গদ্য সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে আশীষ লাহিড়ীর সঙ্গে খোলামেলা আড্ডাঃ পর্ব ১ : রূপক বর্ধন রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৬৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
প্রথমত, কবিতা ব্যাপারটাই, মানে সেই রবীন্দ্রনাথের কথায়, ফুলের গন্ধের মত। ব্যাপারটা কী ইউ ক্যানট ডিফাইন। মানে এই অস্পষ্টতাটাই কবিতার বৈশিষ্ট্য। আমি যেমন কবিতা একেবারে লিখতে পারি না। একসময় রবীন্দ্রনাথের কিছু গান বা কবিতা অনুবাদের চেষ্টা করেছি। আমার ভাই সৌমিত্রও করতো, আমারা একে অপরের সঙ্গে মেলাতাম; কিন্তু আমি দেখেছি যে আমার হাতে সেটা প্যারাফ্রেজিং হয়ে যাচ্ছে। মানে সেটা পড়ে মূল কবিতার অর্থটা বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু দ্যাট ইজ নট দি পোয়েম। কাজেই কবিতার ক্ষেত্রে ওই যে এক্সট্রা মাত্রাটা, সেটা শুধু তার লজিক নয়, শুধু তার শব্দ নয়, অথবা সবকিছু মিলিয়ে, ধরো তার ধ্বনি, মানে এই সবকিছু মিলিয়ে যে বাড়তি ব্যাপার, আমার মনে হয় অনুবাদে সেটা সম্ভবই না। তাহলে কি বলবে কবিতা অনুবাদের কোনো মানে নেই? এক অর্থে হয়তো নেই! রবীন্দ্রনাথ নিজেই তার প্রমাণ। কোনো কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় ইংরেজি গীতাঞ্জলি বেশ ভালো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই! কিন্তু যারা গীতাঞ্জলিকে বাংলা-গীতাঞ্জলি হিসেবে পড়েছে তারা সেই রসটা খুঁজে পাবে না। অর্থাৎ যে লোক বাংলা জানে না তার কাছে কিন্তু ওটার মূল্য আছে এবং সেখানেই আমি বলবো কবিতা অনুবাদের সার্থকতা; যেটা বুদ্ধদেব বসুও পয়েন্ট আউট করেছিলেন।
গদ্য সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে আশীষ লাহিড়ীর সঙ্গে খোলামেলা আড্ডাঃ পর্ব ২ : রূপক বর্ধন রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৫২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সে যাই হোক, তোমায় একটা আবিষ্কারের গল্প বলি শোনো। এসব কথায় কথায় উঠে আসে। সুগতবাবু রবীন্দ্রনাথকে নানান জায়গায় কোট করেছেন ওঁর বইতে, তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিকতা বা কট্টর-জাতীয়তাবাদ-বিরোধিতা ইত্যাদির উপর জোরও দিয়েছেন। তো এক জায়গায় ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বরে নতুন শতাব্দীর সময়টাকে ধরতে গিয়ে উনি রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাটা কোট করছেন, 'শতাব্দীর সূর্য আজি রক্তমেঘ মাঝে অস্ত গেল'। এইটা দিয়ে উনি তখনকার পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন, যে কেন রবীন্দ্রনাথ এটা লিখলেন। এইটারই আবার রবীন্দ্রনাথের করা একটা অনুবাদ ন্যাশনালিজম বইয়ের পরিশিষ্টে আছে। তো আমি রবীন্দ্রনাথের বাংলাটা আর ইংরেজিটা মেলাতে গিয়ে দেখলাম ইট ইজ এ রেভিলেশান। কারণ প্রথম লাইনগুলো হুবহু এক, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারপর দেখি কবিতার লাইন আর মিলছে না। আবার কয়েকটা লাইনে দেখি নাহ এই কবিতা থেকেই নেওয়া, খানিক দূর যাওয়ার পর দেখি আবার মিলছে না! ইংরেজি কবিতাটা বেশ বড়, আর বাংলাটা ততটা বড় নয় কারণ ওটা সনেট- ১৪ লাইনের। বাংলাটা লেখা হয়েছিল ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর, আর উনি ওটার ইংরেজি করছেন ১৯১৩ কি ১৪ সালে- যদ্দূর সম্ভব; কাজেই ততদিনে তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে।