এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আরেক পৃথিবীর গপ্পো

    শুভঙ্কর মজুমদার লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১৩২৬ বার পঠিত
  • আজকের এই মোদি-দিদি সময়ের থেকে অনেক অনেক দিন আগেকার কথা, ক্যালেন্ডার ধরে হিসেব করে দেখলে প্রায় আড়াই হাজার কোটি বছর তখন আমাদের এই চেনা পৃথিবী একদম অন্যরকম ছিল। কোনও ভগবান ছিল না। কোনও মুসলমান ছিল না। আজকের এই সূর্য্যের চারদিকে পাক দিয়ে বেড়ানো আমাদের এই পৃথিবীতে কোন রাজ্য ছিল না, কোন দেশ ছিলো না।


    থাকবে কি করে!? তখন তো চারদিকে ঘন নীল সমুদ্রের বুকে একটাই ভূখণ্ড ভেসে বেড়াতো। সেই ভূখণ্ডের চারদিক ছিল সবুজ বন বনানীতে ভরা, আর মাঝখানটা মরুভূমি। আসলে সেই ভূখণ্ড এতটাই বিশাল ছিল, যে সমুদ্রের জলীয় বাষ্প তার কেন্দ্রতে পৌঁছতে পারত না। আর সেই ভূখণ্ডে দাপিয়ে বেড়াতো বিশালাকায়, দানবীয় সাইজের কিছু প্রাণী, যাদের আমরা আজকের দিনে ডাইনোসর বলে ডাকি। উনিশ শতকের প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া এই ডাইনোসরদের ফসিল থেকে আমাদের ধারণা হয়েছে, সেই সময় প্রায় এক হাজারের বেশি প্রজাতীর ডাইনোসর আমাদের পৃথিবীর আকাশে, ডাঙায় আর জলের তলায় রাজত্ব করত।


    এই পঞ্চাশ বছর আগেও আমাদের ধারণা ছিল ডাইনোসরেরা ওজনদার এবং শ্লথ ছিল। তাদের শরীরে এখনকার সাপেদের মত ঠান্ডা রক্ত বইত। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের দৌলতে এখন আমরা জানতে পারছি, এই ডাইনোসরেরা একে অপরের সঙ্গে কথাও বলতে পারত। তাদের মধ্যেও আমাদের মতই আমিষ আর নিরামিষভোজীর বিভাজন ছিল। তারাও আমাদের মতই একটা সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে নিয়েছিল। তাদের ভাষা বা ভাষার ব্যবহার কেমন ছিল, তা আমাদের জানা নেই, তবে তারা কিন্তু সেই সময় রাতের আকাশে দু'খানা চাঁদ দেখার সুযোগ পেত।


    হ্যাঁ, সেই সময় আমাদের পৃথিবীর কাছে দু'খানা চাঁদ ছিল। তারা একই কক্ষপথে আমাদের পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করত। তাই তখন পৃথিবীতে ছ'টা ঋতু বা বারোটা মাসও ছিল না। জলে জোয়ার ভাটাও বেশ লম্বা লম্বা হত। জোয়ার এলে, সেই সময়ের পৃথিবীর অনেকটাই জলের তলায় ডুবে যেত, আবার ভাটার সময় অনেকটা ডাঙাই বেরিয়ে পড়ত। জোয়ার ভাটার সময়টাও বেশ লম্বা হত। দুটো চাঁদের ঠেলায় এই পৃথিবীর গুরুত্বকর্ষন শক্তিও খাটো ছিল। পৃথিবী জুড়ে ডাইনোসরদের বেশ ভালোই সময় কাটছিল। কিন্তু মুশকিল করল ওই চাঁদ দুটো।


    পৃথিবী থেকে সমান দূরত্বে একই কক্ষপথে ঘুরতে গিয়ে, দুজনেই পৃথিবীর ওপর সমান সমান গুরুত্বকর্ষন শক্তি খরচ করছিল। ওদিকে পৃথিবীর সঙ্গে তাদের এই টানাটানির খেলায়, তাদের ওপর যে অভিকেন্দ্রিক বল কাজ করছিল, তার ফলে নিজেদের অজান্তেই তারা একে অপরের কাছাকাছি চলে আসছিল। ধীরে, ভীষণ ধীরে। স্লো-মোশনে। ঠিক যেমন সিনেমায় দেখা যায়। একদিন এই দুটো চাঁদ, একে অন্যকে ধাক্কা মারল। সেই ধাক্কায় একটা চাঁদ ভেঙে দু টুকরো হয়ে গেল। প্রথম টুকরোটা বেঁচে যাওয়া চাঁদের বুকে ছড়িয়ে পড়ল, আর যে টুকরোটা ধুলো হতে পারল না, সেটা পৃথিবীর টানে পৃথিবীর বুকেই এসে আঁছড়ে পড়ল।


    সেই আঁছড়ে জলের বুকে গজিয়ে থাকা ভূখন্ডটাই শুধু টুকরো টুকরোই হয়ে গেল না, পৃথিবীর বুকে সেইসময়কার এককছত্র রাজত্বকারী ডাইনোসরদের প্রায় সাতনব্বই শতাংশ, মুহুর্তের মধ্যে পৃথিবীর সময়সরণী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল। 


    তবে সব অভিঘাতেরই একটা ভালো দিক থাকে। তখনও একটা ভালো জিনিষ ঘটেছিলো। সমুদ্রের বুকে এক নতুন প্রজাতীর জন্ম হল, যার বিবর্তনের মাধ্যমেই আজ আমরা, মানে মানুষেরা, এই মুহুর্তে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী প্রাণী হিসেবে বেঁচে আছি।


    আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি বছর আগের ডাইনোসরেরাও নিশ্চই নিজেদের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী মনে করত। তারা কি কখনও ভাবতে পেরেছিল (?) মহাবিশ্বের একটা সামান্যতম ঘটনা তাদের চিরকালের জন্য মুছে দেবে। নিজেদের রক্ষা করার সামান্য সুযোগটুকুও তাদের দেবে না!?


    আমরাও কিন্তু ওই ডাইনোসরদের মতই অসহায়। আমরাও  মহাজাগতিক শক্তির সামনে নিরালম্ব। নিরুপায়।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Guruchandali | 136.228.***.*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:২৮97510
  • যাঁরা খেরোর খাতায় নতুন লেখালিখি করছেন, গুরুচণ্ডা৯-র টেকনিকাল ফীচারগুলো তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করার জন্য আগামী শনিবার ভারতীয় সময় রাত ৮-১০টা আমরা একটা ওয়েবিনার করছি গুগল মীট-এ। ইচ্ছে আছে আগামী কয়েক সপ্তাহ জুড়ে প্রতি শনিবার ঐ নির্দিষ্ট সময়ে ওয়েবিনার করার। আপনাদের কী কী অসুবিধে হচ্ছে লিখতে বা একটা সামাজিক মাধ্যম হিসেবে গুরুচণ্ডালির পূর্ণ স্দ্ব্যবহার করতে, সেটাও আমরা নোট করব, যাতে এটাকে আরও উন্নত করা যায়, প্রযুক্তিগতভাবে। সম্ভব হলে থাকবেন। শনিবার রাত আটটায় নিচের লিংকে ক্লিক করেই মীটিং এ জয়েন করা যাবে। 


     https://meet.google.com/ydz-ekww-see

  • Tapas Das | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৪:৫১97662
  • গাঢ় বানানটা যদি এডিট করা যায়, ভাল হয়। ড় দিলে কীরকম যেন লাগছে!  

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন