সেই ছোঁড়া চলে যাবার পরেও বাস নড়ে না। প্রায় ঘন্টা দুয়েক নদীর ওপরেই ন যযৌ ন তস্থৌ হয়ে রয়েছি। সেই গতকাল সকাল বেরিয়েছি। হিসেব মতো গভীর রাতে পৌঁছে যাবার কথা। এই বর্ডার দিয়ে সোভিয়েত আমলে রেলপথে যাতায়াত করার স্মৃতি এখনও অমলিন।
বাস এবার নদী পার করে চেক পয়েন্টে উপস্থিত হলো। ডিউটি ফ্রি শপ রয়েছে সেখানে। তবে আবার ঘোষনা ড্রাইভারের যে যা কিছু কিনবার তা ইমিগ্রেশনের আগেই কিনে নিতে হবে।
সমস্ত জিনিস পত্র সুটকেস টুটকেস নিয়ে হ্যাঁচোড় প্যাঁচোড় করে আমরা সেই বিল্ডিংটার মধ্যে ঢুকলাম। দোতলা বিল্ডিং। পোলিশ ইমিগ্রেশনের মত ছোট্টটি নয়। ঢুকেই ঘরটায় গিজগিজ করছে ভিড়। গোটা তিনেক কাউন্টার। পাশেই ডিউটি ফ্রি শপ। খদ্দের বিশেষ নেই। ওখান থেকেই শুকনো মাংস কিনলাম, খিদে পেয়েছে ওগুলোই চিবোই আপাতত। বাঘা আবার কাঠিবিস্কুটের মতো কী একটা কিনেছে দানা দানা নুন বসানো প্যাকেট খোলার পরে দেখা গেল। অখাদ্য জিনিস ফেলে দিতে হবে। দুব্লক সিগারেট জলের দরে।
ইরিনা দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে, এখানে অনেক বেশি দাম, এখান থেকে কিনলি কেন? ভেতরে অনেক সস্তা।
আর সস্তা। মেজাজ এখন ফুরফুরে আমার। প্রায় পৌঁছেই গেছি বলা চলে। ব্লক খুলে প্যাকেট বের করে ইরিনাকে নিয়ে বাইরে যাই, একটু সুখটানের এখন বড্ড দরকার। ওই লাইন যেমন এগোচ্ছে এগোকগে।
বাইরে বেরিয়ে যেই সিগারেট ধরাতে যাব, ওমনি দুম করে এক সীমান্তরক্ষীর আবির্ভাব । উঁহু, এখানে ধুমপান নিষিদ্ধ!
— কই? কোত্থাও লেখা নেই তো!
আমরাও ছ্যাবলামি করি।
কিন্তু না। একবার ইমিগ্রেশনের ঘরে ঢুকে পড়লে ওরা বের হতে দেয় না।
টুকুস টুকুস করে লাইন এগোলো। আমার টার্ন এলো, কেন এসেছি জানালাম। পাসপোর্ট পরীক্ষা করা হলো, তাতে স্ট্যাম্প পড়ল, কিন্তু আমায় কাস্টমসের দিকে যেতে দেওয়া হলো না। আরও একপ্রস্থ পরীক্ষা হবে।
— কেন? আবার পরীক্ষা কেন? আমার কী দোষ? আমি কি গুন্ডা না গুপ্তচর?
ইমিগ্রেশন অফিসার হেসে ফেলে।
— প্রথমবার এলে এটাই নিয়ম।
— প্রথমবার মানে! এই দেশে আমি থেকেছি তা জানেন?
— না না, তা নয়। এই পাসপোর্ট নিয়ে তো এই প্রথম। আপনি ভেতরে অপেক্ষা করুন একটু।
আমার পেছনেই লাইনে বাঘা ছিল। তাকে বললাম, আমাদের আলাদা করে পরীক্ষা হবে।
— সেকী! কেন?
— নিয়ম বলছে। পাসপোর্ট পরে পাবো।
যথারীতি বাঘাকেও ঐ একই নিয়ম দেখালো।
তারপরে দোতলায় একটা লাউঞ্জে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দেখি এ কী কাণ্ড রে ভাই!
মহাভারতের গল্পে যুধিষ্টিরের স্বর্গে পৌঁছনোর কেস। পাণ্ডবদের বাকিরা, ম্যায় দ্রৌপদীও সেখানে ছিল, ইনক্লুডিং কৌরবস্।
দোতলায় বেলারুস পাসপোর্টধারিনী ইরিনা বসে রয়েছে, আরও অনেকের সঙ্গে কুকুর এবং বাচ্চা ছেলে সহ সেই ইউক্রেনের মহিলাটিও, যার সবার আগে বর্ডার ক্রস করার কথা ছিল।
লে হালুয়া!
সর্বপ্রথমেই আমার নাম ধরে ডাকা হলো। লম্বা বারান্দা ধরে হেঁটে কয়েকটা ঘর পেরোলেই একটা ঘরের মধ্যে দুদিকে দুটো টেবিল এবং চেয়ার টেয়ার রয়েছে। দুজন অফিসার দুজনকে প্রশ্ন করে পারে। আমি গিয়ে বললাম — ঐ আরেকটা পাসপোর্ট যেটা আপনার হাতে রয়েছে, সেই লোক কিন্তু ভাষা বোঝে না। আমরা একসঙ্গে এসেছি।
— ডাকুন তাকে।
— বাঘা আ আ! এদিকে এসো।
বাঘা হুড়মুড়িয়ে এসে হাজির।
এখন শুরু হবে আসল পরীক্ষা।
আজ তোমার পরীক্ষা ভগোমান!