কার্যকারণ সম্বন্ধঃ বৌদ্ধদর্শনে এর নাম পতীচ্চসমুৎপাদ।
মূল কথাঃ কারণ ছাড়া কোন কার্য হয় না। কোনকিছু উৎপন্ন হয় না। অর্থাৎ স্বয়ম্ভূ বলে কিছু নেই। ঈশ্বরের লীলায় ( একোহম্ বহুস্যাম্ --এক ছিলাম, অনেক হতে চাই) সৃষ্টি হয় না।
যতক্ষণ কারণ বর্তমান থাকে ততক্ষণ যা উৎপন্ন (ভব) হয়েছে তাও অস্তিত্ববান থাকবে। 'কারণ' দূর হলেই কার্য বা যা উৎপন্ন হয়েছে তার নাশ হবে।
খেয়াল করুন , চার আর্যসত্য (দূঃখের কারণ, দূর করার উপায় ইত্যাদি) এই কজালিটির লজিক্যাল করোলারি।
আবার দেখুন ক্ষণিকবাদঃ আমরা যা দেখছি সব কিছুর অস্তিত্ব ক্ষণিক, সদা পরিবর্তনশীল, in eternal flux। তাই এক নদীতে দু'বার স্নান করা যায় না। আগের জল তো সরে গেছে। (ভিক্ষু নাগসেন এবং রাজা মিনান্দারের ডায়লগ)।
যা উৎপন্ন হয়েছে তা কারণ অনু্যায়ী বর্ধিত হবে এবং তারপর ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। কোন কিছুই অবিনাশী নয়।
আবার দেখুন দর্শনের দ্বান্দ্বিকতাঃ
যে কোন বস্তু একই সঙ্গে এক অর্থে 'হ্যাঁ' এবং অন্য অর্থে 'না" হতে পারে। তাই রাজা মিনান্দার আগের শিশু মিনান্দারের থেকে আজ আলাদা, কিন্তু বিশেষ অর্থে একজনই। (অরিনের উদ্ধৃতি)।
ডিসক্লেমারঃ
মহাযানের নাগার্জুনের শূন্যবাদ অনেকটা শংকরাচার্যের অদ্বৈত বেদান্তের সঙ্গে মেলে। বরং বলা উচিত শংকর তাঁর জগত মিথ্যা প্রমাণের যুক্তিগুলো নাগার্জুনের থেকে ধার করেছেন। নাগার্জুন কয়েক শতাব্দী আগের।
দুজনের মতেই ব্রহ্মাণ্ড বলে কিছু নেই, সৃষ্ট হয় না--ওটা অবিদ্যা জনিত ভ্রান্তির ফল।
তাই শংকর এবং তাঁর গুরু গৌড়পাদকে "প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ" আক্ষেপ শুনতে হয়েছে--তিনি ঋণ স্বীকার না করলেও। বিশেষ করে "অবিদ্যা" ধারণাটি নাগার্জুনের থেকে নেয়া।
আবার বিজ্ঞানবাদী (এখানে বিজ্ঞান বিশুদ্ধ চেতনা অর্থে প্রযুক্ত) দুইভাই , আচার্য অসঙ্গ এবং বসুবন্ধু, শুদ্ধ চেতনার খোঁজে প্রায় ঔপনিষদিক চেতনার কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। অথচ ক্ষণিকবাদ, অনাত্মবাদ এবং ঈশ্বরে অনাস্থায় অন্যদের মতই দৃঢ়।
এখানে একটা মজার কথা বলি।
অদ্বৈত বেদান্ত বাস্তব নশ্বর দুনিয়ার অস্তিত্বহীনতা বোঝাতে গিয়ে বলে যে স্বপ্ন ও জাগ্রত স্থিতির মধ্যে কী করে ফারাক করা যায়? তুমি কী করে নিশ্চিত যে জেগে আছ না স্বপ্ন দেখছ? কারণ, স্বপ্নে সবরকম জেগে থাকার মতই অনুভূতি হয়, এমনকি স্বপ্নদোষের মাধ্যমে স্বাভাবিকের মতই যৌন পরিতৃপ্তি হয়।
অনেক স্কুল অন্যভাবে কাউন্টার করেছেন। যেমন, স্বপ্নে তেষ্টা পেলে গেলাস গেলাস জল খেলেও তৃষ্ণা মেটে না, জাগ্রত অবস্থায় খেলে মেটে।
কিন্তু বসুবন্ধু এক ডিগ্রি এগিয়ে কাউন্টার করছেনঃ স্বপ্নে যৌনপরিতৃপ্তিতে সন্তান লাভ হয় না, যা কেবল জাগ্রত অবস্থায় হতে পারে।
টেলপীসঃ
১ আচার্য ধর্মকীর্তির "প্রমাণবার্তিক" গ্রন্থটি ভারতে হারিয়ে গেছল। রাহুল সাংকৃত্যায়ন তিব্বতের মঠ থেকে প্রাণসংশয় করে এক কপি উদ্ধার করে আনেন।
তখন সেন্ট পিটাসবুর্গের বিখ্যাত ভারততত্ববিদ শেরবাটস্কি বলেন যে এটা এতবড় ঘটনা যে এটাকে সেলিব্রেট করতে বিশ্ব সম্মেলন ডাকা উচিত।
২ বইটির ইংরেজি তর্জমা ইন্টারনেট আর্কাইভ থেকে ডাউনলোড করা যায়। ভাল হবে যদি আগে নেট থেকে স্ট্যানফোর্ডের ফিলজফির এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে যদি বইটির সারসংক্ষেপ পড়ে নেয়া যায়।
অনেক বকবক করেছি। এবার তিনদিন চুপ। নইলে বুদ্ধির ফাঁক বেরিয়ে পড়বে।