এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ধন্ধ ও দ্বন্দ্ব 

    Kajal Sen লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ মার্চ ২০২৩ | ৬৫৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • প্রচলিত একটি ধাঁধা এবং সেই ধাঁধার সমাধান, আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু  তা সত্ত্বেও যেহেতু আমরা একে অন্যকে ততটা বুদ্ধিদীপ্ত বলে মনে করি না, তাই সুযোগ পেলেই নিজেকে যথেষ্ট চালাক প্রতিপন্ন করার জন্য সাদা কাগজে কলম দিয়ে একটা ছোট সরলরেখা টেনে বা মেঝেতে চক দিয়ে অনুরূপ রেখা টেনে প্রশ্ন করি, বলুন তো এই রেখাটির বিন্দুমাত্র অঙ্গহানি না করে কীভাবে রেখাটিকে ছোট করা যায়? যাকে প্রশ্নটা করা হলো, তিনি যদি মোটামুটি অভিনয়কলা রপ্ত করে থাকেন, তাহলে প্রথমটা না জানার ভান করে বিস্ময় প্রকাশ করবেন। তাই তো, তাই তো, এটা কী করে সম্ভব! তারপর কিছুক্ষণ বগল চুলকে সমাধান বের করার  ভঙ্গিতে বলবেন, ধরে ফেলেছি ধরে ফেলেছি, আমাকে ঠকানো এত সহজ নয়! আর উত্তরকর্তা যদি নিতান্তই কাঠখোট্টা খিটখিটে হন, তাহলে তিনি বিনা ভূমিকায় বলবেন, বুঝলেন নিজেকে এত চালাক মনে করবেন না, এই ধাঁধার সমাধান আমি আমার বাপ ঠাকুরর্দার আগেই করেছি।

    হ্যাঁ, আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে, নির্দিষ্ট সরলরেখাটিকে ছোট করতে হলে তার অঙ্গহানি আদৌ না করে বা তাকে স্পর্শমাত্র না করে, তার পাশে যদি দৈর্ঘ্যে বড় অনুরূপ একটি সরলরেখা টানা যায়, তাহলেই পূর্বের সরলরেখাটি তুলনামূলক ভাবে ছোট হয়ে যায়। আসলে কথাটা হচ্ছে, আইনস্টাইন সাহেব আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আবিষ্কার করার পরই আমাদের জীবন ও জগতের অনেক অনেক হিসেব বদলে গেছে। আমরা নতুন দৃষ্টিকোণে বস্তু ও বিষয়কে পর্যবেক্ষণ করতে শিখেছি। এবং সেটা আমাদের সবার পক্ষে খুবই পজিটিভ ব্যাপার। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, আমরা অনেকেই যথেষ্ট জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও পাপকাজটা কিন্তু যথারীতি করে চলেছি। মানে ঐ যে বলে না জ্ঞানপাপী! আর তাই কাউকে ‘ছোট’ করার দরকার হলে, নিজেকে আদৌ তার তুলনায় ‘বড়’ করার চেষ্টা করছি না; বরং নিজে আরও ছোট হয়ে  পাদানিতে নেমে তাকে ছোট করার পণ্ডশ্রম করছি। জীবনের এটা একটা আশ্চর্য ছেলেখেলা। আর এই সূত্রেই আমরা প্রতিদিন বাড়িয়ে চলেছি আমাদের শত্রুসংখ্যা। বাড়িয়ে চলেছি আঞ্চলিকতা, প্রদেশিকতা, সাম্প্রদায়িকতা। পরস্পরকে হেয় করার প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হচ্ছি নিত্যদিন। হিংসার উন্মত্ততায় মানবজীবনকে করে তুলছি সন্ত্রস্ত। ক্ষমতাদখলের দম্ভে কোন্‌ রসাতলে যে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা!

    তুলনামূলক বিচার, তুলনামূলক আলোচনা সমালোচনা বা তুলনামূলক কর্মপ্রয়াস  খুবই জরুরি আমাদের সবার জীবনে। আর সেইসঙ্গে প্রয়োজন সুস্থ প্রতিযোগিতাও।  কিন্তু তার জন্য কখনই অপরের অঙ্গহানি বা ক্ষতি করা মেনে নেওয়া যায় না। বস্তুতপক্ষে যথার্থ মনুষ্যত্বের বিকাশ না হলে সব সৃজন এবং সৃষ্টিই মাঠে মারা যায়। সত্য ঢাকা পড়ে থাকে অসত্যের কুঝ্বটিকায় বা ধাঁধায়।  

    কাজল সেন
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Nilanjan Chatterjee | ২৮ মার্চ ২০২৩ ১২:৪১517955
  • ঠিক লিখেছেন ।
  • শর্মিলা মাজী | 2409:4060:2e11:d702::d3c9:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৩ ১২:৫০517956
  • একটা সুন্দর উপমা সহযোগে আপনার লেখাটি বাস্তব সত্য। 
    অনেকেই নিজেদের মেধাচর্চার উন্নতি না করে অন্যদের উন্নতি দেখলে কাঁকড়ার মতো দাঁড়াগুলি দিয়ে তাকে নীচে টেনে নামাতে চেষ্টা করে... অত্যন্ত নীচ মানসিকতার পরিচয় সর্বত্রই দেখা যায়। 
  • Biman Kumar Maitra | ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৩:০৪517957
  • অপূর্ব। সত্যিই তাই। অর্থাৎ পরের যাত্রা ভাঙতে নিজের নাক কাটা আর কি!
  • প্রশান্ত গুহমজুমদার | 2405:201:900c:8874:1071:7de6:335d:***:*** | ২৯ মার্চ ২০২৩ ১২:১৮518001
  • চমৎকার এক লেখা!  অবনমিত চেতনায় আঘাত করে। এর পরেও আমরা যদি একটু জেগে উঠি!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন