এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ফরহাদ মজহারের গরলপাঠ

    Kulada Roy
    অন্যান্য | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ | ১৩৮৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kulada Roy | 74.72.***.*** | ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:১১506097
  • লিখেছেন কুলদা রায়

    গুরুচণ্ডালীতে সুশান্ত করের মন্তব্যে একটা লাইন চোখে পড়ল। তিনি লিখেছেন--

    ''বাংলাদেশে নকশাল রাজনীতির ফসল ফারহাদ মাজহার এতোটাই শেকড় সন্ধানী হয়েছেন যে অনেকেই পুরোনো চিন্তার থেকে তাঁকে মৌলবাদী বলছেন।''

    এই লাইনটি পড়ে আমার কটি প্রশ্ন মনে এলো।

    . এখানে ফরহাদ মজহারকে নকশাল আন্দোলনের ফসল বলার কারণটি কি? এ বিষয়ে কী তথ্য ব্যবহার করে তাকে ফসল বলছেন? ফসল কি তিনি ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করেছেন? যেমন ধান ফসল--আমরা চাল করে খেয়ে বাঁচি। আবার ধুতরার ফলটি একটি ফসল। কিন্তু সেটা খেয়ে মরি। এখানে কি অর্থে ফরহাদ মজহার ফসল?

    . ফরহাদ মজহার কিসের শেকড় সন্ধানী হয়েছেন? কোন শেকড়? আর কোন ধরনের সন্ধান?

    . অনেকের পুরনো চিন্তাটি বলতে তিনি কোন চিন্তাটাকে বলছেন? এই অনেকেইবা কারা?

    আশা করছি সুশান্ত কর প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন। কারণ আপাত নীরিহ হলেও এই একটিমাত্র লাইন কিন্তু অনেক ইঙ্গিত বহন করছে। নিশ্চয়ই দাদার কাছে উত্তর আছে।
    ফরহাদকে বুঝতে হলে তার চিন্তা এবং ত্‌ৎপরতারকে বুঝতে হবে। চিন্তার মধ্যে রয়েছে ট্যুইস্ট। আর ত্‌ৎপরতার মধ্যে মৌলবাদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান। একটু দেখা যাক--
    --------------------------------------------------------

    ঘটনাটি ২০০১ সালের। বিএনপি-জোট নির্বাচনে জেতার পরে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়। তখন অসংখ্যা লোকজনকে হত্যা করা হয়। ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।অএক সঙ্গে সম্পদ লুটপাট করা হয়েছে। নারীরা ধর্ষিত হয়েছে। শিশু কিংবা বয়স্ক মহিলারাও রেহাই পায় নি। কেবল সংখ্যালঘুরাই নয়—একই সঙ্গে বিএনপি-জামাতরে বিরোধী পক্ষের লোকজনও এদের নির্যাতনের শিকার হয়। এ ঘটনার সত্যতাও ত্‌ৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন বলেছেন। দৌড়ে এসেছিলেন নিউ ইয়র্কথেকে। বলতে বাধ্য হয়েছিলেন—সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে। তার মানে ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। নির্যাতনের ঘটনাগুলো ভুয়া নয়—সত্যি ছিল। এটা ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি খারাপ খবর।

    এর পরপরই ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪০৯ বঙ্গাব্দে শ্যামলী থেকে দৈনিক প্রথম আলোতে ফরহাদ মজহার সরল পাঠ নামে একটি কলামে লেখেন—‘বাংলাদেশের জন্য একটি খারাপ খবর’. লেখাটির সঙ্গে ফরহাদ মজহারের একটি ছোট ছবিও ছাপা হয়েছে। চোখে প্রখর চশমা। মুখে দাড়ি নেই—ক্লিন শেভড। হাসি ও চিন্তার একটি উদ্ভাসন আছেন ছবিটিতে। হেলা ফেলা নয়। কিন্তু কোন হাসি? কোন চিন্তা?

    ভাবান্দোলন নামে একটি বইয়ের ফ্লাপে লেখা হয়েছে—ফরহাদ মজহার এখন জীবন্ত কিংবদন্তি। জীবন-যাপন থেকে শুরু করে কর্ম ও কাব্য, সঙ্গীত ও নাটক, সবোর্পরি চিন্তাভাবনা ও দর্শনচর্চায় তিনি অগ্রদূত। নীরবধ্যানে কর্মনিবিষ্টতার মধ্যে স্বদেশের মূলধারার কৃষি, শিল্প, শিল্প, প্রকৃতি ও রাজনীতির সঙ্গে ভাবান্দোলনের সম্পর্ক নিরূপণে রচনা করেছেন একটি দার্শনিক প্রবন্ধ। তার ভেতর দিয়ে তিনিই প্রথম বাংলাদেশের ভাব বা দর্শনচর্চার ইতিহাসকে গ্রন্থিত করলেন। পড়াশুনা করেছেন—ঢাকা ও মার্কিন দেশে—ফার্মেসী বিষয়ে। গোটা কয়েক এনজিওর মালিক। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা নামে দোকানপাটেরও অধিশ্বর। মজার বিষয় হলো –এইসব দোকানপাটের আয় করবিহীন বলেই জানা যায়। বোঝা যায় এনজিও ব্যবসার অনেক সুবিধে। জয় হোক এনজিওর গরীব গুর্বো মানুষদের নয়—তাদের অধিশ্বরদের।অগরীবদের নিয়ে কে কবে সত্যিকারের ভেবেছে?

    ফরহাদ মজহার বিএনপি-জামাত জোটের ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপর অই হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন-নিপীড়ণ সম্পর্কে লিখেছেন, গুজরাটের মত মুসলমানদের পুড়িয়ে মারার মত উৎসব করে (এই) ঘটনাগুলো ঘটানো হয় নি।‘ তাহলে ঠাণ্ডা মাথায় নীরবে ধ্যান করার মত হত্যা করা হয়েছে! এই প্রশ্নে সঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন আসে—গুজরাট ভারতের অন্তর্ভূক্ত। সেখানে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। সব্য মানুষ এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছে সারা বিশ্বব্যাপী।অকিন্তু ফরহাদ মজহার সে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা দিয়ে বিএনপি-জামাত জোটের নেতৃত্বে ঘটানো বাংলাদেশের হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করার চেষ্টা করছেন। তার ভাবনার স্টাইল হল, ভারতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে—বাংলাদেশেও ঘটতে পারে। এতে সমস্যা কি? টিট ফর ট্যাট। বিস্ময়কর দার্শনিক মীমাংসাই বটে।অহত্যাকাণ্ড তো হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের ছোট বড়--উৎসব /অনুৎসব থাকতে হবে--এটা কোন সভ্যতা? ভারতে মুসলমান নির্যাতন হয়েছে। আমরা তার নিন্দা জানাই। তার মানে এই নয় যে, এর প্রতিশোধ হিসাবে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন কামনা করি।অবা বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন হয়েছে—নেপালে মুসলিম নির্যাতনের জন্য উস্কানী দেব! এটা সভ্যতা নয়। আমাদের বিবেক পচে যায় নি। ভারতে মুসলমান নির্যাতন হলে সেটার নিন্দা জানাই—এবং বাংলাদেশেসহ সকল দেশের ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়গত সকলের নিরাপত্তা বিধানে সোচ্চার হই।অকিন্তু ফরহাদ মজহার তা করেন না। তিনি হত্যাকাণ্ডের পিছনের একটি অজুহাত খাড়া করেছেন—হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করার ধান্ধা করেছেন। একারণেই তিনি বোধ হয় জীবন্ত কিংবদন্তি।অজীবন্ত কিংবদন্তিরা কিনা বলতে পারেন ! সাধু।

    এই হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনা-- নিপীড়নের মত ঘটনা ছিল ফরহাদ মজহারের জন্য একটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ মাত্র। তিনি লিখেছেন, তাছাড়া সন্দেহ দেখা গেছে—হিন্দুদের উপর এই অত্যাচার নির্যাতন আদৌ সাম্প্রদায়িক হিংসা নাকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, বিএনপিপন্থীরা ক্ষমতায় এসে পুরনো হিংসার ঝাল মিটিয়ে নিয়েছেন। যেসব এলাকায় হিন্দু এখনো আওয়ামী লীগের ভোটার সেসব এলাকায় এ ঘটনা হয়েছে। অনেক এলাকা থেকে যেভাবে ঘটনা শোনা গিয়েছে তাতে মনে হয়, দু’এক জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে আওয়ামীপন্থীরা নিজেরাই এলাকার সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে বিএনপি’র ঘাড়ে চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে।

    ফরহাদ মজহার মজহারের এই বক্তব্য থেকে কয়েকটি শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, বিএনপিপন্থীরা, যেভাবে ঘটনা শোনা যায়, বিএনপির ঘাড়ে, ঝাল মেটানো ইত্যাদি। ফরহাদ মজহার কবিতা লেখেন। গৌতম চৌধুরী নামক পশ্চিম বঙ্গীয় কবিও মনে করেন তিনি ঐশী ক্ষমতাসম্পন্ন কবি। তবে চঞ্চল আশরাফ নামে এক অর্বাচিন ষাট দশকের কবিতালোচনায় তার নাম নেয় নাই। এজন্য এ যুগের হয়ে ওঠা কবি ও পণ্ডিত সোহেল হাসান গালিব গোস্বা করে বলেছেন চঞ্চল লোকটা আকাট মুর্খু। কবিতা বোঝে না। বুঝলে ষাট দশকের সেরা কবি ফরহাদ মজহারকে কি বাদ দিতে পারে? কানাডার কানা গল্পকার বিশিষ্ট সৃজনশীল গবেষক সাদ কামালী ষাট দশক নয়—ফরহাদ মজহারকে বলেছেন এ সময়ের বিশিষ্ট কবি। কবিদের শব্দ নির্মাণ অতি তাৎপর্যপূর্ণ। ফরহাদ মজহারের এই নির্মিত শব্দগুলোর সরল পাঠ নিলে বোঝা যায়, অই সংখ্যালঘু কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ছিল না। ওটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হলেও হতে পারে। প্রতিহিংসাবশত: বিএনপিপন্থীরা তাদের উপর ঝাল মিটিয়েছে।অঝাল মিটানো? ননদ ভাবীর উপর বকে একটু ঝাল মিটিয়েছে। ছোট্ট ঘটনা। কাদের উপর? হিন্দুদের উপর। কোন হিন্দু? আওয়ামী ভোটার হিন্দু। এই বাক্যে ‘এখনো’ নামে একটি শব্দের প্রয়োগ বিস্ময়কর রকম কৌতুহল উদ্রেক করে। তার ধারণা হিন্দুরা ২০০১ সালেও কি করে আওয়ামী লীগের ভোটার থাকে? তাদের তো সেটা হওয়ার কথা নয়। খুব বেশী হলে গয়েশ্বরবাবু হতে পারেন—বিএনপির গয়েশ্বর। বাংলাদেশে কি বিএনপির ভোটার, আওয়ামী লীগের ভোটার, জাতীয় পার্টির ভোটার বলে কিছু আছে? হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত যারা বাংলাদেশে আছেন তারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ভোটার তারা—তারা কেন হিন্দু ভোটার হবেন? তারা কেন আওয়ামী লীগের ভোটার হবেন? তারা কেন বিএনপি’র ভোটার হবেন? সংবিধানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রীস্টান ,বৌদ্ধ বলে কোনো শব্দ নেই—আওয়ামী লীগ, বিএনপির ভোটার বলেও কিছু উল্লেখ নেই। বলা আছে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে কারও উপর কোনো বৈষম্য করা যাবে না। রাষ্ট্রের চোখে সকলে সমান। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সকলের জন্য সমান আইন।

    ফরহাদ মজহারের কাছে অবশ্য বাংলাদেশের সংবিধানটি অবশ্য নাপছন্দ। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি অনেক জ্ঞানগর্ভ রচনা লেখেন। বাংলাদেশে তার মতো অক্লান্ত লেখক দ্বিতীয়টি নেই। একটা কারণ বোঝা গেল, তার নাপছন্দের কারণটি হল—সংবিধানে হিন্দু ভোটার, মুসলিম ভোটার ইত্যাদি শব্দ অন্তর্ভূক্ত না থাকা।অনাদান লোকজন দিয়ে সংবিধান লিখলে এইরকম হয়।

    তিনি লিখেছেন—তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপিপন্থীরা। লক্ষ করুন—জামাতের নামটি কিন্তু তিনি নিচ্ছেন না। আড়াল করে যাচ্ছেন জামাতকে। আহা, জামাত বড় অহিংস দল। তারা এসব প্রতিহিংসামূলক কাজ করতে পারে না। সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছিল—তা বিএনপিপন্থীদের ঘাড়ে নয়—জামাতেরও ঘাড়ে নয়—দায়টা শুধু বিএনপি’র ঘাড়ে।

    নির্যাতনের খবারাদি প্রকাশিত হয়েছিল বিভিন্ন দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায়।অসেগুলোর কোনোটিই ফরহাদ মজহার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন নি। কারণ হিসাবে তিনি তিনি লিখেছেন—উক্ত পত্রপত্রিকাগুলো আওয়ামীপন্থী এবং সাংবাদিকতার দলবাজি করাই তাদের খ্যাতি।অতিনি অভিযোগ করে লিখেছেন—‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ও সরকার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই দলবাজ সাংবাদিকতা কী পরিমাণ ক্ষতি করে বাংলাদেশ তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ’।অতিনি এই সাংবাদিকতাকে ন্যাক্কারজনক হিসাবে ধিক্কার দিচ্ছেন। এটাকে বাংলাদেশের জন্য খারাপ খবর বলেছেন। এইখান থেকে একটা বিষয় পরিস্কার যে, তার কাছে এই সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়টি নিন্দনীয় নয়। ওটা হতে পারে প্রতিহিংসার কারণে। কিন্তু যারা এইসব খবর প্রকাশ করে তারা নিন্দনীয়। সে কারণে বিএনপি-জামাত জোটের সময়ে সাংবাদিক পেটালে তিনি তখন কবিতায় লেখা নিয়ে বিজি ছিলেন। অথবা নকৃষি। তা নিয়ে লেখার সময় ছিল না। অথচ তিনিই বিএনপি-জামাত জোট আমলে একটি লেখার কারণে ধরা খেয়েছিলেন। সেটাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন। তবে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বিএনপি-জামাত জোটের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার লগে চিন ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সে সময়ে লুঙ্গি পরেছিলেন কিনা মনে নেই। আর শোনা যায় তারেক রহমানের কাছ থেকে নকৃষির নামে ৩০০ কোটি টাকা আদায় করেছিলেন। ফরহাদ মজহার শোনা কথায় বিশ্বাস আনতে চাইলেও আমি সহজে করি না। বাক স্বাধীনতার এই ধরনের বন পাওয়া যাচ্ছে তার লেখা থেকে।অসুমন রহমান নামে এক কবি, গবেষক বলেছিলেন-ইনি তাব্‌ৎ দুনিয়ার জ্ঞান গুলে খেয়েছেন। এই জ্ঞানী জ্যান্ত সুফি দার্শনিক বাক স্বাধীনতার ধ্বজাধারী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন—গণমাধ্যমগুলোর এই সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবরাদি বানানোর উদ্দেশ্য হল—বাংলাদেশে ভারতীয় হস্তক্ষেপের একটি শর্ত তৈরী করা। তার এই ভারত বিরোধীতার কারণ —কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতের শাসকশ্রেণীর অবস্থান অনঢ় এবং সম্প্রদায় হিসাবে মুসলমানদের টার্গেট করার পূর্ণ সুযোগ নেওয়ার ভারতীয় আকাঙ্ক্ষা (যাকে তিনি অনুমান হিসাবে ধরে নিচ্ছেন, কোনো প্রমাণ্য দিচ্ছেন না)।. এ কারণে তার প্রেসক্রিপশন হল বাংলাদেশের উচিৎ পাকিস্তানের লগে বাংলাদেশের মৈত্রী বন্ধন দৃঢ় করা। এ বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধও লিখেছেন।

    এই সংখ্যালঘু নির্যাতন অভিযোগটা উড়িয়ে দেওয়ার জন্য তার প্রস্তাব ছিল-- একটি তদন্ত কমিটির করে রিপোর্ট কার। তাহলেই করে ল্যাঠা চুকে যেত। তদন্ত রিপোর্ট তৈরিতে বিএনপি-জামাতের বিশেষ নৈপুন্য আছে।অআওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে তাদের কৃত তদন্ত কমিটির প্রধান জনৈক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছেল—সেখানে তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়াম লীগই গ্রেনেডবাজি করেছেন। তার এই তদন্ত রিপোর্টটি আরব্য উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীরও অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল। এটা না করে বিএনপি অন্যের লাশ নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন বলে ফরহাদ মজহার আক্ষেপ করেছিলেন।

    সে সময় বিএনপির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আলতাফ হোসেন সংখ্যালঘু নির্যাতন ঘটনাটিকে বাড়াবাড়ি বলে মন্তব্য করেছিলেন। এই মন্তব্যের কারণে তীব্র বাক্যবানের লক্ষ্য হয়েছেন আলতাফ হোসেন। ফরহাদ মজহার এ কারণে তাকে অযোগ্য, বদ এবং ভণ্ড বলে গালি দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি বললে মজাহার তাকে যোগ্য বলতেন?

    শাহরিয়ার কবীরকে বিএনপি-জামাত জোট গ্রেফতার করেছিল এই সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কিত খবরাখবর প্রকাশের দায়ে। তাকে বিদেশী এজেন্ট, গুপ্তচর এবং অন্তর্ঘাতমুলক কাজে পারদর্শী হিসাবে অভিহিত করেছিলেন সরল পাঠ কলামে ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছিলেন, তাকে গ্রেফতার করা ছিল সরকারের একটি ভুল কাজ। কেন ভুল—সেটা স্পষ্ট করে বলেন নি। তবে রাষ্ট্রে কাউকে গুপ্তচর, বিদেশী এজেন্ট, অন্তর্ঘাতমূলক কাজকর্ম করে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড । তাহলে কি শাহরিয়র কবীরকে গ্রেফতার না করে মেরে ফেলাটাই সরকারের জন্য ঠিক কাজ হত বলে ফরহাদ মজহার ইঙ্গিতে বলতে চেয়েছিলেন? ফরহাদ বলেছেন—শাহরিয়ার কবীর আধিপত্যবাদি ভারতের শাসক শ্রেণীর হয়ে ভাড়া খাটছেন। তিনি বলেছেন--আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে খবর, মত, সাংস্কৃতিক ধ্যান ধারণার সংগ্রাম অত্যন্ত মুখ্য। তার কাছে এটা মতাদর্শিক সংগ্রাম। ফরহাদ এটাকেই শ্রেণী সংগ্রাম বলে দাবী করছেন। মার্কসবাদের যাদের ন্যূনতম জ্ঞান আছে তারা জানেন--'মার্কসীয় তঙ্কেÄ শ্রেণী শব্দের প্রধান ব্যবহার অর্থনৈতি ব্যবহার। জীবনধারণের সম্পদের মালিকানা এবং অ-মালিকানার ভিত্তিতে কোনো সমাজের মানুষকে চিহি্‌ণত করার তঙ্কÄটি মার্কসের শ্রেণী সংগ্রামের তঙ্কÄ। আর এ দুয়ের সংগ্রামই শ্রেণীসংগ্রাম'। বিএনপি-জামাতকে নিয়ে কোন শ্রেনী সংগ্রাম হয়? বিএনপি-জামাত শোষিত শ্রেণী আর আওয়ামী লীগ শোষক শ্রেণী! আহা, কী ব্যাখ্যা--মরি মরি। ফরহাদ মজহারের দাবীকৃতএই শ্রেণী সংগ্রাম কি কার্লস মার্কস দিয়েছে, না মাওলানা মওদুদী দিয়েছেন—এই প্রশ্নটি জাগে ফরহাদ মজহারের শ্রেণী সংগ্রামের তঙ্কÄটি পড়ে।

    শাহরিয়ার কবীর ঘরাণার বুদ্ধিজীবিদের সম্পর্কে মজহার বলেছেন, তাদের রয়েছে চিন্তাশীলতার অভাব, রাষ্ট্র ও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে অপরিপক্ক ও অপিরণত ধারণা, নাগরিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে অশিক্ষা। এই কারণেই এইসব বুদ্ধিজীবিরা দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ফরহাদ মজহার এরপর ঘোষণা করেন—বাংলাদেশের সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মূল প্রবণতা দেশ ও দশের স্বার্থ বিরোধী। তারপরই মনে পড়ে—তিনি একদা বললেন, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারাও সন্ত্রাসী। সেটা নিয়ে আরেকদিন।
  • sswarnendu | 198.154.***.*** | ০২ জুন ২০১৬ ০৩:৪০506098
  • ঘটনাচক্রে খুঁজে পেলাম...
    ভাল লেখা
  • কল্লোল | 125.242.***.*** | ০২ জুন ২০১৬ ০৯:৪৬506099
  • আল মহমুদ, ফারহাদ মাজহর দুজনেই আমার প্রিয় কবি। ওদের এই অদ্ভুত পরিবর্তনে বড় কষ্ট পাই। বড় যন্ত্রনা হয়। কেন ওরা এমন হয়ে গেলেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন