এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শিক্ষক দিবসের বিনম্র নমন

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১০১ বার পঠিত
  • দেখুন, শিক্ষক দিবস চলে গেছে, কিন্তু আমাকে কিছু কথা বলতে দিতেই হবে। আপনারা যারা মাস্টারমশাই-দিদিমণিদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তাঁরা বিলকুল ভুল করেছেন। কারণ, আগে শিক্ষা বলতে ইশকুল-কলেজ এইসব ছিল, এখন কিন্তু কলেজের জায়গায় এসেছে গোদি মিডিয়া আর উচ্চশিক্ষা মানেই হোয়াটস্যাপ ইউনিভার্সিটি। এখন ইশকুল মাস্টারদের ধড়াদ্ধড় চাকরি যায়, কিন্তু তাতে কোনো ক্ষতি হয়নি, কারণ গোদি মিডিয়া আর হোআ অজর অমর অক্ষয়। শিক্ষায় বিপ্লব এনে দিয়েছে প্রায়। গোদি-মিডিয়া আমাদের শিখিয়েছে, কীকরে বিনা যুদ্ধে করাচি-লাহোর সব দখল করে ফেলতে হয়, কীকরে হাসপাতালে মড়ার সঙ্গে সঙ্গম করে পর্নো বেচতে হয়, কীকরে মৃতার শরীরে বীর্য ইনজেক্ট করে দেওয়া যায়, কীকরে তিলকে তিলোত্তমা বানাতে হয়। এবং এর কোনোটাকে বলে দেশপ্রেম, কোনোটাকে সংবেদনশীলতা, কোনোটাকে প্রতিবাদ, কোনোটাকে মনশীলতা।এই কলেজের মনোযোগী ছাত্ররা সমাজের চারদিকে ছড়িয়ে আছেন। চোখ খুললেই দেখতে পাবেন, তাঁরা সর্বক্ষণ তালে তালে নেচে চলেছেন। তবে এইটা স্নাতক পর্যায়। টপকালে তবে পরের ধাপ হল ইউনিভার্সিটি। সেখানে জানা যায়, হনুমান মহাকাশে গিয়েছিলেন, ব্যাদে ই = এমসি স্কোয়ার লেখা আছে। কোনো একস্ট্রা টুএবি নেই। পশ্চিমবঙ্গে যত লোক তার চেয়ে বেশি রোহিঙ্গা। রবীন্দ্রনাথের ভাইয়ের নাম অরিন্দম চ্যাটার্জি। এইসব। উচ্চশিক্ষিত লোকও চারপাশে কম নেই। অনেকেই আবার সরাসরি পিএইচডি। নিজেরা পড়েন, পড়ে থিসিস লিখে ছেড়ে দেন। চায়ের দোকান থেকে কলেজের ক্যান্টিন, সর্বত্র এইসব অতিশিক্ষিত লোকেদের দেখতে পাবেন। 

    তা, যেটা বলছিলাম। যদি প্রণাম করতেই হয়, তো এই কলেজ ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের প্রণাম করুন। কীকরে করবেন? কলেজের অর্থাৎ গোদি মিডিয়ার শিক্ষকদের নাম আপনারা তো সবাই জানেন। নানা মত ও দলের লোকেরা তাঁদের প্রণাম ঠুকতে নিয়মিত যান, সেসব সরাসরি সম্প্রচারও হয়। অনেক যান না, তাঁরা মনে মনে দূর থেকে ফুল, বেলপাতা ইত্যাদি দেন। আপনিও টিভির সামনে ধূপ জ্বালতে পারেন। সরস্বতী ঠাকুরের পায়ে খবরের কাগজ দিতে পারেন। এইটা সোজা ব্যাপার। কঠিন হল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের পাওয়া। তাঁদের চট করে দেখা পাওয়া যায়না। সাক্ষাৎ সন্ন্যাসী বলে আড়ালে থাকলেই পছন্দ করেন। মনে করে দেখুন, এই ইউনিভার্সিটির মহা-অধ্যাপিকা 'আমি-সোমা-বলছি'কে কেউ কিন্তু চোখেও দেখেননি। অনেকেই শিক্ষালাভ করেছেন, কিন্তু চেয়েও প্রণাম করতে পারবেন না।  

    কিন্তু এই নিয়ে দুঃখ-টুঃখ করবেন না। এই পবিত্র শিক্ষক-দিবসের-পরের-দিন, আপনাদের জন্য রয়েছে সুখবর। এই ইউনিভার্সিটির অন্তত একজন শিক্ষককে আমরা চিনতে পেরেছি। যিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথের ভাইয়ের নাম অরিন্দম চ্যাটার্জি। যিনি আমাদের আত্মপরিচয় শিখিয়েছেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, তিনিই সেই এক ও অদ্বিতীয় কিংবদন্তী, বাংলার ইতিহাস বদলে দেওয়া ইতিহাসবিদ, পাঁঠার চচ্চড়িকেই যিনি ইতিহাসের বিকল্প বলেন, সেই  মহান রাঁধুনি, শ্রী শ্রী বিবেক অগ্নিহোত্রী। না, তাঁকে কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারবনা। কিন্তু তাঁর সৃষ্টি বেঙ্গল ফাইলস, গোপনে রিলিজ হয়ে গেছে নানা সিনেমা হলে। খুবই গোপনে, কারণ, কেউ জানেনা রিলিজ হয়েছে। আসল সন্ন্যাসীর মতোই উনি প্রচার-টচার একদম পছন্দ করেননা। এক-দুখানা পোস্টার ছাপাতে হয় তাই ছাপিয়েছেন। কিন্তু আসল ব্যাপারটা খুবই গোপন। তাই গোটা পৃথিবী জুড়ে সমস্ত হল ফাঁকা যাচ্ছে। 

    তাই, আপনাদের কাছে এসে গেছে সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগ হেলায় হারাবেন না। ইশকুল-কলেজের মাস্টারদের শ্রদ্ধা জানানো বন্ধ করুন। প্রকৃত শিক্ষকের সামনে নতজানু হন। শিক্ষক না পেলে ট্যাঁকের কড়ি খরচা করে তাঁর সৃষ্টি দেখে আসুন। নিজে দেখুন, বন্ধুবান্ধবদের দেখান। কত আর খারাপ হবে, যারা পাঠান দেখতে পেরেছে, ছাবা দেখতে পেরেছে, তারা একটা বেঙ্গল ফাইলস নিশ্চয়ই,  সাসপেনশন অফ ডিসবিলিফ অভ্যাস করে দেখে নিতে পারবে। বাংলায় দেখতে না পেলে বেঙ্গালুরু যান, ওদিকে হল নাকি পুরো ফাঁকা। বেশি দেরি করবেন না, কারণ বেশিদিন নাকি থাকবেনা। আর বদ লোকেরা বাংলার হলের মতো ওটিটিতেও নাকি বয়কটের ডাক দেবে বলছে। তাই আজই রওনা হন। প্রকৃত শিক্ষককে সম্মান জানান। শুভস্য শীঘ্রম।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:431c:bfff:878:5634:1232:***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০১733966
  • "কীকরে হাসপাতালে মড়ার সঙ্গে সঙ্গম করে পর্নো বেচতে হয়, কীকরে মৃতার শরীরে বীর্য ইনজেক্ট করে দেওয়া যায়, কীকরে তিলকে তিলোত্তমা বানাতে হয়।"
     
    চটিচাটার নেশা আফিম বা গাঁজার থেকেও বেশি মনে হয়!
  • দীপ | 2402:3a80:431c:bfff:878:5634:1232:***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০৬733967
  • শ্রদ্ধেয় রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর বাংলাদেশের ইতিহাস (চতুর্থ খণ্ড) গ্রন্থে কলকাতা দাঙ্গা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। রমেশচন্দ্রের আলোচনা অত্যন্ত তথ্যনিষ্ঠ ও প্রামাণ্য। 

    কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মৌলানা আজাদ স্পষ্টভাবে সুরাবর্দীর অপদার্থতা ও নিষ্ক্রিয়তাকে এই দাঙ্গার জন্য দায়ী করেন। তাঁর মতে সুরাবর্দীর মদতে পুলিশপ্রশাসন ও মিলিটারিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়।

    স্টেটসম্যান পত্রিকাও অনুরূপ মন্তব্য করে।

    তদানীন্তন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার পঞ্চানন ঘোষালের স্মৃতিচারণা এর অন্যতম তথ্যনিষ্ঠ বিবরণ। তাঁর লেখা থেকে পুলিশপ্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মারামারির বর্ণনা পাওয়া যায়। 

    রমেশ মজুমদারের লেখা থেকে জানা যায় ১৬ তারিখ মুসলিম লীগের গুণ্ডারা প্রশাসনের সক্রিয় মদতে একতরফা দাঙ্গাহাঙ্গামা করতে থাকে। কিন্তু ১৭ তারিখ থেকে অবস্থা পরিবর্তিত হয়। হিন্দুরাও একজোট হয়ে পাল্টা মার দিতে থাকে। ফলে নিরীহ মুসলিমরাও আক্রান্ত হতে থাকেন। ১৮ তারিখ দুইপক্ষের দাঙ্গাহাঙ্গামায় অবস্থা আরো গুরুতর হয়ে ওঠে। অবশেষে ব্রিটিশ অফিসারদের চাপে ১৮ তারিখ সন্ধ্যায় সুরাবর্দী মিলিটারি নামিয়ে অবস্থা সামাল দিতে চেষ্টা করেন। ১৯ শে আগস্ট, সকাল থেকে অবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। যদিও উভয় সম্প্রদায়ের চোরাগোপ্তা আক্রমণ আরো দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে।

    ততোক্ষণে কম করেও ৪-৬ হাজার মানুষ মৃত, অসংখ্য আহত, একের পর এক বাড়ি লুণ্ঠিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন