দীপ, এভাবে আলোচনা হয় না।
আমি বলি নি পুরাণ কথার কোন দার্শনিক ভিত্তি নেই। যেটা বলেছি তাহল ওগুলোতে কোন সুসংবদ্ধ দার্শনিক তত্ত্ব এবং বিতর্ক নেই যা ষড়দর্শনের সূত্র গ্রন্থ গুলিতে রয়েছে।
যে কোন দর্শনের মূল গ্রন্থেস্পষ্ট তিনটে ভাগ থাকে --এক, মেটাফিজিক্স ও অন্টোলজি ( ওই স্কুল অফ থট অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারণা এবং কার্যকারণ),
দুই, জ্ঞানতত্ত্ব ( এপিস্টেমোলজি) , অর্থাৎ ওই স্কুল কোনটাকে প্রমাণ মানে, কোনটাকে মানে না।
তিন, বিতর্ক বিমর্শ--অর্থাৎ অন্য মত খণ্ডন।
কোন পুরাণগ্রন্থে এসব থাকে না। কাজেই দার্শনিক বিচারে দশবার রামপ্রসাদ বা কমলাকান্ত কোট করলে সেটা প্রাসঙ্গিক হয় না।
সাংখ্য দর্শন নিরীশ্বরবাদী এতে কোন সন্দেহ আছে? আমি বলছি নয়, মূল গ্রন্থ কী বলছে?
যেমন,
১ সাংখ্য দর্শন নিরীশ্বরবাদী --এটা কি ভুল? কপিল বলছেন--প্রমাণের অভাবে ঈশ্বর অসিদ্ধ (শ্লোক ৯২)-- আমাকে খোঁচা না দিয়ে বিপরীত প্রমাণ দেখান। সাংখ্য কারিকায় স্রষ্টা ঈশ্বর নেই--এটা কি ভুল বলেছি? পালটা উদাহরণ দিন।
২ শংকরের মূল দার্শনিক গ্রন্থে ঈশ্বর শুধু নিমিত্ত কারণ নন--এটা ভুল বলেছি? তাহলে ওখান থেকে উদাহরণ দিয়ে দেখান।
৩ যোগ এবং পূর্ব মীমাংসায় ব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা হিসেবে কোন ঈশ্বর নেই--এটা ভুল? পালটা উদাহরণ দিন।
৪ আবার বলছি-- তন্ত্র সাধনার মূল দর্শনের উৎস সাংখ্যের পুরুষ প্রকৃতি তত্ত্ব , এটা ভুল?
৫ আপনি ভক্তের দৃষ্টিতে সাংখ্য, যোগ (যদিও দর্শন হিসেবে যোগ সাংখকেই মেনে চলে) মিলিয়ে ঘেঁটে ঘ করে বারবার লিখতে থাকুন। এসবের যদি সমন্বয় হত তাহলে শংকরাচার্যকে ব্রহ্মসূত্রের দুটো ভল্যুম জুড়ে সাংখ্য, ন্যায়, পূর্ব মীমাংসা মত খণ্ডন করতে হত না।
এমনকি রামানুজও শঙ্করের মায়াবাদ খণ্ডনে আলাদা করে পালটা ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য লিখতেন না।
একজন ডাক্তার যদি নিজে সিগ্রেট খান অথচ রোগীদের সিগ্রেট খাবার কুফল নিয়ে না খাবার পরামর্শ দেন তাহলে কোনটাকে ডাক্তারের মেডিক্যাল ওপিনিয়ন বলে ভাববেন-- ওঁর সিগ্রেট খেলে ক্ষতি হয় সেটা ? নাকি উনি তো নিজে সিগ্রেট খেয়েছেন--তাহলে তো সিগ্রেট খেলে ক্ষতি নেই।
একইভাবে শংকর পাতার পর পাতা ব্রহ্মসূত্রে বলছেন যে সাকারের উপাসনা এবং পুজোয়াচ্চা করে ব্রহ্ম লাভ হয় না, কারণ ব্রহ্ম নিরাকার নির্গুণ --সেটাকে শংকরে দার্শনিক অবস্থান ধরবেন, নাকি গঙ্গাস্তোত্র, শিবাষ্টক ইত্যাদি?
আমি এবার কাটলাম।