ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে বউ বা মায়ের কাছে 'বেড টি’ চাওয়া কিংবা নিজের পরা জামা-কাপড় কাচবার জন্যে মায়ের অপেক্ষায় বাথরুমের এক কোণে ডাঁই করে রেখে দেওয়া- শিশুর দল এখন মোল্লা দেশের নারী মুক্তি নিয়ে মত্ত। এমনকি আমাদের ঘরের বাপ-কাকা'রা যারা নিজেদের মেয়েদের রুটিন মাফিক জীবন ও শরীর ঢাকা পোশাক পরার বিধান দেন, তা না হলেই নিজের “স্ত্রী” মানে মেয়ের মায়ের গায়ে হাত তুলতেও পিছু হটেন না, তারাও আজ ইরানের মোল্লা সরকার কে- নারী স্বাধীনতা হরণকারী বলে সেলফোনের ভেতরে কেটে কুচিয়ে দিতে ব্যস্ত। বেশ মজার বিষয় না! এতটা দ্বিচারী চেতনা সম্পন্ন কেন এরা? এতেও কি কেবল তাদের দোষ? না! একদমই না। আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ইঙ্গো-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শাসন-শোষণই এসবের উৎস এবং বিকাশের মূল কারণ।
বাইডেন-জিংপিং-পুতিন-জেলেনস্কি, এদের- পড়শী বস্তিতে আগুন লাগিয়ে নিজেদের মস্তিতে রাখবার কূটনৈতিক খেলার মাঝেই হাজির ফুটবল বিশ্বকাপ। চার বছর পর, এবার কাতারে। কাতার নিয়ে সবারই প্রচুর বিরোধীতা- বহুমত, তা থাকাটাই কাম্য। কিন্তু অতি ধনিক 'হলিউড স্টার’দের ইউরোপ এবং আমেরিকায় বসে কাতার ওয়ার্ল্ডকাপ মানবাধিকারের কারণ দেখিয়ে বয়কট নেহাত ই মীরাক্কেলের অপূর্ব রায়ের ফিলোসফিকাল জোকসের সমতুল্য।
এবছর প্রচুর কষ্টেসৃষ্টে ইউরোপ-আমেরিকার বহু নিষেধাজ্ঞা পেরিয়ে ও ফিফার সম্পূর্ন আর্জি মিটিয়ে সর্বপ্রথম এশিয়ার দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে পৌঁছেছিল ইরান। কিন্তু তাতেও স্বস্তি কোথায় দেশটির মানুষের? প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে খোদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে শহীদ মাশা আমিনী কে নিয়ে বিক্ষোভে উত্তাল ইরানের ছোট-বড় বহু শহর। কিন্তু তার বহু আগে থেকেই চলছিল ইরানের শ্রমিক-কৃষক ও নিম্নমধ্যবিত্ত এর রুজিরুটির আন্দোলন। এ বছরের প্রথমেই দেশটির দরিদ্রতা সীমার নীচের হার পৌঁছেছিল প্রায় ৩০% এ। এর প্রধান কারণ যে গত চল্লিশ বছর ধরে চলতে থাকা ইঙ্গো-মার্কিন নিষেধাজ্ঞাই তা বলাই বাহুল্য। বর্তমানে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের “নারী-জীবন-স্বাধীনতা” এই আন্দোলন, আন্তর্জাতিক মহল- বিশেষ করে মার্কিন ও পশ্চিমী বিশ্বের মিডিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রোপাগান্ডার অন্যতম সেরা খোরাকের কারণে, সরকার বিরোধী আন্দোলন সর্বশীর্ষ। প্রথমে এই আন্দোলন টেকার কথা ছিল, হত্যাকারীদের শাস্তি। তারপর হলো, পাভলবি সরকারের পুনরায় ক্ষমতা দখল। শেষে এখন, খোমেনী'র মৃত্যু পর্যন্ত; এই আন্দোলনের কাছে ইরানের খেটেখাওয়া মানুষের রুজিরুটির আন্দোলন চুপসানো বেলুনের মত। যদিও খেটেখাওয়া মানুষের আন্দোলন গুলি মিডিয়ার প্রোপাগান্ডায় খুব একটা না এলেও, তারাও আলাদা ভাবে শহীদ মাশা আমিনীর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি ও ইঙ্গো-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে ইরানের রাস্তায় রয়েছে বর্তমানেও। কিন্তু তাদের দাবি আলাদা, ইরানের সমগ্র জনগণের অর্থনৈতিক সাম্য, রাজনৈতিক স্বাধীনতা।
এশিয়া কে প্রথম শিল্প বিপ্লবের সময়কালের গোড়া থেকে প্রথমে পর্তুগিজ পরে শেষ করা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ অর্থাৎ ইংল্যান্ড এর সাথে ইরানের খেলা ছিল গতকাল। সেই খেলায় ইরানের খেলোয়াড়দের জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার সিদ্ধান্ত এবং পূর্বের প্রাকটিস ম্যাচে চুল কাটার ভঙ্গি দেখিয়ে সেলিব্রেশন, যথাযথ; ন্যায়সঙ্গত। এই সময় ইরানের বহু খেলোয়াড় মাশা আমিনীর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে জাগ্রত। তাদের এই বিদ্রোহী মনোভাব ফের প্রমাণ করলো ফুটবল আসলে ন্যায়ের খেলা। এবং ইরানের খোমেনী সরকার পয়গম্বর নন, চিরকাল থাকবেন না ইরানে উনি এবং উনার সরকারও। কিন্তু তা বলে কী “নারী-জীবন-স্বাধীনতা” স্লোগানধারী ইঙ্গও -মার্কিন দালাল পাভলবি সরকার ফিরবে ক্ষমতায়? নেই মামার চেয়ে কানা মামা ঢের ভালো।
বর্তমানে আন্দোলন দমন করছে ইরান সরকার কারণ তাদের কাছে আর কোন প্র-পিপেল পলিসি নেই; উৎপাদন ব্যবস্থা গত কারণে, ভর করে চলা- ক্ষয়িষ্ণু সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থনীতিক বিশ্বে। প্রায় নব্বই দিনের চলতে থাকা বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৩০০র বেশি মানুষ মারা গেছেন, শিশু-নারী সহ। তবুও পাভলবি গোষ্ঠী কী ভালো? ইতিহাসের পাতায় পাভলবি গোষ্ঠীর হাতে ইরানের হাজারে হাজারে খেটেখাওয়া মানুষ মারা গেছিল, বন্দী হয়েছিল। যেকারনে সমগ্র জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসে এতবছর ধরে ভারী টিকে আছে ইরানের ইসলামিক সরকার, অ্যান্টিপিপল বহু পলিসি চালানোর পরেও। কারণ, খেটেখাওয়া মানুষ বোঝে সাম্রাজ্যবাদ ই তাদের প্রধান দ্বন্দ্ব সূত্র। উচ্চবিত্তের পয়সার অভাব না থাকার ফলে তাদের কাছে মূল সমস্যা সবসময়ই সাংস্কৃতিক শোষণ। খেটেখাওয়া মানুষের কাছে যেখানে পুরো সংগ্রামটা প্রাথমিক ভাবে পেটের জ্বালা মেটানোর, বেঁচে থাকার লড়াই। আর সাম্রাজ্যবাদীরাও তাদের অর্থনৈতিক শোষণ চালায় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মধ্যে দিয়েই, একথা জানে প্রতিটি ইসলামিক রাষ্ট্রের সরকার- তাই তাদেরও বাড়তি নজরদারি চাপাতে হয় জনগণের উপর। কারণ তাদের কাছে মূল সমস্যাই আজকের বিশ্বে দাঁড়িয়ে পিছিয়ে থাকা সামন্তবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা। ইসলামিক তত্ত্ব অনুযায়ী শিল্প বিপ্লবের বিরোধিতা। ফলত, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় যখনই দুইদিকে ভাগ হয় দুটি শক্তি তখন কোন বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরই একাধিপত্য শাসন-শোষণ মানতে নারাজ থাকে পিছিয়ে পড়া দেশগুলি, এই বিষয় বহু পুরোনো। এশিয়া থেকে আফ্রিকা, আফ্রিকা থেকে লাতিন আমেরিকার প্রতিটি দেশের সরকারের কাছে- আজ সবার অবস্থাই তেমন। তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশই আর ইঙ্গ-মার্কিন একাধিপত্য শাসন শোষন মানতে চায়না। বিকল্প হিসেবে রাশিয়া-চীন'ই প্রায় সবার প্রিয়, অন্তত স্বাধীন ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দিচ্ছে, যা নিজ স্বার্থে হলেও তাই সই আপাতত। কিন্তু এখানে একটা মজার বিষয় হলো, ইসলামিক রাষ্ট্র গুলির নিজস্ব সামন্তবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা থাকবার ফলে তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে পাল্টা দেয়, যা দিতে পারে না বাকি রাষ্ট্র গুলো। এখানেই তাত্ত্বিক ভাবে মূল তফাৎ ইসলামিক রাষ্ট্রের সাথে সাম্রাজ্যবাদের দালাল- বাকি রাষ্ট্র গুলোর।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে বদলিয়েছে বিশ্বরাজনীতির দ্বন্দ্ব গুলো। আজ আর সেই আগের মত একপাক্ষিক বিশ্বপলিসি নেই। একপাক্ষিক শাসন-শোষণ নেই। সাম্রাজ্যবাদীদের ভাগাভাগির মাঝে বেড়েছে পিছিয়ে পড়া দেশগুলির দর কষাকষি জোর কদমে । রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পড়ে যেমন ফ্যাসাদে রাশিয়াও পড়েছিল তেমন পড়েছিল ইউরোপও। যদিও ইউরোপের মূল দ্বন্দ্ব এখন ধীরে ধীরে গিয়ে ঠেকছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একাধিপত্য শোষণের ক্ষেত্রে এবং রাশিয়া সামগ্রিক ভাবে হচ্ছে লাভবান। তাদের অস্ত্র, তেল-গ্যাস নিজস্ব মুদ্রায় ব্যবসা করতে পারার কারণে। এবং অন্যান্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তি গুলিকে হাতের নাগালে পেয়ে যাওয়ার ফলে।
রাশিয়ার এশিয়া ও ইউরোপের বাণিজ্যে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল সুয়েজখালের উপর নির্ভরশীলতায়। তাই ২০০০ সালে রাশিয়া বাণিজ্যগত চুক্তি করেছিল “ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ করিডোর” ভারত এবং ইরানের সাথে। কিন্তু তা তখন থেমে যায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একাধিপত্য শাসনের ফলে। এই চুক্তি থেকে তৎকালীন সময়ে বেঁকে বসে ভারত। বর্তমানে এই চুক্তি পুনরায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফলত, রাশিয়ার এশিয়া ও ইউরোপে পণ্য সরবরাহ অনেক কম খরচে হবে এবং ইরান হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যনগরীর মূল কেন্দ্র। এছাড়াও বর্তমানে রাশিয়ার সাথে ইরানের হয়েছে “গ্যাজপ্রম” অর্থাৎ প্রাকৃতিক গ্যাস চুক্তি, ৪ হাজার কোটি ডলারের বিনিময়। ইরানে বর্তমানে অস্ত্রব্যবসায় রাশিয়া মুখ্য ভূমিকায়। অপর দিকে ড্রোন দিয়ে রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদকে ইউক্রেন তছনছ করতে সাহায্য করেছে ইরানও। ইরানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়াম বহুকাল ধরেই, যার কারণে রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ইরানকে পরমাণু তৈরির সহায়তা দিতেও রাজি। বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সামগ্রিক ক্ষেত্রে লাভের কথা ভেবেই। অপরদিকে ইরান চীনা সাম্রাজ্যবাদের সাথে প্রাচীন কালের সিল্করুট পুনরায় চালু করার পক্ষে। সই করেছে সেইটিকে ধরেই চীনের 'ওয়ান বেল্ট এন্ড রোড’ প্রকল্পে। ইতিমধ্যেই ইরান চীনা মুদ্রায় (পেট্রোইউয়ান) বাণিজ্য করার সায় দিয়েছে। SCO তেও সামিল হয়েছে। যারফলে চীনের অর্থনীতিক বৃদ্ধিতে বাণিজ্যক রাস্তা নিজ পায়ে খুলে যাবে বিশ্বের ১৫২ টি দেশের সঙ্গে এবং ইরানও ভালোভাবে হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যনগর। ফলত, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ধীরে আরো ক্ষয়ের দিকে এগোবে বিশ্বের বুকে অর্থনৈতিক-ভূরাজনৈতিক-কূটনৈতিক ক্ষেত্রে। তাই, ইরানের ইসলামিক সরকার ফেলা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বর্তমানের আশু কর্তব্য। যা নিয়ে গত চার মাস আগে বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে বৈঠক করেছিল ইজরায়েল এবং সৌদি সাথে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ইরান প্রসঙ্গে চাই, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; ১) ইরানের খনিজ সম্পদ, ২) রাশিয়া কে কূটনৈতিক ভাবে কূপকাত করা, ৩) তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ(বিশেষত পরমাণু তৈরীর ইউরেনিয়াম)লুন্ঠনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের ঘাঁটি শক্তি স্ট্রং করা। কারণ, সৌদিও বেঁকে বসেছে। বাইডেন সরকার তেল উৎপাদন বাড়ানোর কথা বললেও, সৌদি সরকার পরক্ষণেই তা আরো কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছে, নভেম্বর থেকে। সৌদি'র আসলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের থেকে এতদিন লাগতো প্রধানত সামরিক শক্তি, যা এখন তাদের রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদীদের তরফ থেকে দেওয়ার কথা চলছে। সৌদি চীনের SCO Sumit- এও ইতিমধ্যেই সামিল হওয়ার আর্জি জানিয়েছে। আর ইজরায়েল, তার বিশেষত নিজস্ব কিছুই নেই এবং ভূরাজনৈতিক দিক থেকে রাশিয়ার খপ্পরে আটকে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত- আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, ইরানের খেটেখাওয়া জনগণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক, মানসিক অবস্থা ভীষণই তাৎপর্যপূর্ণ, এইসময় দাড়িয়ে। বিশ্ব ভাগাভাগির সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলির কাছে কয়েকটা হাতে গোনা খুলি মাত্র। কিন্তু চল্লিশ বছর এই নিয়ে চলা ইসলামিক খোমেইনী সরকারের কাছে ভূরাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক দিক থেকে চীন,রাশিয়া ক্ষণিকের সুরাহা মাত্র। দীর্ঘদিনের একতরফা ইঙ্গ-মার্কিন কূটকাচালি,ফোকরদালালি যার অন্যতম প্রধান কারণ। শহীদ মাশা আমিনীর হত্যাকারীদের শাস্তি কিংবা প্রকৃত নারী মুক্তি কখনোই সম্ভব নয়, ক্ষয়িষ্ণু যুদ্ধবাজদের হা এর সামনে দাঁড়িয়ে। ইরানের জনগণের প্রকৃত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে বিকল্প উন্নতমানের উৎপাদন ব্যবস্থায় চালিত সমাজতান্ত্রিক কমিউনিস্ট শক্তি, কেবলমাত্র।
দীর্ঘদিন ধরে চলা দেশের ভেতরকার এমন বাজে অবস্থা এবং পূর্বের ইঙ্গো-মার্কিন মদতপুষ্ট পাভলবি'র ঘৃন্য স্মৃতি মাথায় নিয়ে ইরানের ফুটবল বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করাটাই ছিল আসল জয়। ইঙ্গ-মার্কিনদের সমস্ত গা-জোয়ারি, ভুয়ো প্রচার এবং ভন্ডামীর বিরুদ্ধে। ফিফার প্রেসিডেন্ট ইনফান্টিনো, মধ্যপ্রাচ্য তথা কাতারের বিরুদ্ধে পশ্চিমীদের অপপ্রচার নিয়ে বিবৃতিতে বলছেন- তিন ঘণ্টা মাঠে মদ না খেলে কিছু যাবে আসবে না, বেঁচে থাকবে সবাই। কাতার যে নিয়ম ঘোষণা করেছে তা স্পেন, ফ্রান্স, স্কটল্যান্ডেও চলে। তবে মধ্যপ্রাচ্য নিয়েই এত কথা ক্যান? মুসলিম রাষ্ট্র বলে! আমাদের থেকে গায়ের রং আলাদা বলে? স্রেফ ভন্ডামী হচ্ছে, আমি একজন ইউরোপিয়ান হয়ে বলছি। আর কাতারে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে ইউরোপের তো কিছুই বলা মানায় না, পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউরোপে গত আট বছরে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু ২৫ হাজার। তাই, চার বছর পর যখন একবার ফুটবল বিশ্বকাপ আসে তখন সেটা উপভোগ করুন ভুয়ো রাজনীতির ফাঁদে না পরে।
ওয়ার ইজ দ্যা সিক্রেট অফ আওয়ার এনার্জি--- এইটাই হলো সাম্রাজ্যবাদের প্রধান মন্ত্র। বর্তমানে ভাগাভাগির বিশ্বে ক্ষয়িষ্ণু সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থায় যেমন একটাই পৃথিবীর ভেতরে দুটি পৃথিবী ক্রমাগত ভাগ হয়ে চলেছে, তেমন হচ্ছে দেশের ভেতরেও বড়লোক ও গরীবলোকের দুটি দেশ। তেমনি হয়তো ফুটবল বিশ্বকাপও ভাগাভাগি হয়ে যাবে আগামী দিনে। কিন্তু এর মাঝে আরো যুদ্ধ হবে। পুঁজির পুনর্বিনিয়োগ এর মধ্যে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক সংকট মেটানো এবং বুড়ো বাঘ- মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে হটিয়ে বিকল্প সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কাগুজে বাঘেদের চীন'কে চাঙ্গা করার ভূয়সী প্রচেষ্টা চলবে। আর বাড়বে তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশগুলির উপর বাণিজ্যিক যুদ্ধে খাবলেখুবলে খাওয়ার দৌড়, জাত-ধর্মের যুদ্ধ এবং নারীদের উপর পিতৃতান্ত্রিক শোষণ।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।