ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ২ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৯ মে ২০১৯ | ২০১৩ বার পঠিত
যখন আমি রান্নাঘরে হামলে পড়লাম দেখি যে কার্ল তখনও খায়নি। সবজায়গায় খুঁজলাম আমি, কিন্তু একটু খুদকুঁড়োও পেলাম না। একটা খালি বোতলও কোথাও নেই যেটা দিয়ে আমি কিছু টাকা পেতে পারি। আমি ক্ষেপে গেলাম একেবারে। ছুটে বেরুলাম, ঠিক করলাম ক্লিশির কাছের ছোট রেস্তোরাঁটায়, যেখানে মাঝামাঝেই খাই, ওখানে ধার চাইব। রেস্তোরাঁর ঠিক সামনে পৌঁছে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। ফিরে এলাম। দুম করে যদি চেনা কারুর সাথে দেখা হয়ে যাবার মতো মিরাকল কিছু ঘটে এই আশায় এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম। এইভাবে অন্তত একঘন্টা গোঁত্তা মেরেছি, যতক্ষণ না একেবারে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়ে পড়াটাই মনস্থ করলাম। রাস্তায়, আমার এক রাশিয়ান বন্ধুর কথা মন পড়ল, বুলেভার ছাড়িয়ে এখান থেকে কাছেই থাকে।
ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ১ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৭ মে ২০১৯ | ১৭৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সেই দিনটাও ছিল বর্ষারই দিন, শেষবিকেলের দিক। কাফে ওয়েপলারে এক নবাগতাকে লক্ষ করলাম। আমি বেরিয়েছিলাম কেনাকাটা করতে, আমার হাত ভর্তি হয়ে আছে বই আর কিছু ফোনোগ্রাফ রেকর্ডে। সেদিন নিশ্চয়ই আমেরিকা থেকে একটা অপ্রত্যাশিত অর্থপ্রাপ্তি ঘটেছিল যার ফলে কেনাকাটা যা করেছি তারপরেও কয়েকশো ফ্রাঙ্ক তখনও আমার পকেটে। আমি বসে আছি ওই এক্সচেঞ্জের জায়গাটায়, ক্ষুধাময় এক মহিলামহল পরিবেষ্টিত হয়ে; ক্রমাগত খুঁচিয়ে যাওয়া বেশ্যার দল আর যা কিছু আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছে সেসবে আমার কোনও প্রতিবন্ধকতাই হচ্ছিল না, কারণ আমার চোখ তখন একনজরে তাক করে আছে মোহসঞ্চারী ওই নবাগতা সুন্দরীর দিকে, যে অনেকটা তফাতে কাফের দূরবর্তী কোণে বসে আছে। তাকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় সুন্দরী এক যুবতি বলেই মনে হল যে তার প্রেমিকের সাথে দেখা করবে বলে এসেছে এবং নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই চলে এসেছে।
ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ৩ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৯ জুন ২০১৯ | ১৪৯৮ বার পঠিত
আমরা কোথায় যাচ্ছি, কী করি এরকম কোনও প্রশ্নই তার কাছ থেকে এল না। দিব্য হেঁটে গিয়ে ডিভানের ওপর বসল যেন নিজেরই ঘরে রয়েছে। তারপর চা আর স্যান্ডউইচ দিতে বলল, ঠিক সেই গলায় যেভাবে ও হয়তো কাফেতে ওয়েটারকে খাবার দিতে বলে। এবং ওই একই স্বরেই জানতে চাইল আমাদের সঙ্গে শোবার জন্য আমরা ওকে কত দেব। এও বলল, ভাড়া মেটাবার জন্য দুশো ফ্রাঙ্ক ওর দরকার, পরের দিন যেটা ওকে দিতে হবে। দুশো ফ্রাঙ্ক মনে হয় রফা হিসেবে ভালোই, ও বলল, কিন্তু এটুকুই ওর লাগবে। এমনভাবে ও কথা বলছিল যেন কেউ ভাঁড়ার ঘরের মিটসেফের দিকে তাকিয়ে বলছে : ‘‘উম্ম্ম্... দাঁড়াও দেখি, তোমার লাগবে হল ডিম, মাখন, একটু পাউরুটি আর অল্প জ্যাম হলে ভালো হয়।’’ একদম এইভাবে।
ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ৪ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৮ জুন ২০১৯ | ১৫৫২ বার পঠিত
আমার মাথা এখন কাজ করছে ক্ষিপ্র গতিতে। আমায় যেটা করতে হবে সেটা হল, ওদের দুজনকে আমার ঘরটার মধ্যে রাখা, ভল্টের থেকে টাকা বের করে আনা, এনে মেয়েটার হাতে দেওয়া, তারপর ও আরেকবার বাথরুমে গেলেই ওর ব্যাগ থেকে টাকাটা নিয়ে গ্যেটের ফাউস্টের ভেতরে আবার রেখে আসা। কার্লকে বরং ওর হাতে পঞ্চাশ ফ্রাঙ্ক দিয়ে দিতে বলব, যেটার কথা কার্ল বলছিল আরকি; ওটা ট্যাক্সি ভাড়ায় চলে যাবে। সকালের আগে ও নিশ্চয়ই দুশো ফ্রাঙ্কের খোঁজ করবে না; যদি সত্যিই ওর টাকার দরকার থাকে, তাহলে যেভাবেই হোক তার ব্যবস্থা করে নেবে, আর যদি তা না হয়, তবে খুব সম্ভব নিজেকে বলবে যে টাকাটা হয়তো ট্যাক্সিতে ফেলে এসেছে। যেটাই হোক না কেন, মোদ্দা কথা, যে অবস্থায় ও এই বাড়িতে ঢুকেছিল সেভাবেই বেরুবে — একটা আচ্ছন্ন ঘোরের মধ্যে।
ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ৬ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১১ আগস্ট ২০১৯ | ১৯৬২ বার পঠিত
একটুকরো রুটি তুলে দেখলাম আদৌ খাওয়া যাবে নাকি। কারুর রাগী পায়ে পিষ্ট হয়ে গেছে। অল্প একটু সর্ষে লেগে ওতে। সর্ষেই তো? বরং আরেকটা দেখা যাক। ধ্বংসের মুখ থেকে একটা ঠিকঠাক পরিষ্কার টুকরো তুলে আনলাম, ভেজা মেঝেতে সপসপে ভেজা একটা ছোট্ট টুকরো, যাতে এক টুকরো চীজ চেপ্টে আছে। বেসিনের পাশে একটা গ্লাসে একফোঁটা ওয়াইন দেখলাম। গলায় ঢেলে, তারপর সন্তর্পণে কামড় দিলাম। খারাপ নয় একেবারে। উলটে, বেশ ভালোই লাগছে। ক্ষুধার্ত কিংবা অনুপ্রাণিত মানুষকে জীবাণুরা উত্যক্ত করে না। একেবারেই পচে গেছে মনে হয়, এই বিরক্তিটা আসছে ভেজা সেলোফেনটা থেকে আর শেষ কে এটা ধরেছিল ভেবে। ঝট করে পেছনে ঘষে মুছে নিলাম একবার। তারপর গিলে ফেললাম। আর তবে কীসের দুঃখ? আশেপাশে দেখলাম সিগারেট পাই কিনা। কয়েকটা পোড়া টুকরোই রয়েছে। সবথেকে বড় টুকরোটা বেছে নিয়ে জ্বাললাম। চমৎকার গন্ধ। আমেরিকার স’ ডাস্টের মতো নয়। একেবারে খাঁটি তামাক।
ক্লিশিতে শান্ত দিন (কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি) - পর্ব - ৫ : হেনরি মিলার :: ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১২ জুলাই ২০১৯ | ১৮৪৯ বার পঠিত
ভদ্রলোক হচ্ছেন কোলেতের লিগাল গার্ডিয়ান। কোলেতের যখন পনেরো, এরকম সময়ে ও বাড়ি থেকে হঠাৎ পালিয়ে যায়। সে যাই হোক, উনি বললেন যে, উনি যদি আমায় কোর্টে নিয়ে যান তাহলে দশ বছরের জেল আমার পাকা। জিগ্যেস করলেন, সেটা আমার জানা আছে কিনা। বললাম হ্যাঁ। আমার মনে হয় উনি বেশ অবাক হয়েছেন দেখে যে আমি নিজেকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করছি না। কিন্তু যেটা দেখে উনি সবথেকে বেশি অবাক হয়েছেন তা হল, আমরা দুজনেই লেখক। তুমি জানো লেখকদের প্রতি ফরাসিদের একটা বিরাট সম্মান আছে। একজন লেখক কখনও একটা ছিঁচকে গুন্ডা হতে পারে না। আমার মনে হয় উনি বোধহয় ভেবেছিলেন দুজন পাতি রেড ইন্ডিয়ান বা ব্ল্যাকমেলার দেখবেন এখানে এসে। কিন্তু তোমাকে দেখার পর ওর ভাবনা পালটাল। পরে আমাকে জিগ্যেস করছিল তুমি কী ধরনের বই লেখো, সেগুলোর মধ্যে কিছু অনুবাদ হয়েছে কিনা। আমি বলেছি তুমি একজন দার্শনিক, সেজন্যেই তোমার লেখা অনুবাদ করাটা বেশ কঠিন...