স্পাই : মোজাফ্ফর হোসেন
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২২১৪ বার পঠিত
আমরা যে রকম খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আঠা বের করি, গাছটি নড়েও না, চড়েও না, এই অচেনা বৃদ্ধও সে রকম প্রাণ থেকেও জড়ের মতো পড়ে থাকে। গাছের মতো একটি বারও নিজে থেকে প্রাণের প্রমাণ দিতে যায় না। এক দল হতাশ হয়, অন্য দল নতুন উদ্যম নিয়ে শুরু করে। একটা পরিপূর্ণ শব্দ ওর মুখ থেকে যে বের করতে পারবে, সে যেন গ্রামে বীরের মর্যাদা পাবে!
আমরা যখন একঘেয়ে দৃশ্যে ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলাম, তখনই আমাদের মধ্য থেকে বোমাটা ফাটাল কেউ।
স্পাই! দেখোগে ভারতের স্পাই। বোবা-পাগলের ছদ্মবেশে তথ্য নি’ পালাচ্ছি। কেউ একজন বলল ভিড়ের ভেতর থেকে। সঙ্গে সঙ্গে জনতা চাঙা হয়ে ঘুরে দাঁড়াল। মুহূর্তে সকলে যেন নিশ্চিত হয়ে গেল, লোকটি স্পাই ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না। গ্রামের পশ্চিমে খাড়া মাইল ছয়েক হাঁটলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। আমাদের গোপন কোনো তথ্য নিয়ে সীমান্ত দিয়ে পালাচ্ছে বলে আমরা ধরে নিলাম।
স্পাইদের নিয়ে গ্রামে অনেক গল্পের প্রচলন ছিল। একটা গল্পের কথা তখনই মনে পড়ল। এরা এমন কৌশলী ও নিবেদিত দেশপ্রেমিক হয় যে, কোনো দেশে স্পাইগিরি করতে গিয়ে বিয়ে-সংসার পর্যন্ত করে। তারপর মিশন শেষ হলে বিনা বাক্যে স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে স্বদেশে ফিরে যায়। এমনভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যে তাদের এই ছদ্মবেশ ধরাও যায় না।
আমাদের ভেতর থেকে কেউ কেউ এরই মধ্যে পরীক্ষা করতে শুরু করেছে। প্রথমেই একজন কঞ্চির মাথায় চুলগুলো পেঁচিয়ে টান মারল জোরে। নকল চুল হলে উঠে আসত। কিন্তু মাত্র কয়েকটা চুল ছিঁড়ে এল। বৃদ্ধের গায়ের রং আসল কি না, মুখে মেকআপ দেওয়া কি না, পরীক্ষা করার জন্য হাবু ভাই পেছনের গর্ত থেকে এক বালতি ঘোলা পানি তুলে ওর মাথায় ঢেলে দিল। গায়ের রং যেমন ছিল, তেমনই থাকল। মাঝখান থেকে সকলের সন্দেহটা থেকে গেল।