এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অন্ধকারের সপক্ষে অথবা তেতো কথা

    Emanul Haque লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ মার্চ ২০২১ | ৭৭৯১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অন্ধকারের সপক্ষে অথবা তেতো কথার ফুলঝুরি অথবা ভুলেও পড়বেন না


    ইমানুল হক


    আমরা যা শিখি ভুল শিখি! 


    অথবা যা শেখাই ভুল শেখাই!


    সত্যি অথবা সত্যি নয়।


    আসলে প্রশ্ন করানো শেখানোই যে শিক্ষকের কাজ তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু উত্তর এবং উক্ত উত্তরের জন্য প্রাপ্য উত্তরীয়টি তথা মার্কশিট তথা শংসাপত্র আমাদের লক্ষ্য।


    শিক্ষা উপলক্ষ মাত্র।


    দ্রোণাচার্যের নামে পুরস্কার।


    কেন?


    উচিত ছিল তো তিরস্কার চালু করা। কারণ এক শিষ্যের স্বার্থে একজন স্বশিক্ষিতর বৃদ্ধাঙ্গুলি কর্তন।


    ছেলেটি, তথা একলব্যের অপরাধ কী?


    সে দ্রোণাচার্যকে গুরু পদে মনে মনে বরণ করেছে।


    তার মনে তো ক্ষত্রিয় বা ব্রাহ্মণের প্রশংসালাভ লক্ষ্য।


    সেই লক্ষ্য যে ভুল তা তো তাকে কেউ বলে নি।


    বলে নি। কিন্তু বললেও যে খুব লাভ হতো তা নয়।


    কারণ তথাকথিত উচ্চ ও নীচের ধারণা তার মজ্জায় এমন ঢুকে গেছে বের হওয়া মুশকিল।


    আর্যটাই গালাগাল হওয়ার কথা হয়ে গেল অনার্যটা।


    আর্যরা অসভ্য যাযাবর জাতি।


    লিপি জানে না। পড়তে পারে না। শুনে শুনে মনে রাখে। বেদের অপর নাম শ্রুতি। এতো প্রশংসাবাক্য হওয়ার কথা নয়।


    শুনে শুনে মনে রাখে কেন? পড়তে পারে না বলে।


    অনার্য ময়দানব ইন্দ্রপ্রস্থ নির্মাণ করে। নগর সভ্যতা তিনি জানেন।


    ইন্দ্রের অপর নাম পুরন্দর। তিনি পুর বা নগর অনুসন্ধান করে ধ্বংস  করেন তাই।


    বৃত্র কোনো অসুর নয়। 'ঐতরেয় আরণ্যক' পড়ুন। বৃত্র মানে জলাধার।


    নগর নগরজীবনকে ধ্বংস করতে হলে জলাধার ধ্বংস জরুরি।


    ২.


    আমরা বলি কালো হাত ভেঙ্গে দাও।


    কারা বলি? কালোরা।


    মানে সাদা হাত ভালো।


    পৃথিবীর সবকটি মহাযুদ্ধ শ্বেতাঙ্গ অবদান।


    বড়ো বড়ো গণহত্যার সিংহভাগ শ্বেতাঙ্গদের সম্পাদিত।


    লিখি কালোবাজার, কালোবাজারি, কালোটাকা।


    কেন?


    আমাদের চিন্তা চেতনায় গলদ আছে। অন্ধকার বা কালো খারাপ হবে কেন?


    কালো যদি মন্দ তবে চুল পাকিলে কান্দ ক্যানে?


    তারাশঙ্করের 'কবি' নিতাইয়ের প্রশ্ন তো আমাদেরও।


    ৩.


    বাংলা ও বাঙালি নিয়ে দেশের কিছু লোকের ঘুম নাই।


    তাঁরা চার্টার্ড প্লেনের মান্থলি বা মাসিক টিকিট কেটে দৈনিক যাত্রা শুরু করেছেন।


    যাত্রাই বটে। 


    উঁচু তারে কন্ঠ বাঁধা। 'নামভূমিকা'য় যাত্রার শেখর গাঙ্গুলির মতো এক সংলাপে তিন রকম কথা বলেন।


    আসামে এক বাংলায় এক কেরলে আরেক।


    বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস ওঁদের জানতে হবে।


    বাঙালি বীরের জাতি। 


    বাঙালি শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত জাতি।


    গৌতম বুদ্ধ তখন বালক।


    শিক্ষার জন্য গুরু বিশ্বামিত্র এসেছেন। গুরুকে জিজ্ঞেস করলেন: কোন লিপি শেখাবেন আমাকে। বলে ৬৪টি লিপির উল্লেখ করলেন।


    এর মধ্যে একটি বঙ্গলিপি।


    আপাতত ৬৪টি লিপির কথা জানি: 


    পাঠশালায় গিয়ে গৌতম গুরুকে জিজ্ঞেস করেন—“আপনি আমাকে কোন্ লিপি শেখাতে চান ?


    ৫. কিংবা বঙ্গের


    ১, এটা কি ব্রাহ্মী


    ২, অথবা খরােষ্ঠী


    ৩. অথবা পুষ্করশরি


    ৪. অথবা অঙ্গের


    ৬. অথবা মগধের


    ৭, অথবা মাঙ্গল্য


    ৮. অথবা মনুষ্য লিপি


    ৯, অথবা অঙ্গুলি লেখন


    ১০, অথবা শকারী লিপি


    ১১, অথবা ব্রহ্মবল্লীর লিপি


    ১২, অথবা দ্রাবিড়দের লিপি


    ১৩, অথবা কানাড়ীদের লিপি


    ১৪. অথবা দক্ষিণের


    ১৫, অথবা উগ্রাদের


    ১৬, অথবা আকার লিপি


    (চিত্র লিপি?)


    ১৭, অথবা অনুলােম লিপি


    ১৮. অথবা অর্ধধনু লিপি


    ৩৭, অথবা অন্তরক্ষিদেবদের


    ৩৮, অথবা উত্তর কুরুদের


    ৩৪৯, অথবা পূর্ণ বিদেহর


    ৪০, অথবা উৎক্ষেপ লিপি


    ৪১, অথবা নিচেপ লিপি।


    ৪২, অথবা বিক্ষেপ লিপি


    ৪৩, অথবা প্রক্ষেপ লিপি।


    ৪৪. অথবা সাগর লিপি।


    ৪৫. অথবা বজ্র লিপি।


    ৪৬. লেখ-প্রতিলেখ


    ৪৭. অথবা অনুদ্রুত লিপি



    ১৯, অথবা দারদ অথবা


    ২০. অথবা ফসদের অথবা


    ২১. অথবা চীনের


    ২২, অথবা হুনদের


    ২৩, অথবা মধ্যাক্ষর বিস্তরা।


    ২৪. অথবা পুষ্পল লিপি


    ২৫, অথবা দেবদের লিপি


    ২৬, অথবা নাগদের লিপি।


    ২৭. অথবা যক্ষদের।


    ২৮. অথবা গন্ধর্বের লিপি।


    ২৯. অথবা কিন্নরদের।


    ৪৮. অথবা শাস্রাবর্ত লিপি


    ৪৯, অথবা গণনাবর্ত লিপি


    (গণিত-সংখ্যা লিপি)


    ৫০. অথবা উৎক্ষেপাবর্ত লিপি।


    ৫১, নিক্ষেপাবর্ত লিপি।


    ৫২, পাদলিখিত লিপি


    ৫৩. দ্বিরুত্তর পদসন্ধি লিপি


    ৫৪. যবদ্দেসত্তরা পন্ধি লিপি


    ৫৫. অধ্যয়হরিনী লিপি।


    ৫৬. সর্বারুত সংগ্ৰহণী লিপি


    ৩০. অথবা মহােরগদের।


    ৩১, অথবা অসুরদের


    ৩২, অথবা গরুড়দের


    ৩৩, অথবা মৃগচক্রদের


    ৩৪, অথবা চক্রলিপি


    (উড়িয়া লিপি ?)


    ৩৫, অথবা বায়ুমরুদের


    ৩৬, অথবা ভৌমদেবদের


    ৫৭. অথবা বিদ্যানুলােম লিপি


    ৫৮. অথবা বিমিশ্রিত লিপি


    ৫৯. ঋষিতপস্তপ্তন লিপি।


    ৬০. রােচমনন ধারণী প্রেক্ষণ লিপি


    ৬১, অথবা গগনপ্রেক্ষণী লিপি


    ৬২, সবৌরসাধিনীস্যন্দ লিপি।


    ৬৩. সর্বসার-সংগ্ৰহণী লিপি।


    ৬৪, অথবা সর্বভূতরুত গ্রহণী লিপি।


    ( ঋণ: 'ললিতবিস্তার' নাটক এবং বাঙালা লিপির উৎস ও বিকাশের অজানা ইতিহাস: এস এম লুৎফর রহমান)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Emanul Haque | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৫০503459
  • অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।
    বৃত্রকে মিথ্যাচার করে হত্যার জন্য ইন্দ্রর ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়। 
    ঐতরেয় আরণ্যক মহাভারতের আগে।
  • দীপ | 2401:4900:3a22:602d:705a:276d:2440:***:*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৫০503460
  • গত দুই/তিন বছর ধরে বিদ্যাসাগরের পিন্ডি চটকানো অনেক লেখা পড়েছি। মূল বিষয়বস্তু বিদ্যাসাগর হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক, বাংলা ভাষায় তৎসম শব্দ ঢুকিয়ে বাংলা ভাষার ক্ষতি করেছেন। বিদ্যাসাগর শূদ্রদের শিক্ষার বিরোধী ছিলেন। 
    অর্থাৎ বাঙালী যাদের শ্রদ্ধা করে তাদের সবাইকে অস্বীকার করতে হবে।
    একটি জায়গায় অসামান্য তথ্য পেয়েছি। বিদ্যাসাগরের বাদুড়বাগানের বাড়ি ইউরোপীয় স্টাইলে নির্মিত। অত‌এব বিদ্যাসাগর ব্রিটিশদের স্তাবক! অসামান্য যুক্তি!
  • দীপ | 2401:4900:3a22:602d:705a:276d:2440:***:*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৫৩503461
  • হে মহাপণ্ডিত, ব্রাহ্মণকে হত্যা করলেই তো ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়। বাংলা বোঝেন না?
  • &/ | 151.14.***.*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৫৭503462
  • ঋগ্বেদেই তো আছে বৃত্রের কথা।
  • দীপ | 2401:4900:3a22:602d:705a:276d:2440:***:*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:০৭503465
  • মাঝখানে আরেকটি অসামান্য তথ্য পেয়েছিলাম। মূল বক্তব্য নজরুলের হিন্দু ব‌উ নজরুলকে আফিং খাইয়ে বুঁদ করে রাখত। আর সেই সুযোগে রবীন্দ্রনাথ (অনেকের ভাষায় রবি ঠগ) নজরুলের লেখা চুরি করে নোবেল পেয়ে যায়! 
    প্রসঙ্গত রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নোবেল পেয়েছেন, নজরুল তখন ১৭ বছরের কিশোর! 
    আমার ধারণা নজরুলের সামনে এই নোংরা কথা বললে নজরুল তার মাথা ফাটিয়ে দিতেন।
    বাস্তবে অল্পবয়সী নজরুল একবার তাঁর এক বন্ধুকে ( বন্ধুটি আবার হিন্দু) রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কটূক্তি করায় প্রচণ্ড মারামারি করেন! এইসব শূকরশাবককে সামনে পেলে যে কি করতেন! 
     
     
  • দীপ | 2401:4900:3a22:602d:705a:276d:2440:***:*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:১১503466
  • শুধু তাই নয়, রবিঠগ লালনের গানের খাতা চুরি করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে। কুকৃতী, কুদ্দীপন ও তাদের সাথীরা দিনের পর দিন এইসব গপ্প ব্লগে , প্রকাশ্য জনসভায় বলে চলেছে।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:২৫503468
  • এই সাইটেই তো একসময় একজন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ওসব অদ্ভুত গপ্পো লিখত। নজরুলের কবিতা চুরি করে নাকি রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেয়ে গেলেন। তারপরে নজরুলকে ধুতুরা খাইয়ে ঝিম মারিয়ে রাখলেন---এইসব গপ্পো।
  • S | 2a0b:f4c2::***:*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:২৯503469
  • উইকি থেকে দেখছি যে গীতান্জলি বাংলায় প্রকাশ পায় ১৯১০ সালে। তখন নজরুল ১১ বছরের খোকা।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:৩০503470
  • কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধু বলছিলেন কিছু স্কুলের শিক্ষক নাকি এইসব 'গপ্পো' অক্লেশে বলেন ছাত্রছাত্রীদের।
  • S | 2a0b:f4c2::***:*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:৩৫503471
  • আমাদের দেশেও এইরকম লোক কম নেই। অভিজিত ব্যানার্জি নোবেল পাওয়ার পরে একজন শিক্ষিত ওয়েল রেড লোক বলেছিলেন যে কমিটিতে অমর্ত সেন আছেন, তাই নাকি পেয়েছেন। বোধয় হোয়াতে এই তথ্য পেয়েছিলেন আর ভেবেছিলেন যে অন্যরকম প্রমাণের উপায় নেই। পরে যখন নোবেল কমিটির লিস্ট পাঠালাম, তখন বললো যে না থাকলে কি হবে অমর্ত সেনই নাকি ব্যবস্থা করে দিয়ে দিয়েছে। অবশ্য ভদ্রলোককে দোষ দিয়ে লাভ নেই। হিন্দি বলয়ের লোক, চিরকাল এইসবই দেখেছেন। অন্যরকম কিছু ভাবতেও পারেন না।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:৪৮503472
  • একেবারে দুইদিক থেকে চলছে। তুমুল। এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ।
  • দীপ | 2402:3a80:1968:67a8:abd7:8de:2ba7:***:*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:০৫503473
  • এরা একধারসে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ সবাইকে গালাগালি করে বেড়ায়। সবাই হিন্দুত্ববাদী, সাম্প্রদায়িক, উচ্চবর্ণের লোক, ব্রিটিশদের দালাল! প্যাটার্নটা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয়না!
  • দীপ | 2402:3a80:1968:67a8:abd7:8de:2ba7:***:*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:১০503474
  • আর হুদুড়দুর্গার গল্প তো এসেই গেছে। দুর্গাপূজা আসলে অনার্যদের উপর আর্যদের হত্যালীলা, আদিবাসী হত্যার উৎসব। অত‌এব দুর্গাপূজা বন্ধ করতে হবে। 
    ধান্দাবাজি বুঝতে কি কষ্ট হয়?
  • দীপ | 2402:3a80:1968:67a8:abd7:8de:2ba7:***:*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:১৬503477
  • কয়েকটি প্রোপাগান্ডা তুলে দিচ্ছি। পড়লেই বুঝতে পারবেন।
     
    বিদ্যাসাগরের দুইশততম জন্ম বার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাব ভেবেছিলাম৷ মানসিক দ্বন্ধ আর ব্যস্ততার কারণে হয়ে উঠেনি৷ একটা ব্যাপারে অবাক হয়েছি, বেশির ভাগ শিক্ষিত জন বিদ্যাসাগরকে বাংলা লিপির প্রবর্ত্তক মনে করেন৷ এছাড়া ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ‘বিদ্যাসাগর’ খেতাব আরও অনেকে পেয়েছিলেন৷ অনেকজন বিদ্যাসাগরের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্রই আজ বিদ্যাসাগর বলে সর্ব্বজন বিদিত৷
     
    বিদ্যাসাগর বাংলা লিপির প্রবর্ত্তক ছিলেন না, সংস্কার করেছিলেন৷ জীবিতাবস্থায় স্বেচ্ছায় হোক বা তৎকালীন সমাজ বাস্তবতার কারণে হোক, তিনি ইংরেজ রাজনীতির শিকার ছিলেন৷ তার কর্ম্মে, তার রচনায় তাই ইংরেজ তোষণ লক্ষ্যণীয়৷ বর্ত্তমানেও তিনি রাজনীতির শিকার হয়েই রইলেন৷ বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কার, শিক্ষা বিস্তার, নারী শিক্ষা, বিধবা বিবাহ চালু অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেকালে তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন ব্রাহ্মণ্যবাদীদের কাছে৷ একালে এসে সমালোচিত হচ্ছেন ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধীদের কাছে৷ একালীয়দের দাবী বিদ্যাসাগর অধ্বঃপতিত ব্রাহ্মণ্যবাদকে সংস্কার করেছিলেন বাঁচিয়ে তোলার জন্য৷
     
    কলকাতা থেকে প্রচারিত সংঘীদের একটা পোষ্টার ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে৷ তারা বাংলাদেশের বাংলাকে বাংলা বলে মানতে নারাজ, বরং বিদ্যাসাগরী সাধু বাংলাকে তারা সনাতনী বাংলা বলে দাবী করেছে এবং সে বাংলাকে পুনপ্রবর্ত্তন করতে চায়৷ এরা আসলে বিদ্যাসাগরকে ডুবাতে চাইছে৷
     
    প্রকৃতপক্ষে সনাতনী বাংলা বলতে যদি কিছু থেকেও থাকে, সেটা বাংলাদেশী বাংলাতেই বহাল আছে৷ বিদ্যাসাগরী সাধু (ব্যবসায়ী, বেনিয়া) বাংলা ছিল কৃত্রিম৷
     
    বাংলা ভাষার বিকাশ শুরু হয়েছিল পালযুগে৷ এরপর সেনযুগে বাংলা পরিণত হয়েছিল ব্রাত্য ভাষায়৷ বাংলার প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহশাহের যুগে৷ তিনি তার সালতানাতের নাম রেখেছিলেন বাঙ্গালাহ৷ বঙ্গ শব্দের ফারসী রূপ বাঙ্গালাহ৷ অনেকে মনে করে বঙ্গ শব্দের সাথে আল যোগ হয়ে বঙ্গাল হয়েছিল৷ এটা সঠিক মনে হয় না৷ বঙ্গের অধিবাসীরা বঙ্গাল নামে পরিচিত ছিল৷ এই বঙ্গালেরা আর্য ছিলেন না, তাই অন্যরা এদের খাটো চোখেই দেখতেন৷ এই যুগে এসেও দক্ষিণ ভারতীয়সহ অন্য অনেক ভারতীয় বাঙ্গালীকে বঙ্গাল বলে তাচ্ছিল্য করে থাকে৷
     
    মূলত সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বঙ্গালদের বাসভূমির নাম রাখলেন বঙ্গালাহ৷ ফারসীর পাশাপাশি বঙ্গালদের ভাষাকেও সরকারী ভাষার মর্য্যাদা তিনি দিয়েছিলেন৷ অন্যান্য মুসলিম শাসকদের মতো বঙ্গাল হিন্দুদেরকেও সরকারী কাজে নিযুক্ত করলেন এবং বঙ্গালদের সাহিত্যকে প্রণোদনা দিলেন৷ সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহকে আধুনিক বাঙ্গালার জনক বললেও বলা যায়৷
     
    সরকারী দপ্তরে ফারসীর পাশাপাশি বাংলার ব্যবহার, বঙ্গাল মুসলিমদের দৈনন্দিন ব্যবহারে ফারসীর প্রভাব, চাকরীর সুবাদে হিন্দুদের ফারসী শিক্ষা,— ইত্যাদি সব কারণে বাংলা ভাষার বিকাশে যুগে অনেক ফারসী শব্দ বাংলায় স্থান করে নিয়েছিল৷
     
    বিদ্যাসাগরের বাংলা সংস্কারের অন্যতম নিদর্শন হল, তিনি তার গুরুর নির্দ্দেশনায় বাংলায় ব্যবহৃত ফারসী শব্দগুলোকে সংস্কৃত শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছিলেন৷ বিদ্যাসাগরের লেখায় এক শতাংশ ফারসী শব্দও পাওয়া যাবে না৷ লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, বিদ্যাসাগরেরা বাংলা থেকে ফারসী শব্দকেই বিতাড়িত করেননি, তারা বাংলার দেশীয় শব্দগুলোকেও অশিষ্ট বলে বর্জ্জন করেছিলেন৷ বিদ্যাসাগর আর তার সহযোগীদের ফারসী শব্দ বর্জ্জন ও সংস্কৃত শব্দের প্রচলনের কারণে দীর্ঘকাল বাংলাকে সংস্কৃতের দূহিতা বলে মনে করা হত৷ মূলত, বাংলা সংস্কৃতের দূহিতা ছিল না৷ আমার এই দাবীর সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাবে আঠারো শতকের আগে লিখিত বাংলা সাহিত্য ও চিঠিপত্রে৷
     
    তবু বিদ্যাসাগরের অবদানকে ছোট করে দেখি না৷ কিন্তু এও মানি না যে বিদ্যাসাগরের বাংলা আর বাংলাদেশের বাংলা আলাদা কোন ভাষা৷ বাংলায় জল-পানির দ্বন্ধ যখন থেমে গেছে, তখন সংঘীরা নতুন করে সনাতনী বাংলা ফর্মূলার জন্ম দিয়ে বাংলাকে বিভক্ত করতে চাইছে৷
     
    জয় বাংলা৷…
     
  • দীপ | 2402:3a80:1968:67a8:abd7:8de:2ba7:***:*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:২২503479
  • দুর্গাপূজা নিয়ে আরেকটি অসাধারণ লেখা।
     
    পলাশীর যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল। সিরাজ হেরে গেলেন, জিতল ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বাংলার ধনসম্পদ নিজেদের মধ‍্যে ভাগ করে নিল লুটেরারা। এদের অন‍্যতম নবকৃষ্ণ দেব। 
    The Corporation That Changed the World: How the East India Company Shaped the Modern Multinational’ শীর্ষক বইয়ে লেখক নিক রবিনস লিখেছেন সিরাজের রাজত্বের পতনের পর বাংলার তোষাখানা লুট করতে ব্রিটিশদের সাহায্য করেন নবকৃষ্ণ। রাতারাতি “৮০০ কোটি টাকা মূল্যের সোনা, রুপো, এবং গয়নাগাঁটি” ভাগ করে নেন তাঁরা নিজেদের মধ‍্যে। 
    ইংরেজদের পক্ষ নেওয়ার জন্য পেলেন নবকৃষ্ণ পেলেন ‘রাজা বাহাদুর’ খেতাব; অতঃপর ১৭৬৬ সালে ‘মহারাজা বাহাদুর’। সবথেকে বড়ো কথা, গোটা সুতানুটি অঞ্চলের তালুকদার হয়ে গেলেন তিনি। সামান্য মুনশী থেকে বিশাল সাম্রাজ্য ও ধন-দৌলতের মালিক— এমনই চমকপ্রদ উত্থান রাজা নবকৃষ্ণ দেবের।
     
    ১৯৯৭-এর ৫ই অক্টোবর কলকাতার
    আনন্দবাজার’ পত্রিকার রবিবাসরীয়তে ‘ক্লাইভের দুর্গোৎসব’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক নির্মল কর উল্লেখ করেছেন :
    "নবকৃষ্ণ দেব ছিল ইংরেজদের চাকর। কোনো সময় ছিল ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রাইভেট টিউটর। উন্নতি করে হয়েছিল তালুকদার, চার হাজারি মনসবদার। পলাশীতে সিরাজের পতনে যারা সবচেয়ে বেশি উল্লসিত হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র আর কলকাতার নবকৃষ্ণ দেব।"
    অঢেল টাকা এসেছে , এবার চাই খানিকটা সম্মানও। 
     
     ক্লাইভ নবকৃষ্ণকে বোঝালেন কলকাতায় একটি বিজয় উৎসব করার জন্য। ‘হিন্দু ভাবাবেগ’ রক্ষা পেয়েছে বলে কথা! নবকৃষ্ণ তখনই বাংলার বাসন্তীপূজোকে এগিয়ে এনে লাগিয়ে দিলেন "দুর্গাপূজা"। এর আগে শরৎকালে নবপত্রিকার পূজো প্রচলিত ছিল। 
     
    রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকালে বাংলায় শিব পুজোর প্রচলন ছিল, দুর্গা পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায় না। পাল যুগে বাংলায় বৌদ্ধ প্রভাব বিস্তৃত হলে এখানে মূর্তি পুজো কমে যায়। পরে সেনযুগে আবার এর বাড়বাড়ন্ত হলে রণরঙ্গিনী নানা দেবী পূজিতা হন দস‍্যু তস্কর ও নিষ্ঠুর জমিদারদের দ্বারা। 
     
     দেখতে দেখতে গড়ে উঠলো একচালা প্রতিমা। প্রতিমার গা ভর্তি সোনার গয়না ঝলমল করে উঠলো। দুর্গার কেশদামে গুঁজে দেয়া হলো ২৬টি স্বর্ণনির্মিত স্বর্ণচাঁপা। নাকে ৩০টি নথ। মাথায় সোনার মুকুট। তারপর তোপধ্বনির পর সন্ধিপূজোর শুরু। দৈনিক নৈবেদ্য দেওয়া হল ২৩ মণ চালের।সাহেব মেমরা ত বটেই, ওয়ারেন হেস্টিংস পর্যন্ত হাতীতে চড়ে এসেছিলেন সেই পূজায়। ক্লাইভ দক্ষিণা দিয়েছিলেন ১০১ টাকা। সাহেবসুবোরা মৌজ করে দেখলেন বাঈজী নাচ, এছাড়াও পানভোজন ও মনোরঞ্জনের নানা উপচার তো ছিলই। 
     
    এই পুজোর বিপুল সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগায় অন্যান্য ধনী ব্যবসায়ীদের, যাঁরা স্ব স্ব গৃহে ধুমধাম সহকারে চালু করে দেন দুর্গাপূজা। বাড়ির পুজোয় কোনও ইউরোপীয়ের, বিশেষ করে ব্রিটিশের উপস্থিতি, হয়ে ওঠে অর্থ, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, এবং কোম্পানির সঙ্গে সান্নিধ্যের প্রতীক।
     
    উইকিপিডিয়ার শেষ আপডেট অনুযায়ী, বিশ্বে বাঙালী মুসলমান হল ১৮৫ মিলিয়ন এবং বাঙালী হিন্দুর সংখ্যা হল ৮০ মিলিয়ন। তাহলে দুর্গা পূজা সর্বজনীন হয় কি ভাবে ? আর বাঙালীর সেরা উৎসবই বা হয় কিভাবে? 
     
    এছাড়া বাংলার মুলনিবাসী ও আদিবাসীরা দুর্গা পুজাকে তাদের পরাজয়ের প্রতীক বলে মনে করে। যে দুর্গাকে অসুর হত্যার কারণে হিন্দু সম্প্রদায় পূজা করে সেই অসুরকেই নিজেদের রাজা বলে বাংলার মূলনিবাসী ও আদিবাসীরা পূজা করে এবং দুর্গাপুজাকে তারা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করে। দুর্গাপুজোর দিনগুলোতে তারা বুক চাপড়ে কাঁদে। 
     
    এই হল দুর্গাপূজার ইতিহাস।
  • দীপ | 2402:3a80:1968:67a8:abd7:8de:2ba7:***:*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:২৮503480
  • কবি প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের অসামান্য বিশ্লেষণ। ধান্দাবাজি বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হবেনা!
     
    'হিন্দু' তো এখনও 'বাঙালি' হয় নি, 'হিন্দু'ই রয়ে গিয়েছে। কারণ হিন্দুর ধারণা সে হিন্দু বলেই 'বাঙালি'। বাঙালি হবার জন্য বাঙালি মুসলমানের মতো ধর্মের সঙ্গে ভাষা ও সাংস্কৃতিক মোকাবিলা এবং ধর্মবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে 'হিন্দুর' কোন লড়াই সংগ্রাম নাই। সেকুলারিজমের নামে হিন্দু হিন্দুত্ববাদকেই পুষ্ট করেছে। বাঙালি হিশাবে হিন্দুর কোন লড়াই সংগ্রাম নাই, যা বাঙালির মধ্যে বিভেদ নয়, ঐক্য কায়েম করে। শুধু তাই নয়, হিন্দু রাজনৈতিক নেতারাই দেশ ভাগের কারন, যদিও তারা মুসলমানদের এতোকাল দোষারোপ করছিলো, কিন্তু এখনকার গবেষকরা তা নাকচ করে দিয়েছেন। (পড়ুন, জয়া চক্রবর্তীর 'বাঙলা ভাগ হোল')। বাঙালি হিশাবে হিন্দুর কোন রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম নাই। অতএব তারা বাঙালির ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রের পরিবর্তে, হিন্দু ভারতকেই তাদের দেশ ও রাষ্ট্র বানিয়েছে। 
     
    অন্যদিকে সনাতন ধর্মের বিশাল ঐতিহ্য, বৈচিত্র্য ও ইতিহাসের নিরাকরণ ঘটিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদের পতাকাতলে হিন্দুত্ববাদিরা 'হিন্দু' নামে আত্মপরিচয় নির্মাণ করেছে। হিন্দু কোন ধর্ম নয়, অথচ সনাতন ধর্মের নিরাকরণ ঘটিয়ে হিন্দু নিজেকে 'হিন্দু' বলে পরিচয় দেয়। বাঙালি মুসলমান একাত্তরে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য প্রাণ দিয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছে। বাঙালি মুসলমান লড়ে ও রক্ত দিয়ে 'বাঙালি' হয়েছে। সেই হিম্মত হিন্দুত্ববাদি বাঙালির হয় নি, কখনই হবে না। 
     
    ফলে ইসলাম নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা সাধারণত হিন্দু পরিচয়বাদি, বিশেষত ব্রাহ্মণ্যবাদী বর্ণ হিন্দুর থাকে না। হিন্দু বুঝতে পারে না, 'ইসলাম' বললেই সেটা শুধু আরব দেশের ইসলাম না, সেটা বাংলাদেশের ইসলামও বটে। দ্বিতীয়ত ইসলামের জাতপাত বিরোধী আন্দোলনকে অস্বীকার ও বিরোধিতা করবার জন্য ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু উপমহাদেশে ইসলামের আবির্ভাব ও প্রসারকে 'ইন্টারভেনশান' ছাড়া আর কোন ভাবে বুঝতে পারে না। অথচ এই হিন্দুই আবার আর্য আগ্রাসনকে গৌরব গণ্য করে।
     
    সৌদি আরব, ইরান কিম্বা তুরানের না, জয়গান গাইতে হবে বাঙালি মুসলমানের; 'ইসলাম'-এর নামে যারা ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিগত নিপীড়ন মেনে নেয় নি। ঠিক তেমনি লড়তে হবে হিন্দুত্ববাদী দিল্লির বিরুদ্ধে, যে রাষ্ট্র নীচু জাত, নিম্ন বর্গ, আদিবাসী জনগণ এবং অ-হিন্দু মজলুম জনগণের দুষমণ। বাঙালি মুসলমানকে বুঝতে হবে সনাতন ধর্ম আর 'হিন্দু' সমার্থক নয় এবং বাঙালি সহ সকল নিপীড়িত জাতি, শ্রেণি ও স্থানীয় অধিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করাই তার কাজ। ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত ও হিন্ন্দুত্ববাদিদের বিরূদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই হচ্ছে একালের প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য।
  • দীপ | 2402:3a80:1968:67a8:abd7:8de:2ba7:***:*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:৩২503481
  • আরেক মাতব্বরের বিশ্লেষণ।
     
    বাংলা ভাষী হিন্দু জাতিবাদের জন্ম হয়েছিলো উনবিংশ শতকের কোলকাতায়, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের লুটেরা নব্য জমিদারদের পয়সায়। যা শুধু বাঙালি জাতিসত্তাকেই হত্যা করতে চায় নি, খন্ডে খন্ডে ভেঙে দিয়েছে একটি জাতিগোষ্ঠী ও তার দেশকে এবং দেড়শ বছর ধরে বিষাক্ত করেছে বাঙালির ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি। ইদানিং এই বঙ্গীয় হিন্দু জাতিবাদ মার খাচ্ছে উত্তর ভারতীয় হিন্দুত্বের হাতে, এর থাকা না থাকায় বাঙালি জাতির কিচ্ছু আসে যায় না। এদিয়ে বড়জোর সর্বজনীন দুর্গাপূজা সম্ভব, সর্বজনীন বাঙালি জাতীয়তাবাদ সম্ভব নয়। 
           ----- রাজু আহমেদ মামুন
  • &/ | 151.14.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:৩৫503482
  • কী শয়তান ! কী শয়তান ! বাঙালিতে বাঙালিতে বিভাজন তৈরী করছে! হিন্দু বাঙালি মুসলমান বাঙালি! মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্য না পেলে কী হত? সেসব অস্বীকার করতে চায়।
  • এলেবেলে | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:৪০503483
  • কিন্তু দ্রোণাচার্য আর একলব্যকে নিয়ে যেটা লেখা হয়েছে সেটা কিন্তু আদ্যন্ত ভুলই। এতে দ্রোণাচার্যকে ছোট করার সুযোগ নেই, একলব্যকে বড় করে দেখানোর সুযোগও নেই। একলব্য তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সাহায্যে তীর ছুঁড়তেন না। কাজেই ওই আঙুলটা তাঁর দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য জরুরি ছিল না। ওই কারণেই দ্রোণ গুরুদক্ষিণা হিসেবে একলব্যের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি দেওয়ার কথা বলেন। অলিম্পিকসে যে আর্চারি হয়, সেখানে একলব্যের উদাহরণ বিস্তর মিলবে। মিলবে ভুটানেও, আর্চারি যে দেশের জাতীয় ক্রীড়া।
  • এলেবেলে | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:৪১503484
  • তীর তির
  • দীপ | 2402:3a80:1968:67a8:abd7:8de:2ba7:***:*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:৫৪503486
  • আর অনেক বিপ্লবী(!!) এইসব গপ্প লিখে ভাবে বিপ্লব করে ফেলেছি!
  • দীপ | 2402:3a80:1968:67a8:abd7:8de:2ba7:***:*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:৫৪503485
  • আর অনেক বিপ্লবী(!!) এইসব গপ্প লিখে ভাবে বিপ্লব করে ফেলেছি!
  • Amit | 121.2.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:০২503488
  • কেউই তো মনে হয় হাতের দশটা আঙুল ব্যবহার করে তীর ধনুক ছোড়ে না ? এতো গুচ্ছ গুচ্ছ  শিষ্য থাকতে দ্রোণ বাকি  সব্বাইকে ছেড়ে একলভ্যকেই আঙ্গুল কেটে গুরুদক্ষিণা দিতে বললেন কেন ? আর কারোর ​​​​​​​সিমিলার ​​​​​​​কেস ​​​​​​​আছে ​​​​​​​? 
     
    যদি গোটা মহাভারতে অন্য কারোর এরকম কেস নাই  থাকে - তাহলে কারণটা আইদার ক্যাস্টিসম হোক বা নেপোটিজম হোক বা পাতি রাজাদের চামচাগিরি হোক - দ্রোণাচার্য্যকে এসবের থেকে ক্লিন চিট ঠিক কিসের বেসিসে দেওয়া যাচ্ছে ?  
  • &/ | 151.14.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৩৭503489
  • একলব্যের কাহিনিতে সবচেয়ে প্রথমে যে প্রশ্নটা আসে তা হল, একলব্য সোজাসুজি দিতে অস্বীকার করলেন না কেন? অন্যায় আবদার মেনে নিলেন কেন? বিশেষত তিনি তো দ্রোণের প্রত্যক্ষ শিষ্য ছিলেন না, নিজে নিজে সব শিখেছেন। কোনোভাবেই দ্রোণ গুরুদক্ষিণা দাবী করতে পারেন না নীতিগতভাবে।
    একলব্য নিজেও রাজপুত্র, নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র। রাজপুত্র হয়েও এইভাবে এসে দ্রোণের আশ্রমে ভর্তির জন্য কাকুতিমিনতিই বা কেন? দ্রোণ বিতাড়িত করলে তিনি চলে গেলেন। অথচ গিয়েও গেলেন না, দ্রোণের মূর্তি বানিয়ে সেই মূর্তির সামনে অস্ত্রাভ্যাস করলেন তাঁকে গুরু মেনে।
    পুরো গল্পটার মধ্যে বিরাট ঘাপলা আছে।
    নিষাদ রাজপুত্র নিজের স্বজাতির মধ্যে থেকেই অস্ত্রশিক্ষা করতে পারতেন, তাঁর বাবা নিজেই যখন রাজা, বাবা নিজেই শেখাতে পারতেন। কেন তবে দ্রোণের কাছে এসে এই ঝুলোঝুলির কাহিনি?
  • Amit | 121.2.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৫503492
  • আরে রামায়ণ মহাভারত সবই তো কাল্পনিক। হয়তো ছোট কোনো যুদ্ধের কাহিনীকে ডালপালা শাখা প্রশাখা জুড়ে জুড়ে এতটা জাম্বে সাইজ দাঁড়িয়েছে। এগুলো বেসিক্যালি তখনকার সমাজ ব্যবস্থাকে কিছুটা রিপ্রেসেন্ট করে। ছোটবেলা থেকে ​​​​​​​এসব ​​​​​​​শুনে ​​​​​​​শুনেই ​​​​​​​তো ​​​​​​​লোকে ​​​​​​​বড়ো হয়েছে -এগুলোর ​​​​​​​একটা ​​​​​​​মেজর ​​​​​​​ইমপ্যাক্ট ​​​​​​​আছে ​​​​​​​সোশ্যাল ​​​​​​​এডুকেশনে। 
     
    রিয়েল লাইফে একলব্য না বলতেন কিনা  অথবা না বলতে পারতেন কিনা নাকি পাল্টা যুদ্ধ করতেন কিনা সেটা প্রশ্ন নয় । কথাটা হলো গল্পে দ্রোনর কথায় তিনি দিব্যি আঙ্গুল কেটে দিয়ে দিলেন - অর্থাৎ গল্পে দেখানো হলো (সমাজে মেসেজ দেওয়া হলো ) যে ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয়ের আদেশ ওনার জন্যে শিরোধার্য। তিনি নিষাদ রাজপুত্র হলেও না বলার মতো সামাজিক অবস্থানে নেই। 
     
    আরো একটা মেসেজ সমাজকে দেওয়া হলো যে তিনি দক্ষ হলেও ক্ষত্রিয় দের সাথে একাসনে বসার অধিকারী নন। সুতরং আঙ্গুল কেটে আরো একটা মেসেজ দেওয়া হলো। তারপর গোটা মহাভারতে ওনার আর বিশেষ রেফারেন্স পাওয়া যায়না - মানে একতা কাপুরের মেগা সিরিয়ালের স্টাইলে একটা সাইড ক্যারেক্টারকে টার্মিনেট করে দেওয়া হলো। এতই যদি তার দক্ষতা থাকতো আঙ্গুল কাটার পরে , এতগুলো যুদ্ধে কোথাও তাকে দেখানো যেতোনা ? 
     
    কর্ণকেও অর্ধরথ বলা হতো যেহেতু সারথির পালিত পুত্র। সুতরাং তাঁকে ভ্যালিডিটি দেওয়ার জন্যে কুন্তীর ভার্জিন বার্থ আর একটু ডিভাইন কানেকশন আমদানি করতে হলো (ভার্জিন মেরীর গল্পের সাথে কি মিল - কে কার থেকে টুকতো কে জানে ?) - পালিত হলে কি আছে ?  জন্মের সোর্স কোড কিন্তু এক্কেরে খাঁটি সূর্য্য বংশের। অনেকটা হালের জেনুধারী রাহুল গান্ধীর মত আর কি :) 
     
    এভাবেই পুরান ইত্যাদি বহু গল্প তে সুক্ষভাবে কাস্ট সিস্টেমের গ্লোরিফিকেশন দেখানো হয়েছে। গোদাভাবে দেখালে তো ধরা পড়ে যেত। তাই সাপ ও মারতে হবে ওদিকে লাঠিটাও বাঁচাতে হবে। 
  • Emanul Haque | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩২503493
  • @amit ধন্যবাদ
  • &/ | 151.14.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৩503494
  • কুরুপান্ডবের মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে, তার মধ্যে নিষাদরা যুদ্ধ করবে কেন? বয়ে গেছে তাদের। তারা তো সাইডে গ্যালারিতে বসে 'ওয়া ভাই ওয়া, ক্যায়সা দিল রে! অ্যাট্টাবয়' বলবে।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৫503495
  • অমিত, একলব্যের গল্পের মেসেজটা আরও সাংঘাতিক। দেখানো হল নিষাদ রাজপুত্র ল্যা ল্যা করে গুরু দ্রোণের শিষ্য হবার জন্য ঝুলোঝুলি তো করেই, তাড়িয়ে দিলেও তাকে গুরু মানে। আবার আঙুল অবধি কেটে দেয়। আত্মসম্মান বোধ বলে কিছু নেই।
  • Amit | 121.2.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৯503496
  • অর্থাৎ কুরুপান্ডবের মধ্যে যেই জিতুক , তাতে নিষাদ দের কিছু আসে যায়না বা সামাজিক অবস্থান কিছু বদলায় না - এটাও তো হতে পারে ? বেশি ওপরে ওঠার চেষ্টা করলে তাদের আঙ্গুল কেটে নিলেই কম্মো শেষ ? 
  • Amit | 121.2.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪২503497
  • এক্সাক্টলী -সেটাই বলতে চাইছি। মেসেজটা এটাও  দেওয়া হচ্ছে - নিষাদদের মধ্যে কোয়ালিফায়েড কোচ নেই যতই তীর চালাতে শিখুক জঙ্গলে। শিখতে হলে সেই ক্ষত্রিয় বা ব্রাম্মন ক্যাটেগরির কোচ ই চাই দ্রোণের মতো - সে ক্লাসরুম হোক কি অনলাইন ক্লাস। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন