এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • একটা নতুন বছর আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

    Surajit Poddar লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৪৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অন্তরে অতৃপ্তি র’বে সাঙ্গ করি’ মনে হবে
    শেষ হয়ে হইল না শেষ।

    রবি ঠাকুরের ‘সোনার তরী’-র এই অংশটুকু স্কুলে ছোটো গল্পকে সংজ্ঞায়িত করতে বারবার বলা হত। কবিতায় রবি ঠাকুর যদিও জীবনের কথা বলেছিলেন এই ভাবে। একটা বছর শেষে নতুন বছরের শুরুতেও তো সেই এক ভাব। সন্ধিক্ষণে বরাবর নতুনের পরিকল্পনাই স্বতঃসিদ্ধ। যাবতীয় বৃহৎ পরিকল্পনার মূল কথাটি সহজ ভাষায় বলে গেছেন বাঙালির তরুণ কবি সুকান্ত, “এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি”। কিন্তু কিভাবে পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করবেন কবি? সুকান্ত সেকথা কোথাও বলেন নি। আসলে কবি যে সেসব পারবেন না, সেকথা সক্রেটিস বহু যুগ আগেই তাঁর দ্বান্দিকতা দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। তাই তিনি কবিদের মতো ‘নকলনবিশ’দের তাঁর ইউটোপিয়া কাললিপোলিস থেকে বিতারিত করতে চেয়েছেন।

    অতএব প্রপিতামহ সক্রেটিসের কথা মতো কবিদের দোর ছেড়ে, আমাদের একটু এগোতেই হয় তাঁদের দোরগোড়ায় যারা বর্তমান পৃথিবীর জীবনধারায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, কবিতা লিখে নয়, প্রযুক্তির দুনিয়ায় বড়োসড়ো পরিবর্তন এনে। আপনি যে রাজনৈতিক বা দার্শনিক মনোভাবের মানুষই হোন না কেন, প্রযুক্তির প্রভাবকে আজকের দুনিয়ায় অস্বীকার করার ধৃষ্টতা করবেন না, সে যতই ইন্টারনেটে আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষের আধার নাম্বার ছড়িয়ে আঁধার নেমে আসুক। সে যতই প্রযুক্তি বিষয়টা যে আসলে কি, তা আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ না-জানুক। কিন্তু সবাই জানে এআই বলে একটা শব্দবন্ধ আছে। মোবাইল বলে একটা দারুণ কাজের যন্ত্র আছে। খেতে না-পাক ইন্টারনেট আছে ফ্রি-তে (পয়সা দিয়ে রিচার্জ করেও)।
    শিশুদের জন্য আগামী পৃথিবীর কথা ভাবতে বসে কয়েক বছর আগে বিল গেটস লিখেছিলেন, “আমার বড়ো মেয়ে যখন আমায় বলল, সামনের বছর আমি দাদু হবো, তখন থেকে সমগ্র পৃথিবীকে নতুন করে দেখতে শুরু করেছি। ‘সামনের বছর আমি দাদু হবো’ শুধু এইটুকু কথা আমাকে এত ভাবিয়ে তোলে, আমার কাজের ক্ষেত্রে যেন একটা নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। আমার নাতি-নাতনিরা যে পৃথিবীতে জন্ম নেবে, তার কথা কল্পনা করি, প্রত্যেকের সন্তান আর নাতি-নাতনিদের পাশে থাকতে চাই, যেন তারা বেঁচে থাকার, উন্নতি করার সুযোগ পায়”। আরিব্বাস, আপনি হয়তো কোনোদিন ভেবেই দেখেন নি যে, আপনি এবং আম্বানি-আদানি একই জল-হাওয়ায় বেঁচে আছেন, তাই না? এটা যে একটাই পৃথিবী, আমাদের মনেই থাকে না। এটা কেন এত জরুরি ভাবনা? ইদানীং একটি পডকাস্টে লম্বা ইন্টারভিউ দিতে এসে ইলন মাস্ক বললেন সমষ্টিগত চেতনার কথা। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে তিনি সমষ্টিগত চেতনার একটা আখড়া বানাতে চাইছেন। যেখানে অনেক লোক তাঁদের মতামত দেবেন, গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন। এইসব। এটা যত হবে, তত নতুন নতুন আইডিয়ার তথা তত্ত্বের জন্ম হবে। তত আমাদের পৃথিবীকে আমরা নাকি সুন্দর করতে পারব। এখানেই না-থেমে বললেন, এখন যে পৃথিবী জুড়েই নিঃসন্তান মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এটা ভালো নয়, এটা সমষ্টিগত চেতনার ক্ষমতা কমিয়ে দেবে ভবিষ্যতে, কারণ যত লোক তত এর ক্ষমতা। তাঁর নিজের সম্ভবত চোদ্দটা বাচ্চা। ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট’ এই কথাটা তাঁকে বোধহয় কেউ বলেই নি।

    তিনি তাঁর যুক্তির সূত্র তুলে এনেছেন মানব শরীর থেকে। প্রায় ৩৬ ট্রিলিয়ন কোষ থাকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের শরীরে, নারীর ক্ষেত্রে সেটা প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন। এতগুলো কোষ মিলে যখন একটা সুব্যবস্থা চলতে পারে, তখন সেই কোষ দিয়ে তৈরি মানুষদের নিয়ে নয় কেন? কেমন একটা যৌথ খামারের গন্ধ আছে না? এখনও যদি বামপন্থী গান শুনে আপনার চোখে জল আসে, তাহলে যদি বলি, উনি বলেছেন যে, টাকার ধারণাকে পছন্দ করেন না, আগামী বিশ্বে টাকার ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ থাকবে না। দেশের ব্যাপারটাও। এইসব শুনে নির্ঘাৎ আপনি স্বগতোক্তি করে ফেলেছেন - ইলন মার্ক্স!

    ভাবাবেগকে একটু সংযত রেখে, খুঁটিয়ে শোনা যাক; মাস্ক বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স যেভাবে উন্নতি করছে, তা যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী তিন বছরের মধ্যে, অর্থের যোগানের থেকে পণ্য ও পরিষেবার যোগান দ্রুত গতিতে হবে। কিভাবে? তিনি এবার চলে যাচ্ছেন সোভিয়েত জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাই কার্দাশেভ-এর কাছে, তাঁর তৈরি কার্দাশেভ স্কেল, যা মূলত মানব সভ্যতা কতটা পরিমাণে প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহার করতে পারে তার সূচক (এই সূচক অনুসারে, ১ – পৃথিবীর সম্পূর্ণ শক্তির ব্যবহার, ২- তারাদের সম্পূর্ণ শক্তির ব্যবহার, ৩- মহাবিশ্বের সম্পূর্ণ শক্তির ব্যবহার)। প্রযুক্তির উন্নতি যত হবে, তত আমরা সক্ষম হব বেশি পরিমাণে প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহার করতে। আর তা যদি হয়, তবে যোগান বেশি হবে। ফলত মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পেতে পেতে মুদ্রা-সংকোচন হবে (বাংলায় বোধহয় তাই বলে Deflation-কে)। আমরা এখন কার্দাশেভ স্কেলে ১-এর নীচে, ০.৭ বা ০.৮-এ দাঁড়িয়ে। অর্থাৎ, তাঁর ভাবনায় প্রাকৃতিক শক্তিই নিয়ামক মানবসভ্যতার, তাই তাঁর ধারণায় টাকা নয় বিনিময়ের মাধ্যম হওয়া উচিৎ প্রাকৃতিক শক্তি। মুদ্রা-সংকোচন যত হবে, তত রাষ্ট্রের ঋণ কমতে কমতে শূন্য। যে রাষ্ট্রের ঋণ নেই, তার কিছুই নেই।

    কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা গেটসও কিন্ত তাঁর সেই ২০২২ সালের শেষের লেখাটিতে বারবার বলছেন। তিনি বলছেন, “আগামী কিছু বছর, মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অসাধারণ অগ্রগতি দেখবে। এর প্রভাব যাতে শুধুমাত্র ধনী দেশগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ না-থাকে তার জন্য আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”। ফাঁকা আওয়াজ না, তাঁর সংস্থা একটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত পোর্টেবল আলট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্র সেইসময়েই বানিয়ে ফেলেছিল। কেন? কারণ তিনি দেখেছেন, বহু গরীব দেশে বা দেশের প্রান্তিক অংশে হোমরাচোমরা আলট্রাসোনোগ্রাফি যন্ত্র বসানো কঠিন। ফলে বহু সন্তানসম্ভবা মা বিনাচিকিৎসায় মারা যায়, একই অবস্থা শিশুদেরও। এই যন্ত্র সেসব জায়গায় সাহায্য করবে, কারণ এর সহজ বহমানতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন ওষুধ তৈরি থেকে, রোগ নির্ণয়, শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে তিনি আশাবাদী।

    মাস্ক যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্সকে দেখছেন একটি অস্ত্র হিসাবে, যা পৃথিবীতে পণ্য ও পরিষেবার বিপুল আয়োজন করবে, ফলে দেশে-দেশে প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে যে বিবাদ তা মিটে যাবে, ও মানুষের অভাব থাকবে না। অন্যদিকে গেটস ভাবছেন এটা এমন একটা অস্ত্র যা দিয়ে খুব সহজে মানুষের সাধারণ চাহিদাগুলো মেটানো যাবে, তাদের সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানো যাবে। লেখাটির একদম শেষে এসে গেটস লিখছেন, “এই টালমাটাল সময়েও বৈষম্য দূর করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে”। তিনি সেই সুযোগ পুরো মাত্রায় নিতে চান।
    গেটস দীর্ঘদিন সমাজসেবার কাজে সরাসরি যুক্ত, মাস্ক-এরও একটি সংস্থা আছে। গেটস নিজের সংস্থা তৈরির কারণ হিসেবে লিখছেন, “চিন্তা করে দেখেছি বেশিরভাগ মানুষের জন্য সব থেকে ভালো কাজ করতে হলে, আমার সম্পদের সাহায্যে সারা পৃথিবীর সব ফান্ড আর উদ্ভাবনী শক্তিকে বৈষম্য কমানোর কাজে ব্যবহার করা উচিৎ। এটা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল সরকারী এবং বেসরকারী সেক্টরের লোকেদের নিয়ে একটি নতুন সংস্থা তৈরি করা যারা জানেন কীভাবে কাজটা করতে হয়। এরকম কোনো সংস্থা কোথাও ছিল না। এই মডেল বেসরকারী ক্ষেত্রে অসাধারণভাবে কাজ করেছে এবং বিশ্বাস করি এটা এক্ষেত্রেও কাজ করতে পারবে”। মাস্ক বলছেন, তিনি মনে করেন, আমাদের উচিৎ সহনাগরিকদের উপকার করা। কিন্তু এই কাজে সঠিক জায়গায় টাকা দেওয়া খুব কঠিন। এরা দুজনেই উল্লেখযোগ্য চিন্তাবিদ। কোভিডের আগেই মহামারী নিয়ে গেটস-এর বক্তব্য খুব ভাইরাল হয়েছিল।

    দিনের শেষে, গেটস ও মাস্ক দুজনেই দুনিয়ার প্রথম সারির ব্যবসায়ী। তাঁরা নিজেদের ব্যাবসায়িক স্বার্থের কথা সবসময় ভাববেন সেটাই স্বাভাবিক। তাঁদের যাবতীয় কথার মধ্যেই নিজেদের আখের গোছানোর লক্ষ্য নিহিত থাকবে সে নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না। কিন্ত একথা অস্বীকার করাও যাবে না যে, আগামী পৃথিবীর পদধ্বনি সম্পর্কে তাঁরা যথেষ্ট অবগত। অবগত বলেই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এতকথা বলেও, মাস্ক সাবধান করছেন যে, এই নব্য প্রযুক্তিকে সত্যনিষ্ঠ হতে হবে। যদি তা না-হয় তবে সমূহ বিপদ। তাঁর মতে সত্য, সুন্দর ও জ্ঞানের পিপাসু হতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে। সাবধানবাণী শুনিয়েছেন গেটস-ও। একইভাবে গেটস-এর মতে ভবিষ্যতে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন কাজ করলেই হয়ে যাবে আর মাস্ক বলছেন কাউকে নাকি কোনো কাজই করতে হবে না, পুরোটাই শখের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

    টাইম ম্যাগাজিন এই বছরের ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্থপতিদের, কোনো একজন বা কয়েকজন ব্যক্তি নয়, কোনো সংস্থা নয়, সকলকে, যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই কাজে নিয়োজিত। গত পঁচিশ বছরে এই কাজ চার বার করেছে তাঁরা। ২০০৬-এ ইউ (অর্থাৎ যারা ইউটিউবে কন্টেন্ট বানায় তাঁদের), ২০১১-এ প্রতিবাদী ( আরব বসন্ত ও অকুপাই আন্দোলনকারীদের), ২০১৪-এ ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের, ২০১৭-তে নীরবতা ভঙ্গকারীদের (#MeToo আন্দোলনকারীদের)। আজ সমগ্র পৃথিবী মিলিয়ে প্রায় সক্রিয় ইউটিউব চ্যানেল ছয় থেকে সাড়ে ছয় কোটি। তার মধ্যে অন্তত চল্লিশ লাখ চ্যানেল পয়সা রোজগার করে ইউটিউব থেকে। শুধু তো আর্থিক রোজগার নয় তাঁদের প্রভাব কতটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, তা আর আলাদা করে আলোচনার দাবি রাখেনা। তাহলে কি তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও তাই আশা করছেন?

    এদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বুদবুদ নিয়ে কথা হচ্ছে চতুর্দিকে। তার অপারগতা নিয়ে। দিকে দিকে কত কোম্পানী কর্মী ছাঁটাই করছে, কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নাকি সব কাজ করে দেবে। তাহলে মানুষের কাজ চলে গেলে, মানুষ খাবে কি? পড়বে কি? চাহিদা যদি মুখ থুবড়ে পড়ে, তাহলে অর্থনীতি চলবে কি করে? ২০২০ সালের অস্কার বিজেতা প্যারাসাইট সিনেমার লেখক ও নির্দেশক বং জুন-হো বলেছেন, “আমার অফিসিয়াল উত্তর হল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুব ভালো, কারণ এই প্রথম মানুষ চিন্তা করতে শুরু করেছে, কোন কাজ শুধু মানুষ করতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত উত্তর এই যে, একটা মিলিটারি স্কোয়াড তৈরি করব, যাদের কাজ হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ধ্বংস করা”। রাইটার্স গিল্ড অফ আমেরিকা, ২০২৩ সালে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে, কারণ প্রচুর স্টুডিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখিয়ে নিচ্ছে। এই বছর সেখানকার অথর’স গিল্ড, যেসব বই মানুষের হাতে লেখা, তার উপরে একটি বিশেষ ধরনের লোগো লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে দেশে সরকার এই নতুন প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন আইন আনছে।

    যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ বার্নি স্যান্ডার্স জানতে চেয়েছেন যে ইলন মাস্ক যে ইউটোপিয়ার কথা বলছেন, তা কিভাবে সম্ভব হবে, যদি মানুষের রুটি-রুজি না-থাকে। স্পষ্টত মাস্ক যে স্বপ্ন ফেরি করছেন, তার কোনো বাস্তবিক রূপরেখা কোথাও তিনি বলেননি। তাঁর সাক্ষাৎকারে তিনি একাধিক বার কল্পবিজ্ঞানের কথা বলেছেন। তাঁর একদা পছন্দের রাজনীতিবিদ ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন সে দেশের রাষ্ট্রপতি। এখন আর তাঁদের সম্পর্ক ভালো নয়। ট্রাম্প নানাবিধ জনবিরোধী ব্যবস্থা প্রণয়ন করছেন সেই দেশে। ভুলে গেলে চলবে না ট্রাম্প-এরও কিন্তু প্রথম পরিচয়, তিনি একজন ব্যবসায়ী। সারা পৃথিবী জুড়েই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মূল ধারার রাজনীতিতে প্রবেশ বাড়ছে। ফলত রাজনীতির একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যতই রাজনীতি আপনার অপছন্দ হোক, তার তো আপনাকে লাগবেই। কারণ প্রজা ছাড়া রাজার রাজত্ব চলে না। আর প্রজাকে চালনা করতেই তার যাবতীয় নীতি।

    এইরকম এক সময়ে কি করব আমরা? ভয় পেয়ে চুপ করে থাকব? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিখতে ঝাঁপিয়ে পড়ব? কড়া ভাষায় শুধু তার নিন্দা করব? সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জটিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতি অনেকটাই নির্ভরশীল তার ভাষা-শিক্ষার উপরে। সে এখনও বিকশিত হচ্ছে, মন দিয়ে ভাষার খুঁটিনাটি দেখছে শিখছে। আমরা কি তাহলে আরো একটু ভাষা শিক্ষায় জোর দেব? বঙ্কিম-এর পরে ‘দা’ বসবে না ‘বাবু’ নাকি পুরো নামটাই বলতে হয়, সেই নিয়ে আলোচনা করব সোশ্যাল মিডিয়ায়? না আবার ‘কপালকুণ্ডলা’ খুলে বসব? কোনদিকে গেলে ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য’ করে তোলার দিকে একটা পা অন্তত ফেলতে পারব আমরা সামনের বছর? মার্ক্স থুরি মাস্ক বলছেন, যাই করো, মনে রেখো যেন, এই বিশ্বের থেকে তুমি যাই নিচ্ছ, তার থেকে একটু বেশি দিতে পারো। কি দেবো আমরা এই বিশ্বকে? এই উত্তরের সন্ধানেই বোধহয় একটা নতুন বছরকে বরণ করা যাবে। যদিও উত্তর নয়, সঠিক প্রশ্ন খুঁজতে বলেছেন গুরুজনে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • নবীন | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৮736877
  • বেশ ইন্টারেস্টিং লেখা
  • Sahana Samanta | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৫০736878
  • খুবই তথ্যপূর্ণ লেখা। 
  • অরিন | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৫৮736880
  • "এইরকম এক সময়ে কি করব আমরা? ভয় পেয়ে চুপ করে থাকব? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিখতে ঝাঁপিয়ে পড়ব? কড়া ভাষায় শুধু তার নিন্দা করব? সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জটিল"
     
    আমরা এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সেরকম ভাবে প্রয়োগ দেখিনি। একটা সময় ছিল যখন ইন্টারনেট এবং ওয়েব নতুন ছিল আমরা চেষ্টা করতাম কিন্তু তার পূর্ণ রূপ দেখিনি। কিভাবে আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করব বা এই বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার ব‍্যূবহার করব জানতাম না। প্রথমে আইফোন এল তারপর android আমাদের হাতের মুঠোয় ধরা পড়ল পৃথিবী। 
     
    এখন অবধি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি করতে পারে তার কিছুই আমরা দেখিনি। ছবি কথা লেখা নকল আর মকশোর কিছু কাজ, কম্পিউটার ভিশন আর সামান‍্য কিছু জেনেরেটিভ এআই দেখেই এই ধরণের মন্তব্য আসছে। এর পরের ধাপে ডিজিটাল টুইন আসবে মানুষের ডিজিটাল যমজ তৈরী হবে। 
     
    ভাল খারাপ কে জানে? 
  • বিপ্লব রহমান | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:১৯736882
  • তথ্যবহুল লেখা। 
     
    এপারে শীর্ষ মিডিয়ায় এআই ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। স্ক্রিপ্ট ড্রাফট,  অনুবাদ,  লেখা সম্পাদনা,  স্কেচ তৈরি ইত্যাদি কাজে হরদম এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। 
     
    তবে বার বার চেক করে খুব সতর্কতার সঙ্গে এআই ইনফো ব্যবহার করতে বলা হয়।  এরপরেও ভণ্ডুলের নজির আছে। 
     
    ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে,  এ এক আশ্চর্য আবিষ্কার! দারুণ কাজের জিনিস।  
  • অরিন | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:১০736888
  • দারুণ কাজের জিনিস যে, এ নিয়ে দ্বিমত নেই। তবে এ আই এর এখন শৈশব। হাঁটি হাঁটি পা পা।  অতি অল্পই আমরা দেখছি। ভাল খারাপ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে, তবে খুবই আপেক্ষিক। মাস্ক এবং গেটস কেন, কেউই জানেন না ভবিষ‍্যত কোন দিকে চলেছে। ইলন মাস্ককে লোকে hyped up করে । ট্রাম্পের চামচাগিরি করেও লাভ হল না।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন