আমাদের বাড়ির অদূরে রেলওয়ে ময়দানে কালীপুজো উপলক্ষ্যে প্রতি বছর বসতো মস্ত এক মেলা । অর্ধশতাধিক বছর ধরে এই মেলা এলাকার মানুষদের সম্বৎসরের বিনোদনের উৎস ছিল । হ্যাঁ বিনোদন তো বটেই, কারণ নিস্তরঙ্গ জীবনে তখন ঢেউ তোলার মতো উপকরণ খুব একটা বেশী ছিলনা । তাই মেলার মাঠের নাগরদোলা, পুতুলনাচের তাঁবু, কিম্বা ভ্রাম্যমাণ চিড়িয়াখানার আকর্ষণ কিছু আলাদাই ছিল । হাফপ্যান্টুল আমরা অবশ্য তালপাতার বাঁশি, টিনের ব্যাঙ কটকটি, কিম্বা পোড়ামাটির গুলিতে লম্বা রবারের সুতো লাগানো-রাংতা মোড়া-ইয়ো ইয়োর বাঙালি সংস্করণ পেয়েই দিব্য খুশী থাকতাম । কিন্তু মা-কাকিমা-জ্যেঠিমাদের কাছে এই মেলা ছিল গৃহস্থালির হরেক রসদ সংগ্রহের আকর। লোহার সাঁড়াশি, বেড়ি, কাঠের তৈরী লবন রাখার পাত্র, ... ...
সেদিন একজন আক্ষেপ করে বলছিলেন, ''এত যে লোক আজকাল গান রেকর্ডিং করছে, ইউটিউবে আপলোড করছে ... ক'জনের নাম লোকে জানছে বলুন তো! পরিচিতি তো হচ্ছে হাতে গোনা গুটিকতক লোকের।'' তাঁকে আশ্বস্ত করে বললুম যে শুধু 'আজকাল'-ই যে এমনটা হচ্ছে, তা নয় । গ্রামোফোন রেকর্ডের যুগের (কেসেট, কম্প্যাক্ট ডিস্কের সময়কে বাদই দিন ) বানিজ্যিক ভাবে অসফল শিল্পীদের তালিকা যদি তৈরী করা হয়, তা নেহাত ছোটো হবেনা ... ...
প্রায় দু-দশক আগের কথা । তখন সদ্য স্কুলের চাকরিতে ঢুকেছি । চারপাশের পরিবেশ তখনও একটু অপেশাদার । একটু ঢলঢলে ভাব । আমার স্কুলের তদনীন্তন হেডমাস্টারমশাই কলকাতায় যাচ্ছেন স্কুলের কিছু কাজ নিয়ে । তখনও বেশ দূরে আছে ই-মেল, হোয়াটস্যাপ, সফট্কপি - এইসব শব্দ । আগের দিন থেকে ফাইলপত্র বাঁধাছাঁদা করে রেডি করে রাখার সময় ডাক পড়েছে তখনও কাজেকর্মে নেহাতই অপোগন্ড নবীনের । ... ...
নমস্কার ভদ্রমণ্ডলী । মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরে আবার ফিরে এলাম । শেষ চৈত্রের এই দ্বিপ্রহরে কোকিলপুর কবিতা উৎসবের দ্বিতীয়ার্ধে আপনাদের সকলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই । যদিও আবহাওয়া এখন এমনিতেই যথেষ্ট উষ্ণ, তথাপি আমরা আপনাদের অভ্যর্থনায় কোনোরকম শীতলতা থাকুক এটা চাইছি না । বাংলার নানা প্রান্ত থেকে আপনারা যে এই অখ্যাত গণ্ডগ্রামে কবিতা পড়তে এবং শুনতে ... মাফ করবেন, তথ্যে একটু ভুল ছিল, শুনতে এখনও পর্যন্ত কেউ আসেননি । সবাই পড়বেন । ... ...
সে এক দিন ছিল মশাই যখন লোকে করোনা লুকিয়ে রাখতো। হয়েছে জানতে পারলে পুলিশ এসে বাড়ির সামনে বাঁশ দিয়ে যেতো, পাড়া প্রতিবেশী অচ্ছুৎ করে দিতো। সেই সব বর্বর দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন সবাই ফেসবুকে 'আম্মো পজিটিভ' বলে স্টেটাস দেয়, গলা ছেড়ে 'জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ' গায়। ... ...
অনেকদিন আগে একটা চায়ের দোকানের দেয়ালে দেখেছিলাম কে যেন লিখেছে 'বিড়ি স্বর্গের সিঁড়ি'। এই অপার দার্শনিক কবিত্বে সেদিন মুগ্ধ না হয়ে পারি নি। কলেজে আমার এক চেন স্মোকার বন্ধু ধোঁয়া ছেড়ে বলত - 'দ্যাখ ভাই, তোরা ভালো ছেলে হতে পারিস, কিন্তু তোদের সামাজিক কর্তব্যবোধ খুব কম। আমাকে দেখে শেখ। বিড়ি, সিগ্রেট - এসব হল সমাজের শত্রু। আমি ওগুলো পুড়িয়ে ফেলি।' এক ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুর বলা গল্প আরো রোমহর্ষক। ... ...
সদ্য পুজোর মরশুম গেল। আমার এই মধ্য চল্লিশের চালশে পেরিয়ে দূরে আমার ছোটোবেলার যে খড়ের আটচালা পুজোমন্ডপটা দেখতে পাচ্ছি তার চৌকো চৌকো সেগুন কাঠের থামের মাথায় খোদাই করা প্যাঁচা, ময়ূর, হাতি, পদ্ম ... । কালো কালো সেই থামগুলোর পাশে নতুন ধনেখালি শাড়ির আঁচল গলায় জড়িয়ে প্রণাম করছে আমার মা। অষ্টমীর অঞ্জলি সেরে বাড়ি ফিরতে দেখা গেল বাবা বানিয়ে ফেলেছে ছোলা দিয়ে কুমড়োর ছক্কা। লুচির ময়দা মেখে রেখেছে। ব্যাস। ... ...