আমাকে তুমি সাজিয়ে দাও, তরঙ্গিত গোপন জলরাশি ছিনিয়ে নেবো ঘুমের পরপারে, জলের পাশাপাশি হাওয়ার গাঢ় ছিটকে ওঠা, বড় চোখের ঘন বাড়ি আবার নিচে নামবে ডানা, ফিরবে ঘরে অসংখ্য দরকারি সহস্র ভুল আতসবাজি, ফিনকি দিয়ে উপছে পড়া আলো আমাকে তুমি সাজিয়ে দাও, কালোর পরে সাদার পরে কালো ... ...
তুমি কি আদর করো? কে আদর করে? পুরোনো আদর যারা স্বজনে স্বঘরে মিশে ছিলো–ফিরবে কি কোনদিন তারা?আদরের আহ্বানে জাগবে কি পাড়া? পুরোনো বাড়ির মতো, পুরোনো আদর শুধুই হারিয়ে যায়, চর ফেলে রাখে, চরও ভাঙে যখন ... ...
ছুঁয়ে দিয়েছিলো বলে বাক্সের মতো খোলা হলোঅস্তরঙীন দিন, মেঘে মেঘে বয়ে গেলো বেলা এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো, বাড়ির মধ্যে ঘর, মেলাএকা রঙ্গন গাছ, শিশিরের মতো ছলোছলো গুঁড়ো দুঃখের ফোঁটা, পাখি বলে ভ্রম হতে পারেছুঁয়ে দিয়েছিলো বলে কুহুডাক বেজেছে বেতারেযে সব ঘোর-লাগানো, যে সব মায়া-জড়ানো কথাআকাশে বাতাসে ছিলো, পুঞ্জ পৌনপুনিকতাতাদের খোঁজ নিলো যে ফুরিয়ে গিয়েছে নিঃসাড়অগ্নিসাক্ষী রেখে, খুঁজলো নষ্ট অধিকার আপতকালীন দিন, রোদ এলো বৃষ্টি তাড়া করেছুঁয়ে দিয়েছিলো বলে অমলিন ঝরলো পাথরেবহু জীবনের ভুল, বহু নদী, বহু অঙ্গীকার ছুঁয়ে দিয়েছিলো বলে খুলে গেলো বন্ধ এবার ... ...
জীবন গড়িয়ে যায় জীবনের মতো কোথাও দাঁড়ায় না, কিম্বা দাঁড়ায়রোদ এসে পড়ে মাঠে, শিরিষতলায় আলোকচূর্ণ রোদ, তীক্ষ্ণ ফলায় বহু কথা বাকি ছিলো তারাযত কথা বাকি থেকে যায়তাদের জন্য কাঁদে ঘাস, মাটি, পাড়াবিকেল গড়ালে নিশি, সন্ধ্যায় অনেক চিহ্ন নিয়ে, ক্ষতবিক্ষতকিম্বা পূর্ণ পুত, আঙুলে আঙুলআগুনের পাশে শুয়ে আগুনের চুলজীবন পৌঁছে গেলে দিগশূন্যপুর নতজানু দিন শুয়ে পড়লে প্ৰণতজীবন যায় কি হাহা দিগশূন্যপুর ... ...
ভীষণ ঘুমে জড়িয়ে আছো, সাপের মতো ঘুমআকাশ জুড়ে চুল না ধোওয়া বৃষ্টি নেমেছেবাস্তবে তো গান হলোনা, অবাস্তবে তবেতৃতীয় চোখ দেখবে হাওয়া কতটা আলগোছেছুঁচ্ছে লতা তোমার গায়ে, তোমার অবয়বেফুটছে লাল দিগন্তমুখ, অলীক জবাকুসুম ... ...
একনা বলে যেওনা কোথাও সরু সুয়োর মতো শীতকাল এলো, সরুচাকলির মতো বাতাস গায়ে লাগলে এ বাড়ি অন্য বাড়ি হয়ে গেলোঅন্য অন্য কত বাড়ি মায়ের গায়ের গন্ধ পেলে উঠোনেফুটত নীল জবা, কেন বসতের কোন রঙ থাকে নাবিসর্জন ছাড়াদুইপায়েসের রেখা ধরে হেঁটে গেলেজন্মদিন পাওয়া যেতে পারে অন্য জন্ম যার সেবাড়াতে পারে সরু আঙুল ভাব করবে বলেতিনআদরের শুভদিনে খুলে যায় অনন্তের মুখবিছানায় ছায়া পড়ে, রাত্রি ভেসে যায় কালো পাখি ডাকলে যাত্রা ঠিকশুভলগ্নে রাস্তা জড়ায় পাশিশু বিড়ালের মতো খেলাধূলো শুরু হলে পান করিতোমার আধো শরীর অবেলায়, পূর্ণ হবো বলে ... ...
ঘরে আসবে না আর এমন কথা ছিলো? বাতাস লাগা মর্মমূলে, সন্ধ্যা গাঢ় হলেছায়ার রঙে রঙ মিশিয়ে, দরজা খুলে ধরেনা ডিঙিয়ে আসবে না আর, তেমন অগোচরেঅতর্কিত নৌকা পাবে, এমন কথা ছিলো? থামবে না আর আটপৌরে, নোঙর ফেলা জলেকথার ছবি দেখবে না আর, যে কথা কেউ দিলোবাসার ভালো বাসার কথা, নিয়ত নীরবতাদেয়াল জোড়া মেঝে, কুলায় শিকড়ঘন টানউঠোন থেকে উঠোন, শুধু সব্জিবাগান অবশ করে রাখার মত চাহনিসঞ্জাতসম্মোহনে বাঁধবে না আর, এমন কথা ছিলো? ... ...
সমাধান থাকে না। ঘাস ধ্বংস হয়ে যায়টোল-খাওয়া বাটির মতো, দিন নিচু হতে থাকেসাপেরা খোলস ছাড়ে, গাছেরা বাকলমানুষ পারেনা তার জরালোল হাড়েবয়স-পিঁপড়ে কামড়ায় আয় চাঁদ, আয় চাঁদ বলে যারা ভিজেছে জ্যোৎস্নায়নতমুখ হয়ে যারা তুলেছে সর্ষেফুলযাদের স্বপ্নে কথা রোজ মরে, রোজ নতুন শরীরে জন্মায়শিমূলতলায় নেই, তারা তারা তারাপরিত্যাগ করে ঘন শীত হয়েআস্তে ক্ষয়ে গেছে কোন করুণায় বলো সিঞ্চন হবে?লাল রক্তকণিকা সাদা হলুদ ঠান্ডা হলোঘরে জমলো অত্যাচার, ব্যাধিরোদ উঠে এলো চমড়ির মতো ছায়া অন্তরায়, ছায়া অন্তরায়পার হয়ে কোথায় পালাবে? ... ...
আবার পড়া হবেতোমার জন্য রাখা হরিদ্রা ফুটবে নীল টবেআবার পড়া হবে কালো পাথর সাদা পাথর বিষটানা সব নুড়িএকে একে নীল, নীলকন্ঠ হবেআবার পড়া হবে ঢেউ এসে মুখ মুছোবে কারুর, অমানির্জন পুরীভরে উঠবে প্রবল মহোৎসবেআবার পড়া হবে ... ...
পুরানো দিনের স্নান ঠোঁটে নিয়ে উড়ে আসে যারা, বাদামি হলুদ লাল হাঁসবাঁধা হবে কি জ্বরের শরীরে বাসা, তাদের আকাশ? আমন্ত্রণ লেখা ছিলো শিরাধমনীতে, তৃষিত গহনে ঘন বাসখোলা হবে কি দরজা নলিপথ, একে একে টানা হবে শ্বাস সাহস রক্তে থাকে, সংসারে প্রাণ থাকে অস্তবিকেলময় যদিআজন্ম ভয়ের তাড়না, কাকভোর থেকে ফুলে ওঠা রাত্রি অবধিঅথচ দিন ফুরালে জলের শরীরে মেশা সরু নীল শব্দহীন নদীহয়ে বয়ে যাওয়া রক্তে লেখা ছিলো, সেই ক্ষত ভুলেছে পরিধি ক্রমাগত ছোট হতে হতে, যখন কালো পাখির তীক্ষ্ণ ছুরি শিসছিন্নভিন্ন করে ঘুমমহল্লা, নখের বাড়িতে জমা হতে থাকে অহর্নিশবাঁ চোখের দুর্ভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যজনিত গ্রহবিষসেই থেকে সমস্ত মাংস শুধু, চরাচর দুর্বোধ্য আমিষ ধুয়ে জল নামবে উঠোনে ... ...