এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভারতীয় পরিচয়টা চাপিয়ে দেওয়া, বাঙালী পরিচয়টাই আসল

    bip
    অন্যান্য | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৮৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ্বিপ | 81.244.***.*** | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২২:৫৭703720
  • আমি প্রতিটা নিশ্বাসে, ঢেঁকুরে বাঙালী-কিন্তু ভারতীয় পরিচয়টা একটা নির্মান-পাসপোর্ট। সেটাও বদল হয়। কিন্ত বাঙালীত্ব বদল হয় না। তাই আমি যতনা ভারতীয়, তার থেকেও অনেক বেশি বাঙালী। কারন, ভারতীয় এই পরিচয়টা ছিল রাজনৈতিক আরোপিত-বাঙালী এই পরিচয়টা জীবনের প্রায় সবটা জুরে...।।এটা নিয়ে বহুদিন আগে মুক্তমনাতে লিখেছিলাম। গুরুতেও এক কপি থাক
  • বিপ | 81.244.***.*** | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২২:৫৮703721
  • এই-বাঙালী অস্তিত্বটা তাহলে কি? আসলে ব্যার্থ রাজনীতির জাঁতাকলে দুই বাংলার অস্তিত্বেই এখন নাভিশ্বাস। জীবিকা নির্বাহের জন্যে বাধ্য হয়েই সবাই দেশের বাইরে। অথচ আমাদের সমস্যাটাকেও আমরা স্বীকার করতে চাইছি না। এমনকি আজকাল এপার বাংলা, ওপার বাংলা বলতেও ভয় হয়। পাছে ওদিকের ইসলামিস্টরা বলেন “ওসব আগে ছিল-এখন এটা বাংলাদেশ”। আর আমাদের দিকের নব্য হিন্দুত্ববাদিরা বলবেন বাংলাদেশীরা বাঙালী হল কবে? আসলে এরা একই মুদ্রার এপিঠ এবং ওপিঠ। মুদ্রার নাম ঘৃণা, অজ্ঞতা এবং আত্মবিস্মৃতি।

    (২)

    আগে ভারতীয় পরে বাঙালী-এটা আমাদের দিকের অনেকেই বলেন। এটা বাস্তবেও ঠিক না। সংবিধানের দিক দিয়েও ঠিক না। কারন আমি দেখি নাই বাঙালীদের [যারা প্রবাসী নয়] অবাঙালী বন্ধু সার্কল থাকে বলে। দু একজন থাকে। অস্তিত্বের যেখানে ৯০% বাঙালী-সেখানে আমি প্রথমে বাঙালী না-এটা অস্বীকার করাই প্রথম বোকামি। আর ভারতীয় বলে আলাদা কিছু সংবিধানে নেই। প্রথমেই বলা হয়েছে প্রতিটি জাতিসত্ত্বা তাদের সংস্কৃতির আলাদা বিকাশ করবে। তাদের ওপর অন্য কোন সংস্কৃতি রাষ্ট্র চাপাবে না। বাজেটে বাংলা ভাষার জন্যে পশ্চিম বঙ্গের বরাদ্দ বাংলাদেশের দেখে বেশী-৫০০ কোটি টাকা বছরে-যার জন্যে আমাদের এদিকের সরকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভাল বাংলা সিনেমা স্পনসর করে। তনভীর মোকাম্মেল এই জন্যে আমার কাছে আক্ষেপ করেছিলেন। আসলে আমাদের রাজ্যের অবস্থা এমন খারাপ-আমাদের দিকের বাঙালীরা নিজের জাতিসত্ত্বায় লজ্জা পায়। এটা কোন তামিল বা তেলেগুদের মধ্যে দেখিনি। ওরা ২০ কোটি টাকা দিয়ে তেলেগু সিনেমা করেও টাকা তুলে নিচ্ছে-আমরা ৫ কোটি টাকার সিনেমা করার ও মুরোদ রাখি না। অথচ আমরা সংখ্যায় অনেক বেশী।

    এই বাঙালী সত্ত্বাটা আমাদের মধ্যে হারিতে গিয়ে গোলমাল হয়ে গেছে। আমি আই আইটিতে দশ বছর ছিলাম। কোন দিন দেখিনি বাঙালী ছেলেরা অবাঙালীদের সাথে একসাথে থাকে বলে। দশ বছরে অন্তত ৯ টা উইং যে থেকেছি (উইং মানে ১০ টা ঘর নিয়ে একটা উইং হয়)। সেখানে বাংলাদেশী পেলেও অবাঙালী পাওয়া দুষ্কর। তাই বাঙালী সত্ত্বা ছাড়া যেখানে আমরা বাঁচতে পারি না-সেখানে বাঙালী সত্ত্বাকে অস্বীকার করার যে প্রবনতা দেখছি-সেটাই এদের ভুল পথের যাত্রী করেছে। এমন কি এই আমেরিকাতে বাঙালীদের মন্দির ও আলাদা-এরা শুধু কালী বাড়ি আর দুর্গাবাড়ি যায়-সেখানে শুধু বাঙালীরা আসে। অবাঙালী মন্দিরে এরা যায় না। দুর্গাবাড়ি গুলো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হওয়াতে-সেখানে দুচারটে মুসলমান ও পাওয়া যায়-কিন্তু অবাঙালী পাওয়া যাবে না। এসব দেখার পরেও লোকের চক্ষুদোয় হয় না। এসব যারা করে-তাদের এই কথা স্মরণ করালে বলবে আমি আঞ্চলিকতাবাদ প্রাধান্য দিচ্ছি-অথচ এরাই ভারতীয় ফোরামের থেকে বাংলার ফোরামেই আড্ডা মারে সারাক্ষন। কারনটা স্বাভাবিক-প্রাণের যোগ যাদের সাথে, তাদের সাথেই সবাই সময় কাটাতে ভালোবাসে। কিন্তু সেটা বললেই লোকে বলবে আঞ্চলিকতার দোষে দুস্ট!

    (৩)

    এটা বাঙালী মুসলমানদের জন্যেও সত্যি। মুসলমান বলে যে সত্ত্বা-তার ত কোন নির্মান নেই-সেটা শুধুই কাল্পনিক শত্রুর সাথে শুন্যে গদাযুদ্ধ। তাই বাঙালী মসজিদ ছাড়া তারা অন্য মসজিদে যেতে পারে না আমেরিকাতে। সে খাচ্ছে বাংলা, বলছে বাংলা, গান শুনছে বাংলা, প্রেম করছে বাংলা-আর আরবী ভাষায় দুটো লাইন মুখস্ত পড়লেই, মুসলমান হয়ে গেল! যা আরবী সংস্কৃতি ছাড়া কিছু নয়। লাখে লাখে বোরখা আমদানি করে, দাঁড়ির দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে কি আরবী (পড়ুন মুসলমান) হওয়া যায়? এই কৃত্রিম “সত্ত্বার” বিরুদ্ধেই আমাদের বলে যেতে হবে। আমি আগেই বলেছি-হিন্দুত্ব কোন সত্ত্বাই নয়। কারন হিন্দুধর্মে সত্যের সন্ধান করতে বলে। তাতে কি কোন নৃতাত্ত্বিক সত্ত্বা তৈরী হয়? তেমনই মুসলমান শব্দটাও কোরানে নেই। আধ্যাত্মিক ইসলাম কি আরবী হতে বলে? জালালুদ্দিন রুমি কিন্তু অনেক দিন আগেই বলে গেছেন-আমি মুসলমান, খৃষ্ঠান, ইহুদি নই-আমি আল্লার পথে সত্যের, সৌন্দর্য্যের সন্ধান করি। সুফিদের সাথে বৈষ্ণব ধর্মের কোন পার্থক্য নেই। ধর্মের নীতিমালা, আচার বিচার মেনে সত্যের সন্ধান পাওয়া যায় একথা সুফীরা বলেন নি-তারা পরিস্কার ভাবেই বলেছেন ধর্মের ওপরে উঠতে পারলে-তবেই উচ্চতর উপলদ্ধির জগত পাওয়া সম্ভব। সেই আন্দোলনের পথে ধরেই আমরা দেখবো রবীন্দ্রনাথ, লালন ফকির এবং নজরুল ইসলাম “সবার ওপর মানুষ সত্যের” পথে অখন্ড বাঙালী জাতিসত্ত্বার স্বপ্ন দেখেছেন। তার কি কোন মূল্য নেই? কোন এক আদবানী বা কোন এক নিজামীর জন্যে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন আমরা বর্জন করবো? তাহলে আমাদের থাকবে কি?

    ধর্ম দিয়ে যে সত্ত্বা তৈরী হয়-তার বাস্তব অস্তিত্ব নেই বলে-সেই অস্তিত্ব তৈরী করে রাজনীতি-বোঝায় আমাদের ওপর ওরা অত্যাচার করছে। এই ধার্মিক সত্তার নির্মান কৃত্রিম-এবং এর ধারক ও বাহক হচ্ছে রাজনীতিবিদরা। ভারতে বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্যে হিন্দুধর্মটা কি সেটা নিয়ে কোন আলোচনা দেখি না। শুধু চারিদিকে কলরব-বাংলাদেশ থেকে পাকিস্থানে হিন্দুরা বিপন্ন। জামাত থেকে ইসলামিক পার্টিগুলির ও একটাই রা-ইসলাম বিপন্ন! হিন্দুত্ববাদি আর ইসলামিস্টদের কথা বার্ত্তা, ক্যাডারদের ভাবধারা সব এক-হুবহু। অর্থাৎ যে অস্তিত্ব নেই-সেই অস্তিত্বকে জোর করে ঢোকানো হচ্ছে বাঙালীদের মনে। কারন বাঙালী সেন রাজাদের আমলেও হিন্দুত্ব চাপানোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, পাকিস্থানে ইসলামি শাসন চালানোর বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে। বাঙালী প্রতিবাদি জাতি। আমাদের মনের গান আর প্রাণের আবেগের সাথে ওয়াহাবি ইসলাম বা উগ্র হিন্দুত্ব কোনদিনই খাপ খেতে পারে না।

    একটা কথা মনে রাখবেন-যে বাঙালী আজ হিন্দু-কাল মুসলমান হতে পারে। উলটোটাও হতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই একটা বাঙালী অবাঙালী হতে পারে না। কারন বাঙালী অস্তিস্ত্ব তার ভাষার স্বাস প্রশ্বাসে।

    (৪)

    অথচ ঘরের সামনেই আমাদের উদাহরন ছিল। আজ ভারতে তামিল, তেলেগু আর কন্নররা এগিয়ে গেল। ওরা কি ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছে? না কোন দিন ই চাই নি। অথচ তামিল নাডুতে ১৯৬০ সাল থেকেই সি এন আন্নাদুড়াই এর নেতৃত্বে তামিল জাতিয়তাবাদি আন্দোলনের শুরু। এরা ছিল নাস্তিক-এবং এই আন্দোলন ছিল সর্বত ভাবে ধর্ম নিরেপেক্ষ আন্দোলন। ওদের আদর্শও ছিল কংগ্রেস বা বামপন্থি বা হিন্দুত্ববাদিদের থেকে অনেক আধুনিক। ফলে আজ তামিলনাড়ু একটি সফল রাজ্য। একজন তামিল চাইলে মাদ্রাসে ফিরতে পারে-অনেক চাকরী- অনেক সুবিধা। আর আমাদের মাদ্রাসে যেতে হয়। চিকিৎসার জন্যে বা চাকরির জন্যে। দ্রাভির জাতিয়তাবাদি আন্দোলনের পথেই তেলেগু দেশম এসেছে অন্ধ্রপ্রদেশে। আজ হায়দ্রাবাদ ভারতের আধুনিকতম শহর। আই এ এস বা আই আই টি তে এখন তেলেগু ছাত্ররাই বেশী সফল। আবার তেলেগু সিনেমা হিন্দি সিনেমার সমান বাজেটে তৈরী হয়। আমাদের সিনেমা শিল্প ধুঁকছে। জাপান থেকে তামিল এবং তেলেগুদের দেখে, আমি নিশ্চিত-কোন নৃতাত্ত্বিক জাতি সত্ত্বা যদি নিজেদের অতীত নিয়ে আত্মবৃষ্মৃত হয়-তাহলে ভবিষ্যতের আধুনিকতাও তারা গ্রহন করতে পারে না। কোন সন্দেহ নেই তেলেগু বা তামিলরা জাতি হিসাবে যতটা এগোল-আমরা পেছলাম। ওরা কিন্তু ভাষা ভিত্তিক জাতিয়তাবাদের পথে হেঁটেই একটা বাঙ্গালোর, একটা হায়দ্রাবাদ, একটা মাদ্রাস ভারতকে উপহার দিয়েছে। আমরা শুধু দিয়েছি বন্ধ্য্যা সংস্কৃতির একরাশ লজ্জা-কিছু না বুঝেই কতগুলো রাশিয়ান ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরার চেস্টা। অথচ তামিল জাতিয়তাবাদও প্রথমের দিকে কম্যুনিউস্ট আন্দোলন দ্বারা ভালো ভাবেই প্রভাবিত ছিল। তামিল জাতিয়তাবাদি আন্দোলন কিন্তু মার্ক্সবাদ-লেনিনিজমের ভালদিক গুলিই নিয়েছে। ব্যার্থতার দিকটা বর্জন করেছে। আর আমরা বাঙালীরা সেটাকে আত্মকরনের বদলে লাল শালুমোড়া নারায়ণ শীলা ভেবে পুজো করে চলেছি। গোটা পৃথিবী বদলাবে। আমাদের দিকের কমিনিউস্টরা লেনিন-স্টালিনকে পুজো দিতেই থাকবেন। এক অদ্ভুত সেলফ ডিনায়ালে ভোগে বাম-বাঙালী।

    আজ বাঙালী জাতিয়তাবাদি শক্তি পশ্চিম বঙ্গে থাকলে মমতার আত্মঘাতি আন্দোলন সম্ভব হত না। বুদ্ধদেব প্রকাশ কারাতের ক্রীতদাসত্ব স্বীকার করে পশ্চিম বঙ্গের ক্ষতি করতে পারতেন না। দিল্লীর মুখ চেয়ে কংগ্রেসী নেতাদের বসে থাকতে হত না। আমাদের এই দুরাবস্থা অন্ধ্রে বা তামিলনাডুতে হবে না। নরেন মোদির মতন হিন্দুত্ববাদিও হিন্দুত্বের আলখাল্লা ছেড়ে গুজরাটি জাতিয়তাবাদের দিকেই হাঁটছেন। তাই গুজরাটের উন্নতির জন্যে মন্দির ভাঙতেও পিছপা হচ্ছেন না। আর আমাদের হিন্দুত্ববাদিরা সেই এক অস্তিত্বহীন হিন্দুত্ব সত্ত্বার পূজোই বিভোর।

    অথচ তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেই এটা শেখা যেত। আমি তেলেগুদের অনেক অনুষ্ঠানে গেছি আমেরিকাতে। সবাই তেলেগু হিসাবে গর্বিত-রাজ্যের জন্যে কিছু না কিছু করছেন। ওদের কেও আঞ্চলিকতাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। আমরা তুলি। এবং তারপরে হায়দ্রাবাদের চাকরির সন্ধানে যেতে হয়। তারপর সেখানে থেকে “প্রবাসী বাঙালী” তকমা চাপিয়ে দুর্গাপুজো কমিটিতে দলাদলি করে বাঙালী অস্তিত্বের ভজন-আরাধন।

    আসলে “বুদ্ধিজীবির ভাং” বাঙালীর সবথেকে বড় রোগ। যা তাকে সম্পূর্ণ অন্ধ করেছে। ফলে আজ় সে আত্মঘাতি।

    (৫)

    বাংলাদেশেও যারা বাঙালী সত্ত্বা ছেড়ে ইসলাম বা বাংলাদেশ সত্ত্বায় আশ্রয় খুঁজছেন-তাদের জন্যেও একই কথা বলা যায়। অথচ বাঙালী এবং বাংলাদেশী সত্ত্বায় কোন সংঘর্ষ থাকাই উচিত না। কারন একটা জাতির জন্মই হল বাঙালী সত্ত্বার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু হচ্ছে-কারন বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির ফরেদাররা বাংলাদেশী সত্ত্বার সাথে কয়েক মন ওজনের ইসলামকেও জুরে দিয়েছেন রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে। তা বাঙালী হতে পারে না। যেমন আমরা এদিকে লোকজনকে কোন ধর্মীয় সম্বোধন করি না। ঈশ্বর মঙ্গল করুন-এসব কথাবার্ত্তা পশ্চিম বঙ্গে আর শুনতে পাবেন না। অথচ বাংলাদেশে খোদা হাফেজ, আল্লা হাফেজ, সেলাম আলেকুম সর্বত্র শুনবেন। টিভি থেকে মাঠে ঘাটে। এগুলো আসলে ইসলামের নামে আরবী হনুকরনের অপপ্রচেষ্ঠা। এভাবে ইসলামের আধ্যাত্মিক সত্ত্বাকেও ছোঁয়া যায় না-শুধু নিজেকে আত্মপ্রতারিত করা হয়। এটা নিছক ধর্মীয় পরিচয়ের সংকট ছাড়া কিছু নয়। অথচ কেমন আছেন? ভাল আছেন? ভাল থাকুন বলেই আরো অনেক ভাল ভাবে এই কাজ চালানো যায়। আলেকুম সেলামের বদলে “ভাল আছেন?” এরা বলেন না-আসলে সেই নিজের বাঙালী সত্ত্বায় লজ্জা পাওয়া-ইসলামের সত্ত্বায় গৌরব বোধ করে। এটা না তার নিজের জন্যে ভাল-না ভাল বাংলাদেশের জন্যে।

    (৬)

    যারা মনে করেন বিবর্তনের পথে সবই উড়ে যাবে বা আসল সমস্যা শ্রেনীদ্বন্দে-তাদের জন্যে দুটো কথা বলি। শ্রেনীর আসলেই কি কোন অস্তিত্ব আছে? আমার হাউসমেড মাসে দুবার মার্সডিজে চেপে ঘর পরিস্কার করতে আসে। আমাদের পোষাকি ভাষায় সে ‘ঝি‘। সে কি প্রলেতারিয়েত? প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই ধরনের শ্রেনী বিভাজ়ন আরো ধোঁয়াশার মধ্যে পড়বে। কারন কায়িক শ্রম, ক্রমশ যন্ত্রের দ্বারাই সাধিত হবে। কিন্তু ভাষাটা বাস্তব। কমরেডরা ভাবুন-ভাষা না শ্রেনী? কোনটার বাস্তব অস্তিত্ব বেশী? আর ভাষাত শুধু ভাষা নয়-ভাষার পেছনে থাকে আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস। প্রলেতারিয়েত যন্ত্রের সাথে বদলিয়ে বুর্জোয়া হবে-কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বাঙালী কি অবাঙালী হবে?

    যেদিক দিয়েই দেখি না কেন-আমাদের এই বাঙালী সত্ত্বা, এই নৃতাত্ত্বিক পরিচয় বাদে সমস্ত কিছু আদর্শবাদ-হিন্দুত্ব, ভারতীয়ত্ব, ইসলাম বা কমিনিউজমের চেয়ে অনেক বেশী বাস্তব। এবং দৃঢ়। একে অস্বীকার করে অন্য কিছু পাকামি করা মানে, আত্মঘাতের দিকে আরো এক পা অগ্রসর হওয়া।

    আবার স্মরন করিয়ে দিই-
    আজ যে কম্যুনিস্ট কাল সে ক্যাপিটালিস্ট হয়ে যেতে পারে। আকছার ই এমন হয়।
    প্রলেতারিয়েত ও বুর্জোয়া হয়। আস্তিক নাস্তিক হয়-নাস্তিক, ঈশ্বরে বিশ্বাস খুঁজে পায়। বাঙালীদের রাজনৈতিক বিশ্বাস বদলায়। ধর্ম বদলায়। দেশ বদলায়। আজকের ভারতীয় বাংলাদেশী পাসপোর্ট কালকে আমেরিকান পাশপোর্ট হতে পারে।

    কিন্তু একজন বাঙালী– বাঙালী সত্ত্বা বদলিয়ে অবাঙালী হয় না।কারন এই সত্ত্বা দেশ কাল আদর্শে বন্দী না। এই সত্ত্বা আমাদের প্রতিটা নিশ্বাসে। আমরা যে কোনদিনই অবাঙালী হতে পারবো না-শুধু এটুকু বুঝলেই-এইসব আটভাটের চেয়ে আমাদের জীবনে বাঙালী সত্ত্বার গুরুত্ব অনেক অনেক বেশী-এবং সেই পথেই আমাদের ভবিষ্যত-এটা হয়ত অনেক সহজ হত বোঝা। এটাকে যত আমরা অস্বীকার করব-তত নীচে নেমে যাব।
  • Robu | 11.39.***.*** | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৫703722
  • এটাও একধরণের চাপিয়ে দেওয়া।
  • Arpam | 24.195.***.*** | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৯703723
  • "আমি দেখি নাই বাঙালীদের [যারা প্রবাসী নয়] অবাঙালী বন্ধু সার্কল থাকে বলে"

    এটা হয় না কলকাতা কসমোপলিটান সিটি নয় বলে। তবে যদুপুরে আমার দক্ষিণী এবং অসমিয়া বন্ধু ছিল তো। মারওয়াড়িও।

    আইআইটি কেজিপিতে আরো বেশি হবার কথা।
  • S | 108.127.***.*** | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:০০703724
  • সিনেমার যুক্তিটা অন্য। দক্ষিনে বেশিরভাগ জনতা হিন্দি বোঝেনা, তাই হিন্দি সিনেমা দেখেনা। তাই ওদের নিজেদের সিনেমার মার্কেট ভালো। বাঙ্গলায় সেটা ভাগ হয়ে যায়। পস্চিম বঙ্গে লোকে পাকিজা দেখেও ফিদা হয়েছে (হ্যাঁ সাধারণ মফস্বলের আধা শিক্ষিত লোকজন); দক্ষীণে এটা ভাবাও যায়্না। তাছাড়া ওদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির গুনগত মান বেটার। লোকজনের আয়ও বেশি - তাই খরচও ভালো করতে পারে। আর সিনেমা দক্ষিণে লোকেদের প্রাণ - তাই অনেক রাজনৈতীক ব্যক্তিত্ব এসেছে সিনেমা থেকে। মারাঠিরা নিজেদের ব্যাপারে খুব গর্বিত হলেও মারাঠি সিনেমার অবস্থা খুবেকটা ভালো না। কন্নড় সিনেমার হালও তামিল তেলুগুদের থেকে খারাপ। ফলে সিনেমার যুক্তিটা ঠিক নয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন