এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  ভ্রমণ   যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে

  • দুর্গম সেই খানে

    . লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৪ আগস্ট ২০২৫ | ৩০৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • অগস্টের গোড়ায় ফের বেড়াতে বেরোনোর বাই উঠল আমার। বাঘা তো সবসময়ই এক পায়ে খাড়া। এক সপ্তাহের ছুটি নেওয়া মানে নটা দিন। বেশি খরচের মধ‍্যে যেতে চাই না, সামনেই বিশাল খরচসাপেক্ষ একটা এলাহি বেড়ানোর আয়োজন করে রেখেছি।
    বাঘাকে বললাম গন্তব্যের নাম। তবে ফ্লাইটে যাবার অনেক সমস‍্যা। প্রচুর ঘুরে ঘুরে যেতে হবে। অথচ সরাসরি ফ্লাইট এখন বন্ধ রয়েছে কিছু লোকের গা জোয়ারির ফলে। সেই লোকগুলোর হাতেই দুনিয়ার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবার ক্ষমতা। তারা যা চাইবে, তেমনটি না হলে তাদের আছে ভাঁটার মত চোখ। 
    আমার নিয়ে এতটা জীবন একসঙ্গে কাটিয়ে ফেলায় বাঘায় মনের ভেতর থেকে সমস্ত ভয় ডর বেমালুম উবে গেছে তা ইদানীং ভালোই টের পাই। এটা ঠিক প্রশংসা বা নিন্দে নয়, এটা ঘটনা। বাঘা নিশ্চিতে সম্মতি দিয়ে দিলো।
    দুনিয়ায় এখন একটার পর একটা দেশ অগম‍্য হয়ে উঠছে। যুদ্ধ যারা করায়, তারা কি এ কথা মাথায় রাখে না যে, যে মানুষ গুলো নতুন নতুন দেশ দেখতে চায় তাদের লিস্ট থেকে একের পর এক দেশ বাদ পড়ে যাচ্ছে? অবশ‍্য বোঝার ক্ষমতা থাকলে কি আর যখন খুশি একটা একটা করে দেশ বেছে নিয়ে স‍্যাংশন নামক জিনিস চাপায় এরা?
    আমরা এখন জানি, যে দেশ তিন রকমের হয়। বন্ধু দেশ, শত্রু দেশ এবং নিউট্রাল দুধভাত দেশ।
    আমার গন্তব্য শ্বেতরাশিয়া বা বেলারুস। 
    আমার দেশের সঙ্গে শুধু নয় প্রায় সমগ্র পশ্চিম, মধ‍্য ও পূর্ব ইয়োরোপের সঙ্গে এখন বেলারুস ও রাশিয়ার প্রায় বয়কট চলছে। ওদেশে সরাসরি বিমান চলাচল বন্ধ, হোটেলের বুকিং বন্ধ। কয়েকটি মাত্র স্থলপথ খোলা, যার একটি বাদে সবকটাই ইউক্রেনের সঙ্গে। ইউক্রেনে এই যুদ্ধের বাজারে কেউ বেড়াতে যায় না। একটি স্থলপথ এই মুহূর্তে খোলা, সেটি পোল‍্যান্ডের পূর্ব সীমান্তে বুদ নদীর ব্রীজ দিয়ে। এপারে পোল‍্যান্ড ওপারে বেলারুস।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • . | ২৪ আগস্ট ২০২৫ ১০:১১745677
  • যাবার আগে টিকিট কাটার ব‍্যারার থাকে। এখান থেকে বিমানে যাব পোল‍্যান্ডের রাজধানী ভার্শাভা। রিটার্ন টিকিট ঝপ করে কাটা হলো, শেষ মুহূর্তে তাই দাম কিঞ্চিৎ চড়া। 
    এখন ভার্শাভা থেকে বেলারুশের বর্ডার যে জায়গাটা, সেটার নাম তেরেসপোল। তেরেসপোলের পূর্ব প্রান্তে বয়ে চলেছে বুগ নদী। নদীর ওপারে বেলারুস এর ব্রেস্ত শহর। এই পথে আমি লাস্ট যাতায়াত করেছি ট্রেনে ছত্রিশ বছর আগে। এখন স‍্যাংশান নামক কল বসিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে বেলারুসকে টাইট দেওয়া হচ্ছে বোঝা গেল। ভাবলাম তেরেসপোল অবধি ট্রেনে গিয়ে যদি বাকি পথটা পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। কিন্তু না, বিধি বাম। যেতে হলে কোনও একটা বাহনে চেপে তবেই যেতে হবে। তখন খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে বাস যায়। শুরু হলো বাস খোঁজা। উঁহু অনলাইনে কোনও বাস কোম্পানিই ব্রেস্ত যাচ্ছে না। অন্তত আমার দেশ থেকে তো ইন্টারনেটে দেখাচ্ছে যে ভুল গন্তব্য বা ভুল তারিখ দেওয়া হয়েছে বলে। ঐ স‍্যাংশনের কল আর কি!
    শেষে বুদ্ধি খরচ করে বেলারুস ট্রান্সপোর্ট এর সাইট খুঁজে আগাগোড়া রাশিয়ান ভাষায় সব লিখে টিখে পেমেন্ট করে দুজনের জন‍্য বাসের রিটার্ন টিকিট কাটা হলো।
    এবার চাই হোটেল বুকিং। ক্কী ক্কেলো! ব্রেস্ত টাইপ করলেই ফ্রান্সের একটা জায়গা আসছে, একই নাম, হুবহু একই বানান। ব্রেস্ত বেলারুস লিখলে আরেক কেলো হচ্ছে ব্রেস্তের নিকটে গোছের ভাব করে তেরেসপোলের হোটেল দেখিয়ে দিচ্ছে, অর্থাৎ হোটেল বুকিং এর কোম্পানি গুলোও স‍্যাংশানের নিয়ম মানছে।
    কিন্তু আমি কি ডরাই সখি বুকিং ডট কম কে? আরো একটু বুদ্ধি খরচ করে ইয়ানডেক্স অ‍্যাপের মাধ‍্যমে খুঁজলাম, কিন্তু ঐ অ‍্যাপ দিয়ে বুক করা যায় না। তবে কিছু হোটেলের নাম পাওয়া গেল। এবার সেইসব হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখি প্রায় সবই বুকড। একটা হেটেলে কষ্টেসৃষ্টে ঘর পেলাম। তারপরে ফোন করে অনুরোধ করলাম বুক করে দেবার জন্যে।
    ফোনের ওপারের মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে কনফার্ম করে দিল। টাকা পয়সা পেমেন্ট করতে হলো না, গিয়ে পৌঁছে তারপরে টাকা নেবে।
    জিজ্ঞাসা করলাম ব্রেস্ত শহরে হোটেল বুকিং পাওয়া যাচ্ছে না কেন? সব হোটেলই দেখতে পাচ্ছি জায়গা নেই।
    মেয়েটি জানালো, এখন ছুটির মাস, ইস্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় গরমের ছুটি, টুরিস্টদের ভিড়, সব মিলিয়ে হোটেল গুলোয় এখন জায়গা মেলা ভার।
    আমি কৌতূহলী হই — টুরিস্ট মানে বিদেশি টুরিস্ট?
    সে বলে — হ‍্যাঁ বিদেশিরা সব ক‍্যাম্পিং করতে আসে এখানে এই সময়ে।
    ল্লেহ! স‍্যাংশন কেমন টাইট দিচ্ছে বোঝা গেল, শহর উথলে উঠেছে টুরিস্টে।
  • . | ২৪ আগস্ট ২০২৫ ১১:৪৬745680
  • এদিকে বাঘা জিজ্ঞেস করছে ক্রমাগত, ওখানে কী কী দেখবার জায়গা আছে।
    আমি বিজ্ঞের মতো গম্ভীর হয়ে বলি - দুর্গ আছে।
    - দুর্গ? অনেক পুরোনো দুর্গ?
    - নাহ, তেমন পুরোনো নয়। রাজস্থানে যেমন সব দেখেছিলাম আমরা, সেরকম নয়।
    - সে তো বটেই, ইন্ডিয়া আর ইয়োরোপ তো একরকম নয়।
    -নাহ, একেবারেই একরকম নয়, তবে ইয়োরোপে যে সমস্ত দুর্গ আমরা দেখেছি, মানে মধ্যযুগের সব দুর্গ, যেমন ধরো আমাদের বাড়ির কাছেপিঠেই যেটা - কীবুর্গ, সেটার মতনও নয়। ব্রেস্তের দুর্গে যুদ্ধ হয়েছিল।
    - তারপরে কী হলো?
    - বলব, বলব, সব বলব, তার আগে একটা জরুরি ফোন কল সেরে ফেলতে হবে।
    একটু ফেলুদা স্টাইলে আপারহ্যান্ড নিলাম আর কি।
    বের্নে বেলারুস এর এমব্যাসির নম্বরটা সার্চ করেই সোজা ফোন করে ফেলি। ওপাশে রিং হচ্ছে, এখন সার্চ করা জায়গাটায় ভালো করে পড়ে দেখলাম, আজ এই সময়ে ফোন করবার সময় নয়। নির্ঘাৎ রেকর্ডেড মেসেজ শোনাবে এখন... কিন্তু না, ওপাশ থেকে ফোনকল রিসিভ করেন এক ভদ্রলোক।
    নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাই, এই সময়ে ব্রেস্ত বর্ডার দিয়ে বেলারুসে প্রবেশের নিয়ম কী কী?
    - সেরকম কিছুই না। আপনি শেংগেনের বাইরের দেশে যেতে গেলে যে যে ডকুমেন্টস নেন, নেবেন, যেমন পাসপোর্ট নিতে হবে, আইডি কার্ডে চলবে না, ভিসা লাগবে না, ফিরবার টিকিট থাকলে ভালো, হোটেল রিজার্ভেশনের প্রমাণ থাকলে দেখাবেন, মেডিক্যাল ইনশিওরেন্স, আর..., টাকা পয়সা ক্যাশ যেটা নিচ্ছেন সেটা দেখিয়ে দেবেন।
    বাঘা পাশেই ছিলো, সেও সব শুনেছে যেহেতু ফোনের স্পীকার অন করে রেখেছিলাম।
    - শুনলে তো?
    বাঘাকে বললাম। বাঘা রেগে গিয়ে বলে, শুনলাম তো সবই, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি, তোমরাতো রাশিয়ানে কথা বলছিলে, আমি কি রাশিয়ান জানি?
    আমি আবার ফোনের ভদ্রলোককে বলি, আপনি ইংরিজি জানেন? কিংবা জার্মান? কোনটেয় সুবিধে হবে বলুন, আমার সঙ্গে যিনি যাচ্ছেন, তাঁকে যদি একটু প্লীজ বুঝিয়ে দেন...
    - ইংরিজিতেই বলছি।
    এবার বাঘা নিজেই ফোন হাতে নিয়ে সব জিনিস সবিস্তারে জেনে নিয়ে আশ্বস্ত হয়।
  • . | ২৪ আগস্ট ২০২৫ ১৩:৩৪745681
  • এবার জিনিসপত্র গুছিয়ে নেবার পালা। সঙ্গে রাখতে হবে হাজার দুয়েক মত ক্যাশ। যদি কোনওখানে ক্রেডিট কার্ড কাজ না করে! যদিও হোটেলের মেয়েটি বলেছিলো যে ভিসা, মাস্টারকার্ড, ইউনিয়নপে এবং আরও নানারকমের কার্ড ওখানে দিব্যি কাজ করছে। তাও সঙ্গে করে ক্যাশের সঙ্গে প্রিপেইড কার্ডও নিলাম।
    বাঘার আবদার মতো মিন্সক যাবার প্ল্যানও তৈরি করা হলো, ট্রেনে যাবো। হোটেলও বুক করা হয়েছে। মিন্সকেও ব্যাপক ভিড় হোটেলগুলোয়। আমাদের দুজনের মনেই টানটান উত্তেজনা। বাঘার মনে সেটা নতুন দেশ নতুন মানুষ দেখার কারণে, আমারটা ছত্রিশ বছর পরেও সেই রেলস্টেশনের সেই জায়গাটা চিনে উঠতে পারব কিনা ভেবে। জুলাইয়ের এক সকালে যেখানে এক বুড়ির কাছ থেকে তিন পয়সার আপেল কিনেছিলাম। এই অ্যাত্তো অ্যাত্তো আপেল মাত্র তিন পয়সায়, থুড়ি তিন কোপেক দাম দিয়ে।
    যাবার এক দুদিন আগে কী একটা কাজে আমরা দুজনে মেয়ের সঙ্গে গেছি একজায়গায়। সেখানে এক পোলিশ ব্যবসায়ীর সঙ্গে গুছিয়ে আলাপ হতেই আমি মুখ ফস্কে বলে ফেলেছি, আপনার দেশে তো যাচ্ছি আমরা শিগগিরি।
    - পোল্যান্ডে? কোন কোন জায়গায়?
    ভদ্রলোক উৎসাহিত হয়ে পড়েন।
    - হ্যাঁ মানে পোল্যান্ডে তো যাবোই, আপনার ঐ ভার্শাভাতে। তারপরে ইচ্ছে রয়েছে তেরেসপোল বর্ডার পেরিয়ে, ইয়ে ঐ বেলারুসে একটু ঘুরে আসবার।
    ভদ্রলোক কীরকম একটা অবাক হয়ে পড়েন। যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না আমার কথা। এদিকে আমার মেয়ে চুপচাপ সব শুনছে, সেও জানত না এই প্ল্যান।
    - এত সব জায়গা থাকতে বেলারুস কেন?
    ভদ্রলোকের এই প্রশ্নে আমি বিচলিত হই নি। পশ্চিম ইয়োরোপে এইরকমের প্রশ্ন করাই দস্তুর।
    - যেতে বারণ করছেন তাহলে?
    - না, মানে পোল্যান্ডে কতো ভালো ভালো দেখার জায়গা রয়েছে।
    - হ্যাঁ হ্যাঁ জানি তো, গ্দান্স্ক, তারপর গিয়ে আপনার আউসশুইৎস, থুড়ি ওটা ঠিক সুন্দর জায়গা নয়...
    ভদ্রলোক নিজেই গোটা দুয়েক কীসব জ্য্যগার নাম করে গেলেন। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো সব মেনে নিলাম। ঠিকই তো বেলারিস কেন যাবো, এত ভালো ভালো দর্শনীয় স্থান বাদ দিয়ে? কোনও মানে হয়?
    এদিকে মেয়ে চতুর দৃষ্টিতে আমাকে পর্যবেক্ষণ করেছে। ঐখান থেকে বেরোনোর পরেই সে আমাদের দুজনকে কড়া করে শাসিয়ে রাখল বলা চলে।
    - তোমরা কি পাগোল? জানো না, যে স্যাংশন করা হয়েছে রাশিয়া আর বেলারুসকে!
    আমরা আমতা আমতা করে বলি, যাচ্ছি না তো। টিকিট তো পোল্যান্ড অবধি কাটা। মেয়ে তাও ভয় দেখাতে ক্ষান্ত হয় না - তোমরা জানো, ঐ দেশে গেলে আর কোনওদিনও অ্যামেরিকায় ঢুকতে দেবে না!
    (মনে মনে বলি - তো?) মুখে ছদ্ম বিস্ময় নিয়ে তাকাই।
    বলি, বটেই তো, ওরেব্বাবা, সাংঘাতিক ঝামেলার ব্যাপার হবে ওখানে গেলে। নাহ যাচ্ছি না।
    মেয়ের মনে তখন নদী আপন বেগে পাগলপারা সাবধানবানীর স্রোত।
    - তোমরা জানো, আমার একটা বন্ধু আছে আনা নামে, সে সিরিয়া গেছল বলে অ্যামেরিকা যেতে ওর ঝামেলা হচ্ছে?
    - এ বাবা! ঠিক আছে ঐ কথাই রইল।
    মেয়ে চলে গেলে বাঘুকে বলি আজকালকার জেনারেশন এত ভীতু কেন? কোথাকার কোন ট্রাম্প কি অ্যামেরিকা বারণ করে দেবে, আর আমরা আমাদের ইচ্ছে মতো কোত্থাও ঘুরতে যেতে পারব না? ক্কী আপদ মাইরি। যাব যখন ঠিক করেছি একশবার যাব। তুমি যাবে তো?
    - অবশ্যই। অ্যামেরিকা যাবার ইচ্ছে আমারও নেই, তার বদলে অনেক অনেক নতুন নতুন দেশ ঘুরব।
  • . | ২৪ আগস্ট ২০২৫ ১৬:১২745683
  • বেরোনোর আগে দুটো ছুটকো কাজ ছিল। এক, আমাদের একজন বাঙালি বন্ধু, যিনি ব্রিটিশ বাই বার্থ - কারণ লণ্ডনে জন্ম, এবং অধুনা ফ্রান্সের বাসিন্দা, তাকে জানানো বা বলা ভালো জিজ্ঞাসা করে নেওয়া যে সেও সস্ত্রীক আমাদের সঙ্গে যেতে চায় কি না।
    জানালাম। উত্তর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নেতিবাচক।
    সে বলে, ব্রেস্ত তো ফ্রান্সেও রয়েছে, মরতে পোড়া বেলারুসের ব্রেস্তে যাব কেন?
    এরকম প্রশ্নের উত্তর হয় না।
    সে আরও বলে, ওদের সঙ্গে তো স্যাংশন চলছে, এজন্য পরে কোনও অসুবিধে হবে নাতো?
    - কীরকম অসুবিধে?
    - না, মানে পাসপোর্টে তো ওদের দেশের এন্ট্রি একজিটের স্ট্যাম্প থাকবে, সেইটে নিয়ে যদি পরে কখনও কোনও ঝামেলা হয়...
    - কেন? আমাদের ধরে জেলে পুরে দেবে দেশে ফিরলে? নাকি চাকরি থেকে তাড়াবে, নাকি দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে? মোটা ট্যাক্সো বসাবে?
    - সেসব জানিনা, তবে ঝামেলা তো হতেও পারে...

    ভীতু লোকের অজুহাতের অভাব হয় না। অযথা সময় নষ্ট করি না।

    দুনম্বর কাজটা ছিল সত্যিই জরুরি। বাঘার সঙ্গে বসে একটা কি দুটো ফিচার ফিল্ম দেখা। এ অনেকটা হস্টেল জীবনের দুষ্টুমির মতো। কারোকে ভূতের ভয় দেখানোর আগে যেমন কদিন ধরে লাগাতার ভয়ের গল্প শোনাতে হয়, হরর মুভি দেখিয়ে ভিত পাকা করতে হয়, তারপরে এক রাতে অন্ধকারে ভূতের ভয় দেখালে সে ভয় পাবেই পাবে।
    তো এইটে ভূতের ভয় নয়, ব্রেস্ত শহরটা কেন গুরুত্বপূর্ণ শুধু সেইটুকু জানানোর জন্যেই ব্রেস্তের দুর্গের ওপর একটা সিনেমা অনলাইনে বসে দেখলাম দুজনে। ইংরিজি সাবটাইটেল সহ। বাঘা এই ইতিহাস জানত না। ব্রেস্তে কেন দুরকমের গেজের রেলপথ তাও জানত না। শুধু সে ই নয়, পশ্চিম ইয়োরোপের প্রায় কেও ই জানে না। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, সেটিকেই নমো নমো করে পড়িয়ে যাচ্ছে ইয়োরোপের ইস্কুলগুলোয়। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার মেয়েও ইস্কুলে এ ইতিহাস পড়ে নি। সযত্নে সুবিধেমত অনেক কিছু মুছে দেওয়া হয়েছে বা সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করা হয় নি।
    এ অনেকটা ভিক্টিম কার্ড খেলার মত ব্যাপার।
    তাতে কী? আমার তাতে বয়েই গেছে।
    ছোট্ট ছোট্ট দুটো কেবিন ব্যাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা।
  • kk | 2607:fb91:17ad:4ed7:1554:1d2a:1a51:***:*** | ২৪ আগস্ট ২০২৫ ২০:৩০745685
  • পড়ছি। ইন্টারেস্টিং!
  • . | ২৫ আগস্ট ২০২৫ ১৩:২৩745687
  • এই সমস্ত অল্প সময়ের উড়ানে খেতে দেয় না, ছাতার মাথা বাসী খাবার কিনে খেতে হয়, তাও যাচ্ছেতাই সব মেন্যু। ফলে ঠিকই ছিলো, যে ভার্শাভাতে নেমে গুছিয়ে বিলম্বিত লাঞ্চ করে, একটু রেস্ট নেবো, তারপরে ইভনিং হাল্কা ভোজন এবং নটা বিশের বাসে করে ধাঁ হয়ে যাবো বেলারুসের উদ্দেশে।
    এয়ারপোর্টে মোটামুটি ভালোই খাওয়া হলো, কিন্তু এতটাই দেরি হয়ে গেছল যে ডিনার কখন বা কতটা বা কোথায় করব ভাবতে পারছিলাম না।
    আমি দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে ডানদিকে বিশাল বাস স্টেশন দেখে এলাম যখন, তখন পাঁচটা বাজব বাজব করছে। সাত নম্বর প্ল্যাটফর্মে বেলারুস ট্রান্সপোর্টের বাস আসবার কথা। লোকজন দেখলাম পাঁচটা চল্লিশের বাসের জন্যে সব অপেক্ষা করছে, মেয়েদের সংখ্যাই বেশি।
    আমাদের বাস এর পরেরটা, এয়ারপোর্টের ঠিক উল্টোফুটে ম্যারিয়ট হোটেল, বাঘাকে নিয়ে চললাম ম্যারিয়টের রেস্টুরেন্টে। এয়ারপোর্টের ক্যালোর ব্যালোর আওয়াজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘন্টা দুয়েক আরামসে কফি খেতে খেতে বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে, লোকজন কেউ নেই আমাদেরকে বাদ দিলে, রাজকীয় আতিথেয়তা পেলাম সেখানে।
    আরও কিঞ্চিৎ ঘোরাঘুরির পরে সাড়ে আটটা নাগাদ সাতনম্বরের কাছে গিয়ে পৌঁছতেই কয়েকজন অপেক্ষমান যাত্রী আমায় চিনে ফেলে হাঁ হাঁ করে এগিয়ে এলেন। আমি কিন্তু এদের কে চিনি না।
    ঐ যে বিকেলে এদিকে ঢুঁ মেরেছিলাম, এঁরা সব পাঁচটা চল্লিশের বাসের যাত্রী, বাস এসেছিলো, কিন্তু এদের জন্য ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই, ভর্তি ছিলো সেই বাস, অতয়েব জনা পাঁচ সাত উদ্বিগ্ন যাত্রী হা পিত্যেশ করে অপেক্ষা করছে, নটা বিশের বাসের জন্য।
    বাঘু কেসটা বোঝে নি ভাষার প্রতিবন্ধকতার জন্য, এবং আমি ভাষা বুঝলেও রিজার্ভড সীটের বাসে কেন রিজার্ভড টিকিটওয়ালা লোকের জায়গা হবে না, সেই পার্টটা বুঝি নি।
    মহিলারা সব নিজ নিজ টিকিট আমায় দেখাতে লাগল একটু সহানুভূতির জন্য। আমিও পরিবেশ হালকা করতে হাসি মশকরা শুরু করে দিয়েছি তাদের সঙ্গে। বলছি নটা বিশের বাসে তোমাদের পাঁজা কোলা করে তুলে নিয়ে বসব, দরকার হলে কোলে বসিয়ে, কি সীটের নীচে লুকিয়ে রেখে, যে করেই হোক বেলারুস আমরা আজ সব্বাই মিলে যাবো।
    অপেক্ষমানদের ভিড়ের মধ্যে একজন ছিল, নাম ইরিনা, বয়স চৌষট্টি ইতালিতে কাজ করে, অনেক বছর পরে যাচ্ছে সে মিন্স্ক, এই বাস ছাড়া গতি নেই, লাস্ট মোমেন্টে মেয়ে টিকিট কেটে পাঠিয়েছে মিন্স্ক থেকে, তার টিকিট আবার রাত সাড়ে এগারোটার বাসের। সেও আমাদের সঙ্গে বসে আছে।
    ওহো বলতেই ভুলে যাচ্ছিলাম, অন্য যেসব বাস আসবার যাবার কথা, সেসব বাস মুহূর্মুহু আসছে, লোক তুলছে এবং ছেড়ে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্ম এক থেকে দশ এগারো অবধি। ঐ সমস্ত বাসের কোনওটারই গন্তব্য বেলারুস নয়, কিছু আছে পোল্যান্ডের ভেতরেই, এবং অধিকাংশের সামনেই যেসব জায়গার বোর্ড লাগানো, সেসব জায়গার নাম গত কয়েক বছরে আমরা খবরে শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছি - খার্কিভ, লুহান্স্ক, জাপরোঝোয়ে, সুমি...
  • . | ২৬ আগস্ট ২০২৫ ০৩:৪৩745691
  • লেখাগুলো সব সিরিলিক হরফে। বাবু পড়তে পারে না। অন‍্য সব অপেক্ষারত মেয়ের দল যারা বেলারুসের যাত্রী, সকলেই শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্লান্ত বিদ্ধস্ত এই সময়ে। প্রায় সকলেই এককভাবে এসেছে, মাল এবং সীট ছেড়ে রেখে এয়ারপোর্টে গিয়ে বাথরুম টয়লেট ব্যবহার করতে পারছে না কেউ। নটা বিশ পেরিয়ে গেলে আমি দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে দেখে এসে জানাই কোন গন্তব্যের বাস এলো। মিনিট চারপাঁচ অন্তরই বাস আসছে আমি দৌড়ে গিয়ে ভিড় ঠেলে দেখে এসে বলছি — কিয়েফ, জাপরোঝোয়ে, খারকিভ, সুমি, লুহান্স্ক...
    ওরা উদগ্রীব হয়ে থাকে শুনবার জন‍্য।
    আশেপাশে স্বল্প সময়ের জন‍্য এসে বসে ইউক্রেনগামী বাসযাত্রীরা। এদের মধ‍্যেও মেয়ের সংখ‍্যাই বেশি। অধিকাংশকেই অবস্থাপন্ন মনে হয় পোশাক দেখে। তাদের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। তারা রাশিয়ান বোঝে না বলছে। ক্ষোভ থেকে বলছে। দুটো ভাষাই ৯৯% অভিন্ন। যারা ইংরেজি বোঝে না, তারা রাশিয়ানে বললে উত্তর দিচ্ছে সংক্ষেপে। অনেকের কাছেই টিকিট নেই, সরাসরি ড্রাইভারের কাছ থেকে টিকিট কেটে রওনা দিচ্ছে। 
    রাত দশটার পরে আবির্ভাব ঘটল এক নারীর। মধ‍্য বয়সী, মাথার সমস্যা। মনে হয় সে নিয়মিতই এই বাস স্টেশনে এইসময়ে এসে ঘুরে যায়। চোস্ত ইংরিজিতে তারস্বরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে সে সমগ্র দুনিয়ার যাবতীয় রাজনীতির পাঠ বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে আমাদের। একটু পরে পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির গোপন সংবাদ জানায়। কাছ দিয়ে যখন সে ঘুরে যায় আমরা সতর্ক থাকি তার দিকে না তাকিয়ে অন‍্য কাজে ব‍্যস্ত হবার ভান করি।
    রাত এগারোটার কিছু পর অবধি এরকম বক্তৃতা দেবার পরে সে ক্লান্ত হয়ে চলে গেল। আশেপাশের লোকজনের থেকে জানলাম এটা প্রাত‍্যহিক ঘটনা।
    এক মধ‍্যে সাড়ে এগারোটার বাসের জন‍্য যাত্রী কয়েকজন জমা হলো। 
    দুবার ফোন করেছি এর ভেতরে মিন্সকে, বেলারুসট্রান্সের অফিসে। 
    - নমস্কার। আমরা ভার্শাভা বিমানবন্দরের সামনে সন্ধে নটা বিশের মিন্সকগামী বাসের জন‍্য অপেক্ষা করছি। বাস কখন আসবে?
    - নমস্কার। বাস রওনা দিয়েছে অনেকক্ষণ। তবে যানজটের জন‍্য দেরি হচ্ছে। সীমান্তে লম্বা লাইন ছিল। তবে বেরিয়ে গেছে। ড্রাইভার এখন বিশ্রাম নিচ্ছে। পৌনে বারোটার আগেই বাস এসে পৌঁছবে।
     
    এই খবর বাকিদের দিই।
    বাঘু বলল উৎকণ্ঠায় — আমাদের কোনও প্ল্যান বি নেই? ধরো যদি বাস আজ না আসে?
    আমার কিন্তু মনে সাহস রয়েছে তখনও। ব‍্যাগে একটা বালিশও আছে। বালিশ নিয়ে সে একটু গড়িয়ে বিশ্রাম নিতেই পারে। প্রচুর মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। প্ল‍্যান বি বলতে উল্টো ফুটের ম‍্যারিয়ট হোটেল, ফাইভ স্টার যদি হয়, তবে রুম পাওয়া যাবেই যাবে। এই বাস না এলে পরের বাস কাল দুপুর বারোটায়।
    ইরিনা এবং আমি সমস্ত নিয়ম ভেঙে ননস্মোকিং জেনেই সিগারেট খাচ্ছি। ফুরিয়ে গেয়ে এয়ারপোর্টের কিয়স্ক থেকে প‍্যাকেট কেনা হচ্ছে। 
    বারোটার মধ্যে বাস আসবে জেনে ঘোষণা করলাম। মেয়েরা চিন্তা কোরো না, যাও একে একে এয়ারপোর্ট থেকে হিসু টিসু করে এসো।
    একবাব চেঁচাচ্ছি — কার কার তেষ্টা পাচ্ছে? জল খাবে না?
    ইরিনা বলে — খাবো।
    দৌড়ে গিয়ে কয়েক বোতল কোকাকোলা ও জল কিনে নিয়ে এসে ওদের মধ্যে বিলিয়ে দিই। নিজেদের জন‍্যও দু বোতল রেখে দিই।
    এক মধ‍্যে উপস্থিত এক সুস্বাস্থ্যবান মানুষ। বসতে বললেও বসে না। গায়ের রং তামাটে। বাঘু এই পুরুষ যাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে ইংরেজিতে। ইনি স্পেন থেকে আসছেন। প্রোফেশনান ফুটবল কোচ। 
     
     
  • . | ২৬ আগস্ট ২০২৫ ১০:২১745693
  • ফুটবল কোচ রিয়াল মাদ্রিদের সাপোর্টার। বার্সেলোনার ফুটবল ক্লাবের ভয়ঙ্কর বিরোধী। তবে ফুটবল কোচ হিসেবে এনার কর্মস্থল হচ্ছে রাশিয়া। আরও সঠিকভাবে বললে মস্কো। ইনি এমন একটি ফুটবল ক্লাবের কোচ যে দল ইদানীংকালে মস্কোর স্পার্তাক দলকে দুই-শূন্য গোলে হারিয়ে দিয়েছে। যারা ফুটবলের জগৎ সম্পর্কে কম অবহিত, তাদের ধারণা নেই স্পার্তাক কী লেভেলের দল, সর্বোচ্য জনপ্রিয় তো বটেই রাশিয়ায়, সেই পরিমানে প্রেস্টিজ এবং তেজ স্পার্তাকের। যেসব দিনে স্পার্তাকের খেলা থাকত আগের কালে, সেদিন সমস্ত অফিস কাছারির মানুষজন তড়িঘড়ি কাজকর্ম শেষ করে বাড়ি পৌঁছনোর তাড়া করত, বিকেলে টেলিভিশনের সামনে কখন গিয়ে খেলাটা দেখবে সেই আশায়। একটা মুহূর্তও যেন বাদ না পড়ে।
    সেই স্পার্তাককে একটা গোলও করতে না দিয়ে দু দুটো গোল করে গোহারান হারিয়েছে যে টীম, সেই টীমের কোচ আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে খোশগল্প করছে এবং বেলারুসের বাসের অপেক্ষায় মশার কামড় খাচ্ছে?
    আমার চোখে অবিশ্বাস সে দেখতে পায় ঐ স্বল্প আলোতেও। কিংবা উচ্ছ্বাসের অভাব তার কাছে ধরা পড়ে। প্রমাণ দেখাতে নিজের ফোনটি বের করে সে ফোটো দেখাতে শুরু করে, অসংখ্য ফোটো, বিজয়ের, ক্লাবের সদস্যদের, প্রাইজ পাবার, গোলের হিসেব লেখা বোর্ড, ইত্যাদি ইত্যাদি, সর্বত্রই তাকে দেখা যাচ্ছে।
    কিন্তু এই ফুটবল কোচ যাছে কোন শহরে?
    ব্রেস্ত। আচ্ছা। তাহলে আমারা তিনজনে হলাম গিয়ে ব্রেস্তের যাত্রী। ব্রেস্তেও কি ইনি ফুটবলের কোচ হিসেবে কোনও...

    নাহ। ইনি ব্রেস্ত শহরের জামাই। বৌ বেলারুসের মেয়ে। নিয়মিত এই পথেই ব্রেস্তে যাতায়াত, যখন মাদ্রিদ থেকে যেতে হয়। নইলে মস্কোয় থাকাকালীন তো সমস্যা নেই, তখন ফ্লাইট, ট্রেন, সবই রয়েছে।
    এই যুদ্ধের কারণে যবে থেকে বেলারুসের ওপরে স্যাংশন হয়েছে, তবে থেকেই কোলকাতা ডায়মণ্ডহারবার রানাঘাট তিব্বতের মতো পথ ধরে ধরে ব্রেস্ত যেতে হচ্ছে।
    শুনলাম, বিশাল সময় নষ্ট হয় ইমিগ্রেশন কাস্টমসের লাইনে।
    - কোনদিকটায় বলুন তো? এদিকে, নাকি ওদিকে?
    ফুটবল কোচ ক্যালোর ব্যালোর করে অনেক কথা বলে যায়, যার মর্মাথ করা মুশকিল, তবে তাকে এখন বেশি ঝামেলায় পড়তে হয় না সেইটে পরিষ্কার।
    ব্রেস্তে ভালো রেস্টুরেন্ট কোনখানটায় আছে প্রশ্ন করতে সে বাৎলে দেয় - সোভিয়েৎস্কাইয়া উলিৎসা।
    তার কথা চলতেই থাকে। তার বর্ণনামাফিক ব্রেস্ত অতীব ছোট্ট জায়গাবিশেষ, এক দেড়খানা ফুটবল গ্রাউন্ডের চেয়ে বেশি বড়ো নয়, সবই নাকি হেঁটে দেখার মতো।
    ওদিকে আরেকজন অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মানুষকে দেখা যাচ্ছে, পুরুষ। বাঘা, ফুটবল কোচ এবং এইজনকে নিয়ে মোট তিনজন পুরুষ এই বাসের অপেক্ষায়। সেই মানুষটির সঙ্গে ফুটবল কোচ তার মাতৃভাষায় প্রবল আলাপ জুড়ে দেয়। সেই আলাপের তোড়ে আমরা অন্যান্যরা প্রায় ছিটকে পড়ি। মিনিটে একশোর বেশি শব্দ বলছে ফুটবল কোচ, মধ্যরাত পেরিয়ে গিয়েছে, হঠাৎ দেখতে পাই বাস ঢুকছে ওখানে। নাম্বারপ্লেটে বেলারুসের পতাকা আঁকা তো বটেই সামনে লেখা রয়েছে মিন্সক!
    দৌড়ে বাসের দরজায় সামনে যাওয়া, ব্যাগেজ জমা করা, তারপরে লাইন দিয়ে ওঠা। অগ্রাধিকার বিকেলে যারা যেতে পারেনি তাদের। বাসে আগে থেকেই যাত্রী রয়েছে প্রচুর, যারা ভার্শাভা সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন থেকে উঠেছে। সেকেন্ড চান্স নটা বিশের যাত্রীদের, বাঘাসহ আমি বাসে উঠে কোনও জায়গা খুঁজে পাই না সামনের দিকে। শেষ সারির আগের সারিতে দুটো পাশাপাশি সীট রয়েছে। বাকিরাও উঠছে পেছনে। ইরিনা আমাদের পেছনে গিয়ে বসে। আরেকজন তরুণী মেয়েও জায়গা পায়, সেই বয়স্ক লোকটিও। কিন্তু ফুটবল কোচের জন্য জায়গা হয় না। জনা চারেক যাত্রীকে ফেলে রেখেই গভীর অন্ধকার ফুঁড়ে বাস রওনা দেয় বেলারুসের দিকে।
  • . | ২৭ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৪৮745702
  • সকলেই ক্লান্ত। আগে থেকে ওঠা সহযাত্রীরা সব ঘুমিয়ে কাদা। গভীর অন্ধকারে বাইরের কিছু দেখা যায় না তেমন। চাঁদের সাইজও ছোটোর দিকেই হবে। কখন যে সকলে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।
    ঘন্টা দুয়েকের মাথায় ঘুমটা ভেঙে গেল এক অদ্ভূত কারণে। উঁহু, বাস থামেনি, কোনও দুর্ঘটনাও ঘটে নি। কিন্তু প্রবল এক দুর্গন্ধ আমার ঘুম ভাঙার কারণ। এত তীব্র সেই দুর্গন্ধ আমার পেছনের কিংবা বাঁদিকের সীটগুলোর দিক থেকে আসছে, যা দুঃস্বপ্নেরও অতীত। ডানপাশে বাঘা ঘুমোচ্ছে। বাসের সামনের দিকে ঘড়িতে প্রায় সাড়ে তিনটে। যদিও সেটা স্থানীয় সময় নয়, এটা বেলারুসের টাইম। এই দুর্গন্ধ থেকে পালানোর পথ নেই। যিনি এই মারাত্মক গন্ধটি ছেড়েছেন তিনি আমায় দম বন্ধ করিয়ে প্রাণে মারার মত অবস্থায় ফেলেছেন।
    কোনও মতো নাকে চাদর চেপে কিছুক্ষণ কাটাই, তার পরেই বাসের গতি ধীর হতে হতে থেমে যায়। এখন বাঘার ঘুম ভেঙেছে। সে জানলা দিয়ে দেখে আন্দাজ করে বলল, বর্ডার এসে গেছে।
    সে সম্ভবত সীমান্তের চিহ্নওয়ালা কোনও ফলক বা বোর্ড টোর্ড দেখে থাকবে।
    ব্যাস। আর চিন্তা নেই, বড়জোর ঘন্টাটাক লাগতে পারে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস এপারে এবং ওপারে মিলিয়ে। জিনিসপত্র কি আর চেক করবে? সবই তো বাসের খোলের মধ্যে জমা করা আছে।
    বাস সেই যে থেমে রইল, সেই থেমেই রইল। আমরাও ফের সকলে ঘুমিয়ে পড়েছি।
    আবার ঘুম ভেঙেছে, চোখে আলো পড়ছে, সূর্যের আলো, ডানপাশে বাঘা জেগে বসে রয়েছে। আমার ঘুম ভাঙ্তে সে বলল, টানা চারঘন্টা দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস।
    - সেকী!
    - সামনে বিশাল জ্যাম। সার দিয়ে এরকম অনেক বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে সামনে।
    - নড়ে না?
    - নাহ।
  • . | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:১১745750
  • বাসের মধ‍্যে অন‍্য যাত্রীরা এ পথে যাতায়াত করে অভ‍্যস্থ মনে হচ্ছে, আমাদের মতো চাঞ্চল্য তাদের নেই। 
    বাস আবার খানিকটা চলল। 
    বাঁ পাশে তাকিয়ে দেখলাম গাড়ির চেক পয়েন্টের জন‍্য অন্তত খান দশেক লেন। সেখানে শয়ে শয়ে গাড়ি অপেক্ষায় রয়েছে। 
    বাসের জন‍্য একটাই লেন, আমরা একেবারে ডানপাশে। 
    বাস এবার থামতে ড্রাইভার গেট খুলে দিলে কয়েকজন যাত্রী নীচে নেমে হাঁটাহাঁটি পায়চারি করে। আমিও নীচে নামি। আমার দেখাদেখি বাঘা নামে পেছন পেছন।  এতক্ষণ ঠায় বসে থেকে কেমন যেন করছে শরীর। বাথরুম যাওয়া হয় নি, দাঁত মাজার কথা তো ছেড়েই দিলাম। 
    তবে সময় করে খেতে হয় বাঘাকে, নিয়ম মতো। আমি ড্রাইভারকে অনুরোধ করি সুটকেস বের করে দিতে, ওতে বাঘার জন‍্য বিস্কুট এনেছি। তিনি সুটকেসের জন‍্য ডিকি খুলে দেন। বিস্কুট বেরোয়। ডিকি বন্ধ হয়। সামনের বাস এগেতে থাকে। আমরা ফের বাসে উঠি সকলে। এর পরেই পৌঁছই চেক পয়েন্টে। শুধু পাসপোর্ট ছাড়া আর কিছুই নিতে হয় না সঙ্গে। 
    চেক পয়েন্ট আসলে একটা মাঝারি মতো ঘর। ভেতরে সার দিয়ে লাইন করে দাঁড়িয়ে রয়েছি সকলে। একজন মহিলার সঙ্গে তার ছোট ছেলে এবং একটি কুকুর। এবার প্রায় চমকে ওঠার পালা। প্রায় সকলের হাতেই ইউক্রেনের পাসপোর্ট । দুম দুম করে স্ট‍্যাম্প মারা হচ্ছে পাসপোর্টে, আমাদের পাসপোর্টে স্ট‍্যাম্প মারা হবে না জানি, কারণ এখনও আমরা পোল‍্যান্ডে। কোনও কথা নেই কারো মুখে। নিঃশব্দতার মধ‍্যে শুধু স্ট‍্যাম্প মারার শব্দ। ইরিনার হাতে দেখলাম বেলারুসের পাসপোর্ট। ইমিগ্রেশন শেষ করে অন‍্য দরজা দিয়ে বের হতে হলো। সেখানেও একটা মাঝারি ঘর, টয়লেট বাথরুম রয়েছে যাত্রীদের বিনামূল্যে ব‍্যবহারের জন‍্য। ইরিনা ও আমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাইরে খোলা আকাশের নীচে সিগারেট খেলাম। বাস এদিকে এসে গেল। কুকুরছানাটিও ঘুরে ঘুরে মাটি শুঁকে শুঁকে তার হিসুহাগু করার তাল করছে। আমরা ফের বাসে উঠলাম।
    য্যাহ, এইটুকু সমস‍্যা মাত্র? এর জন‍্য এত চিন্তা ভাবনা ছিল? ঐতো সামনেই দেখা যাচ্ছে বুগ নদী। এ নদী অনেক রক্তাক্ত ইতিহাসের সাক্ষী। যে ইতিহাস পশ্চিমের ইস্কুলে পড়ানোর রেওয়াজ নেই।
    নদীর একাংশে চড়া, আবার আরেক অংশে খলখলিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে। আর কিছুক্ষণ পরেই এ নদী ভাগ হয়ে যাবে দুর্গের গা ঘেঁষে। সেই শাখার নাম মুখাভেৎস্। এই মুখাভেৎস্ই ব্রেস্তের আসল খরস্রোতা।
    কিন্তু এই মুহূর্তে বাস থেমে রয়েছে নোম‍্যান্স ল‍্যান্ডে। উঁহু, ল‍্যান্ড বলাটা ঠিক হলো না। আমরা নদীর ওপরে ব্রীজের ওপরে। এবার আর বাসের দরজা যাত্রীদের জন‍্য খুলবে না। এবার যখন আররা বেলারুসের ইমিগ্রেশনে পৌঁছবো, বাসে কোনও কিছু রেখে যাবার নিয়ম নেই। এসব ঘোষণা করলেন ড্রাইভার। আমি বাঘাকে সেই কথা তর্জমা করে জানিয়ে দিই।
    ড্রাইভার আবার বলেন — আপনাদের মধ‍্যে যিনি কুকুর নিয়ে এসেছেন তিনি সবার আগে যাবেন ইমিগ্রেশনের লাইনে। 
    আর কী! প্রায় এসেই পড়েছি বলা চলে। ব্রিজের ওপর ফের পঞ্চাশ মিটার মত চলেই আবার বাস থামে। সামনের দরজা খুলে যায়। বেলারুস সীমান্তরক্ষীদের এক যুবক বাসে উঠে আসে। 
    কত বয়স হবে? ঊনিশ? বিশ? গম্ভীর মুখে সে চেক করছে সকলের পাসপোর্ট। আমাদের পাসপোর্টদুটো হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে। আমি তার দিকে মিটমিটিয়ে হাসি চোখে তাকাতেই সে ছোঁড়া ফ‍্যাক করে হেসে ফ‍্যালে।
  • . | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:১৪745751
  • সেই ছোঁড়া চলে যাবার পরেও বাস নড়ে না। প্রায় ঘন্টা দুয়েক নদীর ওপরেই ন যযৌ ন তস্থৌ হয়ে রয়েছি। সেই গতকাল সকাল বেরিয়েছি। হিসেব মতো গভীর রাতে পৌঁছে যাবার কথা। 
    এই বর্ডার দিয়ে সোভিয়েত আমলে রেলপথে যাতায়াত করার স্মৃতি এখনও অমলিন। 
    বাস এবার নদী পার করে চেক পয়েন্টে উপস্থিত হলো। ডিউটি ফ্রি শপ রয়েছে সেখানে। তবে আবার ঘোষনা ড্রাইভারের যে যা কিছু কিনবার তা ইমিগ্রেশনের আগেই কিনে নিতে হবে। 
    সমস্ত জিনিস পত্র সুটকেস টুটকেস নিয়ে হ‍্যাঁচোড় প‍্যাঁচোড় করে আমরা সেই বিল্ডিংটার মধ‍্যে ঢুকলাম। দোতলা বিল্ডিং। পোলিশ ইমিগ্রেশনের মত ছোট্টটি নয়। ঢুকেই ঘরটায় গিজগিজ করছে ভিড়। গোটা তিনেক কাউন্টার। পাশেই ডিউটি ফ্রি শপ। খদ্দের বিশেষ নেই। ওখান থেকেই শুকনো মাংস কিনলাম, খিদে পেয়েছে ওগুলোই চিবোই আপাতত। বাঘা আবার কাঠিবিস্কুটের মতো কী একটা কিনেছে দানা দানা নুন বসানো প‍্যাকেট খোলার পরে দেখা গেল। অখাদ্য জিনিস ফেলে দিতে হবে। দুব্লক সিগারেট জলের দরে। 
    ইরিনা দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে, এখানে অনেক বেশি দাম, এখান থেকে কিনলি কেন? ভেতরে অনেক সস্তা।
    আর সস্তা।  মেজাজ এখন ফুরফুরে আমার। প্রায় পৌঁছেই গেছি বলা চলে। ব্লক খুলে প‍্যাকেট বের করে ইরিনাকে নিয়ে বাইরে যাই, একটু সুখটানের এখন বড্ড দরকার। ওই লাইন যেমন এগোচ্ছে এগোকগে।
    বাইরে বেরিয়ে যেই সিগারেট ধরাতে যাব, ওমনি দুম করে এক সীমান্তরক্ষীর আবির্ভাব । উঁহু, এখানে ধুমপান নিষিদ্ধ!
    — কই? কোত্থাও লেখা নেই তো!
    আমরাও ছ‍্যাবলামি করি।
    কিন্তু না। একবার ইমিগ্রেশনের ঘরে ঢুকে পড়লে ওরা বের হতে দেয় না।
    টুকুস টুকুস করে লাইন এগোলো। আমার টার্ন এলো, কেন এসেছি জানালাম। পাসপোর্ট পরীক্ষা করা হলো, তাতে স্ট‍্যাম্প পড়ল, কিন্তু আমায় কাস্টমসের দিকে যেতে দেওয়া হলো না। আরও একপ্রস্থ পরীক্ষা হবে।
    — কেন? আবার পরীক্ষা কেন? আমার কী দোষ? আমি কি গুন্ডা না গুপ্তচর?
     ইমিগ্রেশন অফিসার হেসে ফেলে। 
    — প্রথমবার এলে এটাই নিয়ম।
    — প্রথমবার মানে! এই দেশে আমি থেকেছি তা জানেন?
    — না না, তা নয়। এই পাসপোর্ট নিয়ে তো এই প্রথম। আপনি ভেতরে অপেক্ষা করুন একটু।
    আমার পেছনেই লাইনে বাঘা ছিল। তাকে বললাম, আমাদের আলাদা করে পরীক্ষা হবে।
    — সেকী! কেন?
    — নিয়ম বলছে। পাসপোর্ট পরে পাবো।
    যথারীতি বাঘাকেও ঐ একই নিয়ম দেখালো।
    তারপরে দোতলায় একটা লাউঞ্জে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দেখি এ কী কাণ্ড রে ভাই!
    মহাভারতের গল্পে যুধিষ্টিরের স্বর্গে পৌঁছনোর কেস। পাণ্ডবদের বাকিরা, ম‍্যায় দ্রৌপদীও সেখানে ছিল, ইনক্লুডিং কৌরবস্।
    দোতলায় বেলারুস পাসপোর্টধারিনী ইরিনা বসে রয়েছে, আরও অনেকের সঙ্গে কুকুর এবং বাচ্চা ছেলে সহ সেই ইউক্রেনের মহিলাটিও, যার সবার আগে বর্ডার ক্রস করার কথা ছিল। 
    লে হালুয়া! 
    সর্বপ্রথমেই আমার নাম ধরে ডাকা হলো। লম্বা বারান্দা ধরে হেঁটে কয়েকটা ঘর পেরোলেই একটা ঘরের মধ‍্যে দুদিকে দুটো টেবিল এবং চেয়ার টেয়ার রয়েছে। দুজন অফিসার দুজনকে প্রশ্ন করে পারে। আমি গিয়ে বললাম — ঐ আরেকটা পাসপোর্ট যেটা আপনার হাতে রয়েছে, সেই লোক কিন্তু ভাষা বোঝে না। আমরা একসঙ্গে এসেছি।
    — ডাকুন তাকে।
    — বাঘা আ আ! এদিকে এসো।
    বাঘা হুড়মুড়িয়ে এসে হাজির।
    এখন শুরু হবে আসল পরীক্ষা।
    আজ তোমার পরীক্ষা ভগোমান!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন