S
"মিলিটারির লোক বাড়িতে ফিরে পুলিশের কাজ করছে।"
তাই কি?
বলা হয়েছে প্রত্যেকের ম্যান্ডেটরি আর্মি সার্ভিস চালু করা দরকার।
S,
The United States does not have compulsory military service, but it is also included in this list because all males between the ages of 18 and 25 must register with the Selective Service to be drafted if needed.
ভারতে পুরোপুরি পেইড আর্মি।
পৃথিবীর প্রচুর দেশেই সেটা পুরোপুরি পেইড নয়।
dc,
সরকারি চাকরি করতে চাইলে মিলিটারি সার্ভিস যদি পূর্বশর্ত হয়, তাতে সমস্যাটা কোথায়?
সোভিয়েত দেশে ( আগে এবং ভেঙে যাবার পরেও) শুধু চাকরি নয়, উচ্চযিক্ষা পেতে গেলেও মিলিটারি সার্ভিস করে আসতে হয়। এটা অনেক আগে থেকে চালু করা উচিত ছিল।
আমার এই দেশে কিছু কিছু অভিবাসী পরিবার নাগরিকত্ব পাবার আবেদন দেরি করে করেন ( বলাই বাহুল্য ভারতীয়রা), কারন পরিবারে টিনএজার পুত্র রয়েছে। আগে নাগরিকত্ব পেলে পুত্রটিকে আর্মি সার্ভিস করতেই হবে। সেক্ষেত্রে ঐ সময়টুকু পার করে নাগরিকত্বের আবেদন করলে কা মঞ্জুর হয় না।
amit, S,
অস্ট্রেলিয়া বা অ্যামেরিকায় ম্যান্ডেটরি মিলিটারি সার্ভিস নেই।
ভারতে চালু হলে আপনাদের কেন মনে হচ্ছে এটা খারাপ?
এই দেশগুলোতে আছে।
https://worldpopulationreview.com/countries/countries-with-mandatory-military-service/
ছাত্রাবস্থায় একটা সিনেমা দেখেছিলাম। প্রহার। নানা পাটেকর অভিনীত।
না দেখে থাকলে দেখুন।
আর হ্যাঁ, আমাকে চাড্ডি বলে দাগিয়ে লাভ নেই। আমি কী, তা আমি জানি।
২০ নভেম্বর ১৯৭০। বেলেঘাটা সিআইটি আবাসন থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র অশোক বসু সহ চার জনকে পুলিশ রাতে তুলে নিয়ে আবাসনের দেওয়ালে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পর দিন এলাকার বাসিন্দারা প্রতিবাদ মিছিল করেন, সেই সঙ্গে গোপালচন্দ্র সেনই পশ্চিমবঙ্গে প্রথম উপাচার্য যিনি ধিক্কার-বিবৃতি দেন, কোনও অছিলাতেই ছাত্র-যুবকদের পুলিশি হত্যা সমর্থনীয় নয়, বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রাখার বিষয়ে তিনি বরাবরই আপসহীন।
৩০ ডিসেম্বর ১৯৭০, তাঁর কাজের মেয়াদের শেষ দিন। অফিসের শেষ ফাইলে সই করে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় উপাচার্য বাড়ি ফিরছেন। এ দিনও হেঁটে চলেছেন, একটু আগে রেজিস্ট্রার এসে তাঁকে গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। উপাচার্য সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন সেই প্রস্তাব। লাইব্রেরির পাশে, পুকুরপাড় দিয়ে রোজকার মতো হেঁটে এ দিনও তিনি বাড়ি ফিরতে চান।
সেই ফেরা আর হয়নি। আততায়ীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, পুকুরপাড়েই তাঁকে হত্যা করল। দুই পক্ষে কোনও কথোপকথন হয়েছিল কি না কেউ জানে না। রাজনৈতিক হিংসার আক্রমণে আদর্শনিষ্ঠা কখন কী ভাবে আদর্শমূঢ়তায় পরিণত হয়, সেই ইতিহাসরচনা আজও অপেক্ষিত।
রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি এবং কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার নিরুপম সোম লিখছেন:
আমি হাওড়ায় এসপি হয়ে এসেছিলাম ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি, আর ১৯৭০ সালের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ প্রথম নকশাল আন্দোলনের ঢেউ এসে লাগল। প্রথম দিকে পোস্টারে লেখা হত: ‘বিপ্লব কোনও জনসভা নয়’, ‘পৃথিবী আমাদের ও তোমাদের, কিন্তু অবশেষে তোমাদের’। কিন্তু খুব শিগগিরই আরম্ভ হল ‘খতম মানে খুন নয়, এটা হল শ্রেণিঘৃণার চরম প্রকাশ’।
আমরা বুঝতে পারছিলাম মাও-এর এই উক্তিগুলোর পোস্টার লাগাচ্ছে চারু মজুমদারের পার্টির লোকেরা, কিন্তু তাদের খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এও বোঝা যাচ্ছিল, এ বার খতম অভিযান শুরু হবে। প্রথম দিকে যারা ছুরিকাহত হয়ে মারা গেলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন বেলুড় পলিটেকনিকের টিচার, কলকাতার হেয়ার স্ট্রিটে একটি বড় সাইকেল দোকানের মালিক। এঁরা কী করে শ্রেণিশত্রু হলেন, বুঝে উঠতে পারলাম না।
দেশব্রতী-তে পড়ে আমরা জানতে পেরেছিলাম, চারু মজুমদারের নির্দেশ ছিল, শ্রেণিশত্রু নিধনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হবে না, কারণ তা নাকি ‘এলিটিজ্ম’-এর জন্ম দেয়। তাই সব শ্রেণিশত্রুকেই ছোরা-ছুরি দিয়েই জখম বা হত্যা করা হচ্ছিল। প্রথম দু-একটি ঘটনাস্থল থেকে নকশাল ছেলে ধরা পড়ার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল, এ পার্টির কোনও লোকাল কমিটি, ডিস্ট্রিক্ট কমিটি ইত্যাদি নেই। এক একটি পার্টির ছেলেকে মধ্যমণি করে গড়ে উঠেছে এক একটি অ্যাকশন স্কোয়াড, এবং তাদের নিজ নিজ এলাকায় শ্রেণিশত্রু চিহ্নিত করে তাকে খতম করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
এ আন্দোলন নিয়ে সমর সেনের মতো পণ্ডিত লোকেরা অনেক কিছু লিখেছেন। আমি খালি পুলিশ সংক্রান্ত ঘটনার কথা বলছি। ছুরি খেয়ে পুলিশের মধ্যে যাঁরা মারা গেলেন, তাঁরা সবাই কনস্টেবল ও দু-এক জন এ এস আই। প্রথম যে কনস্টেবলটি নকশালের ছুরিতে মারা গেলেন, তাঁর দেহ পোস্টমর্টেমের পর চ্যাটার্জিহাট ফাঁড়ির কাছে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলাম আমি এবং প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি।
সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্ত্রী একটি শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে পাগলের মতো আমাদের দিকে ছুটে এলেন ও ছেলেটিকে ডিআইজি-র সামনে নামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আমার স্বামী তো চলে গেল। এখন আপনারাই বলুন, এই বাচ্চাটাকে আমি কী ভাবে মানুষ করব।’ ডি আই জি কল্যাণ চক্রবর্তী পুলিশে যোগ দেওয়ার আগে দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ছেলেটিকে কোলে তুলে নিয়ে আবেগের সঙ্গে বললেন, ‘মা, কিছু ভাববেন না, আপনার স্বামী বেঁচে থাকলে এ-ছেলে যে-ভাবে মানুষ হত, এখনও সেই ভাবেই মানুষ হবে। আপনি পেনশন, গ্র্যাচুইটি ছাড়াও এক সপ্তাহের মধ্যে কুড়ি হাজার টাকা হাতে পাবেন এবং আপনি রাজি থাকলে আপনার এই ছেলে আঠারো বছর বয়স হলে আপনার স্বামী যে চাকরি করত, সেই চাকরিই পাবে। আর যাদের হাতে আপনার স্বামী মারা গেল, তাদের ধরার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হবে।’
শুনে মহিলা অনেকটা শান্ত হলেন। এ রকম দুজন কনস্টেবলের মৃতদেহ আমি তাঁদের বিধবা স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছি ও একই রকম অবস্থার মধ্যে পড়েছি। তবে, আমি কল্যাণবাবুর মতো অমন নাটকীয় ভাবে কথা বলে আশ্বস্ত করতে পারিনি।
যে সব একটু অবস্থাপন্ন চাষি নকশালদের হাতে মারা যেতেন, প্রায়ই দেশব্রতী-তে দেখতাম, তাঁদের জোতদার, সুদখোর, নারীমাংসলোলুপ ইত্যাদি বলা হত। আর নিহত পুলিশকর্মীদের ঘুষখোর, ট্রাকের মালিক ইত্যাদি বলা হত। অথচ, তদন্তে দেখেছি সে রকম কিছু নয়। এক জন চাষি মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত ভাইদের বলেছেন, ‘একসঙ্গে থেকো, কিছুতেই পৃথক হয়ো না, তোমাদের বড় বউদিকে (অর্থাৎ তাঁর স্ত্রীকে) ও আমার ছেলেটাকে দেখো।’ আর পুলিশ কনস্টেবলদের ‘ট্রাকের মালিক’ বলা একেবারেই মিথ্যে ছিল।
অনেক নৃশংস হত্যাকাণ্ড নকশালরা করেছিল। অথচ, তখনকার দিনে যে-কোনও পত্রিকার সংখ্যা তুললেই একটি গল্প অবশ্যই থাকত, যেখানে নিরীহ, সুকুমার, অত্যন্ত প্রতিভাবান নকশাল ছেলেদের পুলিশ নির্বিচারে হত্যা করছে। তবে, এক দিক দিয়ে হাওড়ার পুলিশ খুব দেখিয়ে দিয়েছিল। আন্দোলনের প্রথম দিকে দুটি নকশাল ছেলে আমতলা ফাঁড়িতে ঢুকতেই সেন্ট্রি কনস্টেবল ২০/৩০ রাউন্ড গুলি চালায়। ছেলে দুটি ভয়ে পালিয়ে যায়। তার পর আর কোনও নকশাল ছেলে থানা বা ফাঁড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেনি।
নকশাল আন্দোলনের জন্য পুলিশের সব কাজকর্ম তছনছ হয়ে যায়। থানা-ফাঁড়ির কনস্টেবলরা সব বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে থানা-ফাঁড়িতেই মেস করে থাকতে আরম্ভ করেন। মাসের প্রথম দিকে মাইনের টাকাটা স্ত্রী বা মা-বাবা’কে দিয়ে আসতেন। পিকেট, পেট্রল ডিউটি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ একলা ডিউটি করলে নকশালদের হাতে মারা পড়বার সম্ভাবনা ছিল খুব।
আমার ছেলে লিলুয়ার ডন বস্কো-তে পড়ত। হঠাৎ স্কুলে পোস্টার পড়ল— ‘এসপি-র ছেলেকে খতম করতে হবে।’ সত্যিই খুব ভয় পেয়ে গেলাম। ছেলেকে আমার কোয়ার্টারের কাছে সেন্ট টমাস স্কুলে ভর্তি করলাম।
দুটো দিনের কথা বলতেই হবে। এক দিন সকালবেলা বেলুড়ের দিকে খুব গোলমালের খবর পেয়ে ওখানে গেছি, তত দিনে হাওড়ার নকশাল আন্দোলন প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে লুম্পেন এলিমেন্টের হাতে।
বিভু নামে একটি নকশাল ছেলের বোমা ফেটে মৃত্যু হলে পোস্টার পড়ল— ‘লাল হাওড়ার লাল কমরেড লাল বিভু লাল সেলাম।’
অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি দেখে এক ভদ্রলোক আমাকে তাঁর বাড়িতে খানিক ক্ষণ বসতে অনুরোধ করলেন আর বললেন, তাঁর ছেলে হুগলি পুলিশে আছে ও এখনই চুঁচুড়া যাবে। তাঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে গেলাম। দেখি, বেরনোর দরজার উপরে রামকৃষ্ণদেবের বিরাট ছবি। তাঁর ছেলে বাড়ি থেকে বেরনোর আগে সেই ছবিতে বার বার প্রণাম করছে। এর পর সেই ভদ্রলোকও ছবিটির সামনে বার বার প্রণাম করলেন।
একটু পরে ছেলেটি বাড়ির ভেতর থেকেই বড় একটা ব্যাগ নিয়ে এল, সঙ্গে তার স্ত্রীও কাঁদতে কাঁদতে এল ও ছবির সামনে গিয়ে প্রণাম করতে আরম্ভ করল। ছেলেটি আমাকে বলল, তার পোস্টিং রিজার্ভ অফিসে। ও বালি থেকে ট্রেন ধরবে। আমি বালির ওসি’কে বললাম একটা জিপে করে বালি স্টেশনে পৌঁছে দিতে। ওরা চলে গেলে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতেই ভেতরের দিকে চলে গেল এবং ভদ্রলোক আমায় বললেন, বউমা এখন ওর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কেঁদে যাবে। কেননা, তিন-চার ঘণ্টা তো কোনও খবর পাবে না, ওর স্বামী বেঁচে আছে কি মরে গেছে। সে দিন বাড়ি ফেরার সময় আমার মনে হচ্ছিল, নকশাল আন্দোলন এক দিন আমরা নিশ্চয়ই দমন করব। কিন্তু যারা প্রাণ দিচ্ছে কিংবা যারা চোখের জল ফেলছে, তাদের কেউ কি কোনও মূল্য দেবে? নকশাল নেতাদের যদি সাজাও হয়, তাদের আদর্শবাদের জন্য সরকার নিশ্চয়ই তাদের ছেড়ে দেবে এবং তারা বেরিয়ে এসে পুলিশের বিরুদ্ধেই বড় বড় কথা বলবে।
আর এক দিনের কথা ভেবে সবচেয়ে কষ্ট হয়, সে দিন আমার ভুলের জন্য একটি প্রাণ চলে গেল। এক দিন সকালের দিকে কাসুন্দিয়াতে কয়েক জন নকশাল ছেলে পোস্টার লাগাচ্ছিল। ওসি শিবপুর খবর পেয়ে ওখানে উপস্থিত হন। কিন্তু ছেলেরা গুলির মধ্যে দিয়ে এ দিক ও দিক পালিয়ে যায়। পাড়ার কিছু লোক বেরিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ওসির তর্ক-বিতর্ক হয়। ওখানে গিয়ে কয়েক জন বৃদ্ধ লোককে দেখতে পেলাম।
তাঁরা আমাকে দেখে রাগত ভাবে বললেন, ‘এটা কী হচ্ছে? এই সব ছেলেকে পাড়ার সবাই চেনে। আমরাও চিনি। অথচ আপনার ওসি-ই তাদের চেনে না ও ধরতে পারছে না!’ আমি বললাম, ‘আপনারা বিশ্বাস করুন, আমরা সত্যিই জানি না। আপনারা যখন জানেন, আমাদের একটু সাহায্য করুন না, অন্তত টেলিফোনে।’ এক ভদ্রলোক দল ছেড়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন, একটু ক্ষণ দাঁড়ালেন। তার পর খুব নিচু গলায় বললেন, ‘আচ্ছা আমিই বলব।’ তার পর ফিরে গেলেন। আমরা যথারীতি কিছু বাড়ি সার্চ করে দু-তিনটি সন্দেহভাজন ছেলেকে তুলে নিয়ে এলাম। ভদ্রলোক কিন্তু আমার সঙ্গে পরে আর যোগাযোগ করলেন না।
পরদিন ভোরবেলায় ওসি শিবপুর আমাকে খুব উত্তেজিত ভাবে বললেন, ‘স্যর, একটা সাংঘাতিক কাণ্ড হয়ে গেছে। কাসুন্দিয়ায় কাল যেখানে গিয়েছিলেন, সেখানে এক্ষুনি চলে আসুন। খুন হয়ে গেছে।’ ওখানে গিয়ে শুনলাম, সেই ভদ্রলোক সকালে মর্নিং ওয়াক করেন। সকালে তিনি বাড়ি থেকে বেরনো মাত্রই দু-তিনটি ছেলে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্রমাগত ছুরি মারতে থাকে। লোকজন এলে তারা পালিয়ে যায়। ভদ্রলোককে হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাঁচার আশা খুব কম। বোধহয় এত ক্ষণ শেষ হয়ে গেছেন। সবাই আমার সামনে একটা পোস্টার তুলে ধরল, যেটা ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে। দেখলাম, তাতে লেখা: ‘এসপি-র দোস্ত শ্রেণিশত্রুকে খতম করা হল’। ভদ্রলোক এজি বেঙ্গলের অবসরপ্রাপ্ত কেরানি ছিলেন।
সময়ের চাকা গড়িয়েছে অনেকটাই। আজকের দিনে অহরহ শোনা যায় 'আরবান মাওবাদী' শব্দটি।
মার্ক্সীয় পরিভাষায় বিচার করতে গেলে এইসব ‘আরবান মাওবাদীদের বেশিরভাগের শ্রেণিচরিত্র হল পেটি বুর্জোয়া। ব্যক্তি জীবনে পুঁজিবাদ, ভোগবাদের নির্বাহ বিলাসী , বাজার অর্থনীতির সেবক। অতিবামপন্থা হল তাদের স্টাইল স্টেটমেন্ট।
আজকাল ‘অনুপ্রেরণা’ শব্দটি এরাজ্যে বহুল প্রচলিত। কিষেনজি বা কোটেশ্বর রাওয়ের অনুপ্রেরণা ছিলেন কবি ভারভারা রাও। যারা আজ কবি ভারভারা রাওয়ের জন্য বলছেন তাদের অবশ্যই কিষেনজির নেতৃত্বে সংঘটিত সব সন্ত্রাসের দায়ভার নেওয়া উচিত। ২০১১ সালে কিষেনজি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সরকারের আমলেই এরাজ্যে নিহত হলেন। সেই সময় কিষেনজির বিরুদ্ধে গনহত্যার, সন্ত্রাসের ৪২টি মামলা চলছিল। সেই হত্যা বা সন্ত্রাসের নৈতিক দায়িত্ব তো অনুপ্রেরণা দাতা ভারভারা রাওয়ের নেওয়া উচিত। নেবেন কোনও ‘আরবান মাওবাদী’?
২০১০ সালের ৬ এপ্রিল ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়ারাতে নিতান্ত অনৈতিকভাবে আক্রমণ করে খুন করা হল ৭৬জন সিআরপিএফ জওয়ানকে। ৯ এপ্রিলে দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবান নকশাল/ মাওবাদিদের অনুপ্রেরনাতে ডিএসইউ এবং এআইএসএ নামে দুটি অতি বিপ্লবী ছাত্র সংগঠন বিজয় উৎসব করে ।কলকাতায় যারা নিজেদের ‘আরবান মাওবাদি’ বলছেন তারা এই দুটি ঘটনার দায় নেবেন?
ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরির ডায়রেক্টর সিএন ভট্টাচার্য একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে মাওবাদীরা কাশ্মীরের জেহাদিদের মাধ্যমে আফগানিস্তানের তালিবানিদের থেকে অত্যাধুনিক বিস্ফোরক প্রযুক্তি ভারতে এনেছে। যা বিগত ছয় দশকে এদেশে আসেনি সেই ভয়ানক প্রযুক্তি আনল মাওবাদীরা। এরপর জেহাদি আর তারা মিলে তা সাড়া দেশে ছড়িয়ে দেয়। এর দায় নেবেন কলকাতার স্বঘোষিত ‘আরবান মাওবাদী’?
আরবান মাওবাদীদের এই রাজপুত্র সুলভ ভাব কলেজ জীবন থেকেই শুরু হয়। কলকাতা বা দিল্লির যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে, ইনশাআল্লা, ইনশাআল্লা’ কিংবা ‘ভারত কি বরবাদি তক, জঙ্গ রহেগি, জঙ্গ রহেগি’ স্লোগান ওঠে, সেখানে অতিবিপ্লবী ছাত্রসংগঠনের মূল অংশই ধনী পরিবারের থেকে আসেন।
যেহেতু অতি বাম ছাত্র সংগঠনগুলি সবচেয়ে বেশি উচ্ছৃঙ্খলতায় মদত দেয়, তাই এই ধনী ঘরের ছেলে মেয়েদেরও সবচেয়ে পছন্দের হয় এই সংগঠনগুলি। এই বড়লোকের সন্তানদের ‘মুগয়া ব্রিগেড’ই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সব তথাকথিত রাষ্ট্র বিরোধী প্রদর্শনের মূল শক্তি। এরা রাত্রে বিদেশি স্কচ হুইস্কি সেবন করে সকালে ‘দুধ পিয়া তো হামলা বোল’ ধ্বনি দেন।
এরা কলেজ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরে কখনও ফিরেও দেখেন না যে দেশের গরিব মানুষগুলো কেমন আছে, কিংবা আদিবাসীরা মরল কি বাঁচল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রানা বসু এই ‘মুগয়া ব্রিগেডে’র উজ্জ্বলতম রত্ন। রানার বাবা কলকাতার নাম করা ডাক্তার ছিলেন, লক্ষপতির একমত্র সন্তান। রানা অতিবামপন্থী ছাত্র নেতা।
১৯৭০ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশাল’রা ঘোষণা করলেন পরীক্ষা হবে না। রাষ্ট্রই থাকবে না, আর বিশ্ববিদ্যালয়, আর তার পরীক্ষা। তাদের অনুপ্রেরণাতে রানা ১৯৭০ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে খুন করেন উপাচার্য গোপাল চন্দ্র সেনকে।
তারপর?
তারপর রানা বাম-ডান সব নেতার সাহায্যে দেশ ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। সেখানে বহাল তবিয়তে বসবাস শুরু করে।
আর সেই শ্রেনীশত্রু গোপাল চন্দ্র সেনের স্ত্রী নিতান্ত কষ্টে জীবন নির্বাহ করেন। দারিদ্রের মধ্যেই বড় হয় স্যারের সন্তানেরা। যাদবপুরের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রূপকার, ছাত্রদরদী অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র সেনের হত্যার দায়িত্ব নেবেন কোনও রাজপুত্র? আরবান মাওবাদী?
প্রসঙ্গত, আজ মে মাসের ১৫ তারিখ। চেয়ারম্যান চারু মজুমদারের জন্মদিন।
ঋণ: আনন্দবাজার আর্কাইভস, জিষ্ণু বসু
চাড্ডি দের উৎপাতে সুস্থ সাহিত্য চর্চা করাও মুশকিল হলো দেখছি
দুর , এবার লেখাই ছেড়ে দেবো এখানে
১৯৪৬ সালের কলকাতা হত্যাকাণ্ড’ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত পড়াশোনা করতে গিয়ে ‘ছাই চাপা আগুন’ এর মত মজাদার একটি তথ্য পাওয়া গেল! উক্ত হিন্দু নিধন কাণ্ডের কোনো স্মৃতিই বস্তুত মজাদার নয়, তবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জন্য তা অদ্ভুত ভাবে অদ্ভুত! কারণ, যে কমিউনিস্ট পার্টি মুসলিম লীগকে তোষণ করে পাকিস্তানের জন্ম দিতে সাহায্য করে, সেই পার্টির তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা জ্যোতি বসুর জবানবন্দীতেও উঠে এসেছে কলকাতা হত্যাকাণ্ডের নারকীয় বর্ণনার খন্ডচিত্র! সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার! একটু গোড়া থেকেই শুরু করা যাক।
১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট জিন্নার ডাকা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস বা Direct action day কে সফল করার উদ্দেশ্যে এক পক্ষকাল পূর্ব থেকেই জোরদার প্রচার শুরু হয় কলকাতায়। কলকাতা সেই সময় লীগের প্রধান শক্তি। পাকিস্তান গঠনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে প্রথমে কলকাতা ও এরপর হাওড়াকে হিন্দুশূন্য করার ভয়াবহ ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হয় নিপুণ ভাবে। বিভিন্ন মহল্লা, মসজিদ, মাদ্রাসাগুলিতে মজুত করা হতে থাকে লোহার রড, কাটারি, দা, সড়কি, বন্দুক ইত্যাদি। মুসলিম ঘরবাড়িতে গিয়ে বিলি করা হয় একশন প্ল্যানের লিফলেট। প্রকাশ্যে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, সময়টা পবিত্র রমজান মাস। এই রমজান মাসেই জিহাদ করে মক্কা জয় করা হয়েছিল। তাই এই সুবর্ণ সময়েই মুসলিম লীগের নেতৃত্বে কাফের হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমান সমাজকে জিহাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
নিরীহ হিন্দুরা তখনো পর্যন্ত জিহাদের স্বরূপ সম্পর্কে অবগত নয়! তারা এই প্রত্যক্ষ সংগ্রামকে গান্ধী পরিচালিত ঢাল-তলোয়ারহীন শান্তিপূর্ণ মিছিল এর চেয়ে অধিক কিছু মনে করতে পারেন নি সেদিন। সরকারি ছুটিকে উপভোগ করে নেওয়ার চেয়েও বেশি কিছু ভাবনা কলকাতার হিন্দুদের সেদিন হয় নি। পরিকল্পনা মত, ১৬ই আগস্ট দুপুর ৩টের সময় অক্টারলোনি মনুমেন্ট(শহীদ মিনার) এর তলায় প্রায় ১০০০০ সশস্ত্র মুসলমানের জমায়েত হয়। মঞ্চে তখন মুসলিম লীগের প্রভাবশালী সব নেতারা। তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী হুসেন শহীদ সুরাবর্দীর উপস্থিতিতেই চলতে থাকে হিন্দুবিরোধী উস্কানি। ধ্বনি ওঠে– শালা হিন্দু লোগোকো মার ডালো, কিংবা কাফের তোদের দিন ঘনিয়ে এসেছে! ‘গুন্ডাদের পালনকর্তা’ নামে কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী সুরাবর্দী নিজেও প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন– ২৪ ঘন্টা সময় দিলাম, কী করতে পারিস কর!
উল্লেখ্য, এই মিটিং এ আমন্ত্রিত ছিল দলিত হিন্দু, খ্রিস্টানরাও।দলিত নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল এবং কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুকেও মঞ্চে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। যোগেন মণ্ডল মন্ত্রিত্বের লোভে সেই মঞ্চে উপস্থিতও ছিলেন তখন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, পাকিস্তান ছিনিয়ে নিতে যে যোগেন মণ্ডল মুসলিম লীগকে প্রত্যক্ষ সমর্থন জুগিয়েছিলেন, পাকিস্তান তৈরি হলে সেই যোগেন মণ্ডলকেই লীগ গুন্ডাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে ভারতে পালিয়ে আসতে হয়। নারীলোলুপ লীগ শিয়ালদের হাতেই ছেড়ে আসতে হয় নিজের পরিবারকে! সে এক মর্মান্তিক পরিণতি। যাক। আমরা আবার ফিরে আসি ১৬ই আগস্টের সেই বারুদ-ঠাসা লীগ সভায়।যোগেন মণ্ডল পরিস্থিতি না বুঝে মঞ্চে উঠে বসেন। কিন্তু কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু প্রলেতারিয়েত সর্বহারা মুসলিম লীগ গুন্ডাদের সমর্থন করার জন্য হাজির হলেও তিনি কিন্তু যোগেন মণ্ডলের মত মঞ্চে আরোহণ করলেন না। বস্তুত, জ্যোতি বসুর রাজনৈতিক ধুরন্ধরতা গোটা দেশে প্রসিদ্ধ। জ্যোতি বসু পুলিশ প্রহরার মধ্যে প্রথমে সভার গতিপ্রকৃতি আঁচ করার চেষ্টা করলেন। সভার উদ্দেশ্য বুঝতে তাঁর বেশিক্ষণ সময় লাগল না যখন দেখলেন অদূরে চৌরঙ্গীর হিন্দু দোকানগুলোতে আগুন ধরিয়ে সর্বহারার বিপ্লব পরিচালনায় রত মুসলিম লীগের গুন্ডারা! পুলিশি পাহারাতেই দ্রুত বৌবাজারের পার্টি অফিসে পালিয়ে গেলেন জ্যোতি বাবু।
সন্ধ্যার দিকে কয়েকজন কমরেডের সঙ্গে জ্যোতি বসু শিয়ালদা হয়ে লোয়ার সার্কুলার রোডের পার্টি অফিস পর্যন্ত হেঁটে ফেরেন। সেই সময়, বাড়ি ও দোকানগুলো থেকে উথলে ওঠা আগুন, রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহ এবং ফুটপাথে ঘোরাঘুরি করা লীগ গুন্ডাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তিনি ‘জনগণের সঙ্গে’ পুস্তিকায় লিপিবদ্ধ করেছেন। সেদিন মুসলিম কমরেডরা যে লীগের সঙ্গে একযোগে হিন্দু নিধন যজ্ঞে অংশগ্রহণ করেছিল এবং প্রমোদ দাসগুপ্ত, নীরোদ চক্রবর্তী কিংবা বঙ্কিম মুখার্জির মত ধুতি পরা হিন্দু কমরেডদের প্রাণ যেতে বসেছিল, সে ঘটনাও কার্যত স্বীকার করে নেন জ্যোতি বাবু। ঘটনা হল, কমিউনিস্ট পার্টির পুরোনো সদস্যরা কলকাতা হত্যাকাণ্ড নিয়ে জ্যোতি বসুর এই বিবৃতি সম্পর্কে জানলেও প্রকাশ্যে কখনোই মানতে চান না। কারণ, অবশ্যই এতে সেই তিনদিনব্যাপী ঘটা হিন্দু নিধন যজ্ঞে মুসলিম লীগের অবদানের স্বরূপ প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে হবে। ‘দাঙ্গা’ বলে চালানো ইতিহাসের কালো অধ্যায়টির ষড়যন্ত্র স্বচ্ছ হয়ে উঠবে মানুষের কাছে। ফলে ক্ষুণ্ন হবে মাতৃভূমি পাকিস্তানের প্রতি দায়বদ্ধতা!
বর্তমানে, ‘লালচে গুয়েভরা’র কিউট মুখওয়ালা গেঞ্জির টানে রাতারাতি কমরেড হয়ে যাওয়া যুবক-যুবতিদের কাছেও সেই অভিশপ্ত অধ্যায়টি অজ্ঞাত। পূর্বজদের আউড়ে যাওয়া পাকিস্তান ও মানবতাবাদের ভাঙা ক্যাসেটের ভিতরের লক্ষ লক্ষ হিন্দুর অশ্রু ও রক্তে ভেজা রিলটির আবেদন তাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। বলা ভালো করানো হয় না।
ইতিহাসকে বদলানো যায় না। তবে ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। সম্রাট পৃথ্বীরাজ চৌহান ৭ বার (মতান্তরে ১৬ বার) মহম্মদ ঘোরীকে প্রাণভিক্ষা দেন। কিন্তু ঘোরী পৃথ্বীরাজকে একবার হাতের মুঠোয় পেয়েই তাঁর দুচোখ উপড়ে নেয়। পৃথ্বীরাজ চৌহানের মর্মান্তিক ইতিহাসকে বদলানো সম্ভব নয়, তবে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যিক। ইতিহাস পৃথ্বীরাজকে ক্ষমা করেনি, কাউকেই করে না। বরং, ইতিহাস বজ্রকণ্ঠে সতর্ক করে চলে।
হ্যাঁ, আমারও মনে হয়েছে একটা পিছুটান ছিল। একটা দায়। দেবেশ রায়ের পাশাপাশি যদি নবারুণকে দেখি, নবারুণ এটাকে এড়াতে পেরেছিলেন বলে মনে হয়। ফ্যাতাড়ুদের পাশাপাশি বাঘারুকে রাখলে হয়ত বোঝা যাবে। কিংবা ধরুন বুড়া কাহারের গল্পটা ছাড়া গ্রামের দিকে নবারুণ খুব একটা ফিরছেন না, গ্রামীণ বিশুদ্ধতার খোঁজ করছেন না, ভাগ্যিস করছেন না। এইটে মনে হয় দেবেশ রায়ের পক্ষে কঠিন ছিল। নবারুণ পড়ার পর মফস্বলি বৃত্তান্ত পড়তে গিয়ে এরকম মনে হয়েছিল। এই পয়েন্টে আপনার কি মনে হয়? এইটে ছাড়াও দেবেশ রায়ের সঙ্গে অমিয়ভূষণ ও তারাশঙ্করের একটা তুলনামূলক আলোচনা পড়তে চাই। লিখুন। ঃ-)))
সুপ্রভাত
দেবেশ রায় কে লাস্ট শুনি জানুয়ারী মাসে ।ওকাকুরা ভবনে । লিটিল ম্যাগাজিন মেলার উদ্বোধনে।
দেবেশ রায় সম্পর্কে লেখা দেখতে পাচ্ছি না তো! আনন্দবাজার ইত্যাদি কাগজেও পেলুম না। টুকরো টুকরো কয়েকটা কথা মনে পড়ছে। প্রবন্ধ পড়ে মনে হয়েছে নিজে যত ভাল উপন্যাস লিখতেন, তার চেয়েও ভাল উপন্যাস জিনিসটাকে বুঝতেন। মার্কেজের অফ লাভ নিয়ে একটা চমৎকার প্রবন্ধ পড়েছিলুম। সেখানে একটা খাঁটি কথা লিখেছিলেন, মার্কেজ আমাদের বাংলাভাষার লেখক। পড়েই মনে হয়েছিল সত্যিই তো! ঐ যে বর্ণনা মাকোন্দোর কলাবন বৃষ্টিতে ভিজছে কিংবা দেবদূতের ডানা থেকে ঝরে পড়ছে উকুন, মুরগির গু, জলে ভেসে যাওয়া জেলেদের বাড়িটা এগুলো সব আমাদের এখানকার মতই। দ্রাঘিমা পৃথক কিন্তু অক্ষরেখার বন্ধুত্ব। :-) প্রবন্ধটায় মূল বক্তব্য ছিল, ক্রিশ্চিয়ানিটি সম্পর্কে মার্কেজের কতকিছু পড়ে ঐ ছোট নভেলটা লিখেছিলেন সে তো জানা কথা। কিন্তু লেখায় কিভাবে সেই জ্ঞানকে চেপে গেছেন। লেখার এসব গুপ্ত টেকনিকের দিকে দেবেশ রায় বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন।
কলকাতায় একটি আলোচনাসভা হয়েছিল। যোগ দিয়েছিলেন সুনীল গাঙ্গুলি, দেবেশ রায়, বাংলাদেশ থেকে ইলিয়াস ও হুমায়ুন আহমেদ। সেখানে গদ্যের জটিলতা নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছিল। পরে এটার উল্লেখ পাবেন শহীদুল জহির সম্পর্কে দেবেশ রায়ের লেখায়। এই সভাটায় আনিসুজ্জামানও ছিলেন। আরও গপ্পো আছে অভিজিত সেনের ভাই মিহির সেনগুপ্তের অন্তরঙ্গ ইলিয়াস বইটায়। ইলিয়াস নাকি সুনীলকে পাকড়াও করে অভিজিত সেন, সাধন চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি পড়তে বলেন। তারপর বাংলাদেশের এক প্রকাশক বক্তৃতা দিতে উঠে নাকি আনন্দবাজারকে কিঞ্চিত তৈলমর্দন করছিল। তো ইলিয়াস পিছনে দর্শকের আসন থেকে ক্রমাগত আওয়াজ দেন, পড় পড়, পায়ে লুটিয়ে পড়। ঃ-))) সামনের সারিতে বসেছিলেন আনিসুজ্জামান। তিনি পরে মিহিরবাবুকে বলেন পিছন থেকে ওটা ইলিয়াস চেঁচাচ্ছিল তাই না? আনিসুজ্জামান আবার ইলিয়াসের মাস্টারমশাই। ইনিই পরে ইলিয়াসকে রাজী করান আনন্দ পুরস্কার নিতে।
Viruses expose dipshit leadership with great precision.