এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কত'হাজার মরলে পরে মানবে তুমি শেষে/ বড্ড বেশী মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে…..

    Sumona Choudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ এপ্রিল ২০২১ | ১৪০৮ বার পঠিত
  • মৃত্যুমিছিল শুরু হয়েছে সারাটা দেশ জুড়ে। হাহাকার চলছে অক্সিজেনের জন্য। হাসপাতালের বেডের জন্য। শ্মশানে চিতার কাঠ কম পড়ছে। মৃতদেহ পড়ে থাকছে ঘন্টার পর ঘন্টা, সরকারি গাড়ি আর আসছে না। কত কত পরিচিত মানুষ, কত কত পরিজন জীবনকে শূণ্য করে দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কত কত মানুষ কত কত মানুষকে হারানোর দুঃখ বাকি জীবন বয়ে বেড়াবেন জানি না। কিন্তু দেশে রমরমিয়ে আইপিএল খেলা চলছে। তার কদিন আগে গনতন্ত্রের সর্ববৃহৎ মচ্ছব চলেছে। মানুষের মৃত্যুমিছিলের মাঝেই কুম্ভমেলা হয়েছে এই কদিন আগে। ২১শে মার্চ, দৈনিক নতুন সংক্রমণ যখন একলক্ষের কাছাকাছি প্রধানমন্ত্রী কুম্ভমেলায় অংশ নেওয়া ভক্তদের দুহাতে ওয়েলকাম জানাচ্ছেন। ১৪ই এপ্রিল, দৈনিক সংক্রমণ যখন দুলাখের কাছাকাছি, উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, 'মা গঙ্গার আশীর্বাদ আছে। কোনো করোনা নেই।' ফলত কুম্ভমেলায় অংশ নেওয়া কয়েক লক্ষ সন্ন্যাসী, ভক্ত কোবিড আক্রান্ত।

    গত কয়েকদিন ধরে সমস্ত দেশ জুড়ে মানুষের হাহাকার, প্রিয়জন হারানোর আর্তি ছাড়া আর কিচ্ছু শুনিনি। গতকাল এক তিনবছরের কন্যার বাবাকে কেড়ে নিলো কোবিড। দিল্লীতে। একটু অক্সিজেনের জন্য কাতরাতে কাতরাতে বড়ো নির্মম সে মৃত্যু। করোনা কন্যাটির শৈশব নিয়ে গেছে। প্রিয়জন হারানোর সেই কান্নার শব্দ সারারাত ঘুমোতে দেয় নি আমায়। সারারাত নিজেকে প্রবোদ দিয়ে গেছি, তুমি তো মানুষ। মৃত্যুর কাছে হেরে যেয়ো না। ভেঙে পড়ো না। তুমি তো মানুষ! আর সকাল হলেই বাস্তবতা চোখের সামনে শয়ে শয়ে মৃত্যু ছড়িয়ে দিচ্ছে।

    করোনা যে চলে গেছিলো এমনটাতো নয়। ছিলো। শুরু থেকেই ছিলো। ঘন্টা থালা বাজানোর নিদান তারপর ভেক্সিনের আবিষ্কার এসবের ফাঁকেই হঠাৎ করেই যেন দেখা গেলো করোনা নেই। চলে গেছে। এখন যেরকম দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার রিপোর্ট প্রকাশ করা হচ্ছে, মৃত্যু রিপোর্ট প্রকাশ করা হচ্ছে, সেসবও বন্ধ হয়ে গেছিলো হঠাৎ করে। অথবা জনসমক্ষে ততোটা আসছিলো না। কারনটা সম্ভবত বিভিন্ন রাজ্যের ইলেকশন। জানুয়ারি থেকেই সংক্রমণ হচ্ছিলো নতুন করে। কিন্তু ট্রেন চলাচল থেকে শুরু করে বিমান, জমায়েত এসবে বাধানিষেধ ছিলো না আর তেমন। ইলেকশনের জন্যে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ, সিআরপিএফ বাহিনী এক রাজ্য থেকে আরেকরাজ্যে আনা তো হচ্ছিলোই, তারমাঝে ছিলো বিভিন্ন দল এবং নেতাদের নির্বাচনী জনসভা। লোকে লোকারণ্য সেসব সভায় কোনো কোভিড প্রটোকল মানা হয় নি। নির্বাচনী সভা থেকে প্রচার কোথাও মাস্ক তো দূর বেসিক কোনো কোবিড প্রটোকলও মানা হয়নি। ইলেকশন কমিশন কোবিড পরিস্থিতি বিচার করে একদফায় ইলেকশন করাতে পারতো, করেনি। উপরন্তু এই ইলেকশন চলাকালীন ই গত ৪ এপ্রিল আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, " আসামে কোনো কোবিড নেই। তাই মাস্ক পরারও প্রয়োজনীয়তা নেই আর।" সারা দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যাটা তখন দেড় লক্ষ। কুম্ভমেলা হয়েছে। দৈনিক সংক্রমণ তখন দুই লক্ষ ছুই ছুই। কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। অথচ এই গতবার ই তো, দিল্লীর নিজামউদ্দিনে তবলিগ জামাতের কয়েকশো জমায়েতকে কেন্দ্র করে সারা দেশে একটি গোটা সম্প্রদায়কে গণশত্রু দেগে দেওয়া হয়েছিলো। কোরোনা জেহাদ নামকরণ করা হয়েছিলো এদের জমায়েতকে। তা যাইহোক। ইলেকশনের জন্য ইচ্ছে করে কোবিড পরিস্থিতি লুকোনো হয়েছে। করোনা চলে গেছে এরকম একটা ধারনা জনমানসে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। ভ্যাক্সিনে যে পুরোপুরি করোনা নির্মূল হয়ে যাবে না, ভ্যাক্সিন নিলেও যে কোবিড প্রোটোকল মেনে চলতে হবে, বেসিক সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে একথার উপর জোর দেওয়া হয়নি।

    ফলস্বরূপ আজ সারা দেশে কোবিড পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। রোজ পরিজনদের মৃত্যু সংবাদ আসছে। কাল হয়তো আমি বা আমার পরিবারও এভাবে মারা যাবো হঠাৎ করে। হাসপাতালে বেড নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। মোদীজী বলছেন রামের ভরসায় থাকতে। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সঙ্কট কী প্রচন্ড মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে দিল্লি হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে বলতে বাধ্য হয়, "ভিক্ষা করুন, ধার করুন, চুরি করুন কিন্তু অক্সিজেন জোগাড় করতেই হবে।" প্রধানমন্ত্রী আগেরবার বলেছিলেন থালা বাসন আর হাততালি বাজাতে,এবারে বলছেন রামের ভরসায় থাকতে। আর দেশের মানুষকে বিপদের মাঝে রেখে এযাবতকাল সারা বিশ্বে করোনা স্বাস্থ্যকীট আর ভ্যাক্সিন পাঠিয়ে গেছেন। অথচ দেশের সমস্ত মানুষ এখনও ভ্যক্সিনের আওতায় আসেননি। দেশের মানুষকে টাকা দিয়ে ভ্যাক্সিন কিনতে হচ্ছে।

    সমস্ত রাজনীতি সরিয়ে, সমস্ত দলাদলি, ধর্মীয় হিংসা সরিয়ে আমরা তো মানুষ! আমাদের তো মন আছে একটা! যেখানে প্রিয়জনের জন্য দুঃখবোধ থাকে, কান্না থাকে, শঙ্কা থাকে, মায়া থাকে!! আমাদের এখনোও খারাপ লাগে না? শাসকরাও তো মানুষ! তাদের খারাপ লাগে না? মানুষের মৃত্যুতে, প্রিয়জন হারানোর আর্তিতেও না!? আর কতদিন অন্ধ সেজে থাকবো আমরা!

    এখনো যারা ভাবছেন হিন্দুরাষ্ট্র, যারা ভাবছেন রামরাজ্য, মুসলমান খেদানো, তারা দয়া করে বুঝুন নিজে বেঁচে না থাকলে রামরাজ্য টাজ্য দিয়ে কিছু হবে না। বাঁচতে হলে দেশের সরকারকে, ইলেকশন কমিশনকে প্রশ্নগুলো করুন। কেন ভোটের আগে, ভোটের সময়ে নেতা মন্ত্রীরা কোবিড প্রোটোকল না মেনে জমায়েত করলেন, জনসভা প্রচার করলেন, কেন ইলেকশন কমিশন একদফায় ভোট না নিয়ে এই মহামারিকে আরো ভয়ানক করে তুললো তার জবাব চাওয়াটা জরুরী। কেন হাসপাতালে বেড নেই, অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই এই প্রশ্নও সরকারকে করতে হবে। ভোটের প্রচারে এত কোটি টাকা খরচ করতে পারে শাসক দল সহ রাজনৈতিক দলগুলো, নাগরিকদের বাঁচাতে হাসপাতাল এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর যোগাড় কেন করতে পারে না?? অক্সিজেনের আকালে দমবন্ধ হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন। রেলমন্ত্রী পিযুষ গোয়েল উপদেশ দিচ্ছেন 'কম করে শ্বাস নেওয়ার'। কেন অক্সিজেনের যোগাড় নেই সারা দেশে?? খোদ রাজধানী দিল্লির যদি এ অবস্থা হয়, আমাদের রাজ্যের, আমাদের সবদিক থেকে পিছিয়ে থাকা বরাক উপত্যকার অবস্থা কী হবে?? আমাদের ট্যাক্সের যে এতকোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়, তা কোথায় যায়! সেই টাকা কি শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটে জেতার উপকরণ! সাধারন মানুষের বিপদে সে টাকা গায়েব হয়ে সরকার কর্পদশূণ্য হয়ে পড়ে কেন!

    এই এতসব কিছু বলায় আপনারা আমার নাম দেখে আমাকে শত্রু বলে দেগে দিয়ে দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নিদান দিতেই পারেন, আমাকে মেরে ফেলতে পারেন, জেলে পুরতে পারেন, লিঞ্চ করতে পারেন, কিন্তু নিজেকে বাঁচাতে চাইলে, নিজের পরিবারকে বাঁচাতে চাইলে এই প্রশ্নগুলো তুলুন। দয়া করে। দুদিন আগে খবরের কাগজে দেখলাম চিতার কাঠও নাকি নেই। শিলচরের একজন শিক্ষকের মৃতদেহ বহু ঘন্টা বাড়িতে ফেলে রাখা ছিলো, কোনো সরকারি গাড়ি লাশ নিতে আসেনি। দয়া করে এবার অন্তত বুঝুন আপনারা কোন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন, মন্দির আর হিন্দুরাষ্ট্র তো তারও বহু পরের বিষয়!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন