এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কোমল পুষ্প

    Kuloda Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৭ আগস্ট ২০১৪ | ২৩১৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kuloda Roy | ১৭ আগস্ট ২০১৪ ২০:৪৪649507
  • কোমল পুষ্প
    কুলদা রায়
    ------------------------------------------------------------------------------------------

    গীতাদির বাড়িতেই আমরা প্রথম বেড়াতে গিয়েছিলাম। এর আগে কোথাও যে যাওয়া যায়—যাওয়ার আছে, সে ধারণাই আমাদের ছিল না। আমরা দেখেছি কুসুম-কুটিরে লোকেরা বেড়াতে আসে। আসে সেজে গুজে। একটা উচ্ছ্বাস জেগে ওঠে। কলধ্বনি শোনা যায়।
    এইভাবে আমাদের মাকে একদিন রাতের বেলা ঘুমুতে যাওয়ার কালে ছোট বোনটি শুধালো, হ্যাগো মা, আমাগো কি কেউ কোথাও নাই?
    মা তার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলল, ক্যান রে ছোটো?
    বোনটি প্রথমে কিছু বলল না। তার ঘুম আসছে। হাই তুলছে। তার মধ্যে আস্তে করে বলল, বেড়াইতে যাইতে ইচ্ছা করে।
    মা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এ শহরে আমাদের কোনো কাকা-জ্যাঠা নেই। মামাবাড়ি বেশ দূরে। তারা কালেভদ্রে হাঁট করতে আসে। এসে তাদের বোনটিকে দেখে যায়। বেড়াতে আসে না। রাস্তা থেকেই মায়ের নাম ধরে ডাক দেয়। মা তখন ছুটতে ছুটতে আসে। আঁচলে মশলা মাখা হাত মুছতে মুছতে বলে, বাড়ির মইদ্যে আইসোগো ভাইডি?
    মামারা নড়ে ওঠে। তাদের মধ্যে ব্যস্ততা জাগে। বলে, এখন আর সুমাই নাইরে বুন। বেলা বইয়া যায়। আরেকদিন আসপো। তুমি ভালো আছো তো দিদি?
    মা উত্তর দেয়, আছি ভালো। বাবা আর মা কেমন আছে?
    তারপর করমচা গাছটির কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে দেখে ভাই চলে গেছে। তাদের ছায়া মিলিয়ে যায়।
    পিসিদের মধ্যে বড় পিসির দুটো ছেলে-মেয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তারপর পিসিকে ছন্ন-স্বভাবে পেয়েছে। আনাচে কানাচে থাকে। তার থই পাওয়া যায় না। পিসেমশাই আরেকটা বিয়ে করেছেন। আর ছোটো পিসি মাঠে মাঠে ঘোরে। ধান কুড়ায়। শালুক কুড়ায়। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কবে মেঘ নামবে। কবে বৃষ্টি ঝরবে। জল বাড়বে। বাঁদা বন থেকে ছোটো পিসেমশাই ফিরে আসবে। তার নাও গড়ানোর কাজ শেষ হবে। টাকি মাছ দিয়ে শুষণি শাকের চচ্ছড়ি খাবে। বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারে না।
    আতিপাতি করে খুঁজে মা অবশেষে বলল, আছে। তোগো গীতাদিদি আছে।
    –কোন গীতাদিদি?
    —চেচানিকান্দির গীতাদিদি। বদ্যি বাড়ির গীতাদিদি।
    শুনে আমাদের হর্ষ জাগে। মেজো বোন জিজ্ঞেস করে, গীতাদি কোথায় থাকে?
    এ প্রশ্নে মা একটু চুপ করে থাকে। ছোট বোনটির শ্বাস ধীর হয়ে আসে। সে ঘুমিয়ে পড়েছে।
    তার মাথার বালিশটি মা ঠিক করে দেয়। একটু দূরে দাদা শুয়ে আছে।কান খাড়া করে জেগে আছে। দাদা কথা বলে না। নড়ে চড়ে ওঠে। মা সেদিকে তাকিয়ে বলে, শুনছি সাহাপাড়ায় থাকে। শ্রীমন্মথ বিশ্বাসের বাড়ি।
    চেচানিকান্দি খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের বাড়ির পিছনে বড় মাঠ। পাটের সময়ে পাট আর ষাইটা আউশ ধান ফলে। তারপর মাঝখানে কান ছেড়া বাড়ি। তারপর ইরিক্ষেত। এটা পার হলেই বদ্যি বাড়ি। তাদের কেউ একজন ভুত আনতে পারত কোন এককালে। দূরে সেই বদ্যি বাড়িটি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজে। জলে ভাসে। কুয়াশায় ডোবে। শীতে কাঁপে।
    এই বদ্যি বাড়ি যে গীতাদিদির বাড়ি—সেটা হয়তো আমরা জানি। হয়তো জানিই না। জানার দরকারই হয় না। এই বাড়িতে আমরা গেছি। বাড়িটা পার হয়ে গেছি। এ-রকম পার হয়ে যাই অনেক বাড়ি। কেউ কখনো বলেনি যে আমি তোদের গীতাদি হই। তোরা আয়। বেড়িয়ে যা।
    আমাদের পাড়ার শেষে গার্লস স্কুল। তারপর পাথুরে কালি বাড়ি। ডানদিকে মিয়াপাড়া। বাম দিকে বাইদাপাড়া। মাঝখানে সাহাপাড়া। সাহাদের বাড়ি। সাহাদের ঘর। সাহাদের মন্দির। সাহাদের দুর্গাপূজা হয়। আলো জ্বলে। মাইকে মানবেন্দ্র গান করেন—আমি এতো যে তোমায় ভালোভাসেছি। এ-গানটি শুনে যুবকেরা এ পাড়ায় যেতে ভালোবাসে।

    পরদিন ছোটো বোনটি একটু তিব্বত স্নো মেখে নিল মায়ের কৌটো থেকে। মেজো বোনটি লাল রিবন। দাদা বলল, যাওয়া তো যায় গীতাদির বাসায়, খালি হাতে যাই কি কইরা!
    কথা সত্যি। বেড়াতে গেলে কিছু নিয়ে যেতে হয়। কুসুমকুটিরে যারা বেড়াতে আসে তারা কিছু নিয়ে আসে। আবার যারা বেড়াতে যায় তারাও কিছু নিয়ে যায়। আমরা কি নেবো? মুখ চাওয়া-চাউয়ি করি আমরা। এই ফাঁকে ছোটো বোনটি দুটো পেয়ারা নিয়ে আসে। এ বাড়ির গাছের। তখনো পাকেনি। ডাসা। খুব ভোরে পেড়ে রেখেছিল। বিকেলে খাবে। বলল, এই দুটো নিয়া যাইতে পারি।
    মেজো বোনটির মুখ আলো হল। বলল, নেওয়া যাইতেই পারে। সে একটা পুঁটির মালা বের করল। তখনো আধ-গাঁথা। পুঁতিগুলো কুড়িয়ে পেয়েছিল বটতলায়। সুতো দিয়ে মাঝে মাঝে গাঁথে। পুরোটা গাঁথতে হলে আরো কিছু পুঁতি দরকার। তাহলে আরো বড় হবে মালাটি। গলায় পরা যাবে। আধ-গাঁথা মালাটি সবার সামনে এনে একটু ম্লান হল মেজো বোনটি। বলল, এটা গীতাদিকে আজ দেব। গীতাদি রাখবে। যখন আরো কিছু পুঁতি খুইজা পাব সেদিন গীতাদির বাসায় যাইয়া গাঁইথা দিয়া আসব।
    তারপর একটু থেকে আবার বলে, গীতাদি বুঝতি পারবে। রাগ করবে না। গীতাদি তো আমাগোই।
    দাদা এসবে খুশি নয়। কী ভেবে ঘরের মধ্যে গেল। ফিরে এলো কিছু খুদ-কুড়া চাল নিয়ে। মা চাল ঝাড়ার সময়ে জমিয়ে রাখে এই খুদ-কুড়া। আধ-ভাঙ্গা চাল। কিছু কালো কালো। কিছু কাঁকড়যুক্ত। দুপুর ঝিমিয়ে এলে এ চালগুলো মা ঝাড়ে—বাছে। শনিবারে ভোরবেলা রান্না করে খুদে ভাত। শুকনো মরিচ দিয়ে খাই। সঙ্গে একটুকু লবণ। কিছু কুঁচো পেয়াজ। ডলে ডলে খেতে ভালো লাগে।
    দাদা বলল, দাঁড়া, এগুলো বেঁইচা দিয়া আসি। তারপর কিছু কিনে আনব।
    মেজো বোনটি একটু কেঁপে উঠে বলল, বেঁইচা দিলে শনিবার ভোরে কী খাব?
    দাদা বলল, একদিন ভোরে না খাইলে কিছু হবে না। আমরা শনিবার কিছু খাবই না।
    ছোটো বোনটির মুখ কালো হয়ে যায়। তার খিদে পায় ভোর ভোর। সেদিকে তাকিয়ে মেজো বোনটি বলল, ঘুল্লি বাড়ি থেইকা ডুমুর পাইড়া আনবো। তোরে দই বানায় দেবো।
    ছোটো বোনটি এবার খুশি হয়। বলে, দইয়ের মধ্যে চিনি দিও দিদি।
    মেজো বোনটি বলে। চিনি নয়। মুছি পাটালীর গুড় দেব।
    সেদিন দুপুর। ঠিক দুপুরেও নয়। আরো একটু আগে। আমরা কজন হাঁটে হাঁটতে সাহা পাড়ায় রওনা করেছি। বহুদিন পরে চুলে একটু তেল মাখা হয়েছে। চিরুণি পড়েছে। খালি পা। কিন্তু ধোয়ামোছা। কাদার দাগ নেই। দাদাই খুঁত খুঁত করছিল। তার একটু সুগন্ধ হলে ভালো হত। যেতে যেতে বলল, পরে কখনো সুগন্ধি পাওয়া যাবে। তখন সেটা মেখেই গীতাদির বাড়ি যেতে পারবে। আর কোনো খুঁত খুঁত থাকবে না। আজ এভাবে যাওয়া যাক।
    দাদার পকেটের মধ্যে এক প্যাকেট গ্লুকোজ বিস্কুট। লাল কাগজে মোড়া। গায়ে এক থোকা আঙুরের ছবি। গীতাদির জন্য কেনা হয়েছে। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি। মেজো বোনটি বলে, সাবধানে রাখিস। পইড়া যেন না যায়। পইড়া গেলে বিস্কুট গুড়া গুড়া হইয়া যাবে।
    ছোটো বোনটি একবার দাদার খুব কাছে গিয়ে বলল, বিস্কুট।
    তার দিকে তাকিয়ে মেজো বোনটি বলে, গীতাদির হাতে দেব। গীতা নিশ্চয়ই খুশি হবে। প্যাকেট খুইলা আমাগোরেও দেবে।
    ছোটো বোনটি একটু হাসে। বলে, আমারে দুইখান। দুইখান চাইয়া নেব।
    দাদা বলে, চল চল। দেরী করিস না।

    সাহাপাড়ায় যে বাড়িটি সাহাদের নয় লোকে সেই বাড়িটিকেই মন্মথ বিশ্বাসের বাড়ি বলে ডাকে। বাড়িটিতে লম্বা দোচালা টিনের ঘর। ছোটো ছোটো জানালা। কোনটিতে পর্দা ওড়ে। কোনোটি ফাঁকা। বাইরে থেকে ভেতরটা দেখে যায়। এর মধ্যে একটি জানালাটি আধখোলা, আরেকটি পাল্লা বন্ধ। পাল্লাটির নিচে কাঠ কয়লা দিয়ে লেখা—গীতা আউর সীতা। হেমামালিনী মেরা জান। লেখা দেখে দাদাই বলল, এটা গীতাদির বাড়ি। এই জানালাটিই গীতাদির বাড়ি।
    এই জানালায় টোকা দিতে হবে। টোকা দেবে কিনা দোনা মোনা করে দাদা। মাথার উপরে রোদ চড়ছে। মেজো বোনটি মাথা নাড়ে। বলে, টোকা দেওয়ার দরকার নাই। গীতাদি শুনতি পাবে না।
    হয়তো মনে করবে বাতাসে নড়ছে। হয়তো মনে করবে গাছ থেকে একটা মরা ডাল পড়েছে। হয়তো মনে করবে ব্যাঙ্ক পাড়ার অন্ধ পাগল পাড়া পার হচ্ছে। পার হতে হতে লাঠির শব্দ করে যাচ্ছে। হয়তো কোনো রোয়া ওঠা ক্লান্ত কুকুর জানালার নিচে এসে শুয়ে পড়েছে। তার ঠেস দেওয়ার শব্দ হয়েছে। হয়তো গীতা ঘরেই নেই। হয়তো রান্না ঘরে। ডালে ফোঁড়ন দিচ্ছে। ভাতের হাড়িতে টগবগ শব্দ হচ্ছে। সেই শব্দে আমাদের টোকা শুনতে পাবে না। তার চেয়ে ডাক দেওয়া ভালো।
    আমরা তাকিয়ে আছি—দাদা হয়তো ডাক দেবে। দাদা তো আমাদের সবার চেয়ে বড়। দাদা ছাড়া আর কে ডাক দিতে পারে! দাদা ছাড়া এই সাহস আর কার থাকতে পারে! কিন্তু দাদা মেজো বোনটিকে ইশারা করে বলল, তুই ডাক দে।
    মেজো বোনটি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রাস্তা দিয়ে কারা কারা যায়। তারা যেতে যেতে নিজেদের মধ্যে কথা বলে। তারা হয়তো আমাদের দেখতে পায়। হয়তো দেখতে পায় না। কিন্তু আমরা দেখতে পাই। মেজো বোনটি তাদের দেখে ডাক দিতে ভুলে যায়। তার ভয় ভয় করে। সে তাকিয়ে থাকে বোনটির দিকে। ছোটো বোনটি তাকিয়ে আছে দাদার দিকে। দাদার দিকে নয়। তার পকেটের দিকে। পকেটের দিকেও নয়। পকেটের মধ্যে থেকে উঁকি দেওয়া গ্লুকোজ বিস্কুটের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে বলে, আমি ডাক দেবো? আমি ডাকবো?
    দাদা ফিসফিস করে বলে, ডাক। তুই ডাক।
    ছোটো বোনটি দাদার গা ঘেষে ডেকে উঠল, গীতাদি। গীতাদি। আমরা বেড়াইতি আইছি।
    এভাবে ছোট বোনটি ডাকল রিনরিনে গলায়। দুবার নয়। চারবার। চারবারও নয়। ছয়বার। আটবার ডেকেও যখন গীতাদি জানালা খুললো না—তখনো বোনটি ডেকে চললো।
    তার ডাক শুনে একটা রোয়া তোলা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। বাইদ্যা পট্টি থেকে কে একজন মুন্সীগঞ্জের ফেরীওয়ালা হেকে উঠলো, চাই ছিট কাপড়। একজন পাগলের ঠা ঠা করে হাসির শব্দ শোনা গেল বহুদূরে। আর একটা পাতা সড় সড় করে ঝরে পড়ল—শিরিষের, অথবা আমের—জামের।

    আমরা ভয় পাই। আমরা তাকিয়ে থাকি। নড়ি না। বুঝতে পারি জানালাটি খুলবে না। গীতাদি উঁকি দেবে না। হেসে বলবে না, আয়।
    ছোটো বোনটির মুখ কালো হবে। মেজো বোনটি ব্যাথা পাবে। দাদা মাথা নিচু করে ফেলবে। আমরা ফিরে যাব। যাবই যখন তখন দুটো কাক ওড়ে মাথার উপরে। কা কা করে ডাকে। কে একজন বুড়ি খনখনে গলায় কোথাও বলে চলেছে—হাউস দেইখা আর বাঁচি না। তিনকালে যাইয়া এককালে ঠেকছি। হাউস দেইখা আর বাঁচি না।
    আর তখন গীতাদির আধখোলা জানালাটি বন্ধ হয়ে যায়। ছোটো বোনটি হাহাকার করে ওঠে। বলে, গীতাদি আমরা। আমরা আইছি। বেড়াইতে আইছি।
    তখন আবার বুড়িটার গলা আরো খনখনে গলা শোনা যায়। আর জানালাটি খুলে যায়। ছোটো বোনটি এবার হেসে ওঠে। জানালাটির খুব কাছে গিয়ে আরো জোরে বলে, গীতাদি আমরা। বেড়াইতি আইছি।
    জানালার ওপাশে পর্দা। সামান্য ফাঁক করে একটা মুখ দেখা যায়। পুরোটা নয়। চোখ,নাক আর ঠোঁট। ঠোঁটে আধা লিপিস্টিক–পুরোটা দেওয়া হয়নি। হয়তো লিপিস্টিক দিচ্ছিল। দিতে দিতে আমাদের ডাকে আয়নার সামনে থেকে উঠে এসেছে।
    আমরা এই আধখানা মুখটিকে চিনতে পারি না। এই আমাদের গীতাদি কিনা বুঝতে পারিনা। আসলে আমরা গীতাদিকে কখনো দেখিনি। দেখলেও মনে রাখিনি। মনে রাখার দরকারও হওয়া না। তবু জানালার মুখটিকে দেখে মনে হল—কখনো কখনো চেনা মুখটিকে চিনে রাখা দরকার।
    মুখটি জানালার ভেতর থেকে আমাদেরকে চিনতে চেষ্টা করছে। সময় নিচ্ছে। মুখটা গম্ভীর। কিন্তু হঠাৎ করে জলের মত ছলছল করে উঠল। চোখদুটো উজ্জ্বল হল। আমাদেরকে অবশেষে চিনতে পেরেছে। আমাদের চেহারা সবার মত। না চিনে উপায় নেই। গীতাদি বলল, কী কাণ্ড। তোরা আইছিস। খুব ভাল হইছে। আমার এখানে কেউ আসে না। তোরা আইলি।
    আমরা কাঁচা এলাচের ঘ্রাণ পাই। গীতাদির ঠোঁট লাল। পান খেয়েছে এলাচের দানা দিয়ে। কথা বলতে বলতে চুলের বেণী খোলে। এখন খোপা বাঁধবে। এখানে ওখানে ক্লিপ খুঁজবে। ঘরের মধ্যে যায়।
    হাওয়ায় পর্দা উড়লে দেখা যায় বেড়ার গায়ে ছোটো একটা হরদেও এন্ড কোম্পানীর আয়না। সেখানে বার কয়েক মুখ দেখল। লিপিস্টিকটা পুরোটা ঠোঁটে টেনে দিল। আবার ফিরে এলো জানালার কাছে।
    মেজো বোনটি এগিয়ে যায়। ছোটোকে ইশারা করে বলে, রেডি হ। এবার দরোজা খুলবে গীতাদি। আমাদেরকে ঘরে নেবে। ইশারা করে আধা গাথা মালাটি বাম হাত থেকে ডান হাতের মুঠোর মধ্যে চালান করে। দাদার দিকে চায়। দাদা মাথা নাড়ে। এই নাড়ার মধ্যেই দাদা আবার জানালার নিচে কালো কাঠ কয়লার লেখাটির দিকে তাকায়। লেখাটি অনেক আগে করা। গীতা আউর সীতা। হেমামালিনী মেরা যান। লেখাটি অস্পষ্ট হয়ে আসছে। যিনি লিখেছিলেন তার হয়তো এখন চুল পেকে গেছে। দাঁত নড়ে গেছে। কিন্তু লেখাটি আছে। আরো কিছুকাল থাকবে। থাকুক। দাদা বিড় বিড় করে কিছু বলে। শোনা যায় না।
    গীতাদি দরজার কাছে যায়। দাদা কিছুটা চঞ্চল হয়। পকেটের মধ্যে হাত রাখে। আবার বের করে। আবার হাত রাখে। ছোটো করে ছোটো বোনটিকে ডাক দেয়, ছোটো।
    ছোটো বোনটি গীতাদির বন্ধ দরোজার সামনে চলে গেছে। এবার খুট করে দরোজা খোলার শব্দ হবে। আমাদের কান খাড়া হয়ে ওঠে।
    কিন্তু কোনো শব্দ হয় না। দরোজা খোলে না। আমরা বাইরে ঘেমে উঠি। গীতাদি আবার আয়নার কাছে যায়। কাজলদানি হাতে নেয়। জানালার কাছে ফিরে আসে। বলে, আজ তোগো গোপাল দাদা আসবে।

    কোন গোপাল দাদা আমরা বুঝতে পারি না। গীতাদির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। এরপর হয়তো গীতাদি গোপালদাদা কে, কোথা থেকে আসবে, কেনো আসবে এসব কথাই খুলে বলবে। বলতে বলতে বন্ধ দরোজাটি খুলে দেবে। এবার আমাদের উত্তেজনা কমে আসে। ঘরে গেলে আমরা আরাম করে বসে নেব। কিছুক্ষণ জড়িয়ে নেব। আমাদের খিদে বোধও জাগে এ সময়। দাদা খুক খুক করে একটু কাশে। দরোজার দিকে এগিয়ে যায়।
    গীতাদি দরজা খোলার আগে বলে ওঠে,তোরা তো ঘরের ভেতরে আসবি?
    আমরা মাথা নাড়ি। বেড়াতে গেলে ভেতরে যেতে হয়। আমরা ঘরের ভেতরে যেতে চাই। ভেতরের খাটে পা ঝুলিয়ে বসতে চাই।
    শুনে গীতা গীতাদি হাসে। হাসতেই হাসতেই বলে, আজ থাক। কাল আসিস। তোগো গোপালদার জন্য আমি রেডি হচ্ছি।
    তারপর বলে, বুঝলি–কাল নয়। পরশু আসিস। আসিস কিন্তু।
    এবার জানালা বন্ধ করে দেবে বুঝতে পেরে ছোটো বোনটি দাদার পকেট থেকে বিস্কুটের প্যাকেটটা নিয়ে আসে। জানালা গলিয়ে এগিয়ে দেয়। গীতাদি অবাক হয়। বলে, কী, এইটা কী রে?
    ছোটো বোনটি আর কিছু বলার আগেই মেজো বোনটি বলে, বিস্কুট। তোমার জন্য নিয়া আইছি।
    গীতাদি এবার জানালাটি পুরোটা খোলে। তাকে পরীর মতো লাগে। হাওয়ার চুল ওড়ে। থুতনির নিচে একটি তিল আছে।
    তবু জানালার কাছি গীতাদি দাঁড়িয়ে থাকে। দরজার কাছে যায় না। বিস্কুটের প্যাকেটটি হাতে নিয়ে গীতাদি বলে, তোরা কী ভালো। বলে হেসে ওঠে। বুকে চেপে ধরে। ভেতরে মুখটি হারিয়ে যায়। পর্দা নামে। পরীর মতো মুখটি মুছে যায়।
    ভেতর থেকে গীতাদির গান শোনা যায়। মাঝে মাঝে পুরোটা শোনা যায়। মাঝে শোনা যায় না। গীতাদি গাইছে–
    যাওরে ভ্রমর উড়িয়া
    রাধার বন্ধুরে কইও বুঝাইয়া
    কোমল পুষ্প ফুটিয়াছে গ্রীষ্ম গেল চলিয়া
    আইলা নারে প্রাণের বন্ধু
    বিরহী যায় কাঁদিয়া—
    গানটি পুরোটা শুনতে মেজো বোনটি জানালার গায়ে কান চেয়ে ধরে।
    জানালার পাল্লাটি বন্ধ হয়ে যায়। ছোটো বোনটি কেঁপে ওঠে। দাদার দিকে তাকাতে গিয়ে দেখতে পায়—দাদা কাছে নেই। রাস্তার ওপাশে দূরে সরে আছে।
    সাহাপাড়া অকস্মাৎ ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কেউ নেই। রোদ মাথায় উপরে চড়ে বসেছে। আমরা এদিক ওদিক তাকাই। খনখনে গলার বুড়িটিকে খোঁজ করার চেষ্টা করি। নেই। তার খনখনে গলাটা শোনা যায় না। কেউ বলছে না, হাউস দেইখা আর বাঁচি না। তিনকালে যাইয়া এককালে ঠেকছি। হাউস দেইখা আর বাঁচি না।

    বাড়িতে তখন মা খোলা উঠোনের হেলেঞ্চা শাক রান্না করছে। টাকি মাছ দিয়ে। গোটা গোটা রসুনের ঘ্রাণ ভাসছে চরাচরে। আমাদের দেখে হাসে। বলে, তোরা বেড়াইয়া আইলি?
    দাদা কিছু বলে না। মেজো বোনটি একটা থাল নিয়ে বসে। আর ছোটো বোনটি পিঁড়ি পেতে বসেছে। মাথা নিচু করে বলে, হ মা।
    মা রায়েন্দা চালের ভাত বেড়ে দেয়। আর তার সঙ্গে কঁচি ঢেঁড়শ সিদ্ধ। বলে, কী দিয়া খাইলি?
    দাদা কথা বলে না। কাঁচা মরিচ লবণ মিশিয়ে ডলে। এরপর দুটো লেবু পাতা নেবে। ছোটো বোনটি কী বলতে যাবে তার আগে মেজো বোনটি বলে, মেলা কিছু।
    মা চুলাটি নিভিয়ে দেয়। আঁচলে মুখ মোছে। ছোটো বোনকে বলে, ভালো করে মাখাইয়া নে। এরপরে টাকি মাছের তরকারি খাবি। জিজ্ঞেস করে, ভাত দিছিলো?
    –দিছিলো। লক্ষ্মীদিঘা চালের ভাত।
    –মাছ দিছিল?
    –রায়েক মাছের ঝোল।
    –মাংস দিছিল?
    –রাওয়া মোরগের মাংস।
    শুনে মা হাসে। বলে, গীতার রান্না ভালো। ওর মা সাত গায়ের নেমতন্ন রান্ধে। আমিও যাব একদিন গীতার বাড়ি। খাইয়া আসব।
    ছোটো বোনটি টাকি মাছের কাঁটা বাছতে বাছতে ভুল করে বলে—বিস্কুট।

    সেদিন রাতে চাঁদ ওঠে দেরী করে। তবে ওঠে মেঘের মধ্য থেকে। ফুটফুট আলো ছাড়ে। মা ঘুমিয়ে পড়েছে। ছোটো বোনটি হা করে আছে। একটু। চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপে। স্বপ্ন দেখছে।
    বিছানায় নেই দাদা। বাইরে গেছে। দরোজা খোলা । মেজো বোনটি তার যাওয়াটি দেখতে পেয়েছে। কিছুক্ষণ পরে সেও উঠে পড়ে। বিছানায় মাথা নিচু করে বসে থাকে। তারপর খোলা দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।
    উঠোনের একপাশে হাসনুহেনা ফুটেছে। দাদা সেখানে বসে আছে। দেখে বলে, তোরা ঘুমাসনি?
    মেজো বোনটি মাথা নাড়ে। বলে, ঘুম আইতাছে না।
    আমরা চুপ করে বসে থাকি। টিনের চালে শিশির পড়ার শব্দ শোনা যায়।

    মেজো বোনটি আস্তে করে গাইতে শুরু করে--
    যাওরে ভ্রমর উড়িয়া
    রাধার বন্ধুরে কইও বুঝাইয়া
    কোমল পুষ্প ফুটিয়াছে গ্রীষ্ম গেল চলিয়া
    আইলা নারে প্রাণের বন্ধু
    বিরহী যায় কাঁদিয়া—

    পুরোটা গায় না। গাইতে পারে না। দাদা বলে, গা না। পুরোটা গা।
    মেজো বোনটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই মুখটাই গাইতে থাকে বার কয়েক। তারপর মুখ কালো করে থেমে যায়। জানায়, পুরোটা সে জানে না। সেদিন গীতাদির গলায় এইটুকুই শুনতে পেয়েছিল। এইটুকুই সে নিজের গলায় তুলে নিয়েছে। বাকিটুকু শুনতে পারেনি। আরেকদিন গীতাদির বাড়ি বেড়াতে যাবে। পুরো গানটা শুনে আসবে। পুরোটুকু শুনতে পারলে সে নিজে পুরোটা গাইতে পারবে।
    দাদা একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল বলে গীতাদির গাওয়া গানটি সেদিন শুনতে পায়নি। আজ মেজো বোনটির গলায় শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল। পুরোটা শোনার তৃষ্ণা বেড়ে গেল। মনে হল এক্ষুণি আবার সাহা পাড়ায় ছুটে যায়। গীতাদিকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে আসে। এই উঠোনে ছাতিম তলার নিচে বসতে পিড়ি দেয়। বলে, গীতাদি কোমল পুষ্পর গানটি পুরোটা শোনাও।
    গীতাদি একটু মুখ আলো করে গানটি ধরবে। সঙ্গে মেজো বোনটি। ঘর থেকে বাবা উঠে আসবে। মা দুটো মুড়ি নিয়ে আসবে। ছোটো বোনটি ঘুম ঘুম মাখা চোখে অপেক্ষা করবে কখন গীতাদি গান শেষ করবে। তার দিকে বাড়িয়ে দেবে গ্লুকোজ বিস্কুটের প্যাকেটটি। বলবে, আমি আসতি কইনি বলে তোরা বাড়ির মইদ্যে ঢুকলি ক্যান? তোরা ফিরে যাবি ক্যান?

    গান শেষ হওয়ার আগে কী মনে করে দাদা বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মেজো বোনটির দিকে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করে, ওরে মেজো, আমরা কি সত্যি সত্যি আজ গীতাদির বাড়ি গেছিলাম?
    মেজো বোনটির গান থেকে যায়। হাওয়া এসে চুলে লাগে। তিরতির করে কাঁপে। দূরে রাতচরা শিয়ালের ডাক শোনা যায়। মেজো বোনটির গা শিরশির করে ওঠে। বলে, আমরা সাহাপাড়ায় মন্মথ বিশ্বাসের বাড়ি গেছিলাম। ওখানে গীতাদি থাকে। আমরা সবাই আজ গীতাদির বাড়ি বেড়াইতে গেছিলাম।
    –ওটা কি সত্যি কি গীতাদির বাড়ি ছিল?
    –মা যে কইছিল, সাহাপাড়ায় গীতাদি থাকে!
    –মা কি কইছে সাহাপাড়ায় কোন বাড়িটা গীতাদির বাড়ি?

    এর কোনো উত্তর নেই। মাকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো এর ঠিক উত্তরটি পাওয়া যাবে। কিন্তু মা এখন ঘুমিয়ে আছে। বাবা ঘুমিয়ে আছে। ছোটো বোনটিও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। এখন মাকে ডাকা যাবে না। কাল হয়তো বলা যাবে না। হয়তো মনে থাকবে না। মনে থাকলেও আর দরকার হবে না। অন্য কোনো কাজে ব্যস্থ হয়ে পড়বে।
    মেজো বোনটির চোখ ভরে আসে জলে। তার অস্থির লাগে। ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
    দাদা বলে, মা এই কথা কয় নাই। মা তো জানেই না গীতাদির বাড়ি কোথায়। হয়তো কোনোদিন কারো কাছ থেকে শোনেনি। বানায় কইছে।
    –মা বানায় কথা কয় না। ফুঁসে ওঠে মেজো বোনটি।
    কিন্তু একথাটি দাদাকে বলে না। মাথা নিচু করে নীরবে বসে থাকে। তার পা ভিজে যায় ফোঁটা ফোঁটা জলে।
    আজ বাবার সঙ্গে গীতাদির মামার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি বলেছেন—গীতা এখানে নেই। গত চার মাস আগে ফরিদপুর গেছে। রেল ইস্টিশানের কাছে কমলাপুরে আছে। অনাথের আচারের দোকানটির পাশে তার শ্বশুর বাড়ি। এখন তাদের সঙ্গে মিটমাট হয়ে গেছে সব ঝামেলা। তারা গীতাদিকে মেনে নিয়ে নিয়েছে। দাদা জানে। বাবার কাছে শুনেছে।
    গীতাদিকে দেখতে ফরিদপুর গিয়েছিল তার মামা। দিন তিনেক ছিল। আজ ফিরেছে। ছেলেপুলে হওয়ার পরে গীতাদিকে তিনি ফরিদপুর থেকে নিয়ে আসবেন।
    দাদা বলে, বুঝলি মেজো,সাহাপাড়ার গীতাদি আমাগো গীতাদি নয়। উনি অন্য কেউ। আমাগো অচেনা মানুষ। আমরা আজ সাহাপাড়ায় গীতাদির বাড়ি বেড়াইতে যাই নাই।
    এই কথাটি বলার সময় মেজো বোনটি ছুটে এসে দাদার মুখ চেপে ধরে। বলে, না। না। গীতাদি এখানে এ শহরেই আছে। সাহাপাড়ায় মন্মথ বিশ্বাসের বাড়িতেই থাকে। আমরা গীতাদির বাড়ি আজ বেড়াইতে গেছিলাম।
    আমরা আবার বেড়াতে যাব। যাবো গীতাদির বাড়ি। সাং সাহাপাড়া। কেয়ার অফ মন্মথ বিশ্বাস।
  • | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৮:২৪649511
  • অনেকদিন বাদে লিখলেন
  • | 183.17.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৫৩649512
  • মুগ্ধ!
  • rivu | 140.203.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৯:০১649513
  • এত ভালো লেখেন দাদা! বড় মায়াভরা লেখা।
  • i | 147.157.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৯:৩৪649514
  • কী অসম্ভব মায়াময় ডিটেইল্স -পরতে পরতে মায়া-লাল রিবনে, তিব্বত স্নোতে, থুতনির পেয়ারায়, বিস্কুটের গুঁড়োয় মায়া
    শুধু মায়া-
    এজন্মে তো হল না, পরের জন্মে যেন এমন লেখা কলমে ধরি।
  • i | 147.157.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৯:৫৭649515
  • কী অসম্ভব মায়াময় ডিটেইল্স -পরতে পরতে মায়া-লাল রিবনে, তিব্বত স্নোতে, থুতনির তিলে, পেয়ারায়, বিস্কুটের গুঁড়োয় মায়া
    শুধু মায়া-
    এজন্মে তো হল না, পরের জন্মে যেন এমন লেখা কলমে ধরি।
  • শিবাংশু | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৩:৪৪649516
  • শব্দ না ছবি, আলাদা করা যায়না। মায়াবী, মোহন,মেঘনীলিমার জলছবি...
  • de | 190.149.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১৪:০০649517
  • অপূর্ব!!
  • nina | 78.37.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১৪ ০৪:২২649518
  • কেমন যেন মেঘের ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে চলে নীল আকাশের গায়ে------
  • kk | 117.3.***.*** | ১৯ আগস্ট ২০১৪ ২১:৩৫649508
  • কুর্নিশ নেবেন,প্রিয় লেখক!
  • P | 102.233.***.*** | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ০১:১১649509
  • কি অদ্ভুত মায়াময় লেখা।
  • kumu | 52.104.***.*** | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৯:৫৯649510
  • কী অপরূপ।ঐ বিস্কুট বলা মেয়েটাকে ভোলা যায় না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন