এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দত্তপুলিয়ার ইতিহাস (সম্পূর্ণ)

    লেখক শংকর হালদার লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৩৬৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • দত্তপুলিয়ার ইতিহাস।
     
            লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা।
     
     
                        প্রথম অধ্যায়।
     
               প্রাচীনকালে দত্তপুলিয়া। 
        (১৪১৩ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ।)
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
     
    ◆ দত্তপুলিয়া গ্রামের উৎপত্তির ইতিহাস। ◆ 
     
    ◆ বিভিন্ন জনশ্রুতি থেকে জানা যায়,15 শতকে বাংলার গণেশ রাজবংশ (1414 থেকে 1436 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসনকাল) শাসনকালের প্রথম বর্ষে বর্তমান দত্তপুলিয়া গ্রাম অর্থাৎ ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে জন বসতি স্থাপন হয়। অর্থাৎ ১৪১৪ থেকে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের হিসেবে ৬০৯ বছর আগে বর্তমান দত্তপুলিয়ার জন্ম মনে করা হয়। 
     
     ◆ তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন নামে ডাকার রেওয়াজ ছিল। শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর দত্তপুলিয়া বাবুপাড়া কৈলেশ্বর দত্ত মহাশয়ের বাড়িতে এসেছিলেন । মহাপ্রভুর স্থিতিকাল হলো, ১৪৮৬ থেকে ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত। পঞ্চদশ শতাব্দীতে বর্তমান দত্তপুলিয়া গ্রাম বা পাড়ার অস্তিত্ব প্রমাণ পাওয়া যায়।
     
    ◆ শেরশাহ ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে চৌসার যুদ্ধে (বক্সারের নিকটে) হুমায়ুনকে পরাভূত করে তিনি ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন এবং বাংলা পুনর্দখল করে খিজির খানকে এর শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। পরবর্তী বছর পুনরায় হুমায়ুনকে পরাজিত ও ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করে তিনি দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন। মাত্র পাঁচ বছরের স্বল্পকালীন শাসনে শেরশাহ সাম্রাজ্য শান্তি শৃঙ্খলা বিধান করে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস করেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বাংলায় ১৯টি সরকার ছিল।
     
    ◆ শেরশাহ অখন্ড বাংলায় প্রথম ভূমি জরিপ করেন। জমির উৎপাদিত ফসলের এক-চতুর্থাংশ রাজস্ব ধার্য করা হয়েছিল। এই রাজস্ব নগদ অর্থে অথবা ফসলের অংশ দ্বারা পরিশোধ করতে হতো। তিনিই সর্বপ্রথম ‘পাট্টা’ (ভূমি স্বত্বের দলিল) ও ‘কবুলিয়াত’ (চুক্তি দলিল) প্রথা চালু করে জমির উপর প্রজার (রায়তের) মালিকানা সুনিশ্চিত করেন এবং কৃষিকার্যে উৎসাহ দানের জন্য কৃষকদের ঋণ দানের ব্যবস্থা করেন। 
     
    ◆ দত্তপুলিয়ার অস্তিত্বের প্রথম তথ্য :- ১৫৩৯ থেকে ১৫৪৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলায় প্রথম ভূমি জরিপ হয়, এই সময় কালের মধ্যে দত্তপুলিয়া গ্রামের নামের অস্তিত্ব পাওয়া সম্ভব। কারণ বর্তমান দত্তপুলিয়া ১৪১৪ সালে জন বসতি স্থাপন হয়। অর্থাৎ দত্তপুলিয়া জনবসতি স্থাপনের ১৩০ বছর পর প্রথম ভূমি জরিপ হয়। এই এলাকার জমি সংক্রান্ত বিষয় গুলো দেখাশোনার জন্য মামজোয়ান কার্যালয় ছিল। 
     
    ◆ দত্তপুলিয়ার অস্তিত্বের দ্বিতীয় তথ্য :- ইংরেজ আমলে ১৭৯০ সালে দশশালা {দশশালা বন্দোবস্ত বা জবতি বন্দোবস্ত (ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা)} ব্যবস্থা রাজা টোডর মল প্রবর্তন করেন। এই ব্যবস্থায়, দশ বছরের গড় উৎপাদন উৎপাদন প্রাপ্ত হয়েছিল। এই গড় উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ প্রতি বিঘা টাকায় স্থির করা হয়েছিল এবং রাজ্যের (মাল) অংশ হিসাবে স্থির করা হয়েছিল। যা ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিবর্তিত হয়। জমির মালিকানা চলে যায় ইংরেজদের অনুগত গোষ্ঠীর হাতে, যারা 'জমিদার' বলে সম্বোধন করা হয়।
    বহু দিনের পুরাতন নথিপত্র থেকে জানা যায়, মামজোয়ান কার্যালয়ে অধীনে দত্তপুলিয়া এলাকা ছিল।
     
    ◆ ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরবর্তী সময়ে দত্তপুলিয়া গ্রামের বর্তমান বাবুপাড়ায় কৃষ্ণাঙ্গ দত্ত নামে একজন জমিদার বাস করতেন। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে জমি সংক্রান্ত সীমানা ও জমির খাজনা দেওয়ার সুবিধার্থে ১৭৫৭ থেকে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসকরা অখন্ড ভারতবর্ষে জমি জরিপ চালিয়ে বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়ার নাম নথিভুক্ত করেন।
     
    ◆ নিশ্চিত ভাবে বলা যেতে পারে, ১৭৫৭ থেকে ১৭৯২ পর্যন্ত জরিপ চলাকালীন সময়ে "দত্তপুলিয়া" নাম সরকারি ভাবে কাগজপত্র নথিভুক্ত হয়েছে।
    ১৭৯২ সাল ধরে দত্তপুলিয়া জন্মের ৩৭৮ বছর পর 
    নামের মর্যাদা লাভ করেছে। দত্ত পরিবার এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও তৎকালীন সময়ের সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি থাকার কারণে বিভিন্ন নাম গুলো বাদ দিয়ে তৎকালীন জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিগণ তাদের অস্তিত্ব বা স্মৃতি বজায় রাখতে “দত্তপুলিয়া” নাম প্রচলন করেন।
     
    ◆ ইতিহাসবিদগণ মনে করেন, ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারি মাধ্যমে "দত্তপুলিয়া" গ্রামের নাম তৎকালীন জমিদারের অধীনে ছিল। আনুঃ জরিপের শেষ বছর ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ দত্তপুলিয়া নামের জন্ম ধরে নেওয়া হয় তবে, অর্থাৎ ২০২৩ সাল অনুসারে ২৩০ বছর আগে দত্তপুলিয়া নামকরণ হয়েছে। তার আগে ৩৮১ বছর ধরে বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। যথা “চৈতন্য পাড়া” "দত্ত পাড়া" বা "দত্ত পুল" বা "দত্ত পুলে" বা "দত্তের পুলি" বা "পুলে বরবরিয়া" সহ ইত্যাদি ইত্যাদি নামে।
     
    ◆ পূর্ব কালে অখন্ড বাংলার বৃহত্তম যশোর জেলার অধীনে ও পরবর্তীতে অখন্ড নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত আর বর্তমানে দ্বিখন্ডিত ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার অধীনে দত্তপুলিয়া গ্রাম বা গ্রাম পঞ্চায়েত।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া নাম নথিভুক্ত করার যুক্তিগুলি,
     ২৩ জুন ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পলাশীর যুদ্ধের পর রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে কোম্পানি বাংলার কলকাতা থেকে কুলপি পর্যন্ত ২৪ টি পরগনার জমিদারি পায়।
     
    ◆ অখন্ড ভারতবর্ষের ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে ক্লাইভের এই জমিদারি ম্যাপ তৈরির জন্য একদল জরিপ বিদের মাধ্যমে ফ্র্যাস্কল্যান্ডের নেতৃত্বে এই জমিদারি জরিপের কাজ শুরু হয় কিন্তু জরিপ চলাকালীন ফ্র্যাস্কল্যান্ডের মারা গেলে জরিপের কাজ শেষ করেন হগ ক্যামেরুন।
     
    ◆ ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নদী পথ গুলো জরিপ করে রেনেল বাংলার নদীর গতিপথের ১৬ টি জনপদ তৈরি করেন।
     
    ◆ সাবেক শাসকরা বাঙালি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের কাজ দেখাশোনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। ১৭৭২ সালে এসব তত্ত্বাবধায়ক কে জেলায় জেলায় রাজস্ব সংগ্রাহক কর্মকর্তা বা রেভিনিউ কালেক্টর করা হয়।
     
    ◆ এই ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা প্রদেশের (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি) সকল জমির নিয়মিত জরিপ কার্যের প্রয়োজন দেখা দেয়। 
     
    ◆ ১৭৮৯ সাল অবধি তৎকালীন তালুকগুলির সীমা, পরিসীমা ও আকার-আয়তন সম্পর্কিত সংগৃহীত তথ্য অসম্পূর্ণ ও সম্ভবত, কোন কোন ক্ষেত্রে খুবই ভ্রান্তি পূর্ণ ছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে জেলা কর সংগ্রাহক কর্মকর্তারা (ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর) ঐ বন্দোবস্ত গুলো প্রকৃতপক্ষে জমির পরিমাণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
     
    ◆ ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার মধ্যে প্রথম কৃষ্ণনগর শহরে নদীয়া কালেক্টর জেলা গঠন করা হয়। এই সময়ে দেওয়ানী আদালত স্থাপন ও নীল চাষের জন্য নীলকর সাহেবদের বাংলার আগমন। 
     
    ◆ প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ইংরেজরা ১৭৮৭ সালে বঙ্গদেশে নদিয়াকে প্রথম জেলা হিসাবে চিহ্নিত করে দফতর স্থাপন করে। পরে ক্রমান্বয়ে ১৭৯৩, ১৭৯৫, ১৭৯৬, ১৮৩৪, ১৮৬১ এবং ১৮৮৮ সালে নদিয়ার অঙ্গচ্ছেদ করে গঠিত হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা গঠিত হয়। ক্রমাগত ছোট হয় নদিয়া। ১৮৫৪ সালের আগে নদিয়া যশোহর ডিভিশনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬০ সালে কৃষ্ণনগরকে সদর করে পৃথক নদিয়া ডিভিশন গড়া হয়। পুরনো বিন্যাস ভেঙে নদিয়া জেলা গড়া হয় কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, কৃষ্ণনগর, চুয়াডাঙা, শান্তিপুর ও বনগ্রাম নিয়ে। পরে বনগ্রাম যশোহর সাব-ডিভিশনে যুক্ত হয়। আর শান্তিপুর মহকুমা বদলে যায় রানাঘাট মহকুমায়।
     
    ◆ ১৭৯৪-৯৯ সালের মধ্যে রানাঘাট-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জমিদারি হস্তগত হল কৃষ্ণ পান্তির অর্থাৎ জমিদার পাল চৌধুরী। দত্তপুলিয়া এই সময়ে রানাঘাট মহকুমার অন্তর্গত ছিল।
     
    ◆ নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজত্বকাল ১৭১০ থেকে ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কিন্তু এই সময়ে বর্তমান দত্তপুলিয়া গ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
     
     ◆ দত্তপুলিয়া গ্রামের বাবুপাড়ার বাসিন্দা একজন বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আবার জমিদার অপূর্ব মণি দত্ত মহাশয় তাঁর বিখ্যাত রচনা ৭ জুলাই ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত "সম্রাট বাহাদুর শাহের বিচার" গ্রন্থে দত্তপুলিয়া গ্রামের নাম ব্যবহার করেছেন।
     
    ◆ "সম্রাট বাহাদুর শাহের বিচার" বইয়ের উৎসর্গ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।
     
    ◆ আমার স্বর্গীয় পিতৃদেবের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁরই স্মৃতির উদ্দেশ্যে।
     
    ০৭,০৭,১৯৫৮ শ্রী অপূর্ব মণি দত্ত
    দত্তপুলিয়া (নদীয়া)
     
    ◆ "সম্রাট বাহাদুর শাহের বিচার" গ্রন্থে দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। 
     
    ◆ ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত "অভ্র পুস্প" গল্প সংকলনে বইয়ের ভূমিকা নিজে লিখেছেন ও দত্তফুলিয়া নদীয়া নাম উল্লেখ করেছেন।
     
    ◆ অপূর্ব মণি দত্ত মহাশয়ের ৬টি রচনার সন্ধান পাওয়া গেছে।◆ 
    ◆ (১) "সম্রাট বাহাদুর শাহের বিচার" প্রবন্ধ গ্রন্থে ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত। অনলাইনে পাওয়া যায়।
    ◆ (২) "সোনার শাঁখা" উপন্যাস, ১৯৯২ সালে প্রকাশিত। অনলাইনে পাওয়া যায়।
    ◆ (৩) "অভ্রপুস্ম" গল্প সংকলন ১৯১৭ সালে প্রকাশিত। অনলাইনে পাওয়া যায়।
    ◆ (৪) "সিদ্ধ কবজ" অজানা
    ◆ (৫) "এ নহে কাহিনী" ইতিহাস বিষয়ক। 
    ◆ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় "এ নহে কাহিনী" এই গ্রন্থের মধ্যে দত্তপুলিয়া গ্রামের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। দুঃখের বিষয় গ্রন্থটি অনলাইনে বা বাজারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না।
    ◆ (৬) স্বর্গ থেকে বিদায়। উপন্যাস অজানা।
     
    ◆।। দত্তপুলিয়া নামের ইতিহাস ।।◆
     
    ◆ দত্তপুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা বয়স্ক ডাক্তার প্রহ্লাদ বোস ও জ্যোতির্ময় সরস্বতী মহাশয় বলেন :- দত্তপুলিয়া পুলের মতো বরণ বাড়িয়া থেকে শীল বেড়িয়া মাঝখানে হলে সুঁচালো মতো। বরণ বাড়িয়া শ্রীরামপুর, মনসা হাটি আর ডান দিকে কানিবাহনী বাগদিয়া বড়বড়িয়া কলোনী কুশাবাড়ী নাথ কুড়া হলে পেট মোটা হয়ে গেছে । দত্তপুলিয়া থেকে মোটা হয়ে চন্ডিপুর ঘোগার বিল সীমা।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া প্রাচীন কাল থেকে দত্ত, মিত্রি, ব্যানাজি, ঘোষ, ভট্টাচার্য, মজুমদার, বিশ্বাস ,মন্ডল, কামার কুমার, পাল,নাপিত ও হালদার সহ বহু পদবী ধারণকারী বা সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতেন। তার মধ্যে দত্ত পরিবারের সদস্যরা সংখ্যা গরিষ্ঠ ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি গণ বসবাসের কারণে দত্তপুলিয়া গ্রামের নামের আগে দত্ত শব্দ নেওয়া হয় আর ভৌগলিক দিক থেকে পুলে পিঠের মতো হওয়ার কারণে পুলে থেকে পুলিয়া শব্দ নিয়ে "দত্তপুলিয়া" নাম ধারণ করে। (দত্ত + পুলিয়া = দত্তপুলিয়া)
     
    ◆।। বিভিন্ন জনশ্রুতি থেকে জানা যায় ।।◆
     
    ◆ জনশ্রুতি অনুসারে ১৪১৪ থেকে ১৯৪৭ সালের আগে পর্যন্ত তৎকালীন সময়ে বর্তমান দত্তপুলিয়া এলাকা জঙ্গলে পরিণত ছিল। এই জঙ্গলে বাঘ ভাল্লুক সহ বিভিন্ন হিংস্র জানোয়ারের বসবাস ছিল। 
     
    ◆ বংশ পরম্পরায় জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, সম্ভবত ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে বহিরাগত কিছু পরিবার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বর্তমান দত্তপুলিয়া এলাকায় প্রচুর পশু খাদ্য, অনাবাদি প্রচুর জমি তাতে সবুজ ঘাস, নদীতে প্রচুর মাছ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। বর্তমান বাবু পাড়া নামে পরিচিত এই এলাকায় জঙ্গলের মধ্যে কয়েকটি পরিবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে গাছ কেটে বসতি স্থাপন করে। সেই সময় এলাকা টি উঁচু ঢিপির মতো আর চারিদিকে জল ছিল।
     
    ◆ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা ও বন্য প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উঁচু ঢিপির উপর বসবাস করতেন। আবার জঙ্গল কেটে স্থায়ীভাবে চাষবাস ও পশু পালন করতে শুরু করে। উর্বর জমিতে চাষ করে তাদের খাদ্য সংকটে থেকে মুক্তি পায়। গর্ত খুঁড়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা ভালো ছিল। ইছামতি নদীর বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার সুবিধা সহ নৌকায় করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে উঠে। এরপর বংশ-পরম্পরায় নিজেদের প্রয়োজনে ব্রাহ্মণ ও নাপিত প্রয়োজন পড়ে। আর প্রয়োজনের চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন পদবীর মানুষের বসবাস শুরু হয়। অন্যান্য ব্রাহ্মণ, কায়স্থ , নাপিত, ধোপা, মালো, মুচি ইত্যাদি ইত্যাদি পদবী ধারণকারী বসতি স্থাপন করে। প্রাচীন কাল থেকেই একটি প্রবাদ বাক্য চলে আসছে, “ সমগ্র বাংলার মধ্যে শান্তিপূর্ণ জায়গা হল দত্তপুলিয়া।” আর বর্তমানে বলে, “পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে শান্তিপূর্ণ জায়গা হল দত্তপুলিয়া।”
     
    ◆ পরবর্তী কয়েকশো বছর পরে অন্যান্য পদবী ধারণকারী মানুষের মধ্যে থেকে “দত্ত” পদবী ধারণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ ও প্রভাবশালী পরিবার থাকার কারণে তাদের নাম অনুসারে "দত্ত পাড়া" নামে পরিচিত হয়ে উঠে। বর্তমান কালের বিবর্তনে "বাবুপাড়া" নাম হয়েছে। এই বাবু পাড়ায় হচ্ছে দত্তপুলিয়া এলাকার আদি বাসিন্দা পাড়া বলে খ্যাত। 
     
    ◆ জনশ্রুতি অনুসারে প্রাচীনকালে দত্তপুলিয়া নাম কোন ভৌগলিক মানচিত্র ছিল না (অর্থাৎ জরিপ সময়কাল ১৭৫৭ থেকে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের আগে।) ভৌগোলিক দিক দিয়ে এই এলাকা পুলি পিঠের মতো ছিল সেই কারণে "পুলে বরবরিয়া" বলা হতো। (বর্তমান দত্তপুলিয়া গ্রামের পাশে বরবরিয়া গ্রাম বিরাজমান।)
     
    ◆ জনশ্রুতি অনুসারে দত্তপুলিয়ার জমিজমা সংক্রান্ত জমিদার অপু দত্ত অর্থাৎ দুই মাথা দত্ত ছিলেন। 
     
    ◆ বিশ্ব শিকদার মহাশয় বলেন :- জমিদার গৌর সরকার তার ছেলে হলো, সাহেব আর বাবলু ।
     
    ◆ জমিদার লেবু দত্তের বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী ছিল। ব্রিটিশ আমলে রানাঘাট থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক জিনিসপত্র লাঠিয়াল বাহিনী পাহারায় গরুর গাড়ি বা ঘোড়ার গাড়ি করে দত্তপুলিয়া গ্রামে নিয়ে আসতেন।
     
    ◆ স্বর্গীয় বিধুভূষন মন্ডলের বংশধর লক্ষণ হালদার বলেন :- লেবু দত্ত জমিদারের অধীনে আমার ঠাকুরদা স্বর্গীয় বিধুভূষন মন্ডল মহাশয় লাঠিয়াল ছিলেন। তার ছেলে আমার বাবা সন্তোষ মন্ডল কিন্তু পদবী পরিবর্তন করে হালদার হয়েছি।
     
    ◆ জনশ্রুতি অনুসারে লেবু দত্তের জমিদারের হিসাব রক্ষক ছিলেন :- নিতাই অধিকারী, ছুনু মজুমদার ও বলাই মোদক।
     
    ◆ জনশ্রুতি অনুসারে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে। বর্তমান দত্তপুলিয়া গ্রাম এলাকার মধ্যে তৎকালীন প্রাচীন কালের সময়ে ইছামতি নদীর সাথে যুক্ত বহু জায়গায় বড় বড় জলাশয় বা খাল ছিল। যার উপর দিয়ে বাঁশের পুল তৈরি করে মানুষ যাতায়াত করতেন। কালের বিবর্তনে ও মানুষের প্রয়োজনে খাল গুলো ভরাট করে দেওয়া হলেও কিন্তু বর্তমানে কয়েকটি খাল এখনো আছে। 
     
    ◆ জনশ্রুতি অনুসারে এই এলাকায় অন্যান্য পদবী ব্যক্তি গণসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ দত্ত পরিবারের সদস্যদের দত্ত পদবী নিয়ে আর অসংখ্য পুল থাকার কারণে বর্তমান "দত্তপুলিয়া" এলাকা "দত্ত পুল" নাম ধারন করে আর "দত্তপাড়া" স্বতন্ত্র হয়ে পড়ে। "দত্ত পুল" বা "দত্তের পুলি" বা "পুলে বরবরিয়া" থেকে ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে দত্তপুলিয়া নাম ধারণ করে। 
     
    ◆ বয়স্ক প্রদীপ খাঁ মহাশয় বলেন :- জনশ্রুতি অনুসারে দত্ত পাড়ায় কুচি দত্ত নামের একজন অকাল বিধবা মহিলা ছিলেন, যার পিঠে বড় ধরনের কুচ ছিল। কুচ থাকার কারণে আসল নাম হারিয়ে কিন্তু কুচি দত্ত নামে পরিচিত হয়ে আছেন। তিনি অসাধারণ পুলি পিঠা তৈরি করে খ্যাতি অর্জন করেন। দূর দূরান্ত গ্রাম থেকে বহু লোক পুলি পিঠা খেতে কুচি দত্তের বাড়িতে আসেন। লোকজন তাকে খুব প্রশংসা করতেন। লোক সমাজে এই এলাকার নাম এক সময় দত্ত বাড়ির পুলি পিঠের কারণে "দত্তের পুলি" নামে পরিচিত হয়। কালের বিবর্তনের "দত্তের পুলি" থেকে এক সময় "দত্তপুলিয়া" নাম ধারন করে।
     
    ◆ নদীয়া জেলার তীর্থক্ষেত্র নবদ্বীপ টোল শিক্ষা ব্যবস্থার এক অধ্যক্ষ বিভূতি বন্দ্যোপাধ্যায় বাবাজি মহারাজ বলেন :- চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর ধ্যানের পরবর্তী সময়ের "বৈষ্ণব তরঙ্গ" নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায়। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৪৮৬, নবদ্বীপ, মারা গেছেন: ১৪ জুন, ১৫৩৪, পুরী।) তিনি জীবিত থাকাকালীন সময়ে কোন এক সময় কয়েক জন সাথী কে নিয়ে শিবনি নিবাস হয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদী পথে দত্ত পুল (অর্থাৎ দত্তপুলিয়া) এলাকার দত্তপাড়া নিবাসী কৈলেশ্বর দত্ত নামক এক ভক্তের বাড়িতে কয়েক ঘন্টা অবস্থান করেন।
     
    ◆ ব্রিটিশ ভারতের অখন্ড বাংলায় ১৭৭৭ সালে প্রথম দিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসক গণ বাংলায় নীল চাষ শুরু করে। " দত্তপুলে" বা দত্তপুলিয়া এলাকায় ব্রিটিশ শাসকরা জোর করে এলাকার মানুষকে দিয়ে নীল চাষ করাতো। দত্তপুলিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নীলকুঠি স্থাপন করে। তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে দত্তপুলিয়া গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করেছিলেন।
     
    ◆ ১৮৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অখন্ড ভারত বর্ষ সহ অখণ্ড বাংলায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নীল চাষী গণ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। 
     
    ◆ বিশিষ্ট সমাজসেবক বয়স্ক জ্যোতির্ময় ময়না সরস্বতী মহাশয় বলেন :- জনশ্রুতি অনুসারে এই সময়ে দত্তপুলিয়া এলাকার জমি সংক্রান্ত জমিদার অপু দত্ত অর্থাৎ দুই মাথা দত্ত নামে পরিচিত। দুই মাথা দত্ত বাবুর মাথার পাশে বড় টিউমার ছিল কিন্তু দূর থেকে দেখলে মনে হতো দত্ত বাবুর দুটি মাথা দেখা যেত, যে কারণে লোক সমাজে দুই মাথা দত্ত নামে পরিচিতি লাভ করেন। 
     
    ◆ দু মাথা দত্তের স্ত্রী তার বাবার বাড়ি থেকে তৎকালীন সময়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পালকিতে চড়ে দিনের বেলায় দত্তপুলিয়া গ্রামে আসার সময় বর্তমান মনসা হাটি গ্রামের জঙ্গলের মধ্যে হঠাৎ দুই ব্রিটিশ সাহেব ঘোড়ায় চড়ে পালকির সামনে উপস্থিত হয়ে বেহারাদের চাবুক মারতে শুরু করে। পালকি চালক বেহারাগণ চাবুকের আঘাতে জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। 
     
    ◆ দুই মাথা দত্তের স্ত্রী ব্রিটিশ কর্মচারীদের হাবভাব লক্ষ্য করে নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রচন্ড আওয়াজ করে দরজা খুলে রামদা হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। মা দুর্গার মত ক্রোধিত হয়ে অসুর বিনাশ করার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ব্রিটিশ কর্মচারীর সামনে গিয়ে রামদা উঁচু করে বলে, আয় দেখি, কে আসবি! তোদের কে আজ বিনাশ করবো। বলে রামদা দিয়ে আক্রমণ করতে যাবে, আর সেই মুহূর্তে ব্রিটিশ সাহেবরা ভয় পেয়ে দ্রুত বেগে পালিয়ে যায়। তারপর দু মাথা দত্তের স্ত্রী পালকি বেহারাদের ডেকে বাড়িতে আসে।
     
    ◆ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই মাথা দত্ত মহাশয় তার স্ত্রীকে সাথে করে এলাকার নীল চাষীদের সাথে যোগদান করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৮৫৯ সালের নীল আন্দোলন শুরু হয় তাহলে তিনি সেই সময়কার দুই মাথা দত্ত জমিদার ছিলেন।
                   
    ◆ বাংলায় ১৭৭৭ সালে প্রথম নীল চাষ শুরু হয়। জনশ্রুতি অনুসারে সম্ভবত ১৭৯২ সালের দিকে ব্রিটিশ শাসকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দত্তপুলিয়া এলাকার ইছামতি নদীর উপর অস্থায়ী কাঠের পুল তৈরি করে। এলাকার নীলকুঠি সহ বনগাঁ, যশোর ও অন্যান্য জায়গার নীলকুঠি যাওয়ার জন্য মাটির রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়। দত্তপুলিয়া থেকে যশোর যাওয়ার রাস্তা ছিল কিন্তু তৎকালীন সময়ে রাস্তা বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়।
     
    ◆ সম্ভবত ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দুই মাথা দত্ত মহাশয়ের নেতৃত্বে তৎকালীন "দত্তপুলিয়া" এলাকার নীল চাষিরা বর্তমান দত্তপুলিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নীলকুঠি সমবেত হয়ে গণ আন্দোলন শুরু করে আর আন্দোলনের তীব্রতা উপলব্ধি করে ব্রিটিশ সাহেবেরা ভয় পেয়ে এলাকা থেকে নীল চাষ বন্ধ করে দেয়। ১৯০০ সালের মাঝে নিশ্চিন্তপুরের নীলকুঠি উঠে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলায় সম্পূর্ণভাবে নীল চাষের অবসান ঘটে।
     
    ◆ ভারত স্বাধীনতা লাভের পূর্বে মুহূর্তে দত্তপুলিয়া এলাকা বেশিরভাগ জঙ্গলে পরিণত ছিল। এই সময়ে বাঘ হামলা চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন গল্প শোনা যায়। এই সময় আশেপাশের গ্রাম বলতে হাসপাতাল পাড়া, বড়বড়িয়া, মনসাহাটি, কানিবামনী আর বাবুপাড়া সহ প্রমুখ। 
              ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
     
               দ্বিতীয় অধ্যায়।
     
            ।। আধুনিক দত্তপুলিয়া । ।
        (১৯৪৭ থেকে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ।)
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ◆ অখন্ড ভারতের স্বাধীনতার পূর্ব নদীয়ায় পাঁচটি মহকুমা ছিল: কৃষ্ণনগর সদর, রানাঘাট, কুষ্টিয়া , মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা । এই সময়ে রানাঘাট অন্তর্ভুক্ত দত্তপুলিয়া অখন্ড ভারতবর্ষের মধ্যে ছিল।
     
    ◆ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সাময়িকভাবে এই জেলা পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সময়ে দত্তপুলিয়া পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে।
     
    ◆ প্রতিবাদের কারণে সংশোধন করা হয় আর 1947 সালের 17 আগস্ট রাতে, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, করিমপুর, শিকারপুর এবং পলাশী ভারতে স্থাপন করা হয়। এই সময়ে আবার দত্তপুলিয়া স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকা হয়ে পড়ে। 
     
    ◆ ১৯৪৭ সালের ১৮ ই আগস্ট নদীয়া জেলা অর্থাৎ দত্তপুলিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে । ১৮ ই আগস্ট দত্তপুলিয়া সহ নদীয়া জেলার স্বাধীনতা দিবস।
     
    ◆ ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নদিয়া জেলা তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। 
     
    ◆ বর্তমান ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের উত্তর পূর্ব বিধানসভার ধানতলা থানার অধীনে ৪১ টি বুথ নিয়ে দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত। দত্তপুলিয়ার পূর্ব দিকে ইচ্ছামতী নদীর পুল ( ব্রিজ) নদীয়া-উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সীমান্ত রেখা। আবার উত্তর দিকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ভারত ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমারেখা।
     
    ।। দত্তপুলিয়ার সংস্কারক ।।
     
    ◆ দত্তপুলিয়ার উন্নয়নের বিষয়ে ডাক্তার প্রহ্লাদ বোস মহাশয় বলেন :- দত্তপুলিয়ার উন্নয়ন ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫৪ সাল থেকে দত্তপুলিয়া উন্নয়ন শুরু হয়। দত্তপুলিয়ার রূপকার হিসেবে, আমার বাবা নারায়ণ চন্দ্র বোস তার ভাগ্নে প্রহ্লাদ চন্দ্র গণ সহ সুকুমার বোস, নির্মল মণি দত্ত, বিশ্বনাথ গোস্বামী (আড়ংঘাটা, সমাজের একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ছিলেন। ) দত্তপুলিয়ার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন মূলক কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
     
    ◆ ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে রাস্তার কাজ শুরু হয়। যাদের উদ্যোগে রাস্তা তৈরি হয়েছিল। তাদের নাম- প্রহ্লাদ চন্দ্র গণ, নারায়ণ চন্দ্র বোস, সুকুমার বোস নীলমামণি দত্ত, বিশ্বনাথ গোস্বামী (আড়ংঘাটা) ওয়েস্ট বেঙ্গল এর মিনিস্টার ফজলুল হক সহ প্রমুখ ব্যক্তিগণ। 
     
    ◆ দিলীপ কুন্ডু মহাশয় বলেন :- আমার বাবা কমল কুমার কুন্ডু (সমর কুমার কুন্ডু) প্রথম গাড়ি চালক ও মালিক ছিলেন। ৬২ সালের সম্ভবত জুন মাসে প্রথম মিলিটারি মোটর গাড়ি মাটির রাস্তা দিয়ে দত্তপুলিয়া পুরাতন বাজার থেকে শুরু করে চন্ডিপুরের ভিতর দিয়ে নাথকূড়া হয়ে চাপড়া রোড ধরে রানাঘাট যাতায়াত করতো। ১৯৬৩-১৯৬৪ সালে আট খানা গাড়ি দত্তপুলিয়া থেকে আড়ংঘাটা প্রথম চালু হয়। তারপর কয়েক বছর পর দত্তপুলিয়া থেকে কৃষ্ণনগর রোড চালু হয়। সম্ভবত ১৯৬৭ সালে দত্তপুলিয়া থেকে রানাঘাট রোড চালু হয়।
     
    ।। দত্তপুলিয়া আধুনিক সংস্কারক ।।
    ◆ দত্তপুলিয়া আধুনিক সংস্কারক হলেন, প্রাক্তন বিধায়ক সমীর পোদ্দার মহাশয়। তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দলের একজন সক্রিয় উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তি ও দত্তপুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। দশ বছর এলাকার বিধায়ক থাকাকালীন সময়ে দত্তপুলিয়া এলাকায় রাস্তাঘাট মেরামত, পিস এর পাকা রাস্তা ও পাড়ায় পাড়ায় ঢালাই রাস্তা তৈরি করেন। গ্রামের বিভিন্ন দিকে পাকা রাস্তা তৈরি হওয়ার কারণে কর্মহীন বেকার মানুষগুলো অটো রিক্সা কিনে পাড়ায় পাড়ায় যাত্রী নিয়ে আয় রোজগারের পথ পেয়েছে। 
     
    ◆ বিধায়ক মহাশয় বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় আলো ও হাইমার্চ লাইটের ব্যবস্থা সহ সার্বিকভাবে উন্নয়নের চেষ্টা করেন। দত্তপুলিয়া মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে তিনি প্রথম পাকা চিতা তৈরি সহ স্নানের ঘাট শান বাঁধানো পাকা করে দেন। দত্তপুলিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিল্ডিং মেরামত করেন ও নতুন বিল্ডিং সহ ১০ শয্যা বিশিষ্ট আসন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নিজের দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কারণে বিধায়ক সমীর পোদ্দার মহাশয় পরাজিত হয়ে যায়।
     
    ।। দত্তপুলিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা ।।
    ◆ স্বাধীনতার পূর্বে এই এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে এলাকার শিক্ষিত মানুষের মধ্যে শতকরা ২০ জন মতো এলাকার বাইরে থেকে শিক্ষা লাভ করেন আর শতকরা ৮০ জন বিভিন্ন জায়গার বহিরাগত শিক্ষিত বাসিন্দা। 
     
    ◆ ভারত স্বাধীনতা লাভের পর এলাকার মানুষকে শিক্ষা দান করার জন্য দত্তপুলিয়া পুরনো পোস্ট অফিসের মোড় (অর্থাৎ বর্তমান হাসপাতাল মোড় বা চৌরঙ্গী নামে পরিচিত।) ১৯৪৯ সালে সর্বপ্রথম পড়াশোনা ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমান নাম "দত্তপুলিয়া ইউনিয়ন একাডেমী (উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়)" প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু হয়। তারপর ১৯৬৫ সালে হাই স্কুলে অর্থাৎ মাধ্যমিক রূপান্তরিত হয়ে বর্তমান দত্তপুলিয়া মোড়ের মাথায় হস্তান্তর হয়। 
     
    ◆ বর্তমান দত্তপুলিয়া মোড় প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৫১ সালে স্থাপিত হয়। 
     
    ◆ বর্তমান দত্তপুলিয়া ইউনিয়ন একাডেমী বিদ্যালয়ের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেদের পাঠদানের সুবিধা রয়েছে। এখানে 997 টি বই, 10 টি কম্পিউটার এবং একটি খেলার মাঠ সহ একটি লাইব্রেরী রয়েছে।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া ইউনিয়ন একাডেমী ফর গার্লস স্কুলের মেয়েদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান 1974 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্কুলটিতে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের সুবিধা রয়েছে। এখানে 500 টি বই, 5 টি কম্পিউটার এবং একটি খেলার মাঠ সহ একটি লাইব্রেরী রয়েছে।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া ইউনিয়ন একাডেমী বিদ্যালয় ও দত্তপুলিয়া ইউনিয়ন একাডেমী ফর গার্লস স্কুলের সৃষ্টির ইতিহাস ও যাদের অবদান রয়েছে। 
    ◆ ১৯৬৫ সালে নারায়ণ চন্দ্র বোস মহাশয়ের কাছে প্রহ্লাদ চন্দ্র গণ মহাশয়ের নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, মামা ; মেজ মামা ও ছোট মামা আর আপনি মিলিত হয়ে আপনাদের জমি দান করেন, তাহলে হাই স্কুল টা তৈরি করতে পারি ।( বর্তমান দত্তপুলিয়া মোড়ের মাথায় যে জমিতে হাইস্কুল।) 
     
    ◆ নারায়ণ চন্দ্র বোস বলেন :- হাই স্কুল তৈরি করতে পারবি না।
     
    ◆ প্রহ্লাদ চন্দ্র গণ বলেন :- মামা; হাই স্কুল তৈরি করতে না পারলে কিন্তু তোমার জমি ফেরত দেওয়া হবে।
     
    ◆ নারায়ণ চন্দ্র বোস বলেন :- ঠিক আছে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য একটা সুযোগ দিতে পারি। জমি অর্পন নামা রেজিস্ট্রি করা হবে। অর্থাৎ যদি হাই স্কুল তৈরি করতে না পারে বা স্কুল উঠে গেলে কিন্তু তাহলে উক্ত সম্পূর্ণ জমির মালিকগণ ফেরত পাবেন। নারায়ণ চন্দ্র বোস দেড় বিঘা জমি দান করেন।
     
    ◆ নারায়ন চন্দ্র বোস ও তার দাদা সুকুমার বোস আর নির্মল মণি দত্ত স্কুলের জমি দান করেন। আর খেলার মাঠের জমি দেন জমিদার কে বোস ও সচিন্দ্র নাথ ঘোষাল দান করেন।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া ইউনিয়ন একাডেমি ফর গার্লস স্কুল তৈরি করতে সাড়ে তিন বিঘা জমি নারায়ন চন্দ্র বোস দান করেন।
     
    ◆ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার মহাবিদ্যালয় 2007 সালে পানিখালী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি মহিলা কলেজ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কিন্তু পরে সহ-শিক্ষায় পরিণত হয়েছিল। এটি একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সাধারণ ডিগ্রি কলেজ।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া পাবলিক লাইব্রেরি ১৯৬১ সালে স্থাপিত হয়। দুঃখের বিষয় লাইব্রেরী পরিচালনা করার খাতা-কলমে সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী আছে কিন্তু বাস্তবে সব সময় বন্ধ থাকে। এক প্রশ্নের জবাবের জানা যায়, বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেটের যুগে কেউ আর বই করতে চায় না।
     
     ◆ ভারতের 2011 সালের আদমশুমারি অনুসারে, দত্তপুলিয়া মোট শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল 9,985 জন । (6 বছরের বেশি জনসংখ্যার 80.85%)।
     
    ।। দত্তপুলিয়া দুর্গা পূজার শুরুর ইতিহাস ।।
     
    ◆ স্বাধীনতা লাভের কয়েক বছর পর অর্থাৎ সম্ভবত ১৯৪৯ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে দত্তপুলিয়া এলাকার মধ্যে সর্বপ্রথম প্রথম দুর্গাপুজো প্রভাত চন্দ্র মিত্রি ও তার ভাই প্রবোধকুমার মিত্রি মহাশয় বাবু পাড়ায় শুরু করেন। মিত্রি বা ক্যাপ্টেন বাড়ি বর্তমানে হালদার বাড়ি নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই তৎকালীন সময়ে মিত্তির বাড়ি নামে খ্যাতি লাভ করেছিল কিন্তু বর্তমান ধ্বংসাত্মক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই বাড়িতেই প্রথম দুর্গা পুজোর পাকা মন্ডপ আর বড় নাট মন্দির ছিল। প্রভাত চন্দ্র মিত্রি একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন। কর্ম অবসর নেওয়ার পর তিনি দত্তপুলিয়া বাবু পাড়ার এই বাড়িতে বসবাস করতেন। প্রভাত চন্দ্র মিত্রি মহাশয়ের ছেলে ইংল্যান্ডে বসবাস করেন আর বাবুপাড়ার মিত্তির বাড়ি বিক্রি করে তাদের দুই ভাইয়ের বংশধর কলকাতায় বসবাস করে।
     
    ◆ সম্ভবত ১৯৬১ সালের বর্ষার মৌসুমী দত্তপুলিয়া ইছামতি নদীর জলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সময় মিত্তির বাড়ি জলের মধ্যে ছিল কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে ধর্মপ্রাণ কিছু বয়স্ক মানুষ মিলিত হয়ে সোনু মজুমদারের ফাঁকা উঁচু ঢিপির সমতল জায়গায় পুজো হয়। বন্যা পরিস্থিতির পরের বছর মিত্রি বাড়ি থেকে শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা হস্তান্তর করে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চানন তলায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়।
     
     সেই মুহূর্তে পূজাকে কেন্দ্র করে বর্তমান পশ্চিম পাড়ার ও বাবু পাড়ার জনগণের মধ্যে ভীষণভাবে রক্তক্ষয়ী লড়াই শুরু হয় কিন্তু এই লড়াইয়ে তিনজন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। বাবুদের ধন-সম্পদের অহংকার ও সমাজের আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে জাত পাতের লড়াই গড়ে ওঠে।
     
    গন্ডগোলের কারণ, বর্তমান পশ্চিম পাড়ার জনগণের বলেন :- বাবু পাড়ার বাবুদের পূজা অন্যপাড়া ছেলে মেয়ে দেখতে গেলে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি সহ অপমান করা হতো। অকারনে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মারধর করা হতো। দুর্গা ঠাকুর দেখতে গিয়ে পশ্চিম পাড়ার মহিলাদের কোন নিরাপত্তা নেই। জোর জুলুম করে চাঁদা আদায় করা হতো ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে আসে। হিন্দু সমাজের ছোট জাত বলে গালিগালাজ শুনতে হয়। তৎকালীন সময়ে বাবু পাড়ায় সমাজের কথিত হিন্দু সম্প্রদায়ের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের বাস বেশি ছিল।
     
      ◆ বর্তমান পশ্চিম পাড়ার বয়স্ক গুণীজন ব্যক্তি গণ মিলিত হয়ে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ১৯৬২ সালে দত্তপুলিয়া পুরনো পোস্ট অফিস মাঠে শ্রী শ্রী দুর্গা পুজো আলাদাভাবে শুরু করেন। 
     
    এই পুজো শুরু হওয়ার আগে ব্যক্তিগতভাবে হাসপাতাল মোড় পাড়ায় কমল কৃষ্ণ কুন্ডু মহাশয় এর বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিন বছর পূজা হয়। বন্যার সময় পুজো বন্ধ থাকে তারপর এলাকায় পুজো হওয়ার কারণে কুন্ডু পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় পারিবারিক পুজো বন্ধ করার। 
     
    ◆ পরবর্তী সময়ে পাড়ার বিশিষ্ট গুণীজন ব্যক্তিগণ একত্রিত হয়ে ১৯৭৫ সালে “দত্তপুলিয়া যুব গোষ্ঠী ক্লাব” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করেন। আর ক্লাবের সদস্যরা মিলিত হয়ে “দত্তপুলিয়া পশ্চিমপাড়া পূজা কমিটি” নামে একটি পূজা পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি প্রতি বছর শ্রীশ্রী দুর্গাপূজা উপলক্ষে নতুন কমিটি গঠন করে পূজার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 
     
    ◆ দত্তপুলিয়া যুব গোষ্ঠী ক্লাবের পরিচালনায় দত্তপুলিয়া পশ্চিমপাড়া পূজা কমিটি নামে দীর্ঘ ৬১ বছর (১৯৬২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ) ধরে তাদের ঐতিহ্যকে বজায় রেখে চলেছে অর্থাৎ দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে প্যান্ডেল মানেই, দত্তপুলিয়া পশ্চিমপাড়া পূজা কমিটি পূজা । এছাড়াও ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি বছর প্রায় ১ মাস ১৫ দিন ব্যাপী রথের মেলা ও আনন্দ মেলার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
     
    ◆ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে দত্তপুলিয়া যুব গোষ্ঠী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আনন্দ সাহা মহাশয় এলাকা বাসীকে আনন্দ দিয়ে চলেছেন। কয়েক দশকের ক্লাবের ক্যাশিয়ার বাবলু সাধুখাঁ ও পূজা কমিটির ক্যাশিয়ার জনি পাল আর পূজার পাঁচ দিন মায়ের পূজা সংক্রান্ত পরিচালনার দায়িত্ব শঙ্কর হালদার (গোঁসাই) দায়িত্বের সাথে পালন করে চলেছে।
     
    ।। পঞ্চানন তলা ইতিহাস ।।
     
    ◆ ২০২৩ সাল অনুসারে মিত্তির বাড়ির শ্রী দুর্গা পূজার সময়কাল ধরে ৭৩ বছর ধরে পূজা চলে আসছে। পূজা কমিটির সদস্যবৃন্দ ১০০ বছরের পূজা বলে দাবি করেন কিন্তু কোন প্রমাণ নেই। ১০০ বছর অর্থাৎ ১৯২৩ সাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়।
     
    ◆ এই পঞ্চানন তলা শিবের পূজা নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলে, সম্ভবত ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ দেড়শ বছর আগে শুরু হয়েছে। 
     
    ◆ জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, দত্তপুলিয়া পাল চ্যাটার্জী বংশধররা নীল চাষে দেওয়ান ছিলেন। পাল চ্যাটার্জির বংশধর এর কোন ব্যক্তি নরেশ চন্দ্র বোস মহাশয়কে ১৪ শতক জমি দান করেন। সেই জমির উপর শিব মন্দির গঠিত হয়েছে।
     
    ◆ জনশ্রুতি অনুসারে পঞ্চানন তলা শিব মন্দির কমিটির কেউ কেউ দাবি করেন, বাংলার জনগণের উপর মারাঠা আক্রমণ চলাকালীন সময়ে (অর্থাৎ বর্গির হাঙ্গামা) পঞ্চানন তলায় শিব পূজার প্রচলন ছিল। ১২৭ বছর পর দেখা যায়, নরেশ চন্দ্র বোস মহাশয়ের জমিতে এই পঞ্চানন শিব মন্দির অবস্থিত। সম্ভবত ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে নরেশ চন্দ্র বোস মহাশয় উক্ত জমি মন্দিরের নামে দান করেন।
     
     ◆ ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চানন শিব প্রতিষ্ঠিত হলেও কিন্তু কাল ক্রমে দুষ্কৃতীদের আক্রমণের শিকার হয়ে হারিয়ে যায় আর বহু বছর পুজো পাঠ বন্ধ থাকার পর সম্ভবত ১৮৭২ সালে পাশের পুকুর খনন কাজ করতে গিয়ে পঞ্চানন শিব প্রাপ্ত হয়ে নতুন করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পূজা পার্বণ শুরু হয়।
     
    ◆ বাংলায় মারাঠা আক্রমণ বলতে মারাঠা সাম্রাজ্য কর্তৃক ১৭৪২ সাল থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ নয় বছরব্যাপী বারবার বাংলা আক্রমণ। তাহলে সম্ভবত ধরে নিতে পারি বর্গীয় হামলার মাঝামাঝি সময় ধরে অর্থাৎ ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চানন তলা শিব পূজা শুরু হয়েছে। এই সূত্র অনুসারে ২০২৩ সাল অনুসারে ২৭৭ বছরের প্রাচীন পঞ্চানন তলা বলা যেতে পারে।
     
    ◆ পঞ্চানন তলার দুর্গা মন্দির একজন ব্যানার্জি মহাশয় তৈরি করেন। পরবর্তী সময়ে শিব মন্দির সংস্কারক নারায়ণ চন্দ্র বোস মহাশয়। 
     
    ◆ দত্তপুলিয়া শ্মশান প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ চন্দ্র বোস মহাশয় জমি কিনে শ্মশানের জন্য দান করেন। 
     
     
    ।। দত্তপুলিয়ার সাহিত্যচর্চা ।।
     
    ◆ সুস্থ সংস্কৃতি কে ধরে রাখার ইচ্ছায় অমর প্রদীপ সংস্থা প্রতিবছর দত্তপুলিয়া উৎসব ও বইমেলার আয়োজন করে থাকে। প্রতিবছর বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে থাকে।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কবি ও সাহিত্যিকদের নাম।
     
    ◆ (০১) স্বর্গীয় অপূর্ব মণি দত্ত (বাবুপাড়া)। 
    ◆ (০২) বলরাম বক্সী। জন্ম তারিখ :- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে। ( হরিচাঁদ পাড়া) 
    ◆ (০৩) স্বর্গীয় প্রহ্লাদ চন্দ্র গণ। (বাবুপাড়া)।
    ◆ (০৪) স্বর্গীয় সুশীল সমাদ্দার। (ধানকল, বড়বড়িয়া)। 
    ◆ (০৫) স্বর্গীয় সোমেন বিশ্বাস। (ইন্দিরাপল্লী)।
    ◆ (০৬) বিজন বক্সী ( হরিচাঁদ পাড়া)।
    ◆ (০৭) কার্তিক হালদার মাস্টার (বাবুপাড়া)।
    ◆ (০৮) নবকুমার কর্মকার। (বাইশমাইল)।
    ◆ (০৯) কিশোর চক্রবর্তী। (ইন্দিরাপল্লী)।
    ◆ (১০) দিলীপ ঘোষ । (বাবুপাড়া)।
    ◆ (১১) রাজেন্দ্র সাঁতরা (ক্ষ্যাপা) (কানিবামনী-সাঁতরা পাড়া)।
    ◆ (১২) শংকর হালদার শৈলবালা ( রামকৃষ্ণ পল্লী পাড়া)। 
    ◆ (১৩) সমাধান দেবনাথ। (বাইস মাইল)।
    ◆ (১৪) বিধান দেবনাথ । (বাইশ মাইল)।
    ◆ (১৫) কৃশানু রায়চৌধুরী।
    ◆ (১৬) মেহেদী হাসান ( স্কুল পাড়া)।
    ◆ (১৭) সনজিৎ দত্ত । (বাজার পাড়া )।
    ◆ (১৮) বিষ্ণু বিশ্বাস (বরবরিয়া)।
      ◆ (১৯) বাপ্পা সাহা। (স্কুল পাড়া।)
    ◆ (২০) প্রদীপ হালদার (চন্ডিপুর)
    ◆ (২১) আয়ুষ শর্মা। (দত্তপুলিয়া গোহাটপাড়া)
     
    ।। দত্তপুলিয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা ।।
    ◆ ২০২৩ সালের কোন এক মাসে দত্তপুলিয়া এলাকার নিরাপত্তার জন্য ধানতলা থানার অধীনে দত্তপুলিয়া উপ থানা হিসেবে ফাড়ি স্থাপন হয়েছে।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত স্থাপিত ১৯৬০ সালে।
    দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এটি গ্রাম পঞ্চায়েত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আবার যদিও গ্রামীণ গ্রাম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দত্তপুলিয়ার লোকেরা একটি আধুনিক শহরের মতো অনেক সুবিধা ভোগ করে চলেছে। দত্তপুলিয়া জিপিতে ১৪ টি এলাকা রয়েছে, পুরো এলাকাটি ধনতলা থানা দ্বারা শাসিত এবং 
    দত্তপুলিয়া সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটি নদীয়া জেলার এক প্রান্তে পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। ইছামতি নদী উত্তর ২৪ পরগণা কে নদীয়া থেকে আলাদা করেছে এবং জাতীয় সীমান্তে বাংলাদেশ কে ভারত থেকে আলাদা করেছে। এটি পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।
     
    দত্তপুলিয়া অধীনে মোট ১১ টি গ্রাম রয়েছে। হুদা, কুশা বাড়িয়া, কালিনগর ,বরণ বাড়িয়া, শ্রীরামপুর, কালুপুর, দত্তপুলিয়া, কানিবামনী, বাগদিয়া, বড়বাড়িয়া ও নাথ কুড়া ।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গণ হলেন।
    অপূর্ব মণি দত্ত ও প্রহ্লাদ চন্দ্র গণ।
     
    ।। দত্তপুলিয়া বসতি স্থাপন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ ।।
     
    ৯ ফাল্গুন ১২৮৮ বঙ্গাব্দ (২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে) অর্থাৎ ২০২৪ সাল অনুসারে ১৪২ বছর আগে প্রকাশিত 'সোম প্রকাশ' পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়। দত্তপুলিয়া গ্রামের জনসংখ্যা ১২০০ জন ছিল। এক ভাদ্র মাসে জ্বর রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০০ মানুষ মারা যায়। রক্ত আমাশয় ১৫ থেকে ২০ জন মারা যায়। এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় খাল বিল জলাশয় থাকার কারণে রোগের আবির্ভাব ঘটে। পানীয় জলের অভাব ইত্যাদি বিষয়ে তৎকালীন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ডেপুটী শ্রীযুক্ত বাবু রামচরণ বসু মহোদয়ের কাছে এলাকার সংস্কার করার জন্য আবেদন জানায়। 
     
    ◆ অখন্ড ভারত স্বাধীনতার কয়েক বছর আগের এক সময়ে এক সমীক্ষায় জানা যায়। দত্তপুলিয়া গ্রাম এলাকায় সেই মুহূর্তে ৭৫০ পরিবার বাস করতেন অর্থাৎ (৭৫০ পরিবার × ৬ জন) আনুমানিক গড় হিসাবে ৪৫০০ জন জনসংখ্যা ছিল।
     
    ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে , দত্তপুলিয়ার মোট জনসংখ্যা - ১৩,৫৬২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৭,০১০ জন (৫২%) এবং মহিলা ৬,৫৫২ (৪৮%)। ৬ বছর বয়সের মধ্যে জনসংখ্যা- ১,২১২ জন। দত্তপুলিয়া মোট শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা- ৯৯৮৫ জন (৬ বছরের বেশি জনসংখ্যার ৮০.৮৫%)।
     
    ◆ ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে হিন্দুরা চলে আসার কারণে দত্তপুলিয়া এলাকার জঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন শুরু হয়। এই সময়ে দত্তপুলিয়া সহ অন্যান্য জায়গায় বিভিন্ন পাড়া ও গ্রাম গড়ে ওঠে। 
     
    ◆ তারপর আবার ৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সময় আবার হিন্দুরা দলে দলে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। ৫০ টাকায় এক বিঘা জমি পাওয়া যেত। সেই সময়ে দত্তপুলিয়া সহ বিভিন্ন গ্রামে বসতি স্থাপন শুরু হয় আর জমির দাম বৃদ্ধি হতে থাকে। ১৯৭৬ সালে এই এলাকায় এক বিঘা জমির দাম ১০০ থেকে ১৬০ টাকা ছিল। ১৯৯৪ সালে প্রতি কাটা চার হাজার টাকা হিসাবে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ২০২৩ সালে বসত বাড়ি জায়গা এক শতক জমির দাম ৩ লাখ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া এলাকার মধ্যে স্থায়ী বাসিন্দাদের থেকে বহিরাগত বাংলাদেশসহ বিভিন্ন জায়গার লোক বেশি। দত্তপুলিয়া ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র বংশ জাত পাতের মানুষের মিশ্রণ ঘটেছে। এই এলাকায় মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মীয় মানুষ বসবাস করেন। এছাড়াও এখানে বহু বছর ধরে বিহারী মুসলমানদের বসবাস দেখা যায়। 
     
    ◆ জেলে সম্প্রদায় মানুষেরা দত্তপুলিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাশে থাকা চন্ডিপুর নামে গ্রামে বসতি স্থাপন করে। বাংলাদেশ থেকে আসা নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষেরা হরি চাঁদ পাড়া বসতি স্থাপন করে। এভাবে কানিবাহনী ঘোষপাড়া ও সাঁতরা পাড়া বসতি স্থাপন হয়। বাবু পাড়ার পাশেই নতুন পাড়া ও বাজারের পাশে রামকৃষ্ণ পল্লী পাড়া ইত্যাদি পাড়া ও গ্রাম বসতি স্থাপন হয়। এই ভাবে পুরনো বাসিন্দাদের সাথে নতুন বাসিন্দাদের মিশ্রণ ঘটে যায়। এছাড়াও দত্তপুলিয়ার মধ্যে বহু পাড়ার সৃষ্টি হয়েছে।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া কে নিয়ে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে, "দত্তপুলিয়া বসবাসের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে শান্তি জায়গা" এই প্রবাদ বাক্যের কারণেই দত্তপুলিয়া বহিরাগতদের আগমন প্রতিবছরই বৃদ্ধি ঘটে চলেছে। এই প্রবাদ বাক্যটি মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য শাসক দল ও বিরোধী দলের মধ্যে ঝগড়া অশান্তি মারামারি রক্ত ঝরানো হয়নি, তা কিন্তু বলা যাবে না। মাঝে মাঝে উত্তপ্ত হলেও কিন্তু শান্তিতে বসবাস এখনও চলছে। 
     
    ◆ দত্তপুলিয়া বাজার সৃষ্টি। দত্তপুলিয়া পুরাতন বাজার (চন্ডিপুর গ্রামের দিকে যেতে) ১৯৫৫ সালে চালু হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে পরিবর্তন করে ১৯৬৬ সালে বর্তমান দত্তপুলিয়া বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া ক্লাব গুলো। ◆ ডায়মা ক্লাব । ◆ দত্তপুলিয়া যুব গোষ্ঠী ক্লাব। ◆ দত্তপুলিয়া নাট্য সমাজ ও ◆ উজ্জ্বল সংঘ ।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
     ◆ শ্রীমা মহিলা সমিতি। স্থাপিত :- 1972 সালে স্থাপিত হয় আর প্রতিষ্ঠাতা :- বাণী সরস্বতী ও জ্যোতির্ময় সরস্বতী। 
     
    ◆ দত্তপুলিয়া স্বাস্থ্যসেবা পরিসেবা।
    দত্তপুলিয়া 10 শয্যা বিশিষ্ট একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। স্থাপিত :- আনুঃ ১৯৪০ সালে।
    ইতিহাস :- দত্তপুলিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র তারক চন্দ্র গণ মহাশয়ের উদ্যোগে দত্তপুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি হয় সম্ভবত ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ। অমূল্য পাল স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি দান করেন কিন্তু তিনি হাসপাতাল উদ্বোধনের দিন প্রথম সাপে কাটা রোগী হয়ে আসেন।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া এলাকায় বহু ওষুধের দোকান হয়েছে। দত্তপুলিয়া হাসপাতাল থেকে শুরু করে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত ডাক্তারের গলি বলে পরিচিত লাভ করেছে।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া গ্রামের আশেপাশের গ্রাম গুলো। ◆  
    দত্তপুলিয়া, কানিবামনী, বরবরিয়া, কুশবেড়িয়া, পানিখালী, মনোসা হাটি, শ্রীরামপুর, বরণ বাড়িয়া, চন্ডিপুর, হাবাসপুর, কালিনগর, কালুপুর, বেড়ে খালি পাড়া, নারায়ণপুর, নাথ খুড়া, বাগদিয়া, হুদা ও সাড়া হাটি (উত্তর চব্বিশ পরগনা)। 
     
    ◆ দত্তপুলিয়া গ্রামের পাড়া গুলো। বাবুপাড়া, নতুন পাড়া-হঠাৎ পাড়া, রামকৃষ্ণ পল্লী, কালিতলা, হাসপাতাল পাড়া, হাসপাতাল মোড়, ইন্দিরাপল্লী ,পাল পাড়া হাসপাতাল রোড, মুসলিম পাড়া, বাজার পাড়া, পাল পাড়া (বাজার), পুরাতন বাজার, দাসপাড়া, শ্মশান পাড়া, পঞ্চানন তলা, দত্তপুলিয়া মোড়, হরিচাঁদ পাড়া, গোহাটপাড়া, বিএসএফ ক্যাম্প পাড়া, স্কুল পড়া, ইত্যাদি ইত্যাদি।
     
    ◆ দত্তপুলিয়া থেকে তিনটি নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন। 
    ◆ আড়ংঘাটা (দত্তপুলিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার)।
    ◆ বগুলা (দত্তপুলিয়া থেকে ১৫ কিলোমিটার)  
    ◆ রানাঘাট ( দত্তপুলিয়া থেকে ১৯ কিলোমিটার)।
    ◆ কৃষ্ণনগর (দত্তপুলিয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার)
    ◆ বনগাঁ (দত্তপুলিয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার)
     
    ◆ দত্তপুলিয়া থেকে বিভিন্ন দিকে যাতায়াত ব্যবস্থা।
    ◆ দত্তপুলিয়া থেকে ধানতলা হয়ে রানাঘাট (রথ তলা)
    ◆ দত্তপুলিয়া থেকে বগুলা, হাঁসখালি, কৃষ্ণনগর, করিমগঞ্জ, বর্ধমান, দুর্গাপুর।
    ◆ পানি খালি হয়ে রানাঘাট।
    ◆ আড়ংঘাটা, বীরনগর, তাহেরপুর, শান্তিপুর ও নৃসিংহপুর কালনা ঘাট। 
    ◆ দত্তপুলিয়া সাড়া হাটি থেকে সিন্দ্রানি হেলেঞ্চা ও বনগাঁ । আবার বাজিতপুর হয়ে বনগাঁ।
    ◆ দত্তপুলিয়া থেকে আঁইশমালী হয়ে বিভিন্ন দিকে। 
     
    ◆ দত্তপুলিয়া ব্যাংকগুলো হলো, ◆ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, এলাহাবাদ ব্যাংক পরিবর্তিত নাম এলিয়েন ব্যাংক ও বন্ধন ব্যাংক সহ দত্তপুলিয়া পোস্ট অফিস।
     
     
    ◆ দত্তপুলিয়া ইছামতি নদীর গতিপথ ও ইতিহাস।
    নদিয়া জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী ইছামতি ও তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জন-আন্দোলন নিয়ে আলোচনা। উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত ইছামতির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৪ কিমি। এই নদীটি নিয়ে বহু কবিতা-গান-কথাসাহিত্য রচিত হয়েছে। 
     
    ◆ পদ্মা নদী থেকে বেরিয়ে মাথাভাঙা বা কুমার নদী মাজদিয়ার রেলব্রিজের কাছে এসে ভেঙে দুটি গতিপথ তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে একটি শাখা ইছামতি ও অন্যটি চূর্ণি। ইছামতি শুধু ভারতেই প্রবাহিত নয়, মাজদিয়া থেকে বেরিয়ে ২০ কিমি অতিক্রম করে মোবারকপুরের কাছে বাঁক নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর বাংলাদেশে ৩৫ কিমি পথ প্রবাহিত হয়ে আবার দত্তপুলিয়াতে ভারতের ভূখণ্ডে ফিরে এসেছে। তারপর নদিয়া ছেড়ে উত্তর চব্বিশ পরগণায় ৪৩ কিমি পেরিয়ে বনগাঁয় ঢুকেছে আর সেখান থেকে দক্ষিণদিকে আঙরাইল থেকে বেড়িগোপালপুর পর্যন্ত ২১ কিমি পথ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ধরে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর আরও ১০ কিমি প্রবাহের পর টিপি-তে যমুনা নদী এসে ইছামতিতে মিশেছে। এরপর টিপি থেকে তেঁতুলিয়া-বসিরহাট-গোয়ালপাড়া-টাকি হয়ে হাসনাবাদে এসে ইছামতি দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। পশ্চিম শাখাটি হাসনাবাদ খাল নামে দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয়ে বিদ্যাধরীর সঙ্গে মিশে মালঞ্চ ও রায়মঙ্গল হয়ে সাগরে মিশেছে। আর প্রধান ধারাটি হিঙ্গলগঞ্জ হয়ে সুন্দরবনের কালিন্দী নদীর মোহনার কাছে সাগরে এসে মিশেছে। 
     
    ◆ এত দীর্ঘ পথ চলার সময় বহু নদী ইছামতির সঙ্গে এসে মিলেছে, যেমন নাওভাঙ্গা, হাকার, সোনাই, শরৎখাল, দাতভাঙা ইত্যাদি। 
     
    ◆ মাজদিয়া থেকে বেড়িগোপালপুর ১৩৩ কিমি গতিপথে ইছামতী এখন স্রোতহীন, কচুরিপানায় ভরা। তবু শুধু নদীয়াতেই ইছামতির পাড়ে প্রায় ৫০০০ মৎস্যজীবীর বাস। তাঁরা পাটা, ঘুনিজাল, ভেচাল, বাধাল ইত্যাদি দিয়ে মাছ ধরেন। 
     
    ◆ ১৯৯৩-৯৪ সালে সুন্দরলাল বহুগুণা ও পান্নালাল দাশগুপ্ত যৌথভাবে নদী বাঁচানোর জন্য গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত একটি পদযাত্রা করেন।
     
    ◆ সেই সময় নদিয়ার নদী-আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন শ্রীমা মহিলা সমিতির বাণী সরস্বতী (দত্তপুলিয়া)। তাঁরা ঠিক করেন, দত্তপুলিয়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা মৃতপ্রায় ইছামতী নদীকে নিয়ে তাঁরা আন্দোলন গড়ে তুলবেন। 
     
    ◆ মাজদিয়া রেলব্রিজ ১৯৪২ সালে তৈরী হওয়ার পর থেকেই মাথাভাঙ্গার জল ইছামতিতে ঢোকা বন্ধ হতে থাকে তাই উৎসমুখ সংস্কারের আন্দোলন শুরু হয়। প্রায় ১০০০ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে ‘ইছামতি বাঁচাও কমিটি’ নদীমুখ খানিকটা ছাড়িয়ে দিলেও রেলওয়ের পিলার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষার সময় ইছামতিতে জল কিছুটা আসলেও সারা বছর শুকনো থাকে ইছামতির উৎসমুখ। 
     
    ◆ তবে উল্লেখযোগ্য ঘটনা, এই নদীতে কোনও এক সময় ইলিশ মাছও পাওয়া যেত। এছাড়া চিতল, শোল, পুঁটি, চিংড়ি, রুই প্রভৃতি পাওয়া যায়। 
     
    ◆ তাই পান্নালাল দাশগুপ্ত ও বাণী সরস্বতী সহ প্রমুখ ব্যক্তি গণ ভাবলেন, একটা মাছ ছাড়ার অনুষ্ঠান করবেন। পান্না বাবু এই উদ্যোগের নাম দিলেন ‘মীন মঙ্গল’। 
     
    ◆ ১৯৯৪ সালে ২৩ নভেম্বর দত্তপুলিয়ায় ইছামতি ব্রিজের কাছে প্রথমবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্ষায় প্রতি বছর ‘মীনমঙ্গল’ নামে এই মাছ ছাড়ার অনুষ্ঠান করেন।
     
    ◆ এই নদীকে কচুরিপানা-মুক্ত করা এবং এর উৎসমুখ নিয়মিত সংস্কারের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই নদী বাঁচলে বাঁচবে মৎস্যজীবী, কৃষিজীবী ও এলাকার মানুষ। বাঁচবে নদীর ওপর নির্ভরশীল অজস্র জীব। এলাকার জলস্তর ঠিক থাকবে। বর্তমান ২০২৩ সালে নদীর অবস্থা খুবই খারাপ।
     
                     ◆ তথ্যসূত্র ◆ 
     
    ◆ গঙ্গোপাধ্যায়, বাসুদেব, পশ্চিমবঙ্গ পরিচয়, 2001, (বাংলায়), পৃ. 70, শিশু সাহিত্য সংসদ
    ◆ "ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, নাদিয়া, 2011, সিরিজ 20, পার্ট XII A" (PDF)। পৃষ্ঠা 13,14। সেন্সাস অপারেশন ডিরেক্টরেট, পশ্চিমবঙ্গ। 16 অক্টোবর 2020 সংগৃহীত।
    ◆ "ডিস্ট্রিক্ট স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক 2014 নদীয়া"। সারণি 2.2, 2.4(a)। পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। 16 অক্টোবর 2020 সংগৃহীত।
    ◆ "2011 আদমশুমারি - প্রাথমিক আদমশুমারি বিমূর্ত ডেটা টেবিল"। পশ্চিমবঙ্গ - জেলাভিত্তিক। রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং সেন্সাস কমিশনার, ভারত। সংগৃহীত 18 মে 2017.
    ◆ "দত্তপুলিয়া ইউনিয়ন একাডেমী"। Schools.org.in. সংগৃহীত 11 অক্টোবর 2020.
    ◆ মেয়েদের জন্য দত্তপুলিয়া একাডেমী। Schools.org.in. সংগৃহীত 11 অক্টোবর 2020.
    ◆ "প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার মহাবিদ্যালয়"। পিডব্লিউএম, পানিখালী। সংগৃহীত 26 মে 2017.
    ◆ "স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ" (পিডিএফ)। স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান - প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সংগৃহীত 11 অক্টোবর 2020.
    ◆ নদিয়া জেলা উইকিপিডিয়া।
    ◆ Krishnanagar: ছোলা বিক্রির লাভেই মুঠোয় এল জমিদারি- দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রবন্ধ।
    ◆ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের রাজস্ব ব্যবস্থার পরিচয় দাও। প্রবন্ধ।
    ◆ নদিয়ার নদী-আন্দোলন: ইছামতি বিবর্তন। ভট্টাচার্য।   
    ◆ পরিবেশ ও প্রাণচক্র।
    ◆ বর্গির হাঙ্গামা উইকিপিডিয়া।
    ◆ নীল বিদ্রোহ উইকিপিডিয়া।
    ◆ বাংলায় নীল চাষ ও নীল বাণিজ্যের ইতিহাস।
    ◆ দত্তপুলিয়া এলাকার বয়স্ক ১২০ জন মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা।
    ◆ ভূমি রাজস্ব দপ্তর রানাঘাট।
    ◆ রচনাকাল :- ১২ জুলাই ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে। দত্তপুলিয়া থাকাকালীন সময়ে।
     
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
                 ।। সমাপ্ত ।।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
     
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ভারতচন্দ্র | 14.139.***.*** | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:১৩523243
  • "যার পিঠে বড় ধরনের কুচ ছিল"
     
    সম্ভবত এই দেখেই ভারতচন্দ্র  লিখেছিলেন "কুচ হইতে কত উচ গিরি চূড়া ধরে ? " ইত্যাদি /
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন