এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পছন্দের ঘাটশিলা স্টেশন

    অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ মার্চ ২০২৪ | ২৮৮ বার পঠিত
  • ঘাটশিলা স্টেশনটিকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল। একবারই গেছি ঘাটশিলায়। তবে আশা আছে আরো কয়েকবার যাব।

    কলকাতার কাছাকাছি এমন সুন্দর পাহাড়ী জায়গা আর দুটি নেই। এখানে নদী আছে ঝর্ণা আছে জঙ্গল আছে ----- আর কী চাই? কোনো কবি যদি এমন জায়গায় আসেন তবে প্রকৃতির মনোহর রূপ দেখে তিনি সত্যিই মুগ্ধ হয়ে যাবেন। কত কবিতার প্লট যে তাঁর মাথায় আসবে তা তিনি ছাড়া আর কে জানবে?

    তা আমি পাহাড় নদী এসবের কথা বাদ দিয়ে হঠাৎ একটা স্টেশনের বর্ণনা কেন করতে যাচ্ছি? কারণ এই স্টেশনটিকে আমার ভালো লেগেছিল তাই। কেউ যদি কাউকে ভালবাসে তবে তো সে তাকে নিয়ে কবিতা লিখতে চায় গল্প লিখতে চায় । তাই না? আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এর বাইরে নয়।

    ঘাটশিলায় আমরা উঠেছিলাম রামকৃষ্ণ মঠে। এই মঠটি স্টেশন থেকে প্রায় এক কিমি দূরে অবস্থিত।এই রামকৃষ্ণ মঠের সামনে দিয়েই মেন রাস্তা চলে গেছে আর রাস্তার পাশেই রেললাইন। মানে রাস্তা ও রেললাইন সমান্তরাল ভাবে চলে গেছে।

    বললে বিশ্বাস করবেন না এই ঘাটশিলা স্টেশন দিয়ে দৈনিক (আমি যদি খুব ভুল না বলি) তাও পঞ্চাশ-ষাটটা ট্রেন চলে। ভেবে দেখেছেন? ধরুন পাঁচ থেকে দশ মিনিট অন্তর অন্তর এক একটা ট্রেন যায়। সময়টা এর একটু এদিক ওদিক হতেই পারে। ঐ মালগাড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন লোকাল ট্রেন এসবই যায়।

    রামকৃষ্ণ মঠে থাকাকালীন এত ট্রেনের আওয়াজ পেয়েছি যে কী বলবো! মঠ থেকে দেখতাম কোনো কোনো ট্রেন থ্রু হয়ে চলে যাচ্ছে আবার কোনো কোনো ট্রেন থামছে। সে এক দারুণ ব্যাপার।

    মঠে যখন ঘুম থেকে উঠতাম ভোরে তখনও শুনতাম কি বিশাল শব্দ করে করে সব ট্রেন চলে যাচ্ছে। আবার অনেক রাত অব্দিও পেতাম ট্রেনের আওয়াজ।

    মঠের সামনে যে রাস্তা আছে সে রাস্তার পাশেই তো রেললাইন। মাঝেমধ্যে সন্ধেবেলা মূলত আমি রাস্তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকতাম। ট্রেন যাওয়া দেখতাম। আমার স্বভাবটা ঐ অপু-দুর্গার মত। সত্যিই অপু-দুর্গার স্রষ্টার জায়গায় গিয়ে যে আমার এমন হ্যাবিট জন্মেছে তা নয়। এ ট্রেন দেখার অভ্যাস আমার বহুদিনের। ট্রেন যাচ্ছে আসছে এমন দৃশ্য দেখতে আমার দারুণ লাগে।

    দেখতাম কত কী ট্রেন হাওড়া থেকে আসছে নয়তো টাটানগর থেকে আসছে। এক্সপ্রেস ট্রেনের নামগুলো পড়ার চেষ্টা করতাম।

    এখানে আমি জীবনে প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস দেখি। কী স্পিড সেই ট্রেনের! হুইসেল একনাগাড়ে দিতে দিতে স্টেশন পার করে চলে যাচ্ছে।

    এই মঠের সামনে যে রাস্তা আছে সেখান থেকেই দেখা যায় ঘাটশিলা স্টেশনটা।

    আর একটি কথা যদি না বলি আমার লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যতটুকু সময় মঠে থাকতাম দেখতাম স্টেশনের গেটম্যান এই গেট তুলছেন আবার গেট ফেলছেন। হবে না? এত ঘন ঘন ট্রেন এলে গেলে তো তাই করতে হবে।

    মনে মনে তখন ভাবতাম সারা ভারতের মধ্যে মনে হয় এই মানুষটিরই এত কাজ বারবার গেট নামানো আবার তোলানো। কিন্তু তারপরে ভাবতাম, নাঃ এমন স্টেশন ভারতে প্রচুর আছে। সবার কথা কি জানা সম্ভব হয় একসাথে?

    আমার শুধু ইচ্ছা হতো ইশ, যদি এমন জায়গায় আমার একটা বাড়ি হত।আহা, তাহলে এমন দিনে-রাতে সারাক্ষণ ট্রেনের আওয়াজ শুনতে পেতাম। ট্রেনের হুইসেলের আওয়াজ, ট্রেন যাওয়ার আওয়াজ...।

    আমি যেখানে থাকি মানে আমার যেখানে আসল বাড়ি সেখান থেকে স্টেশন খুব দূরে নয়। হেঁটে গেলে দশ মিনিট। তবে সেখানে এমন ঘন ঘন ট্রেন চলে না। চলে মূলত লোকাল ট্রেন।

    কোনো মানুষের সব ইচ্ছা পূরণ হয় কি? 
    আমার ইচ্ছাগুলো ভগবান একদিন ঠিকই পূরণ করবেন ---- এই আশাতেই বেঁচে থাকি।

    এবারে স্টেশনের বর্ণনায় আসি। ঠিক বিকালের শেষের দিকে আমরা ঘাটশিলা স্টেশনে নেমেছিলাম। ট্রেনটি ছিল হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। মাঝপথে কিছু জায়গায় লেট করার জন্য দেরি হয়ে গেছিল। আর আমরা গেছিলাম শীতকালে। নভেম্বর মাসে। কাজেই তখন সন্ধ্যা তো একটু তাড়াতাড়ি হয় তাই তখন ভালো করে স্টেশন দেখা হয়নি। তাড়াতাড়ি স্টেশন থেকে বাইরে এসে একটি অটো ধরে রামকৃষ্ণ মঠে গিয়ে উঠি।

    কিন্তু যেদিন ফিরে আসার ট্রেন ধরি আমরা সেদিন সকাল আটটা কী ন'টা নাগাদ স্টেশনে চলে আসি। যে ট্রেনে করে বাড়ি ফিরব সে ট্রেন যদিও আরও পরে আসবে। তবুও এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্যাপার তো। তাই আগেভাগেই এসেছিলাম। সেদিন ভালো করে স্টেশনটা দেখি। বেশ কিছু ছবি তুলি।

    এর আগে আমি ইউটিউবে দেখেছিলাম যে ঘাটশিলা স্টেশন থেকে পাহাড় দেখা যায়। তো যেদিন আসি সেদিন ভালো করে কিছুই দেখা হয়নি তাই চলে যাবার দিন ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম। একদম রোদ ঝলমলে আকাশ ছিল। স্টেশনের ওভারব্রিজে উঠে দেখি সত্যিই দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে তবে খুব হালকা হালকা। সাদা খাতায় পেনসিল দিয়ে হালকা কিছু রেখা টানলে যেমন দেখতে লাগে আমার তেমনই মনে হয়েছিল দূরের পাহাড়গুলি দেখে। হালকা ধূসর বর্ণের পাহাড় বহু দূরে দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পাহাড়গুলো আকাশের গায়ে মিশে আছে। আহা, সেই দৃশ্য যেন আজও ভুলতে পারি না! এই লেখাটি লেখার সময় মনে হচ্ছে আমি যেন এখনই ঐ ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে আছি আর দেখে যাচ্ছি দূরের অপরূপ সুন্দর দৃশ্য।

    এছাড়া ঘাটশিলা স্টেশনটি বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নোংরা কোথাও দেখা যায় না। কত ট্রেন আসছে যাচ্ছে দেখছিলাম। কত এক্সপ্রেস ট্রেন কত মালগাড়ি।ঘাটশিলা স্টেশনের একদিকে টাটানগরের লাইন আর একদিকে খড়্গপুরের লাইন তাই এত ট্রেনের যাতায়াত।

    আসলে এখানে এত বাঙালি বেড়াতে আসে যে ঘাটশিলায় মোটামুটি বাঙলা ভাষার চল আছে। মোটামুটি বলছি কারণ খুব একটা নেই। তাই ঘাটশিলা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের কোনো কোনো দেয়ালে দেখলাম বাঙলাতে অনেক কিছু লেখা আছে।

    যে ট্রেনে করে হাওড়া থেকে এসেছিলাম সেই একই ট্রেনে করে আবার হাওড়ায় ফিরে গেছিলাম। ট্রেনটি যদিও নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘন্টা পরে এসেছিল। আমার সময়টা খুব হালকা মনে পড়ছে; ঐ দুপুর একটার কাছাকাছি ট্রেনটি আসে স্টেশনে।যাই হোক ঘাটশিলাকে বিদায় জানিয়ে রাঁচি-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের সিটে এসে বসলাম।

    ---- অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
    ২৭/৩/২০২৪


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পারমিতা | 2401:4900:1c84:6049:5927:838e:7af6:***:*** | ২৭ মার্চ ২০২৪ ২১:৩৩529872
  • ঘাটশিলা স্টেশনে সারাদিন বসে থাকতে পারি এত ভালো লেগেছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন