এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৫ জুলাই ২০২২ | ৫৪১০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    বড় সংকটে পড়িয়াছি। আমি জানিতাম বাঙালী ঘোর কালীভক্ত। রঙ্গে ভরা বঙ্গ দেশে আমরা সাধক রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত এবং অনেকের বিরচিত কালীকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনিয়া আশৈশব লালিত হই। কলিকাতায় এবং তার উপকণ্ঠে ঐতিহ্যশালী মন্দির বলিতে কালীঘাটের কালী মন্দির, বঊবাজারের ফিরিঙ্গি কালী, ঠনঠনিয়ার কালীবাড়ি এবং দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির। কোনটি ৫০০ বছরের অধিক প্রাচীন, কোনটির বয়স ৩০০ বছর।

    বাঙালী প্রাচীন কালে ডাকাইতি করিতে, বর্তমান কালে নির্বাচনের অথবা ফুটবলের ময়দানে নামিতে আগে কালীমাতার প্রসাদী ফুল মাথায় ঠেকায়। বাঙালী কম্যুনিস্ট নেতা কংকালীতলার শ্মশানে পূজা দিয়া সগর্বে ঘোষণা করেন যে তিনি একাধারে বাঙালী,  কালীভক্ত এবং কম্যুনিস্ট। স্বাধীনতার সংগ্রামেও বাঙালী কালীমাতার দানবদলনী রূপ দেখিয়া প্রেরণা পায়। চারণকবি মুকুন্দদাস গাহিয়াছেনঃ

    “দানবদলনী হয়ে উন্মাদিনী, আর কি দানব রাখিবে বঙ্গে?
    সাজ রে সন্তান হিন্দু-মুসলমান,  থাকে থাকুক প্রাণ,
    যায় যাবে রঙ্গে”।

    ইহার পর ঠাকুর রামকৃষ্ণ আসিয়া মা কালীর সহিত কথা কহিতে লাগিলেন। তিনি সর্বত্র নারীর মধ্যে মা কালীর দরশন করিলেন। এমনকি চিৎপুরের পথে সন্ধ্যায় শান্তিপুরী শাড়ি পরা মাথার খোঁপায় জুঁই ফুলের মালা শোভিতা পুরুষের মন ভুলাইতে ব্যস্ত নারীকে নমস্কার করিয়া সারদা মায়ের সঙ্গে পরিচয় করাইলেন – ‘তোমার দখিণেশ্বরের শাশুড়ি’ বলিয়া। [1]

    কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নবদ্বীপের রাস্তায় দেয়ালে ঘুঁটে  দেয়ার সময় ঘোমটা খসিয়া পড়া নারীর লজ্জায় জিভ কাটিতে দেখিয়া সেই স্থানে ঐরূপ কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। [2]

    খর্বদেহ পাদুকা পরিহিত কৃশকায় বাঙালী আসলে শক্তি এবং তন্ত্রের সাধক। তাহার দেবী বিশালাক্ষী, নৃমুণ্ডমালিনী, লোলজিহ্বা, এক হস্তে খর্পর, অপর হস্তে ছিন্নমস্তক। তাঁহার ‘নিপতিত পতি শবরূপে পায়। নিগমে তাহার নিগুঢ় না পায়’।

    জনৈকা আফ্রিকান আমেরিকান অধ্যাপিকা কলিকাতায় কালীমূর্তি দর্শনে উল্লসিত হইয়া খল খল হাসিয়াছিলেন। কারণ ইতিপূর্বে তিনি  শায়িত শ্বেতাঙ্গ পুরুষের বুকের উপর পদস্থাপন করিয়া দণ্ডায়মান ঘোর কৃষ্ণবর্ণা দেবীমূর্তি দেখেন নাই। [3]

    কিন্তু ইদানীং জনৈকা রাজনৈতিক বামা হররমার কালীমূর্তি বিষয়ক মন্তব্যে শুরু হইয়াছে তর্জা ঃ ধূম মচালে! ধূম মচালে!

    আসুন, কিঞ্চিৎ তলাইয়া দেখা যাক – শ্মশানবাসিনী দেবী কালিকার পুজায় আমিষ ও কারণবারির নৈবেদ্য কতদূর ঐতিহ্য সম্মত।

    “মজলো আমার মনভ্রমরা কালীপদ হৃদকমলে”

    বাঙালী বরাবরই কালীতে মজেছে। সারা ভারতের যেখানেই বাঙালীর পা’ পড়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে একটি কালী মন্দির, সঙ্গে একটি অতিথিশালা, বাংলা বইয়ের লাইব্রেরি ও ছোটখাট থিয়েটারের স্টেজ। এই হচ্ছে বাঙালীর পরিচয়।

    আমি নিজে কয়েক দশক আগে দিল্লির সবচেয়ে পুরনো কালীবাড়িতে টিকিট কেটে তিনদিন ছিলাম। পনের টাকায় তক্তপোষ, বিছানা, সকালের চা, জলখাবার ও দুবেলা ভাত ডাল মাছের ঝোল। ভাবা যায় !

    হ্যাঁ, কালীবাড়িতে মাছমাংস হয়, সে আপনি যতই নাক সিঁটকান গে’। বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে পড়েছি পাঁচবছর। সেখানেও দু’বেলা আমিষ আহার।

    আর এইখানেই শুরু হয়েছে যত ঝামেলা! জনৈক বামা রাজনীতিবিদ এবং সাংসদ কালীমাতার  আহারের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করায় শুরু হয়েছেঃ  হারে রে রে রে রে! কালীমাতার আমিষ ভোজন! এসব বলিস কী রে!

    গণ্ডগোলের মূলে হল  দুটো পুজোকে — কালীপুজো আর মহালক্ষ্মী পুজো - ইচ্ছে করে গুলিয়ে ফেলার রাজনীতি।

    বাঙালীর কালীপুজো বনাম উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো

    নিঃসন্দেহে দুটো পুজোই দীপাবলীর রাতে হয়। কিন্তু হিন্দি বলয়ের দেবীর নাম মহালক্ষ্মী, তিনি আমাদের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দেবীর মত ধনদাত্রী।  

    তিনি আমাদের মা কালীর মত লোলজিহ্বা করালবদনী নন। তাঁর গলায় নরমুণ্ডের মালা ঝোলে না, তিনি নগ্নিকা নন। তাঁর হাতে রক্তমাখা খাঁড়া, থুড়ি খর্পর,  থাকে না। পাশে  ডাকিনী যোগিনী, শেয়াল কিছুই নেই। তিনি আদৌ শ্মশানচারিণী নন, তাঁর প্রতিমার ধারে কাছে কোন যুদ্ধ বা রক্তারক্তি ব্যাপার নেই। তাঁর আবাস মানুষের গৃহে, সিন্দুকের পাশে।

    উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো করে দোকানদারেরা হালখাতা করে। অর্থাৎ ওদের গত বছরের দেনাপাওনার হিসেব নিকেশ করে সেই খাতা বন্ধ করে লালশালুতে মোড়া নতুন খাতায় লিখে দেবীর পায়ে ছোঁয়ায়। কিন্তু বাঙালীর হালখাতা যে পয়লা বৈশাখে, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, দুটোকে গুলিয়ে ফেললে খর্চা আছে।

    কাজেই হিন্দি বলয়ে দেওয়ালির সময় নিরিমিষ খেতে হয়। আর আপনি যদি ইউটিউব বা ফেসবুক থেকে পুজোর বিধি নিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে চান তাহলে দেখবেন বলা হচ্ছে --

    কালীপুজোর সময় বাড়ির রান্নায় রসুন চলবে না। মাছ-মাংস দূর কী বাত! পাড়ায় ওসবের দোকান বন্ধ রাখতে হবে।

    আর একই বিধান দুর্গাপুজোর সময়েও, নবরাত্রির পুরো ন’দিন ধরে।

    আহা রে! বাঙালী অষ্টমীর দিন নবমীর দিন মাছ, কষা মাংস খাবে না, দশমীর দিন জোড়া ইলিশের দিকে তাকাবে না — এমন অলুক্ষুণে কথা কে কবে শুনেছে! আর সারাবছর কালীঘাটে মায়ের কাছে বলিপ্রদত্ত পশুর মাংস যে আমাদের মহাপ্রসাদ — এসব ভুলে যেতে হবে?

    মন ভাল করতে এবার একটি রামপ্রসাদী শুনুন। এই গানটি ঠাকুর রামকৃষ্ণেরও বড় পছন্দ।

    ‘এবার কালী তোমায় খাব।
    ডাকিনী যোগিনী দুটা, তরকারি বানায়ে খাব,
    তোমার মুণ্ডমালা কেড়ে নিয়ে অম্বলে সম্ভার চড়াব’।

    দেবী কালীর উৎপত্তি ও কালী মন্দির নিয়ে দুটি কথা

    দেবী কালী বৈদিক দেবী নন। বস্তুতঃ ঋগবেদে ইন্দ্র এবং অগ্নি হলেন প্রধান দেবতা। প্রায় ১০০০ শ্লোকের ৭০০ শ্লোকই এদের দুজনের মহিমা নিয়ে। বেদ পুরুষ প্রধান। দেবী বলতে উষা ও সরস্বতীকে নিয়ে দু’টি বা তিনটি শ্লোক।  আজকাল একটা কথা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যে ঋগবেদের দশম মণ্ডলের ১২৫ তম সূক্তের (৮টি শ্লোক) মধ্যে কালীর উল্লেখ রয়েছে। কথাটি সর্বৈব ভুল। যে কেউ বেদের বই খুলে মিলিয়ে নিতে পারেন — ওই আটটি অনুবাকে দুর্গা বা কালীর কোন উল্লেখ নেই।

    কালীর উৎপত্তি পাওয়া যাবে তন্ত্রে এবং পুরাণকথায়। কালী হলেন দুর্গারই আরেক এবং প্রধান রূপ। দেবীভাগবতে বা আমাদের চণ্ডীপাঠে জানা যাচ্ছে যে শুম্ভ-নিশুম্ভ এবং রক্তবীজের বধের জন্যে দেবী দুর্গার ক্রোধ উৎপন্ন হলে তাঁর ভ্রূকুটি থেকে ভীষণদর্শনা ভীমা কালীর উৎপত্তি।  যাতে রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়ে নতুন অসুর না জন্মায় তাই কালী এবং তাঁর দুই সহচরী ও সঙ্গের শৃগাল রক্ত পান করে নেয়।

    আবার পার্বতী বা সতী যখন নেমতন্ন না পাওয়া স্বামী শিবকে তাঁর শ্বশুরের যজ্ঞে জোর করে যাওয়া থেকে আটকাতে চাইলেন তখন  তিনি দশ মহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে স্বামীকে দশদিকে আটকে দিলেন।

    শক্তিরূপা কালীর দশরূপ হল কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলামুখী, মাতঙ্গী এবং কমলা।

    কালীর ছিন্নমস্তা রূপের বর্ণনা শুনুন।

    “ষষ্ঠে ছিন্নমস্তারূপ ধারণ করিলে,
    নিজ মুণ্ড ছিন্ন করি করেতে ধরিলে”।

    এবার কল্পনা করুনঃ দেবীর ছিন্নমস্তক  থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত তিনটি ধারায় উপচে পড়ছে, এবং তা পান করছে তাঁর দুই সহচরী এবং তিনি নিজে। কীভাবে? তাঁর বাঁ হাতে ধৃত নিজের ছিন্ন মুণ্ড নিজেরই রক্তধারা পান করছে!

    গড়পড়তা লোক এই দৃশ্যে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কিন্তু বাঙালী যে ভীষণের সাধনা করে।

    নজরুল গান বেঁধেছেন “শ্মশানে জাগিছে শ্যামা, অন্তিমে সন্তানে দিতে কোল”।

    বিবেকানন্দ কবিতা লিখেছেনঃ
    “লক্ষ লক্ষ ছায়ার শরীর, দুঃখরাশি জগতে ছড়ায়,
    নাচে তারা উন্মাদ তাণ্ডবে, মৃত্যুরূপা মা আমার আয়”।
    (ইংরেজি থেকে অনুবাদ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।

    “স্বামীর বুকে পা তুলে ওই দাঁড়িয়ে আছে মা কালী”

    সর্বত্র কালী মূর্চ্ছিত শিবের বুকে এক পা তুলে দণ্ডায়মান। ডান পা তুললে দক্ষিণাকালী, বাঁ পা তুললে বামা। তাঁর পুজো হয় তন্ত্রমতে। তাই পুজোয় নৈবেদ্যে লাগে শুধু রক্তজবা নয়, কারণবারি (মদ), মৎস (মাছ), মাংস, মুদ্রা (শস্য, মতান্তরে আরাধনার বিশেষ আসনভঙ্গী)।

    কারণ তন্ত্রসাধনায় আবশ্যক উপকরণ হল পঞ্চ ম’কার। পাঁচটি ম --- মদ্য, মৎস্য, মাংস, মুদ্রা এবং মৈথুন। কালের প্রভাবে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মৈথুন শুধু তন্ত্রমতে সাধনরত সাধক সাধিকার বা ভৈরব-ভৈরবীর জন্যে। এই শতাব্দীতে পশুবলি প্রথা প্রায় অধিকাংশ জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত শতাব্দীতে বন্ধ হয়েছে কাপালিকদের নরবলি। কিন্তু এসব প্রথা যে ছিল তা এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

    মনে করুন বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলায় নবকুমারকে বলি দেওয়ার চেষ্টা। কান পেতে শুনুন বিখ্যাত “নেচে নেচে আয় মা শ্যামা” গানটির দ্বিতীয় অন্তরাটি “মা, কোথায় পাব মহিষবলি, কোথায় পাব নরবলি”।

    কিন্তু মা কালীর নিত্যপুজোয় তন্ত্রমতে প্রথম চারটি ম’ আজও লাগে।

    দক্ষিণাকালীর আরাধনার মূল তান্ত্রিক মন্ত্র দেখুনঃ

    ওঁ হ্রীং হ্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং দক্ষিণকালিকে ক্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং স্বাহা।।

    মন্দিরগুলোঃ

    অধিকাংশ প্রাচীন কালীমন্দিরের সম্বন্ধ সতীর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেখানে যেখানে পড়েছে সেই শক্তিপীঠের সঙ্গে। ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে ১৮টি পড়েছে অবিভক্ত  বাংলাদেশে। পশ্চিম এবং পূর্বের ভাগ প্রায় সমান সমান। তাদের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটিতে দেবীর নৈবেদ্য কী কী দেওয়া হয় দেখুন।

    * তারাপীঠ: একান্নটি পীঠের অন্যতম। আজও দেবীর ভোগে  দেওয়া হয় মাছের মাথা, কৌশিকী অমাবস্যায় মাছ মাংসের ভোগ, শোল পোড়া।

    * কালীঘাটঃ শক্তিপীঠের মাহাত্ম্যের বিচারে গৌহাটির কামাখ্যামন্দিরের পরেই কালীঘাটের কালীমন্দির। এখানে দেবীর ভোগ হয় মাছের কালিয়া  এবং পাঁঠার মাংসে। এছাড়া রয়েছে আঁশ যুক্ত মাছ, কাতলা মাছ, রুই, ইলিশ চুনো মাছের টক।

    * বেহালার সিদ্ধ্বেশ্বরী কালী মন্দির ৩৫০ বছর পুরনো। এখানে বার্ষিক পুজোয় ভোগে দেওয়া হয় পাঁচ রকম ভাজা, লাবড়া, আলুর দম, মাছ মাংস, চাটনি, পায়েস।

    * হাওড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির দুই শতাব্দী প্রাচীন। এখানে তন্ত্রমতে পুজো হয়, ফলে পঞ্চ মকারের প্রথম চারটি নিত্য ভোগে লাগে।

    * অম্বিকা কালনার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের নিত্যদিনের অন্নভোগে মাছ দেওয়ার নিয়ম। বাৎসরিক পুজোয় চিংড়ি ও ইলিশ।

    * ঘাটশিলার রঙ্কিনী দেবীর মন্দিরে আজও পশুবলি হয়, বলির বেদী ও হাড়িকাঠ প্রকাশ্যে রয়েছে।

    * উত্তরপাড়ার কাছে ভদ্রকালী মন্দির আনুমানিক ১৭৩০ খ্রীষ্টাব্দে শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায়। সেখানেও তন্ত্রমতে মায়ের নৈবেদ্যে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। মা সারদা ঠাকুরের তিরোধানের পর একটি কালী মন্দির গড়ে তোলেন। তাতে ঠাকুরের প্রিয় জিওল মাছ ভোগ দেওয়া হয়।

    * বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা কালী মন্দিরে পশুবলি হয়, আগে নরবলি হত। আজকাল আঙুল কেটে মায়ের ঠোঁটে রক্ত ছোয়ানো হয়।

    * বোলপুরের কাছে সুরুলের রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় বলি দেওয়া হয়; সপ্তমীতে চালকুমড়ো, অষ্টমীতে পাঁঠা, আর নবমীতে চালকুমড়ো-আখ।

    * বোলপুরের থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে কোপাই নদীর পাড়ে কঙ্কালীতলার মহাশ্মশান। সেখানের কালীমন্দির ও একটি শক্তিপীঠ এবং তন্ত্রসাধনার জন্যে বিখ্যাত। ওখানে সতীর কাঁকাল বা কোমরের অংশ পড়েছিল। সুতরাং তন্ত্রমতে পুজোর সময় কী কী ভোগ নিবেদন করা হয় তা পাঠকেরাই বুঝে নিন।

    * গুয়াহাটির স্টেশনের কাছে ব্রহ্মপুত্রের তীরে কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রসাধনার জন্যে সবচেয়ে বিখ্যাত।  পুরাণকথা অনুসারে এই শক্তিপীঠে সতীর যোনি পড়েছিল। এখানেও দেবীর ভোগে আমিষ দেওয়া হয়। পুজারীরা মনে করেন যে  আষাঢ় মাসে দেবী পার্বতীর মেন্সট্রুয়েশন হয়। তাখন তিন চারদিন ভক্তরা দর্শন করতে পারেন না। ব্রহ্মপুত্রের জল লাল হয়ে যায়।

    * ত্রিপুরার উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের কালীমাতা আরেক বিখ্যাত শক্তিপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এখানের বলিপ্রথায় বিষণ্ণ রবীন্দ্রনাথ স্বপ্নে দেখেন একটি বাচ্চা মেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে – এত রক্ত কেন? সেই নিয়েই রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন” নাটক। কিন্তু তাতে পশুবলি বন্ধ হয় নি। তবে ৫১৮ বছরের পুরনো রীতি বন্ধ হয়ে যায় অক্টোবর ২০১৯ থেকে হাইকোর্টের আদেশে।

    * বাংলাদেশের যশোরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। বারো ভুঁইঞার অন্যতম মহারাজ প্রতাপাদিত্য  রায়ের নির্মিত। ওখানে ছাগবলি এখনও হয়। অন্যে পরে কা কথা—আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদীজি স্বয়ং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের দু’দিনের সফরে গিয়ে ওই মন্দিরে দেবীদর্শন করে দেবীপ্রতিমার মাথায় মুকুট চড়িয়ে এসেছেন।

    * শেষ করছি রামকৃষ্ণদেবের  সাধনার সঙ্গে যুক্ত বিখ্যাত দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের কথা বলে। ওখানে এখন বলি বহুদিন বন্ধ। তবে ১৯৬৮-তেও আমি মোষ বলি দেখেছিলাম। এখন দেবীর পুজোয় পাঁচ রকমের মাছ দেওয়া হয়, মাংস নয়।

    শেষ কথাঃ

    দেখতেই পাচ্ছেন, বৈদিক মন্ত্র এবং তন্ত্রসাধনার পথ সমান্তরাল। তন্ত্রমতের দার্শনিক ভিত্তি হল সাংখ্য দর্শন।  দেবী বা প্রকৃতি হলেন প্রধান এবং সক্রিয়। পুরুষ হলেন নির্বিকার এবং অচেতন। তাই অচেতন শিব বিনা দ্বিধায় শক্তিস্বরূপা কালীর পায়ের নীচে বুক পেতে পড়ে থাকেন।

    তন্ত্রের কালীমাতা  দিগম্বরী; হিন্দি বলয়ের কোন দেবী এমন নন। কোনও দেবীর হাতের খর্পর থেকে রক্ত ঝরে না। আমাদের মিশনের কালীকীর্তনে আছেঃ

             “বসন নাহিক গায়, পদ্মগন্ধে অলি ধায়,
            বামা চলে যেতে ঢলে পড়ে আসব ভরে”।

    শ্রীশ্রী চণ্ডীতে দেখা যাচ্ছে মহিষাসুর বধের আগে দেবী দুর্গা সুরাপান করছেন এবং মহিষাসুরকে বলছেন “গর্জ গর্জ ক্ষণং মুঢ় মধু  যাবৎ পিবাম্যহং”।

    নে নে, যতক্ষণ মধুপান করছি, ততক্ষণ খুব গর্জন করে নে। তারপর তোর শেষ।
    মধুপানে দেবীর মুখমণ্ডল রক্তাভ হয়ে উঠল। দেবী তারপর অসুরকে বধ করলেন।

    অর্থাৎ খাওয়াদাওয়া, পান করা নিয়ে আমাদের ধর্মে কোন বিরোধ নেই। এমনকি বৈদিক ধর্মের নিয়মবেত্তা মহর্ষি মনু তাঁর সংহিতায় বিধান দিচ্ছেনঃ ভোজনের যোগ্য পশুমাংস আহারে কোন পাপ হয় না। কারণ ব্রহ্মা খাদক এবং খাদ্য উভয়কেই ব্রহ্মা সৃষ্টি করেছেন। (৫/৩০, মনুসংহিতা)।

    সেই খাদ্যগুলো কী? মাছ, হরিণ, কুক্কুট ভেড়া, খরগোস এবং বলি দিয়ে পবিত্র করা হয় এমন মাংস। (৩/২৬৭ থেকে ৩/২৭২; মনু সংহিতা)।

    আমার বিবেচনায় হিন্দুধর্ম এবং শাস্ত্র বহুমাত্রিক এবং বৈচিত্র্যময়। যাঁরা দেওয়ালির রাতে কেবল ধনপ্রাপ্তির জন্যে নিরামিষ ভোগ দিয়ে মহালক্ষ্মীর পুজো করতে চান, তাই করুন। কিন্তু যে বাঙালীরা বারোয়ারি কালীপুজোয় খিচুড়িভোগ ছাড়াও ঘরে বা কালীমন্দিরে মায়ের পুজোয় মাছ-মাংসের নৈবেদ্য চড়াতে চান তাঁদের বাধা দেওয়া কেন?

    সবাইকেই কি জোর করে বাটা কোম্পানির সাত নম্বর মাপের জুতো পরাতে হবে? আপনারাই বলুন।

    -----------------------------------------------------------------------------------------------------------

    [1] গবেষক ও সাংবাদিক তরুণ গোস্বামীর প্রবন্ধ, ৪র্থ পিলার্স ডট কম, ৭ম জুলাই, ২০২২
    [2] ঐ
    [3] ঐ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2401:4900:3a1e:e8a0:47f6:847b:3ce8:***:*** | ৩১ জুলাই ২০২২ ২৩:১২738081
  • আপনি কি এখনো বাচ্চা? তাহলে মাংসের দোকানে যাবেন না।
  • Ranjan Roy | ৩১ জুলাই ২০২২ ২৩:৪৫738082
  • এখন মিশনেও পশুবলি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু মাংসাহার বন্ধ হয়নি।
    তাহলে মিশনকে কি ভন্ড বলতে হবে?
     
    রবীন্দ্রনাথ বলি প্রথার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। কিন্তু মাংসাহার বন্ধ করেন নি। উনিও ভন্ড?
     
    গৌতম বুদ্ধ যজ্ঞ ও বলির বিরোধী ছিলেন। কিন্তু মাঝে মধ্যে পশুমাংস আহার করেছেন।
     'নিন্দসিযজ্ঞবিধেয়রহ জাতম্‌
      সদয়হৃদয়দর্শিত পশুঘাতম্‌
     কেশবধৃত বুদ্ধশরীর জয় জগদীশ হরে'!
    মৃত্যুর একদিন আগে শিষ্য চুন্দ্রের দেওয়া শূকরমাংস খেয়েছিলেন।  ওনাকে কী বলা উচিত?
  • Ranjan Roy | ০১ আগস্ট ২০২২ ০০:০২738084
  •    বেদের কেবল একটিই দার্শনিক উপপাদ্য(বেদান্ত) নয়।
    ছয়টি আস্তিক্য দর্শন রয়েছে। সাংখ্য, যোগ, ন্যায় , বৈশেষিক, পূর্ব মীমাংসা ও উত্তর মীমাংসা (বেদান্ত)। এদের প্রত্যেকের বিশিষ্ট সূত্র গ্রন্থ রয়েছে এবং তাতে অন্য ব্যাখ্যার সঙ্গে দস্তুরমত বিতর্ক রয়েছে।
     এর মধ্যে সাংখ্য নিরীশ্বরবাদী, পূর্ব মীমাংসা নিরীশ্বরবাদী --অর্থাৎ কোন ঈশ্বর বা ব্রহ্ম জগতকে সৃষ্টি করেছেন এটা মানে না। কারণ ওঁদের মতে ঈশ্বর নেই।
         ন্যায় ও বৈশেষিক মতে ঈশ্বর সেকেন্ডারী, অর্থাৎ উনি জগত সৃষ্টির উপাদান কারণ নন। অণু এবং আকাশ (স্পেস) উনি সৃষ্টি করেন নি। কেবল কুমোরের মত হাত লাগিয়ে জগত নির্মাণ করেছেন।
      শংকরের ব্রহ্মসূত্র অনুযায়ী জগত মিথ্যা, মায়া, বিভ্রম-- কাজেই সৃষ্টির প্রশ্ন ওঠে না।
    সাংখ্যে রয়েছে অচেতন নিষ্ক্রিয় পুরুষ এবং চেতন ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতির শক্তির কথা। এই দ্বৈতবাদ হল তন্ত্রের দার্শনিক ভিত্তি। বেদান্ত আদৌ নয়। বেদের কর্মকাণ্ডে জোর দিয়েছে পূর্ব মীমাংসা (প্রভাকর, কুমারিল ভট্ট , শবর স্বামী)।  ওরা আবার ঈশ্বর এবং তার সৃষ্টি কোনটাই মানে না। সব ঘেঁটে ঘ করে দিলে চলবে?
     
    আর দুর্গা বা অম্বিকার নাম করে উল্লেখ না থাকলেও ঋগবেদের দশম মণ্ডলে শতপথ ব্রাহ্মণে শক্তির বন্দনা রয়েছে। তার মানে দুর্গা ও কালী। তার মানে বেদ ও তন্ত্রে  কোন ভেদ নেই, দুটোই এক?
    এরকম দুরান্বয় করলে বলতে হয় আমার দাদু ও আমি নাতি এক। কারণ দাদুর থেকে বাবা, বাবার থেকে আমি। একই বংশধারা।
    রবীন্দ্রনাথএর কবিতায় মা খোকাকে বলছে -- ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।
      তার মানে মা আর খোকা এক? যেহেতু মায়ের কল্পনায় খোকা ছিল এবং মায়ের থেকেই তার উৎপত্তি!
  • দীপ | 42.***.*** | ০১ আগস্ট ২০২২ ১৬:৪৬738102
  • শক্তিসাধনার চিন্তাধায়ায় সাংখ্য, বেদান্ত ও যোগের সমন্বয় ঘটেছে। শক্তিসাধক এই তিনটি মতকে গ্রহণ করে তাদের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করে শাক্তদর্শনের সৃষ্টি করেছেন।
    সাংখ্যদর্শনের পুরুষ-প্রকৃতি তত্ত্ব অবশ্য‌ই শক্তিবাদকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করেছে; শিব-কালীর মূর্তি তার অন্যতম নিদর্শন। প্রসঙ্গত রাধাকৃষ্ণ যুগলমূর্তিও সাংখ্যদর্শনের প্রভাব। কিন্তু সাংখ্যদর্শনের সঙ্গে শক্তিবাদের পার্থক্য‌ও আছে। সাংখ্যদর্শনে প্রকৃতি জড়স্বরূপা, অচেতন। কিন্তু শাক্তের দেবী কখনোই অচেতন নন। তিনি চৈতন্যস্বরূপিণী। তাঁর চৈতন্যশক্তিতেই সমগ্র জগৎ চৈতন্যময়। তাঁর থেকেই প্রকৃতি-পুরুষাত্মক জগতের সৃষ্টি হয়েছে। একমাত্র তিনিই এই জগতে বিরাজিত, তিনি ব্যতীত আর কিছুই নেই। অর্থাৎ এখানে সাংখ্য ও বেদান্ত মতের সামঞ্জস্য করা হয়েছে।
    আর একটা কথা। বেদান্ত বলতে কিন্তু শুধুমাত্র অদ্বৈতবাদ বোঝায় না; দ্বৈত ও বিশিষ্টাদ্বৈত বোঝায়। এঁরাও কিন্তু বৈদান্তিক। বেদান্ত কিন্তু এই সব পথকেই স্বীকার করেছে।
    শক্তিসাধক প্রথমে অবশ্য‌ই দ্বৈতবাদী চিন্তার মাধ্যমে সাধনা শুরু করেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি অদ্বৈতমতে এসে উপনীত হন। এটিই শক্তিসাধনার শেষ কথা।
    তাই শাক্তসাধক বলেন 
    " মা বিরাজে সর্বঘটে"
    "কভু কমলের কমলে নাচো মা পূর্ণব্রহ্মসনাতনী"
    অদ্বৈতমতে প্রতিষ্ঠিত হলেই একথা বলা সম্ভব।
  • দীপ | 42.***.*** | ০১ আগস্ট ২০২২ ১৬:৫৫738103
  • আর আপনার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, যীশুও তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের কাছে অদ্বৈততত্ত্ব বর্ণনা করেছেন।
    সেখানে তিনি বলেছেন-
    "আমি ও আমার পিতা এক।"
    "যে পুত্রকে দেখেছে, সে পিতাকেই দেখেছে।"
     
    দেখুন দিকি কি কাণ্ড!  বাপ ছেলেকে এক করে দিচ্ছে! সব ঘণ্ট পাকিয়ে দিয়েছে! 
    কোন কথা কি উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে তা না বুঝলে অথবা বোঝার ইচ্ছা না থাকলে এইরকম অর্থ‌ই বের হয়!
  • দীপ | 42.***.*** | ০১ আগস্ট ২০২২ ১৭:৫৮738108
  • যিনি বলেন বৈদিক সাহিত্যে শক্তিবাদ নেই, তিনি শক্তিবাদের উৎস ও ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ঋগ্বেদীয় দেবীসূক্তম, ঋগ্বেদীয় ও সামবেদীয় রাত্রিসূক্তম, কেনোপনিষদে ব্রহ্মবিদ্যাস্বরূপিণী উমার বর্ণনা, যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকে অগ্নিরূপা দুর্গার উল্লেখ, অথর্ববেদীয় পৃথিবীসূক্তম- এই প্রত্যেকটি রচনা শক্তিবাদের সাথে সম্পর্কিত। এই কল্পনা পরবর্তীকালে পরিণতরূপ ধারণ করে শক্তিবাদকে সমৃদ্ধ‌ করেছে।
    দেবীসূক্তমে দুর্গা বা কালীর উল্লেখ নেই বটে, কিন্তু এই রচনায় সর্বব্যাপী মহাশক্তির স্বরূপ বর্ণিত হয়েছে। এই মহাশক্তির দ্বারা সবকিছু সৃষ্ট। ইনিই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের সম্রাজ্ঞী, বিশ্বজননী। এঁর শক্তিতে শক্তিমান হয়ে দেবকুল‌ স্বীয় কার্য সম্পাদন করেন। তাঁর ইচ্ছাতেই ব্রহ্মা, ব্রহ্মর্ষি ও প্রজ্ঞাশালী ব্যক্তিদের সৃষ্টি। একরূপে ইনি ব্রহ্মস্বরূপিণী, আবার সমগ্র জগতে পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকেন।
    ইনি ব্যতীত দ্বিতীয় আর কিছু নেই।
    স্পষ্টভাবেই এই সূক্তে শক্তিবাদের মূলতত্ত্ব যথার্থভাবে বর্ণিত হয়েছে।
    তাই শক্তিপূজার সঙ্গে দেবীসূক্তম পাঠ অনিবার্য।
     
  • দীপ | 42.***.*** | ০১ আগস্ট ২০২২ ১৯:৪৫738109
  • সেজন্য‌ই শক্তিসাধক বলেন,
    "সকলি তোমারি ইচ্ছা ইচ্ছাময়ী তারা তুমি 
    তোমার কর্ম তুমি করো মা, লোকে বলে করি আমি।
    পঙ্কে বদ্ধ কর করী, পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি
    কারে দাও মা ব্রহ্মপদ, কারে করো অধোগামী।
    আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী; আমি ঘর, তুমি ঘরণী
    আমি রথ, তুমি রথী; যেমন চালাও তেমনি চলি।"
  • দীপ | 42.***.*** | ০১ আগস্ট ২০২২ ২২:৪৫738114
  • আর চণ্ডীতেও বারংবার এই অদ্বৈততত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে। দেবী এক হয়েও তাই বিভিন্ন মূর্তি পরিগ্রহ করেন। 
    তিনি নিত্যা, এই জগৎ তাঁর বিরাট মূর্তি। নিত্যা হয়েও শুভশক্তিকে স্থাপনা ও অশুভশক্তিকে বিনাশের তিনি বারংবার নিজেকে প্রকাশ করেন। এই প্রকাশকেই দেবীর আবির্ভাব বলা হয়।
    তিনিই এই সমগ্র বিশ্বপ্রপঞ্চকে ধারণ করে রয়েছেন। সৃষ্টিকালে তিনি সৃষ্টিশক্তিস্বরূপা, পালনকালে তিনি স্থিতিশক্তিস্বরূপা, প্রলয়কালে সংহারশক্তিস্বরূপা। তিনিই কালরাত্রি ও মহারাত্রিস্বরূপা যখন ব্রহ্মাদি দেবগণ বিলীন হয়ে যান।
    এই বিশ্বপ্রপঞ্চে যা কিছু ছিল, আছে বা হবে; এসব তাঁর‌ই প্রকাশ। তাঁর শক্তিতেই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের সৃজন ও স্ব স্ব কার্যভার গ্রহণ। 
    (চণ্ডী প্রথম অধ্যায়)
    খুব স্পষ্টভাবে এখানে অদ্বৈতমত ব্যক্ত হয়েছে। বৈদান্তিকের ব্রহ্ম, শাক্তের মহামায়া।
     
    এক‌ইভাবে দশম অধ্যায়ে দেবী শুম্ভের সামনে আত্মতত্ত্ব উন্মোচন করে বলেন- "একমাত্র আমিই এই জগতে বিরাজিতা, আমি ব্যতীত আর কে দ্বিতীয় আছে?"
    এই অর্ধশ্লোকে সমগ্র অদ্বৈতবাদ প্রকাশিত হয়।
  • দীপ | 42.***.*** | ০১ আগস্ট ২০২২ ২২:৫৫738115
  • আর দার্শনিক বিচারে দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা, সরস্বতী, লক্ষ্মী- কেউ আলাদা নন। সব‌ই পরম সত্যের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। 
    একজন অভিনেতা যেমন এক হয়েও ভিন্ন ভিন্ন রূপে রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন, তেমনি জগন্মাতা এক হয়েও ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাধকের কাছে আবির্ভূতা হন। 
    (দেবী ভাগবত পুরাণ)
     
    উপাসকদের কার্যহেতু, জগতের মঙ্গলের জন্য, অশুভ শক্তিকে বিনাশের জন্য মহামায়া ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেন।
    "উপাসকানাং কার্যার্থং শ্রেয়সে জগতামপি।
    দানবানাং বিনাশায়, ধ্বৎসে নানাবিধস্তনুঃ।।"
    (মহানির্বাণ তন্ত্র)
     
     
  • Ranjan Roy | ০১ আগস্ট ২০২২ ২৩:২৭738116
  • দীপ
      ১ জানলে খুশি হবেন যে কেবল যীশু নন, মার্ক্সঅদ্বৈতবাদের প্রচারক। মার্ক্সের মেটিরিয়ালিজমও নন-ডুয়ালিজম বা অদ্বৈতবাদের কথা বলে। কিন্তু বেদান্তের সঙ্গে মৌলিক তফাৎ হল ওঁর আধারটা বস্তুবাদী আর শংকরাচার্য্যের ভাববাদী। 
     মূল দুটো কথা --বস্তু  বা জড়( ম্যাটার) এবং ভাব বা চেতনা (আইডিয়া বা কনশাসনেস)।
    সমস্ত অদ্বৈতবাদী একটি তত্ত্বকেই মুখ্য মনে করেন। অন্যটিকে গৌণ বা প্রথমটি থেকে উদ্ভুত মনে করেন।
      শংকরাচার্যের মত ভাববাদী অদ্বৈতবাদীরা  (ধরুন অরবিন্দ) চেতনাকে মুখ্য মনে করেন। জড় প্রকৃতিকে চেতনার উপজ মনে করেন। আবার মার্ক্সের মত বস্তুবাদী অদ্বৈতবাদীরা  জড় বা ম্যাটারকে মুখ্য মনে করেন। চেতনা জড় থেকে উৎপন্ন মনে করেন বা অর্গানিক ম্যাটারের বৈশিষ্ট্য মনে করেন।
     ২ যাঁরা দ্বৈত বাদী  (ডুয়ালিস্ট) তাঁরা বস্তু(জড়, প্রকৃতি) এবং চেতনা (ভাব বা আইডিয়া) কে দুটো স্বতন্ত্র সত্তা মনে করেন।
      যেমন, ভারতীয় দর্শনে সাংখ্য, পাশ্চাত্ত্য দর্শনে রনে দেকার্ত।
     আবার বেদান্তবাদীদের মধ্যে মধ্বাচার্য্য দ্বৈতবাদী। সাংখ্য-যোগ এবং পূর্ব মীমাংসা বেদকে মেনেও ঈশ্বর বিশ্বাসী নয়।
    অদ্বৈতবাদী মানেই শংকরাচার্য নয়। 
     
    আপনি বলছেনঃ
    "সাংখ্যদর্শনে প্রকৃতি জড়স্বরূপা, অচেতন। কিন্তু শাক্তের দেবী কখনোই অচেতন নন।"
     
    --এইখানে আপনি ভাল করে ছড়িয়েছেন অথবা মূল সাংখ্যদর্শন পড়েন নি।
    সাংখ্যে পুরুষ হল অচেতনপ্রকৃতি হল সক্রিয় এবং ত্রিগুণাত্মিকা (সত্ত্ব রজ তমোগুণ বিশিষ্ট) । তাঁর সক্রিয়তা থেকেই সৃষ্টির উদ্ভব। প্রকৃতি প্রথমে তার  থেকে  মূল পঞ্চ তত্ত্ব --আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল এবং ধরা বা ভূমির উদ্ভব হয়।
     সাংখ্যের চতুর্বিংশতি তত্ত্বে সৃষ্টির গ্রাফটা দেখুন।
    সুপ্ত প্রকৃতি , তার তিনগুণের বিপর্যয়ে এল > মহৎ>অহংকার>মানস> পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়> পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়>পঞ্চ তন্মাত্র > ক্ষিতি( ধরা)  ,অপ (জল), তেজ (অগ্নি), মরুৎ (বায়ু), ব্যোম(আকাশ)। 
     
     
    দেখুনঃ কপিলের সাংখ্যসূত্র এবং ঈশ্বরকৃষ্ণের সাংখ্যকারিকা। 
  • দীপ | 42.***.*** | ০৩ আগস্ট ২০২২ ০১:১০738118
  • সাংখ্য দর্শন দ্বৈতবাদী। এর দুটি মূল‌তত্ত্ব, পুরুষ ও প্রকৃতি। পুরুষ চৈতন্যময় কিন্তু নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতি সক্রিয় কিন্তু অচেতন, জড়। পুরুষ ও প্রকৃতির সংযোগের ফলে পুরুষের গুণ প্রকৃতিতে ও প্রকৃতির গুণ পুরুষে আপতিত হয়। এর ফলে পুরুষ অকর্তা হয়েও নিজেকে কর্তা মনে করে, অন্যদিকে জড়া প্রকৃতিকে চৈতন্যময়ী মনে হয়।
    আপনি প্লিজ আরেকবার দেখুন।
  • দীপ | 42.***.*** | ০৩ আগস্ট ২০২২ ০১:১৭738119
  • আর অদ্বৈতবাদী মানেই শঙ্করাচার্য নয়, ঠিক কথা। যেমন শৈব ও শাক্ত দর্শন।
    তবে শঙ্কর‌ও শক্তিবাদ মানতে বাধ্য হয়েছেন। স্বীকার করেছেন নির্গুণ ব্রহ্ম‌ই জগদ্ব্যাপিনী শক্তি, তিনিই বিশ্বজননী।
    শঙ্কর হোন বা চৈতন্য, সবাই শক্তিপূজা করেছেন।
  • Ranjan Roy | ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৭:২৭738134
  • ্দীপ,
    দুটো কথাঃ শংকরাচার্য্য ও সাংখ্য দর্শন। দুভাগে বলছি।
    আপনি বলেছেনঃ
     
    • সাংখ্য দর্শন দ্বৈতবাদী। এর দুটি মূল‌তত্ত্ব, পুরুষ ও প্রকৃতি। পুরুষ চৈতন্যময় কিন্তু নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতি সক্রিয় কিন্তু অচেতন, জড়। পুরুষ ও প্রকৃতির সংযোগের ফলে পুরুষের গুণ প্রকৃতিতে ও প্রকৃতির গুণ পুরুষে আপতিত হয়। এর ফলে পুরুষ অকর্তা হয়েও নিজেকে কর্তা মনে করে, অন্যদিকে জড়া প্রকৃতিকে চৈতন্যময়ী মনে হয়
      আপনি প্লিজ আরেকবার দেখুন।
      -----একদম ঠিক বলেছেন। তবে 'আপতিত' বলবেন কী প্রভাব বলবেন?
       
    • Ranjan Roy | ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৭:৩৪738135
    • দীপ,
      দেখুন, পুরুষ প্রকৃতির সংযোগে   অচেতন প্রকৃতি ‘মনে হয় যেন’ চেতন হয়ে উঠল(অচেতনম চেতনাবৎ ইব), আসলে  পুরুষের গুণ পায় নি। তেমনই উদাসীন পুরুষও যেন ত্রিগুণাত্মিকা শক্তির অধিকারী কর্তা বলে প্রতীয়মান হল। অর্থাৎ কেউ কারও গুণ নেয় নি। (কারিকা-২০)।
      ্তাহলে উভয়ের কাছাকাছি হয়ে লাভ কী হল? পুরুষ হচ্ছে খঞ্জ, কিছু করার বা নড়ার ক্ষমতা নেই। প্রকৃতি হচ্ছে সক্রিয় কিন্তু দেখার ক্ষমতা (চেতনা) নেই। দুজনের সংযোগে সৃষ্টি শুরু হল, যেন খোঁড়া এবং কানা হাতধরাধরি করে চলতে লাগল। কিন্তু খোঁড়া হাঁটতে পারে নি, অন্ধ দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায় নি। (কারিকা-২১)।
       
      আর সাংখ্যে তো ঈশ্বরই নেই। কপিল বলছেনঃ ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ (সাংখ্যসূত্রঃ শ্লোক ৯২)।
      অর্থাৎ প্রমাণাভাবে ঈশ্বর অসিদ্ধ। এবং ঈশ্বরকৃষ্ণের সাংখ্যকারিকায় সৃষ্টি তত্ত্বে ঈশ্বরের কোন উল্লেখই নেই।
      তাহলে শংকরের অদ্বৈত বেদান্তের সংগে দার্শনিক স্তরে সাংখ্যকে মেলাবেন কী করে?
    • Ranjan Roy | ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৭:৪৪738136
    • সৃষ্টি নিয়ে শংকর অ সাংখ্যের ডিবেট দেখুনঃ
       
       শংকর বলছেন যে সৃষ্টি মানে কী? হয় কোন কিছুর নির্মাণ, বা পরিবর্তন করা, বা শুদ্ধিকরণ ইত্যাদি। এর কোনটাই ব্রহ্মের জন্য প্রযযুক্ত হতে পারে না। ব্রহ্মজ্ঞান মানে মুক্তি। তাই ব্রহ্মজ্ঞানের সঙ্গে সৃষতির কোন সম্পর্ক নেই।(ব্রহ্মসূত্র, ১.১.৪)
      এবার সাংখ্যের আপত্তিটা দেখুনঃ
      বেদান্তের শাস্ত্র তো ব্রহ্মকে নয়, বরং সত্ত্ব-রজ-তমোগুণ বিশিষ্ট ‘প্রধান”(প্রকৃতি)কে সৃষ্টির আদি কারণ বলছে। প্রধান হচ্ছে সর্বশক্তিমান, আবার সত্ত্বগুণ বিশিষ্ট হওয়ায় সর্বজ্ঞ। আর ব্রহ্ম তো সংজ্ঞা অনুযায়ী অখন্ড, সমসত্ত্ব, অপরিবর্তনীয়। তাহলে ব্রহ্ম কী করে সৃষ্টির কারণ হতে পারে? ফল দেখে বীজকে চেনা যায়, সুতরাং ব্রহ্মান্ডকে দখে বোঝা যায় এর সৃষ্টির আদি কারণ ব্রহ্ম নয়, প্রকৃতি। (ব্রহ্মসূত্র; শংকর ভাষ্য, স্বামী বীরেশ্বরানন্দের ইংরেজি থেকে আমার কাম- চালাউ অনুবাদ)।
       
      পূজার্চনাকে শংকর কেবল চিত্তশুদ্ধির সাধন মনে করেছেন। এতে মুক্তি বা ব্রহ্মজ্ঞান হয় না। শুধু জ্ঞানমার্গেই মুক্তি লাভ। (ব্রহ্মসূত্র, ১.১.১)। যদিও একই শ্লোকের ব্যাখ্যায় রামানুজ দ্বিমত পোষণ করেন। 
       
      শংকর মনে করেন ব্রহ্ম নিজেই সৃষ্টির উপাদান এবং নিমিত্ত কারণ। কাজেই সৃষ্টির জন্য কোন শক্তিরূপা বা মহাশক্তির প্রয়োজন নেই। আসলে নামরূপের এই জগত আমাদের নিজেদের অবিদ্যা বা ভ্রমের থেকে উৎপন্ন । যেমন দড়ি দেখে সাপের অনুভুতি হতে পারে।
      কাজেই মূল দার্শনিক গ্রন্থে শংকর আদৌ ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকে স্বীকারই করন না; ভ্রম মাত্র মনে করেন। সাধারণ স্তরে নেমে গঙ্গা, শিব এবং শক্তিকে নিয়ে স্তোত্র লিখেছেন। তাতে কী? 
      ওঁর প্রধান এবং মূল কাজ অদ্বৈত বেদান্তের প্রতিপাদনে ব্রহ্মসূত্রের ব্যাখ্যা, যেখানে কোন সৃষ্টিকর্তা  ঈশ্বর নেই, কারণ সৃষ্টিই নেই। ওটা অবিদ্যার ফল। মায়া ব্রহ্মের শক্তি নয়, ওটা এক স্বতন্ত্র অনির্বচনীয় তত্ত্ব। 
      অবশ্য রামানুজ এবং অন্য আচার্যেরা উপনিষদ মেনে ব্রহ্মান্ডকে ঈশ্বরের মায়িক শক্তিবলে সৃষ্ট মনে করেন। দার্শনিক স্তরে শংকর না শক্তিবাদ মেনেছেন, না সাকার ব্রহ্মকে মেনেছেন।
    • দীপ | 42.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৭:৫৫738137
    • না রঞ্জনদা, শঙ্করের দৃষ্টিতে‌ ব্রহ্ম শুধুমাত্র নিমিত্ত কারণ, উপাদান কারণ নন। সেজন্য জগৎ শঙ্করের দৃষ্টিতে মিথ্যা।
      কিন্তু শক্তিসাধকের দৃষ্টিতে ব্রহ্ম/জগন্মাতা নিমিত্ত ও উপাদান কারণ। তাই এই বিশ্ব জগন্মাতার‌ই বিরাট মূর্তি। তাই জগৎ শক্তিসাধকের দৃষ্টিতে পুরোপুরি মিথ্যা নয়, জগন্মাতার অসীম লীলার প্রকাশ।
       
    • Ranjan Roy | ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৯:১২738138
    • দীপ,
       উঁহু, কেবল ন্যায়দর্শনে ঈশ্বর সৃষ্টির আদি বা উপাদান কারণ (মেটেরিয়াল কজ) নন, শুধু নিমিত্তকারণ (এফিশিয়েন্টকজ) মাত্র। যেমন, কুমোর মাটি বা কুমোরের কাঠের চাক,লাঠি বা দড়ির নির্মাতা নয়। কিন্তু এগুলোর সাহায্যে মাটির হাঁড়িকুড়ি বানায়।
      কিন্তু শংকরের বিবর্তবাদে পরব্রহ্ম অজর, অপরিবর্তনীয়, নির্গুণ এবং নির্বিকার। উনি সৃষ্টি করেন না, তো নিমিত্তকারণ হবেন কী করে? 
       আসলে শংকরের নির্মিত 'অধ্যাস তত্ত্ব' (ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যের ভূমিকায়) স্পষ্ট করে যে কিছুই আসলে সৃষ্ট হয় না। যা হয় তাহল জীবের চেতনায় অবিদ্যাজনিত ময়লা পরে দৃষ্টি আবিল হওয়ার ফল। চশমার কাঁচে ময়লা পড়ার মত, বা চোখে ছানি পরার মত। ফলে সূর্য দেখা যায় না। অথবা দুটো সূর্য দেখা যায়। 
       জ্ঞানের আলোকে ময়লা পরিষ্কার হয়ে চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ হলে  সূর্য ঠিকমত দেখা যায়। এখানে সূর্য কিছুই করে না। দৃষ্টির দোষে কিছু মায়ার বিশ্ব সৃষ্ট হয়। তেমনি দড়িতে সাপ দেখলে সেটা আমাদের চোখের দোষ। দড়ির নয়। দড়ি সাপকে সৃষ্টি করে না। অর্থাৎ সুর্য বা দড়ি বা পরব্রহ্ম কিছুই সৃষ্টি করেন না। কিন্তু তাদের ভিত্তি করে কিছু নির্মিত হয়। সেটা বিভ্রম বা মায়ার খেলা। জাদুকরের হাতি দেখানোর মত। অতএব ওরা কেউ শুধু নিমিত্ত কারণ হতে পারেন না। 
       এক অর্থে তাই পরব্রহ্মকে (শংকরের মতে) সৃষ্টির উপাদান এবং নিমিত্তকারণ দুটোই বলা যায়, নইলে শুধুই উপাদান।
      নিমিত্তকারণ? নৈব নৈব চ! 
    • Ranjan Roy | ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৯:২০738139
    • এর বিপরীতে শক্তিবাদ সাকার শক্তিমান  ঈশ্বরের কথা বলে। তবে নারী বা দেবীশক্তি। তাই তন্ত্র সাধনা, বামাচার ইত্যাদি। শক্তিবাদ জ্ঞানের চেয়ে ভক্তিতে জোর দেয়। এখানেই শংকরের সঙ্গে মৌলিক তফাৎ। 
      আর পুরাণকথা কোন একজন দেবী বা দেবতার মহিমা কীর্তনে রচিত। বিষ্ণুপুরাণ বলবে বিষ্ণুই সব, বাকি সবাই তাঁর অবতার বা অধীন। শিবপুরাণ বলবে শিবই আসল। একই ভাবে কালিকাপুরাণ এবং শ্রীশ্রীচণ্ডী দেবী  কালিকা বা দূর্গা বা মহামায়াকেই আসল বলবে। 
      দর্শনের আলোচনায় পুরাণের উল্লেখ অদরকারী। 
      গীতায় বিভুতিযোগে দেবীশক্তি কোথায়? আমার তো চোখে পড়েনি। 
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০০:৩৬738140
    • শঙ্কর দার্শনিক আলোচনার ক্ষেত্রে অবশ্যই অদ্বৈতমতকে গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু এক‌ইসঙ্গে সগুণ উপাসনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর আনন্দলহরী স্তোত্র শক্তিবাদের অন্যতম ভাষ্য। এছাড়াও তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত চার পীঠেই শক্তিবন্দনা করে আরাধ্যা দেবীকে স্থাপনা করেছেন। অর্থাৎ শঙ্কর কোনোভাবেই শক্তিবাদকে অস্বীকার করেননি।
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০০:৪৫738141
    • তন্ত্র কখনোই শুধুমাত্র দেবী উপাসনার কথা বলেনা; তন্ত্র বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, সৌর, গাণপত্য -সব পথকেই স্বীকার গৌড়ীয় বৈষ্ণব বৈষ্ণবতন্ত্র অনুসারে উপাসনা করেন।
      বেদ মানে শুধু পুরুষ দেবতার উপাসনা নয়, তেমনি তন্ত্র‌ও শুধু দেবীমূর্তির উপাসনা নয়।
      আর তন্ত্র কখনোই শুধুমাত্র বামাচার নয়। তন্ত্র বেদাচার, দক্ষিণাচার, বামাচার- সব পথকেই স্বীকার করে।
      আর তন্ত্রে বিভিন্ন মতের সাধন আছে। সাধকের অধিকারী ভেদে পশুভাব, বীরভাব ও দিব্যভাব- এই তিন পদের কথা আছে। সারদানন্দ এনিয়ে লীলাপ্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন।
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০০:৪৮738142
    • তিন প্রকার পথের
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০০:৫৩738143
    • গীতায় শক্তিবাদ আলাদা করে আলোচিত হয়নি। যদিও গীতা দ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত, অদ্বৈত,  সবপথ‌ই মেনে নিয়েছে।
      চণ্ডীতে শক্তিবাদ আলোচিত হয়েছে।
      গীতা তেমন মহাভারতের অংশ হয়েও স্বতন্ত্র গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত, চণ্ডীও তেমনি মার্কণ্ডেয়পুরাণের অংশ হয়েও স্বতন্ত্র গ্রন্থ রূপে গৃহীত।
      এতে সমস্যা কোথায়? পুরাণের অংশ‌ হলে তার দার্শনিক ভিত্তি নেই, এ তথ্য‌ই বা কোথায় পেলেন?
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০১:০৬738144
    • আপনার অসামান্য যুক্তি অনুযায়ী  গীতা 
      মহাকাব্যের অংশ , অতএব তার দার্শনিক ভিত্তি নেই!!!  
       
      বৈষ্ণব দর্শন জানতে গেলে‌ যেমন শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ পড়তে হয়, তেমনি শাক্ত মতবাদ জানতে গেলে দেবী সম্পর্কিত পুরাণ ও তন্ত্রসাহিত্য পড়তে হবে। বিশেষত দেবী ভাগবত পুরাণ ও মহাভাগবত পুরাণে দেবীর আত্মপরিচয় প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশগুলি দেবীগীতা নামে অভিহিত। 
      দেবী এখানে তাঁর সগুণ ও নির্গুণ উভয় স্বরূপের বর্ণনা দিয়েছেন। স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনিই ব্রহ্মস্বরূপিণী। তিনিই এই ব্রহ্মাণ্ডের জননী, আবার এসবের অতীত নির্লিপ্ত সত্তা।
       
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০১:১১738145
    • শক্তিবাদ সাংখ্য, বেদান্ত ও যোগকে গ্রহণ করে তার দার্শনিক ভিত্তি সৃষ্টি করেছে, কিন্তু কাউকেই হুবহু গ্রহণ করেনি। এদের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছে।
      আপনি প্রথমে বললেন তন্ত্রের উৎস সাংখ্য দর্শন। এখন সেটা অস্বীকার করে বলছেন সাংখ্য তো নিরীশ্বরবাদী। আপনার যুক্তিতেই তো অজস্র স্ববিরোধ।
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০১:২০738146
    • শাক্তের দৃষ্টিতে দেবী পরম সত্য, তিনিই সবকিছুর আদি কারণ। তাঁর থেকেই প্রকৃতিপুরুষাত্মক জগতের সৃষ্টি। তিনিই পুরুষ, তিনিই প্রকৃতি আবার এসবের অতীত নির্লিপ্ত সত্তা। এভাবেই সাংখ্য ও বেদান্তের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয়েছে।
       
      তাই তিনি "পুরুষপ্রকৃতি রূপিণী"।
      "শ্যামা কখনো পুরুষ, কখনো প্রকৃতি, কখনো শূন্যরূপারে
      মায়ের এভাবে ভাবিয়ে কমলাকান্ত সহজে পাগল হল' রে।"
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০১:২০738147
    • শাক্তের দৃষ্টিতে দেবী পরম সত্য, তিনিই সবকিছুর আদি কারণ। তাঁর থেকেই প্রকৃতিপুরুষাত্মক জগতের সৃষ্টি। তিনিই পুরুষ, তিনিই প্রকৃতি আবার এসবের অতীত নির্লিপ্ত সত্তা। এভাবেই সাংখ্য ও বেদান্তের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয়েছে।
       
      তাই তিনি "পুরুষপ্রকৃতি রূপিণী"।
      "শ্যামা কখনো পুরুষ, কখনো প্রকৃতি, কখনো শূন্যরূপারে
      মায়ের এভাবে ভাবিয়ে কমলাকান্ত সহজে পাগল হল' রে।"
    • Ranjan Roy | ০৫ আগস্ট ২০২২ ১২:০৪738149
    • দীপ,
       এভাবে আলোচনা হয় না। 
      আমি বলি নি পুরাণ কথার কোন দার্শনিক ভিত্তি নেই। যেটা বলেছি তাহল ওগুলোতে কোন সুসংবদ্ধ দার্শনিক তত্ত্ব এবং বিতর্ক নেই যা ষড়দর্শনের সূত্র গ্রন্থ গুলিতে রয়েছে। 
      যে কোন দর্শনের মূল গ্রন্থেস্পষ্ট তিনটে ভাগ থাকে --এক, মেটাফিজিক্স ও অন্টোলজি ( ওই স্কুল অফ থট অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারণা এবং কার্যকারণ), 
      দুই, জ্ঞানতত্ত্ব ( এপিস্টেমোলজি) , অর্থাৎ ওই স্কুল কোনটাকে প্রমাণ মানে, কোনটাকে মানে না।
      তিন, বিতর্ক বিমর্শ--অর্থাৎ অন্য মত খণ্ডন।
      কোন পুরাণগ্রন্থে এসব থাকে না। কাজেই দার্শনিক বিচারে দশবার রামপ্রসাদ বা কমলাকান্ত কোট করলে সেটা প্রাসঙ্গিক হয় না।
       
        সাংখ্য দর্শন নিরীশ্বরবাদী এতে কোন সন্দেহ আছে? আমি বলছি নয়, মূল গ্রন্থ কী বলছে? 
      যেমন,
      ১ সাংখ্য দর্শন নিরীশ্বরবাদী --এটা কি ভুল? কপিল বলছেন--প্রমাণের অভাবে ঈশ্বর অসিদ্ধ (শ্লোক ৯২)--  আমাকে খোঁচা না দিয়ে বিপরীত প্রমাণ দেখান। সাংখ্য কারিকায় স্রষ্টা ঈশ্বর নেই--এটা কি ভুল বলেছি? পালটা উদাহরণ দিন।
      ২ শংকরের মূল দার্শনিক গ্রন্থে ঈশ্বর শুধু নিমিত্ত কারণ নন--এটা ভুল বলেছি? তাহলে ওখান থেকে উদাহরণ দিয়ে দেখান।
      ৩ যোগ এবং পূর্ব মীমাংসায় ব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা হিসেবে কোন ঈশ্বর নেই--এটা ভুল? পালটা উদাহরণ দিন। 
      ৪ আবার বলছি-- তন্ত্র সাধনার মূল দর্শনের উৎস সাংখ্যের পুরুষ প্রকৃতি তত্ত্ব , এটা ভুল? 
      ৫ আপনি ভক্তের দৃষ্টিতে সাংখ্য, যোগ (যদিও দর্শন হিসেবে যোগ সাংখকেই মেনে চলে) মিলিয়ে ঘেঁটে ঘ করে বারবার লিখতে থাকুন। এসবের যদি সমন্বয় হত তাহলে শংকরাচার্যকে ব্রহ্মসূত্রের দুটো ভল্যুম জুড়ে সাংখ্য, ন্যায়, পূর্ব মীমাংসা মত খণ্ডন করতে হত না।
        এমনকি রামানুজও শঙ্করের মায়াবাদ খণ্ডনে আলাদা করে পালটা ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য লিখতেন না। 
      একজন ডাক্তার যদি নিজে সিগ্রেট খান অথচ রোগীদের সিগ্রেট খাবার কুফল নিয়ে না খাবার পরামর্শ দেন তাহলে কোনটাকে ডাক্তারের মেডিক্যাল ওপিনিয়ন বলে ভাববেন-- ওঁর সিগ্রেট খেলে ক্ষতি হয় সেটা ? নাকি উনি তো নিজে সিগ্রেট খেয়েছেন--তাহলে তো সিগ্রেট খেলে ক্ষতি নেই।
      একইভাবে শংকর পাতার পর পাতা ব্রহ্মসূত্রে বলছেন যে সাকারের উপাসনা এবং পুজোয়াচ্চা করে ব্রহ্ম লাভ হয় না, কারণ ব্রহ্ম নিরাকার নির্গুণ --সেটাকে শংকরে দার্শনিক অবস্থান ধরবেন, নাকি গঙ্গাস্তোত্র, শিবাষ্টক ইত্যাদি?
       
      আমি এবার কাটলাম। 
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ১৫:২৬738150
    • আমি মোটেও ভক্তের দৃষ্টিতে শক্তিবাদ নিয়ে কথা বলিনি, শক্তিবাদের উৎস ও ক্রমবিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছি। 
      শক্তিবাদের আলোচনাতে  প্রথমেই আসবে ঋগ্বেদের দেবীসূক্তম। অথচ আপনি তাকে অস্বীকার করছেন যেহেতু তাতে দুর্গা বা কালীর নামোল্লেখ নেই! কিন্তু সেখানে যে সর্বব্যাপিনী মহাশক্তির উল্লেখ‌ করা হয়েছে, সে বিষয়ে আপনি নীরব! পরিষ্কার বলা হয়েছে পরব্রহ্ম ও শক্তি অভিন্ন, এই মহাশক্তিই সমগ্র জগতে পরিব্যাপ্ত! তাঁর শক্তিতেই সকলে শক্তিমান। তিনিই একরূপে জগদাকারে বিরাটমূর্তিতে প্রকাশিত হয়েছেন, আবার এর অতীত নির্লিপ্ত সত্তায় অবস্থান‌ করছেন! 
      আর আপনার অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি শক্তিবাদের উপর সকল গবেষণায় এই দেবীসূক্তমকে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে! আর তাকেই আপনি অস্বীকার করছেন! 
      প্রসঙ্গত চণ্ডীপাঠের অঙ্গ রূপে দেবীসূক্তম ও রাত্রিসূক্তম পাঠ করা হয়! এতোটাই এদের গুরুত্ব! 
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ১৫:৩৮738151
    • আর ভারতীয় দর্শন চিরকালই ভিন্ন ভিন্ন মতের মধ্যে মিলন করেছে, শিবকল্পনাই তার উদাহরণ। শিবের কল্পনায় বৈদিক, অবৈদিক, দ্রাবিড়ীয়, আদিবাসী- সব চিন্তাই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ভারতীয় দর্শন ‌এভাবেই ভিন্ন ভিন্ন মতের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করেছে।
      এক‌ইভাবে শক্তিবাদেও ভিন্ন ভিন্ন মতগুলিকে গ্রহণ করে তার মধ্যে ঐক্যস্থাপন করা হয়েছে। এটাই ভারতীয় চিন্তার বৈশিষ্ট্য।
    • দীপ | 42.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ১৫:৪৬738152
    • শক্তিসাধক প্রথমে অবশ্য‌ই ভক্তিমার্গকে গুরুত্ব দেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি অদ্বৈততত্ত্বে উপনীত হন।‌ তাঁর দৃষ্টিতে নির্গুণ ব্রহ্ম‌ই জগদ্ব্যাপিনী মহাশক্তি।
      দার্শনিক বিচারে শক্তিবাদ শক্তিসমন্বিত অদ্বৈতবাদ বা সংক্ষেপে শাক্তাদ্বৈতবাদ। দেবীসূক্তম থেকে চণ্ডী - প্রত্যেকেই এই শাক্তাদ্বৈতমত প্রচার করেছে। 
      চণ্ডীর ভাষ্যকারেরাও শাক্তাদ্বৈতমতকেই প্রতিষ্ঠা করেছেন।
    • মতামত দিন
    • বিষয়বস্তু*:
    • কি, কেন, ইত্যাদি
    • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
    • আমাদের কথা
    • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
    • বুলবুলভাজা
    • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
    • হরিদাস পালেরা
    • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
    • টইপত্তর
    • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
    • ভাটিয়া৯
    • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
    গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


    মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
    পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন