এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শাহাজাদা দারা শুকোহর বই হাক নুমা

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৭২ বার পঠিত
  • যখন বাবার উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য বালখে লড়ছেন যোদ্ধা শাহাজাদা ঔরঙ্গজেব তখন শাহাজাদা এ বুলন্দ ইকবাল - সৌভাগ্যমণ্ডিত শাহাজাদা দারা শুকোহর অন্য এক শাহী ইমেজ তৈরিতে উৎসাহ দিয়েছিলেন শাজাহান। সেটা হল স্বর্গীয় আশীর্বাদপুষ্ট বাদশাহের উপযুক্ত দার্শনিক শাহাজাদার ইমেজ যা দারার পছন্দের সঙ্গে খাপও খায়। ষোলোশো ছেচল্লিশে মুরাদকে মধ্য এশিয়ায় পাঠানোর সময় শাজাহান তাঁকে এগিয়ে দিতে কাবুল পর্যন্ত এলেন। শাহাজাদা দারা শুকোহ আসছিলেন বাবার সঙ্গে। পথে লাহোরের শেখুপুরায় জাহাঙ্গীরের প্রিয় পোষ্য কৃষ্ণসার হরিণ মনসরাজের স্মৃতিতে তৈরি হিরণ মিনারের কাছে তিনি থেকে গেলেন অসুস্থ নাদিরা বানু বেগমকে নিয়ে। বেগমের সেরে উঠতে এগারো মাস লাগে আর সম্ভবত সেরে ওঠার আনন্দে দারা তাঁকে উপহার দেন চিত্রিত মুরাক্কা - ব্যক্তিগত অ্যালবাম, সেটা ষোলোশো ছেচল্লিশের শেষ থেকে সাতচল্লিশের কোন এক সময়। সম্ভবত তারপর তিনি বাবার কাছে কাবুল যাচ্ছেন।

    এই শেখুপুরায় থাকার সময় তিনি আরও এক বই লিখলেন হাক নুমা বা রিসালা এ হাক নুমা? কেমন বই এই হাক নুমা?

    শেখুপুরার একশো ফুটের ওপর লম্বা হিরণ মিনারের চারপাশ বিশাল জলাশয় ।সে জলাশয়ে কাছেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসেছিল জাহাঙ্গীরের পোষা কৃষ্ণ সার হরিণ মনসরাজ সে অন্য হরিণদের আকৃষ্ট করতে পারে। তাদের সে নিয়ে আসবে আর বাদশাহ গুলি করবেন বা ছুড়ে দেবেন তীর। প্রতিদিনের মতো সেদিনও তীর ছুড়লেন তিনি। কিন্তু ছোঁ ড়া হলে কি তীর ফিরবে? সে তীর মনসরাজকেই ঘায়েল করেছে। সে চেয়ে থাকে বাদশাহের চোখে চোখে, কী সব কথা বলতে বলতে মরে যায়। সবাই জানে এইরূপে হিরণ মিনারের তৈয়ার কথা, হরিণের যন্ত্রণা, তাদের মারার পাপ আর মানুষের দুঃখ এসব নিয়ে তা বানানো আর তার পাশে বসে আছেন শাহাজাদা দারা শুকোহ। জল থেকে বাষ্প উঠে তা মেঘ হচ্ছে আবার ফিরছে জলে। অপূর্ব ভঙ্গীতে জল ফিরছে জলে। সবই পরম এককের খেলা। দরবারের মধ্যে গেলে শাহাজাদা হিরণ মিনারের কথা জলের কথা, পরম এককের কথা, উজুদের কথা - সবই একক সত্ত্বার উদ্ভাবন, এসব কথাই ভুলে যাবেন কারণ এরকমটাই শাহী তারিকা। নাহলে হজরত মিয়াঁ মির বা মুল্লা শাহ হতে হবে। সে কী করে সম্ভব শাহাজাদার পক্ষে ? তিনি হজরতের দরজায় তাঁর দেখা পেতে পড়ে থাকবেন নাওয়া খাওয়া ভুলে কিন্তু নিজে হজরত হবেন কেমন করে? সে বিধান তো করেন না খোদা কোন শাহাজাদার জন্য । তাই দারা ভাবতে থাকেন সুফি পথের বইরা কেন এত কঠিন কথায় বলবে যা বুঝতে বুঝতেই সাত জন্ম কেটে যাবে? নাম করে করে বইয়ের কথা বলছেন, সব জরুরি বই অথচ আম লোক বোঝে না তাদের মর্ম। শাহাজাদা দারা শুকোহ বলছেন ইবন আরাবির ফুতুহত-জিত আর ফুসুস- পাপের বোঝা, আহ মদ ঘাজালির সাওনিহ–উল উশশক – প্রেমিকের মন্দির, ফকর–উদ দিন ইরাকির লামাআত – মহাজাগতিক উদ্ভাস বা আব্দ-উর রাহমান জামির লাওমি – স্বর্গীয় বিভা এরকম সব মহান সুফিদের বিখ্যাত বই সম্পর্কে। তিনি চতুষ্পদী লিখলেন হাক নুমার উদ্দেশ্য সম্পর্কে :

    যদি কঠিন ঠেকে গহীন কথার মানে
    আর বলতে কথা ব্যাঁকা দুটো সুফি বইয়ের পানে//
    জানতে হবে জাহানের পরম এককটাই ,পরপারেও কিছুই যে আর নাই
    এ কথাটাই ফুতুহত আর ফুসুস যে বলেই চলে ভাই //
    তু বাতিন –ই শার গার না –দানি বা-খুসুস
    ও-আর হাম না-কুনি নাজার তু বার নাকদ –ই নুসুস//
    ইয়াক দান ও মা-দান তু ঘাইর –ই উ দার দো জাহান
    ইন আস্ত হাকিকাত –ই ফুতুহাত ও ফুসুস //

    If for you the inner essence of the law is abstruse
    And to really criticize Sufi texts you’re far too obtuse//
    Know the One and no other in this world and the next
    This is the truth in the Futuhat and the Fusus//

    Dara Shukoh Haqqnuma translated by Scott and Carl Ernest as quoted in The Emperor who never was – Dara Shukoh in Mughal India, Supriya Gandhi, page 133.
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • upal mukhopadhyay | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৯528836
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন