শল্লকী আর খলিলের আম্মার বৃত্তান্ত : সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ১৫ অক্টোবর ২০২১ | ৪২৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
মেয়েটির মায়াময় মুখ এক নিমেষে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। কন্ঠস্বরও।
- ওই নেকুপুষুমনু শব্দ অনেকবার শুনেছি স্যার। আমাদের গাড়ির কাছে আসতে দেখলেই কাঁচ উঠিয়ে দিয়ে মিথ্যে ফোনে ব্যস্ত হন সাহেব-মেম, নয়তো কপালে হাত ঠেকিয়ে মাফ করতে বলেন... ফাটা নোট চালিয়ে দিয়ে মনে মনে হাসে লোকে। হলদে, সাদা, লাল – কোন গোলাপই নই স্যার। আমরা হলাম শল্লকী... সারা গায়ে কাঁটা গাঁথা শজারু। নিজের মা সকালে উঠে আমার আর ভাইয়ের মুখ দেখত না। সোজা গোয়াল ঘরে গিয়ে এঁড়ে, বকনা – যা হয় দেখে আসত – এদের কি দোষ।
গৌরি বিলের বৃত্তান্ত : সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১২ নভেম্বর ২০২১ | ৩৭২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
দুর্গাপূজার আগে আগে মিস্ত্রী আনা হতো ধান রাখার কড়োই তৈরি করার জন্য।
তাদের পাণ্ডা ছিল শীতল কাকা।
তারা এসে অনেকদিন থাকতো, খেতো, আর কড়োই বুনতো। এই কাজটা সবাই পারে না। একটা কড়োই বুনতে অনেকদিন সময় লাগতো। মড়াই বোনা বরং অনেক সহজ। মড়াইটা খড় পাকিয়ে বিচালি তৈরি করে বুনতে হতো, আর কড়োই বাঁশের বাতা দিয়ে। মড়াই নিয়মমতো ছোট-বড় করা যেতো। কড়োই একবার তৈরি হয়ে গেলে আর কিচ্ছুটি করা যেত না ।
-- " বুঝলা দাদুভাই, ষাট মণ, আশি মণ, নানা মাপের কড়োই হইতো। যতো বড় পরিবার, যতো সম্পন্ন গিরস্থি -- তত বড় কড়োই। "
প্রথমে মাটিতে বাতা পুঁতে পুঁতে গোল করে পানের ডাবরের মতো একটা ফ্রেম বানানো হতো। তারপর তারমধ্যে আরো সরু সরু বাতা দিয়ে দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করে কড়োই বোনা হতো। ঝুরি, চুপড়ি, ধামা বানানোর মতোই একটা পদ্ধতি। কড়োইয়ের ফ্রেম এতো বড় তাই দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া যেতো না। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়ি হলে, দড়ি দিয়ে বেঁধে পাঁচিল টপকে অনেক কষ্ট করে ভিতরে নিয়ে যেতে হতো। অনেক লোকও লাগতো তার জন্যে। এইসব কঠিন কঠিন কাজ করার সময় তারা মুখে নানা আওয়াজ করতো। গান করতো।
শীতলকাকা যখন কাঠের কাজ করতে আসতো, ঠাকুমারা চুপ করে তার কাজ দেখতেন। জল থেকে কাঠ বা তালগাছের কাঁড়ি তুলে এনে সেগুলো ‘বাইশ’ দিয়ে কি সুন্দর মসৃণ করে ছুলে ছুলে দরজা জানলার ফ্রেম বানিয়ে ফেলতো। যন্ত্রগুলোর নামও শেখাতো শীতলকাকা। বাটালি, বাইশ, করাত, ছেনি, হাতুরি আরো অনেককিছু থাকতো তার ব্যাগে।
-- "একটাই প্রশ্ন শীতলকাকা প্রত্যেকবার আমাগো জিগাইতো। “আচ্ছা কওতো, একটা ব্যাগে একশোটা যন্ত্র আছে, তা থেকে ‘বাইশ’টা তুইলা নিলে কটা থাকব ?”
বাইশ বিয়োগ কইরাই উত্তর দিতাম। কাকা ঘাড় নাড়াইয়া কইতো, “উহুঁ হয় নাই , হয় নাই। ভালো করে ভাবো।” আমরাও চিৎকার কইরা কইতাম, “নিশ্চয়ই হইসে, তুমি ভুল কইতাসো।”
সে বলতো, “না রে বোকা নিরানব্বইটা হইব। একটা যন্ত্রের নামই তো ‘বাইশ’।”
প্রত্যেকবার এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হতেই হতো। অন্যেরা ঠিক বললেও, লানছু ঠাকুমা প্রতিবার গল্পটা শোনার জন্য, ভুল উত্তর দিতেন।
কাকা ছিলেন তার নামের মতোই শান্ত শীতল।