তুদের সঙ্গে। নেতাদের কেউ কেউ এমন আশ্বাসও দিয়েছেন যে একদিন না একদিন তাঁদের ঠিক ফিরিয়ে আনা হবে পশ্চিমবঙ্গে।
Name: til Mail: Country:
IP Address : 220.253.65.196 Date:05 Feb 2011 -- 03:11 AM
তিন দিন হয়ে গেল কোন আপডেট নেই! টই খোলার আগে দশ কিস্তি জমা দেবার নিয়ম করা উচিত, হা পিত্যেশ করে বসে আছি যে।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.246.19 Date:09 Feb 2011 -- 03:46 AM
বামফ্রণ্ট সরকারা ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পর, ১৯৭৮-এর জানুয়ারিতে মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের মন্ত্রী রাম চ্যাটার্জি আর অল ইণ্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা অশোক ঘোষ মধ্য ভারতের উদ্বাস্তু ক্যাম্পগুলিতে যান। উদ্বাস্তুদের বেশ কয়েকটা সভায় তাঁরা বক্তৃতাও দেন। সে সমস্ত সভায় এই বামপন্থী নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির নেতা সতীশ মণ্ডল। সতীশবাবু এবং তাঁর সংগঠনই কিন্তু উদ্বাস্তুদের সুন্দরবনে নিয়ে আসার জন্য বিশেষভাবে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.246.19 Date:09 Feb 2011 -- 04:17 AM
কথা হচ্ছিল নির্মল ঢালির সঙ্গে। ওড়িশার মালকানগিরির বাসিন্দা নির্মল। দণ্ডক থেকে আর সকলের সঙ্গে এসেছিলেন মরিচঝাঁপিতে, সেখানে যে স্কুল তৈরি করা হয়েছিল নির্মল ছিলেন তার হেডমাস্টার। ১৯৭৯-তে মরিচঝাঁপি খালি করার সময় ভদ্রলোককে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ, কলকাতার জেলে রাখে মাসখানেক, তারপর ছাড়া পেয়ে আবার ফিরে যান দণ্ডকে।
"আটাত্তর সালে কলকাতার নেতারা গিয়ে আমাদের বলেছিলেন আমরা যদি বাংলায় ফিরে যাই তাহলে পাঁচ কোটি বাঙালী তাদের দশ কোটি হাত বাড়িয়ে আমাদের বুকে টেনে নেবে।' তিরিশ বছরেরও বেশি সময় পর সে "অভিযোগ' অস্বীকার করলেন অশোক ঘোষ। এই লেখকের প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্ট বললেন এরকম কথা তিনি কখনো বলেন নি। রামবাবু আজকে বেঁচে নেই, কিন্তু তিনিও নাকি পরবর্তীকালে জ্যোতিবাবুকে বলেছিলেন উদ্বাস্তুদের বাংলায় ফিরে আসার জন্য এরকম উদার আহ্বান তিনি জানান নি। সত্যতা যাচাই করা কঠিন। তবে এটা সত্যি যে অশোকবাবু এবং রামবাবুর উপস্থিতিতে ঐ সব সভামঞ্চ থেকেই সতীশ মণ্ডল বলেছিলেন, "ভারতবর্ষ কারও বাপের সম্পত্তি নয়, আমাদের যেখানে ইচ্ছা সেখানেই গিয়ে থাকব। আমরা সুন্দরবনে গিয়ে বসত করতে চাই। চলুন, আমরা সবাই বাংলায় ফিরে যাই। মরি যদি বাংলাতেই গিয়ে মরব।'
(হাতের কাছে সমস্ত বই এবং কাগজ নিয়ে বসিনি, আমার একটা পুরোনো ইংরিজি লেখা পাশে রেখে লিখছি, এবং কোটেশনগুলো তার থেকে বাংলা করা। ফলে একটু ইদিক-উদিক হতে পারে।)
লক্ষ্য করার বিষয়, কলকাতার নেতারা যদি উদ্বাস্তুদের বাংলায় ফিরে আসতে না-ও বলে থাকেন, সতীশবাবু যখন এ কথা বললেন, তাঁরা কিন্তু সে বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদও করেন নি।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.246.19 Date:09 Feb 2011 -- 04:53 AM
সাংবাদিক তুষার ভট্টাচার্য একটি ডকুমেণ্টারি ফিল্ম বানিয়েছিলেন। নাম: "মরিচঝাঁপি ১৯৭৮-৭৯, আক্রান্ত মানবিকতা'। সেখানে দেখলাম প্রাক্তন মন্ত্রী এবং আর এস পি নেতা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, "কিছু বামপন্থী নেতা দণ্ডকারণ্যে গিয়ে সেখানকার উদ্বাস্তুদের বাংলায় ফিরে আসতে বলেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন আপনারা আসুন, আমরা সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপে আপনাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেব।'
একটা কথা মাঝখানে বলে রাখি, নির্মল ঢালির সঙ্গে আমার যখন কথা হয়, উনি বলেছিলেন ঐ "পাঁচকোটি বাঙালীর দশকোটি হাত আপনাদের বুকে টেনে নেবে' কথাটি ছিল অশোক ঘোষের। কিন্তু তুষারবাবুর ডকুমেণ্টারিতে দেখছি উদ্বাস্তু নেতা রাধাকান্ত বিশ্বাস বলছেন ঐ কথা বলেছিলেন আমাদের এখনকার মৎস্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ।
সন্দেহ নিরসনের জন্য দেখা করি কিরণময়বাবুর সঙ্গে। মন্ত্রী বললেন এরকম কথা উনি কখনই বলেন নি। বললেন, "আমি দণ্ডকারণ্যে গিয়েছিলাম রামবাবুর সঙ্গে। রামবাবু উদ্বাস্তুদের জিগ্যেস করলেন, আপনারা কোথায় যেতে চান? ওঁরা বললেন আমরা মরিচঝাঁপিতে গিয়ে থাকতে চাই। রামবাবু বললেন, ঠিক আছে। তারপরেই ওঁরা সুন্দরবনে চলে এলেন।'
(উল্লেখ্য, কিরণময়বাবু আর রামবাবু যখন দণ্ডকারণ্যে যান, অশোক ঘোষ কিন্তু সেবার তাঁদের সঙ্গে ছিলেন না।)
সমাপতন: অশোকবাবু এবং রামবাবু দণ্ডক থেকে ফিরে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই উদ্বাস্তুরা সেখানকার ক্যাম্প ছেড়ে চলে আসতে শুরু করল। হাজারে হাজারে মানুষ, যার যেটুকু সম্বল ছিল সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হয়ে পড়ল সুন্দরবনের পথে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১৬০,০০০ দণ্ডকত্যাগী উদ্বাস্তু এসে পৌঁছল পশ্চিমবঙ্গে। এটা সরকারি হিসেব।
Name: siki Mail: Country:
IP Address : 123.242.248.130 Date:09 Feb 2011 -- 10:21 AM
অচিন্ত্য, মন্তব্য করছি না বলে এমন কিন্তু নয় যে এই সুতোটা পড়ছি না। বেশ মন দিয়েই পড়ছি।
আমার হাতের কাছে একটি প্রামাণ্য ডকুমেন্টারি বই আছে, মানে অফিসে নয়, বাড়িতে। আমি বরং সময় করে কিছু কিছু রিপোর্ট তুলে দেব সেখান থেকে, সেই সময়কার। বিধানসভায় জ্যোতি বসুর বক্তৃতা, ত্ৎকালীন তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, সেই সময়ে সুনীল গাঙ্গুলির প্রতিক্রিয়া ... শঙ্খ ঘোষের কবিতা ...
Name: d Mail: Country:
IP Address : 14.99.122.217 Date:09 Feb 2011 -- 03:12 PM
শমীক, 'মরিচঝাঁপি ছিন্ন দেশ ছিন্ন ইতিহাস' এর কথা বলছ কি?
অচিনবাবু যাঁদের কথা লিখছেন (নির্মলকান্তি ঢালি ইত্যাদি) তাঁদের স্টেটমেন্ট আছে মধুময় পাল সম্পাদিত পরের বইটায় 'নিজের কথায় মরিচঝাঁপি'
Name: Samik Mail: Country:
IP Address : 123.242.248.130 Date:09 Feb 2011 -- 03:26 PM
বোধ হয় সেইটাই। সঠিক নামটা মনে নেই।
Name: Kaju Mail: Country:
IP Address : 121.244.209.245 Date:09 Feb 2011 -- 04:26 PM
শঙ্খ ঘোষের কবিতাটা একটু এখানে দিতে পারবে/ন কেউ? 'কবিতার মুহূর্ত' পড়তে পড়তে দেখছি, ওনার বেশ কয়েকটি এমন লেখা আছে, যার উৎস সমাজের বা তৎকালীন সময়ের এক একটি জ্বলন্ত বাস্তবতা। মরিচঝাঁপির সেইসব 'গলার কাছে পাথর বাঁধা বস্তামানুষ'-দের কথা কোন কবিতায় আছে, জানার জন্যে 'আগ্রহ মোর অধীর অতি'। :-)
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.34 Date:09 Feb 2011 -- 05:30 PM
শমীক, বইয়ের অভাব নেই। প্রচুর বই এই বিষয় নিয়ে বাজারে আছে, আমার কাছেও আছে। তবে সব বইয়ের সব লেখা, এমন কি সব ইণ্টারভিউ, সব সময় প্রামাণ্য বলে মনে করার কারণ আছে বলে মনে হয় না। (ডকুমেণ্টগুলো, যেমন জ্যোতিবাবুর বক্তৃতা, বুদ্ধবাবুর বক্তৃতা, সুনীলের লেখা ইত্যাদির কথা বলছি না।)
এই লেখা শেষ হওয়ার পর এসব নিয়ে কিছু কথাবার্তা বলা যেতে পারে। (কিন্তু গোয়িং বাই মাই লেখার স্পিড ... যাক্গে)
Name: Arpan Mail: Country:
IP Address : 122.252.231.10 Date:09 Feb 2011 -- 08:07 PM
এইটা খুঁজছ?
"ট্রেনের থেকে ঝাঁপ দিয়েছ ধান শিয়রে।
গলার কাছে পাথরবাঁধা বস্তামানুষ।
মাটির থেকে উঠছিল তার মাতৃভূমি
বুকের নীচে রইলো বিঁধে বৃহস্পতি।'
Name: Arpan Mail: Country:
IP Address : 112.133.206.18 Date:09 Feb 2011 -- 08:18 PM
সরি। পুরোটা লিখিনি আগের বার। পোস্ট করছি পুরো কবিতাটা।
Name: Arpan Mail: Country:
IP Address : 112.133.206.18 Date:09 Feb 2011 -- 08:25 PM
ট্রেনের থেকে ঝাঁপ দিয়েছে ধানশিয়রে
গলার কাছে পাথর বাঁধা বস্তামানুষ
মাটির থেকে উঠছিল তার মাতৃভূমি
বুকের নিচে রইল বিঁধে বৃহস্পতি
ইচ্ছে ছিল তমালছোঁয়া দু:খ ছিল
কিন্তু হঠাৎ টান দিয়েছে উলটোরথে
এসেছিলাম আমরা সবাই এসেছিলাম
বলতে বলতে ঝাঁপ দিল তাই অন্ধকারে
কামরাজোড়া অন্য সবাই চমকে উঠে
অল্পমুখের কৌতূহলে দেখল শুধু
ছন্দ আছে আসাযাওয়ার ছন্দ আছে
আর তা ছাড়া ধ্বংস তো নয় বরং এ যে
সবার কাছে লাথি খাবার পদ্মবুকে
দেশ নেই যার এইভাবে দেশ খুঁজে বেড়ায়
উলটোরথের ভিখিরি দেশ খুঁজে বেড়ায়
গলায় পাথর বুকের নিচে বৃহস্পতি।
(উলটোরথ/শঙ্খ ঘোষ)
Name: Arpan Mail: Country:
IP Address : 112.133.206.18 Date:09 Feb 2011 -- 08:30 PM
তুমি বললে মানবতা
আমি বললে পাপ
বন্ধ করে দিয়েছে দেশ
সমস্ত তার ঝাঁপ।
তুমি বললে হিটলারি-ও
জনপ্রেমে ভরা
আমি বললে গজদন্ত
তুমি বললে ছড়া।
তুমি বললে বাঁচার দাবি
আমি বললে ছুতো
হামলে কেন এল সবাই
দিব্যি খেত শুত।
হোক না জীবন শুকনো খরা
বন্ধ্যা বা নিষ্ফলা।
আমি বললে সেপাই দিয়ে
উপড়ে নেবে গলা।
তুমি বললে দণ্ডকে নয়
আপন ভূমিই চাই
আমি বললে ভণ্ড, কেবল
লোক খেপাবার চাঁই।
চোখের সামনে ধুঁকলে মানুষ
উড়িয়ে দেবে টিয়া
তুমি বললে বিপ্লব, আর
আমি প্রতিক্রিয়া।
(তুমি আর নেই সে তুমি/শঙ্খ ঘোষ)
Name: Arpan Mail: Country:
IP Address : 112.133.206.18 Date:09 Feb 2011 -- 08:37 PM
এ-দুয়োরে যায় : দূর-দূর!
ও-দুয়োরে যায় : ছেই-ছেই!
সুয়োরানী লো সুয়োরানী তোর
রাজ্যে দিল হানা
পাথরচাপা কপাল যার সেই
ঘুঁটেকুড়ুনির ছনা
ঘেন্নায় মরি, ছি!
মন্ত্রী বলল, দেখছি
কোটাল বলল, দেখছি
ঢোল ডগরে পড়ে কাঠি
রক্তে রাঙা হয় মাটি
কাড়ে না কেউ রা
ভালোমানুষের ছা
সাতটি চাঁপা সাতটি গাছে
পারুল বোন রইল কাছে
দণ্ডকে যায় ধর্মরাজার
কলের ডুলি
এই গল্পে ভর্তি ক'রে
ঠাকুরমার ঝুলি।।
(ঠাকুরমার ঝুলি/সুভাষ মুখোপাধ্যায়)
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.242.108 Date:10 Feb 2011 -- 03:47 AM
মরিচঝাঁপি নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করছি বেশ কিছুদিন, কিন্তু কিছুতেই শান্ত মস্তিষ্কে বসে লিখতে পারি না। এ গল্প যতটা সহজ মনে হয় ঠিক ততটা সহজ নয় হয়ত। খোঁজ করতে করতে মনে হয়েছে বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী এবং ব্যক্তির বিভিন্ন ইন্টারেস্ট বিভিন্নভাবে কাজ করেছিল মরিচঝাঁপির ঘটনায়। সে ইণ্টারেস্ট কখনো দলগত বা গোষ্ঠীগত, কখনো এমন কি ব্যক্তিগত। কিছু মানুষের লাভের অঙ্কের, উচ্চাকাঙ্ক্ষার এবং লোভের খেলার দাম দিতে হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে। কথাগুলো মনে হলেই -- অশোক মিত্তির মশাই যেমন লিখেছিলেন -- ন্যক্কারে আমার শ্লেষ্মা ভরে ওঠে। মস্তিষ্ক ঠিক মত কাজ করতে চায় না আর
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.242.108 Date:10 Feb 2011 -- 04:15 AM
নির্মল ঢালি বলেছিলেন অশোক ঘোষ এবং রাম চ্যাটার্জী মধ্য ভারতের বিভিন্ন উদ্বাস্তু ক্যাম্প এলাকায় বেশ কয়েকটি মিটিং করেন সে বার -- ১৯৭৮-এর জানুয়ারি মাসের ১৬ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত। মধুময় পালের বইয়ে সতীশ মণ্ডলের যে চিঠি ছাপা হয়েছে, তাতেও দেখছি লেখা:
"আপনারা জানেন যে গত ১৬/১/৭৮ তাং উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির নেতৃত্বে প: বাংলা বামফ্রন্ট সরকারের স্বরাষ্ট্র (অসামরিক প্রতিরক্ষা) বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী মাননীয় শ্রী রাম চ্যাটার্জী ও বামফ্রন্ট সরকারের উপদেষ্টা কমিটির সম্পাদক ও ফরোয়ার্ড ব্লকের (প: বাংলা) সাধারণ সম্পাদক মাননীয় শ্রী অশোক ঘোষ বহির্বাংলায় বাঙালী উদ্বাস্তুদের অবস্থা সরেজমিনে তদন্ত ও স্বচক্ষে অবলোকন করার জন্য মানা সহ দণ্ডকারণ্য ও অন্যান্য এলাকায় পরিদর্শনে আসেন।
"উক্ত নেতৃবৃন্দ ১৬/১/৭৮ তাং থেকে ১৯/১/৭৮ তাং পর্যন্ত বিরামহীনভাবে মধ্যপ্রদেশের পারালকোট জোন, মহারাষ্ট্রের চান্দা (চন্দ্রপুর), অন্ধ্রপ্রদেশের কাগজনগর প্রভৃতি অঞ্চলের মর্মান্তিক দু:খপূর্ণ কাহিনী স্বকর্ণে শ্রবণ করেছেন এবং হৃদয় বিদারক করুণ অবস্থা স্বচক্ষে পরিদর্শন করেন এবং চারটি জনসভায় তাঁদের উল্লেখযোগ্য বক্তব্য রেখে ১৯/১/৭৮ তাং বোম্বে-হাওড়া মেলযোগে কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন।'
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.242.108 Date:10 Feb 2011 -- 04:37 AM
তাহলে তিন দিনে তিন রাজ্যে মোট চারটি জনসভা করলেন রামবাবু আর অশোকবাবু। শুধু তাতেই শুরু হয়ে গেল এত বড় এক্সোডাস? সন্দেহ হয়। মনে হয় দীর্ঘদিনের সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়া কি এরকম ঘটতে পারে? কাদের সে পরিকল্পনা? সুন্দরবনের কথা না হয় বহু বছর ধরে বলা হচ্ছে, কিন্তু কেন মরিচঝাঁপি? অন্য কোনো দ্বীপ কেন নয়?
Name: Kaju Mail: Country:
IP Address : 121.244.209.245 Date:10 Feb 2011 -- 10:21 AM
অর্পণকে ধন্য প্লাস প্লাস। :-)
হ্যাঁ, 'উল্টোরথ'-টা পড়েছি আগে। এর উৎস-ও মরিচঝাঁপি বলেই মনে হয় পড়তে গেলে, পুনর্বাসনের পরে নির্মমভাবে উচ্ছেদ, শেয়ালদা স্টেশনে উদ্বাস্তুর গিজগিজে ভিড়, ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেয়া এক কিশোরীর। দ্বিতীয়টা বোধায় প্রত্যক্ষভাবে মরিচঝাঁপির ঘটনায় অনুপ্রাণিত। কারণ দণ্ডকের উল্লেখ আছে।
Name: siki Mail: Country:
IP Address : 123.242.248.130 Date:10 Feb 2011 -- 10:34 AM
হুঁ, বইটা মরিচঝাঁপি, ছিন্ন দেশ, ছিন্ন ইতিহাস। যেটা আমার কাছে আছে। সম্পাদনা মধুময় পাল। বোধ হয় অর্পণও ঐ একই বই থেকেই কবিতাগুলো নামাল।
অচিন্ত্যর নিবন্ধ এর পর থেকে শুরু হচ্ছে। এগোক।
Name: Arpan Mail: Country:
IP Address : 112.133.206.18 Date:10 Feb 2011 -- 10:39 AM
হ্যাঁ, আমি ওখান থেকেই টুকেছি। কাল অনেকটা ফিরে পড়লামও।
অচিন্ত্যর পরের কিস্তির জন্য প্রতীক্ষারত।
Name: Arpan Mail: Country:
IP Address : 122.252.231.10 Date:10 Feb 2011 -- 10:40 AM
উলটোরথের কবিতা নিয়ে শঙ্খবাবুর একটি নাতিদীর্ঘ লেখা বইটিতে আছে। অনুষ্টুপ পত্রিকায় বেরিয়েছিল বোধহয় ৮৭ সালে।
Name: Kaju Mail: Country:
IP Address : 121.244.209.245 Date:10 Feb 2011 -- 11:10 AM
'উল্টোরথ'-এর উৎস নিয়ে তো? হ্যাঁ, সেই লেখাটাই তো 'কবিতার মুহূর্ত'-তে আছে। :-)
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.245.154 Date:11 Feb 2011 -- 04:25 AM
উদ্বাস্তুরা মরিচঝাঁপিতে এসেছিল কবে? ১৯৭৮-এ, বামফ্রণ্ট সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পর -- শুরুতেই লিখেছি সে কথা। কিন্তু যে নেতারা তাদের নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা প্রথম কবে পা রেখেছিলেন মরিচঝাঁপি দ্বীপে? আরও তিন বছর আগে -- ১৯৭৫ সালে।
সেবার উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির কয়েকজন সদস্য সতীশ মণ্ডলের নেতৃত্বে ঘুরে দেখতে আসেন সুন্দরবন অঞ্চল -- দেখতে আসেন কোন্ দ্বীপে বসত তৈরি করা যায় রিফিউজিদের জন্য। কয়েকটি জায়গা ঘুরে অবশেষে বাংলাদেশের প্রায় গায়ে-লাগা মরিচঝাঁপি দ্বীপটিই পছন্দ হল তাঁদের।
তার কয়েকদিন পর দণ্ডকের উদ্বাস্তুদের উৎসাহিত করে সেখানকার ক্যাম্প ছেড়ে সদলবলে পা বাড়ানো হল সুন্দরবনের পথে। কিন্তু সে পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিল তখনকার কংগ্রেসী সরকার। মাঝপথ থেকেই রিফিউজিদের ফিরে যেতে হল দণ্ডকে। গ্রেফতার হলেন কয়েকজন উদ্বাস্তু নেতা।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.245.154 Date:11 Feb 2011 -- 04:53 AM
১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে, ফের যখন মধ্য ভারতের ক্যাম্প ছেড়ে দলে দলে মানুষ রওয়ানা হল সুন্দরবনের দিকে, অবস্থা খতিয়ে দেখতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটা সর্বদলীয় টিম পাঠানো হল দণ্ডকে। কয়েকজন মন্ত্রীও ছিলেন সেই টিমে। সেই সময় দণ্ডকারণ্য থেকে ফাইল করা কয়েকটি খবরের কাগজের রিপোর্ট তুলে দিচ্ছি:
the refrain (of the refugees is) that ‘we want to die in West Bengal’. But the question is whether the conviction has been created by some instigating agencies as the situation does not seem to justify such a feeling…
“The economic grievances listed by the refugees at every village the delegation visited were low yield of the land and unremunerative prices for the produce... Interestingly, the grievances listed in the memoranda received in far flung villages were all couched in the same language and even the grievances listed in the same order…
“At different places refugees did not deny that people had urged them to leave for West Bengal.” – The Statesman, March 27, 1978
“Though many people talked of outside instigation, none identified the persons. The situation is intriguing and after a hectic tour of the area they (the all-party team) were convinced that there was an instigating group who wanted the settlers to leave. Though none of the ministers identified the group, they so strongly criticised the Udbastu Unnayansil Samiti that there was no doubt who the instigators were. The Statesman, March 26, 1978
২রা এপ্রিল, ১৯৭৮। আনন্দবাজার পত্রিকা খবর:
(কোটেশনের মধ্যে লিখছি, কিন্তু এরও অরিজিনাল বাংলা কপিটি এখন সঙ্গে নেই, ফলে ইংরিজি থেকে অনুবাদ করতে হচ্ছে)
"সরকারী হিসেব মত রায়পুর স্টেশন ও সংলগ্ন অঞ্চলে এসে জড়ো হয়েছেন প্রায় ১০,০০০ ক্যাম্পত্যাগী মানুষ। তাঁদের সকলের মুখে একই কথা, আমরা বাংলায় গিয়ে মরতে চাই। রেলের অফিসাররা জানালেন গত চার-পাঁচ দিনে প্রায় ৩,০০০ কলকাতার টিকিট বিক্রি হয়েছে ... বেশ কয়েকজন উদ্বাস্তুর সঙ্গে কথা বললাম আমি। তাঁদের প্রত্যেকেই কলকাতায় যেতে চান এবং প্রত্যেকের কাছেই টিকিট আছে। এক একটা টিকিটের দাম ২৫ টাকা ৩৬ পয়সা। কোথা থেকে টিকিটের পয়সা এল জানতে চাইলে মুখ খুলছেন না কেউ।'
Name: Manish Mail: Country:
IP Address : 59.90.135.107 Date:11 Feb 2011 -- 10:15 AM
অচিন্তরুপ বাবু, লেখাটা খুব সুন্দর হচ্ছে। এত তথ্যে ঠাসা লেখা বোধহয় একজন সাংবাদিকের পক্ষেই সম্ভব।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.245.27 Date:12 Feb 2011 -- 05:11 AM
আচ্ছা, উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতি কি ফরওয়ার্ড ব্লকের খুব ঘনিষ্ঠ ছিল? মার্ক্সিস্ট ফরওয়ার্ড ব্লক বা অল ইণ্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে খুব নিবিড় যোগাযোগ ছিল কি তাদের?
মোটেই না, বললেন অশোক ঘোষ মশাই। এ নিয়ে বৃদ্ধকে আর জ্বালাতন করি নি।
ওদিকে মরিচঝাঁপির গণ্ডগোলের সময় অবিভক্ত চব্বিশ পরগণার পুলিশ সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট ছিলেন যিনি, সেই অমিয় সামন্ত মশাই জানালেন যে রামবাবু আদৌ উদ্বাস্তুদের দণ্ডক থেকে বাংলায় আসতে বলেন নি।
কিন্তু কতগুলো তথ্য কেবলই মনের ভেতর ঘুরপাক খায়। হয়ত কিছুর সঙ্গেই কিছুর কোনো যোগ নেই, তবুও ...
১) দুই ফরওয়ার্ড ব্লকের দুই নেতা দণ্ডকে ঘুরে আসার পর পরই শুরু হল এক্সোডাস
২) উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতি মরিচঝাঁপিতে তাদের গড়ে তোলা বসতির নাম দিয়েছিল "নেতাজীনগর'
৩) ১৯৭৯ সালের শুরুর দিকে, মরিচঝাঁপির চারদিকে যখন ১৪৪ ধারা জারি করা হল, এবং কার্যত অর্থনৈতিক অবরোধ শুরু করল প্রশাসন, সেই সময় কলকাতা হাই কোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। পিটিশন ফাইল করেছিলেন শাক্য সেন এবং নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার। শাক্য সেনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আমরা বাঙালীর (পরবর্তী কালে কলকাতা দক্ষিণ নির্বাচন কেন্দ্র থেকে আমরা বাঙালীর প্রার্থী হয়ে ইলেকশনেও দাঁড়িয়েছিলেন শাক্যবাবু), আর নীহারেন্দুবাবু ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের একজন সিনিয়র নেতা।
এ সবই হয়ত শুধুই সমাপতন।
Name: ranjan roy Mail: Country:
IP Address : 115.240.139.146 Date:12 Feb 2011 -- 06:58 AM
অচিন্ত্য,
সেকি? নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার ফরওয়ার্ড ব্লক? বুড়োবয়সে? হয়তো! কিন্তু উনি যে ড: বিধান চন্দ্র রায়ের মন্ত্রীসভায় একজন মন্ত্রী ছিলেন, আমার যতদূর মনে পড়ছে।
প্লীজ, একবার তোমার পিতৃদেবের সঙ্গে চেক করে নিয়েছ কি? কারণ ময়মনসিংহের নীহারেন্দু'র মন্ত্রী হওয়া নিয়ে ( বাস্তবে উনি একই পাড়ার ছিলেন) আমাদের ঠাকুমা-দাদুরা বেশ গর্বিত ছিলেন।
Name: Arpan Mail: Country:
IP Address : 112.133.206.2 Date:12 Feb 2011 -- 11:36 AM
অচিন্ত্য এমন অল্প অল্প করে লেখে। এদিকে প্রশ্ন চেপে রাখা দায়! :(
আপাতত একখানি প্রশ্ন ছিল।
মরিচঝাঁপি দ্বীপটিকেই উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল কমিটি বেছে নিল কেন এই নিয়ে আরো বিস্তারিত লেখ। এই নিয়ে অমিয়বাবুর লেখায় একটা থিওরির উল্লেখ আছে (উৎস: মরিচঝাঁপি - ছিন্ন দেশ ছিন্ন ইতিহাস)। থিওরিটির ঐতিহাসিক সত্যতা কতখানি?
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.242.112 Date:13 Feb 2011 -- 05:50 AM
নীহারেন্দু দত্ত মজুমদারের বিষয়ে জানার জন্য শনিবার বিকেলে ফোন করলাম ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চ্যাটার্জীকে। খুব ভদ্রলোক নরেনবাবু। বললেন ডিটেলগুলো একটু জেনে নিয়ে জানাবেন আমাকে। মিনিট পনের পরে নিজেই ফোন করলেন। বললেন একদা নেতাজী-ঘনিষ্ঠ নীহারেন্দুবাবু ১৯৪৮ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। পরবর্তীকালে কংগ্রেস ছেড়ে সুভাষবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকে আসেন এবং আমৃত্যু সেই দলের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন।
তবে আমার একটু সন্দেহ রয়েই গেল। ১৯৪৮-এ বিধান রায় তাঁর মন্ত্রীসভায় নিহারেন্দুবাবুকে ডেকে নেন ঠিকই (আইন মন্ত্রীর পদও দেন), কিন্তু দত্ত মজুমদার মশাই কংগ্রেস দলে যোগ দিয়েছিলেন কি? না কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল সদস্য হিসেবে ছিলেন? অশোক ঘোষ ভাল বলতে পারবেন আশা করে তাঁকেও ফোন করার চেষ্টা করি। কিন্তু উনি রবিবারের ব্রিগেডের মিটিং নিয়ে ব্যস্ত। আশা করি সোমবার ধরতে পারব।
১৯৫৭ সালে নীহারেন্দুবাবু ভাটপাড়া কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান।
লিঙ্ক: http://eci.gov.in/eci_main/StatisticalReports/SE_1957/StatRep_WB_1957.
pdf
১৯৮০ সালে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন
"Report
On The
General Elections
To The House Of The People
And
The Legislative Assemblies 1979-80
And
Vice-Presidential Election 1979"
শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। তার ৪৭-এর পাতায় দেখা যাচ্ছে:
All India Forward Block is a recognised State Party in the State of West Bengal. According to the Commission's record, S/Shri P.D.Paliwal and Chitta Basu were the Chairman and General Secretary of the party, respectively. A rival claim was made by Shri Niharendu Dutt-Majumdar and Shri Ramayan Singh as
representing the real party which was founded by Netaji Subhash Chandra Bose. Interestingly, they first approached the Commission for the registration of their party under the Symbols Order but later on changed their stand and made a claim to represent the party which was already recognised by the Commission. The Commission was, however, not satisfied with their claim on the basis of the materials produced by them in support of their claim.
লিঙ্ক: http://eci.nic.in/eci_main/Eci_Publications/books/miscell/The%20Legisl
ative%20Assemblies-79-80.pdf
১৯৩৯ সালে "ফরওয়ার্ড ব্লক' পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার। প্রবন্ধের নাম 'An Appeal To Socialists'. তার শেষ দু লাইনে রয়েছে সমস্ত সোশ্যালিস্টদের প্রতি এক আহ্বান:
"I appeal to all socialists to deliberate coolly over these issues and criticize my views to which I should only gladly submit. I Appeal to all socialists to join the Forward Bloc."
লিঙ্ক: http://www.forwardbloc.org/www/May_2009-TS.pdf
এই লিঙ্কের তৃতীয় প্রবন্ধ।
আরেকটি ইণ্টারেস্টিং লিঙ্ক। ততটা প্রাসঙ্গিক নয়, তবুও ... এটি ১৯৩৯ সালের ২রা সেপ্টেম্বর তারিখের "ফরওয়ার্ড ব্লক'। সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র বোস। সম্পাদকীয়টি সুভাষবাবুরই লেখা। এখানেও নীহারেন্দুবাবুর একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ আছে দেখছি। ৯-এর পাতায়। প্রবন্ধের নাম 'What shall we do?' লেখকের পরিচয়: জেনারেল সেক্রেটারি, লেবার পার্টি।
লিঙ্ক: http://www.subhaschandrabose.org/fb/FB%20Vol%2001%20No%2005.pdf
দীর্ঘ শিবের গীতের কারণে আজকে আর মরিচঝাঁপিতে ফেরা গেল না।
অর্পণের প্রশ্নের উত্তর আমিও খোঁজার চেষ্টা করেছি। বস্তুত এই নিবন্ধে আমার নিজের বক্তব্য যথা সম্ভব বর্জন করে কিছু প্রশ্ন এবং যেটুকু যা তথ্য আমি পেয়েছি তা-ই রাখার চেষ্টা করেছি। সে সব ক্রমশ প্রকাশ্য।
;-)
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.243.192 Date:14 Feb 2011 -- 06:08 AM
স্বভূমি স্বপ্ন?
মরিচঝাঁপিতে বসত গড়ার কাজে উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতিকে সক্রিয় ভাবে সাহায্য করেছিল কয়েকটি সংগঠন। তাদের মধ্যে দুটির কথা এখানে উল্লেখ করছি।
প্রথমটি হল আমরা বাঙালী। এই সংগঠনের সদস্যরা টাকা পয়সা দিয়ে এবং অন্য নানা ভাবে সাহায্য করেছিলেন উদ্বাস্তুদের। (শাক্য সেনের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। উনি এবং নীহারেন্দুবাবু প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মরিচঝাঁপির চারদিকে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ার পর।)
এই তথ্য আমাকে দিয়েছেন নির্মল ঢালি -- মরিচঝাঁপির ইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। উনি বলেছিলেন, "আমরা বাঙালীর সুব্রত চ্যাটার্জীর সহায়তায় দ্বীপের পাঁচটা সেক্টরে মোট সাতটা টিউবওয়েল বসানো হয়েছিল।' (এই কথা আমি খবরের কাগজে লেখার দিন দুই পরে এক দুপুরে একটা ফোন পেলাম। যিনি ফোন করলেন তিনি বললেন তাঁর নাম সুব্রত চ্যাটার্জী। বললেন তিনি কখনো আমরা বাঙালীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আমি ঠিক কথা লিখিনি। ভদ্রলোককে জানালাম, লেখাটা আমার বটে, তবে ভালো করে সেটা পড়লে দেখতে পাবেন যে ঐ সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথাটা আমার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়, ওটা বলেছেন নির্মল ঢালি। তাতে উনি জিজ্ঞাসা করলেন, "নির্মল ঢালির সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে?' সবিনয়ে জানালাম কথা হয়েছে। "ও,' বলে ভদ্রলোক ফোন রেখে দিলেন।)
এখন আমরা বাঙালী সম্পর্কে ছোট্ট দু-একটা কথা বলি। এই সংগঠনের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল "বাঙ্গালীস্তান' প্রতিষ্ঠা করা। স্বপ্নের সেই বাঙ্গালীস্তানের মধ্যে থাকবে পুরো পশ্চিমবঙ্গ; ত্রিপুরা, আন্দামান এবং আসাম, মেঘালয়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, নেপাল ও মায়নমারের কিয়দংশ এবং গোটা "স্বাধীন বাংলাদেশ'। এই তথ্যগুলো আমরা বাঙালীর ওয়েবসাইটে যে কেউ পেয়ে যাবেন।
দ্বিতীয় যে সংগঠনটির কথা বলব, তার নাম নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ। আই বি-র তথ্য অনুযায়ী, দণ্ডকের ক্যাম্প ছেড়ে উদ্বাস্তুরা রওয়ানা হওয়ার আগে কলকাতার এই সংগঠনটি কলকাতা থেকে সুন্দরবান যাওয়ার একটি রুটম্যাপ বানিয়ে তার শত শত কপি বিলি করেছিল উদ্বাস্তুদের মধ্যে। রুটম্যাপ ছাড়াও, মরিচঝাঁপি দ্বীপের একটা ম্যাপও তারা বিতরণ করেছিল বলে আই বি সূত্র জানিয়েছে। সে সব ১৯৭৮-এর ফেব্রুয়ারি মাসের কথা।
মোটামুটি ঐ সময়েই নাগরিক সঙ্ঘের নেতা এস চ্যাটার্জী এবং ডাক্তার কালিদাস বৈদ্য কিছু ভলাণ্টিয়ার নিয়ে একটি পৃথক "হিন্দু হোমল্যাণ্ড'-এর দাবিতে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ আন্দোলন করেন। বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের আফিসের সামনেও বার দুয়েক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তাঁরা। এই রকম একটি বিক্ষোভের সময় ডাক্তার বৈদ্যকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এস চ্যাটার্জী কিন্তু ধরা পড়েন নি। অমিয় সামন্ত বললেন চ্যাটার্জী নাকি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান এবং উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে চলেন।
অমিয়বাবু সে সময় ছিলেন চব্বিশ পরগণার এস পি। ফলে তাঁর মতামত সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু মরিচঝাঁপির বিষয়ে নাগরিক সংঘের বিশেষ আগ্রহ ছিলই। ১৯৭৮ সালের ২০শে আগস্ট এস চ্যাটার্জী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইকে একটি ফোনোগ্রাম পাঠান। তাতে লেখা:
Prime Minister,
Your kind attention drawn to planned massacre of innocent refugees at Marichjhapi, Sundarbans, in your name. Please take realistic stock of situation and kindly allow them to independently establish their stay irrespective of any political compulsion.
“About ten thousand built their huts, economic fisheries starting paying dividend regenerating economy locally.
“Now seems being brutally uprooted by L.F. Government in connivance with yours who probably is ignorant of exact situation.
“Request immediately stop Marichjhapi operation tomorrow and respect whole cultural Bengalis heart.”
২১ তারিখে আরও একটি ফোনোগ্রাম। প্রধানমন্ত্রী এবং কয়েকজন এমপি-কে:
Prime Minister,
Humbly appealStop further massacre operation on Marichjhapi Sundarbans refugees. Today all launch services suspended there sine die officially large contingent forces sent not for just return to Dandak. Repeat appeal to P.M. and Morarji must know real situation before making Turkman Gate plus Jallianwalla Bagh blunder
.Must
politics rule or Central Government and civilized India. Kindly Act.
বাংলাদেশের সীমানা-ঘেঁষা একটি দ্বীপে বসত-করা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে সংঘের এই উদ্বেগ কি শুধুই মানবিক কারণে? না অন্য কোনো স্বপ্ন সংঘ-নেতাদের মনে ছিল?
তাহলে নাগরিক সংঘের ইতিহাসটা একটু ঘেঁটে দেখা যাক। এই সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালের ১৫ই আগস্ট। তার প্রায় পাঁচ বছর পর, ১৯৮২ সালের ২৫শে মার্চ, নাগরিক সংঘ এক স্বাধীন বঙ্গভুমি প্রতিষ্ঠার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করল। বাংলাদেশের "গ্রেটার খুলনা', যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালি প্রভৃতিও এই বঙ্গভূমির অংশ।
সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া এই বঙ্গভূমি তৈরি করা যাবে না, জানতেন সংঘের নেতারা। সেরকম একটি বাহিনীও তাই তৈরি করা হল। তার নাম "বঙ্গসেনা'। কমাণ্ডার -- কালিদাস বৈদ্য। ১৯৭৮-৭৯ সালে মরিচঝাঁপিতে উদ্বাস্তুদের যে ভলান্টিয়ার বাহিনী ছিল, বঙ্গসেনার কিছু সৈনিকও ছিলেন সেই বাহিনীর সদস্য। এ খবর জানতে পারলাম সেই সৈনিকদেরই এক জনের কাছ থেকে। ভদ্রলোকের নাম যাদব হালদার। কলকাতার খুব কাছেই একটি বস্তিতে থাকেন এখন।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.198.28 Date:15 Feb 2011 -- 12:25 AM
কালিদাসবাবু থাকেন কসবায়, রামলাল বাজারের কাছে। গত বছর একটুর জন্য ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগটা মিস করে গেলাম। খোঁজ খবর করে যেদিন যোগাযোগ করতে পারলাম, তার আগের দিন ওঁর মারাত্মক সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল। তার পর থেকে কিছুদিন পর পরই বার বার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কালিদাসবাবুর বাড়ির লোকেরা স্বাভাবিক কারণেই আমাকে ওঁর সঙ্গে ফোনেও কথা বলতে দেন নি।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.243.190 Date:15 Feb 2011 -- 02:41 AM
মরিচঝাঁপির ভলাণ্টিয়ার বাহিনীর কথা অমিয় সামন্ত তাঁর প্রবন্ধে বার বার লিখেছেন। কিন্তু ঐ যে বলেছি, উনি সেই সময় ছিলেন সেখানকার পুলিশ সুপার, ওঁরই লোক গুলি চালিয়ে মানুষ মেরেছিল, কাজেই ওঁর লেখায়/কথায় বায়াস না থাকাটাই অস্বাভাবিক। তবুও উনি যা লিখেছিলেন তার থেকে কিছু অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি। এবং সে বিষয়ে খোঁজ করে আমি যা পেয়েছি তা-ও লিখছি।
অমিয়বাবুর বক্তব্য: "There was no semblance of state authority in the island as the entry of the police and administrative officials was stoutly resisted by armed volunteers."
এ ছাড়াও উনি লিখেছেন মরিচঝাঁপি ছেড়ে কোনো উদ্বাস্তু পরিবার যদি চলে যেতে চাইত, ভলান্টিয়াররা তাদের যেতে দিত না। প্রয়োজনে বলপ্রয়োগও করত।
"On 13 February one Manindra Roy of Marichjhapi reported to a police patrol that one Mahesh Baroi and 10/15 volunteers threatened him and the members of his family with dire consequences and kept them confined in their houses
(Ref. Gosaba PS Case No.9 dated 13.2.1979)."
যাদব হালদার (অর্থাৎ মরিচঝাঁপির যে ভলাণ্টিয়ারকে কলকাতার কাছেই এক বস্তিতে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম) কিন্তু এ ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করেন নি। বললেন, "হ্যাঁ, কিছু রিফিউজিদের তো জোর করে ধরে রাখতেই হয়েছিল। নইলে লোকে যদি সমানে দ্বীপ ছেড়ে চলে যেত, আমাদের শক্তি কমে যেত না? হ্যাঁ, তাদের ধরে রাখার জন্য মারধোরও করতে হয়েছে কখনো সখনো।'
গোসাবার খগেন মিস্ত্রী কাঠের কাজ করেন। গোসাবাতেই বাস। মরিচঝাঁপির ঘটনার অনেক আগে থেকেই। তো, সেই ১৯৭৮-৭৯-তে যখন শুনলেন মরিচঝাঁপিতে গেলেই খুব সস্তায় জমি পাওয়া যাবে, সে সুযোগটা খগেনবাবু ছাড়তে রাজি হলেন না। গাঁয়েরই আরও কয়েকজনকে নিয়ে গিয়ে উঠলেন সেখানে। খগেন মিস্ত্রীর কথায়: "সমিতির লোকেদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালই ছিল। কিন্তু কুমীরমারিতে গুলি চলার পর আমি যখন পরিবার নিয়ে পালিয়ে আসছি, আমাকেও তখন ভলান্টিয়াররা আটকাতে চেষ্টা করেছিল। অনেকে তো নদীর ওপার থেকে জল আনতে যাওয়ার নাম করে চুপি চুপি কেটে পড়ত।'
ভলাণ্টিয়ারদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না ('নকশালরা আমাদের বন্দুক-টন্দুক দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা নিই নি,' বললেন যাদব হালদার)। কিন্তু দিশি অস্ত্র-শস্ত্রের কোনো অভাব ছিল না তাদের। লাঠি, টাঙ্গি, রামদা ছাড়াও ছিল বল্লম এবং বিষ-মাখানো তীর (বিষ এমন জোরাল ছিল যে এক তীরেই একটা পুলিশকে শেষ করে দেওয়া যেত: যাদব)। তা ছাড়া ছিল চেঙ্গা, যার কথা বোধ হয় আগেই বলেছি। ছোট্ট ছোট্ট কাঠের লাঠি, দু প্রান্ত চেঁছে পেন্সিলের মত ছুঁচলো করা। ঐ ভলান্টিয়াররা নাকি নির্ভুল দক্ষতায় ছুঁড়ে মারতে পারত সেই চেঙ্গা। "একটা চেঙ্গা একবার একজন কনস্টেবলের হেলমেট ফুটো করে দিয়েছিল। হেলমেটটা মাথায় না থাকলে কি হত ভাবুন একবার,' কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন অমিয়বাবু।
কিন্তু অমিয়বাবুর পুলিশের হাতে যে থ্রি নট থ্রি ছিল, তার লোক মারার ক্ষমতা ছিল ঐ তীর-ধনুক আর চেঙ্গার থেকে অনেক বেশি।
Name: roks Mail: Country:
IP Address : 203.110.243.21 Date:15 Feb 2011 -- 10:28 AM
বঙ্গসেনা নিয়ে আগে কিছু খবর পড়েছিলাম, সার্চালে পোচুর নিউজ/ব্লগ রেজাল্ট আসছে। বঙ্গসেনা নামের একাধিক সংগঠন আছে বোধয়। এরাই কি তারা?
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:15 Feb 2011 -- 06:06 PM
দেখুন তো, ঐ বঙ্গসেনা হলে সেখানে কালিদাসবাবুর নাম থাকবেই মনে হয়। আর মৈত্রী এক্সপ্রেস
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.244.223 Date:16 Feb 2011 -- 04:47 AM
অস্ত্রবল তো পুলিশের ছিলই, তা ছাড়াও দ্বীপ খালি করার কাজে সাহায্য করার জন্য স্থানীয় লোকেদের পয়সা দিয়ে ভাড়াও করেছিল তারা। স্বাভাবিকভাবেই বেশিরভাগ লোককেই ভাড়া করা হয়েছিল সব চেয়ে কাছের দ্বীপ কুমীরমারি থেকে। একটা কথা প্রায়শই বলা হয়ে থাকে যে পুলিশ আর সিপিএম-এর লোকেরা মিলে একসঙ্গে আক্রমণ করেছিল মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের। কিন্তু পুলিশ যাদের ভাড়া করেছিল তারা সব সিপিএম-এর লোক ছিল সে কথা বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ কুমীরমারি বা আশেপাশের অন্য সব দ্বীপে সে সময় সিপিএম-এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। সুন্দরবন অঞ্চলের রাজনৈতিক ধরণ-ধারণের সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরা সে কথা ভাল করেই জানেন। সে সময় ঐ এলাকায় শক্তিশালী পার্টি ছিল আরএসপি। আর মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের প্রতি সে দলের যথেষ্ট সহানুভূতি ছিল। এতকাল পরেও কুমীরমারির স্থানীয় আরএসপি নেতারা সে কথা অস্বীকার করেন না। পরে সুযোগ মত সে কথা লিখব।
কুমীরমারি দ্বীপের যে জায়গায় পুলিশের গুলি চলেছিল ঠিক সেখানেই বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম কালীপদ গায়েনের সঙ্গে। "পুলিশ আমাদের বলেছিল আশি থেকে একশ টাকা রোজ দেবে, আমাদের শুধু ওদের সঙ্গে গিয়ে ঘরদোরগুলো ভেঙ্গে দিতে হবে আর উদ্বাস্তুদের মালপত্র সব বয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের লঞ্চে তুলে দিতে হবে। কুমীরমারি থেকে অনেক লোক নিয়েছিল পুলিশ, ও রকম লেবারারের কাজ করার জন্য। তা আমরা যখন মরিচঝাঁপিতে গিয়ে উঠলাম ততক্ষণে ওদিকে পুরুষমানুষ যারা ছিল তাদের প্রায় সবাইকেই পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। দেখলাম মেয়েরা সব চারদিকে কান্নাকাটি করছে। সেই দেখে আমার আর তাদের ঘরদোর ভাঙ্গতে মন চাইল না। আমি ফিরে চলে এলাম কুমীরমারিতে। আর ওখানে যাই নি। পুলিশের কাছ থেকে পয়সাও নিই নি,' বললেন কালীপদবাবু।
(যে কথাগুলি উনি বলেছিলেন, সেগুলি পরে হুবহু লিখে দেওয়ার চেষ্টা করব। আপাতত মোটামুটি মূল বক্তব্যটুকু ওপরে লিখেছি।)
তুষার ভট্টাচর্যের ডকুমেণ্টারিতে দেখলাম আরেকজন কুমীরমারির বাসিন্দা, দীনবন্ধু মণ্ডল, বলছেন, "আমারা, সাধারণ মানুষরাই তো গিয়ে উদ্বাস্তুদের তাড়িয়ে দিয়ে এলাম। পুলিশ আমাদের তার জন্যে টাকা দিয়েছিল।
ঐ ডকুমেণ্টারিতেই আরও দেখলাম কুমীরমারির রবি মণ্ডল বর্ণনা করছেন কি ভাবে তিনি এবং আরও চারজন মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের একটা নৌকো ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, যাতে ওরা পারাপার না করতে পারে। "তারপরে একটা লঞ্চ এল, বিডিওর কি ডিএম-এর লঞ্চ হবে, এসে আমাদের তুলে নিল। অফিসার যারা ছিল আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করল। জিগ্যেস করল কে এই ফেরি চলাচল বন্ধ করেছে? বললাম আমরা করেছি। অফিসার বলল খুব ভাল করেছ বাবা। বলে আমাদের পাঁচটা ছেলেকে পাঁচশ করে টাকা দিল।'
(কোটেশন ইংরিজি থেকে অনুবাদ করা)
Name: roks Mail: Country:
IP Address : 203.110.243.21 Date:16 Feb 2011 -- 10:10 AM
ধন্যযোগ। একাধিক না, দুটো আছে, কালীদাস বৈদ্য গোষ্ঠী আর তাদের অন্য একটা টুকরো।
Name: roks Mail: Country:
IP Address : 203.110.243.21 Date:16 Feb 2011 -- 10:12 AM
*অনেকগুলো না, দুটো।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.244.5 Date:18 Feb 2011 -- 06:09 AM
১৭ই মে, ১৯৭৯। প্রায় ১০০০ পুলিশের বিশাল বাহিনী গিয়ে খালি করে দিল মরিচঝাঁপি দ্বীপ। সব মিলিয়ে কত লোকের প্রাণ গিয়েছিল দেড় বছর-জোড়া এই পরিযান এবং উচ্ছেদ অভিযানে? আগেও বলেছি, সরকারী হিসেবে মাত্র দু জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন পুলিশের গুলিতে। আর বেসরকারী গবেষকের মতে পুলিশের গুলি, অনাহার এবং যাতায়াতের ধকলের কারণে সব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭০০০। বিশ্বাস করব কাকে? দুটি সংখ্যাই অবিশ্বাস্য শোনায়। কিন্তু ৩২ বছর পরে ঠিক সংখ্যাটা খুঁজে বের করা কঠিন বলে মনে হয়েছে আমার। সম্ভব কিনা তাও সন্দেহ হয়েছে।
২৪ পরগণার তৎকালীন এস পি অমিয় কুমার সামন্ত বললেন ১৯৭৯ সালের ৩১শে জানুয়ারি কুমীরমারির একটি পুলিশ ক্যাম্প আক্রমণ করে উদ্বাস্তুরা। তাদের অস্ত্র ছিল বল্লম, দা আর চেঙ্গা। সংঘর্ষের সময় অবস্থা আয়ত্তে আনতে গুলি চালায় পুলিশ। "নদীর বাঁধের কাছেই একটি আদিবাসী পরিবারের বাড়ি ছিল ... সেই দিক থেকেই আক্রমণ আসছিল বলে পুলিশ ওদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়, তাতে দু জন একেবারে নিরপরাধ আদিবাসী মহিলা প্রাণ হারান ... (It) was the most tragic incident in the entire episode. এ ছাড়া মরিচঝাঁপির পুরো ঘটনায় আর কখনো গুলি চালাতে হয়নি পুলিশকে ... পুলিশের গুলিতে এক জনও আগন্তুকের প্রাণহানি ঘটেনি।'
প্রশ্ন জাগে। এক দল সশস্ত্র ভলাণ্টিয়ারকে তাড়ানোর উদ্দেশ্যেই যখন গুলি চালানো হচ্ছে তখন তাদের সবাইকে এড়িয়ে শুধু দুজন নিরীহ গ্রামবাসীর গায়েই গিয়ে কি করে বেঁধে সেই গুলি?
কুমীরমারির বর্তমান বাসিন্দারা অবশ্য জানালেন পুলিশের গুলিতে নিহত স্থানীয় আধিবাসীর সংখ্যা দুই নয়, এক। ("স্থানীয় অধিবাসী' কথাটা লক্ষ্য করবেন।) নাম ছিল তাঁর মেনী মুণ্ডা। বাকি যারা মারা গিয়েছিল তারা সবাই ছিল উদ্বাস্তু। "মেনী মুণ্ডা যেদিন মারা গেল সেদিন এই পুরো জায়গাটায় একেবারে থিকথিক করছিল পুলিশ,' বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে আমাকে সেদিনকার গল্প শোনাচ্ছিলেন কুমীরমারির কালীপদ গায়েন। "গুলি চলছিল, আর কাঁদানে গ্যাস চলছিল সমানে। আমরা কয়েকজন আটকে গেলাম বাবুরাম বিশ্বাসের বাড়িতে। সেখান থেকে দেখলাম পুলিশের লোকেরা ঠ্যাং ধরে টেনে টেনে বডিগুলোকে লঞ্চে নিয়ে তুলছে। রবি মণ্ডলের বাড়ির কাছে চরের ওপরে সব বডিগুলো গাদা করে রাখা ছিল। কতগুলো বডি ছিল সে আমরা দেখতে যাইনি ... দুজন নয়, তার চেয়ে বেশিই মারা গিয়েছিল। পুলিশেরা তো রিফিউজিদের দিকে গুলি চালাচ্ছিল ... সবাই তো তখন এদিক-ওদিক দৌড়চ্ছে, ঠিক মত এইম করতে পারেনি, তাই একটা গুলি গিয়ে লাগল মেনী মুণ্ডার বুকে।"
রবি মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করা হয়ে ওঠেনি আমার। তুষার ভট্টাচার্যের ডকুমেণ্টারিতে দেখলাম তিনি বলছেন, "মনে হয় ৩০/৩৫/৪০ জন মারা গিয়েছিল। বডিগুলো সব গাদা করা ছিল আমার বাড়ির পাশে, পুকুরের ধারে।'
কুমীরমারির বাসুদেব মণ্ডল আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী। (তুষরবাবুর ফিল্ম বানানোর সময় পঞ্চায়েৎ মেম্বার ছিলেন তিনি।) বাসুদেবের মতে, "সবশুদ্ধ ২৫/৩০ জন লোক মারা গিয়েছিল।'
Name: aranya Mail: Country: usa
IP Address : 144.160.98.31 Date:18 Feb 2011 -- 07:48 AM
মরিচঝাঁপি নিয়ে জানার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন। অচিন্ত্যকে ধন্যবাদ, বড্ড ভাল হচ্ছে লেখাটা।
Name: dri Mail: Country:
IP Address : 117.194.224.130 Date:24 Feb 2011 -- 12:24 AM
এই লেখাটা, আমি শিওর, আরেকটু এগোতে পারে।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.244.107 Date:25 Feb 2011 -- 04:45 AM
মেনী মুণ্ডার ভাই নিতাই মুণ্ডাও ঘটনাস্থলে ছিলেন গুলি চলার দিন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বললেন, গুলি তো চলেইছে, তা ছাড়াও রিফিউজিদের যে ক'জনকে পেরেছে চুলের মুঠি ধরে বাইন গাছের গায়ে ঠেসে ধরে কুপিয়েছে। "একেবারে আমাদের বাড়ির সামনেটায়। ধরে ধরে কোপাল। তারপর লঞ্চে তুলে কালিন্দী নদীতে সব ফেলে দিয়ে এল ... আমার বোনের বডিটাও নিয়ে গেল জোর করে। সে আর আমরা কোনোদিন ফেরত পাইনি। কত লোক মরেছিল? মনে করুন শ' দেড়েক। আমার অনুমান। আমি তো চোখে দেখিনি, ঘরের ভেতর ঢুকেছিলাম।'
মরিচঝাঁপির সেই হেডমাস্টার, নির্মল ঢালি -- তিনিও বললেন দেড়শর বেশি লোক মারা গিয়েছিল সে দিন। না, গুলি চলার সময় কুমীরমারিতে ছিলেন না নির্মলবাবু। ঐ সংখ্যাটা তাঁর আন্দাজ।
আন্দাজে বলা এই সংখ্যাগুলো বাস্তবের চেয়ে একটু বেশি বলেই মনে হয়। কারণ উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির সেক্রেটারি রাইহরণ বাড়ই নিজেই এক মেমোরেণ্ডামে লিখেছেন: 'The police became angry and opened fire indiscriminately resulting in death of 15 refugees and two local people including one woman.' সে ক্ষেত্রে সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে ১৭। ১৯৭৯ সালের ২২শে মার্চ মরিচঝাঁপি পর্যবেক্ষণে আসা এক সাংসদ দলের হাতে এই মেমোরেণ্ডাম তুলে দিয়েছিলেন রাইহরণ। মজার ব্যাপার হল, ঐ মেমোরেণ্ডামের সঙ্গে মৃতদের নামের যে তালিকা তিনি সাংসদদের দিয়েছিলেন, তাতে দেখা যাচ্ছে নিহতের মোট সংখ্যা ১৪ (দু জন স্থানীয় বাসিন্দা সহ)!
সাংসদরা সরেজমিনে দেখে যাওয়ার এক মাস পরে (২৫শে এপ্রিল, ১৯৭৯) আনন্দবাজার পত্রিকা লিখল, মরিচঝাঁপি বিষয়ে এমপি-দের দাখিল করা রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন জনতা পার্টির নেতা মুরলী মনোহর যোশী। সে রিপোর্টে বলা হয়েছে মোট ১০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ৩১শে জানুয়ারির ঘটনায়।
অমিয় কুমার সামন্তর দাবি, পুরো মরিচঝাঁপির ঘটনায় ঐ একদিনই পুলিশকে গুলি চালাতে হয়েছিল। কিন্তু রাইহরণ বাড়ই তাঁর মেমোরেণ্ডামে লিখেছিলেন, 'On 20 August 1978
(police launches) ran over 43 boats... and opened
fire resulting deaths of two young refugee boys.'
অমিয়বাবুর পাল্টা বক্তব্য: I was in the SPs launch in front of Sandeshkhali Police Station and all actions were taken under my order and within my view. There was no need to fire either bullet or teargas shells as there was no resistance.”
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.255.62 Date:27 Feb 2011 -- 05:50 AM
গুলিতে মানুষ মরেছে। কিন্তু সম্ভবত আরও অনেক বেশি মরেছে অনাহারে এবং রোগে। একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করার পরই অনাহারে লোক মরতে শুরু করে মরিচঝাঁপিতে। সে ধারণা ঠিক নয়।
১৪৪ ধারা এবং সরকারি অবরোধ শুরু হয়েছিল ১৯৭৯-র ২৬শে (মতান্তরে ২৪শে) জানুয়ারি, উদ্বাস্তুরা মরিচঝাঁপিতে এসে ওঠার প্রায় এক বছর পর। এই (প্রায়) এক বছরে কিন্তু বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এই দ্বীপে। বেশিরভাগই তারা শিশু এবং বৃদ্ধ। তাদের মৃত্যু হয়েছে না খেতে পেয়ে এবং নানা আন্ত্রিক রোগে ভুগে। মরিচঝাঁপিতে বাস করেছেন এরকম যে ক'জনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই বলেছেন যে অবরোধের আগেও বহু মানুষ মারা গিয়েছিল সেখানে।
নির্মল ঢালির কথাই শোনা যাক: "আমরা ওখানে গিয়ে ঘরদোর তৈরি করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দেখা দিল খাদ্য সমস্যা। মানুষ ছোটোখাট গাছের কাঠ নিয়ে গিয়ে আশেপাশের গাঁয়ে বিক্রি করত, ভিক্ষে করত -- টাকা চাইত, খাবার চাইত; যা যোগাড় করতে পারত তাই খেত।'
মরিচঝাঁপিতে ভলাণ্টিয়ার ছিলেন যিনি সেই যাদব হালদার জানালেন, "না খেতে পেয়ে আর অসুখে অনেক লোক মরেছে, অবরোধের আগেও মরেছে।' (সেই ১৯৭৮ সালে ৩০০ টাকা মাইনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে দণ্ডকারণ্য থেকে সুন্দরবনে চলে এসেছিলেন যাদববাবু।)
দমদমের মনোরঞ্জন মণ্ডল, গোসাবার মাধবী বাহাদুর আর কাঞ্চন তাপালিরাও বললেন মাছির মত ঝাঁকে ঝাঁকে মরেছে মানুষ -- অবরোধের আগেও।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.247.156 Date:28 Feb 2011 -- 04:18 AM
মাধবী বাহাদুরের বয়স হয়েছে। শরীর যতদিন দিয়েছে, লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে নিজের এবং সংসারের ভাতের যোগাড় করেছে। অমন সুন্দর নাম লোকের মুখে মুখে হয়ে গেছে মাদারি। মাদারি কেন বলে গো? কি করে জানব বাবু, সবাই বলে। তো সেই ৭৮ সালে ছেলেদের নিয়ে মাদারিও গিয়েছিল মরিচঝাঁপি। শুনেছিল সেখানে গেলে নাকি সস্তায় জমি পাওয়া যাবে। গিয়ে সেখানে একখানা কুঁজি (ছোট্ট দোচালা কুঁড়েঘর) বানিয়ে থাকতেও শুরু করেছিল। কেউ কিছু বলেনি। গায়ে গায়ে সেখানে কুঁজি। প্রায় একটার ওপর আরেকটা।
মাদারি মরিচঝাঁপি থেকে চলে এসেছিল গুলি চলার আগেই। সেখানে ঘর বাঁধতে গিয়ে যে দুটো ব্যাপার তার চোখে লেগেছিল তার একটা হল এক জায়গায় ঘনসন্নিবিষ্ট অজস্র কুঁজি এবং চতুর্দিকে পড়ে থাকা মৃতদেহ। "যেদিকে তাকাও সেদিকেই মড়া পড়ে আছে। বাচ্চা, বুড়ো সব মরে পড়ে আছে চারদিকে -- গাছের তলায়, ঘরের পাশে, খালের ধারে সব জায়গায় লোক মরে পড়ে আছে। মড়া ওরা পোড়াতো-ও না। ওখানেই ফেলে রেখে দিত।'
অবরোধের আগেও তাহলে মানুষ মরেছিল। এবং এইভাবে। প্রশাসন যদি মানুষের খাবার এবং জলের যোগান বন্ধ করে দেয় নিশ্চয়ই নিন্দা করব, পুলিশ গুলি চালিয়ে নিরীহ লোক মারলে অবশ্যই প্রতিবাদ করব, কিন্তু ফাঁকতালে এটা যেন ভুলে না যাই যে, যে গোষ্ঠী বা নেতারা এত হাজার হাজার মানুষকে ঘরের স্বপ্ন দেখিয়ে মনুষ্যবাসের অযোগ্য একটা দ্বীপে এনে তুলেছিল, এতগুলি মৃত্যুর পেছনে তাদের দায়িত্বও সরকার বা প্রশাসনের তুলনায় বিন্দুমাত্র কম নয়। বেশিও হতে পারে।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:28 Feb 2011 -- 03:02 PM
সব মিলিয়ে কত লোক মরেছিল তাহলে? কূট প্রশ্ন। দেখ যাক গবেষকদের কি বক্তব্য এ ব্যাপারে।
মার্কিন দেশের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএচডি করেছিলেন নীলাঞ্জনা চ্যাটার্জী। ১৯৯২ সালে। তাঁর ডিসার্টেশনের শিরোনাম "Midnight's Unwanted Children: East Bengali Refugees and the Politics of Rehabilitation". যতদূর জানি মোটাসোটা সেই ডিসার্টেশন সাধারণের জন্য প্রকাশিত হয়নি এখনো। তবে চেষ্টা করলে ইউনিভার্সিটি থেকে কপি পাওয়া সম্ভব। সেখানে নীলাঞ্জনা লিখেছেন: "at least 3,000 refugees had secretly left Marichjhapi and scattered across West Bengal
At the end of July 1979, a spokesman for the Dandakaranya Development Authority announced that of the nearly 15,000 families who had deserted, around 5,000 families (approximately 20,000 refugees) had failed to return.
ঐ ৩,০০০-এর হিসেবটা (মানে যারা গোপনে মরিচঝাঁপি থেকে পালিয়েছিল) কোথা থেকে পাওয়া গেল তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।
নীলাঞ্জনার এই ডিসার্টেশনের ওপর ভিত্তি করে আবার এক সরল অঙ্ক কষেছেন গবেষক রস মল্লিক: From these figures (20,000 3,000) it can be estimated that as many as 17,000 people died
১৭,০০০! উদ্বাস্তু নেতাদের দাবিও এই সংখ্যার ধারে কাছে যায় না। সত্যি, ভলাণ্টিয়ার এবং পুলিশের চোখ এড়িয়ে বেশ কিছু মানুষ পালিয়েছিলেন মরিচঝাঁপি থেকে। তাদের অনেকেই গিয়ে উঠেছিলেন সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে। ঝড়খালি, মোল্লাখালি, সাতজেলিয়া কিম্বা গোসাবা-তে গেলে আজও এঁদের দেখা পাওয়া যায়। তবে এরকম পালিয়ে-বাঁচা মানুষদের সংখ্যাটা জানার চেষ্টা কখনো করা হয়নি বলেই জানি।
তা ছাড়াও, মরিচঝাঁপি থেকে রিফিউজিদের যখন জোর করে ফেরত পাঠানো হচ্ছিল দণ্ডকারণ্যে, তখনও পুলিশ প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন বেশ কিছু মানুষ। কত জন? কোনো হিসেব নেই। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলিতে ছড়িয়ে গিয়েছিলেন এঁরা। আগে যে যাদব হালদারের কথা বলেছি, তিনিও এরকমই একজন পালিয়ে-যাওয়া মানুষ। এরকম বহু মানুষ এখনও আছেন, শহর কলকাতায়, দমদমে, পাতিপুকুরে, বারাসাতে, বসিরহাটে, ঘুটিয়ারি শরীফে ... মরিচঝাঁপির প্রাক্তন বাসিন্দা হিসেবে এদের সেন্সাস কে কবে করেছে?
Name: siki Mail: Country:
IP Address : 123.242.248.130 Date:28 Feb 2011 -- 03:42 PM
আন্দামানের বিভিন্ন দ্বীপে যে বাঙালিদের সেটলমেন্ট, তারাও তো একসময়কার মরিচঝাঁপিরই বাসিন্দা ছিল, না? বিশেষত, হ্যাভলক ইত্যাদি দ্বীপে তো প্রায় একশো শতাংশ লোক বাঙালি। এদের বেশির ভাগই ধর্মমতে বৈষ্ণব। হ্যাভলকের বিচগুলোরও নাম সেই ধরণেরই, রাধানগর, গোবিন্দনগর ...
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:28 Feb 2011 -- 04:22 PM
ঠিক জানা নাই। খোঁজ করতে পারি। কিছু লোক গিয়ে থাকতেই পারে আন্দামানে। তবে তার অনেক আগেই জাহাজ বোঝাই করে লোক সেখানে পাঠানো হয়েছিল। একটা জাহাজ মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে আনাও হয়েছিল, রাজনৈতিক চাপে। এসব কথা এই টইয়ের শুরুর দিকে অল্প লিখেছি।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:28 Feb 2011 -- 07:29 PM
নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত ঘোষণা
উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির যে তিন নেতা মরিচঝাঁপিতে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন সতীশ মণ্ডল, রাইহরণ বাড়ই এবং রঙ্গলাল গোলদার। মজার ব্যাপার হল, ১৯৭৯ সালের মে মাসে, পুলিশ মরিচঝাঁপি খালি করার জন্য সে দ্বীপে নামার আগেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গেলেন ঐ তিন নেতা। ফেলে গেলেন হাজার হাজার মানুষকে, যাদের একদিন স্বপ্ন দেখিয়ে তাঁরাই নিয়ে এসেছিলেন সেখানে।
"পুলিশ মরিচঝাঁপিতে নামার পর নেতাদের আর পাত্তাই পাওয়া গেল না। এক্কেবারে হাওয়া হয়ে গেল ওরা,' বললেন নির্মল ঢালি।
পুলিশ এবং তাদের "ভাড়াটে মজুর'দের মোকাবিলা করার জন্য রয়ে গেল হাজার হাজার অসহায় মানুষ।
সতীশ মণ্ডল পরে ফিরে যান তখনকার মধ্য প্রদেশের মানায়, তাঁর নিজের ব্যবসায়। এখনও রমরমা মাছের ব্যবসা চালায় সেখানে মণ্ডল পরিবার। কিছুদিন হল রিয়্যাল এস্টেটের ব্যবসাতেও নেমেছেন ওঁরা। ছত্তিসগড়ে ওঁদের বেশ নামডাক।
রাইহরণ চলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ। সেখানে ধরা পড়ে বছর দুই জেল খেটেছেন বলে শোনা যায়। পরে উনিও মাছের ব্যবসা শুরু করেন দমদমের কাছে পাতিপুকুরে। রায়বাবু বলে পরিচিত ছিলেন।
রঙ্গলাল গোলদারকে সাহায্য করেন কিছু বুদ্ধিজীবী এবং কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন গৌরকিশোর ঘোষ, রাম চ্যাটার্জী এবং গোবিন্দ নস্কর। তাঁদের সহায়তায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার ঘুটিয়ারি শরীফের কাছে এক ছোট্ট গাঁয়ে বাস করতে থাকেন রঙ্গলাল। গাঁয়ের নাম তাঁরই দেওয়া -- পথের শেষ।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:01 Mar 2011 -- 12:44 AM
মরিচঝাঁপির অর্থনীতি
১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে প্রায় ৩০,০০০ কপর্দকহীন রিফিউজি দণ্ডক থেকে এসে ছোট ছোট কুঁজি বানিয়ে বসবাস করতে শুরু করল মরিচঝাঁপিতে। আর তার মাত্র তিন থেকে চার মাস পরেই সে দ্বীপে তারা তৈরি করল বেশ কয়েকটি "কারখানা' -- বিড়ি কারখানা, রুটি কারখানা, গেঞ্জির কারখানা, কাঠের জিনিস তৈরির কারখানা। মরিচঝাঁপির ঘটনার আগে (এবং পরেও) এরকম কিছু কখনো দেখেনি সুন্দরবনের মানুষ। এতগুলি "কারখানা' তৈরি করতে যে অর্থ লাগে তা এল কোথা থেকে? একটা সোর্স অব রেভেন্যুর কথা অনেকেই বললেন -- জঙ্গলের কাঠের চোরাচালান। কয়েকজন নেতা দাবি করেছেন উদ্বাস্তুরা কেবল ছোট ছোট গাছ-গাছড়া কেটে গ্রামের লোকেদের কাছে বিক্রি করত পেট চালানোর জন্য, কিন্তু সে কথা মনে হয় সত্যি নয়। যতটা জানতে পেরেছি, মরিচঝাঁপির অধিবাসীরা নিয়মিত বড় বড় গাছ কাটত জঙ্গল থেকে এবং কাঠের ব্যবসা চলত ভালমতই। দূর দূর দ্বীপ থেকে ফড়েরা কাঠ কিনতে আসত মরিচঝাঁপিতে, জানালেন এক প্রাক্তন বাসিন্দা।
অমিয় সামন্তর একটি লেখায় দেখছি: The wood trade became so widespread that the merchants of Canning and Basirhat advanced money to the deserters for supply of wood.
আরও অনেকের সঙ্গে মনোরঞ্জন মণ্ডলও দণ্ডক থেকে এসে বাস করতে শুরু করেছিলেন মরিচঝাঁপিতে। সহজ সরল বয়স্ক মানুষটি এখন থাকেন কলকাতার কাছেই, এক বস্তিতে। কি করে সংসার চালাতেন সে সময়। একটু দ্বিধার হাসি মনোরঞ্জনবাবুর ঠোঁটে। বললেন, "চুরি করতাম। কাঠ চুরি করতাম জঙ্গল থেকে। দ্বীপের অন্য সব লোকেদের সঙ্গে নৌকো করে জঙ্গলের বিভিন্ন ব্লকে যেতাম, আর বড় বড় গাছ কেটে আনতাম। সেই গাছগুলো (উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল) সমিতিকে বিক্রি করতে হত। তারপর সমিতি সে কাঠ নিয়ে কি করত আমার জানা নেই।'
সমিতির নেতা রাইহরণ বাড়ইও তাঁর মেমোরেণ্ডামে লিখেছিলেন: The refugees ran away leaving 157 boats behind loaded with timber and firewood costing Rs 3.50 lakhs.
কুমীরমারির বাসিন্দাদের কাছে শুনলাম মরিচঝাঁপিতে নাকি বিরাট বাজার বসিয়েছিল কমিটি। "চাল-ডাল, জামাকাপড়, হার্ডওয়্যারের জিনিসপত্র সব বাইরে থেকে নিয়ে আসত ওরা। আমাদের কুমীরমারির বাজারের চেয়েও বড় বাজার ছিল ওখানে। কিছু কিছু জিনিস এখানকার কোনো দ্বীপে পাওয়া যেত না, মরিচঝাঁপির বাজারে পাওয়া যেত। দরকার পড়লে আমরাও যেতাম তো সে সব কিনতে,' বললেন কুমীরমারির কালীপদ গায়েন।
এত যে রমরমা ব্যবসা চলত মরিচঝাঁপিতে, তার মানে কিন্তু এই নয় যে ওখানকার সাধারণ মানুষ বেশ দুধে-ভাতে দিন কাটাত। লোনা জমিতে চাষ হত না এতটুকু। "আর একটা বছর যদি থাকতে দিত, তাহলেই ধান হতে পারত গো,' বলল মাধবী বাহাদুর (মাদারি)।
নির্মল ঢালিও বললেন, "না, আমরা ওখানে চাষ-বাস কিছু করতে পারিনি। অবরোধের সময় লোককে তাই এক ধরণের ঘাস খেতে হয়েছে মানুষকে। সে ঘাসের নাম যদু পালং। কেউ কেউ আদর করে বলত জ্যোতি পালং,' দুর্দশার দিনগুলির কথা স্মরণ করে ঠোঁট বেঁকে যায় ঢালির।
মনোরঞ্জন মণ্ডলের গলায়ও শোনা গেল এই কথারই প্রতিধ্বনি। "চাষ-বাস কিছু হত না। হবে কি করে? মাটি তো লোনা।'
গোসাবার ভারতী মণ্ডল, জমির আশায় যিনি পরিবার নিয়ে গিয়েছিলেন মরিচঝাঁপিতে, বললেন, "বেশিরভাগ রিফিউজি ভিক্ষে করে খেত। খুব জ্বালাতন করত আমাদের, খাবারের জন্য।'
কাঞ্চন তাপালিও ভারতীদের সঙ্গেই গিয়েছিলেন। বললেন, "রিফিউজিরা এসে ভাতের ফ্যানের জন্য ঘ্যান ঘ্যান করত আমাদের কাছে।'
"কুমীরমারিতে চুরি-চামারি খুব বেড়ে গিয়েছিল সেই সময়টায়,' জানালেন বীরেন মৃধা। কুমীরমারিতে টিউশনি করে সংসার চালান বীরেন।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.245.8 Date:01 Mar 2011 -- 02:24 AM
আমি ১৯৯৯-২০০০ নাগাদ আন্দামানে খোঁজ করেছিলাম মরিচঝাঁপি ফেরত কেউ গেছেন কিনা। সে সময় আমি খুঁজেছিলাম ডিগলিপুর (দীঘল+পুর), মায়াবন্দর, রঙ্গত, হ্যাভলক ও নীল আইল্যান্ডে। কেউ গেছেন বলে শুনি নি। অবশ্য আমি গোসাবা, কুমীরমারির দিক থেকে খোঁজ করি নি কেউ মরিচঝাঁপির ঘটনার পর আন্দামানের দিকে গিয়েছিলেন কিনা। এক আধজন সব সময়েই যায়, দলে দলে যায় নি বলেই আমার ধারনা। গেলে ঠিকই খোঁজ পাওয়া যেত।
১৯৯৮-৯৯ এ না পেলে, এতদিন পরে যদি কেউ গিয়েও থাকেন, তাঁদের খুজে বের করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই। যাঁদের কথা আমি জম্বুদ্বীপের টইয়ে বলেছিলাম তাঁদের অতি নিকট আত্মীয়দের রঙ্গতের কাছে খুঁজে পেলেও, মরিচঝাঁপির দিকে যাওয়া বা ফেরত আসা কাউকেই আমি পাই নি।
তবে একথা সত্য যে সব উদ্বাস্তুরা দন্ডকারণ্য বা বিহারে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন, তাঁদের চেয়ে আন্দামানে যাওয়া উদ্বাস্তুদের আর্থ সামাজিক অবস্থার আকাশ পাতাল তফাত ছিল। আমার মনে হয় না কারো পক্ষেই শুধুমাত্র বাঙ্গলীস্তানের স্বপ্ন দেখিয়ে মরিচঝাঁপিতে তাঁদের স্রেফ মৃত্যুবরন করার জন্য টেনে আনা সম্ভব হবে।
শমীকদা যাঁদের কথা বলছেন তাঁরা জহরলাল নেহেরুর সময় থেকেই হ্যাভলকের বাসিন্দা। শুধু হ্যাভলক নয় পুরো আন্দামান জুড়েই বৈষ্ণব নাম বা মহাভারত-রামায়নের দৌরাত্ম্যের কারন ভিন্ন। আমি শুনেছিলাম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের কোন এক বাঙ্গাল ভদ্রলোক তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ঐ সমস্ত নামকে মানচিত্রে চিরস্থায়ী করে গেছেন। ভদ্রলোকের নামটা এই মূহুর্তে মনে আসছে না, তাঁর ডেসিগনেশনও না। তবে এটা ঠিকই যে উদ্বাস্তুরা নিজের নিজের ছেড়ে আসা বাসভূমির স্মৃতিতেই তাদের নতুন বসতির গ্রামগুলির নামাকরন করেছিল। এই ভদ্রলোক সেই নামগুলিরই বৈধতা দিয়েছিলেন মাত্র। পাঞ্জাবী, তামিল, বার্মিজ বা অ্যাবোরিজিনদের এলাকার বাঙ্গালী নাম করে তাদের ঘাঁটাতে যান নি কেউ।
আন্দামানের বিভিন্ন জায়গার বাঙ্গালী নামাকরন সাম্প্রতিক নয়। আন্দামানের বাঙ্গালীর ইতিহাস অনেক পুরোন। এবং সেই বাঙ্গালীদের মধ্যেও টাইমস্কেলে - সেটলার, আইল্যান্ডার ইত্যাদি হিসাবে নানারকম ভাগ রয়েছে। সামান্য একটা আন্দাজ আন্দামান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওয়েবসাইটে পাবেন-
http://andamandt.nic.in/history.htm
এর বেশী জানতে চাইলে
মানে আমাকে এয়াকি্দন ক্যান্টিনে ...
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.246.12 Date:01 Mar 2011 -- 05:12 AM
কাঠের ব্যবসা ছাড়া মরিচঝাঁপিতে উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির অর্থ উপার্জনের আরেকটি উপায় ছিল। সমিতির নেতারা টাকার বিনিময়ে সেখানে জমির পাট্টা দিতে শুরু করেছিলেন।
অমিয় সামন্তর অভিযোগ: The UUS (সমিতি) distributed the land of Marichjhapi island by issuing written and signed documents of right to individuals or groups. Besides the settlers, their friends and relatives living in Khulna and the neighbouring island of Kumirmari also received such papers.
কুমীরমারির আরএসপি নেতা প্রফুল্ল মণ্ডল সে সময় ছিলেন পঞ্চায়েৎ প্রধান। মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাদের সাহায্য করেছেন এই রকম অভিযোগ শুনে জ্যোতি বসু পর্যন্ত তাঁকে কলকাতায় ডেকে পাঠিয়ে বকাবকি করেন। কুমীরমারি গিয়ে খানিক চেষ্টা করে দেখা পাওয়া গেল প্রফুল্ল মণ্ডলের। প্রফুল্লবাবু বললেন ঐ গরীব উদ্বাস্তু মানুষগুলোর প্রতি সহানুভূতি অবশ্যই ছিল তাঁর। সে কথা জ্যোতিবাবুকে নাকি জানিয়েওছিলেন উনি। এ কথা সে কথার পর পয়সা নিয়ে মরিচঝাঁপির জমি পাট্টা দেওয়ার প্রসঙ্গ তুললাম। প্রফুল্লবাবু দেখলাম বেশ বিরক্ত। বললেন, "আমার দাদা সেই সময়ে ২৫,০০০ টাকা সমিতিকে দিয়েছিল জমি পাওয়ার আশায়। আমি যদি জানতাম, টাকাগুলো ওভাবে নষ্ট করতে দিতাম না।'
ভারতী মণ্ডল বললেন তাঁর স্বামী দীনবন্ধু গোসাবায় তাঁদের এক বিঘা জমি বিক্রি করে দিলেন ঐ টাকায় মরিচঝাঁপিতে অনেক বেশি জমি কিনবেন বলে। "সমিতি বলেছিল ওদের দেড়শ টাকা দিলে ওখানে নয় বিঘা জমি পাওয়া যাবে। সে টাকা আমরা আর ফেরত পাইনি।'
এই সব ছাড়াও ছিল বাইরের সাহায্য। নির্মল ঢালি বললেন: "আমাদের মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন ভলাণ্টারি অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল খাবার-দাবার এবং টাকাপয়সার জন্য। তা ছাড়াও বাইরের অনেক লোক ব্যক্তিগতভাবেও সাহায্য করেছেন।'
"রিফিউজি নেতারা মাঝে মাঝে কুমীরমারির পুলিন মণ্ডলের বাড়িতে মিটিং করত,' বলছিলেন বীরেন মৃধা। "মাঝে মাঝে বাইরে থেকে রিলিফ আসত, মিটিং-এ সে সব বিলি করা হত।'
কথা প্রসঙ্গে একটা ইণ্টারেস্টিং গল্প শোনালেন বীরেনবাবু: "উদ্বাস্তুদের নেতা রাইহরন আমাকে বন্ধু বন্ধু বলে ডাকত। তো, সে একদিন খবর পাঠাল যে আমার বাড়িতে রাত্রিবেলা একজন থাকতে আসবেন। সন্ধের পর সেই অতিথি এলেন। দাড়িওয়ালা, গেরুয়া পোষাক-পরা একজন সন্ন্যাসী। তাঁর কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, সেই ব্যাগ ভর্তি টাকা। পরদিন ভোর হওয়ার আগেই চলে গেলেন সন্ন্যাসী। আর তাঁকে কখনো দেখিনি।'
Name: 9 Mail: Country:
IP Address : 61.90.164.27 Date:01 Mar 2011 -- 09:09 AM
অন্যতম সেরা টই। বস্তুত:, স্রেফ টই বললে খাটো করা হবে। সেরা লেখা। কিন্তু শুধু এখানে না লিখে আরও একটু বড় প্ল্যাটফর্মে ছাপাচ্ছেন না কেন? টাইম্সে তো লেখাটার ভগ্নাংশ পেয়েছি মনে হয়। মধুময়বাবু বা অন্যান্য যারা এই নিয়ে বড়গোছের কিছু কাজকম্মো করেছেন তাদের কাছে লেখাটা দিলে হয় না? তবে এই সাদা-কালোর বাজারে এইরকম ধূসর জটিলতার আখ্যান কতটা রাজনৈতিকভাবে সঠিক হবে জানি না।
Name: r.h Mail: Country:
IP Address : 203.132.214.11 Date:01 Mar 2011 -- 10:18 AM
এই বিষয়ে আগে সামান্য যা পড়েছি, মরিচঝাঁপি ছিন্ন দেশ ছিন্ন ইতিহাস সহ, এই নৈর্ব্যাক্তিক আবেগবর্জিত ইতিহাসসন্ধানী অবস্থান চোখে পড়েনি বলেই মনে হচ্ছে। তুলনা অর্থহীন এবং অনাবশ্যক, আবেগও দোষের কিছু নয়, তবে অন্য নামগুলো ঘুরে ফিরে আসছে বলে বললাম।
অচিন্ত্যদা, খুব মন দিয়ে পড়ছি-
Name: r.h Mail: Country:
IP Address : 203.132.214.11 Date:01 Mar 2011 -- 10:58 AM
একতা জিনিস- যেখানে সেখানে মৃতদেহ পড়ে থাকার জায়গাটাতে খটকা লাগছে। মানে বাজার, স্কুল সবই যখন হয়েছিল- মৃতদেহ সৎকার তো মানুষ যেকোন ভাবে করে-
নাকি আমিই কিছু মিস করে যাচ্ছি?
Name: dd Mail: Country:
IP Address : 124.247.203.12 Date:01 Mar 2011 -- 12:56 PM
আমার এই পোস্টিংটা আমার কাছে খুব জরুরী ছিলো।
মরিচঝাঁপির এই লেখাটা পড়ে আমি হাঁ হয়ে গ্যালাম। এরকম নিরপেক্ষতা এবং প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি বই ঘেঁটে, লোকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেশ করে,যাচাই করে লেখা ... মনে পরছে না ঝট করে বাংলা ভাষায় দেখেছি।
আরো ভালো লাগলো আবেগের বন্যায় ভেসে না যাওয়া। অচিন্ত্য নিজের সংশয় ও বিশ্বাস খুব জোর গলাতেই বলেছেন, নিজের মতামত দিয়েছেন কিন্তু তাতে কোনো পোলারাইজড স্ট্যান্ড নেই।
দারুন লাগলো।
এর আগে কেলো বাবুর জম্বুদ্বীপ ও পড়ে খুব ভালো লেগেছিলো।
সচরাচর যে মুড়ির ঠোঙার যোগ্য প্রতক্ষ্যদর্শীর প্রতিবেদনে পড়ি, তার সাথে তুলনাই করছি না। কিন্তু বিদেশে যেমন নামকরা সামাজিক ইতিহাস রচয়িতেরা আছেন,স্বনামধন্যেরা,তাঁদের লেখার সাথে সগর্বে তুলনা করা যায়।
ব্র্যাভো।
Name: Arijit Mail: Country:
IP Address : 61.95.144.122 Date:01 Mar 2011 -- 01:02 PM
ডিডিদাকে ক দিলাম। এটাকে আলাদা করে পাবলিশ করা উচিত।
Name: d Mail: Country:
IP Address : 14.99.102.141 Date:01 Mar 2011 -- 01:08 PM
এইটা একটা আশ্চর্য্য আনবায়াসড লেখা। সুযোগমত অপছন্দের ব্যক্তিবর্গের বা দলের প্রতি চাট্টি বক্রোক্তি না গুঁজে স্রেফ যা দেখেছেন, যা খটকা লেগেছে, তাই লিখে যাওয়া ..... খুবই ব্যতিক্রমী।
বুড়ো আঙুল তুলে দেখিয়ে গেলাম অচিনবাবু।
Name: M Mail: Country:
IP Address : 59.93.211.69 Date:01 Mar 2011 -- 01:56 PM
সত্যি, মন দিয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছি।:)
Name: shrabani Mail: Country:
IP Address : 124.30.233.85 Date:01 Mar 2011 -- 02:20 PM
সত্যি, অনেক আগেই বলব ভাবছিলাম। লেখাটা পড়েই যা মনে হয় তা হল আনবায়াসড লেখা। এরকম লেখা এখানে কখনো দেখিনি।
খুব খুব আগ্রহ নিয়ে প্রতিটা পোস্ট পড়ছি।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.252.139 Date:01 Mar 2011 -- 04:44 PM
একটু বেলাইনে যাব। অচিন্ত্যদা, আমাকে মাপ করবেন।
আপনারা নানাজনে আপনাদের ভাললাগার কথা বলেছেন। অন্য বড় প্ল্যাটফর্মে ছাপানোর উপদেশও দিয়েছেন। এইখানে আমার একটা বক্তব্য রয়েছে। আমার বক্তব্য হয়ত বিতর্ক ডেকে আনবে। তাও বলেই ফেলি-
আপনারা এটা মেনে নিতে পারছেন না কেন- যে এটাও একটা প্ল্যাটফর্ম, এবং এটা ছাপানো মিডিয়ার চেয়ে ঢের শক্তিশালী একটা প্লাটফর্ম। ছাপানো মিডিয়ায় বরং বহু ভাল লেখারও মুড়ির ঠোঙ্গা হওয়া আটকানো যায় না। এখানে অন্তত: বহু মুড়ির ঠোঙ্গা পড়ে মণি মানিক্য নিংড়ে নেওয়া যায় প্রায় বিনি পয়সায়, কম খাটুনিতে, যে কোন জায়গায় বসে।
কদিন আগেও বিদগ্ধজন, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি সম্পর্কে এইরকম (কিছুটা উন্নাসিক) ধারনা পোষন করতেন। আজকের অবস্থা দেখুন। দুদিন আগে ফটোগ্রাফার মালা মুখার্জী বইচিত্র সংগ্রহশালায় বলছিলেন। আমি শুনছিলাম। দেখলাম ওনার এখনও ডিজিটাল ফটোগ্রাফী সম্পর্কে ধারনা পুরোপুরি পাল্টায় নি। উনি এখনও অ্যানালগ ফটোগ্রাফী সম্পর্কে আশাবাদী। দোষ ওনার বা ওনার বয়েসের নয়। ওনার অভিজ্ঞতারও নয়। টেকনোলজীর গতি প্রকৃতি সম্পর্কে উনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নন। সেটা তো ওনার কাজও নয়। উনি যেটা ভালবাসেন সেটা খুবই ভাল পারেন। ডিজিট্যাল ফটোগ্রাফী এসে অ্যানালগ ফটোগ্রাফীর যা হাল করে দিয়েছে। লিখিত সাহিত্যের জগতেও প্রায় সেরকম বিপ্লব আসন্ন বলে মনে করছি।
আপনারা নানারকম eBook Reader কথা শুনেছেন Kindle এর নাম তো বটেই, হয়ত ব্যবহারও করে থাকেন। জানিনা আপনারা পিক্সেল-চি ( Pixel Qi ) টেকনোলজির কথা শুনেছেন কিনা। না জানলে গুগলান বা আইটিওয়ালারা অন্য টইয়ে জ্ঞান বিতরন করুন এ সম্পর্কে। কাগজে ছাপানো লেখার এ এক উত্কৃষ্ট বিকল্প।
মোদ্দা কথা হল পরিবর্তন আসন্ন। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এ আনন্দবাজার আর আমাদের মত ল্যালাকে আব্বুলিশ করে রাখতে পারবে না। খেলতে দিতেই হবে। আগ্রাসী পাঠক তার সুফল পেতে বাধ্য। যেভাবে আমরা গুরুচন্ডালীতে পাই রিটায়ার্ড হরিদাস পালকে কিম্বা অচিন্ত্যদাকে। টাইমসে বা অন্য কোথাও এ লেখা এমন নিরপেক্ষভাবে নামাতে অচিন্ত্যদা পারতেন কিনা সন্দেহ। সম্ভবত: আব্বুলিশ করেই রাখত।
আমার নিজের লেখা জম্বুদ্বীপ এর কথা ছাপার অক্ষরে পড়তে আমার নিজের বেশ পীড়াদায়কই লেগেছে। টইতে লেখার সময় শশাঙ্কবাবুর লেখা এবং অজস্র লিঙ্কের সঙ্গত ছিল, স্বপক্ষে বিপক্ষে আপনাদের নানাজনের নানা মতও ছিল। ছাপায় সেগুলো হারিয়ে লেখাটার মূল নির্য্যাসটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ব্লগে লেখার একটা আলাদা মাধুর্য্য আছে, সেটা ছাপানো লেখায় আনতে ভিন্ন রাস্তা নিতে হয়। অ্যানালগ ফটোগ্রাফার হয়ে ডিজিট্যাল ছবি তুলতে গেলে যেমন হয় আরকি। দীপ্তেনদা তো ছাপানো জম্বুদ্বীপটা পড়েন নি, তাই আমার ডিজিটাল লেখাটা ভাল লেগেছে লিখেছেন। সেটা দেখেই এই প্রসঙ্গ তুললাম। ছাপানোটা পড়লে আশাকরি আমার সঙ্গে একমত হবেন।
অবশ্য রঞ্জনবাবুর লেখা বা অচিন্ত্যদার লেখা ছাপানোর জন্য অনেক বেশী উপযোগী, কারন ওঁদের লেখার ধরনটাই ওরকম। আগেই বলেছি উপযোগী হলেও হয়ত 'বড় প্ল্যাটফর্মে' ওনাদের লেখা ব্রাত্য থাকত। আবার দেখুন আমার বা কাব্লীদার লেখা ছাপার যোগ্য না হলেও (কাব্লীদার তো তাই মত) এই ডিজিটাল মাধ্যমে সে সব লেখাও উল্লেখের দাবী রাখছে। দীপ্তেনদার পোস্টে জম্বুদ্বীপের উল্লেখ সে কথাই প্রমান করে।
আমার কথা হল, ছাপানোর জন্য প্রাগৈতিহাসিক প্রিন্টার, বাইন্ডার, ডিস্ট্রিবিউটার এবং বিরাট বিরাট পাবলিশিং হাউসের ঘরে হত্যে দিয়ে পড়ে না থেকে দু হাত খুলে টাইপান তো মশাই। আমরা ল্যালারা অন্তত: পড়ে সুখ পাই।
হ্যাঁ,এইবারে টইটাকে আবার লাইনে তুলুন অচিন্ত্যদা। সত্যি হাঁ করে বসে আছি।
Name: Shibanshu Mail: Country:
IP Address : 59.97.233.252 Date:01 Mar 2011 -- 05:33 PM
মরিচঝাঁপি সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা ছিলোনা। ইতিহাসের ভুলে যেতে চাওয়া একটা অধ্যায় হিসেবেই দেখে এসেছি। অচিন্ত্যরূপ একটা বড়ো কাজ করলেন। পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের অবজেক্টিভিটি (সঠিক বাংলাটি জানিনা) অনুকরণীয়। কেলোর বক্তব্যও অবশ্যই প্রনিধানযোগ্য। ব্যবসায়িক বড়ো কাগজগুলি এ জাতীয় লেখাকে প্রকৃত মূল্য দিয়ে প্রচার করতে দ্বিধা করবে। ছাপামাধ্যমেরও সরলরৈখিক স্বীকৃতির দিন শেষ হয়েছে বলেই মনে করি।
অচিন্ত্যরূপকে ধন্যবাদ।
Name: Nina Mail: Country:
IP Address : 64.56.33.254 Date:01 Mar 2011 -- 10:02 PM
চিন্টুবাবু,
হতবাক! জানতামনা এত ডিটেইলসএ আর এত নিরপেক্ষ ভাবে এমন সুন্দর ডকুমেন্টেশন ----এর একটা চটি বেরোলে কালেক্টবেল আইটেম হিসেবে রাখার মতন।
সত্যি লোকে বলে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই !
আজ থেকে চালু হোক কথকে কথকে খুড়তুতোভাই।
অভিনন্দন।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.240.197 Date:01 Mar 2011 -- 11:08 PM
কৈন্সিডেন্স!!
এটা দেখেছেন? এটা কি আজই বেরোনোর ছিল? যখন আমাদের প্রায় এই লাইনেই আলোচনা চলছে।
http://anandabazar - unicode.appspot.com/proxy ? p=1edit5.htm
এটার মূলকথা হল সংবাদমাধ্যমের উপর রাগ বাড়ছে। সংবাদমাধ্যম যত বেশি করে নাগরিক অধিকারের কথা বলছে, ততই চলছে মারধর। কিন্তু বদলটা আসলে ঘটেছে অন্য জায়গায়।
এখানে লেখক 'নাগরিক অধিকারের' কথা বলতে গিয়ে মূলত: মরিচঝাঁপি সহ বেশ কিছু উচ্ছেদের ঘটনাকেই ছুঁয়ে গেছেন। তবে লেখার ফোকাস একেবারে আলাদা, লেখকের রিয়্যালাইজেশনও আলাদা।
লেখার উপসংহারটি প্রণিধানযোগ্য। সেখানে লেখক বলছেন - অনিচ্ছুক জনতাকে উস্কানি দেওয়ার ক্ষমতা মিডিয়ার নেই। বরং গণমাধ্যম যেমন জনতাকে প্রভাবিত করে, পাঠক-দর্শকেরাও পাল্টা প্রভাবিত করেন তাকে।
পাঠক দর্শকদের এই প্রভাবিত হওয়া ও পাল্টা প্রভাবিত করার বিষয়টি কি সবচেয়ে ব্যপক আমাদের এই প্ল্যাটফর্মটিতেই নয়? মধ্যপ্রাচ্যের একের পর এক ঘটনা তো সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।
অথচ আপনারা একে পাত্তাই দিতে চান না এক্কেবারে। কেবল সবকিছু 'ছাপিয়ে' ফেলে বাক্সবন্দী করার চিন্তা। যাতে পাঠকের সঙ্গে আর লেনদেন না থাকে কোন কিছুর। ; -)
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.240.197 Date:01 Mar 2011 -- 11:15 PM
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=1edit5.htm
Name: pi Mail: Country:
IP Address : 128.231.22.63 Date:01 Mar 2011 -- 11:58 PM
কিন্তু কেলোদা, আন্তর্জালে ধরা না পড়া পাঠকদের কী হবে ? আর তাঁরাও ছাপার অক্ষরে কি অন্য কোনোভাবে তাঁদের মতামত দিয়ে প্রভাবিত করতে পারবেন না, এটা মনে করার ই বা কারণ কী ?
'উচ্ছেদের সাতকাহন' এ আপনার জম্বুদ্বীপ কি অচিন্ত্যদার মরিচঝাঁপি পড়ার পর অন্তত বেশ কিছু জনতার প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে তো, যাঁদের জম্বুদ্বীপ নিয়ে নিয়ে কোনোরকম কোন ধারণা ই ছিল না আর মরিচঝাঁপি নিয়ে থাকলেও সেটা ঐ সাদা কি একেবারে কালো।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.240.197 Date:02 Mar 2011 -- 12:06 AM
আমি প্রিন্টার বাইন্ডারের ঝামেলা ঘাড় থেকে নামাবার জন্য ছাপার বিপক্ষে এবং আন্তর্জালের স্বপক্ষে জনমত সংগঠিত করছি।
আমার উদ্দেশ্য তো এক্কেবারে সাদা .....
Name: pi Mail: Country:
IP Address : 128.231.22.63 Date:02 Mar 2011 -- 12:30 AM
:))
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.243.145 Date:02 Mar 2011 -- 05:19 AM
ব্যক্তিগত লাভ ও লোভ
মরিচঝাঁপির ঘটনায় কোনো উদ্বাস্তু নেতার ব্যাক্তিগত লাভও কিছু হয়েছে নাকি? হয়েছে, জানালেন মরিচঝাঁপির প্রাক্তন বাসিন্দারা। উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির প্রধান তিন নেতার নাম আগে বলেছি, আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিই। সতীশ মণ্ডল, রাইহরণ বাড়ই এবং রঙ্গলাল গোলদার। রঙ্গলাল মারা গেছেন। তাঁর স্ত্রী সুভাষিণী গোলদারের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম ঘুটিয়ারি শরীফের কাছে, তাঁদের গ্রামে। ছোট্ট ছিমছাম বাড়ি, তকতকে নিকোনো উঠোন। দাওয়ায় বসে গল্প হল অনেকক্ষণ। কথায় কথায় সুভাষিণী বলছিলেন বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য আসত উদ্বাস্তুদের জন্য। বড় বড় টিন ভর্তি গুঁড়ো দুধ আসত। কিন্তু একজন নেতা সেই দুধ কিছুতেই কাউকে দিতেন না। বাচ্চারা যখন না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে তখনও না। ঐ দুধ যেত কোথায় তাহলে? কার ভোগে লাগত? ঐ নেতা কি করতেন অত সব টিনভর্তি দুধ নিয়ে? "আমি বৌ মানুষ, আমি কি করে জানব?' মুখ টিপে হাসেন সুভাষিণী। ঠাকুরমা নিজেকে "বৌ মানুষ' বলছে দেখে হেসে গড়িয়ে যায় ছোট্ট নাতনি।
মরিচঝাঁপির এক সময়ের বাসিন্দা শেফালি মণ্ডলের কিন্তু কোনো ঢাক-ঢাক গুড়গুড় নেই। বললেন, "কি আবার করত? বেচে দিত সব বাইরে।'
ঐ নেতার সম্পর্কে আরও কথা হল সুভাষিণীর সঙ্গে। "অনেক টাকা করেছিল ঐ লোক। মরিচঝাঁপি ছেড়ে যখন পালায় টোপলা টোপলা করে টাকা নিয়ে গিয়েছিল সঙ্গে।' "পোঁটলা' শুনতে অভ্যস্ত কানে "টোপলা' শব্দটা মজার লাগে।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.247.77 Date:02 Mar 2011 -- 05:28 AM
পথের শেষ
তো, এইভাবেই মোটামুটি শেষ হল মরিচঝাঁপির বৃত্তান্ত। হাজার হাজার মানুষের অনেকে আবার ফিরে গেল দণ্ডকে, কেউ রয়ে গেল সুন্দরবনেরই অন্য কোনো দ্বীপে, কেউ কেউ ছড়িয়ে গেল দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় -- শহরে, গ্রামে, রেললাইনের পাশের বস্তিতে, সতীশ মণ্ডল ফিরে গেলেন মধ্য প্রদেশে, রাইহরণ পাতিপুকুরে, আর রঙ্গলালের গোলদার পরিবার নিয়ে এসে ঠেকলেন ঘুটিয়ারি শরীফের কাছের এক ছোট্ট গ্রামে, যার নাম পথের শেষ।
(নিবন্ধ আপাতত সমাপ্ত)
Name: SB Mail: Country:
IP Address : 115.187.40.220 Date:02 Mar 2011 -- 11:33 AM
খুব ভাল কাজ করলএন
Name: SB Mail: Country:
IP Address : 115.187.40.220 Date:02 Mar 2011 -- 11:34 AM
দরকারি কাজ
Name: pharida Mail: Country:
IP Address : 220.227.148.193 Date:02 Mar 2011 -- 11:46 AM
অচিন্ত্য, আপনার অক্ষয় সিগারেট প্যাকেট হোক !!
Name: Manish Mail: Country:
IP Address : 59.90.135.107 Date:02 Mar 2011 -- 12:11 PM
অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার তরফ থেকে অচিন্ত্যবাবু ও কেলোবাবুর জন্য রইলো
গরম গরম চাট্টি ভাত আর দেশী ডিমের ঝোল .............
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 220.226.209.2 Date:02 Mar 2011 -- 12:34 PM
অসাধারন লেখা।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সে সময় আমরা মারিচঝাঁপি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাই নি। একটা বড়ো কারন, তখনও সিপিএম ও বামফ্রন্ট সম্পর্কে "মন্দের ভালো" জাতীয় মনোভাব ছিলো। তাই এটাকে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অঙ্গ হিসাবেই দেখেছিলাম। ১৯৭৮ সালে সিপিএম বা বামফ্রন্ট গরীব মানুষের উপর নির্বিচার হত্যালীলা সংগঠিত করতে পারে এটা বিশ্বাস করতাম না।
পরে জেনেছি বটে, কিন্তু এমন করে পাইনি।
অচিন্ত না চেনালে আমি অন্তত মরিচঝাঁপি চিনতাম না।
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 220.226.209.2 Date:02 Mar 2011 -- 12:46 PM
এই লেখাটা আরও একটা বিতর্ক উসকে দিলো।
নেতৃত্ব তবে কি হবে? নাকি নেতৃত্বের দরকার নেই। সংগঠন কি ও কেমন হবে?
আমরা কতিপয় নকশাল ১৯৮০ থেকে ফলিত মার্কসবাদের নানান বিষয়ে চ্যাঁচামিচি করতাম, তার দুটি নেতৃত্ব ও সংগঠনের কাঠামো। মার্কস থেকে মাও-চে-ফিদেল-হো সকলেই মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজিবী অবস্থান থেকে এসেছেন ও ""শ্রেনীচ্যুত"" হয়েছেন। কোই শ্রমিক-কৃষক ঘরের থেকে তো কউকে উঠে আসতে দেখলাম না! যাকে ""শ্রেনীচ্যুত"" হতে হবে না।
এখানে তো নেতৃত্ব উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকেই উঠে এসেছে। তারাও তো অন্যদের মতো দন্ডক থেকে সব ছেড়ে মরিচঝাঁপিতে এসেছিলেন। তারাও কেন দুর্নিতিগ্রস্ত হলেন? সংগঠন কি করছিলো?
তাহলে নিশ্চই গরীব মানুষের লড়াইয়ের সংগঠনের কাঠামো, নেতৃত্ব নিয়ে অন্যতর ভাবনা ভাবতে হবে।
আসুন না শুরু করি।
Name: kumudini Mail: Country:
IP Address : 122.162.233.4 Date:02 Mar 2011 -- 05:42 PM
অচিন্ত্যরূপের অসাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা,সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বর্ণনা,বিশাল পরিশ্রমে যে আশ্চর্য দলিল তৈরী হয়েছে,সবাই তাকে অভিনন্দিত করেছেন,সেই সারিতে আমিও আছি।
আমি আর একটু বলতে চাই,তুলির এক একটি আঁচড়ে অচিন্ত্যরূপ ""অতিসাধারণ,অতিতুচ্ছ"" মানুষগুলোর যে ছবিগুলো এঁকেছেন-সেই কথা। তালাটুকু পর্যন্ত না লাগিয়ে অজানা পথে রওনা হওয়া দিশাহারা মানুষেরা,নির্মল ঢালী,মাধবী বাহাদুর,সুভাষিনী বৌমানুষকে যেন চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে,এতটাই কুশলী পটুয়া তিনি।
কামনা করি,আরো অনেক মানুষের কথা তিনি লিখুন,মানুষের ঘুম ভাঙুক।
Name: I Mail: Country:
IP Address : 14.96.205.152 Date:02 Mar 2011 -- 09:35 PM
সেলাম।
Name: Tim Mail: Country:
IP Address : 198.82.20.5 Date:03 Mar 2011 -- 02:41 AM
এইরকম আরো লেখা হোক এই পাতায়। অচিন্ত্যদাকে ধন্যবাদ।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.240.253 Date:03 Mar 2011 -- 05:41 AM
পোসোংসা যাঁরা করেছেন, তাঁদের সক্কলকে, কি বলব, মানে হেঁ হেঁ।
বিশেষ ধন্যবাদ ফরিদার শুভেচ্ছার জন্য। ;-)
এটা টাইমস অব ইণ্ডিয়ায় প্রকাশিত লেখাটারই বাংলা। দুটো টেলেক্সের টেক্সট (আর একটু পরিবেশ বর্ণনা ইত্যাদি) ছাড়া নতুন কিছু বোধ হয় নেই। সে জন্যই শুরুতে সতর্কবার্তা দিয়েছিলুম বৈজয়ন্তবাবু, তাতিন এবং আরও কাউকে কাউকে। কারণ, জানতুম যে ওঁরা খবরের কাগজে ছাপা লেখাটা পড়েছেন। ঐ লেখাটা একটা ব্লগেও তুলে রেখেছিলাম (যেটা অর্পণ হঠাৎ আবিষ্কার করে ফেলেছিল)। সে লিং এখেনে: http://marichjhapi-mystery.blogspot.com/
সংশয় আমার অনেক রয়ে গেছে। বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে আরও কিছু খোঁজ-খবর করা দরকার, কিছু জায়গায় যাওয়া দরকার মনে হয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
কল্লোলদা, আপনি যা ভাবতেন তা খুব ভুল কি? দু দশকেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ করে মরিচঝাঁপি চর্চার এই বাড়বাড়ন্ত কেন বলুন তো? সত্য প্রকাশ হওয়া সব সময়ই ভালো বলে মনে করি। রাজনীতির রং তাতে লাগলে কিন্তু মুশকিল।
একটা বিষয় লক্ষ্য করবেন, নির্মল ঢালি ছাড়া প্রাক্তন বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে নেতা স্থানীয় আর কারও সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করিনি। আমি খুঁজে বার করতে চেষ্টা করেছি একেবারে সাধারণ লোকেদের, যাদের মুখের ভাষায় কোনো রং লেগে থাকার সম্ভাবনা কম।
হুতো, যত্র তত্র মৃতদেহ পড়ে থাকার ব্যাপারটা মাদারি বলেছে। অমি যদি বোঝাতে ভুল করে থাকি, তাহলে আরেকবার বলি। মাদারিরা যেখানে গিয়ে তার কুঁজি বানিয়েছিল তার আশেপাশের জায়গার কথাই বলেছে। ইস্কুল, বাজার সবই ছিল, কিন্তু মৃতদেহের সৎকার সেখানে করা হত না বলেই মাদারি জানিয়েছে (কেন, তা ভাববার বিষয়)। জ্যোতির্ময় দত্তর একটা পুরোনো প্রতিবেদনেও কিন্তু সারি সারি মৃতদেহের কথা পড়েছি মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে খোঁজ খবর শুরু করার আগে মরিচঝাঁপিতে মৃতদেহের উল্লেখ যেখানেই দেখেছি, মনে হয়েছে পুলিশের গুলিতে বা অত্যাচারে বা সরকারি ব্যবস্থার ফলে অনাহারেই তারা মৃত। তা ছাড়াও যে অন্য কিছু হয়ে থাকতে পারে মনে হয়নি। সেটা সেখানকার প্রাক্তন বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হল।
নিবন্ধ আপাতত শেষ করলেও, এই টইটা আরেকটু টেনে বাড়ানোর ইচ্ছে আছে। হয়ত অনেকটা সময় লাগবে। যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁদের মুখের কথা হুবহু এখানে তুলে দিতে চাই। আমার পক্ষে কঠিন কাজ, কিন্তু দেখা যাক।
মণীশবাবু, দিশি ডিমের ঝোলের অপেক্ষায় রইলাম।
Name: Arijit Mail: Country:
IP Address : 61.95.144.122 Date:03 Mar 2011 -- 09:46 AM
ব্লগটা কিছুদিন আগেই পড়েছি - মরিচঝাঁপি/অচিন্ত্য দিয়ে গুগুল করতে করতে পেয়েছিলাম। তাই কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম জিগ্গেস করবো যে তার পরেও আরো কিছু আছে কিনা - কারণ ব্লগটা গতবছর মে মাসের।
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 220.226.209.2 Date:03 Mar 2011 -- 10:54 AM
অচিন্ত্য - আমি ১৯৭৮ সালে ভাবতাম ১৯৭৮এর বামফ্রন্ট কিছুতেই গরীব মানুষের উপর ""কংগ্রেসী কায়দায়"" হত্যালীলা সংগঠিত করবে না।
আমি এবং আমার বন্ধুরা (যারা ১৯৭৭এ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কালীঘাট-রাসবিহারী এলাকায় রাজনীতি করতাম প্রগতিশীল গণ ফোরাম নামে সংগঠনের কর্মী হিসাবে) মনে করতাম, (আমরা) নকশালরা সিপিএম-এর সাথে অনর্থক শত্রুতা করেছি (সিপিএমও একই ভুল করেছে)। সিপিএমএর সাথে নকশালদের যে মৌলিক রাজনৈতিক পার্থক্য রাষ্ট্রের শ্রেনী চরিত্র ও বিপ্লবী পরিস্থিতির বিশ্লেষনে, তাতে প্রমাণ হয়ে গেছে সিপিএম আমাদের চেয়ে বেশী ঠিক ছিলো বা কম ভুল ছিলো। তাই সিপিএম-এর সাথে অন্তত গণসংগঠন লেভেলে যৌথভাবে ইস্যুভিত্তিক কাজ করাই যেতে পারে।
আমরা ১৯৭৭এ অশোক মিত্রের সমর্থনে নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলাম বামফ্রন্ট নির্বাচনী সহায়ক কামিটি নামে সংগঠনের মধ্য দিয়ে। এই সংগঠনই পরে প্রগতিশীল গণ ফোরাম নামে চলতে থাকে ১৯৮৫ পর্যন্ত।
তাই তখন মরিচঝঁপির ঘটনাকে বরং পাস কটিয়েই গেছিলাম - অবিশ্বাসের জায়গা থেকে।
আজ পরিষ্কার করে বলতে চাই - সেদিন ভুল করেছিলাম। মারাত্মক ভুল।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকার হিসাবে রাষ্ট্রশক্তির অংশ হওয়া আর বিরোধী পক্ষে থাকার মধ্যে তফাৎ পাহাড় প্রমাণ। আজ তা বুঝতে পারি, সেদিন বুঝিনি।
Name: d Mail: Country:
IP Address : 14.96.21.69 Date:03 Mar 2011 -- 11:04 AM
আম্মো ইংরাজি ব্লগটা গুগলিয়ে খুঁজে বের করেছি বেশ কিছুদিন হল। আমারও প্রশ্ন এরপরে আর কিছু খোঁজ পান নি? আর একটা প্রশ্ন হল, কেন মরিচঝাঁপি? মানে সুন্দরবনের মধ্যে আরও জায়গা থাকতে একেবারে সীমান্ত লাগোয়া ঐ জায়গাটা কারা কেন বেছেছিল?
Name: Arijit Mail: Country:
IP Address : 61.95.144.122 Date:03 Mar 2011 -- 11:11 AM
কাঠের চোরাচালানের সাথে বর্ডারের কাছে হওয়ার যোগ থাকতেও পারে।
ডি: টইটাকে নন-পার্টিজানই থাকতে দিন।
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 220.226.209.2 Date:03 Mar 2011 -- 11:28 AM
অচিন্ত্য - মরিচঝাঁপিই কেন, এই প্রসঙ্গে।
এটা আমার কাছেও প্রশ্ন - কেউ কিভাবে ঐরকম ঝুঁকি নিয়ে, ঐ রকম বিপদের মধ্যে জায়গা বাছে। সে দেশভাগের সময়েই হোক বা মরিচঝাঁপির সময়েই হোক।
দক্ষিন কলকাতার কলোনীগুলো যাঁরা গড়ে তুলেছিলেন তাদের অনেককে এই জায়গা বাছা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছি। কোন সদুত্তর পাইনি। কয়েকজন মাত্র বলেছিলেন যে তারা শুনেছেন ঐ সময়ে বিধান রায় স্বয়ং নাকি ওখানে বসে পড়তে বলেছিলেন। ওগুলো মূলত বাঙ্গুর আর চারুচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়দের (চারু মার্কেট/চারুচন্দ্র কলেজখ্যাত) জমি। তারা বিধান রায়ের কাছে নলিশ জানালেও উনি পাত্তা দেন নি। এছাড়া আর একটা কারন নাকি তখনকার টালিগঞ্জ থানার ওসি ছিলেন পূর্ববঙ্গীয় ও বদ্যি (বলা হয় যাদের উদারার্থে পূর্ববঙ্গ ও সংকীর্ণার্থে স্বজাতি সম্পর্কে বেশ বাজে ধরনের পক্ষপাত আছে)।
তাই আমারও প্রশ্ন মরিচঝাঁপিই কেন?
Name: 9 Mail: Country:
IP Address : 61.90.164.27 Date:03 Mar 2011 -- 01:16 PM
দেশভাগের পরে বসতনির্মাণের একটা সহজবোধ্য প্যাটার্ন আছে। একটা বড় মাপের জমি ছিল আদিবাসী বা মুসলমানদের দখলে। অপেক্ষাকৃত ফাঁকা। মেন লাইনের পূর্বদিকের রিফিউজি বসতির জমির আদি মালিকানার বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে- দখল করা সহজ ও দখলের যোগ্য জমি। পশ্চিমে ঘন বসতি থাকার জন্য পশ্চিমে রিফিউজি সেটলমেন্টের সংখ্যাও কম। অন্যদিকে বিজয়গড় বা নেতাজীনগরের মালিকানা ছিল মিশ্র। অনেকটাই ছিল লায়লকাদের জমি যা নিয়ে লায়লকাদের সঙ্গে মারপিট অবধি গড়ায়। মুসলমানদের জমি ছিল। আর ছিল মিলিটারির ফেলে যাওয়া ছাউনি, ব্যারাক ইত্যাদি।
মরিচঝাঁপি ঠিক সেই গোত্রে পড়ে না।
Name: madhyapadalopee karmadhaaray Mail: Country:
IP Address : 61.90.164.27 Date:03 Mar 2011 -- 01:26 PM
কিছু সেটলমেন্টে আগে থেকেই জেলার লোকজন ছিলেন। পাবনার সূত্রে পাবনা, বরিশালের সূত্রে বরিশাল- এইভাবে কিছু কলোনি গড়ে ওঠে। কিছু রাজনৈতিক দলের সাহায্য ছিল। বিজয়গড় অঞ্চলে বিশেষত: সোশালিস্ট পার্টি, লীলা রায়ের পার্টি (কি নাম ছিল ভুলে গেছি), নেতাজীনগরের দিকে আর এস পি ইত্যাদি।
মরিচঝাঁপি একদম আলাদা। গভীর জঙ্গল কেটে বাঘ-কুমীরের সঙ্গে লড়াই করে বসতজমি বানানোর ইতিহাস দেশভাগের পরে খুব বেশি নেই। একই ভাবে বসত তৈরি করতে হয়েছিল আন্দামানে, কিন্তু সেখানে শৈবাল গুপ্তরা ছিলেন। আর হয়েছে সুন্দরবনে জনপদ গড়ে ওঠার সময়।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.93.237 Date:03 Mar 2011 -- 05:24 PM
মনীশবাবু, স্রেফ দিশি?
অচিন্ত্যদার কিন্তু বিলিতি প্রাপ্য।
আর আমাকেও যে কেন দিচ্ছেন, সেটা ঠিক ক্লিয়ার না। এখানে তো আমার কোন কϾট্রবিউশনই নেই। যদি জম্বুদ্বীপের জন্য দিয়ে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্য দিশিটাও আশাতীত।
কটা কথা মনে এল, এখানে লিখে ফেলি সেগুলো-
১) লেখাটা মূলত: টাইমসে বেরোনো লেখাটার বাংলা অনুবাদমাত্র।
অচিন্ত্যদা লিখেছেন যে এটা টাইমস অব ইণ্ডিয়ায় প্রকাশিত লেখাটারই বাংলা। দুটো টেলেক্সের টেক্সট (আর একটু পরিবেশ বর্ণনা ইত্যাদি) ছাড়া নতুন কিছু বোধ হয় নেই।
ভুল।
স্রেফ বাংলা অনুবাদ হলে এত লোকে ধন্য ধন্য করত না মোটেই। এমন নয় যে কেউই আপনার ওরিজিন্যাল লেখাটা পড়ে নি। তফাতটা শুধু ভাষা, ২টো টেলেক্স এর টেক্সট আর একটু পরিবেশ বর্ননার নয়। তফাতটা হল আন্তর্জাল মাধ্যমের মাধুর্য্যের।
এখানে লেখার সময় আপনি প্রায় আক্ষরিক অনুবাদ করেছেন আপনার প্রবন্ধের, সেটা নাহয় মেনে নিলাম, কিন্তু তফাত হয়ে গেছে অন্য কিছু জায়গায়। যেখানে আপনি রঞ্জনবাবুর তোলা প্রশ্নের জবাবে ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা নরেনবাবুকে ফোন লাগান Date:13 Feb 2011 -- 05:50 AM । আপনার ভাষায় ঐ পোস্ট দীর্ঘ শিবের গীত হলেও আমাদের পাঠকদের (ও গবষকদের) কাছে তা নয়। তফাত হয়েছে আপনার Date:10 Feb 2011 --03:47 AM এর পোস্টে আর Date:14 Feb 2011 -- 06:08 AM এর পোস্টে। যেখানে আপনি লিখেছেন-
এই কথা আমি খবরের কাগজে লেখার দিন দুই পরে এক দুপুরে একটা ফোন পেলাম। যিনি ফোন করলেন তিনি বললেন তাঁর নাম সুব্রত চ্যাটার্জী। বললেন তিনি কখনো আমরা বাঙালীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আমি ঠিক কথা লিখিনি। ভদ্রলোককে জানালাম, লেখাটা আমার বটে, তবে ভালো করে সেটা পড়লে দেখতে পাবেন যে ঐ সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথাটা আমার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়, ওটা বলেছেন নির্মল ঢালি। তাতে উনি জিজ্ঞাসা করলেন, "নির্মল ঢালির সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে?' সবিনয়ে জানালাম কথা হয়েছে। "ও,' বলে ভদ্রলোক ফোন রেখে দিলেন।
এই তফাতগুলো হয়তো ২টো টেলেক্স আর পরিবেশ বর্ননার চেয়েও তুচ্ছ, তবে জেনে রাখবেন এই সামান্য তফাতগুলোর জন্যই দীপ্তেনদা বিদেশের স্বনামধন্য সামাজিক ইতিহাস রচয়িতাদের লেখার সঙ্গে সগর্বে আপনার লেখার তুলনা করেছেন।
এই টই যখন আপনি আপনমনে লিখে যাচ্ছিলেন তখন বারে বারে উল্লেখ থাকা সত্বেও আমি আপনার টাইমসে বেরোন মূল লেখাটা পড়ি নি। ছোটবেলায় পি আচার্য্যর মানেবই হাতে পেলে আর মূল বাংলা চটিবত পাঠ্যপুস্তকটা বিশেষ পড়তাম না। বাংলা সাহিত্যের মাস্টারপীসগুলোর কাটা-ছেঁড়া টুকরো সম্বলিত মূল পাঠ্যপুস্তকটা মনের ক্ষিদে মেটাতে পারত না। আপনি যেখানে মোটাসোটা মানেবই খুলে বসেছেন সেখানে নীরস তথ্যের টুকরো ভরা আসল লেখাটা কে পড়তে যায়? মানেবইটা মাস্টারপীস না হতে পারে, তবে মাস্টারপীস এর অ্যাসর্টেড প্রানহীন পীসগুলোর চেয়ে ঢের বেশী জীবন্ত।
আপনি লিঙ্ক দেবার পর আমিই হয়ত সবশেষে মূল লেখাটা পড়লাম। পড়েও কিন্তু আমার মতেই অনড় রইলাম, এবং এই ওপরের লেখাটা লিখলাম। ছাপা লেখা ছাপা লেখাই , আন্তর্জালিপি (ব্লগ) ব্লগই। পাঠক দর্শকের আদান প্রদান মিলিয়ে এ এক অনন্য গনমাধ্যম। (পাইদিদি শুনছেন? ; -) )
২) কল্লোলদার তোলা দুটি প্রশ্ন। যার একটির জবাব অচিন্ত্যদা দিলেও, নেতৃত্ব নিয়ে তোলা প্রশ্ন অনালোচিত আছে।
৩) অচিন্ত্যদার নিজেরই তোলা প্রশ্ন - মরিচঝাঁপিই কেন?
এই বাকি দুটো পয়েন্ট নিয়েও আমার কিছু কিছু বক্তব্য রয়েছে। অথচ হাতে এক্কেবারে সময় নেই। একটু ফাঁক পেলেই ও নিয়ে চাট্টি লিখতে চাই।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.93.237 Date:03 Mar 2011 -- 10:04 PM
১) লেখাটা মূলত: টাইমসে বেরোনো লেখাটার বাংলা অনুবাদমাত্র।
এটা নিয়ে তো এর আগেই আমার মত জানালাম।
২) কল্লোলদার তোলা দুটি প্রশ্ন। যার একটির জবাব অচিন্ত্যদা দিলেও, নেতৃত্ব নিয়ে তোলা প্রশ্ন অনালোচিত আছে।
কল্লোলদা তাঁর Date:02 Mar 2011 -- 12:34 PM এর পোস্টে প্রথম প্রশ্ন তুলেছেন-
এটাকে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অঙ্গ হিসাবেই দেখেছিলাম। ১৯৭৮ সালে সিপিএম বা বামফ্রন্ট গরীব মানুষের উপর নির্বিচার হত্যালীলা সংগঠিত করতে পারে এটা বিশ্বাস করতাম না।
জবাবে অচিন্ত্যদা ( Date:03 Mar 2011 -- 05:41 AM ) লিখেছেন-
কল্লোলদা, আপনি যা ভাবতেন তা খুব ভুল কি? দু দশকেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ করে মরিচঝাঁপি চর্চার এই বাড়বাড়ন্ত কেন বলুন তো? সত্য প্রকাশ হওয়া সব সময়ই ভালো বলে মনে করি। রাজনীতির রং তাতে লাগলে কিন্তু মুশকিল।
কল্লোলদার ১৯৭৮ সালে ফেলে আসা বিশ্বাস আর অচিন্ত্যদার এখন পর্য্যন্ত মনের মধ্যে পুষে রাখা সন্দেহের যদি আমিও শরিক হতে পারতাম তবে ভীষন খুশী হতাম। আমার সরকার যদি আমার একেবারে পাশে না থেকে নিতান্ত কাছেপিঠেও থাকত, তবে আমার দৈনন্দিন সমস্যার নব্বুই পার্সেন্ট সুরাহা হয়ে যেত। সেটা হচ্ছে না দেখেই আমি ঐ বিশ্বাসটা রাখতে পারলাম না। না পারার জন্য আমি সত্যিই অন্তর থেকে দু:খিত।
মরিচঝাঁপি ষড়যন্ত্র, নন্দীগ্রামের গুলিচালনা ষড়যন্ত্র, এমনকি নেতাইগ্রামের সাম্প্রতিক হত্যাকান্ডও ষড়যন্ত্র। আপনারা সিপিয়েমের মুখপত্র পড়লে তো দেখতেই পাবেন যে তাতে স্পষ্টই লেখা আছে, এ সবই ষড়যন্ত্র। আমার সবচয়ে মর্মান্তিক লেগেছিল গনশক্তিতে নেতাইগ্রামের ষড়যন্ত্রকে 'ষড়যন্ত্র' লেখার পরদিন শিলিগুড়ির রাস্তায় বিমানবাবুর গনশক্তি বিক্রি করা। তিনি বিক্রি করার সময়, মুখে নাকি বলছিলেন- আপনারা পড়ুন, পড়ে দেখুন গনশক্তি সত্যি কথা লেখে, না মিথ্যা কথা লেখে। এটা করুন এবং মর্মান্তিক আশাকরি দলমত নির্বিশেষে আপনারা একমত হবেন যে এ ঘটনা করুন ও মর্মান্তিক।
আমার তো কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই, আমি দর্শকমাত্র - সমস্তকিছু দেখেশুনে আমি সত্যিই বিমর্ষ। এর বেশী বললে এ টইয়ে রাজনীতির রং লেগে যাবে, সেটা আপনাদের মত আমিও চাই না।
প্রথম নয়, বরং কল্লোলদার দ্বিতীয় প্রশ্ন আমার কাছে বেশী ইন্টারেস্টিং
কল্লোলদার Date:02 Mar 2011 -- 12:46 PM পোস্টে কল্লোলদা লিখেছেন-
নেতৃত্ব তবে কি হবে? নাকি নেতৃত্বের দরকার নেই। সংগঠন কি ও কেমন হবে?
আমরা কতিপয় নকশাল ১৯৮০ থেকে ফলিত মার্কসবাদের নানান বিষয়ে চ্যাঁচামিচি করতাম, তার দুটি নেতৃত্ব ও সংগঠনের কাঠামো। মার্কস থেকে মাও-চে-ফিদেল-হো সকলেই মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজিবী অবস্থান থেকে এসেছেন ও ""শ্রেনীচ্যুত"" হয়েছেন। কৈ শ্রমিক-কৃষক ঘরের থেকে তো কউকে উঠে আসতে দেখলাম না! যাকে ""শ্রেনীচ্যুত"" হতে হবে না।
কিন্তু কল্লোলদা!! শ্রেনীচ্যুত না হলে কি নেতা হওয়া যায়? এই যেমন স্যুটের কথাই ধরুন না। সচ্ছল ওকালতি-জীবনের যে স্যুট ত্যাগ করে গান্ধীজী 'নেতা' হয়েছেন, চরম দারিদ্র্য থেকে সেই স্যুট গায়ে তুলেই আম্বেদকর 'নেতা' হয়েছেন। গান্ধীজীর প্রায় উলঙ্গ এবং আম্বেদকরের স্যুট পরিহিত মূর্তির সঙ্গেই তো আমরা পরিচিত।অতাই বলছিলাম, শ্রেনীচ্যুত না হলে কি নেতা হওয়া যায়? ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে। এক্সেপশন প্রুভস দ্য ল।
রাজনীতির আমি অ-আ জানি না, তাই কল্লোলদার প্রশ্নের সঠিক মানে না বুঝে থাকলে আমাকে একটু বুঝিয়ে দেবেন দ করে।
জম্বুদ্বীপের যে যে নেতাদের দেখেছিলাম তাঁরাও কেউ সেই কমিউনিটি থেকে আসেন নি। হরেকৃষ্ণবাবু, নির্মাল্যবাবু ইত্যাদি কেউ না। মত্সজীবিদের মধ্যে থেকে যাঁরা উদ্যোগ নিতেন, যেমন শিশুবাবু, সুকলালবাবু ইত্যাদিরা তাঁরা তো ফোরফ্রন্টে আসেন নি কোনদিন।
মরিচঝাঁপির রহস্যময়। অচিন্ত্যদাই বলেছেন দন্ডক থেকে মাস এক্সোডাস কিরকম রহস্যময়। তার পরবর্তী ঘটনাও রহস্যময়। আপাতদৃষ্টিতে পুরো ঘটনাই যেন বিশাল স্কেলের পাগলামী বলে মনে হয়। জম্বুদ্বীপের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। সেই টই পড়ে দেখুন সেখানেও আপনারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে। একদল লোক একটা দ্বীপে বছরের একটা সময় যেত। সাহারা কোম্পানী সে দ্বীপের লীজ নিল, টাকাপয়সা খাইয়ে পুলিশ দিয়ে মেরে সেই লোকগুলোকে এলাকাছাড়া করল। এবার সাহারাও হঠাত হাত গুটিয়ে নিল। সে দ্বীপে কিছু করল না। সরকারও পরে আর সেখানে কিছু করল না। তাহলে দাঁড়াল কি? বিশাল স্কেলের পাগলামি ছাড়া একে কি বা বলবেন?
মরিচঝাঁপির ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্বের প্রথম সারিতে ছিলেন, যাঁরা টোপলা টোপলা টাকা নিয়ে গায়েব হয়ে গেলেন। তাঁরা তো তাঁদের পথের শেষটা খুব ভালভাবে করতে পারেন নি। যেখানে নৌকায় পড়ে থাকা কাঠেরই দাম তিন লক্ষ টাকার ওপরে বলে মনে হয়, সেখানে ওঁদের ঐ টাকার টোপলায় কত থাকতে পারে? ওঁদের শেষের যেটুকু বর্ননা অচিন্ত ় য়দার লেখায় পাই তাতে কিন্তু একবারও মনে হয় না যে তাঁরা খুব বিত্তবানের মত পথের শেষ করতে পেরেছিলেন। সেই টাকা তবে গেছিল কাদের কাছে? তাঁদের কাছে, যাঁরা শুরুতে ৩০০০ লোকের ২৫ টাকা করে দন্ডক থেকে বঙ্গে আসার টিকিট স্পনসর করেছিলেন? তাঁরা কারা?
জম্বুদ্বীপের ঘটনায় ই বা লাভবান হল কারা? নেতৃত্ব? সাহারা? আম আদমি? নাকি অন্য কেউ?
জর্জ সোরোসের বিপ্লব-বিপ্লব খেলার মত উচ্ছেদ-উচ্ছেদ খেলারও কি তবে নেপথ্য কোন খেলোয়াড় আছে?
আশা রাখি অচিন্ত ় য়দা বা অন্য কেউ ঠিকই একদিন প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করবেন। যা দেখে কল্লোলদার পরবর্তী প্রজন্ম ফলিত মার্কসবাদ নিয়ে চ্যাঁচামিচি করা ছেড়েস্থির করতে পারবে নেতৃত্ব ও সংগঠনের ভবিষ্যত কাঠামো।
৩) অচিন্ত্যদার নিজেরই তোলা প্রশ্ন - মরিচঝাঁপিই কেন?
এ বিষয়ে অনেকেই অনেকর ভাবনা জানাচ্ছেন। আমিও আমার ভাবনাটা পরে ফাঁক পেলে গুঁজে দিয়ে যাব।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:03 Mar 2011 -- 11:32 PM
একটা জরুরী কথা। বিলিতিই যদি হয়, তাহলে শুধু ডিমে কিন্তু হবে না।
Name: Blank Mail: Country:
IP Address : 59.93.254.130 Date:03 Mar 2011 -- 11:59 PM
অচিন্ত্য বাবু, কখনো ডকু বানাবার কথা ভেবে দেখেছেন? আপনার লেখা (বা রিপোর্টিং কথাটা জদি use করতে চান) একদম দকু বানাবার জন্য পারফেক্ট।
আর বাংলায় ভালো নিউজ ডকুর খুব অভাব (আছে কি !!)।
Name: ranjan roy Mail: Country:
IP Address : 122.168.176.232 Date:04 Mar 2011 -- 12:03 AM
আমার আবার ছড়ানো:
অচিন্ত্য লেখাটকে আরও আপ-টু ডেট করার চেষ্টায় আমার সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি ধ্যাড়ালাম, সরি! আজকের ভাষায় ছড়ালাম।
মরিচঝাঁপির প্রাক্তন নেতা সতীশ মন্ডল যিনি হামলার ঠিক আগে পুলিশের কর্ডন ভেঙে পালিয়ে ছত্তিশগড়ে মানা ক্যাম্পে ফিরে এসে নামজাদা মৎস্যব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন সে ব্যাপারে অচিন্ত্য একটু খোঁজখবর নিতে বলেছিলো। সম্ভব হলে ওনার সন্তানাদির স্মৃতি থেকে কিছু ইতিহাসের কাঁচামশলা ও মোবাইলে ত্লা ফোটো।
আমি এইটুকু জানলাম যে ওনার ছেলে তাপস মন্ডল এখন নামজাদা ব্যাপারী ও উঠতি বিল্ডার।
আমি বেশ শৌখিন তদন্তমূলক সাংবাদিক হওয়া আশায় কন্ট্যাক্ট বের করে ইন্টারভিউ চেয়ে তাপস মন্ডলকে ফোন করলাম।
তাপস: আপনাকে তো চিনলাম না।
আমি:: আমি অমুকের বন্ধু। আপনার একটা ইন্টারভিউ চাই, ছোটখাট পত্রিকায় লিখব। আপনার মত ইয়ে ----। তারপর ধরুন আপনার প্রয়াত বাবা উদ্বাস্তু দের একজান ফাটফাটি নেতা ছিলেন। তাঁর স্মৃতিতে---।
তাপস: প্রয়াত বাবা? উনি এখনো বেঁচে। আমার সঙ্গেইআছেন।
আমি: সরি! তবে যে কোলকাতা থেকে বললো----
খুব ভালো হলো। নব্বই বছরের বাবা বেঁচে, আমার মা ও বেঁচে।
মানে ওনার ইন্টারভিউ ও ফোটো--।
তাপস: শুনুন! আমাদের বাড়িতে একটা নিয়ম আছে। কোলকাতা থেকে কোন সাংবাদিক এলে তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিইনা, কথা তো দূর!
আমি: না না, আমি কোলকাতার নই, রায়পুরের।
তাপস: কোলকাতার সাংবাদিকেরা এসে রায়পুরেই ওঠে। প্রতিবছর নানান কাগজ থেকে এসে জ্বালাতন করেমারত। এখন আমাদের বাড়িতে রাজনীতি নিয়ে কোন কথা হবে না।
আমি সেই রবাদবাক্যটির অ্যাদ্দিনে মানে বুঝলাম:
যার কাজ তারে সাজে, অন্য লোকে লাঠি বাজে।
Name: I Mail: Country:
IP Address : 14.96.112.126 Date:04 Mar 2011 -- 12:25 AM
ডকু বানালে আমারে সঙ্গে নিও। চায়ের ভাঁড় ডিস্ট্রিবিউট করবো।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:04 Mar 2011 -- 01:11 AM
ভাঁড়ে তো চা নাই। সেখানে মা ভবানীর অধিষ্ঠান
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.93.237 Date:04 Mar 2011 -- 01:27 AM
না না আমাদের পোত্তিকার আপিসেও তো রাজনীতি নিয়ে কুছ ভি আলোচনা হয় না। আমরা তো মচ্ছোজীবিদের পোত্তিকা। আমরা শুদু দ্বীপটীপ আর নানারকম শুকনো, ভেজা, অগভীর ও গভীর জলের মাছ সম্মোন্ধে পোবোন্ধো ছেপে থাকি। আপনারা মানে
এ লাইনের আদি .. হেঁ হেঁ ...
Name: a x Mail: Country:
IP Address : 99.188.84.89 Date:04 Mar 2011 -- 02:28 AM
অচিন্ত্য, মৃতের সংখ্যা ছাড়াও জেলে ক'জন গেছিলেন সে সংখ্যা কোথাও পাওয়া যায়?
আর অনু জালায়েসের লেখা নিয়ে বলবেন বলেছিলেন, জানিনা পড়তে গিয়ে বাদ পড়েছে কিনা, মনে হল লেখেন নি?
আরো কিছু প্রশ্ন/বক্তব্য আছে। পরে করছি।
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 115.242.208.93 Date:04 Mar 2011 -- 08:26 AM
আমি এটা বলতে চাই নি যে মরিচঝাঁপি আর দেশভাগ একই ব্যাপার। আমার জানার ইচ্ছে - মাথার ওপর দেশভাগ বা দেশত্যাগের বোঝা নিয়ে দলবদ্ধ মানুষ কি ভাবে নতুন ঠাঁইয়ের জায়গা খোঁজে। এর কি কোনো প্যাটার্ন আছে?
কলকাতার দক্ষিন দিক তুলনায় ফাঁকা ছিলো ৪৭এ, সেটা জানতে তো প্রায় স্কাউটিং করতে হয়। কারা করলো তা।
মরিচঝাঁপির ক্ষেত্রেও মানুষ কিভাবে বাছলো মরিচঝাঁপিকেই সেটাই জানার আগ্রহ।
Name: 9 Mail: Country:
IP Address : 61.90.164.27 Date:04 Mar 2011 -- 09:04 AM
দেশভাগের পরে সেইভাবে স্কাউটিং করার দরকার পড়ে নি তো। ব্যাপারটা তো এইরকম নয় হঠাৎ একটা অদেখা অজানা জায়গায় সবাই চলে এল। দেশভাগের বহুদিন আগে থেকেই পূর্ববঙ্গের লোক কলকাতায় বসত করেছে। আমার ঠাকুর্দা নিজেই দেশভাগের দু এক বছর আগে কলকাতায় চলে আসেন। ঠাকুমা এবং বাবা জ্যাঠারা দেশভাগের সময়ে। বিশ দশকের প্রথম পর্বে কলকাতার বাঘা বাঘা মহারথীরা সব পূর্ববঙ্গ ছেড়ে এসেছেন। বিশেষত: সাহিত্য-সংস্কৃতির আঙিনায়। কাজেই কলকাতার মানচিত্র অজানা কিছু ছিল না। তারপর আত্মীয়তা এবং বন্ধুত্ব সূত্রে একে অন্যের পিছনে আসতে শুরু করা। এসে সবাই এক জায়গায় থিতু হয়ে বসেছেন তাও নয়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরতে থাকা। আর যাঁরা কোনো রকম পূর্বপরিচয় ছাড়া চলে আসেন, তাঁদের অনেকেরই জায়গা হয় সরকারী ক্যাম্পে।
মরিচঝঁপিতে এইরকম জেলাগত আত্মীয়তাসূত্রের গল্প থাকতে পারে হয় তো। কারণ ষাট ও সত্তরের দশকেও বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা মানুষ সুন্দরবনে বসত করেছেন। কুমীরমারি, হেঁতালমারি, গোবিন্দপুর ইত্যদি আশপাশের জায়গয় আর একটু খোঁজ নিলে হয় তো জানা যেতে পারে।
Name: 9 Mail: Country:
IP Address : 61.90.164.27 Date:04 Mar 2011 -- 09:13 AM
তবে মরিচঝাঁপির ভৌগোলিক অবস্থান যদি কেউ দেখেন তাহলে বুঝবেন জায়গাটা ভেবেচিন্তেই বাছা হয়েছে। দ্বীপটা পড়ে সুন্দরবনের সংরক্ষিত বন ও জনপদের সীমান্তে। একদিকে বুড়িদাবরি, একদিকে সজনেখালি আর একদিকে কুমীরমারি। অর্থাৎ যেখানে জনবসতি শেষ হচ্ছে, তার পরের দ্বীপটাই হল মরিচঝাঁপি। কাজেই জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন যদি একটা ক্রমান্বয় মেনে চলে, তাহলে মরিচঝাঁপি স্বাভাবিকভাবেই অন্যতম ক্যান্ডিডেট।
Name: d Mail: Country:
IP Address : 14.99.253.218 Date:04 Mar 2011 -- 10:37 AM
হুঁ। কিন্তু একেবারে ফাঁকা জায়গার তুলনায় অল্পস্বল্প লোকজন আছে, এমন জায়গায় বসতি গড়ে তোলাটা বেশী সহজ নয়? স্বুন্দরবনের অন্যান্য অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব তখন কিরকম ছিল?
Name: Arijit Mail: Country:
IP Address : 61.95.144.122 Date:04 Mar 2011 -- 11:00 AM
নেতাজীনগরের দক্ষিণে আদি গঙ্গা পেরিয়ে, মানে চাকদহ এরিয়াতে - যেখানে মুসলমানদের জমি ছিলো - সেগুলো ষাটের দশকে হু হু করে বিক্রি হয়ে যায়। ইনফ্যাক্ট আমাদের বাড়িই ওই জমিতে। আরো দক্ষিণে, অনেক বছর অবধি ফাঁকা মাঠ ছিলো - রেনিয়ার মাঠ বলে পরিচিত। কিছু বসতি অবশ্যই ছিলো - তবে খুবই হালকা। আর দক্ষিণে বাদা অঞ্চল - সুন্দরবনের আগে - বেসিক্যালি জলা জমি। সেখানেও হালকা বসতি ছিলো। এখন আর নেই। এখন রেনিয়া অঞ্চলে বিরাট সংখ্যক অবাঙালী বসবাস।
রিফিউজিদের একটা বিরাট অংশ যাদবপুর/বাঘাযতীন/লালকা/নেতাজীনগর এবং দক্ষিণে চাকদহ এলাকায় বসবাস শুরু করে - আশির দশকেই সম্ভবত: পাট্টা দেওয়া হয়। মানে যেটা বলতে চাইছি - হয়তো জঙ্গল কেটে বসতি তৈরীর দরকার নাও পড়তে পারতো - রেনিয়ার দিকে তো প্রায় ফাঁকাই ছিলো। অবশ্য সেই ফাঁকা জমিরও কোনো মালিকানা ছিলো কিনা সেটা বলতে পারবো না।
Name: Arijit Mail: Country:
IP Address : 61.95.144.122 Date:04 Mar 2011 -- 11:01 AM
রেনিয়ার মাঠ একটা মাঠ নয়। লিটের্যালি "দিগন্ত বিস্তৃত ধূ ধূ ফাঁকা জমি'।
Name: a x Mail: Country:
IP Address : 99.188.84.89 Date:04 Mar 2011 -- 11:04 AM
অচিন্ত্য, এই জায়গাটা বুঝলাম না, আপনি লিখেছেন পুলিশ মরিচঝাঁপিতে নামার পর আর নেতাদের (অর্থাৎ সতীশ মন্ডল, রাইহরণ ও রঙ্গলাল) দেখা গেলনা - এই কথা বলছেন নির্মল ঢালি, যিনি মরিচঝাঁপি স্কুলের হেডমাস্টার। কিন্তু এই নির্মল ঢালিই তো সতীশ মন্ডল!
আর এটাও লিখেছেন তার আগে যে নির্মল ঢালি বলেছেন তিনি নিজে ওখানে ছিলেন না, আন্দাজে বলছেন দেড়শো লোক মারা গেছিল সেদিন। তাহলে যদি এই নির্মল ঢালি অন্য নির্মল ঢালি (মানে সতীশ মন্ডল না) হয়, তাহলে উনি জানলেন কি করে নেতাদের দেখা গেলনা পুলিশ নামার পর? আমি কোথায় গোলাচ্ছি বুঝছিনা।
Name: 9 Mail: Country:
IP Address : 61.90.164.27 Date:04 Mar 2011 -- 11:09 AM
অনুমান, তবে মনে হয় বসতি গড়ে ওঠা জায়গায় এই বিপুল মাত্রায় রিফিউজি এলে লাঠালাঠি অবশ্যম্ভাবী। বিশেষত:, সুন্দরবনের মত জায়গায় যেখানে দ্বীপগুলিতে পানীয় জল ও চাষের উর্বর জমি অপ্রতুল। সেই ঝুঁকি হয় তো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছিল। দেশভাগের সঙ্গে এই ঘটনার একটা মৌলিক তফাৎ হল- দেশভাগের সময় উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সরকারী যোজনার অন্তর্ভুক্ত ছিল, তাতে সরকার যতই অপদার্থতা দেখাক না কেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে পুরোটাই "কেউ বা কারা" ঘটিয়েছিল, সরকারী নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হওয়া সঙ্কেÄও। অতএব প্রতিবেশীদের সঙ্গে অনর্থক লাঠালাঠির সম্ভাবনা এড়াতে চাওয়া স্বাভাবিক।
Name: a x Mail: Country:
IP Address : 99.188.84.89 Date:04 Mar 2011 -- 11:10 AM
ও দাঁড়ান প্রথম জটটা ছেড়েছে। নির্মলকান্তির নাম নির্মলেন্দু দেন সতীশ মন্ডল। দুজন আলাদা মানুষ। পরের জটটা এখনও বুঝিনি।
Name: a x Mail: Country:
IP Address : 99.188.84.89 Date:04 Mar 2011 -- 11:20 AM
মধুময় পালের বই গুলো পড়িনি। রস মল্লিক, অনু জালায়েস, বাঙ্গালনামায় প্রকাশিত নির্মল ঢালি ও সৌমেন গুহর লেখা (তুষার বাবুর বই থেকে পুন:প্রকাশিত) আর তুষার বাবুর ডকু এই কটি পড়েছি/দেখেছি। যোগ হল অচিন্ত্যর এই লেখাটা। জটিলতা ও প্রশ্ন বাড়ল বই কমলনা।
Name: d Mail: Country:
IP Address : 14.99.253.218 Date:04 Mar 2011 -- 11:22 AM
উফ! অক্ষ পুরো খিচুড়ি পাকিয়ে দিচ্ছে। আরে নির্মলকান্তি ঢালি ওরফে নির্মল ঢালি ওরফে নির্মলেন্দু ঢালি একজন লোক। সতীশ মন্ডল আলাদা লোক। নির্মলবাবু যিনি স্কুল তৈরী করেছিলেন।
৯- হুঁ এইটা ভাল পয়েন্ট।
Name: a x Mail: Country:
IP Address : 99.188.84.89 Date:04 Mar 2011 -- 11:24 AM
আরে লিখলাম তো সেটা!
Name: Manish Mail: Country:
IP Address : 59.90.135.107 Date:04 Mar 2011 -- 12:24 PM
রেনিয়ার মাঠের দিকে হিরেন সরকারের প্রচুর জমি ছিলো।
Name: Arijit Mail: Country:
IP Address : 61.95.144.122 Date:04 Mar 2011 -- 12:35 PM
ঠিক। এখনও আছে মনে হয় বেশ কিছুটা।
একটু অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন: জমির মালিকানাটা ঠিক হয় কি করে? মানে এগুলো সম্ভবত: পুরুষানুক্রমে পাওয়া সম্পত্তি, শুরুতে কে কিভাবে পেয়েছিলো তার কোনো রেকর্ডই হয়তো নেই - সেই দাবীর ওপরে জমির লেনদেন/বেচাকেনা হয় কি করে?
Name: Manish Mail: Country:
IP Address : 59.90.135.107 Date:04 Mar 2011 -- 01:15 PM
আমি তিন জনের নাম লিখতে পারি যারা নাকি লাঠি ও মামলা-মোকদ্দমার জোরে প্রচুর জমি হস্তগত করেছিলো।
খগেন সর্দ্দার
অনিল চৌধুরি
সন্তোস বোস
নাকতলা,রায়পুর এইসব জায়গায় প্রচুর মুসলমান বাস করতেন।তাদের ফেলে যাওয়া জমিগুলো সব এরাই হাতিয়ে নিয়েছিলেন।
রজ্ঞন কিছুটা আলোকপাত করতে পারে
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:04 Mar 2011 -- 02:11 PM
অনেকে অনেক প্রশ্ন করছেন যেগুলোর জবাব আমিও খুঁজতে চেষ্টা করেছি বা সময়/সম্ভব হলে আরও করব। গুরুদের কাছ থেকেও অনেক কিছু জানা যাচ্ছে। আলোচনা চলুক।
জেলে কজন গিয়েছিলেন সে সংখ্যা যোগাড় করার চেষ্টা করিনি। খোঁজ করব। কতটা পাব জানি না। তবে যাঁদের অ্যারেস্ট করা হয়েছিল (ডিটেইন নয়) তাঁদের জেলে বেশিদিন থাকতে হয়েছিল কি? কারণ মূল উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের মরিচঝাঁপি থেকে সরিয়ে দেওয়া বা দণ্ডকে পহেরত পাঠানো।
অনুর লেখা সম্পর্কে একটু ভেবেচিন্তে লিখব। আপাতত তার লেখা একটা ইমেল এখানে তুলে দিচ্ছি। আমার লেখা পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর সে লেখে:
Dear Achintya,
This is an important initiative but you could have mentioned and given the references of those who have worked on this issue before you.. such as Ross Mallick, Amitav Ghosh and myself.. its just a question of good scholarship.
All Best
জবাব দিলে হয়ত তিক্ততা বাড়ত।
Name: h Mail: Country: india
IP Address : 203.99.212.53 Date:04 Mar 2011 -- 02:38 PM
etate lekha Jaay , ei iunikoDe ?
Name: a x Mail: Country:
IP Address : 99.188.84.89 Date:04 Mar 2011 -- 02:52 PM
ওপরে ইউনিকোড ভার্সানে ক্লিক করে ইউনিকোডে মতামত দিন বাক্সতে টাইপালে তো হওয়া উচিৎ।
Name: h Mail: Country:
IP Address : 203.99.212.53 Date:04 Mar 2011 -- 04:00 PM
bangla lyaakhaa jaachchhe naa.
1. I like this. wonderful stuff. first hand journalism has its charm. congratulations to achintyarup.
2. I disagree with kelo position that this article is more valuable than the one already published. for a bilingual reading public both should be fine. i happen to think unless the affected, have access to internet, the two are not really different. interactivity amongst 'us' is not really an addition in credibility. achintya's wonderful objectivity remains the strength irrespective of the medium.
3. I disagree with dd, credible social history for many subjects is not really rare anymore in india. british or french historians of the late nineteenth and twentieth century have established this style of writing, but it is not uncommon anywhere in the world of professional historians. jnanedra pandey(on bhagalpur riots), muzaffar alam(language of political islam), mushirul hasan (19th century muslim intellectuals).there are so many. rita kothari on partition of sindh, particularly role of rss. i know a girl is working with my wife on muslim mirgation to, yes to not from, assam. it is essentially a story of economic labour migration, during partition and claiming 'lathalathi' with locals to coincide with nascent ahom identity politics.the times match.
4. I am not too worried about questions like 'why bijoygarh' or 'why marichjhaapi'? criteria has certain patterns. 9 has talked about one, sounding most plausible among speculations. in my birbhum experiences, all the 'bangal paras' that came up had few characteristics:
a. it was 'naamo' jami, low land, cheap to trade. preferably near a town of some kind.
b. belonged to either disinterested jotdars(sadgops mostly) or muslims or adivasis or anyone who is interested in quick (distress) sale or don't have manpower to stop settlements.
c. land traders many times emerged from early settlers, this is quite common in any migration, early migrants are socially and economically more powerful in any migrant community. criminality is not uncommon.
d. two funny signs of stability and upward mobility in all birbhumi bangal paras : i. the relatively well off move to elevated land slices (uchu para), & ii. the younger starts speaking the local tounge, a mixture of beerbhumi and santhali rather than say khulna ar barishal. the other interesting thing is, many start marrying or living with locals as well. they become outcaste for sometime but then one or two i knew became integrated as they became land sharks themselves. the other bit is new poors whereever they arrive from may add to the population. i knew two vaishnabs , both ganjarus, settled despite not being a bangaal or a relation.
e. the two bangal paras i knew were late refugees, mid seventies.
f. a bihari muslim who lived nearby, complete drunkard started speaking either in urduised hindi or in khulna bangaal, depending on the level of intoxication or mood.
5. i am more puzzled by why while one part of lefties were clearly helping refugees, helping mainly by organisation, why the other bit was actually ordering police firing on the same ethnic group. 78-79 is a time when prashanto sur, sachin sen, were still legends, right? i asked this to my father, who was a coopers' camp volunteer (or some camp in kalyani) and a organiser for milk for children from haringhata i suppose, he did not have any answer like most of boijayanta's 'astik's, I suppose. i find it baffling. i have a unsupoorted speculations. left, here have been criticised of bringing in a population and winning an election by virtue of that in 77. this has been the congress narrative until abp and tmc 'discovered' matuas or they were closer to power. was lf government in 78 scared of this criticism and did not want to take responsibility of a marginalised and pauperised(therefore dangerous?) population in 1978? donno.
6. achintya or someone else has hinted a '(linguistic)homeland' factor in the marichjhapi case. can we really segragate between motivations of migration i.e. economic(& labour), forced or dislocated during partition, promised land aspiration in case of bangladesh/assam and pakistan? is there a time or motivation pattern? given that the migration has obviously been continuous almost. even few years ago 'anuprabeshkaree' was a right wing issue, bartaman predicted 43 bidhansabha seats are afftected by illegal(implied) immigrants, that is no more an issue now i suppose for obvious reasons.
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:04 Mar 2011 -- 05:43 PM
এখানে যাঁরা অনু এবং রস মল্লিকের লেখা পড়েছেন, ঐ লেখাগুলি সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য জানতে চাই
Name: h Mail: Country:
IP Address : 180.215.75.164 Date:04 Mar 2011 -- 10:33 PM
দেশ ভাগের পরে যেসব (এনিমি?) প্রপার্টি আইন বা রিহ্যাবিলিটেশন এর আইনি কঠামো ছিল, সেটা কার্যকর করা হয়েছিল অনেক ক্ষেত্রে। ধরুন কসবায় আশির দশকে পাট্টা দেওয়া হল, বাঘাযতীন এ দেওয়া হল, সেটা কি ঐ আইনগুলোর জোরে? নাকি নতুন কোন সেটলমেন্ট অ্যাক্ট হল? যে আইনেই হয়ে থাকুক, মরিচঝাপিতে সেটা কার্যকর করা গেল না? সেটা কি একবার দন্ডকারণ্যে সেটলমেন্ট করানো হয়েছিল বলে? এটা আমার কাছে পরিষ্কার না। এটা সেটা দেখে আমার পসন্দ হয়নি উত্তর। অচিন্ত্যরুপ বলতে পারার সময় পেলে ভালো হয়।
আরেকটা লিটেরারি দিক আছে, যে জন্য বাঙালপাড়া র কথা অপ্রয়োজনীয় হলেও বলেছি। বড়রা আমাদের শিখিয়েছেন, শহরাঞ্চলেই প্রথম একাধিক স্বর আসে। এটায় আমার বিশ্বাস বিশেষ কোনদিন ছিল না। কিন্তু এই অভিবাসনের সময়ে এই অবিশ্বাস প্রকট করার একটা সুযোগ পেয়ে ছাড়তে ইচ্ছে করে নি।
আর না। এই বাজারে অনেক হল। বইগুলোর কিছুটা নিয়ে অন্যত্র আলোচনা করা যাবে।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:05 Mar 2011 -- 12:52 AM
"উচ্ছেদের সাতকাহন'-এ প্রকাশিত দুটো ইণ্টারভিউ (প্রায়) টুকে দিচ্ছি।
সরকারি হিসেব মত কুমীরমারি দ্বীপে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিল দুজন স্থানীয় আদিবাসী। একজন মেনী মুণ্ডা, আরেকজন কে? জানিনা। সেখানে গিয়েছিলাম যখন, কথা হল মেনীর ছেলে রাম মুণ্ডা আর ভাই নিতাই মুণ্ডার সঙ্গে।
লেখাপড়া বিশেষ শেখা হয়ে ওঠেনি রামের। গুছিয়ে কথা সে বলতে পারে না। মাছ-টাছ ধরে পেট চলে। বিঘে দুই জমিও আছে -- সরকার থেকে দিয়েছিল মা মারা যাওয়ার পর। তা ছাড়া ঘটনার সময় তার বয়সও ছিল খুব কম। তুলনায় তার মামার কথা অনেক গোছানো।
কথা হচ্ছিল বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে। সামনে করানখালি নদী। ওপারে দেখা যায় মরিচঝাঁপির বেঘো জঙ্গল। দুপুরের রোদ তেরছা হয়ে আসছে। ঠিক যেই জায়গায় গুলি চলেছিল, সেখানে একটা গাছের এক টুকরো ছোট্ট ছায়ায় বসে পুরোনো কাহিনী শোনা। রাম আর নিতাই যেরকম যেরকম বলেছিল, হুবহু তাদের মুখের কথায় তুলে দিচ্ছি।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:05 Mar 2011 -- 01:19 AM
রামের কথা:
মা-টার ঘটনা শোনো। আমি তখন ছোট। ঐ গরু-বাছুর চরাতাম। দশ-বারো বছর বয়েস। কার্তিক ঘোষের বাড়ি রইছি -- ঘাটের কাছে দোতলা বাড়িটা। ঘরে ছিল বাবা আর মা। আমি মেজ। কার্তিক ঘোষের বাড়ি কাজ করতাম। আমি আর সেজ ভাই ছিল। আমরা ঐ দুতলা থেকে দেখতে পাচ্ছি, কার্তিক ঘোষের বাড়ি থেকে। আর কার্তিক ঘোষ বলছে, শোনো, তোমরা কোত্থাও নড়বা না। বলছে, তোমরা কেউ যেও না ওদিকে। বিরাট ঘটনা হচ্ছে। আমি বলছি, আমি একটু বাড়িতে যাব? এখন ভাত খাওয়া হচ্ছে, যাব? অ্যাই, খবর্দার, ওপার থেকে লোক পার হয়েছে, চেঙ্গা মারছে, গুলি করছে। বলি, মা-টা মরবে না তো? ও দা'মশাই, আমার মা মরবে না তো? একটু বাদে দেখি, বেলা চারটের দিকে, গুলি হয়েছে। শুনলাম মাকে নিয়ে যাচ্ছে। তখন পরপুল মিরধা ছিল, পরপুল মিরধা -- এ বাড়িতে। তখন কে বলছে তোমার বাবা কানছে খুব জোরে। কেন? কি বলব বাবু, আমার বেরেন একেবারে খারাপ হয়ে গেছে মা-টা মরে গিয়ে। আমরা ছ'টা ভাই।
তখন কার্তিক ঘোষ বলছে, তুমি ঐ দিকে কি করতে যাবা? এই গরু-বাছুরগুলি কে গোছাবে? বলি দাদামশায়, আমি বাড়ি যাব। আমার মা-টাকে একটু দেখব। আমার মা নিয়মিতন আসে, তো, আজকে তো আমার মা এল না? তা, শুনলাম একজন ধান রোদে দিতে পাঠিয়েছে, আপনারা যেরম যাচ্ছ এরম যাচ্ছে, বলছে, অ্যাই, লোকটা কে? বলি রাম। আর সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে দিয়েছে। আর একটা ছোট ভাই ছিল আমার, ভাইটা কোলে ছিল, আর বোনটা ঘুরছিল ওখানে। মা ধান রোদে দিয়ে, বাবা বসে রয়েছে, আর মা দুধ খাওয়াচ্ছে, সাইডে, ঘরে। গুলি করেছে অন্য লোককে। এখানে একটা ক্যাম্প, ফরেস্টের দিকে একটা ক্যাম্প। বড়বাবু, ছোটবাবু, মেজবাবু, সেজবাবু সবাইকে আমরা চিনি। অচেনা লোক গিয়ে গুলিটা টেনে দিয়েছে। বড়ভাই ছিল, আর বাবা দেখি কানতি কানতি ও-ই দিকে চলে গেল। তখন আমি ঐ একতলা বাড়ি থেকে শুনতে পাচ্ছি। আমি তখন বলি বাবা, কোথায় যাচ্ছ? বলে তোর মা-র হয়ে গেছে। গুলি লেগেছে। আমি তখন বলি তুমি কোথায় ছিলে? বলে আমি ঘরে বস্ছিলাম। তোর মা মরে গেছে। আর ছোটভাই? বলে ছোটভাই ঐ ছোট বোনটারে নিয়ে কোথায় পালিয়ে চলে গেল। গিয়ে দেখি ছোট্ট একটা ঘর ছিল, ঘরের ভেতর কিছু নেই। এই রকম একটা কি ছিল, চেঙ্গারি না কি ছিল, সেটা দুর করে গাঙে ফেলে দিইছি আমরা। দে, তখন আমি বললাম কি ঘটনা? না, গোসাবা যেতে হবে। তারপর অনেকদিন পর বলছি, বড়বাবু, আমার নামটা তুমি সই করে নে যাও। আমি গোসাবা যাব না। বলি কি আর দেবেন? ঐ দু বিঘে জমি দেছে সরকার থেকে। তা ধরেন কেউ আসে ব্যয় করতি, কেউ আসে আয় করতি। বলি বাবু, মা তো মারা গেছে, আর জমি নে কি করব? যা হোক করে হয় উদ্ধার হয়ে উঠি। বড়বাবু, আমাদের খুব দুর্দশা। তো, দু বিঘে জমি ওরা দে দিল।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.245.24 Date:05 Mar 2011 -- 02:50 AM
অচিন্ত্যদা, রস মল্লিকের লেখা আমি দেখেছি। আপনার লেখার মত সেখানে ধোঁয়াশার জায়গাগুলো হাইলাইট করা নেই। ইনফ্যাক্ট ধোঁয়াশা যেন নেইই। সব বেশ ২+২ = ৪ এর মত মেলানো। ফীল্ড স্টাডি কম, অ্যাকাডেমিক গবেষনা বেশী। জাতপাতের ব্যাপারটাও সেখানে অনেক বেশী প্রমিনেন্ট।
তবে একটা ব্যাপার। ও লেখায় পরিবেশরক্ষার ব্যাপারে বেশ কিছু শব্দ খরচ করা হয়েছে। আপনি কিন্তু এ দিকটাকে বিশেষ হাইলাইট করেন নি কখনো। আপনার লেখার অ্যাঙ্গেল অবশ্য আলাদা।অ।
জম্বুদ্বীপ আর মরিচঝাঁপির কিন্তু এই 'পরিবেশরক্ষার অজুহাতের' ব্যাপারে হুবহু মিল রয়েছে। দু জায়গাতেই পরিবেশরক্ষার ক্ষেত্রে সরকার চরম কঠোর। দু ক্ষেত্রেই মানুষের জীবন বা জীবিকার চেয়ে পরিবেশেই অগ্রাধিকার পেয়েছে।
মরিচঝাঁপি- ১৯৭৯
The Chief Minister declared that the occupation of Marichjhapi was illegal encroachment on Reserve Forest land and on the state - and World Wildlife Fund - sponsored tiger protection project. Jyoti Basustated that if the refugees did not stop cutting trees the government would take strong action. Enough is enough. They have gone too far
জম্বুদ্বীপ-২০০২
The West Bengal Forest Department orders that the transient fishermen can ' t use Jambudwip. Police swoop down on the fishermen and burn their boats , fishing gear and temporary shelters.
পরিবেশে ঠিক কতটা মধু? নানা দেশের নানা সরকার, বিশেষত: একটু কম গনতান্ত্রিক বা সেনা / ডিক্টেটর চালিত সরকার, মানুষের ওপরে মাঝে মাঝেই পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেয় কেন? (অন্য উদাহরন - মায়নামার এর জুন্টা সরকার ও কারেন উপজাতি, যাঁদের একটা অংশকে আমি আন্দামানে দেখেছি। বার্মাডেরা,২০০১ সালে)
মার্কসবাদীদের এই দুর্দান্ত পরিবেশপ্রেম সম্পর্কে মার্কসবাদের তত্বগুলি ঠিক কি কথা বলে? (কল্লোলদা শুনছেন?)
জম্বুদ্বীপের কথা লেখার সময় একটা জিনিস দেখিয়েছিলাম।অপরে আপনাদের ঝাড় খেয়ে চুপ করে যাই। বুদ্ধবাবুর কন্যা পলিটিক্যাল সাইন্স নিয়ে প্রেসিডেন্সী থেকে পড়া সত্বেও জম্বুদ্বীপের সময়টা পরিবেশ নিয়ে প্রচন্ড আগ্রহী ছিলেন। এখনও হয়ত আগ্রহী আছেন। কিন্তু বুদ্ধবাবুর কন্যা+পরিবেশ নিয়ে যদি গুগলান, তবে যে কটা রেজাল্ট পাবেন, তার সবকটা জম্বুদ্বীপে সরকার / সাহারার দৌরাত্ম্য চলার সময়কার। এটা কি সত্যিই কৈন্সিডেন্স? সুচেতনাদেবী যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলেন সেই বিষয় নিয়ে ওনার নামে সার্চালে একটাও রেজাল্ট আসে না কেন?
মরিচঝঁপির সময় সমর সেনের ফ্রন্টিয়ারে আরও কিছু বেরিয়েছিল মনে হচ্ছে। রবিবার বিকেলে হাতে সময় পাব তখন একটু খুঁজে দেখব পাই কিনা। সংহতিতে খুঁজে পেলাম না।
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 115.242.230.226 Date:05 Mar 2011 -- 09:29 AM
হ্যাঁ কেলো শুনেছি।
আমি যখন মার্কসবাদী ছিলাম, তখন পরিবেশ বিষয় হিসাবে ভারতে সবে আত্মপ্রকাশ করছে। বাঙ্গালী (মানে প:ব:র) মার্কসবাদী মহলে পরিবেশ নিয়ে ভীষণ একটা তাচ্ছিল্য ছিলো (পেতি বুর্জোয়াদের সংষ্কারক সাজার শখ)। আরে, আগে মানুষ বাঁচুক, তবে তো বাঘ!! আর মরিচঝাঁপির পরিবেশ-অজুহাত তখন কানে ঢোকে নি, কারন আমাদের মাথা-কান-চোখ-হৃদয় জুড়ে তখন ষড়যন্ত্র-জুজু বিরাজ করছিলো। আজও পরিবেশ মার্কসবাদীদের খুব প্রিয় বিষয় নয়। শ্রেনীদ্বন্দের কাঠামোয় যা খাপ খায় না, তা নিয়ে মার্কসবাদীদের,অন্তত: ভারতীয় মার্কসবাদীদের অস্বস্তি সর্বজনবিদিত।
তার উপরে মার্কস বা লেনিন বা মাও নৌবিদ্রোহ বা পরিবেশ নিয়ে কিছু লিখে যান নি, তাই বুক ঠুকে ও নিয়ে কিছু বলা ওনাদের কাছে বেশ মুস্কিলের। ফলে আজকাল পরিবেশ-ঢোক গিলতে হলেও ওটা (শুওরের খোঁয়ারের মতোই) সুবিধা মতো ব্যবহারের জিনিস বলেই মনে করে থাকেন তারা।
কিন্তু কেলো, সংগঠন কাঠামো বা নেতৃত্ব নিয়ে সংশয় থেকেই গেলো। দুটো বিষয় আসলে একটাই। পিরামিড সংগঠন না হয়ে যদি অন্য কোন রকম হতো, তাহলে নেতৃত্বের প্রশ্নই উঠতো না।
আমরা মাসুম-এ একটা পরীক্ষা করেছিলাম। কাঠামো ছাড়া সংগঠন। আমরা যে কজন বন্ধু এপিডিআর ছেড়ে এসেছিলাম তারাই মাসুমের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমাদের কোন পদাধিকারী ছিলো না। মিটিং যে কেউই ডাকতে পারতো, অন্য সকলের সাথে যোগাযোগ করে। সিদ্ধান্ত হতো সর্বসম্মতিক্রমে (এটা এপিডিআরে ১৯৭২ থেকেই চালু)। কারুর কোন বিষয়ে আপত্তি থাকলে কথা চলতো। তবু যদি আপত্তি থেকেই যেতো, তবে সেই বিষয়ে মাসুম কোন সিদ্ধান্ত নিতো না। এটা সম্ভব ছিলো কারন সংগঠন নিয়ে আমরা আরও কয়েকটা বিষয় মেনে চলতাম। আমাদের কোন শাখা হবে না (এটা আমরা ১৯৭৭এই পিপিএফের ক্ষেত্রে চালু করেছিলাম)। আর একটা হলো, সংগঠনের সদস্য হওয়া যাবে না। নতুন সদস্য হতেই পারে, সেটা নির্ভর করবে তার সাথে আমাদের সম্পর্কের উপরে। তাকে প্রথমত: বন্ধু হতে হবে, যা তার সাথে আমাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত কাজের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। তখন সংগঠন সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সদস্য হবার জন্য অনুরোধ করতে পারে। সদস্য হওয়া না হওয়া তার ব্যাপার।
কিন্তু এটা রাখা যায় নি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে বা ফান্ডিং সংস্থা থেকে টাকা পেতে গেলে একটা কাঠামো দেখাতে লাগে। আমাদের ঠিক ছিলো, ওগুলোর জন্য আমরা একটা কাগুজে কাঠামো বানাবো মাত্র। কিন্তু অন্যরা, বিশেষ করে ফান্ডিং সংস্থা ঐ কাগুজে কাঠামো মেনেই যোগাযোগ রাখতো। কালে কালে ঐ কাগুজে কাঠামোই ডোরাকাটা হালুম হয়ে গেলো। ফলে মাসুম আর একটা পিরামিড সংগঠনের মতোই হয়ে গেলো। পরে পুরোদস্তুর এনজিও বনে গেলো মাসুম, যার পদাধিকারীরা বেশীরভাগই বেতনভুক কর্মচারী।
এটা আমাদের পরীক্ষার ব্যর্থতার গল্প। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি মাসুমের প্রথম সংগঠন ভাবনায় দম এখনো আছে।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.250.92 Date:05 Mar 2011 -- 09:59 AM
শোনার জন্য এবং যা শোনালেন তার জন্য ধন্যবাদ কল্লোলদা।
পরিবেশ ও মার্কসবাদ নিয়ে আমার যা ধারনা তা হুবহু আপনার সঙ্গে এক। আপনি পোড় খাওয়া রাজনীতির লোক আর আমি একেবারে অজ্ঞ। সুতরাং ঐ জায়গাটায় মার্কসবাদীদের এত পরিবেশপ্রেম একটা সন্দেহের উদ্রেক করে। এটা অনেকটা সংসদীয় রাজনীতি মেনে নেবার মতই। যা কালে কালে ক্লীয়ার হবে।
মাসুমের আদি কাঠামো জানতাম না। এ তো দাদা স্বপ্নের সংগঠন। ডোরাকাটা হয়ে যাওয়াটা অবশ্য দু:খের।
Name: SC Mail: Country:
IP Address : 24.3.17.103 Date:05 Mar 2011 -- 10:00 AM
অচিন্ত্যবাবুর লেখা মন দিয়ে পড়ছি বেশ অনেকদিন ধরেই এই টইতে।
লেখাটা বেশ ভালো লাগলো। সাদা কালোর বাইরে গিয়ে বেশ অনেকটা ভালো চিত্র পাওয়া গেল মরিচঝাঁপি নিয়ে।
আমার মরিচঝাঁপি সম্বন্ধে জ্ঞান বাকি মনেকের মতৈ অমিতাভ ঘোষের হাংরি টাইড পড়ে।
তারপরে কৌতুহল বশে রস মল্লিকের পেপার ডাউনলোড করে। এই লেখাটা অনেক বেশী রক্তমাংসের লেখা মনে হলো।
তবে আরেকটা জিনিস নিয়ে একটু লেখা দরকার মনে হলো, সেটা নেতৃত্ব নিয়ে কল্লোলদার প্রশ্ন। এই প্রশ্নটা আমাকেও অনেক ভাবিয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি, এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না। তবে এখানে মনেহয় কোনো আদর্শ নেতৃত্ব নেই।
মরিচঝাঁপি থেকে একেবারে বেলাইনে গিয়ে কয়েকটা উদাহরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। পাঠক ক্ষমা করবেন।
নেতৃত্ব নিয়ে প্রথমেই যে উদাহরণ অনেক জায়গায় দিই, মায়াবতী। মায়বতী আমার কাছে নেহরুভিয়ান সমাজতন্ত্রের বিরাট সাফল্য।
দলিত এবং নারী হয়ে ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারছে একজন, এর চেয়ে বেশী মাটির কাছাকাছি হয়ত রাজনীতি যেতে পারেনা। মায়াবতী সুন্দরী নন, ওবামার মতো নাম কা ওয়াস্তে কালো এরকমও নন, একেবারে মাটি থেকে ঊঠে আসা নেত্রী, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে অকল্পনীয় ছিলো। কিন্তু অতি বড় মায়াবতী ভক্তও দেখতে পান ভদ্রমহিলা করাপশানে নিমজ্জিত। আরেকটা বিরাট বড় উদাহরণ লালুপ্রসাদ, নয়ের দশকে ভারতের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিবান রাজনীতিবিদ।
এখানে একটা জিনিস খেয়াল করুন। সতীশ মন্ডল কিংবা মায়াবতী, এরা সকলেই বড় হয়েছেন চরম দারিদে্র্যর মধ্যে। রাজনীতিটা এদের কাছে কোনো আদর্শের জায়গা থেকে হয়ত আসেনি, এসেছে একদম প্রতিদিনের লড়াইয়ের জায়গা থেকে। মানে আজকে যদি দন্ডকারণ্য থেকে পালাতে না পারি, কাল পেটে ভাত জুটবে না, এরকম জায়গা থেকে। সেখানে হয়ত জীবনের একমাত্র স্বপ্ন একটু টাকা, ভালো করে বাঁচা। সতীশবাবুরা যেনতেন প্রকারেণ সেটাই করতে পেরেছেন। মার্ক্সবাদী রাজনীতি, যেরকম নিজের চোখে দেখেছি, সেও একই দোষে দুষ্ট। শ্রমিক ইউনিয়ানের ছোট নেতা মেজ নেতাদের ক্ষেত্রেও এটা একভাবেই সত্যি। এটা এইজন্য নয় যে এরা সিপিয়েম বা কংগ্রেস, কারণ তাদের নিজেদের বেড়ে ওঠা। নেতৃত্ব যখনই মায়াবতী বা সতীশ মন্ডলদের থেকে এসেছে, সেখানে মানুষ যখন তাদের নেতাকে নির্বাচন করেছেন, তখন আদর্শের প্রতি তার দায়বদ্ধতার থেকেও হয়ত অনেক বেশী গুরুত্ব দিয়েছে নেতা বা নেত্রী কতটা করিৎকর্মা সেই প্রসংগটাকে। কোন লোকটাকে ওপর মহলে পাঠালে দাবী আদায় করে নিয়ে আসতে পারবে, সেই চালাকচতুর লোকটাই নেতা। এবারে সে কতটা আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ, সেই পরীক্ষা নেওয়ার বিলাসিতা তখন জণগণের থাকে না হয়ত বা।
এবার উল্টোপিঠটা দেখুন। মার্ক্স, জ্যোতি বোস, কিংবা হাল আমলের কোবাড ঘান্ডী। এদের তো এসব না করলেও চলত। অভাবের মধ্যেও বড় হননি। একটু ভালো খাব স্বপ্নটা তাই এরা কখন দেখেননি। তাই দেখবেন, এখানে কামিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা প্রায় নেই।
কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা অন্যজায়গায়। রিপ্রেসেন্টেশন। মার্ক্সবাদীরা লেখেন ডিক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু সত্যিই কি হওয়া যায়? নিন্দুকেরা বলেন আসলে অনুন্নত মানুষের ভাষাটাকে মধ্যবিত্ত এপ্রোপ্রিয়েট করে নিচ্ছে।
এই সমস্যার কি সমাধান জানা নেই। এমন হয়ত কিছু আন্দোলন আছে, যারা এতটা ভাগ্যবান যে আদর্শ নেতা / নেত্রী পেয়েছিলো, তবে তারা খুবই ভাগ্যবান (হয়ত বা মার্টিন লুথার কিং)। সকলের সে ভাগ্য হয় না।
Name: SC Mail: Country:
IP Address : 24.3.17.103 Date:05 Mar 2011 -- 10:09 AM
শেষের লাইনটায় ভুল বললাম। মার্টিন লুথারকেও মোটামুটি মধ্যাবিত্ত বুদ্ধিজীবিই বলা চলে। ভুল জানতাম আগে।
Name: SC Mail: Country:
IP Address : 24.3.17.103 Date:05 Mar 2011 -- 10:34 AM
কল্লোলদা, এরকম ক্লাসিকাল এনার্কিস্ট মুভমেন্টের (যেরকম সংগঠনের কথা আপনি বলছেন মাসুমের আদি যুগে) কোন বড় সাফল্য আছে কি ইতিহাসে?
এটা নিয়ে একসময়ে বেশ কৌতুহল ছিলো, কিন্তু তারপরে আর পড়াশুনো করা হয়ে ওঠেনি।
মার্কিন দেশে দেখেছি, বিশেষ করে কলেজ পড়ুয়া বামপন্থীদের একটা বড় অংশ এনার্কিস্ট। (হয়ত বা মার্ক্সবাদের সাথে জড়িত যে অস্পৃশ্যতার ব্যাপার আছে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় থেকে, তাতে বামপন্থীদের কাছে বাকুনিন বেশী গ্রহণযোগ্য মনে হয়) একটা এরকম খুব উৎসাহী গ্রুপের সাথে পরিচয় হয়েছিলো, এনার্কিস্ট বইয়ের দোকান চালায়। সকলেই ভলান্টিয়ার, সবকিছুই সবার সম্মতি নিয়ে ঠিক হয়, কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই।
একদম থিওরীর জায়গা থেকে, এনার্কিস্ম আমার কাছে অনেক বেশী আকর্ষণীয়, কারণ সেটা ক্ষমতার ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ করে।
কিন্তু প্রতিদিনের সংগঠন চলতে পারে কিনা (আন্দোলন তো অনেক বড় বিষয়), সে নিয়ে এখনো সন্দিহান।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.250.92 Date:05 Mar 2011 -- 11:13 AM
GNU/Linux , ফ্রী সফটওয়্যার মুভমেন্ট, উইকি এমনকি ইন্টারনেটও তো অ্যানার্কিস্ট ভাবধারায় তৈরি। এগুলোকে কি ঐতিহাসিকভাবে সফল বলা যাবে?
Name: a x Mail: Country:
IP Address : 99.188.84.89 Date:05 Mar 2011 -- 12:04 PM
এই ব্যপারটাও বেশ ঘোলাটে। পরিবেশ প্রসঙ্গে, তুষার রায়ের ডকুতে ও সৌমেন গুহ'র নিবন্ধে বলা হয়েছে যে ঐ অঞ্চল সংরক্ষিত ছিলনা, বনদপ্তর বা ব্যঘ্রদপ্তরের আন্ডারেও ছিলনা। এই সংরক্ষিত অঞ্চলের কথা প্রথম বলা হয় আদালতের হলফনামায়। তাছাড়া সমস্ত ব্যবসার কাজ ও আর যা যা ছোটখাট শিল্প তৈর হয়েছিল সেগুলো অনুমতি নিয়ে হয়েছিল। কিন্তু আইনের রায়তে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পয়েন্টটাই মূল আপত্তির কারণ ছিল।
Name: Shibanshu Mail: Country:
IP Address : 59.97.236.156 Date:05 Mar 2011 -- 12:42 PM
SC র বিশ্লেষণের সঙ্গে নিজের ধারণার বেশ মিল পাচ্ছি। তবে ঐ য়্যানার্কিস্ট তত্বটি বড়ো সৌখিন। যেকোন সমাজব্যবস্থাকে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য যা সর্বাধিক প্রয়োজন তা উত্তম প্রশাসন ( Good Governance )। এটার গুণগত মান থেকেই সাধারণ মানুষের কাছে যে কোনও রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রাথমিক সাফল্যের বিচার হয়। য়্যানার্কি প্রশাসন নামক শক্তির কেন্দ্রটিকেই চ্যালেন্জ করে। সমান্তরাল সাব-অল্টার্ন রাজনীতিতে, তা লালু, মায়া বা সতীশ মন্ডল, সবার জন্যই প্রযোজ্য, 'আদর্শ' ও 'সততা'র সংজ্ঞা মধ্যবিত্ত মূল্যবোধের সঙ্গে মেলেনা। সেখানে 'নেতা' মানে উপজাতিক সর্দারদের মতো একজন ক্যারিশম্যাটিক মানুষ, যে যেনতেনপ্রকারেন কিছু 'পাইয়ে' দিতে পারবে। নেতার ব্যক্তিগত 'সততা' বা 'সম্ভ্রমবোধ' একেবারেই বিচার্য নয়। বাম রাজনীতির সঙ্গে সাব-অল্টার্ন রাজনীতির এটাই বৃহৎ ফারাক।
লালুর পতন হয়েছে চূড়ান্ত করাপ্শন এবং Governance হীনতার ভারে। মায়াবতীর করাপ্শনের ভরা পূর্ণ, কিন্তু রাজনীতির, যাকে বলে জোড় তোড় কি খেল, তাতে এখনও ভদ্রমহিলা খেলে যাচ্ছেন। তবে আমাদের দেশে যদিও সৎ রাজনীতিক ব্যাপারটা সোনার পাথরবাটি, কিন্তু সাধারণ মানুষ খুব বেশিদিন তাদের 'নেতা'দের ঐ জাতীয় শ্বাসরোধী করাপ্শন সহ্য করতে পারেনা। লালু, মায়ার থেকে অনেক চতুর মানুষ হওয়া সঙ্কেÄও ' আখির ধুল চাট লিয়া'। নীতিশ কুমার এই মূহুর্তের রাজনৈতিক কষ্টিপাথরে যদি পাস করতে পারেন, তবে বিহার ভারতীয় গণতন্ত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল স্রোতের মডেল, সাব-অল্টার্ন প্রত্যাশা আর উন্নয়নশীলতার প্রত্যক্ষ প্রাপ্তি, এই তিনটি বিন্দুর ভারসাম্য রক্ষার খেলা খেলছেন নীতিশ। জানিনা শেষ পর্যন্ত সফল হবেন কি না। তাঁর সবচেয়ে বড়ো সম্পদ, তাঁর ব্যক্তিগত সততা। যদি হন, তা একটা বিরাট কীর্তি হবে।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.88.76 Date:05 Mar 2011 -- 02:50 PM
যত্তো মত দাদা, তত্তো পথ।
অ্যানার্কিজম দেখতে সৌখীন লাগলেও ও পথে চলা বেশ কঠিন মশাই। সে আমি বইমেলায় গুরুর ভলেন্টিয়ারী করতে গিয়েই বুঝিচি। স্যানদিদি সেদিন ঠিক সময় এসে পড়ে আমায় না বাঁচালে ...
গুড গভর্নেন্সটাও অনেকটা সোনার পাথরবাটির মত। উত্তম প্রশাসন মানে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন তো? কিন্তু মুস্কিল হল, আমারই একটা পার্ট দুষ্ট একটা পার্ট শিষ্ট। সাদা আমিটাকে দিয়ে কালো আমিটাকে দমন না করে মাঝামাঝি একটা পথ খুঁজে নেওয়াই আমার মতে অ্যানার্কিজম। যাতে কালোটা কেলোর বা অন্য কারো কষ্টের কারন না হয়।
বারো বচ্ছর GNU/Linux আর দশ বচ্ছর উইকিপিডিয়া ব্যবহার করছি তো, কখনও তো গুড গভর্নেন্সের সঙ্কট অনুভব করি নি।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.88.76 Date:05 Mar 2011 -- 03:01 PM
গভর্নেন্সহীন গুড গভর্নেন্স এর মূল সূত্রটা কিন্তু লুকিয়ে আছে কল্লোলদার কথায়-
সংগঠনের সদস্য হওয়া যাবে না। নতুন সদস্য হতেই পারে, সেটা নির্ভর করবে তার সাথে আমাদের সম্পর্কের উপরে। তাকে প্রথমত: বন্ধু হতে হবে, যা তার সাথে আমাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত কাজের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। তখন সংগঠন সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সদস্য হবার জন্য অনুরোধ করতে পারে। সদস্য হওয়া না হওয়া তার ব্যাপার।
অর্থাত সদস্য তারাই হচ্ছে, যারা এক উদ্দেশ্য নিয়ে লড়ে যাচ্ছে। সমমনস্ক কিছু লোক যাঁদের লক্ষ্য এক। ফলে দুষ্টের দমনের প্রয়োজনটাই থাকছে না।
উইকিপিডিয়া ঘেঁটে দেবার লোকের চেয়ে উইকিপিডিয়ায় গঠনমূলক লেখার লোকের সংখ্যা বেশী। এটাই উইকির সাফল্যের চাবিকাঠি। যে কোন অ্যানার্কিস্ট সিস্টেম স্রেফ এই ভারসাম্যের ওপর কাজ করে, এবং সফল বা বিফল হয়।
Name: Shibanshu Mail: Country:
IP Address : 59.97.236.156 Date:05 Mar 2011 -- 03:13 PM
তার মানে এই ব্যবস্থাটি মানুষের শুভবুদ্ধির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। মানুষের সৃষ্টি করা জটিলতম শাস্ত্র, অর্থাৎ স্মৃতিশাস্ত্র বা আইনকানুনের দস্তাবেজ এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা। উইকি বা লিনাস্কের অভিজ্ঞতা কি দেশশাসনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট?
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.88.76 Date:05 Mar 2011 -- 03:30 PM
মানুষের সঙ্গে পশুর তফাত তো এই শুভবোধেই। যাকে আমরা এককথায় মনুষ্যত্ব বলি।
চাদ্দিকে যেমন স্বৈরতন্ত্র ভেঙ্গে গনতন্ত্র স্থাপনের হিড়িক পড়েছে, তাতে কে বলতে পারে এর পরের স্টেপই সেই স্বপ্নের সমাজব্যবস্থায় উত্তরন নয়!
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.88.76 Date:05 Mar 2011 -- 03:35 PM
কল্লোলদা কিন্তু বলেছেন ওনারা মাসুমে ফেলিওর হলেও ওনার বিশ্বাস, ঐ ভাবনায় এখনো দম আছে।
এই দমটাই আমাদের কাছে আলুর ছটা।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.88.76 Date:05 Mar 2011 -- 04:05 PM
শাস্ত্রের জটিলতা নয়, আমার স্বপ্নের সেই সমাজব্যবস্থায় মনুষ্যত্বের সারল্যই হবে শেষ কথা।
আসুন পাক্কা অ্যানার্কিস্ট এর ঔদার্য্য দেখিয়ে মরিচঝাঁপির টইটাকে আবার মরিচঝাঁপিতে ফিরিয়ে দেই।
অচিন্ত্যদার মুখ থেকে শুনি many মুন্ডার কথা।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.255.194 Date:06 Mar 2011 -- 04:33 AM
নিতাইয়ের কথা:
আমার নিজস্ব ভগ্নী মারা গেছিল। আমি তো বাড়ি ছিলাম না, হাসনাবাদ থেকে ইঁটের ঢালাই (বড় নৌকো) নিয়ে আসছিলাম। এইখান দিয়ে পুলিশ উঠে যাচ্ছে, আর পুলিশের সঙ্গে আমার চেনা-পরিচয় আছে। কানাই, অশোক এই সব। ওরা হেঁটে যাচ্ছে। তখন ওপার থেকে লোকে পার হয়ে আমার বাড়ির সামনে থেকে আগিয়ে আসছে, চেঙ্গা নিয়ে। তা প্রায় চার-পাঁচশ লোক হবে। দুপুর দুটো নাগাদ। আমি যাচ্ছি, পুলিশের সঙ্গে। যে পুলিশটা যাচ্ছে, আমি বলি, এই, কোথায় যাচ্ছ? বলে, দাদা, তোমাকে বাড়িতে দিয়ে যাই। আমি বলি, চল যাই। ওদের সঙ্গে আমি আগে আগে যাচ্ছি, সামনে যে টিউকলটা দেখছেন, ঐ টিউকলের ধার থেকে চেঙ্গা ছুঁড়ছে। দা-টাও ছিল ওদের সঙ্গে। তখন এরা বোম ফাটাফাটি করল। না শোনার পরে তখন পুরো গুলি। আমার বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে, সব ছুটে যাচ্ছে, আমার ভগ্নী তখন তার ছোট ছেলেকে মাই খাওয়াচ্ছে। ছেলেটার মাথার ঠিক ওপর দিয়ে বুকে গিয়ে গুলিটা লেগেছে। আমাদের পুকুরে প্রায় সাত-আটটা দা পেয়েছিলাম। আর যে কটা পেয়েছে, চুলের মুঠি ধরেছে -- ওপারের লোক যারা ছিল তাদের -- আর এরকম বাইন গাছ ছিল, বাইন গাছে চেপে ধরে মেরেছে, ছেলে মেয়ে বাছবিচার করেনি। ওখানেই চরে ঝাঁপ দিয়েছিল, লঞ্চ এনে টেনে টেনে তাতে তুলেছে, আমাদের বাড়ির সামনেটায়। ধরে ধরে কোপাল। তারপর লঞ্চে তুলে কালিন্দী যেয়ে সব নদীতে ফেলে দিয়ে এল -- জ্যান্ত হোক আর মরা হোক, দেখাশোনা নেই। আমার ভগ্নীকে কত চেষ্টা করেছিলুম, রাখতে পারিনি। পুরো টেনে নিয়ে একেবারে লঞ্চে।
গণ্ডগোলটা হল কারণ শরণার্থীরা নিজেদের এরিয়ার বাইরে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করছিল -- বড় বড় কাঠ কাটছিল। সেই কাঠ কেটে বিক্কিরি করত। ওখানে করাত কলও বসিয়েছিল, নৌকো তৈরি করত। তো, সরকার দেখছে পরপর আমার বন তো পরিষ্কার হয়ে গেল। ওরা যেখানটায় থাকত, প্ল্যানটেশনে, সেখানে বন ছিল না, নারকেল চারা ছিল। বড় গাছ কাটত নদীর ওপার থেকে। অন্য দ্বীপ থেকে। কিছু মানত না। সেই সব অত্যাচারে এই হল। এই যে দু-তিন মাসের মধ্যে এত বড় কারখানা টারখানা করে ফেলল, সব বাইরের লোকের যোগাযোগে। হাসনাবাদ থেকে আসত।
এক বছর আগে লোক যখন এসে বসেছিল ওপারে, তখন গেছি। দেখতে যেতাম। ওখানে এরকম দোচালা করে বসবাস করত, আর মাছ-কাঁকড়া ধরে খেত। আর ঐ কাঠ কেটে এপারে নিয়ে আসত। বেচাকেনা করে আবার সন্ধের সময় সবাই ফিরে যেত। ইস্কুল করেছিল, বলখেলার মাঠ করেছিল, রুটির কারখানা করেছিল, এইসব। ময়রার দোকান -- সবকিছু। কি করে যে তিন মাসের মধ্যে করল আর বুঝতে পারিনি। কেউ ইন্ধন না যোগালে -- সাহায্য না করলে, এসব করতে পারত না। যে লোকরা নিয়ে এসেছিল, তারাই সাহায্য করত। কারা নিয়ে এসেছিল তা বলতে পারব না।
যে পুকুরের ধারে রুটির কারখানা করেছিল সে পুকুর বুজে এসেছে। পুকুরের চিহ্ন এখনো আছে, দেখা যাবে। রুটি ঐ পারেই বিক্রি হত।
এই জায়গায় ঘটনাটা ঘটেছিল। রিফিউজিরা পুলিশ দেখে ভয়েতে আমার ঘরের কোনা দিয়ে নেমে পুকুরের পাশ দিয়ে ছুটে চলে যাচ্ছিল। আর পুলিশ গুলি ছুঁড়ল। বডিগুলো সব এই চরে গাদা করে রেখেছিল। কত লোক মেরেছিল? মনে করুন শ দেড়েক। আমার অনুমান। আমি তো চোখে দেখিনি, ঘরের ভেতর ঢুকেছিলাম। দরজার মুখটায় বসেছিলাম।
রিফিউজির মেয়েছেলে যেমন, আমাদের পরিবার ঐ রকম। মানে, ওনাদের কাপড় নিয়ে আমার পরিবার পরেছিল। তা, আমার পরিবাররে মারতে গেছিল। ধরার সাথে সাথে আমার একটা জিনিস ছিল, জিনিসটা টেনে বের করব, সঙ্গে সঙ্গে ওসি ঝপ করে ধরল -- নিতাইদা, করছ কি? (প্রশ্ন: জিনিস কি, তীর-ধনুক?) না না, অন্য একটা জিনিস। তারপর ওখান থেকে এসে আমার দিদিকে জোর করে তুলে নিয়ে চলে গেল। কাড়াকাড়ি করেছিলুম আমরা, কিন্তু লঞ্চে তুলে নিয়ে চলে গেল। বডি ফেরত দেয় নি।
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 115.184.10.110 Date:06 Mar 2011 -- 09:32 AM
কেলোকে ক্ক। হ্যাঁ অচিন্ত্য মরিচঝাঁপি চলুক। আমাদের হাত চুলকালে, অন্য টই খোলা যাবে'খন।
Name: kd Mail: Country:
IP Address : 59.93.240.91 Date:06 Mar 2011 -- 10:57 AM
না না, তোমরা এখানেই ফোড়ন কাটো। অচিন্ত্যর লেখা তাতে খোলে ভালো।
যদিও অপ্রাসঙ্গিক, এটা দেখেছো? আজ TOI(page 2) তে অচিন্ত্যর লেখা -
http://epaper.timesofindia.com/Default/Client.asp?Daily=TOIKM&showST=t
rue&login=default&pub=TOI&Enter=true&Skin=TOINEW&GZ=T&AW=1299386148437
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.244.4 Date:06 Mar 2011 -- 11:21 AM
কাব্লীদার লিংকটা ভুলভাল জায়গায় নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি ঠিক লিঙ্ক দিচ্ছি দাঁড়ান।
অচিন্ত্যদার সব লেখার একটা জিনিস ভাল লাগে। মানুষের ফিলিংসটাই ওনার লেখার মেন ফোকাসে থাকে। অথচ ইম্যোশন এর বাড়াবাড়ি নেই। এ লেখাটাও খুব ভাল লাগল হাই রেটিংঅও দিলুম।
নিচের পোস্টে লিঙ্কটা ঠিক করে দিচ্ছি
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.244.4 Date:06 Mar 2011 -- 11:26 AM
http://epaper.timesofindia.com/Default/Scripting/ArticleWin.asp?From=A
rchive&Source=Page&Skin=TOINEW&BaseHref=TOIKM/2011/03/06&PageLabel=2&E
ntityId=Ar00200&ViewMode=HTML&GZ=T
Name: til Mail: Country:
IP Address : 220.253.71.144 Date:06 Mar 2011 -- 02:18 PM
অচিন্ত্যরূপ,
আপনার লেখার আপডেটের জন্যে সকলের সঙ্গে আমিও মুখিয়ে থাকি। মরিচঝাঁপি যখন ঘটে তখন কাগজেই পড়তাম এবং সত্যি বলতে কি মনে হতো এই লোকজনেরা কেনই বা দন্ডকারণ্য ছেড়ে এল।
অনুরোধ রইল সাথে সাথে দন্ডকারণ্যে রিফিউজী পুনর্বাসন সম্পর্কে একটু আধটু ব্যাকগ্রাউন্ড দেবেন, তাতে বুঝতে সুবিধে হবে।
আপনার লেখা খুবই ভাল লাগছে, এখানে তো আবার ভাল বলবারও উপায় নেই, কেউ কেউ তেড়ে মেড়ে আসে!
TOI তে লেখাটাও ভাল লাগলো।
P.S কেলোস্যার, আপনিও মাঝে মধ্যে দরকী দিন এই টইতে, সেটাও আমাদের পক্ষে অনেক পাওয়া।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:06 Mar 2011 -- 05:59 PM
ধন্যবাদ সকলকে।
তিলুবাবু, দণ্ডকারণ্যে থাকেন এবং বাংলা থেকে ওখানে ফিরে গেছেন সেরকম রিফিউজিদের সঙ্গে দণ্ডকে গিয়ে কথা বলে লেখার ইচ্ছে বহুদিনের। দেখি যদি কখনো সম্ভব হয়। তা না হলে কিছু বই থেকে টুকে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সে সব তো সবাই জানেন। ভালো কিছু পেলে অবশ্যই গুরুতে দেব।
Name: pi Mail: Country:
IP Address : 72.83.87.140 Date:07 Mar 2011 -- 09:46 PM
কেলোদার ঐ 'পরিবেশরক্ষার অজুহাত' এর পয়েনটি খুব ইন্টারেস্টিং। ও নিয়ে আমার ও চাট্টি কথা কওনের আছে। কিন্তু চাট্টি ডিমের আর মশার ঝোল রাঁধতে রাঁধতেই বেলা কাবার হয়ে যাচ্ছে। :(
কবে যে সময় পাবো ? :(
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.247.199 Date:08 Mar 2011 -- 03:29 AM
পাই-কে কাজ কমাবার একটা ফর্মুলা দিচ্ছি। আলাদা করে ডিমের এবং মশার ঝোল না বানিয়ে একবারে মশার ডিমের্ঝোল বানিয়ে নে। খাটনি কমবে, সময় বাঁচবে, পুষ্টি হবে, পরিবেশ-টরিবেশ নিয়ে লেখাও যাবে।
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.245.188 Date:08 Mar 2011 -- 11:45 AM
@ পাইদিদি,
যে রাঁধে (ডিম হোক বা মশা) সে কি চুল বাঁদে না ? সুচেতনাদেবীকে দেকে শিকুন।
কি এয়ামোন গবেষনা কোরে উল্টে দিচ্চেন, যে ফাঁকে ফাঁকে চাট্টি পোরিবেশচ্চা করা যাচ্চে না?
কাল যকন গা-ও নিয়ে ত্রিশ পাতা ভাটালেন তকোন আপনার মশারা কি না খেয়ে ছিলো? যত্তোসব ছেঁদো অজুহাত!
@ অচিন্ত্যদা
আপনার নিজের সময় না হলে আপনার কোন ভাইকে দিয়ে একটা গোপোন খবর বের করতে পারবেন?
ত্যামোন জটিল কিছু না, আমি স্রেপ এইটে জানতে চাই, যে সুচেতনাদেবীও গা-ও দ্যাকেন কিনা।
Name: siki Mail: Country:
IP Address : 123.242.248.130 Date:08 Mar 2011 -- 01:20 PM
দ্যাকেন্না আবার? খুউব দ্যাকেন। নেহাত বেঙ্গালুরুতে থাকেন বলে প্রদীপ্তর মাথায় এখনো চুল রয়েছে। নইলে কবে সেগুলো ছিঁড়ে ব্যাংদিদির হাতে চলে আসত!
Name: hu Mail: Country:
IP Address : 12.34.246.72 Date:08 Mar 2011 -- 10:04 PM
ধুর! এই সুচেতনা বুদ্ধবাবুর মেয়ে।
Name: siki Mail: Country:
IP Address : 122.162.75.191 Date:08 Mar 2011 -- 10:08 PM
ওহো। ছরি।
Name: Achintyarup Mail: Country:
IP Address : 121.241.214.38 Date:09 Mar 2011 -- 01:03 AM
ও:, ওটা আমার সিলেবাসের বাইরে
Name: pi Mail: Country:
IP Address : 128.231.22.150 Date:09 Mar 2011 -- 01:11 AM
অচিন্তিদা, :)
কেলোদা, :(
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.254.241.187 Date:09 Mar 2011 -- 03:25 AM
ইয়ার্কি মারার জন্য মাপ করবেন অচিন্ত্যদা।
আপনি Date:04 Mar 2011 -- 05:43 PM এর পোস্টে বলেছিলেন অনু এবং রস মল্লিকের লেখা সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য শুনতে চান।
আমি সেটারই জবাবে আমার Date:05 Mar 2011 -- 02:50 AM এর পোস্ট লিখেছিলাম। সেখান থেকে ব্যাপারটা গড়াতে গড়াতে নেতৃত্ব, সুশাসন, অ্যানার্কিজম, পরিবেশ হয়ে শেষে গানের ওপারে তে এসে ঠেকেছে। আপনি না সামলালে এ টই কে সামলাবে ? আমি মোটেই এটা ঘেঁটে দিতে চাই না। আমার নিজেরও ভীষন আগ্রহ আছে ব্যাপারটা জানার জন্য। (তা ছাড়া আমি আর কল্লোলদা, আমাদের হাত চুলকালে অন্য টই খুলব সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।)
আমি ঐ Date:05 Mar 2011 -- 02:50 AM এ যা লিখেছি তা হয়ত আপনি শুনতে চান নি। অন্য কেউ কিন্তু তাঁদের বক্তব্য লেখেনও নি। অনু বা রস মল্লিকের বিরাট লেখা। ওদের লেখা পড়ে আমার যা মনে হয়েছে সেটা আমার পোস্টের প্রথম দু লাইনেই বলে দিয়েছি। আপনি ঠিক কোন দিক থেকে আমাদের বক্তব্য শুনতে চান সেটা একটু ধরিয়ে দিলে অবশ্যই সে দিকে আলোচনা গড়াতে পারে। ধরিয়ে না দিলে ছড়িয়ে তো যাবেই। তাই দ করে রেগে না গিয়ে একটু ধরিয়ে দিন।
নানা দিক নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। যেমন ধরুন অনু জালায়েস বলেছেন-
The refugees were then forcefully put in launches and sent to Hasnabad where lorries carried them back to Dandakaranya or to the Andamans.
আমি আগেই বলেছি ১৯৯৯-২০০০ নাগাদ আমি আন্দামানে খোঁজ করেছি এ বিষয়ে। আমি এমন কাউকে পাই নি যে আমাকে এ বিষয়ে বলতে পেরেছে। আন্দামান ছোট জায়গা বলে প্রত্যেকেই প্রত্যেককে চেনে এবং দলে দলে নতুন মানুষ গেলে সেটা বড় খবর হয়। অনু যেমন বলেছেন তেমন ভাবে গেলে আমার না জানাটা অস্বাভাবিক। আগে এও বলেছি যে, অল্প লোক সবসময়েই যায়, কিন্তু ঐ সময় দলে দলে যায় নি। সরকারী কোন উদ্যোগের কথাও আমি শুনি নি। লরি করে দন্ডকারন্য বা আন্দামান নয়, কদ্দুর তাদের ছাড়া হয়েছিল সেটা কে জানে!
আমি তো রিপোর্টার নই, তাই জনে জনে প্রশ্ন করি নি। কেবল কৌতুহলবশে জিঞ্জাসা করেছিলাম। সে সময় জম্বুতেও কোন সমস্যা ছিল না, ফলে আমার মনে বাম সরকারের প্রতি ততটা সন্দেহ বা ক্রোধও ছিল না।
মরিচঝাঁপির কথা আমি আর অনেকের মত ২০০৫ নাগাদ বের হওয়া হাংগ্রি টাইড পড়ে জানতে পারিনি। শুরু থেকেই জানতাম। আমি শুনেছিলাম শঙ্খ ঘোষ, সলিল বিশ্বাস, অরিজিত মিত্র দের মুখ থেকে। এঁরা আমার বাবার বন্ধু ছিলেন, অল্প বয়সেই সমসাময়িক সব বিষয় নিয়ে এঁদের আলোচনা শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। মরিচঝাঁপির গুরুত্ব আমার কাছে ইংরাজী তুলে দেওয়ার চেয়ে বেশী ছিল না। প্রথম এর গুরুত্ব বুঝি ২০০২ সালে, জম্বুদ্বীপের মত্সজীবীদের ওপর সরকার একইরকম পদক্ষেপ নেবার পর।
রস মল্লিকের কাজ ১৯৯৯ এর, আর অনু জালায়েসের ২০০৫ এর। আন্দামানে আমার খোঁজ নেওয়া অনু জালায়েসের পেপারের ঢের আগের। তবে, এ বিষয়ে গবেষনা আমি কোনদিনই করি নি। আমারটা গবেষনা নয়, জানার আগ্রহ মাত্র। যে জন্য আপনাদের আলোচনাও শুনতে চাইছি এত আগ্রহ নিয়ে।
আর হ্যাঁ অচিন্ত্যদা, কোনটা আপনার সিলেবাসের বাইরে- সু . চে? নাকি গা . ও . ?
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 220.226.209.2 Date:09 Mar 2011 -- 09:41 AM
অ কেলো - এই সলিল বিশ্বাস কি সাউথ সিটিতে ইংরাজি পড়াতেন? অনুবাদ করেন? বারবিয়ানা ........ ?
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.95.16 Date:09 Mar 2011 -- 09:57 AM
হ্যাঁ:
Name: kc Mail: Country:
IP Address : 194.126.37.76 Date:09 Mar 2011 -- 10:00 AM
সুচের ব্যাপারটা কী? কেলোর সঙ্গে কোনও ব্যক্তিগত ঝাম আছে মনে হচ্ছে। ;-)
Name: kelo Mail: Country:
IP Address : 117.252.95.16 Date:09 Mar 2011 -- 10:06 AM
না:
Name: siki Mail: Country:
IP Address : 123.242.248.130 Date:09 Mar 2011 -- 10:11 AM
তো:?
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.240.26 Date:01 Feb 2012 -- 03:54 AM
৩১শে জানুয়ারি চলে গেল। তেত্রিশ বছর আগে ওই দিন সুন্দরবনের কুমীরমারি দ্বীপে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের। পুরো ঘটনার বিষয়ে যা যা আমার মনে হয়েছে সে বিষয়ে এখানেই আগে লিখেছি। রাম মুণ্ডা আর নিতাই মুণ্ডার কথাও তুলে দিয়েছি। আরও যা যা আছে আমার কাছে, একটু একটু করে লিখে দেওয়ার ইচ্ছে আছে। যেমন ধরুন, বীরেন মৃধা আর তার ভাগ্নে কালীপদ গায়েনের কথা। এদের কথা থেকে যা জেনেছি তা মূল লেখায় দিয়ে দিয়েছি আগেই। এবার শুধু তাদের মুখের কথাগুলি টুকে দিচ্ছি। ভার্বাটিম। একাধিক লোক এক সঙ্গে কথা বলেছেন। বীরেনবাবুর সঙ্গে কথা শুরু হয়েছিল, মাঝে মাঝে কালীপদ কিছু বলেছেন। কালীপদর কথাগুলি ব্র্যাকেটের মধ্যে লিখে দেব। এর মধ্যেই এক দুটো কথা বলেছেন নিতাই মুণ্ডাও। সেগুলি দ্বিতীয় ব্র্যাকেটে থাকবে। আমার প্রশ্নগুলি তৃতীয় ব্র্যাকেটে।
করানখালি নদীর পাড়ে কুমীরমারির বাঁধের ওপর দিয়ে হাঁটছি আমরা। নদীর ওপারে মরিচঝাঁপি দ্বীপ। রোদের তাপ ভালই। খানিকটা হেঁটে আসার পর একটা গাছের অল্প একটুকখানি ছায়া খুঁজে নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা শুরু। এত দিন আগের কথা, সকলের সবকিছু হয়ত ভাল মনেও নেই, মাঝে মধ্যে হয়ত অতিরঞ্জনও আছে। সেগুলো বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পাঠকের।
বীরেনবাবু বলতে থাকেন:
তখন ধরুন এইটি-ফাইভ বাংলায়। ইংরেজিতে সেভেণ্টি-নাইন, না, সেভেণ্টি-টু। না, থ্রি, থ্রি হবে। তখন পড়াতাম। শরণার্থীরা আসতে শুরু করল মার্চের দিকে। মিটিং-ফিটিং করল -- তারপর ঢুকল এসে হঠাৎ। কিভাবে এসেছে, কেন, শোনার দরকারও হয় না। আমরা শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া লোক, খেটে খাই। ধরুণ, আমার বৃত্তি হল কলম পেশা। এটাই আমার মেন। প্রথম তো কুমীরমারিতেই এসে উঠেছিল হাজার হাজার লোক। কত লোক তা বলতে পারব না। (তারপর নদী পেরিয়ে ওপারে গেল।) ওদের ইচ্ছে হল, চলে গেল। (করে তাঁবু করে করে ছিল।) এখানেও প্রথমদিকে তাঁবু করে করে ছিল। আমাদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা-টামেলা হয়নি। (না, আমাদের সঙ্গে ঝামেলা হয়নি।) ওই অল্প কিছুদিন ছিল, (দু-চারদিন ছিল, কি পাঁচদিন ছিল), থেকে ওপারে চলে গেল।
সেভেণ্টি-টু তে আমি ফরেস্টারের কাজ করতাম। তখন আমি ওখানে ছোটবাবু ছিলাম। পরে কোনো কারণবশত সার্ভিসটাই ছেড়ে দিলাম। ওপারে জঙ্গলটা আমিই কাটিয়েছিলাম।
[-- মরিচঝাঁপিতে তার আগে জঙ্গল ছিল?]
হ্যাঁ। কাটিয়ে ওখানে নারকেল গাছের চারা বসানো হল। আমাকে দেওয়া হত ওয়ান সেভেণ্টি-ফাইভ। তারপর ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে ঘুরে ঘুরে টিউশনি আরম্ভ করলাম। আর কোনো খবর রাখতাম না। তারপর কি হল আর জানি না।
[-- ওপারে যাননি কখনো?]
যেতাম, যেতাম না বললে মিথ্যে বলা হবে। আমাদের কোনো ভিউ থাকত না। (আমাদের যা বাজার, তার থেকে ওরা নিজেরাই একটা বাজার করেছিল।) মার্কেটিং করেছিল দুটো -- একটা বড় বাজার, একটা ছোট বাজার। (কে বলছে ছোট কলকাতা মত করেছিল নাকি?) ওখানে উইথ গেঞ্জির ফ্যাক্টরি, চিনির ফ্যাক্টরি, বিস্কুটের ফ্যাক্টরি ওরা করেছিল। রুটি --। ইস্কুল-টিস্কুল করেছিল।
[-- গণ্ডগোল কেন শুরু হল?]
কি জানি, বলতে পারব না। সরকারি ব্যাপার। মোরারজি দেশাই তখন ছিল। তারপর জ্যোতি বসু -- একদিন হুট করে বললেন -- জ্যোতিবাবুর সঙ্গে আমার অনেকবার পরিচিতি হয়েছে। এসেছিলেন উনি -- মোল্লাখালিতে। টু দি পয়েণ্ট সাম সাম মনে পড়ে। তা ধরুন, বাংলায় এইটি-সেভেন, এটা হল গিয়ে সিক্সটিন। থার্টি ইয়ার্স পার হয়ে গেল।
(চলবে)
Name: aranya Mail: Country: us
IP Address : 144.160.226.53 Date:01 Feb 2012 -- 08:04 AM
থ্যাংকস্ অচিন্ত্য, এই টইতে আবার লেখা শুরু করার জন্য। মন দিয়ে পড়ছি।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.243.144 Date:02 Feb 2012 -- 05:17 AM
[ গণ্ডগোলের সময় কী হল? কদিন ধরে ... ? ]
ঠিক সেইটা ... আমি বোধহয় ... সেটা কী মাস?
(গণ্ডগোলটা হচ্ছিল প্রায় একমাস আগের থেকে। আমার তখন চোদ্দ-পনের বছর বয়েস। আরেকটু বেহি, কুড়ি-টুড়ি। আমার নাম? কালীপদ গায়েন।) আমার ভাগ্নে। (বাড়ি এই তো আমার এখানে।) নদীর ধারে। (ওরা তো নদীতে খেয়া পারাপার হত। প্রত্যেক দিন কাঠ বিক্রি করা বা জল নিয়ে যাওয়া আমাদের এপার থেকে। ওদের টিউবওয়েল তখন যথেষ্ট বসেনি। অল্প টিউবওয়েল ছিল, তার জলে ওদের হত না, এখান থেকে জল নিয়ে যেত। আর প্রত্যেক দিন মাথায় করে করে কাঠ বিক্রি করত, মোল্লখালির বাজারে, কুমীরমারির বাজারে। ওদের যে বাজারগুলি ছিল -- ওরা বাইরে থেকে নৌকা করে দোকানের যা সরঞ্জামপত্র, ওই জামাকাপড়ের দোকান ছিল, বা সব্জির দোকান, চাল-ডাল যা কিছু ছিল, ওরা নৌকা নিয়ে যাতায়াত করত। বাজারে লোহা-লক্কড়, চাল ডাল সব্জি কাপড় চোপড় সব বিক্রি হত। এগুলো বেশি নিয়ে আসত হাসনাবাদ থেকে। এই ন্যাজাট-খুলনা -- এইদিক দিয়ে আসত।)
গণ্ডগোলটা কিভাবে হল শুনুন। আমি এইটা ভাল বলতে পারব। মাঝখানে ওপার থেকে লোকজন আসল। ওরা এসে জঙ্গলের ওপর অত্যাচার শুরু করল। কাঠ কাটত। ওদের তো খাওয়া-দাওয়া ঠিকমত জুটত না। ওদের ভেতরে যেন চুরি-চুরি একটা ভাব ছিল। (ওপাশ থেকে এসে এপারে হয়ত চুরি করত, ওইটা ঠিক ধরা যেত না।) চুরি একটু বেড়েছিল। (কিন্তু ওরা বহুত দূর থেকে জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে আনত। এইটাই বেশি সরকারের নজরে পড়ে গেল। পারাপারটা বন্ধ করে দিল।) যদি ঘেরার মধ্যে নিজেদের মত থাকত তাহলে সরকার বোধহয় কিছু বলত না। (মরিচঝাঁপির ভেতরে ওরা রাস্তা করা শুরু করল, কাঠ কাটা শুরু করল।)
[ মার্চ মাসের দিকে ওরা এলেন। চলে গেলেন কদ্দিন পরে? ]
ধরেন পরের মে মাস জুন মাস নাগাদ। (বাংলায় অঘ্রাণ মাসে চলে গেছে।)
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.254.31 Date:03 Feb 2012 -- 04:23 AM
ওদের সঙ্গে আমাদের কোনো ঝামেলা ছিল না। (ঝামেলাটা হল কাঠ কাটা নিয়ে। সরকার থেকে তখন অনেকগুলো পুলিশ দিল, আর ওদের এই এখানে খেয়া, ওখানে খেয়া, প্রত্যেক জায়গায় জায়গায় খেয়া ছিল, এইগুলো আটকে দিল। এইখানে, মৃধাপাড়ায় দুটো পুলিশ ক্যাম্প ছিল।)
[ ওপারে কি ক্যাম্প ছিল? ]
না। (হ্যাঁ, পরে ওটা বসিয়েছিল, সেটা বলছি, তারপর যখন ওদের ওই খেয়া পারাপার আটকে দিল, আর লোকজন যাতায়াত করতে দিত না। কার্ফু জারি করল। আমরা সন্ধের পরে রাস্তায় উঠতে পারতাম না। আমাদের বলত সন্ধের পরে কেউ বাইরে বেরিও না, ঘরের ভেতরে থাক। যখন বেরোবে, হ্যারিকেন জ্বালিয়ে বাইরে বেরোবে। এরকম নির্দেশ ছিল। এখন ওরা যাতায়াত করত চুরি করে, দুয়েকটা নৌকায় কিছু চাল-ডাল ... যখন অনেকদিন হয়ে গেল, তারপরে পুলিশ ওপারে ক্যাম্প করল, ভেতরদিকে। ওদের যে বড় বাজারটা ছিল -- নাম ছিল বড়বাজার -- সেই বড়বাজার যেয়ে পুলিশ ক্যাম্প করল।) আরেকটা কথা -- এখন, যখন পুলিশ আসে, অ্যাট দ্যাট টাইমিং রাত্রিতে, বেশ রাত, ১১ টা-১২ টার দিকে, একজন ভদ্দরলোক, দেখতে শুনতে খুব সুন্দর, লাভলি চেহারা, সন্ন্যাসী, এসে আমার বাড়িতে ছিল। এক রাত্রি ছিল। থেকে, আমি রাত্তিরে ঘরে শুয়ে আছি, উনি যে কখন চলে গেলেন, বুঝতে পারলাম না। উনি আমাকে একটা কাগজ দিয়েছিলেন। কাগজটায় একটা স্ট্যাম্প ছিল, আর ওনার ফোটো ছিল। গেরুয়া পরা সাধু। দাড়ি ছিল। আমাকে একটা ফোটো করে নিয়ে গেল উনি। [ উনি কি আনন্দমার্গী ছিলেন? ] হ্যাঁ মনে হয়। ওনার সঙ্গে কিন্তু আর কোনো লোক ছিল না। উনি নদি পেরিয়ে আসলেন, সাঁতরে। মরিচঝাঁপি থেকে। ঝোলায় অনেক টাকা ছিল। এসে আমার বাড়ি উঠল। [ আপনার বাড়ি কেন উঠল? আপনাকে তো চিনত না? ] আমাকে চিনত এই শর্তে, রাইহরন বাড়ই বলে যে ভদ্রলোক ছিল, আর সতিশ মণ্ডল, রঙ্গলাল গোলদার, মেঘনাদ শীল -- এই লোকগুলোর সঙ্গে আমার প্রায়ই দেখাশোনা হত রাস্তায় -- এপারে। আমাকে ডাকত, আপ্যায়ন করত। যেতাম না ভয়েতে, কি জানি কি করে।
(চলবে)
Name: debu Mail: Country:
IP Address : 72.130.151.116 Date:03 Feb 2012 -- 11:29 AM
চলছে ভালৈ
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.241.231 Date:06 Feb 2012 -- 04:32 AM
বীরেনবাবুর কথার মাঝখানে একটু ফুট কেটে যাই। এর আগে, ছাপায় বা নেটে কোথাও কখনো মরিচঝাঁপির সঙ্গে আনন্দমার্গীদের যোগাযোগের কথা উল্লেখ করিনি। কারণ আমার হাতে কোনো প্রমাণ নেই। কারণ আমার মনে শুধু এক চিলতে সন্দেহ ছিল, এবং শুধু তার ভিত্তিতে আমি কিছু লিখতে পারিনি। এবং বীরেনবাবুর সামান্য প্রায় অপ্রাসঙ্গিক একটি-দুটি কথা ছাড়া কারও কাছে বিশেষ কিছু কোট-ও পাইনি। শুধু, প্রবন্ধটা কাগজে ছাপা হয়ে যাওয়ার পর কথপ্রসঙ্গে একদিন এক প্রাক্তন আই বি কর্তাকে আমার সন্দেহের কথা জানাতে তিনি ভারি আশ্চর্য হলেন। বললেন, আপনি কি করে জানলেন মশাই? এ তো আই বি রিপোর্টে ছিল। সে রিপোর্ট তো পাব্লিশ হয়নি কোথাও। দেখো কাণ্ড।
পরবর্তীকালে এক আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীর সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি জানান, মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের তাঁরা কিঞ্চিৎ সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু যেই বিস্তারিত জানার চেষ্ট করতে গেলুম, অমনি তাঁর মুখে কুলুপ। তারপর ও লাইনে আর বিশেষ ঘাঁটাঘাঁটি করা হয়নি।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.244.226 Date:07 Feb 2012 -- 03:56 AM
আবার ফিরে আসি বীরেনবাবুর কথায়।
কিন্তু রাইহরণ বাড়ই আমাকে বন্ধু বন্ধু করে ডাকতেন, উনিই আমার সঙ্গে একদিন রাত্রিবেলা এনে পুলিন মণ্ডলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পুলিন মণ্ডল, মারা গেছে। পুলিন মণ্ডল, গ্রামের লোক। ওর ওখানে থাকত, বলল কিছুদিন থাকবে। যাওয়া-আসা করত। পরে আসত, বহু লোক মিটিং-টিটিং করত। মিটিং-এ আমরা মাঝে মাঝে রিপ্রেজেণ্ট হতাম। এটা সত্যি কথা। [ মিটিং-এ কী আলোচনা হত? ] বিভিন্ন, আমরা কিভাবে থাকব, কিভাবে খাদ্য সমস্যার সমাধান করব, তোমরা বাইরে কাঠ কেটো না, কারোর ওপর দাঙ্গা-হাঙ্গামা কোরো না -- ওই সব কথাগুলো ভাষণ দিত। এবং খাদ্যের জন্য আমরা আছি, ওই অমুক তারিখে ডাকতে হবে, অমুক তারিখে রিলিফ আসবে, আসত তাই নিতে। ঠিক দিন দেখে আসত। সঙ্গে সঙ্গে নিউজ করা হত পেপারে। আর ওদের মধ্যে এত ব্রিলিয়াণ্ট লোক ছিল, আমি ধারণা করতে পারতাম না। (এই যে আমরা জঙ্গলে যাইঅ, দেখি যে চারিদিকে রাস্তা দেওয়া। এখনো রাস্তা আছে।) অদ্ভুত ধরণের নাটক করত ওরা -- নাটক-থিয়েটার। (ওখানকার লোকগুলো সব কর্মী তো।) গেঞ্জির ফ্যাক্টরি করল তাই দেখে লোক আশ্চর্য। [ গেঞ্জির ফ্যাক্টরির কাঁচামাল কি করে আনত? ওদের তো পয়সা ছিল না। ] না না, পয়সা ছিল। ওদের পেছনে সরকারি কিছু একটা যোগ ছিল। (গরীব লোক তো ওদের বলতে পারিনি, কারণ যে পাঁউরুটির কারখানা করেছিল, সেরকম আমাদের কুমীরমারি-মোল্লাখালিতে করতে পারেনি এখনও পর্যন্ত।) তিন মাসের মধ্যে। (আগে লোহালক্কড় কিনতে হলে আমাদের মোল্লাখালি যেতে হত, আর তখন আমাদের ওখানে আর যেতে হত না, এইখানেই পেতাম সব।) [ পয়সা অত কোত্থেকে আসত? ] (কি জানি, ওরা তো বাইরে থেকে ঘুরে ঘুরে এসছিল, কোথা থেকে কি আনল ... ) পয়সা ছিল। ওদের লিডাররা ছিল। (কাঠ কাটত, নৌকায় করে মাল নিয়ে যেত, সে সব কম টাকা?) ওদের যখন মিটিংটা হত, তখন চাঁদা করে একেক জন বিশ, তিরিশ, পঞ্চাশ, দুশো, পাঁচশ, হাজার টাকা দিত। (সেই সূর্যবেড়ে, কচুখালির লোকেরা নাকি এখানে আসত জমি নেওয়ার জন্যে, লিডারের কাছে টাকা-ফাকা দিত, এরম গল্প শুনেছি।)
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.244.226 Date:07 Feb 2012 -- 04:26 AM
(কারখানা হওয়ার পরে এক বছর ওরা বেশ যাতায়াত করত, থাকত, খেত। তার পরে লাস্টে আটকানো হল। কার্ফু হয়ত এক মাস বলবৎ ছিল। যখন বন্ধ করে দিল, ওখানে প্রচুর নারকেল গাছ ছিল। সেগুলো সব কেটে খেয়ে ফেলল। ((১৪ দিন নাকি বন্ধ ছিল।)) কান্নাকাটি শুরু করে দিল। অনেক লোক মারা গিয়েছিল। আর ওরা চুরি করে করে, আমাদের এখান থেকে অনেক নৌকা নিয়ে, ওদের লিডাররা -- ওধার লঞ্চ, এধার লঞ্চ, তার ফাঁক দিয়ে কিছু কিছু নিয়ে যেত। ওদের পুরুষরা হাসনাবাদের দিকে খাটতে যেত, শুনতাম ওদের ওদিকে ধরে ধরে আটকে রাখা হচ্ছে। পুলিশ এপার থেকে ওপারে যেয়ে তখন ক্যাম্প করল। তখন ওই ওপারে ওরা প্যারেড করত, আমরা ওপারে যেয়ে দেখতাম, ইস্কুলধারে, -- তখন ওরা ওখানে থাকত।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.241.73 Date:08 Feb 2012 -- 03:37 AM
(ওই অবস্থায়, পুলিশ থাকাকালীন, কংগ্রেসের নেতারা একদিন একটা মিটিং করল। আমরা সেই মিটিং-এ গিয়েছিলাম। কাশীকান্ত মৈত্র এসেছিল। মিটিং-এ মেন বক্তব্যটা হল, তোমাদের সুন্দরবনে মরিচঝাঁপিতে থাকা হবে না, তোমাদের পুনরায় সেই পুনর্বাসনের জায়গায় যেতে হবে। দণ্ডকে ফিরে যেতে হবে, পুনর্বাসন আবার দেওয়া হবে। কাশীকান্ত মৈত্র, হরিপদ ভারতী, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী এরা বলল। ওরা লঞ্চ করে আসল। বলে ওরা স্টেজ ছাড়তে পারল না, দেখি আমাদের রঙ্গলাল গোলদার কি গালাগালি দিচ্ছে তখন সেখানে দাঁড়িয়ে -- ওদের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই। মরিচঝাঁপির বড়বাজারে মিটিংটা হয়েছিল। আমরা একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে। ওরা মিটিং করে চলে যাবার বেশ কিছুদিন পরে ওই কার্ফু জারি চলত। কার্ফু জারি চলতে চলতে হঠাৎ পারাপার বন্ধ, খাওয়া দাওয়া বন্ধ, চুরি চামারি করে পার করে। আর কিছু নেতারা চুরি করে পার করে, কিছু ব্যবস্থা করতে পারে না। ওদিকে লোক আটকে দিচ্ছে, হঠাৎ একদিন পুলিশ অনেকগুলো লঞ্চ এসে ওদের ঘরে ঘরে যত বেটাছেলে ছিল, তুলে নিয়ে গেল। অত্যাচার কি হয়েছিল আমরা এপার থেকে খুব একটা বলতে পারব না। রাত্রে এসে তুলে নিল। তারপর বিশ-পঞ্চাশটা লঞ্চ এসে গেল। আমাদের এপার থেকে অনেক লোক নিল, বলল লঞ্চে সবার ফ্যামিলি তুলে দিতে হবে। ওদের বলল সবাই লঞ্চে উঠতে হবে। এবার সব কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেল। আমরা এপার থেকে গেলাম, ওদের দু:খ দেখে আমরা কিছু হাত দেইনি, আমরা পরে পার হয়ে চলে আসলাম। বললাম দরকার নেই এদের গায়ে হাত দেবার।)
[ আপনারা কি পুলিশের সঙ্গে গিয়েছিলেন? ]
(হ্যাঁ, পুলিশের সঙ্গে। পুলিশরা আমাদের নিয়ে গিয়েছিল লেবার হিসাবে।)
[ পয়সা দিত? ]
(একদিনই আমরা গিয়েছিলাম, গিয়ে চলে এসেছিলাম, ওদের কান্নাকাটি দেখে -- ব্যাটাছেলে বাড়ির সবাইকে তো নিয়ে গেছে --)
[ আপনাদের কি করতে বলেছিল? ]
(আমাদের ওদের বেডিংপত্রগুলো সব লঞ্চে তুলে দিতে হবে। ঘর ভেঙ্গে দিতে হবে। তো, আমরা এখান থেকে বেশ কিছু ছেলে গিয়েছিলাম।)
[ তার জন্য কত করে দেবে বলেছিল? ]
(আশি টাকা করে না কত করে ... আমরা নিইনি। একদিন গিয়েই আবার সঙ্গে সঙ্গে পেরিয়ে চলে এসেছিলাম। বলি আমরা এ কাজ করতে পারব না। ধুস্, ওই কান্নাকাটা ... )
(চলবে)
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.200.55 Date:12 Feb 2012 -- 02:41 AM
[ মেনি মুণ্ডা যেদিন মারা গেল, সেদিন কি আরও অনেক লোক মারা গিয়েছিল? ]
(হ্যাঁ, ওদিন আমাদের এদিককার ছেলে চার-পাঁচ জন, আমাদের নতুন বাড়ি করেছে, ওখানে ছিলাম, পাঁচ-সাতজন। চারদিকে তো সব পুলিশ। কাঁদুনে গ্যাস ছেড়েছে এত, যে ভয় ধরে গেছে। ওদের বাড়ির কাছটায়, সর্দারপাড়ায়। ওদের পাঁচ-সাতখান বাড়ি এপাশে আমরা রয়েছি সব। আমরা আটকে গেছি। এদিকে আসতে পারছি না। এদিকে পুলিশ, ওদিকেও পুলিশ। বাবুরাম মণ্ডলের বাড়িতে আটকে ছিলাম। তখন ধান-টান কাটা হয়ে গিয়েছিল। তখন এত বাড়ি ছিল না, লোকেদের ঠ্যাং ধরে ধরে লঞ্চে তুলছে, আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। ছগল-গরু যেমন টেনে নিয়ে যায়, সেরকম। গুলি-টুলি চালানো শেষ তখন। আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। যত টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়া, আর তত আওয়াজ। তারপর যখন গ্যাস কমে গেল, আমরা রাস্তাতে বেরোলাম, পেছন দিকে দেখি যে পুলিশ, আর টেনে টেনে তুলছে লঞ্চে।)
[ কাদেরকে টেনে তুলছে? ]
(কাদের বলতে পারব না, ওদের বাড়ির সামনে, রবি মণ্ডলের বাড়ির কাছটায় চরে এনে ফেলছে। কত লোক সে আমরা দেখতে যাইনি, চারদিকে পুলিশ। আবার দেখছি রাস্তার থেকে ফাঁক ধরে লোক টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।)
(বীরেন) যখন গুলি লেগেছে, তখন আমি এই জায়গাটায় ছিলাম। লাইন ধরে যাচ্ছে লোকে, হাত জোড় করছে যে মারবেন না। ওপারেরই লোক হবে।
(আরেকটা ঘটনা বাদ গেল। যেদিনটা ওরা সহ্য করতে না পেরে তখন ওরা নৌকোয় নৌকোয় করে, একেকটা নৌকোয় দশ-বিশজন করে, আর লাঠির চ্যাঙ্গা নিয়ে, ওরা জোর করে আসা শুরু করে দিল, যে আমরা আর সহ্য করতে পারছি না, আমরা এপারে আসব। চ্যাঙ্গা হল গরানকাঠের লাঠি, দুদিকটা হুল করা। সেই চ্যাঙ্গা লঞ্চের দিকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারতে আরম্ভ করে দিল। লঞ্চ গিয়ে নৌকোর মাঝে ধাক্কা দিয়ে নৌকা সব ডুবিয়ে দিতে আরম্ভ করল। ওই করতে করতে ওরা এপারে যখন চলে এসতেছে,-- আর পুলিশ ক্যাম্প তো চারদিকে রয়েছে, ওরা চারদিক থেকে ফোর্স এনে, এই মারামারি শুরু হল।)
[ সরকারি হিসাব বলছে দুজন মারা গিয়েছিল ... ]
(দুজন না। শরণার্থী তো বহু ছিল, তো শরণার্থীদের দেখে দেখে গুলি। তারপর বডি লঞ্চে করে নিয়ে বড় নদিতে ইঁট-টিট বেঁধে ফেলে দেওয়া হয়েছে শুনেছিলাম, অত বলতে পারব না। নিতাইদার বাড়ির পাশেই, ও ভাল বলতে পারবে।)
(চলবে)
Name: aranya Mail: Country: us
IP Address : 68.38.243.161 Date:12 Feb 2012 -- 11:35 AM
আনন্দমার্গীরা সাহায্য করেছে, বাইরে থেকে সাহায্য এসেছে - বুঝলাম। শরণার্থী-দের মূল অপরাধ জঙ্গল ধংস করা (গাছ কাটা) - এটাও বুঝলাম। কিন্তু তার জন্য এত বড় পুলিশ অ্যাকশন !!
নন্দীগ্রামে যেমন সিপিএম সমর্থকদের গ্রাম ছাড়া করা হয়েছিল, তারা বহুদিন গ্রামে ঢুকতে পারছিল না - সরকারের ওপর প্রেসার ছিল।
এখানে তো শরণার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের কোন ঝামেলা ছিল না। একটা ফাঁকা দ্বীপ দখল করা, গাছ কাটা - তার জন্য সেই প্রথম দিকের বামপন্থী সরকার (যারা অনেক বেশী প্রো-পিপল) এমন দমনমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে - কোথাও একটা ডিসকানেক্ট রয়েছে।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.246.76 Date:13 Feb 2012 -- 03:02 AM
অনেক প্রশ্ন ... অনেক প্রশ্ন ...
কিম্বা
কোনো প্রশ্ন নয়, কোনো প্রশ্ন নয়
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.246.76 Date:13 Feb 2012 -- 03:25 AM
[ এর পর নিতাই মুণ্ডা কি বলেছিলেন সে তো আগেই লিখে দিয়েছি। টানা কথোপকথনে এবার তার পরে চলে যাই। সেখানে আবার কথা শুরু করছেন বীরেনবাবু।]
সতীশবাবু কি আছে? কবে মারা গেল? আর বাড়ই? আমার বন্ধু মারা গেল কবে?
শেষ দিন ওরা ছিল, গোপনে ছিল। ওদের হেলিকপ্টারে নিয়ে গেল। হেলিকপ্টার ওই মাঠটায় নেমেছিল। পাঁচজন লোককে তাতে নিয়ে গেল। পুলিন মণ্ডলের জমির ওপর নেমেছিল। পুলিন মণ্ডলের বাড়ির পাশেই। যেদিন আগুন-টাগুন জ্বলল, ওই দিন রাতে। স্বচক্ষে দেখেছি। রাইহরণ, সতীশ মণ্ডল, গোলদার, মেঘনাদ, নির্মল দে। [খানিক পরে সেহ্শ দুটো নাম বললেন নির্মল মণ্ডল, মেঘনাদ শীল। ]
ওদের মধ্যে ভীষণ ব্রেইনি লোক ছিল। ইস্কুল যখন করে, মাস্টারি করার জন্য আমাকে ডেকেছিল। কয়েকদিন একটু ক্লাস-টাস করে দিয়ে আসতুম। একদম টেন পর্যন্ত। ছাত্র-ছাত্রী ভাল ছিল। পড়াশোনা করত তারা ...
কুমীরমারির বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে ওই কয়েকজনের সঙ্গে কথা এইটুকুই ধরা আছে আমার কাছে।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 59.93.246.76 Date:13 Feb 2012 -- 03:39 AM
এ বছর এই পর্যন্ত।
Name: aranya Mail: Country: us
IP Address : 68.38.243.161 Date:13 Feb 2012 -- 04:04 AM
হেলিকপ্টার নিয়ে আবার কে এল - পুলিশ না আনন্দমার্গী - পুলিশই হবে বোধ হয়।
অচিন্ত্য, প্রশ্নের উত্তর না দিতে চাও, দিও না। কিন্তু এ বছর তো সবে শুরু। এখনই লেখা শেষ কেন ?
Name: pi Mail: Country:
IP Address : 72.83.80.169 Date:13 Feb 2012 -- 04:06 AM
কিন্তু আই বি আনন্দমার্গীদের ব্যাপারটা চেপে গেল কেন ?
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 119.226.79.139 Date:13 Feb 2012 -- 12:54 PM
মরিচঝাঁপি ও বিজন সেতুতে আনন্দমার্গী হত্যা নিয়ে দুটো ফিল্ম দেখলাম। উৎসাহীরা যোগাযোগ করতে পারেন।
তুষার ভট্টাচার্য্য ৯৪৩৩১৯০১০৫।
Name: PT Mail: Country:
IP Address : 203.110.246.230 Date:13 Feb 2012 -- 01:33 PM
এখন তো বামেরা ক্ষমতায় নেই - তাহলে এখন আর ""কোন প্রশ্ন নয়"" কেন?
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 141.0.9.173 Date:13 Feb 2012 -- 02:29 PM
এখন তো বামেরা ক্ষমতায় নেই, তাহলে মরিচঝাপি নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে না কেন?
Name: demba ba Mail: Country:
IP Address : 121.241.218.132 Date:13 Feb 2012 -- 02:31 PM
কোনোকালে হবেও না। আমার ধারণা কেঁচো খুঁড়তে গেলে এমন অনেক সাপ বেরোবে যাতে সকলেই অস্বস্তিতে পড়বে - একদম ওপরতলা থেকে।
Name: demba ba Mail: Country:
IP Address : 121.241.218.132 Date:13 Feb 2012 -- 02:31 PM
মানে অফিসিয়ালি খুঁড়তে কেউই চাইবে না। আফনে খুঁড়ে চলেন, সঙ্গে আছি।
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 119.226.79.139 Date:13 Feb 2012 -- 04:10 PM
মরিচঝাঁপি নিয়ে তদন্ত হবে না - কারন অমিয় সামন্ত। বাম জামানায় জ্যোতিবাবুর কাছের পুলিশ কর্তা। এখন তৃণমূলের সাংসদ।
বিজনসেতু আনন্দমার্গী হত্যার তদন্ত হবে না - কারন মিচকে বাবলু। বাম জামানায় শচিন সেনের ডানহাত। এখন তৃণমূলের কসবা এলাকার কর্মী।
এরা দুজনেই দুই ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের অন্যতম।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 115.111.248.6 Date:13 Feb 2012 -- 06:08 PM
অমিয় সামন্ত কিন্তু সাংসদ নন। বিধায়কও নন।
Name: Update Mail: Country:
IP Address : 117.194.33.53 Date:13 Feb 2012 -- 11:10 PM
Name: PT Mail: Country:
IP Address : 203.110.246.230 Date:13 Feb 2012 -- 06:08 PM
উত্তরটা কি এত সহজ? অমিয় সামন্ত আর মিচকে বাবলুকে জেলে পুরলে মমতার মহিমা আর বামেদের অস্বস্তি বাড়বে বই কমবে না। নাকি দুটো ঘটনার পিছনেই কেন্দ্রের তত্কালীন ক্ষমতাশীল দল আর রাজ্যের বিরোধী দলগুলোর পরোক্ষ সমর্থন ছিল? মরিচঝাঁপি থেকে উদ্বাস্তুও গেল, আনন্দমার্গীদের পাকাপাকিভাবে দাবানো হল আর বদনাম হলে কমুনিস্টদের হবে। সেটা পরে কাজেও লাগানো যাবে যেমন কিনা এখন হচ্ছে!
তবে অরণ্য যে disconnect -এর ( 12 Feb 2012 -- 11:35 AM ) কথা লিখেছে-সেটার আমারও বরাবর মনে হয়েছে - তার ব্যাখ্যা খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না। মৃতের সংখ্যাটাই তো প্রতিষ্ঠিত হল না। যাদের আত্মীয় মারা গিয়েছে বা নিরুদ্দেশ, তাদের একটা সঠিক তালিকা তৈরি করতে অসুবিধে কোথায়?
Name: demba ba Mail: Country:
IP Address : 121.241.218.132 Date:13 Feb 2012 -- 06:11 PM
এইটাই লিখতে গেছিলাম : -)
Name: kallol Mail: Country:
IP Address : 119.226.79.139 Date:14 Feb 2012 -- 11:03 AM
অমিয় সামন্ত নিয়ে আমি ভুল জানতাম।
এই লোকটি নন্দীগ্রামে তৃণমূলের সমর্থনে সভা করতে গেছিলো অন্যান্য বুদ্ধিজিবীদের সাথে। অন্যরা আপত্তি করেন মরিচঝাঁপির কারন দেখিয়ে। তখন অমিয় সামন্ত সেখান থেকে চলে আসেন।
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 141.0.9.149 Date:14 Feb 2012 -- 03:38 PM
ঠিক
Name: PT Mail: Country:
IP Address : 203.110.247.221 Date:14 Feb 2012 -- 05:30 PM
কিন্তু মৃতের সংখ্যাটা? যাদের আত্মীয় মারা গিয়েছে তাদের ধরে ধরে তো নামের একটা তালিকা তৈরি করা যায়। এই সংখ্যাটা তো ২ থেকে ২০০ যার যেমন খুশী বলে যাচ্ছে। কে একজন নাকি ১৭,০০০ বলেও দাবি করেছে।
নন্দীগ্রামের ঘটনার দিন বা কয়েকদিনের মধ্যে কবীর সুমন তারা নিউজের একটি লাইভ অনুষ্ঠানে জানাচ্ছিলেন যে নন্দীগ্রামে অনেক শিশুদের মেরে, মাটিতে পুঁতে রোড রোলার চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এমনকি স্থানীয় এক সংখ্যালঘু মানুষের মোবাইল নাম্বারও জানিয়েছিলেন যাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা সরাসরি খবর নিতে পারে। কিছুদিন বাদে অপর্ণা সেন (যতদুর মনে পড়ছে) টিভিতে জানান যে নন্দীগ্রামে অসংখ্য মায়েদের স্তনবৃন্ত কেটে দেওয়া হয়েছে। বছর তিরিশ বাদে এই রেকর্ডেড বক্তব্যর ভিত্তিতে কেউ কোন ডকু তৈরি করলে সেটা ইতিহাসের পক্ষে মোটেই ভাল হবে না।
Name: PT Mail: Country:
IP Address : 203.110.247.221 Date:14 Feb 2012 -- 06:06 PM
কল্লোল কি মরিচঝাঁপি নিয়ে তুষার ভট্টাচার্যের এই তথ্যচিত্রটির কথা বলছেন?
Name: achintyarup Mail: Country:
IP Address : 115.111.248.6 Date:14 Feb 2012 -- 06:14 PM
কয়েক পোস্ট আগে কল্লোলদা তুষার ভট্টাচার্যের কথা লিখেছেন। তুষারবাবুর কাছে আমি বিশেষভাবে ঋণী, সে কথা স্বীকার করতে হবে। আমি যখন খবরের কাগজের জন্য এই নিবন্ধ লেখার পরিকল্পনা করছি, সে সময় আমার পূর্বপরিচিতা ফরাসিনী বিদুষী অনু জালেই আমাকে তুষারবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। পরবর্তীকালে অনেক সাহায্য পেয়েছি ওঁর কাছে। ওঁর বানানো ফিল্মের সিডি দিয়েছেন, বেশ কিছু পুরোনো ছবি যোগাড় করে দিয়েছেন, যার থেকে কিছু আমি খবরের কাগজে ব্যবহার করেছি। এই সুতোতেও ওঁর ছবি থেকে কারও বক্তব্যের উদ্ধৃতি নিয়ে ব্যবহার করেছি। তবে ঘটনাটিকে উনি যে ভাবে দেখেছেন, আমি হয়ত ঠিক সে ভাবে দেখিনি।
Name: pi
IP Address : 118.12.169.134 (*) Date:24 Jul 2013 -- 01:54 AM
মরিচঝাঁপি নিয়ে কিছু আলোচনা ঃ
https://www.facebook.com/groups/guruchandali/624126170938666/?notif_t=
group_comment_reply
Name: achintyarup
IP Address : 24.97.251.186 (*) Date:11 Nov 2013 -- 11:52 PM
দণ্ডকারণ্য থেকে উদ্বাস্তুদের মরিচঝাঁপিতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে অ্যাক্টিভ এবং ইম্পর্ট্যান্ট ভূমিকা নিয়েছিলেন মানা ক্যাম্পের সতীশ মণ্ডল। মরিচঝাঁপি থেকে যারা ফিরে এসেছেন, তাঁদের বেশিরভাগকেই দেখেছি নানা ঝুপড়িতে, কিম্বা রেললাইনের পাশে খুপরি-মতো ঘরে। সতীশবাবু পুলিশের হাতে ধরা পড়েননি, ফিরে গিয়েছিলেন মানায়। আজ সেখানে গিয়ে তাঁর বাড়িটা দেখে এলাম। তার ছবি দিলাম এখানে।
http://postimg.org/image/5a5420zsh/
Name: siki
IP Address : 132.177.208.183 (*) Date:11 Nov 2013 -- 11:57 PM
http://s24.postimg.org/mao0apctx/DSC_0412.jpg
Name: achintyarup
IP Address : 24.97.251.186 (*) Date:11 Nov 2013 -- 11:58 PM
থ্যাঙ্কু
Name: PT
IP Address : 213.110.247.221 (*) Date:12 Nov 2013 -- 09:32 AM
"এই সময়ের" একটা খবর আমাকে বিস্মিত করেছে। খবরটি বোধহয় ছবিটির পরিপুরক।
প্রথম অংশ
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=7567&boxid=31926921
দ্বিতীয় অংশ
http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=7562&boxid=4343546
"মানা ক্যাম্পের এক নেতা সবাইকে উসকালো সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য। আমাদের এই ক্যাম্পে তাকে ঢুকতে দিইনি। মরিচঝাঁপিতে না যাওয়ার জন্য অনশনে বসেছি এইখানে।...... অজয় বলে একটা ছেলে ছিল মানা ক্যাম্পে, সে প্রতিবাদ করেছিল সে দিন। মানুষকে বারণ করেছিল সুন্দরবনে যেতে। নেতারা তাকে ঘরে বন্ধ করে পিটিয়ে মেরে দিল একদিন।"
এত এত "ড্কু" বানানো হয়েছে, এই টইতে সেগুলো তুলেও দেওয়া হয়েছে- এসব কথা তো শুনিনি কখনো! অচিন্ত্যরূপ আলোকপাত করতে পারেন?
Name: দ
IP Address : 24.97.236.252 (*) Date:12 Nov 2013 -- 10:03 AM
হুঁ এটা তো আর কোথাও পাই নি। এই প্রথম শুনছি যে মরিচঝাঁপি না আসার জন্যও কেউ কখনও আন্দোলন করেছিল!!
অচিন্ব্ত্য, আরেট্টু বিস্তারিত প্লীজ।
Name: দ
IP Address : 24.97.236.252 (*) Date:12 Nov 2013 -- 10:04 AM
*অচিন্ত্য
Name: achintyarup
IP Address : 116.196.14.93 (*) Date:12 Nov 2013 -- 10:25 AM
এই সময়ের খবরটা আমারই লেখা। কথাগুলো কে কোথায় বলেছেন, তা লিখেছি। যতটুকু শুনেছি, ততটুকুই লেখা হয়েছে।
মরিচঝাঁপি দ্বীপে জীবন যখন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছিল, সেখান থেকে কেউ পালানোর চেষ্টা করলেও তাঁদের বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। এই টইতেই সে কথা লিখেছি আমি। এই অভিযোগও এত এত ডকুমেন্টারির কোনওটিতে ওঠেনি।
https://www.facebook.com/100022428602582/posts/752588365498777/
The discussion is still relevant and continues to haunt . One missing points of the discussion is the government version , which stated by Mr. Samant the-then SP and his recounting and also the statement of Asoke Mitra, FM who was then looking after Home and administartion in the absence of jyoti Basu from Kolkata on these days of firing . An analysis of their versions could have made the article more balanced . Thanks Achintya
From a Hostel dada