ভারতবর্ষ উপমহাদেশে হিন্দি নামে কোনও ভাষাই ছিল না। শুধু ভারতবর্ষে কেন সারা পৃথিবীর কোত্থাও ছিল না। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ৭টি ভাষার মধ্যে সর্ব প্রথমেই আছে ভারতের তামিল ভাষা। আর একমাত্র বাংলা ভাষা ইউনেস্কো স্বীকৃত শ্রুতিমধুর ভাষা। তামিল, আর আমাদের মাতৃভাষা বাংলার নিজস্ব লিপি আছে। এই দুটি ভাষাই আমাদের ভারতের। এটাও ভারতের অত্যন্ত গর্বের বিষয়। গর্বের বিষয় আমার ভাষা বাংলার নিজস্ব লিপি আছে।
 
বর্তমানে ভারতে আরো অনেকগুলি ভাষার মধ্যে হিন্দি ভাষা আছে। কিন্তু হিন্দির কোনো বুনিয়াদ নেই। হিন্দির নিজস্ব লিপিও নেই। হিন্দি ভাষা আসলে উর্দু ভাষার রূপ। আর উর্দু হলো ইন্দো-আর্য শাখার একটি ভাষা। তবে উর্দুর থেকে হিন্দিতে কিছু কেমন পরিবর্তন আছে। আর দেবনাগরী অক্ষর দিয়ে এবং কয়েকটি অক্ষরকে পরিবর্তন ঘটিয়ে ভাষাটির লিপি তৈরী করা হয়েছে।
 
মুঘল সাম্রাজ্যের সময় ভারতবর্ষের বিস্তারিত সীমানা ছিল। সে সময় পারস্য ও মধ্য এশিয়ার ভাষা, শিল্প-সংস্কৃতি দ্বারাও কিছুটা প্রভাবিত ছিল। তখন ফরাসি ভাষা এবং উর্দু ভাষার প্রচলন ছিল। এছাড়া চাগাতাই নামে আরেকটি ভাষা ছিল। ভাষাটি এখন বিলুপ্ত।
 
উর্দু ভাষা লেখা হয় নাস্তালিক লিপিতে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসার পর সরকারি ভাষা ফারসিকে বদলে ইংরেজি করেন। সে সময় ফার্সি লিপিতে লিখিত উর্দু ভাষা ফারসির স্থলে অতিরিক্ত সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হত। ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পরে বৃটিশরা চেয়েছিলেন হিন্দু আর মুসলিমদের একতাকে নষ্ট করে দিতে। ঠিক তারপরেই শুরু হল মুসলিম লীগ। যার হিন্দু সংস্করণ হল — হিন্দু মহাসভা। এই সময়ে হিন্দুদের একটা ভাষার খুব প্রয়োজন পরে, কারণ উর্দু ভাষা ভীষণ রকম মুঘলদের। তখন হিন্দুরা উর্দুকে সামান্য কিছু পরিবর্তন করে হিন্দুস্তানি ভাষা বলে দাবি করেন।
 
উনিশ শতকের শেষ কয়েক দশক ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ এবং আওধে হিন্দি ও উর্দু নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। হিন্দুত্ববাদীদের পৃষ্ঠপোষকরা দেবনাগরী হরফে উর্দু ভাষা লেখার দাবি জানান। সে সময়ে উত্তর ভারতে দেবনাগরী হরফের সরকারি স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন গড়ে উঠে। এই হল হিন্দি ভাষা।
 
সুতরাং, হিন্দুস্তান নামকরণের সঙ্গে হিন্দি ভাষার কোনো সম্পর্ক নেই। সিন্ধু নদীর তীরে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে ওঠায় ফরাসিরা সিন্ধু থেকে হিন্দু নামকরন করেছিলেন। এই হিন্দুস্তান শুধু বর্তমান ভারত নয়। হিন্দুস্তান সমগ্র ভারতবর্ষ উপমহাদেশ।
 
আমি ভারতীয় সংবিধানকে সসম্মানে মান্য করে বলছি — ভারতের সংবিধানে কোনো রাষ্ট্রীয় ভাষার উল্লেখ নেই। ভারত নানা ভাষার দেশ নানা জাতির দেশ। নানা ভাষা ভারতের একটা ঐতিহ্য। এটা সারা পৃথিবীর মধ্যে একটা সৌন্দর্য। সুতরাং, এ দেশে সমস্ত ভাষার সমান মর্যাদা থাকতে হবে।
 
—সুবিমল