এই টইটা আমার খোলার কথা ছিল না। কথা অনেক কিছুরই থাকে না। অনেক কথা না রেখেই কুমুদি চলে গেলেন। কিছু ব্যক্তিগত, কিছু না-ব্যক্তিগত কথা যদি কেউ লিখতে চান, সেই ভেবে এক গুরুবোন আমাকে টইটা খুলতে বললেন।
বড্ড অসময়ে চলে গেলেন। ভালো থাকবেন, কুমুদি।
প্রথম প্রথম আমাকে আপনি সম্বোধন করতেন। একবার ফোন করাতে কি খুশিই না হয়েছিলেন।
অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষ ছিলেন। নিজের ল্যাবের মেয়েদের যেভাবে সাহায্য করতেন, যেভাবে অনুপ্রাণিত করতেন, সেটা কিছুতেই ভোলা যায় না।
একী শুনলাম ? এতো আমার চিন্তার বাইরে . কিচ্ছু বলার নেই । তুমি ভালো থেকো .
এভাবে হঠাৎ করে চলে গেলে কুমুদি? এমন তো কথা ছিল না! দেখা হবার কথা ছিল। তোমার সঙ্গে তাজমহলে গিয়ে ঘুরবো কথা ছিল। এই তো মাত্র ক'দিন আগেই ফেসবুকে মেসেজ পেয়েছিলাম তোমার। তোমার নতুন বইয়ের খবর পেলাম এই তো মাত্র কিছু আগে। এমন করে হঠাৎ চলে যাবে ভাবতেও পারিনি। দেখা হল না এখানে। কিন্তু সেখানে দেখা হবেই। ভালো থেকো কুমুদি।
কোনোদিন সরাসরি কথা হয় নি , সাক্ষাৎ এ কথা তো আরো দূরের ব্যাপার
হাতেগোনা কিছু মত আদানপ্রদান হয়েছিল ওনার লেখার প্রতিক্রিয়া জানানোর সুবাদে
কিন্তু কি অসম্ভব মায়া জড়িয়েছিল ওনার লেখার পরতে পরতে , কত সহজ ভাষায় অভিঘাত বুনন করতেন
এ এক অপূরণীয় ক্ষতি আমার কাছে
কুমুদিদি,
তোমার প্রিয় লেখিকা (আমারও) বলেছিলেন ''কাজ ফুরোলে ছুটি হয়, ঊনপঞ্চাশ ঘুমিয়ে রয়"। তো তুমি একবারও আমাদের আগে জানালেনা যে তোমার কাজ ফুরিয়েছে? আমি তো রোজই ভাবতাম কুমুদিদির আরো কত কাজ বাকি আছে। এই গল্প বলবে, ঐ গল্প বলবে। সেসব না বলে টলেই ঘুমোতে চলে গেলে তো? কী আর করি বলো তাহলে? হাত কাঁপছে এত, আর লিখিই বা কেমন করে? তা গেলে যাও, কিন্তু তোমাকে যতটা ভালোবাসি সে ভালোবাসা মোটেও কোনদিন ঘুমোতে যাবেনা জেনো ।
কুমুদি যে ভাল লোক ছিলেন, আবার প্রমাণ হল। কে না জানে, বড়বাবু ভাল আর প্রিয় লোকদের তাড়াতাড়ি ডেকে নেন।
হঠাত খবরটা পড়ে খুব খারা লাগলো। ওনার লেখা গল্পগুলো পড়তে খুব ভালো লাগতো।
কুমুদির সাথে সামনা সামনি আলাপ ছিল না কিন্তু কথা বার্তা বলতে বলতে কখন যেন আপন হয়ে গিয়েছিলেন। একবার বিমান যাত্রার সময় লাউঞ্জে বসে উনার বইটা পড়ছিলাম সেই ছবিটা পাঠালে খুব খুশী হয়েছিলেন
সই করে বইটা আমায় ক্যুরিয়ার করে দিয়েছিলেন, সুন্দর একটা প্যাকেটে ভরে।
এই লেখাটাও আমার লেখার কথা না।
অনেক ইতঃস্তত করেও মনে হলো এটা আমাকে লিখতেই হতো। হোতোই।
তো কতোদিন হলো? হিসেব নেই, হয়তো এক দশক। এই গুরুর পাতাতেই ঘাটে ভাটে আলাপ। কুমু তো লিখতো ঘরালু গল্পই।সেই সূত্রেই তো কী চেনা হয়ে গিয়েছিলো কোন্নোগরের দাশগুপ্ত পরিবার, ছোটোবেলার চোরকাকু, কুমুর কলেজ জীবন, শ্যামলের সাথে কফি হাউসের সাক্ষাত, বিয়ে। দুই ছেলে। কুমুর কর্মজীবন। বেশ কিছু সহকর্মীকেও। সবাইকেই স্বচ্ছন্দে ছুঁতে পারতাম। সবাই খুব চেনা মানুষ।
মেলা শেষ হলে , সহাস্যে বিদায় নিয়ে , যে যার বাড়ীর পথে। .....
কুমুদিকে নিয়ে কিছু লেখা বেশ কঠিন। এমন প্রাণবন্ত অজিত অজাতশত্রু স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্ব বিরল।
2009 সাল। দিল্লি এসেছি মেয়ের কাছে। একটা হোয়া মেসেজ এল আমায় দিল্লিতে ওয়েলকাম করে, প্রেষক জনৈক জয়ন্তী অধিকারী। ফোন করে পরিচয় জেনে অবাক।
আরেক বার আমি সিআরপার্ক উনি রাজৌরি গার্ডেন। ফোনে আড্ডা। যখন ফুলশয্যার রাতে শাড়ি ছেড়ে স্মার্ট পরে বরের গার্ডেন গাইডেন্সে ভাইভার প্রিপারেশনের কথা তুললাম ওপাশ থেকে সেকী খিলখিল হাসি।
আরে রঞ্জনদা, ওরকম কিস্যু হয়নি, সব বানানো।
বিশ্বাস হল না। শেষে শ্যামলদা কনফার্ম করলেন।
আমি অবাক, নিজেকে নিয়ে অমন ঠাট্টা! জীবনে নিজের নাম নিয়ে কোন লেখা পড়ে বোকা বনেেছি মাত্র আরেকবার--- রাহুল সাংকৃত্্যাায়নের সিিংহ সেনাপতি।
ওঁর থেকে দুটো শব্দবন্ধ ধার নিয়েছি, ফেরত দেবার ইচ্ছে নেই।
'কঠিন কঠিন কতা' এবং 'ক্যাডার ব্যালোর'।
হিউমার ও উইটের চমৎকার মিশ্রণ ভরা ওঁর লেখাগুলোর সংকলনের অপেক্ষায় থাকব।
স্মার্ট নয় স্কার্ট হবে।
গবুবাবুর জন্য সমবেদনা রইলো :( আপনি ভালো থাকবেন ।কেবলীর গবু ও আমাদের ততটাই কাছের
খুবই আশ্চর্য লাগে এইসব। কেমন ভাবে কত বছরের চেনাশুনো হয়ে যায়, হওয়ার কথাই ছিল না যদিও, আমার তো অন্তত।
গত বছর এমন সময়ই কুমুদির সঙ্গে কথা হচ্ছিল, নতুন বই নিয়ে, প্রচ্ছদ কাকে দিয়ে করাতে পারলে ভালো হয় এইসব।
মেয়েকে বাংলা বইপত্র গল্প ইত্যাদি পড়ে শোনালে বেশিরভাগ সময়ই খুব মজা পায় না, বুড়ো আংলা ইত্যাদি দুএকটা ছাড়া। কুমুদির সার্কাসে যাওয়া আর চোরের গল্প শুনে বলেছিল তুমি তোমার বন্ধুদের বোলো এরকম ভালো ভালো গল্প আরো লিখতে। সেটা বলেওছিলাম বোধয়, ছোটদের জন্যে লেখার লোক কম আরো একজন কমে গেলেন।
আমি ভাবছিলাম এরকম কিছু গল্প নিয়ে অডিওবুক ধরনের কিছু করা যায়? কুমুদির তো এনবিটি থেকে প্রকাশিত বইও আছে।
কুমুদি বরাবর উদ্যমী ও কর্মঠ মানুষ। রোমহর্ষক গল্পে কুমুদির সঙ্গে কথা প্রতিটি ছবির ফিডব্যাক নেওয়া, রিভিউ, কুমুদির কী পছন্দ হবে সেই বুঝে শিল্পীকে রেফারেন্স এঁকে দেওয়া, সেইসব করতে গিয়ে কুমুদির নিখুঁত জিনিসের প্রতি ঝোঁক, সময় দেওয়া এইগুলো দেখে মনে হয়, ওরকম কিছু করতে পারলে কুমুদির নিজস্ব জঁরের (আমি নিজস্বই বলি, লীলা মজুমদারের সঙ্গে কুমুদির মিল পাওয়া নিয়ে আমার বরাবরের অস্বস্তি) রচনার প্রতি সুবিচার হবে।
সবকিছু ছাপিয়ে আবার ঐ বিস্ময়টাই ফিরে আসে, আর কখনো কুমুদির নতুন লেখা পড়বো না, পড়ে হুট করে মাথায় একটা নতুন ছবি আসবে না, এরকমই হওয়ার কথা?
রঞ্জনদা, ওরকম সংকলন একটা আছে, গুরুচণ্ডা৯ থেকে বেরিয়েছে দু'বছর আগে।
অফিস এ ছিলাম, হটাৎ সাড়ে এগারোটা নাগাদ খবর টা পেলাম সিকির দেওয়াল থেকে, ভক্তদের আশীর্বাদ এ আমার দুটো প্রোফাইল ই ব্লকে তাই ফেবু তে কিছু লেখার অবকাশ নেই।
বছর আটকে আগে আলাপ কুমুদির সাথে।
দিল্লি বইমেলায়, তার ও কয়েক বছর পর থেকে আমিও গুরুর দিল্লি বইমেলা র পার্ট।
কুমুদি ছিল আমাদের মাদার ফিগার।
না যতটা কষ্ট কুমুদির না হবার কারণে হচ্ছে তার 100গুন বেশি কষ্ট হচ্ছে শ্যামল দা কে নিয়ে
লাখ এ একটা কাপল হয় ওদের মতন যেখানে দাদা নিজের সম্পূর্ণ ডিপেন্ডেন্ট ছিল দিদির উপরে।
ডানদিকে যেতে হবে না বামদিকে সেটা দাদা দিদিকে না জিজ্ঞেস করে ডিসিশন নিত না।
কাল দিদিকে বাড়িতে আনার পর অফিস থেকে গেলাম দেখতে, মানুষ টা নেই, শরীর টা শুয়ে আছে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে একসময় ঘরে কেউ নেই, আমার পাশে দাদা আর দিদি শুয়ে আছে।
দাদা উঠে ফিসফিস করে কুমুদির গালে আর চিবুকে হাত দিয়ে বলছে ওই জয়ন্তী, ওই জয়ন্তী , ওই জয়ন্তী কিগো, ওই কিগো, ওই জয়ন্তী।
প্রায় 15 মিনিট।
আমি শক্তপোক্ত মানুষ বলেই নিজেকে জানতাম, মা এর বেলায় 4তুর্থ দিন কেঁদেছিলাম আর বাবার বেলায় কাঁদিনি কিন্তু ওই শ্যামল দার আকুতি এই জয়ন্তী, ওই জয়ন্তী, কিগো, কি হল, ওই জয়ন্তী, শুনে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
প্রায় 48 ঘন্টা হয়ে গেল আমি ঘুমাইনি, আমার নাইট ডিউটি, কিন্তু চোখ বন্ধ কিরলেই দেখতে শুনতে পাচ্ছি,
ওই জয়ন্তী, ওই জয়ন্তী, কিগো, উফঃ কি মুশকিল, কিগো, ওই জয়ন্তী, ওই
লেখার কুমুদি ও মানুষ কুমুদি'র ফারাক অনেকটাই - তার মাঝখানের সেতুটাতেই আমাদের সখ্য ছিল বিস্তীর্ণ। ওঁর লেখার চরিত্ররা যেভাবে অক্ষরের পিছন থেকে জ্যান্ত হয়ে আমাদের সামনে ওই সব কীর্তিকলাপ করে ওঠে - আমরা হেসে উঠি সোচ্চারে - তা তো এখানকার সবাই জানেন। আমি ওই গুটিকয় সৌভাগ্যবানের মধ্যে একজন যে ওঁর অসীম স্নেহচ্ছায়ার স্পর্শ পেয়েছে।
সেই আন্তরিক স্নেহচ্ছায়ার গভীরতা অপরিমেয়। ওঁর বলা কথাগুলো মৃদু অথচ মন্ত্রের মতো যেন - অনেকটা দেখে, জেনে বুঝে উচ্চারিত - এতটাই অন্যরকম। আমাদের ছেলেমানুষীতে খুশিই হতেন বুঝি, আশকারাও দিতেন - স্বকীয় মিত-মন্তব্যে তার অভিঘাত বাড়াতেন অনায়াসেই। অল্পস্বল্প বকুনি যে খাইনি তা নয় - তাও যেন শীতল স্পর্শ দিত খর-তাপের রাজধানী শহরে।
দিল্লি বইমেলার গুরুর স্টলের তিন চারদিন আমার কাছে কলকাতার পুজোর ক'দিনের মতোই। ছোট্ট গুরুর স্টল যেন ম্যাডক্স স্কোয়ারের প্যাণ্ডেল - আর সপরিবার বলতে আমরা, শমীকরা, অমৃতা-সোমরাজ-কাকলি আর অবশ্যই কুমুদি-শ্যামলদা। সেই ক্ষণস্থায়ী একান্নবর্তী সংসারে বিল কাটছেন কুমুদি, বাকিরা নানান কাজে ও অকাজে তার মধ্যেই চলছে তুমুল আড্ডা। লোকজন আসছে, কথা বলছি চেঁচাচ্ছি গান গাইছি হাসছি - তখন তো খেয়াল নেই - আয়োজকরা ট্রফি ও মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিল, ছবিছাবা উঠল - তারপর হঠাৎই মনে পড়ল - এবার সব বাকি বই প্যাক করার পালা…
ঠাকুর নামানর পর খাঁ খাঁ প্যান্ডেলের মতো সে স্টল - তাকানো যায় না। নিজেদের টেনে টেনে নিয়ে গাড়িতে উঠতাম পরে আবার ফিরে আসব ভেবে….
এ সবেরও যেন শেষ ভাসানটি হয়ে গেল গতকাল - এক্কেবারে…
এটা ঠিক হ'ল না, কুমুদি……
হুতো
ঠিক আছে। অনলাইনে কিনে নেব।
হুতো
সুকির পাঠানো ছবিতে যে বইটি? রোমহর্ষক? ওটা আছে। সেবার দিল্লি বইমেলায় শ্যামলদার হাত থেকে কেনা।
আমি দীর্ঘদিন গুরুর নীপা। মন খারাপ হলেই গুরু খুলে কুমুদির লেখা পড়েছি। ব্যক্তিগত আলাপ ছিল না। আজ সকালে ঈপ্সিতার পোস্ট দেখে জানতে পারলাম। খুব খারাপ লাগছে।
প্রিয় কুমুদি,
কাল অভ্যুকে এই টই শুরু করতে বললাম। অভ্যু টই খুললে তুমি খুশি হও। তাই।
শুক্রবার তুমি আমাকে একটি ছোটো গল্প দিয়ে গেলে- যে গল্প তুমি কিছুতেই লিখতে না , কোনোমতেই না। অথচ লিখলে তো।
কেন লিখলে এ'গল্প ভাবছি শুক্রবার থেকে- ভাবতে ভাবতে আমার দিন ক্ষণ অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ গুলিয়ে যাচ্ছে-শুক্রবারকে শনিবার বলছি, শনিবারকে শুক্রবার- সকালকে দুপুর, রাত্রিকে ঊষাকাল। তারপর একটা কুয়োতলা দেখতে পাচ্ছি।
তোমার 'একটি পাকা চাকুরির গল্পে' একটি পাতকুয়োর কথা ছিল-"কুমুর একটি অতি প্রিয় খেলা ছিল,পাতকুয়োর দেয়াল ধরে ঝুঁকে অনেক অনেক নীচের জলে নিজের মুখ দেখা, ছোট্ট পাথর ছুড়ে মুখের ছায়া ভেঙে দেওয়া, একটু পরে জলবৃত্ত শান্ত হয়ে গেলে আবার টলটলে অনন্ত কুয়োর জলে মুখ দেখা। "
এ' লেখা গুরুতে প্রকাশের আগে আমাকে পড়তে দিয়েছিলে ব্যক্তিগত মেইলে-আর লিখেছিলে, "তুমি জান কিনা জানি না,গভীর কুয়োর মধ্যে ঝুঁকে একটি বা দুটি শব্দ বললে তা কিছুক্ষণ পর উল্টো হয়ে ফিরে আসবে,যেমন ইটাছো ইটাছো বলে চিৎকার দিলে কিছুক্ষণ বাদে শুনবে ছোটাই, ছোটাই, ছোটাই-----। এই খেলাটি আমি অনেক খেলেছি,কিন্তু মনে হল জনতা বিশ্বাস নাও করতে পারে,তাই বাদ দিলাম।"
আমি এই কুয়োটাই দেখতে পাচ্ছি এখন। শিওর এই কুয়োটাই। তোমার স্মিত স্নিগ্ধ মুখ, কপালে টিপ। আনমনে শান্ত জলে মুখ দেখছ।
ইটাছো বলে ডেকো যখন ইচ্ছে হবে।
প্রণাম আর ভালবাসা নিও।
ইতি ছোটাই।
আমি কুমুর প্রেমে পড়েছিলাম। শুধু আমি নয়, আমরা সবাই, যারা গুরুতে লিখতাম, আড্ডা মারতাম ২০০৯ ও তার পরবর্তী কিছু বছর।
ভাটে সিবি লিখেছে 'জীবন তখন অনেক বেটার ছিল'। সত্যিই তাই।
এই মৃত্যু পাহাড়ের চেয়ে ভারী। মৃত্যু কথাটা লিখতে গিয়ে হাত কেঁপে গেল।
এখনও ঠিক বিশ্বাস হয় না
এই অরণ্যদা, তোমার মনে আছে কিনা জানি না। কুমুদি তখন কেবলীদি গোবুূদার গল্প লিখছেন। একবার কেউ উচ্ছসিত হয়ে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, গোবুদার খবর কি বা গোবুদা কেমন আছেন?
কুমুদি জাস্ট এক লাইন লিখে দিয়েছিলেন, গোবুদা নয়, শ্যামলদা!!
বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, গোবুদা শুধুই কেবলীদির কাছে, বাকিদের কাছে শ্যামলদা।
ধন্য তারা যারা কুমুদিকে সামনাসামনি পেয়েছে। আমি তাঁকে তাঁর আর তাঁকে নিয়ে বাকিদের গল্পে পেয়েছি। প্রিয়জন চলে গেলেন।
কুমু
---------
দু'হাজার সাত-আটে যখন আমি হায়দরাবাদে, তখনই 'কেবলি'র সঙ্গে দেখা হয়েছিলো। কুমু'র সঙ্গে অবশ্য অনেক পরে। একবার দিল্লির কোনও একটা ভাটের সময় কেউ ফোন করেছিলো। তখন কুমু নিজে থেকে ফোন করেছিলেন আমাকে। 'আপনি' করে কথা বলছিলুম বলে একটু ক্ষুন্ন হয়ে বললেন 'তুমি' করে বলো। আমি বলি, অতো তাড়াতাড়ি যে 'তুমি' বলতে পারিনা। হবে কখনও।
তার কিছুদিন পরে ফেবু'তে বন্ধুত্ব করতে চাইলেন। গুরু বা অন্য কোথাও নতুন কিছু লিখলে আমাকে মনে করিয়ে দিতেন। মন্তব্য না পেলে বলতেন শিবাংশু খুব কৃপণ। বিরল হলেও একটা প্রীতিসম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো বেশ। একবার একটি ওয়েবপত্রে দেবার জন্য লীলাবতীকে নিয়ে একটা লেখা 'ইতিহাসের খুঁটিনাটি'গুলি পরীক্ষা করে নেবার জন্য আমাকে পাঠালেন। তার পর আরেকবার অন্য একটি ইতিহাসকেন্দ্রিক লেখায় তুঙ্গভদ্রা আর হাম্পির পটভূমি উল্লেখ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সময়টা সাতের শতকে। আমি স্থান নাম পাল্টে পট্টডকল আর মাল্যপ্রভার পটভূমি দিতে বলেছিলুম। ছেলেমানুষের মতো খুশি হয়ে বার বার কৃতজ্ঞতা জানালেন । তার পর থেকে বোধ হয় আমাকে বিরাট 'পণ্ডিত' ঠাউরে নিজেই আবার 'আপনি' করে সম্বোধন করতে শুরু করে দিলেন।
প্রথম দেখা হলো গত বইমেলায়। গুরুর ঠেকে। সন্ধেবেলা আমি আর ডিডিদা খোশগপ্পো করছিলুম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। এমন সময় কুমু আর শ্যামলবাবুর প্রবেশ। ডিডিদা আমাদের 'পরিচয়' করিয়ে দিলেন। তার পর কুমুকে জিগ্যেস করলেন, আমি কে? কুমু বলেন একটা ক্লু দাও। ডিডিদা আবার বলেন 'মস্তো পণ্ডিত' লোক। ভেবে দেখো, কে? কুমু ভেবে পাননা। ফেবু'তে হয়তো আমার ছবি দেখেননি কখনও। শেষ পর্যন্ত ডিডিদা আমার নামটি জানান তাঁকে। কুমু বলেন, ধ্যাৎ, এতো 'ইয়ং ম্যান'। অতো 'পণ্ডিত' হতে পারে না। 'পণ্ডিত' শব্দটিকে চিরকালই গালাগাল ভেবে এসেছি। সেটা আবার প্রমাণ হলো। আমি বলি, ম্যাডাম, আমি কচি খোকা নই। আপনারই বয়সী হবো। বেশ খানিকক্ষণ প্রচুর হাহা-হিহি হলো। আমরা 'বয়স্ক' লোকেরা নিজেদের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে গপ্পোসপ্পো'ও করলুম সেদিন।
তারপর থেকে ফেবু'র পাতায় নিয়মিত যোগাযোগ থাকতো। একবার ব্রাহ্মণী-সহ আমার একটি ছবিতে মন্তব্য করলেন, আমাদের দেখে যেন মনে হয় আমরা কদাপি ঝগড়াঝাঁটি করিনা। আমি জানাই যেখানে দুজনেই 'সিংহরাশি', সেখানে কলহযোগ নিত্যদিনের ব্যাপার। আমার 'সিংহরাশি রাক্ষস গণ' লেখাটি পাঠালুম তাঁকে। তিনি হেসেই কুটিপাটি। এই তো দিন চারেক আগে ফেবু'তে আমার বিবাহবার্ষিকীর ছবির পোস্টে মন্তব্য করলেন, ' জীবন চিরকাল এমন সুন্দর থাকুক।আন্তরিক শুভকামনা।'
দশ তারিখ থেকে ছিলুম পাহাড়ে। নেটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো অতি ক্ষীণ। গতকাল সুজনদার (সুজন দাশগুপ্ত) একটা পোস্ট কেমন করে যেন চোখে পড়ে গেলো হঠাৎ। একটা অসম্ভব খবর। বিশ্বাস করা অসম্ভব...
কুমু এখনও মানতে পারছি না। পারবো'ও না কখনও। দিল্লি তো আমাদের দূর অস্ত। আপনি সেখানেই থাকবেন। শুধু কথাটাই হবে না। নাই হোক। আপনি থাকবেন ম্যাডাম...
কুমুদির সাথে সামনা সামনি দেখা হয়নি। তবে ফোনে কথা হয়েছিলো আমাদের বিয়ের সময়, সেও যেন অনেকদিন আগের কথা মনে হয়। তারপর হেকে ভাটের পাতায় আর ফেসবুকে যতটুকু যা কথা। লেখক কুমুদিকেই বেশি চিনি, তার বাইরে মানুষ কুমুদিকে খুব স্নেহশীল একজন সহজে কাছের লোক হয়ে উঠতে পারেন এমন কেউ মনে হয়েছে দূর থেকে কথোপকথনে। গত দেড় বছরে অনেক আকস্মিক চলে যাওয়া ভিড় করে আছে। কুমুদির খবরটা তার মধ্যেও যেন আলাদা করে কষ্টদায়ক। একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না।
সিবি, আবছা মনে পড়ছে।
কুমু-র সাথে অনেক মজা, খুনসুটি হত। উনি লুঙ্গি পছন্দ করতেন না, আমি আর শিবু এ নিয়ে খ্যাপাতাম।
ছোটবেলায় একবার বাড়ির গাছের পেয়ারা পেড়ে, স্থানীয় বাজারে মাটিতে বসে বিক্রি করেছিলাম, কুমু তখন বলেছিলেন, এটা পড়ার পর আমি অরণ্যর লুঙ্গি দোষ তাচ্ছিল্য করেছি।
কোন কিছুই ফেলে রাখতে নেই। কুমুর গল্প গুলো তো ফিরে ফিরে পড়ি। কত গল্প পড়ে কমেন্ট করা হয় নি, ভেবেছি জাস্ট ভাল লেগেছে না বলে একটু সময় নিয়ে বড় করে লিখব, সে সময় আর আসে নি :-(
এ প্রসঙ্গে মনে হল - গত ১০ বছরের ওপর, বই মেলায় গুরুর স্টলে থাকার ইচ্ছে, যাচ্ছি, যাব করে আর হয়ে ওঠে না। পাই কত অনুযোগ করেছে এই নিয়ে। যেতে হবে এবার
খুব ব্যস্ততায় থাকি আজকাল - কোনো সোশ্যাল মিডিয়া খোলা হয়না - আজ সকালে আমি ফরিদার ফেবু পোস্টে এই খবরটা দেখলাম। তারপরে গুরু খুলে এই টই!
খুব খুব মন খারাপ লাগছে! কুমুদির লেখা আর পড়তে পাবো না, জাস্ট ভাবা যাচ্ছে না! জয়ন্তী থেকে কুমু - ভাটপাতার এই ট্রান্স্ফর্মেশনের আমি সাক্ষী! ওনার লেখা ছাড়া সেভাবে পরিচয়ের অবকাশ হয়নি - দুয়েকবার মেলে কথা ছাড়া!
কুমুদি আমার স্যারের দিদি - প্রফেসর সুবিনয় দাশগুপ্ত আমাদের সায়েন্স কলেজে পড়াতেন। সেই সূত্রেই কুমুদির সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে ভাটে বা মেলে । আমাদের হাই এনার্জি ফিজিক্সের পেপারের ক্লাসটা হোতো প্রেসিডেন্সী তে - কলেজস্ট্রীট, প্রেসিডেন্সী, কফি হাউস, মেডিক্যাল কলেজ - ওখান থেকে হেঁটে হেঁটে শিয়ালদা - এটা একটা টাইম জোন - কুমুদির লেখায় সেই টাইম জোনের গন্ধটা বার বার ফিরে আসতো!
যেখানেই থাকো ভালো থাকো কুমুদি - শ্যামলদার জন্য সমবেদনা!
লেখা য় কয়েকজন কমেন্ট করলে ই কুমুদি এসে ধন্যবাদ জানাতেন অবধারিত। খালি খালি মনে হচ্ছে এই বুঝি কুমুদি লিখবেন টইটাতে।